প্রবন্ধ

কুর’আন মুখস্থ করার কিছু কার্যকরী কৌশল

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

কুর’আন মুখস্থ করার কিছু কার্যকরী কৌশল

আসসালামু আলাইকুম,প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমি নিশ্চিত আপনারা সকলেইকুর’আন শিখা ও শিখানোর গুরুত্ব সম্পর্কে জানেন।

এ সম্পর্কে প্রিয় নবী হযরতমুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

“তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুর’আন শিখে ও অন্যকে শিখায়।”
[সহীহ বুখারীঃ ৪৬৫৭]

এই লেখাটির মাধ্যমে আমি চেষ্টা করব কিছু নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানাতে, যা আপনাদের কুর’আন মুখস্থ করার ব্যাপারে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ।

১. ইখলাস বা আন্তরিকতাঃনিয়্যাতে বিশুদ্ধতা আনা এবংউদ্দেশ্য সংশোধন করা কুর’আন মুখস্থ করার প্রথম শর্ত। এটা অনেকটা এ রকম যে, আমি কুর’আন মুখস্থ করব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য, আখিরাতে জান্নাত লাভেরমাধ্যমে সাফল্য অর্জনের জন্য। এছাড়া সেই সকল পুরস্কারও অর্জন করা, যাকুর’আন তিলাওয়াতকারী ও মুখস্থকারীদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন,

“অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত।”[সূরা আল-যুমারঃ ২-৩]

বলুন আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।”[সূরা আল-যুমারঃ ১১]

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “যাদেরকে আমার অংশী সাব্যস্ত করা হয় আমার সাথেতাদের কোন সম্পর্ক নেই। যে লোক আমার সাথে (কোন কিছু বা কাউকে) অংশীসাব্যস্ত করে কোন আমল করে, তাকে আমি পরিত্যাগ করি এবং আমার সাথে সে যা শরীককরে আমি তা প্রত্যাখ্যান করি।”

[মুসলিম ও ইবনে মাজাহ এ হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে সংগ্রহ করেছেন]

অধিকন্তু, যারা শুধুমাত্র দেখানোর জন্য কুর’আন তিলাওয়াত ও মুখস্থ করেতারা তো কোন পুরস্কারই লাভ করবে না, বরং তাদেরকে এ ব্যাপারে জবাবদিহি করতেহবে। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, শুধুমাত্র দুনিয়ায় লাভের জন্য কুর’আনমুখস্থ করা একটি পাপের কাজ।

২. উচ্চারণ ও তিলাওয়াত শুদ্ধ করাঃ আন্তরিকতার পরকুর’আন মুখস্থ করার প্রথম এবং অত্যাবশকীয় ধাপ হল শুদ্ধ উচ্চারণ। একজন ভালোতিলাওয়াতকারীর তিলাওয়াত শোনা ব্যাতীত এটা সম্ভব নয়। এ কারণে প্রিয় নবীহযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যিনি আরবদের মধ্যেবাগ্মীতায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন, তিনিও জীবরাইল (আলাইহিস সালাম) এর সাথে মুখেমুখে শিক্ষালাভ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বছরেএকবার জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) কে কুর’আন তিলাওয়াত করে শুনাতেন এবং যে বছরতিনি মারা যান, সেই বছর শুনিয়েছিলেন দু’বার।[১]

একইভাবে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) শিক্ষা দিয়েছেন মুখে মুখে। আর সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) পর যাঁরা এসেছেন তাঁরা সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহুআনহু) কাছ থেকে এবং পরবর্তী প্রজন্মরাও শিখেছেন একইভাবে।

তাই একজন ভালো তিলাওয়াতকারীর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করা বাধ্যতামূলক।একইভাবে কারো আরবী ভাষা ও এর মূলনীতির উপর দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্রনিজের উপর নির্ভর করে কুর’আন মুখস্থ করা ঠিক নয়। কারণ, কুর’আনে এমন অনেকআয়াত আছে যেগুলো আরবি ভাষার সাধারণ যে নিয়মসমূহ রয়েছে তার চেয়েবিপরীতধর্মী।

৩. মুখস্থ করার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ নির্ধারণ করাঃ প্রতিদিন মুখস্থ করার জন্য কুর’আনের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ নির্ধারণকরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উদাহরণস্বরূপ বলাযায়, নির্দিষ্ট সংখ্যক আয়াত কিংবা এক বা দুই পাতা, এমনকি এক পারার (সম্পূর্ণ কুর’আনের ১/৩০ ভাগ) এক অষ্টমাংশও হতে পারে। তাই, তিলাওয়াত শুদ্ধও মুখস্থ করার অংশ নির্ধারণ করার পরই কাজ শুরু করা উচিত। মুখস্থ করার সময়উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে প্রথমত সুন্নাহর অনুসরণকরা হবে, দ্বিতীয়ত মুখস্থ হবে দৃঢ় ও স্থায়ী। উচ্চস্বরে তিলাওয়াতশ্রুতিমধুর এবং মুখস্থ করার ক্ষেত্রেও সাহায্যকারী। অধিকন্তু জিহ্বাপ্রতিবার একটি নির্দিষ্ট স্বরে ফিরে আসে এবং তা পরিচিত হয়ে উঠে। যার ফলে, স্বরের তারতম্য থেকে সহজেই ভুলত্রুটি শনাক্ত করা যায়। এসবের মূল কারণ, সুললিত কণ্ঠে কুর’আন তিলাওয়াত করা নবীজিরই নির্দেশ। আর এ নির্দেশ অমান্যকরা অসম্ভব।

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

“Whoever does not beautify the Quran (recite it melodiously) he is not of us.”
[Bukhaaree]

৪. একটি নির্দিষ্ট অংশ নিখুঁতভাবে মুখস্থ না করে, অন্য অংশ শুরু না করাঃ একটি নির্দিষ্ট অংশ নিখুঁতভাবে মুখস্থ না করে, অন্য অংশ শুরু করা কখনই ঠিকনয়। আর এটা করার কারণ, যা সে মুখস্থ করেছে তা যেন তার অন্তরে পুরোপুরিগেঁথে যায়। এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারে তার দৈনন্দিন জীবনেরকার্যকলাপ। সে যা শিখেছে তার চর্চা করতে পারে সালাত আদায়ের সময় কিংবাসালাতের জন্য অপেক্ষা করার মুহূর্তে। আর এভাবে তার মুখস্থ করার কাজটি হয়েউঠবে আরও সহজ। যদি কোন অংশ শুরু করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করাসম্ভব না হয়, তবে তার অবশ্যই উচিত যতটুকু সময় প্রয়োজন, ততটুকু সময়নিয়েই সম্পন্ন করা।
৫. মুখস্থ করার সময় কুরআনের একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ (কপি) ব্যবহার করাঃ যে সব উপকরণ একজন শিক্ষার্থীকে কুর’আন মুখস্থ করার ব্যাপারে সাহায্য করে, তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল, কুর’আনের একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ ব্যবহার করা, যা কখনই পরিবর্তন করা ঠিক নয়। এর কারণ, শোনা ও পড়ার পাশাপাশি দেখাওকুর’আন মুখস্থ করার ব্যাপারে সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট মুসহাফব্যবহার করে পড়ার ফলে, তার লেখার ধরন, আয়াতের গঠন এবং অবস্থানশিক্ষার্থীর অন্তরে একটি ছাপের সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষার্থী যদি মুখস্থকরার সময় ভিন্ন ভিন্ন মুসহাফ ব্যবহার করে, তবে সেগুলোতে লেখার ধরন, আয়াতের সংখ্যা ও অবস্থানও ভিন্ন ভিন্ন হয়। এতে মুখস্থ করার কাজটি কঠিনহয়ে পড়ে। আর এ কারণে একজন শিক্ষার্থীর উচিত একটি নির্দিষ্ট মুসহাফব্যবহার করা এবং সেটি কখনই পরিবর্তন না করা।

৬. বুঝে পড়ামুখস্থ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়কঃ মুখস্থ্ করার ব্যাপারে সহায়ক উপকরণগুলোর মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণহল, যে আয়াতগুলো মুখস্থ্ করা হয়েছে সেগুলোর অর্থ ও একটির সাথে অপরটিরসম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করা। আর এর জন্য তাফসীরের (কুর’আনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ)সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তাছাড়া মুখস্থ করার সময় আয়াতগুলোর অর্থ যদিমাথায় রাখা হয়, তবে মুখস্থ করার কাজটি সহজ হয়ে ওঠে।

৭. একটি সূরার বিভিন্ন অংশ মুখস্থ করে পুরো সূরাটি সম্পূর্ণ না করে অন্য সূরায় না যাওয়াঃএকটিসূরার বিভিন্ন অংশ (বিশেষ করে বড় সূরাগুলোর) মুখস্থ করার পর সেগুলো এককরে সম্পূর্ণ সূরাটি মুখস্থ করার কাজ নিখুঁত না করে অন্য সূরা শুরু করাকখনই ঠিক নয়। তার মুখস্থ করার কাজটি এমন নিখুঁত হওয়া উচিত, যাতে কোনপ্রকার বাঁধা ছাড়াই সম্পূর্ন সূরাটি এক টানা বলে যেতে পারে। অর্থাৎ তারতিলাওয়াত হবে বাঁধাহীন স্রোতের মত, তার মস্তিষ্ক অন্য কোন কাজে ব্যস্তথাকলেও তার তিলাওয়াতে কোন পরিবর্তন আসবে না, থাকবে না কোন জড়তা কিংবাদ্বিধা, ঠিক আমরা যেভাবে আমরা সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করে থাকি। যদিওকুর’আনের সবগুলো সূরা, সূরা ফাতিহার মত মুখস্থ করা সম্ভব নয়, তবুও আমাদেরনিয়্যাত রাখতে হবে সূরা ফাতিহার মত করা। আর নিয়মিত তিলাওয়াত করে যেতেহবে প্রতিটি সূরা।

৮. অন্যকে তিলাওয়াত করে শুনানোঃ কুর’আন মুখস্থ করারব্যাপারে একজন শিক্ষার্থীর শুধুমাত্র নিজের উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। বরংতার উচিত কোন হাফিযকে যা মুখস্থ করা হয়েছে তা তিলাওয়াত করে শুনানো। এতেতার ভুলভ্রান্তিগুলো পরিস্কার হয়ে উঠবে এবং সে কাটিয়ে নিতে পারবে। আরনিজের ভুল নিজে খুঁজে পাওয়া কতটা কষ্টকর তা আমাদের সবারই জানা।

৯. যা মুখস্থ করা হয়েছে তা নিয়মিত তিলাওয়াত করাঃ মুখস্থ করার বিভিন্ন উপকরণ, যেমনঃ কবিতা বা গল্প ইত্যাদি থেকে কুর’আনমুখস্থ করার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এর কারণ, কুর’আন মানুষেরমস্তিষ্ক থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুছে যায়। আর এ কারণেই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার উদাহরণহচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সেউট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বন্ধন খুলে দেয়, তবে তা আয়ত্তেরবাইরে চলে যায়।
[
সহীহ বুখারীঃ ৪৬৬১]

তিনি আরও বলেন,

আল্লাহর কসম! যার কবজায় আমার জীবন! কুর’আন বন্ধনমুক্ত উটের চেয়ে দ্রুত বেগে দৌড়ে যায়।”
[সহীহ বুখারীঃ ৪৬৬৩]

এর দ্বারা বোঝা যায়, কুর’আন মুখস্থ করার পর নিয়মিত তিলাওয়াত করা একটি আবশ্যিক কাজ।

১০. কুরআনের (প্রায়) একই রকম আয়াতগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকাঃ অর্থ, শব্দ কিংবা আয়াতের গঠনের দিক দিয়ে কুর’আনের বিভিন্ন অংশে মিল রয়েছে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যাসামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ারউপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহরস্মরণে বিনম্র হয়।”
[আয-যুমারঃ ২৩]

আল-কুর’আনে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার আয়াত রয়েছে। আর এদের মধ্যে প্রায়এক হাজার আয়াত রয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাদের পারস্পরিক মিল রয়েছে।কখনও তাদের মধ্যে মাত্র এক বা একাধিক শব্দের পার্থক্য দেখা যায়। তাই একজনশিক্ষার্থীর উচিত এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। একজনশিক্ষার্থীর মুখস্থের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য নির্ভর করে এই একই রকম আয়াতগুলোসতর্কতার সাথে মুখস্থ করার উপর। আর এ ব্যাপারে কিছু বই সাহায্য করতে পারে।যেমনঃ

  • Durratul-Tanzeel wa Ghurratut-Ta’weel fee Bayaan il Aayaat al-Mutashaabihaat fee Kitaab il-Laahi il-Azeez by al-Khateeb al-Iskaafe
  • Asraar ut-Tukraar fil-Quran by Mahmood bin Hamzah ibn Nasr al-Kirmaanee

১১. জীবনের সোনালী সময়কে কাজে লাগানোঃ যে ব্যক্তিমুখস্থ করার জন্য জীবনের সর্বোত্তম সময়টিকে কাজে লাগায়, কুর’আন মুখস্থকরার ব্যাপারে তার সাফল্য অবধারিত। আর এই সময়টা হচ্ছে আনুমানিক পাঁচ বছরথেকে তেইশ বছর বয়স পর্যন্ত। এ সময় প্রতিটি মানুষের মুখস্থ করার সামর্থ্যথাকে সর্বোচ্চ। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত জীবনের এই সময়টাতে নিজেকে কুর’আনমুখস্থ করার কাজে জড়িত রাখা। যে ব্যক্তি এ কথাটি বলেছিল, সে ঠিকই বলেছিলঃ

যুবক বয়সে মুখস্থ করা হচ্ছে অনেকটা পাথরে খোদাই করার মত। আর বৃদ্ধ বয়সে মুখস্থ করা অনেকটা পানিতে খোদাই করার মত।

তাই আমাদের সবারই উচিত জীবনের সোনালী সময়টাকে কাজে লাগানো এবং এব্যাপারে অন্যকে উৎসাহিত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর অমূল্য বাণীগ্রন্থমুখস্থ করে তদানুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুক। আমীন।

রেফারেন্সঃ
[১] সহীহ বুখারীঃ ৪৬৩২

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button