প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-১০

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-১০

প্রশ্ন (৪৫১) : যমযমের পানি পানের আদব জানতে চাই।
উত্তর: যমযমের পানি পানের সময় ১. বিসমিল্লাহ বলবে, ২. ডান হাতে পান করবে, ৩. তিন নিঃশ্বাসে পান করবে. ৪. দো‘আ পাঠ করবে। উল্লেখ্য যে, যমযম পানি কেবলামুখী হয়ে পান করার ছহীহ দলীল নেই। বরং যমযমের পানিসহ যেকোন পানাহার বসে করাই সুন্নাত (মুসলিম হা/২০২৪; আহমাদ হা/৭৭৯৫-৯৬; মিশকাত হা/৪২৬৬, ৬৭; ছহীহাহ হা/১৭৬)। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের সময় (ভিড়ের মধ্যে) যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৬৮) এবং আলী (রাঃ) কূফার মসজিদের আঙিনায় ওযূ করার পর অতিরিক্ত পানি দাঁড়িয়ে পান করেন ও বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখেছি (বুখারী হা/৫৬১৬; মিশকাত হা/৪২৬৯) মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলি সম্পর্কে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পান করা যে জায়েয, সেটা বুঝানোর জন্যই রাসূল (ছাঃ) এরূপ করেছেন (ফাৎহুল বারী হা/২৬১৫-১৬-এর আলোচনা)। ইমাম নববীও একই মন্তব্য করেছেন (শরহ নববী হা/২০২৭-এর আলোচনা)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, হজ্জের সময় ভিড়ের কারণে বসার সুযোগ না থাকায় তিনি দাঁড়িয়ে পান করেছিলেন এবং এটাই ছিল তাঁর শেষ আমল (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/২১০)। উল্লেখ্য যে, যমযমের পানি পানের অনেক উপকারিতা রয়েছে (ইবনু মাজাহ হা/৩০৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫০২)। এজন্য যেকোন রোগ থেকে সুস্থতা কামনা করে দো‘আ পাঠ করা যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২৬/১৪৪)। ছাহাবায়ে কেরাম যমযমের পানি পাত্রে রাখতেন। কেউ অসুস্থ হ’লে তার শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হ’ত এবং তাদেরকে পান করানো হ’ত (ছহীহাহ হা/৮৮৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয় তা (যমযমের পানি) বরকতপূর্ণ, পরিতৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগের প্রতিষেধক (ছহীহুল জামে‘ হা/২৪৩৫)। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হ’ল যমযমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তিময় খাদ্য এবং ব্যাধির আরোগ্য (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩২২)। তিনি অন্যত্র বলেন, যমযমের পানি যে যেই উদ্দেশ্যে পান করবে তার সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে, তুমি যদি সুস্থতার জন্য পান কর তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করবেন। তুমি ক্ষুধা নিবারণের জন্য পান করলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা নিবারণ করবেন, তুমি পিপাসা দূর করার জন্য পান করলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন (ছহীহুত তারগীব হা/১১৬৪)। তবে যমযমের পানি পান করার সময় পঠিতব্য দো‘আর ব্যাপারে ইবনু আববাস থেকে যে আছারবর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (যঈফুত তারগীব হা/৭৫০)।
প্রশ্ন (৪৫২) : মসজিদের পাশে মসজিদের কিছু খালি জমি আছে, যেখানে এলাকার যুবকেরা খেলাধুলা করে, সিগারেট ও গাজা সেবন করে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিলে তারা গোনাহগার হবে কি?
উত্তর : মসজিদের জায়গায় হারাম কোন কাজ করা বা মাদক সেবন করা নিষিদ্ধ। এক্ষণে মসজিদ কমিটির দায়িত্ব হ’ল তাদেরকে বাধা দেওয়া। তারা এ ব্যাপারে সচেতন না হ’লে এবং ব্যবস্থা না নিলে গুনাহগার হবেন।
প্রশ্ন (৪৫৩) : মনের যেনা বলতে কি বুঝায়? উদাহরণ সহ জানতে চাই।
উত্তর : হাদীছে বর্ণিত মনের যেনা বলতে যেনার পরিকল্পনাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে কারো সাথে যেনা করার সংকল্প করে এবং বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে তাহ’লে সে রূপক অর্থে যেনাকার হিসাবে গুনাহগার হবে (নববী, শরহ মুসলিম ১৬/২০৬)। যেমন কেউ কাউকে হত্যার পরিকল্পনা করে লড়াইয়ে লিপ্ত হ’লে এবং তাতে নিজে নিহত হ’লেও জাহান্নামে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পরে যুদ্ধ করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কি? তিনি বললেন, সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদ্যত ছিল (বুখারী হা/৩১; মুসলিম হা/২৮৮৮)। তবে কেবল মনে পরনারীর কামনা আসা গুনাহের কারণ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অসৎকর্মের সংকল্প করে, কিন্তু বাস্তবে তা না করে, আল্লাহ তার জন্য একে একটি পূর্ণ নেকীর কাজ হিসাবে লিখে নেন। আর যদি অসৎ কর্মের সংকল্প করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তাহ’লে আল্লাহ এর জন্য তার একটি গুনাহ লিখেন (বুখারী হা/৬৪৯১; মিশকাত হা/২৩৭৪)।
প্রশ্ন (৪৫৪) : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমুসলিমদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে কি? এতে যেন গুনাহ না হয় সেজন্য কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর: যারা ইসলামের বিরোধিতা করে না বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, তাদের সাথে বন্ধুত্বে কোন দোষ নেই (মুমতাহিনাহ ৬০/০৮)। তবে তাদের প্রতি বিশেষ মহববত ও ভালোবাসা রেখে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না এবং কোনভাবেই তাদের ধর্মীয় কাজে সহযোগিতা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্ত্ত মনে করে, তাদের ও কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না (মায়েদাহ ৫/৫৭)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়কে তুমি পাবে না, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে (মুজাদালা ৫৮/২২)। অতএব অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বের সাথে সাথে সতর্কও থাকতে হবে এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৪৫৫) : জঘন্য পাপ করে ফেলে পরে তওবা করেছি। কিন্তু তার ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। বার বার তওবা করছি। কিন্তু কেউ দেখে ফেলার ভয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : নিজের একাউন্ট থেকে ছবি ও ভিডিও মুছে করে ফেলুন এবং যার কাছে আছে, সেও যেন মুছে ফেলে। নইলে অশ্লীলতা প্রচারের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে (নূর ২৪/১৯)। মনে রাখতে হবে যে, অনুতপ্ত হওয়ার সাথে আন্তরিক তওবা আল্লাহ কবুল করেন এবং পিছনের সকল পাপ ক্ষমা করে দেন (যুমার ৩৯/৫৩)।
প্রশ্ন (৪৫৬) : ছালাতের শেষ রাক‘আতে নারীদের সাদাস্রাব দেখা দিলে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে কি? সেক্ষেত্রে ওযূ করে কেবল শেষ রাক‘আত আদায় করলেই চলবে, না পুরো ছালাত আদায় করতে হবে?
উত্তর: ছালাতের ভিতরে নারীর সাদাস্রাব শুরু হ’লে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে দিয়ে ওযূ করে নতুনভাবে ছালাত আদায় করবে (দারেমী হা/১১৪১; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৪)। উল্লেখ্য যে, যে হাদীছে বলা হয়েছে যে, আগের ছালাতের সাথে মিলিয়ে ছালাত সম্পূর্ণ করবে তা যঈফ (যঈফুল জামে‘ হা/৫৪২৬)।
প্রশ্ন (৪৫৭) : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জিপিএফ-এর সূদ হালাল কি? আগে এখানে সূদমুক্ত রাখার অপশন ছিল না, বর্তমানে আছে। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : সূদ সর্বাবস্থায় হারাম। ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, যারা সূদ খায়, সূদ দেয়, সূদের হিসাব লেখে এবং সূদের সাক্ষ্য দেয়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের উপর লা‘নত করেছেন এবং অপরাধের ক্ষেত্রে এরা সকলেই সমান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭)। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’ (আহমাদ হা/৩৭৫৪; মিশকাত হা/২৮২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৪২)। এক্ষণে করণীয় হ’ল, অবিলম্বে জিপিএফ ফান্ডকে সূদমুক্ত করবেন এবং ইতিমধ্যে সূদ হিসাবে আগত অর্থ ছওয়াবের আশা ছাড়াই জনকল্যাণ মূলক কাজে দান করে দিবেন। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ব্যক্তির নিজ ও নিজ পরিবার চালানোর জন্য যদি হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ ব্যতীত কোন সম্পত্তি না থাকে, তাহ’লে যতটকু প্রয়োজন ততটকু সেখান থেকে গ্রহণ করে বাকীগুলো ছাদাক্বা করে দিবেন। যদিও এই ছাদাক্বায় তার কোন উপকার হবে না। তবে এতে কিছু গরীব উপকৃত হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৮; ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ১/৩৮৯; যাদুল মা‘আদ ৫/৭৭৮)।
প্রশ্ন (৪৫৮) : নাভীর নীচের লোম, বগলের পশম, গোঁফ এবং নখ কতদিন পরপর পরিষ্কার করা যরূরী?
উত্তর: চল্লিশ দিনের মধ্যে গোঁফ ছাটা, বগলের লোম উপড়ানো ও নাভীর নীচের লোম কাটা সুন্নাত (মুসলিম হা/২৫৮; মিশকাত হ/৪৪২২)। তবে প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করা উত্তম (শারহুস সুন্নাহ হা/৩১৯৭; কাশশাফুল ক্বেনা‘ ১/৭৭)।
প্রশ্ন (৪৫৯) : বিয়ের জন্য ঘটককে পাত্রীর ছবি দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : ঘটককে নয় বরং সরাসরি বর বা কনেকে দেখা বা অভিভাবকের মাধ্যমে ছবি আদান প্রদান করা যাবে। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, আমি আনছারদের এক মেয়েকে বিবাহ করতে চাই। তিনি বললেন, তুমি তাকে প্রথমে দেখে নাও। কারণ আনছার মহিলাদের চোখে দোষ থাকে (মুসলিম হা/১৪২৪, মিশকাত হা/৩০৯৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর (ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮)। তিনি আরো বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোন পাত্রীকে প্রস্তাব দিবে সম্ভব হ’লে সে যেন পাত্রীকে দেখে। যা বিবাহের জন্য সহায়ক হবে (আবুদাউদ হা/২০৮২; মিশকাত হা/৩১০৬; ছহীহাহ হা/৯৯)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাত্রী দর্শনে পরস্পরে মহববত সৃষ্টি হয়’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৬৫; মিশকাত হা/৩১০৭; ছহীহাহ হা/৯৬)। সুতরাং বিবাহের উদ্দেশ্যে ছবি দেখা জায়েয। তবে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন- ছবি শারঈ পর্দার সীমারেখা মেনে হ’তে হবে এবং ছবি অন্য কোন গায়ের মাহরাম ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা যাবে না (আওনুল মা‘বুদ ৬/৬৯)।
প্রশ্ন (৪৬০) : মোবাইলে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার ১ বছর পর দেশে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে পুনরায় বিবাহ করতে হবে কি?
উত্তর : পুনরায় বিবাহ করতে হবে না। প্রথম বিবাহই যথেষ্ট (মুগনী ৫/৬৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/৯০)।
প্রশ্ন (৪৬১) : ঘরে কোন বই বা পত্র-পত্রিকার ভিতরে বা বাইরে যদি মানুষ বা প্রাণীর ছবি থাকে, তাহ’লে সেই ঘরে ছালাত হবে কি?
উত্তর: ঘরে কোন প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা যাবে না। কারণ যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। তবে ছবি যদি বইয়ের ভিতরে থাকে বা কোন কিছু দ্বারা ঢেকে রাখা হয় বা জীবের অবয়ব মুছে ফেলা হয় তাহ’লে সে ঘরে ছালাত আদায়ে কোন দোষ নেই। আর এরূপ ঘরে ফেরেশতা প্রবেশেও বাধা নেই (বুখারী হা/২১০৫; মিশকাত হা/৪৪৯২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/১৭৯)। উল্লেখ্য যে, কারো ছবিমুক্ত ঘর না থাকলে বা পরিবেশ না পেলে দৃষ্টি নত করে উক্ত ঘরেই ছালাত আদায় করবে। এতে ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৪৬১) : মসজিদে যাওয়ার পথে অপবিত্র পানি অতিক্রম করে যেতে হয়। সবসময় পা ধোয়ারও উপায় থাকে না। এমতাবস্থায় পা না ধুয়ে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : অপবিত্র পানি বা তরল কোন বস্ত্ত শরীরে বা কাপড়ে লেগে গেলে সিক্ত স্থান সাধ্যমত ধুয়ে ছালাত আদায় করবে। তবে এতে ওযূ নষ্ট হবে না (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২৫৩)।
প্রশ্ন (৪৬২) : নানা অসুবিধার কারণে তাহাজ্জুদের ছালাত নিয়মিতভাবে আদায় করা সম্ভব হয় না। এভাবে অনিয়মিত হলে গুনাহ হবে কি?
উত্তর : ‘তাহাজ্জুদ শুরু করলে আর ছাড়া যাবে না এবং ছাড়লে গুনাহ হবে’ মর্মে প্রচলিত কথাটি ভিত্তিহীন। তবে নিয়মিত পড়াই উত্তম। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা রাতের ছালাত ছেড়ে দিয়ো না। কারণ রাসূল (ছাঃ) এ ছালাত ছাড়তেন না। যখন তিনি অসুস্থ বা দুর্বল বোধ করতেন তখন তা বসে আদায় করতেন (আহমাদ হা/২৬১৫৭; আবুদাঊদ হা/১৩০৭, সনদ ছহীহ)। এছাড়া আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল তাই, যা অল্প হ’লেও নিয়মিত করা হয় (বুখারী হা/৬৪৬৫; মুসলিম হা/৭৮৩; মিশকাত হা/১২৪২)।
প্রশ্ন (৪৬৩) : ২০ বছর পূর্বে মারা যাওয়া স্ত্রীকে আমি স্বপ্নে দেখেছি। তিনি আমাকে স্বপ্নে বলেছেন, কবরে তার খুব গরম অনুভব হয়। তার জন্য যেন একটা ফ্যান দেওয়া হয়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : এ ব্যাপারে শারঈ কোন নির্দেশনা নেই। তবে সর্বাবস্থায় মাইয়েতের জন্য ছাদাক্বা করা যায়। কারণ ছাদাক্বার মাধ্যমে মাইয়েত কবরে উপকৃত হয় (বুখারী হা/১৩৮৮, ২৭৫৬; মুসলিম হা/১০০৪)। আর কেউ খারাপ বা দুশ্চিন্তাযুক্ত স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিনবার থুক মারবে, পার্শ্ব পরিবর্তন করবে ও আউযুবিল্লাহ… পাঠ করবে। এরপরেও খারাপ স্বপ্ন দেখলে ওযূ করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে (ইবনু মাজাহ হা/৩৯০৭; ছহীহাহ হা/১৮৭০)। কারণ শয়তান বিভিন্নভাবে মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন, ঐ কানাঘুষা শয়তানের কাজ বৈ তো নয়, যা মুমিনদের দুঃখ দেওয়ার জন্য করা হয়। অথচ তা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত (মুজাদালাহ ৫৮/১০)। আবু সালামাহ (রহঃ) বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম, যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে ফেলত। অবশেষে আমি আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে দিত। শেষে আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ পসন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন এমন লোকের কাছেই বলবে, যাকে সে পসন্দ করে। আর যখন অপসন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন যেন সে এর ক্ষতি ও শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায় এবং তিনবার থুক ফেলে আর সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহ’লে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না (বুখারী হা/৩২৯২; মুসলিম হা/২২৬১)।
প্রশ্ন (৪৬৪) : কুরআনের শিক্ষিকা ঋতু চলাকালীন সময়ে কুরআন স্পর্শ করে কাউকে কুরআন শিক্ষা দিতে পারবে কি?
উত্তর : কুরআনের শিক্ষিকা হায়েযা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারবে, তবে সরাসরি কুরআন স্পর্শ করবে না। বরং হাত মোযা বা কোন প্রতিবন্ধকের মাধ্যমে কুরআন স্পর্শ করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ৫/৪৩১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৪৬৫) : চোখে চশমা লাগিয়ে সিজদা দিলে সিজদার হক আদায় হবে কি?
উত্তর : চোখে চশমা থাকাকালীন নাক ও কপাল মাটিতে স্পর্শ করিয়ে সিজদা করা সম্ভব হ’লে চশমা পরে সিজদা দেওয়ায় কোন দোষ নেই। তবে চশমা কপাল ও নাক মাটিতে স্পর্শ করাতে বাধা হয়ে দাঁড়ালে চশমা খুলে ছালাত আদায় করবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৮৬)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তির ছালাত বিশুদ্ধ হয় না যে কপালের মত করে নাক মাটিতে ঠেকায় না (দারাকুৎনী হা/১৩১৯; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী ১৪২ পৃ. সনদ ছহীহ)। তিনি আরো বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছি যেন আমরা সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করি, যা হচ্ছে- কপাল আর এ বলে তিনি স্বীয় হাত দ্বারা নাক, হস্তদ্বয় (অপর শব্দে হাতের তালুদ্বয়) হাঁটুদ্বয়, উভয় পায়ের অগ্রভাগের দিকে ইঙ্গিত করেন (বুখারী হা/৮১২; মুসলিম হা/৪৯০; মিশকাত হা/৮৮৭)।
প্রশ্ন (৪৬৬) : ফজরের ছালাতের পর ইশরাক্বের ছালাতের আগ পর্যন্ত কোন নফল ছালাত আদায় করা যাবে কি? সূর্যোদয় শুরু হওয়ার পর নফল ছালাত আদায়ের জন্য কত মিনিট অপেক্ষা করা উচিৎ?
উত্তর : ফজরের ফরয ছালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন নফল ছালাত নেই (আবুদাউদ হা/১২৭৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৫৩; ইরওয়া হা/৪৭৮)। তবে যদি কারো ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত কাযা থাকে তাহ’লে সেটা আদায় করবে (আবুদাউদ হা/১২৭৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৫৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৫১)। আর সূর্যোদয়ের পর ইশরাক্বের ছালাতের ওয়াক্ত হ’তে দশ থেকে পনের মিনিট সময় লাগে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১৭১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১২২)। পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে ৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ড সময় লাগে। সে হিসাবে সূর্যোদয়ের ১০ মিনিট পরে ইশরাক্বের ছালাত আদায় করা যায়।
প্রশ্ন (৪৬৭) : ওযূ করার পর নারীদের জরায়ুর রাস্তা দিয়ে হালকা শব্দে বায়ু বের হ’লে ওযূ ভেঙ্গে যাবে কি?
উত্তর : ওযূর পর জরায়ুর রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হ’লে বিশুদ্ধ মতে ওযূ ভেঙ্গে যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৪; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১২৫)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, স্পষ্টভাবে বায়ূর শব্দ বা গন্ধ না পেলে ওযূ করতে হবে না (ইবনু মাজাহ হা/৫১৫; মিশকাত হা/৩১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৭২)। আর এটা হাদীছে উল্লিখিত বায়ুর অন্তর্গত। সুতরাং এমতাবস্থায় ওযূ ভেঙ্গে যাবে। তবে হানাফী-মালেকী বিদ্বানগণ, শায়খ উছায়মীন ও শায়খ বিন বায মনে করেন, জরায়ু থেকে নির্গত বাতাসে ওযূ ভঙ্গ হবে না। কারণ এটি কোন অপবিত্র স্থান থেকে বের হয় না। তাছাড়া হাদীছে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন দলীল নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৮০; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৯৭; রাদ্দুল মুহতার ১/১৩৬ পৃ.)। তবে অধিকতর সতর্কতার জন্য ওযূ করাই কর্তব্য। কারণ যে স্থান থেকে বীর্য বের হ’লে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়; হায়েয, নিফাস বা ইস্তিহাযা বের হ’লে অপবিত্র হয়ে যায়; সে স্থান থেকে বায়ু বের হ’লে একই বিধান কার্যকর হওয়াই বিধেয়।
প্রশ্ন (৬৬৮) : অমুসলিম নারীদের সামনে মুসলিম নারীদের জন্য কতটুকু পর্দা করা আবশ্যক?
উত্তর : অমুসলিম নারীদের থেকে ততটুকু পর্দা করবে যতটুকু মাহরাম আত্মীয়দের থেকে করা হয়। যেমন সে তার মুখমন্ডল, মাথা, হাত-পা মাহরামের সামনে প্রকাশ করতে পারে তেমনি অমুসলিম নারীদের সামনেও প্রকাশ করতে পারে (উছায়মীন, ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/৪১৭, ২/৫৮২ পৃ.)। তবে এদের থেকে অধিক পর্দা করলে সেটা মুস্তাহাব (কুরতুবী, তাফসীর সূরা নূর ৩১ আয়াত ১২/২৩৩ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৬৯) : মসজিদে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বা সফরে অনেক সময় পৃথক ওযূখানা বা পর্দার মধ্যে পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকেনা। ফলে মেয়েদের জন্য ওযূ করা সম্ভব হয় না। এমন অবস্থায় তাদের তায়াম্মুম করা যাবে কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা যাবে না। বরং কোন ওযূখানায় বা কোন বাড়িতে পর্দার পরিবেশ খুঁজে নিয়ে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। কোনভাবেই ব্যবস্থা না করা গেলে বাধ্যগত অবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৫/১৩১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৭০) : কোন শিশু বা গরু-ছাগল হারিয়ে গেলে বা কোন বিষয়ে যেমন করোনার টিকা বিষয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া যাবে কী?
উত্তর : মসজিদের মাইক রাখা হয় আযানের জন্য। এটিকে অন্য কাজে ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাছাড়া মসজিদে ব্যবসা-বাণিজ্য করা বা ব্যক্তিগত সম্পদ, প্রাণী বা বস্ত্ত অনুসন্ধান করা নিষিদ্ধ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৩২; তিরমিযী, ইরওয়া হা/১২৯৫)। তবে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কোন বিষয়ের ঘোষণা বা মানব জীবন রক্ষার বিষয়ে ঘোষণা মসজিদের মাইকে দেওয়ায় দোষ নেই (ইবনু আরফা, শারহু হুদূদ ৪৩১ পৃ.; উছায়মীন, দুরূস ওয়া ফাৎওয়াল হারাম আল-মাক্কী; আল-কাওকাবুল ওয়াহহাজ ৮/২১৩)।
প্রশ্ন (৬৭১) : ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে কী জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে? করা হ’লে তাদের অপরাধ কী?
উত্তর : ক্বিয়ামতের দিন চন্দ্র ও সূর্যকে ভাঁজ করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে মর্মে বিশুদ্ধ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ছহীহাহ হা/১২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৪৩)। তবে এটি শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়। কারণ এই দু’টো আল্লাহর অনুগত সৃষ্টি। আল্লাহ বলেন, তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও বহু মানুষ? (হজ্জ ২২/১৮)। বরং দু’টি কারণে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে- (১) জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে। যেমন পাথর জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার হবে। (২) চন্দ্র ও সূর্যের উপাসকদের লজ্জা দেওয়ার জন্য। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, দুনিয়ায় তারা যাদের উপাসনা করেছিল তা বাতিল ছিল (আলবানী, ছহীহাহ হা/১২৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৬৭২) : মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেওয়ালে মেহরাবের দুই পার্শ্বে লাল, হলুদ বা অন্য যে কোন রং মিশ্রিত মিনারের চিত্র দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা যাবে কি? যদি না যায়, তাহ’লে ঐ সকল রং মিশ্রিত মিনারযুক্ত টাইলস খুলে ফেলা কি যরূরী? না কিছু দিয়ে ঢেকে দিলে চলবে?
উত্তর : মসজিদের কোন অংশেই অধিক সাজ-সজ্জা করা সমীচীন নয়। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মসজিদ সমূহকে অতিরিক্ত চাকচিক্যময় করে নির্মাণ করার জন্য আমি নির্দেশপ্রাপ্ত হইনি। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তোমরা উহাকে চাকচিক্যময় করবে যেভাবে ইহূদী-নাছারাগণ চাকচিক্যময় করেছে (আবুদাউদ হা/৪৪৮; মিশকাত হা/৭১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫৫০)। অতএব ছালাতের মধ্যে মুছল্লীর অধিক দৃষ্টি আকর্ষণকারী যেকোন ছবি বা টাইল্স মসজিদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যরূরী। যাতে ছালাতের মধ্যে তা মুছল্লীর দৃষ্টি ছিনিয়ে না নেয় ও খুশূ-খুযূ বিনষ্ট না হয় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৭৫৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছালাতের মধ্যে (আল্লাহর প্রতি) নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী হা/১২১৬; মুসলিম হা/৫৩৮)। তবে প্রত্যেক মুছল্লীকে অবশ্যই ছবির দিকে না তাকিয়ে সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩০১২; আছলু ছিফাতি ছালাতিন নবী ৩/১০৫১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৭৩) : সহবাসকালীন শরীরে থাকা পোষাকে বীর্য না লাগলে উক্ত পোষাকে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : স্ত্রী সহবাসে কেবল গোসল করা ফরয। কাপড় ধোয়া ফরয নয়। পোষাক পরিধান করে সহবাস করলে পোষাক নাপাক হয় না। এমনকি কাপড়ে বীর্য লেগে গেলেও কাপড় নাপাক হয় না। বরং কাপড়ে বীর্য লেগে গেলে উক্ত স্থান ধুয়ে বা ঘষে বীর্য তুলে ফেলবে এবং তাতে ছালাত আদায় করবে। কারণ মৌলিকভাবে বীর্য নাপাক নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, বীর্য দেখলে কেবলমাত্র সে স্থানটি ধুয়ে ফেলবে। আর না দেখা গেলে স্থানটিতে কেবল পানি ছিটিয়ে দিবে। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য ঘষা দিয়ে তুলে ফেলেছি এবং তিনি সেই কাপড়েই ছালাত আদায় করেছেন’ (আহমাদ হা/২৪১১০; মুসলিম হা/২৮৮, সনদ ছহীহ)। যদি তা অপবিত্র হ’ত, তাহ’লে ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব হ’ত (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/৬০৪-৬০৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৪৫৪)।
প্রশ্ন (৬৭৪) : ক্বিয়ামতের দিন যেনাকারীর শাস্তি কেমন হবে?
উত্তর : যেনা অতীব জঘন্য কর্ম। তওবা ছাড়া আল্লাহ তাকে মাফ করবেন না। আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায় (ফুরক্বান ২৫/৬৮-৬৯)। হাদীছে এসেছে, তাদেরকে উলঙ্গ অবস্থায় একটি পেটমোটা সরু মুখ সম্পন্ন চুলায় জ্বলন্ত আগুনের মাঝে পোড়ানো হবে (বুখারী হা/১৩৮৬; মিশকাত হা/৪৬২১)।
প্রশ্ন (৬৭৫) : ছালাতে ইমামতি করার সময় একসাথে তিনবার সূরা ইখলাছ পাঠ করলে পূর্ণ কুরআন পাঠের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি? এসময় মুছললীগণও কি একই ছওয়াব পাবে?
উত্তর : পবিত্র কুরআন মূলতঃ তিনটি বিষয়ে বিভক্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরা ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। অর্থাৎ সূরা ইখলাছ একবার পাঠে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠের ছওয়াব অর্জিত হয়, যদিও তা এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করার নামান্তর নয় (বুখারী হা/৬৬৪৩; মুসলিম হা/৮১১-১২; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ১৭/১৩৭-১৩৯)। আর মুছল্লীরা মনোযোগ দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করলে তেলাওয়াতকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব তারাও পাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/২৯৬)। দ্বিতীয়তঃ এরূপ আমল করা যাবে, তবে নিয়মিত নয়। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন আমলের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন (৬৭৬) : ইবাদতের উদ্দেশ্য না রেখে কেবল সম্মানের উদ্দেশ্যে কাউকে সিজদা করা যাবে কি? ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) কি এটাকে জায়েয বলেছেন?
উত্তর : পূর্বের কোন কোন নবীর যুগে সম্মানের উদ্দেশ্যে সিজদা করা জায়েয থাকলেও শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩; ছহীহাহ হা/৩৪৯০; আবুদাঊদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৭০; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৩৬)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) সিজদাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। এক- ইবাদতের সিজদা। যা আল্লাহর জন্য খাছ। দুই- সম্মানের সিজদা। যা ফেরেশতাগণ আল্লাহর হুকুমে আদম (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে করেছিলেন। তিনি বলেন, দুই সিজদা কখনোই এক নয়। অতএব তিনি সম্মানের সিজদাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য জায়েয বলেননি (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৪/৩৬১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৭৭) : আমাদের এখানে কোন আহলেহাদীছ মসজিদ নেই। খতীব ছাহেব সঠিকভাবে খুৎবা দিতে পারেন না। এমতাবস্থায় মোবাইল লাইভে আহলেহাদীছ আলেমগণের খুৎবা শুনে মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায় করলে জুম‘আর পূর্ণ ছওয়াব অর্জিত হবে কি?
উত্তর : এভাবে খুৎবা শুনে জুম‘আর ছওয়াব অর্জিত হবে না। বরং মসজিদে গিয়ে ইমামের খুৎবা শুনে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করবে। প্রয়োজনে যে মসজিদে খুৎবা উত্তমরূপে দেওয়া হয়, সেখানে গিয়ে খুৎবা শুনে ছালাত আদায় করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৩/২২৩-২৪ পৃ.)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করার পর জুম‘আর ছালাতে এলো, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনল, তার পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয় (মুসলিম হা/৮৫৭; মিশকাত হা/১৩৮৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি গোসল করল এবং সকাল সকাল মসজিদে এসে ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনল এবং নিশ্চুপ থাকল তার জন্য প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের (নফল) ছিয়াম ও ছালাতের ছওয়াব রয়েছে (তিরমিযী হা/৪৯৬; আহমাদ হা/১৬২২৩; ছহীহুত তারগীব হা/৬৯০; মিশকাত হা/১৩৮৮)।
প্রশ্ন (৬৭৮) : সূরা তূরের ৭ম আয়াত (নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের শাস্তি অবশ্যই আসবে) পাঠ করার পরে ওমর (রাঃ) আল্লাহর ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান এবং পরবর্তীতে ১ মাস অসুস্থ থাকেন। এ ঘটনার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কিছু ঘটনা তাফসীর সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, যার সবই যঈফ (তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/৪০০; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : আব্দুস সালাম বিন মুহসিন, দিরাসাতুন নাক্বদিইয়াহ ফিল মারভিইয়াতিল ওয়ারেদাহ ফী শাখছিইয়াতি ওমর ১/৩২৭-৩১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৭৯) : ওযূর ক্ষেত্রে মাথা মাসাহ করার সময় মহিলাদের মাথায় খোপা বা ব্যান্ডজাতীয় কিছু থাকলে তা খুলে রাখতে হবে কি?
উত্তর : সুযোগ থাকলে এগুলি খুলে রেখে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। আর সহজ না হ’লে বা পর্দার পরিবেশ না থাকলে মাথার উপরে ওড়নাসহ খোপা বা ব্যান্ড রেখে মাথা মাসাহ করবে। রাসূল (ছাঃ) নিজে মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন (মুসলিম হা/২৭৫; তিরমিযী হা/১০১)। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ কর’ (আহমাদ হা/২৩৯৩৯ সনদ ছহীহ)। অতএব শারঈ কারণে নারী-পুরুষ সবার জন্য ওড়না বা পাগড়ীর উপর মাসাহ করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ‘উমদাহ ১/২৬৫-৬৬; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৩৯)।
প্রশ্ন (৬৮০) : বাজার থেকে সদ্য ক্রয়কৃত নতুন বা পুরাতন কাপড় পরিধান করে ছালাত আদায় করা যাবে কি? না-কি আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে?
উত্তর : বাজার থেকে সদ্য ক্রয়কৃত নতুন-পুরাতন সকল পোষাক ধুয়ে পরিধান করা উত্তম। কারণ নতুন পোষাকেও অনেক মানুষের স্পর্শ থাকে, যার ফলে অপবিত্রতা লেগে যেতে পারে। আর ব্যবহৃত পুরাতন পোষাক ধুয়ে পরিধান করা যরূরী। কারণ উক্ত পোষাকের অপবিত্রতা লেগে থাকার সম্ভাবনা অধিকতর বেশী (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়াহ ১১/৪৮৭৮)। উল্লেখ্য যে, নতুন পোষাক পরিধানকালে নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করা সুন্নাত- আল-হামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা ওয়া রাঝাক্বানীহি মিন গায়রি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা ক্বুউওয়াহ (আবুদাঊদ হা/৪০২৩; ছহীহুল জামে’ হা/৬০৮৬)।
প্রশ্ন (৬৮১) : কোন ব্যক্তি মসজিদের আযান ও ইক্বামতের দায়িত্ব পালন করে ইমামতির দায়িত্বও পালন করতে পারবেন কি?
উত্তর : একই ব্যক্তি আযান, ইক্বামত ও ইমামতির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে আযান ও ইক্বামত আলাদা ব্যক্তি দেওয়াই উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৮০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৩৯)।
প্রশ্ন (৬৮২) : বিদ‘আতে জড়িয়ে পড়লে কি অতীতের আমল সমূহ বিনষ্ট হবে? নাকি ভবিষ্যতের আমল বিনষ্ট হবে? নাকি কেবল বিদ‘আতযুক্ত আমলটুকু বিনষ্ট হবে?
উত্তর : বিদ‘আতীর আমল বিনষ্টের ব্যাপারে বিদ্বানগণ বিশদ আলোচনা করেছেন, যার সারমর্ম হচ্ছে, বিদ‘আতযুক্ত আমল সমূহ সরাসরি বিনষ্ট হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০) এবং ভবিষ্যতের অন্যান্য আমল সমূহের ফরযিয়াত আদায় হ’লেও ইবাদতের বিপরীতে বর্ণিত ফযীলতসমূহ থেকে সে বঞ্চিত হবে (নববী, শরহ মুসলিম ৯/১৪১; শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম ১/১০৮-১১১; ড. ইব্রাহীম রুহায়লী, মাওয়াক্বিফু আহলিস সুন্নাহ মিন আহলিল আহওয়া ওয়াল বিদা‘ ১/২৯২ পৃ.)। আল্লাহ বলেন, তারা হ’ল সেই সব লোক যাদের সকল আমল পার্থিব জীবনে বিফলে গেছে। অথচ তারা ভেবেছে যে, তারা সৎকর্ম করছে (কাহ্ফ ১৮/১০৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, বিদ‘আতীর নফল ও ফরয আমলসমূহ কবুল করা হবে না (বুখারী হা/৭৩০০; মুসলিম হা/১৩৭০)। রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের দিন বিদ‘আতীদেরকে হাউযে কাওছারের পানি পান থেকে বঞ্চিত করবেন (বুখারী হা/৬৫৮৪; মুসলিম হা/২৬; মিশকাত হা/৫৫৭১)।
প্রশ্ন (৬৮৩) : ছালাতের সিজদায় কুরআনে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : রুকূ ও সিজদায় কুরআনের সূরা ও আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! আমাকে রুকূ-সিজদায় কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূতে তোমাদের রবের মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের সাথে দো‘আ কর। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ কবূল করা হবে’ (মুসলিম হা/৪৭৯-৪৮০; মিশকাত হা/৮৭৩)। ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, এটা এজন্য হ’তে পারে যে, রুকূ ও সিজদায় বান্দার মস্তক অবনত থাকে। এ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা আদবের খেলাফ (মাজমু‘উল ফাতাওয়া ৫/৩৩৮)। তবে মর্ম ঠিক রেখে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে পড়া যাবে। যেমন রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া… (বাক্বারাহ ২০১)-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা পাঠ করা (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩৪-১৩৫ পৃ.)। তাছাড়া একদল বিদ্বানের মতে, কেবল দো‘আর উদ্দেশ্যে পাঠ করলে তা জায়েয হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪৪৩; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে’ ৩/১৩৩)।
প্রশ্ন (৬৮৪) : বেশীরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল কক্ষেই শিক্ষা উপকরণ হিসাবে নানা রকম জীবজন্তু ও মানুষের ছবি দিয়ে সাজানো থাকে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদেরকে এই সব কক্ষেই ছালাত আদায় করতে হয়। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : প্রাণীর ছবি নেই এমন কক্ষে ছালাত আদায় করার চেষ্টা করবে এবং ছবি অপসারণ করার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নছীহত করবে। সম্ভব না হ’লে উক্ত কক্ষেই সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে ছালাত আদায় করবে। এমন বাধ্যগত পরিস্থিতিতে সেখানে ছালাত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৫০-৫১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১/৩১০, ৭/২৮১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৬০)।
প্রশ্ন (৬৮৫) : ছালাতে সিজদা দেওয়ার সময় আগে নাক ঠেকবে না কপাল ঠেকবে, আর সিজদা থেকে উঠার সময় কপাল আগে উঠবে না নাক উঠাতে হবে?
উত্তর : সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে প্রথমে কপাল রাখবে এরপর নাক রাখবে। আর উঠানোর সময় সুবিধামত উঠাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩৭০ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৮৬) : যরূরী কোন কাজ করার ক্ষেত্রে ছালাত ক্বাযা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই ছালাত আদায় করে নেওয়া যাবে কি?
উত্তর : আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত (নিসা ৪/১০৩)। অতএব নির্ধারিত সময়েই ছালাত আদায় করতে হবে। কেউ ইচ্ছা করে সময়ের পূর্বে ছালাত আদায় করলে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং গুনাহগার হবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৯৬)। কারণ ওয়াক্ত হওয়া ছালাতের পূর্বশর্ত। তবে বিশেষ শারঈ ওযর বশতঃ মুক্বীম অবস্থাতেও কেবল আছর ও এশার ছালাত ‘জমা তাক্বদীম’ তথা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে যোহর এবং মাগরিবের সাথে আদায় করা যায়। যেমন পৃথক এক্বামতের মাধ্যমে যোহর ও আছর (৪+৪=৮ রাক‘আত) এবং মাগরিব ও এশা (৩+৪=৭ রাক‘আত) (বুখারী হা/১১৭৪; মুসলিম হা/১৬৩৩-৩৪; নায়লুল আওত্বার ৪/১৩৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৮৮ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৮৭) : কাউকে ধন্যবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে থ্যাংক ইউ বা ওয়েলকাম বলায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : কেউ উপকার করলে তার প্রতিদানে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলা সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হ’লে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন) তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল (তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৩০২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৬৮)। ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বলাতে কি কল্যাণ রয়েছে লোকেরা তা যদি জানত, তাহ’লে তা পরস্পরকে বেশী বেশী বলত (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৭০৫০)। এছাড়া কেউ ‘বারাকাল্লাহু ফীকুম’ বলে দো‘আ করলে তার জওয়াবে অনুরূপ বলবে (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০১৩৫, সনদ জাইয়িদ)। এক্ষণে কেউ কৃতজ্ঞতাবোধক বাক্য থ্যাংক ইউ বা ধন্যবাদ বললে তাতে কোন দোষ নেই। তবে সাথে জাযাকাল্লাহু খায়রান যোগ করে নিবে, যা সুন্নাতী আমল হওয়ায় অফুরন্ত ছওয়াবের কারণ হবে।
প্রশ্ন (৬৮৮) : নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ দো‘আ কবুলের অন্যতম কারণ মর্মে ইমাম আহমাদ (রহঃ) এবং রুটি বিক্রেতার মধ্যে প্রসিদ্ধ একটি কাহিনী রয়েছে। এর সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উল্লেখিত মর্মে সরাসরি কোন বর্ণনা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় না। তবে তারীখু বাগদাদে ইসহাক বিন রাহওয়াইহ-এর সাথে ইমাম আহমাদের অনুরূপ একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে রুটি বিক্রেতার কথা উল্লেখ নেই। উপরন্তু সেটির সনদও গ্রহণযোগ্য নয় (তারীখু বাগদাদ ১৭/৮১; যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৩২২)। উল্লেখ্য, অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করার ফযীলত বহু হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) প্রতিদিন সকালেই কেবল ১০০ বার ইস্তেগফার করতেন (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৭৩৭; ছহীহাহ হা/১৬০০)।
প্রশ্ন (৬৮৯) : পুরাতন জিনিস ক্রয় করার পর যদি জানা যায় সেটি চুরি করা মাল, সেক্ষেত্রে তা ফেরৎ দিতে হবে কি? সম্ভব না হ’লে ব্যবহার করা হালাল হবে কি?
উত্তর : ক্রয় করার পর জানতে পারলে মূল মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর মালিক মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীদের দিবে। কাউকে না পাওয়া গেলে মসজিদ, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ প্রভৃতি খাতে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে দান করে দিবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/২৭৬)।
প্রশ্ন (৬৯০) : কোন যুবক-যুবতীর মধ্যে বহুদিন যাবৎ অবৈধ সম্পর্ক ছিল। শরী‘আত বুঝার পর তারা সম্পর্ক ত্যাগ করতে চায়। এক্ষণে তারা পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে কি?
উত্তর : বেগানা নারী ও পুরুষের মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা হারাম। অতএব বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে চাইলে প্রথমতঃ পূর্বের পাপের জন্য খালেছ নিয়তে অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে তারা ব্যতীত, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)। অতঃপর অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে শরী‘আত সম্মতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা ভরণ-পোষণ দানে সক্ষম, তারা বিবাহ কর। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে অধিক অবনতকারী ও গুপ্তাঙ্গের হেফাযতকারী’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩০৮০)। আর নর-নারীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসার জন্য বিবাহই সর্বোত্তম বন্ধন (হাকেম হা/২৬৭৭; ছহীহাহ হা/৬২৪)।
প্রশ্ন (৬৯১) : সফরকালে কেউ দো‘আ চাইলে ‘ফী আমানিল্লাহ’ বলা যাবে কী?
উত্তর : সফরকালে কেউ দো‘আ চাইলে ‘ফী আমানিল্লাহ’ বলার স্পষ্ট দলীল নেই। তবে সাধারণভাবে এক্ষেত্রে ফী আমানিল্লাহ, ফী হিফযিল্লাহ, ফী কানাফিল্লাহ, আলা বারাকাতিল্লাহ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারে দোষ নেই। যেমন জনৈক ছাহাবী সফরকালে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে বিদায় চাইলে তিনি তার হাত ধরে বলেন, ‘ফী হিফযিল্লাহ ওয়া ফী কানাফিল্লাহ’… (আল্লাহর হেফাযতে ও তাঁর রহমতের ছায়া তলে…) (দারেমী হা/২৬৭১, ২৭১৩ সনদ জাইয়িদ, তাহকীক : সালীম আসাদ; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/৪৮২-৮৩; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব-৮/৩৮৫)। তবে সফরকালীন এর চাইতে বিশুদ্ধ ও সুন্দর দো‘আ সমূহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আসতাওদি‘উল্লা-হা দীনাকুম ওয়া আমা-নাতাকুম ওয়া খাওয়া-তীমা আ‘মা-লিকুম’ (আমি আপনার বা আপনাদের দ্বীন, ও আমানত সমূহ এবং শেষ আমল সমূহকে আল্লাহর হেফাযতে ন্যস্ত করলাম’) (তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৩৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট দো‘আ চাইলে তিনি বলেন, زَوَّدَكَ اللَّهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ অর্থ : ‘আল্লাহ তোমাকে কারো নিকট চাওয়া থেকে বাঁচান, তোমার গোনাহ মাফ করুন এবং তুমি যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন’ (তিরমিযী হা/৩৪৪৪; মিশকাত হা/২৪৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৭৯)।
প্রশ্ন (৬৯২) : যোহরের চার রাক‘আত ছালাতের স্থানে আমি পাঁচ রাক‘আত পড়িয়েছি। সহো সিজদা না দিয়ে আমি সালাম ফিরিয়ে ছালাত সমাপ্ত করেছি। মুছল্লীরা পরে আমাকে অবগত করলে আমি তাদের নিয়ে কেবল দু’টো সহো সিজদা দিয়েছি, সালাম ফিরাইনি। এক্ষণে আমাদের ছালাত হয়েছে কী?
উত্তর : প্রথম সালাম ফিরানোর মাধ্যমে ছালাত সমাপ্ত করায় ছালাত শুদ্ধ হয়েছে (বুখারী হা/৭১৫; জাছছাছ, শারহু মুখতাছারুত ত্বাহাবী ২/১৭)। তবে সহো সিজদার পরে সালাম না ফিরানো ভুল হয়েছে। কারণ সহো সিজদার পর সালাম ফিরানো সুন্নাত (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১০১৬, দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সিজদায়ে সহো’ অধ্যায় ১৫২ পৃ.)। যদিও এটি পরিত্যাগ করা ছালাত ভঙ্গের কারণ নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৭৪)
প্রশ্ন (৬৯৩) : আমার পিতা কয়েকবার হজ্জ করেছেন। কিন্তু তিনি সামান্য ভুলের জন্য আমার মাতার সাথে জঘন্য ব্যবহার করেন। মিথ্যা অপবাদ দেন। গায়ে হাত তোলেন। আমি এসব সহ্য করতে পারি না। আমার জন্য করণীয় কি?
উত্তর : পিতা-মাতা সন্তানের নিকট সমান অধিকার রাখেন। যদিও সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অগ্রাধিকার রয়েছে। এক্ষণে মায়ের প্রতি পিতার অসদাচরণের ক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্ব হ’ল নিরপেক্ষভাবে উভয়কে তাদের ভুলের ব্যাপারে সচেতন করা এবং সাধ্যমত মীমাংসার চেষ্টা করা। প্রয়োজনে নানা-দাদা তথা উর্ধ্বতন অভিভাবককে অবহিত করে তাদের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়’ (নিসা ৪/১৩৫)। এক্ষণে তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়া তাদের প্রতি সদাচরণের অংশ। আর মীমাংসা করে দেওয়ার কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি না করলে পিতা-মাতার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে, যা সন্তানের জীবনের জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। রাসূল (ছাঃ) মীমাংসা করার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে (নফল) ছিয়াম, ছালাত ও ছাদাক্বা অপেক্ষাও উত্তম আমলের কথা বলব না? ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, বিবদমান দু’ব্যক্তির মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। কেননা পরস্পর সম্পর্ক বিনষ্ট করা হ’ল দ্বীন ধ্বংসকারী বিষয় (তিরমিযী হা/২৫০৯; মিশকাত হা/৫০৩৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৮১৪)। সর্বোপরি তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহর নিকটে বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে এবং ধৈর্যধারণ করতে হবে।
প্রশ্ন (৬৯৪) : একটি হাদীছে রয়েছে, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে ত্রিশ বছর বেশী বাঁচা যাবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে ত্রিশ বছর হায়াত কমে যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জীবন ও জীবিকায় বরকত লাভ হয় এবং হায়াত বৃদ্ধি পায় বলে একাধিক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (তিরমিযী হা/২১৪১; মিশকাত হা/২২৩৩; ছহীহাহ হা/১৫৪)। তবে নির্দিষ্টভাবে ত্রিশ বছর বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়ার বিষয়ে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফাহ হা/২২৯০; যঈফুল জামে‘ হা/১৭৭৮)।
প্রশ্ন (৬৯৫) : আমি গর্ভবতী হওয়ার পর ৭ম মাসে পেটে ব্যথা অনুভব করি এবং রক্তস্রাব হয়। আমি হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসক আমাকে হাসপাতালে অবস্থান করতে বলেন। কিন্তু আমার বাড়িতে একমাত্র মেয়ে থাকায় চিকিৎসকের কাছে ঔষধ লিখে নিয়ে আমি বাসায় চলে যাই। কয়েকদিন পরে আমার পেটে বাচ্চা মারা যায়। এতে কি আমি গুনাহগার হব? এজন্য কি কোন কাফফারা দিতে হবে?
উত্তর : এজন্য কোন গুনাহ হবে না বা কাফফারাও দিতে হবে না। কারণ এটা মানব হত্যার শামিল নয়। বরং কেউ ইচ্ছা করে গর্ভপাত ঘটালে তাকে গুনাহগার হতে হবে এবং কাফফারা দিতে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/২৬৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২১/৪০৪-৪০৫)। এক্ষণে কেউ ১২০ দিন অতিক্রম করার পর স্বেচ্ছায় গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকলে তাকে খালেছ তওবার সাথে সাথে দিয়াত বা রক্তপণ এবং কাফফারা দিতে হবে। রক্তমূল্য হ’ল গুর্রাহ বা ৫টি উট বা সমমূল্যের অর্থ, যা তার উত্তরাধিকারীরা পাবে। তবে তারা যদি মাফ করে দেয়, তাহ’লে রক্তমূল্য লাগবে না। আর কাফফারা হ’ল একজন দাস মুক্ত করা। এতে অক্ষম হ’লে ধারাবাহিকভাবে দু’মাস ছিয়াম পালন করতে হবে (বুখারী হা/৬৯১০; মুসলিম হা/১৬৮১; আল-মুগনী ৮/৩২৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২১/২৫৫, ৩১৬, ৪৩৪-৪৫০ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৯৬) : হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা কিভাবে গুনাহ মাফের কারণ হয়?
উত্তর : হাজরে আসওয়াদ একটি পাথর মাত্র। সেটি আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না, যেমনটি ওমর (রাঃ) বলেছেন (বুখারী হা/১৫৯৭; মুসলিম হা/১২৭০)। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, জিজ্ঞেস কর, সবকিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? যিনি আশ্রয় দেন ও যার উপরে আশ্রয়দাতা কেউ নেই, যদি তোমরা জানো (মুমিনূন ২৩/৮৮)। তবে পাথরকে চুমু দেওয়া বা স্পর্শ করা গুনাহ মাফের কারণ (তিরমিযী হা/৯৫৯; মিশকাত হা/২৫৮০; ছহীহুত তারগীব হা/১১৩৯)। যেমন ওযূ করা, পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া ইত্যাদি ইবাদত গুনাহ মাফের কারণ। পাথরকে স্পর্শ করা বা চুমু দেওয়া যদি রাসূলের নির্দেশ না হ’ত, তাহলে একে স্পর্শ করে বরকত লাভ করার আশা করা বরং শিরক হয়ে যেত। অতএব মূলতঃ পাথরকে চুমু বা স্পর্শ নয়; বরং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অনুসরণের কারণে গুনাহ মাফ হবে (ইবনুল বাত্ত্বাল, শরহ ছহীহ বুখারী হা/৬৮-এর আলোচনা, ৪/২৭৯; ক্বাযী ইয়ায, ইকমালুল মু‘আল্লিম ৪/৩৪৫; উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৬৭, ১/১৮৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬৯৭) : দুনিয়াতে যাদের ভাই বা বোন নেই তারা কি আখেরাতে ভাই বা বোন পাবে?
উত্তর : পৃথিবীতে যাদের ভাই বা বোন নেই তাদের পরকালে আপন ভাই বা বোন পাওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে জান্নাতবাসীগণ সেখানে যা চাইবে তাই পাবে। আল্লাহ বলেন, ‘…সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে রয়েছে যা তোমরা দাবী করবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩১)। অতএব বান্দার চাহিদা মোতাবেক আল্লাহ তাকে জান্নাতে ভাই বা বোন দিতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন মুমিন যদি জান্নাতে সন্তান কামনা করে, তবে তার কামনা অনুসারে সন্তানের গর্ভ, জন্ম ও বয়সের পূর্ণতা প্রাপ্তি সবকিছু এক মুহূর্তেই সংঘটিত হবে’ (তিরমিযী হা/২৫৬৩; মিশকাত হা/৫৬৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৪৯)।
প্রশ্ন (৬৯৮) : জনৈকা মেয়ে বিবাহ করতে চায় না। কিন্তু পরিবার তাকে বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছে। এক্ষণে ঐ মেয়ের করণীয় কী?
উত্তর : বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। মানব বংশ রক্ষার জন্য এটি আল্লাহ প্রদত্ত একটি চিরন্তন ব্যবস্থা। এটি নবীগণের সুন্নাত। বিবাহ করার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে অনেক নির্দেশনা এসেছে (নিসা ৪/৩; নূর ২৪/৩২; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩০৮০)। তাই একান্ত অক্ষমতা না থাকলে বিবাহ থেকে বিরত থাকা যাবে না। এক্ষণে কেউ বিয়ে করতে না চাইলে এবং সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলে তাকে বিয়ে করাতে বাধ্য করা যাবে না। জনৈকা যুবতী বিয়ে করতে না চাইলে রাসূল (ছাঃ) তার পিতাকে বলেন, তার সম্মতি ছাড়া তাকে বিয়ে দিবে না (ছহীহুত তারগীব হা/১৯৩৪)।
প্রশ্ন (৬৯৯) : আমার স্বামী প্রায়শঃ আমার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। আমার আশঙ্কা যেকোন সময় তালাক দিয়ে দিতে পারে। এক্ষণে তাকে না জানিয়ে সাময়িক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে কি?
উত্তর : সাধারণ অবস্থায় স্বামীর অনুমতি ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না। কারণ সন্তান গ্রহণ বিবাহের অন্যতম মূখ্য উদ্দেশ্য। তবে স্বামীর অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সম্পর্ক স্থির না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্রণে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/৩০০, ৩২৫ পৃ.; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৯/০২ পৃ.)। তবে অনেক সময় সন্তান গ্রহণও পারস্পরিক সুসম্পর্কের কারণ হতে পারে। সুতরাং সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রাখা, সদাচরণ এবং দো‘আর মাধ্যমে স্বামীর অনিষ্টকারিতা কাটানোর চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন (৭০০) : পিতা ছেলেকে অভিশাপ দিয়ে মারা গেছেন। ছেলের জীবনে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এক্ষণে ছেলের করণীয় কি?
উত্তর : সন্তানের বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করা সমীচীন নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নিজেদের জন্য বদ দো‘আ করো না, নিজ সন্তানদের বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করো না এবং নিজেদের অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে বদ দো‘আ করো না, যাতে তোমরা এমন এক সময়ে না পৌঁছে যাও, যে সময় দো‘আ করা হ’লে তা তোমাদের জন্য কবুল করা হয় (মুসলিম হা/৩০০৯, মিশকাত হা/২২২৯)। অর্থাৎ এর ফলে বদ দো‘আ কার্যকর হয়ে যেতে পারে। এক্ষণে কোন পিতা-মাতা যদি বদ দো‘আ করে মারা যান, তাহ’লে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে, দো‘আ করতে হবে, দান-ছাদাক্বা করতে হবে এবং পিতা-মাতার জীবদ্দশায় তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল এমন ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ এই যে, ব্যক্তি তার পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে’ (আহমাদ হা/৫৬১২; ছহীহুল জামে‘ হা/১৫২৫)। তিনি বলেন, ‘কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার পিতার বন্ধুজনের সঙ্গে সদাচরণের মাধ্যমে সম্পর্ক রক্ষা করা’ (মুসলিম হা/২৫৫২; মিশকাত হা/৪৯১৭)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘এ হাদীছ পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের আত্মীয়-স্বজন বা প্রিয় মানুষদের প্রতি সদাচরণকে সর্বোত্তম নেকীর কাজ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। আর এসব লোকের প্রতি সদাচরণের কারণ হ’ল তারা পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয় মানুষ’ (শরহ মুসলিম হা/২৫৫২-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ১৬/১০৯-১১০)।

 

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button