Sunday , June 4 2023
Home / মাসিক আত-তাহরীক

মাসিক আত-তাহরীক

প্রশ্ন (55) : জামাতা শ্বশুর বাড়িতে কতদিন পর্যন্ত থাকতে পারবে? তিন দিনের বেশী অবস্থান করা কি হারাম?

প্রশ্ন (55) : জামাতা শ্বশুর বাড়িতে কতদিন পর্যন্ত থাকতে পারবে? তিন দিনের বেশী অবস্থান করা কি হারাম?

উত্তর : জামাতা শ্বশুরের অন্যতম নিকটাত্মীয়। সুতরাং শ্বশুরের সামর্থ্য ও নিমন্ত্রণ সাপেক্ষে জামাতা শ্বশুর বাড়িতে যতদিন খুশি থাকতে বা খেতে পারবে। এতে কোন শারঈ বাধা নেই। উল্লেখ্য যে, একটি হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়ে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল মেহমানের প্রাপ্য কী? তিনি বললেন, একদিন একরাত ভালভাবে মেহমানদারী করা, আর তিন দিন হ’ল (সাধারণ) মেহমানদারী। আর তার চেয়েও অধিক হ’লে তা হ’ল তার প্রতি দয়া (বুখারী হা/৬০১৯; মিশকাত হা/৪২৪৪)। এই হাদীছের ভিত্তিতে কেউ কেউ ধারণা করেন যে, জামাই বা অনুরূপ নিকটাত্মীয়রাও এই নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একথা সঠিক নয়। বরং হাদীছটি মূলতঃ সাধারণ আগন্তুক বা মুসাফির মেহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (দ্র. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী ১০/৫৩২-৩৩; মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত ৭/২৭৩১; আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ ১০/১৫২)। ইসলামে মেহমানকে সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী দায়িত্ব। সেকারণে রাসূল (ছাঃ) মেহমানদারীকে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এমনকি একে মেহমানের হক হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন (বুখারী হা/৬০১৯)। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই মুসাফিরকে মেযবানের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মেহমানদারী তিন দিন এবং উত্তমরূপে মেহমানদারী একদিন ও একরাত্রি। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের নিকট অবস্থান করে তাকে পাপে নিপতিত করবে। তখন তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে সে তাকে পাপে নিপতিত করবে? তিনি বললেন, সে (মেহমান) তার নিকট (এমন দীর্ঘ সময়) অবস্থান করবে, অথচ তার (মেযবানের) নিকট এমন কিছু নেই, যা দ্বারা সে তার মেহমানদারী করবে’ (মুসলিম হা/৪৮; আহমাদ হা/২৭২০৯)

প্রশ্ন (56) : মোহরানা আদায়ের গুরুত্ব জানতে চাই।

প্রশ্ন (56) : মোহরানা আদায়ের গুরুত্ব জানতে চাই।

উত্তর : মোহরানা বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, বিবাহের সর্বাধিক প্রয়োজনীয় শর্ত হ’ল, তোমরা যা দ্বারা মহিলার লজ্জাস্থান হালাল করবে, তা আদায় করা (আবুদাউদ হা/২১৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১৫৪৭)। মোহরানা পরিশোধ না করার নিয়ত করা গর্হিত অপরাধ। রাসূল (ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কম বা বেশী মোহরের বিনিময়ে কোন মহিলাকে বিবাহ করল, অথচ মোহর পরিশোধ করবে না বলে নিয়ত করল এবং এই প্রতারণা করা অবস্থায় মারা গেল তাহ’লে ক্বিয়ামতের দিন সে যেনাকারী হিসাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে’ (ছহীহুত তারগীব হা/১৮০৬ ও ১৮০৭)। অতএব মোহরানা আদায়ে কোনরূপ টালবাহানা করা যাবে না।

প্রশ্ন (57) : ওহোদ পাহাড় কি রাসূল (ছাঃ)-কে বা রাসূল (ছাঃ) নিজেই ওহোদ পাহাড়কে ভালবাসতেন? এর কারণ কি?

প্রশ্ন (57) : ওহোদ পাহাড় কি রাসূল (ছাঃ)-কে বা রাসূল (ছাঃ) নিজেই ওহোদ পাহাড়কে ভালবাসতেন? এর কারণ কি?

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়কে ভালোবাসতেন এবং ওহোদ পাহাড়ও রাসূল (ছাঃ)-কে ভালোবাসত। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও একে ভালোবাসি (বুখারী হা/২৮৮৯; মিশকাত হা/২৭৪৫)। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এই ভালোবাসা রূপক নয়; বরং প্রকৃত অর্থেই ছিল। কারণ রাসূল (ছাঃ) সহ কয়েকজন ছাহাবী যখন ওহোদ পাহাড়ের উপর আরোহন করেছিলেন, তখন তা কেঁপে উঠেছিল। আর রাসূল (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়কে লক্ষ্য করে বলেন, শান্ত হও। পাহাড় রাসূলের নির্দেশে শান্ত হয়ে গিয়েছিল (বুখারী হা/৩৬৯৯; ফাৎহুল বারী ৭/৪৭৮)। পাহাড়ের ন্যায় একটি জড়বস্তু কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে পারে- এ ব্যাপারে ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং পসন্দনীয় কথা হ’ল, ওহোদ আমাদের ভালোবাসে-রাসূল (ছাঃ)-এর এ কথার অর্থ প্রকৃত ভালোবাসা, যা রূপক নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার মতো একটি শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছেন, যার মাধ্যমে সে ভালোবাসে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার বাণী, অনেক পাথরই আল্লাহর ভয়ে (পাহাড় থেকে) পড়ে যায় (বাক্বারাহ ২/৭৪)। অনুরূপ শুকনো কাঠ (আল্লাহর নবীর সামনে) ক্রন্দন করেছিল, কংকর তাসবীহ পাঠ করেছিল। অনুরূপ পাথর মূসা (আঃ)-এর কাপড় নিয়ে দৌড়িয়ে পালাচ্ছিল ইত্যাদি। তবে কেউ কেউ বলেন, ওহোদ আমাদের ভালবাসে অর্থ ওহোদ পাহাড়ের বাসিন্দা তথা আনছাররা আমাদের ভালবাসে (নববী, শরহ মুসলিম হা/১৩৬৫-এর আলোচনা)। 

প্রশ্ন (58) : সরকারী জমিতে জোরপূর্বক মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে কি? এভাবে তৈরীকৃত মসজিদে ছালাত হবে কি? সেখানে দান করা যাবে কি?

প্রশ্ন (58) : সরকারী জমিতে জোরপূর্বক মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে কি? এভাবে তৈরীকৃত মসজিদে ছালাত হবে কি? সেখানে দান করা যাবে কি?

উত্তর : সরকারী জমিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত জবর দখল করে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। কারণ মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ওয়াক্ফ হওয়া আবশ্যক। তবে মালিকানাহীন পরিত্যক্ত খাস জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে, যদি তাতে কারো বৈধ আপত্তি না থাকে বা কারো কোন ক্ষতি না হয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৮/৪২৫; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/১১১; তোহফাতুল মুহতাজ ৩/২৮৯)। এক্ষণে সরকারী হোক বা অন্যের মালিকানাধীন জমি হোক, তা জবর দখল করে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। তবে কেউ সেখানে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে, কেননা মূল দায়ভার সেই ব্যক্তির উপর যে তা অন্যায়ভাবে দখল করেছে (নববী,  আল-মাজমূ‘ ৩/১৬৪; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/৭৭)

প্রশ্ন (59) : কোন জারজ নারীকে বিবাহ করা যাবে কি?

প্রশ্ন (59) : কোন জারজ নারীকে বিবাহ করা যাবে কি?

উত্তর : জারজ নারীকে বিবাহ করা জায়েয। কারণ পিতা-মাতার পাপ সন্তানের উপর বর্তাবে না (আন‘আম ৬/১৬৪; ছহীহাহ হা/২১৮৬)। এক্ষণে মেয়ে যদি তাক্বওয়াশীল হয়, তাহ’লে তাকে বিবাহ করায় কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/১৬৬)। উল্লেখ্য যে, অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া নারীর অভিভাবক হবে তাক্বওয়াশীল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা আদালত (তিরমিযী হা/১১০২; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)।

প্রশ্ন (60) : মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব কি? ছাহাবায়ে কেরামের পর আর কেউ রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছেন কি?

প্রশ্ন (60) : মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব কি? ছাহাবায়ে কেরামের পর আর কেউ রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছেন কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। ছাহাবী ও তাবেঈদের কেউ কেউ রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে আমাকে স্বপেণ দেখবে, সে অচিরেই জাগ্রত অবস্থাতেও আমাকে দেখবে। আর শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না (বুখারী হা/৬৯৯৩; মুসলিম হা/২২৬৬; মিশকাত হা/৪৬০৯-১১)। শয়তান অন্যের রূপ ধারণ করে এসে রাসূলের কথা বলে প্রতারণা করতে পারে। কিন্তু সরাসরি রাসূলের রূপ ধারণ করতে পারবে না। এজন্য দেখা যায়, কিছু বিদ‘আতী প্রচার করে বেড়ায় যে, সে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছে। কিন্তু আদৌ সে রাসূলকে দেখেনি। বরং শয়তানকে দেখেছে। সে রাসূলের মৌলিক গঠন সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় বিভ্রান্ত হয়েছে। এজন্য ইবনু সীরীনের কাছে এসে কেউ যখন বলত, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি। তখন তিনি রাসূলের চেহারার ছিফাত বর্ণনা করতে বলতেন। যদি রাসূলের বৈশিষ্ট্যের সাথে না মিলত তাহ’লে তিনি বলতেন, তুমি অন্য কাউকে দেখেছ (ছহীহাহ হা/২৭২৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফাৎহুল বারী ১২/৩৮৪)। কুলাইব বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি রাসূলকে স্বপ্নে দেখেছি। তখন তিনি বললেন, তাঁর ছিফাত বর্ণনা কর। আমি বললাম, হুবহু হাসান (রাঃ)-এর মতো। তখন তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছো (ছহীহাহ হা/২৭২৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফাৎহুল বারী ১২/৩৮৪)।

প্রশ্ন (61) : স্ত্রী বেনামাযী, বেপর্দা এবং শারঈ বিধান পালনে অনাগ্রহী। এক্ষণে ধৈর্য ধরে দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে, না তালাক দেওয়া উত্তম হবে?

প্রশ্ন (61) : স্ত্রী বেনামাযী, বেপর্দা এবং শারঈ বিধান পালনে অনাগ্রহী। এক্ষণে ধৈর্য ধরে দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে, না তালাক দেওয়া উত্তম হবে?

উত্তর : সাধ্যানুযায়ী দাওয়াত দিয়ে যাওয়াই উত্তম হবে এবং পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাহ’লে তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে) প্রহার কর। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তাহ’লে তাদের জন্য অন্য কোন পথ তালাশ করোনা’ (নিসা ৪/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নারীদেরকে উত্তম নছীহত কর। কেননা নারী জাতিকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহ’লে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে তা সব সময় বাঁকাই থাকবে। অতএব নারীদের নছীহত করতে থাক’ (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮)

তালাক থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট ঘৃণিত হালাল হ’ল তালাক প্রদান করা’ (আবুদাউদ হা/২১৭১; মিশকাত হা/৩২৮০; যঈফুল জামে‘ হা/৪৪)। হাদীছটির সনদ ‘মুরসাল’ হ’লেও মর্মগতভাবে সঠিক (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৩/৫৫)। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তার মধ্যে সংশোধনের কোন লক্ষণ না পেলে তাকে তালাক দেওয়া যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৩১৯, ৩৬৪)

প্রশ্ন (62) : হিজাব পরিহিতা গায়ের মাহরাম নারীকে একাকী পড়ানো যাবে কি? এথেকে অর্জিত অর্থ হালাল হবে কি?

প্রশ্ন (62) : হিজাব পরিহিতা গায়ের মাহরাম নারীকে একাকী পড়ানো যাবে কি? এথেকে অর্জিত অর্থ হালাল হবে কি?

উত্তর : হিজাব পরিহিতা হ’লেও একাকী নির্জনে কোন গায়ের মাহরাম নারীকে পড়ানো যাবে না। কারণ দু’জন বেগানা নারী-পুরুষ একাকী হ’লে তৃতীয়জন থাকে শয়তান (তিরমিযী হা/২১৬৫; মিশকাত হা/৩১১৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯০৮)। এক্ষণে যদি গায়ের মাহরামকে পড়াতে হয় তাহ’লে নির্জনে নয়, বরং অন্য কারো উপস্থিতিতে বা তার মাহরামের উপস্থিতিতে পড়াতে হবে। উল্লেখ্য যে, মেয়েদের জন্য মহিলা শিক্ষিকার ব্যবস্থা করাই নিরাপদ।

প্রশ্ন (63) : শারঈ ওযর বশতঃ মসজিদে যেতে না পারায় ঘরে ছালাত আদায় করলে জামা‘আতের নেকী পাওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন (63) : শারঈ ওযর বশতঃ মসজিদে যেতে না পারায় ঘরে ছালাত আদায় করলে জামা‘আতের নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : শারঈ ওযরের কারণে বাড়িতে একাকী বা জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাকে নেক নিয়তের কারণে পূর্ণ ছওয়াব প্রদান করবেন (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৩২৩)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মানুষ অসুস্থ হ’লে অথবা সফরে থাকলে তার আমালনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হ’ত’ (বুখারী হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/১৫৪৪)

প্রশ্ন (55) : নিয়মিত মাগরিব ছালাতের পর মসজিদে নছীহত করার আয়োজন করা যাবে কি?

প্রশ্ন (55) : নিয়মিত মাগরিব ছালাতের পর মসজিদে নছীহত করার আয়োজন করা যাবে কি?

উত্তর : মুছল্লীদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে যেকোন সময় ছালাত শেষে নিয়মিত দ্বীনী আলোচনার আয়োজন করায় কোন বাধা নেই। তবে মুছল্লীদের মাসনূন যিকর-আযকার শেষ হওয়ার পর আলোচনা শুরু করা উত্তম (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৭৪-৭৫)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ছালাতের পরে আলোচনা করা বিদ‘আত নয়; বরং এটিও যিকর ও জ্ঞান আদান-প্রদানের অংশ (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ১২/৯০)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) প্রায় ছালাত শেষে আলোচনা করতেন (বুখারী হা/৪০১; মিশকাত হা/১২৯, ১৬৫, ৯০৯, ১১৩৭, ৪৬২১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফরয ছালাত আদায় করার পর বসে যায় এবং লোকদের তা‘লীম দেয়, সে ব্যক্তি যে দিনে ছিয়াম পালন করে ও রাতে ইবাদত করে তার চেয়ে বেশী মর্যাদাবান। যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমি মর্যাদাবান’ (দারেমী হা/৩৪০; মিশকাত হা/২৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবারে এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) প্রতি শুক্রবারে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে ওয়ায করতেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২০৭; বুখারী হা/৬৩৩৭; মিশকাত হা/২৫২)। তবে মুছল্লীদের মানসিকতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তাদের অসুবিধা বা বিরক্তির কারণ না হয়।

প্রশ্ন (54) : সুন্নাত ছোট হৌক বা বড় হৌক সুন্নাতের প্রতি অবহেলা করা যাবে না। এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশ সময়ে সাদা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতেন। এই সুন্নাতকে অবহেলা করা সমীচীন হবে কি?

প্রশ্ন (54) : সুন্নাত ছোট হৌক বা বড় হৌক সুন্নাতের প্রতি অবহেলা করা যাবে না। এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশ সময়ে সাদা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতেন। এই সুন্নাতকে অবহেলা করা সমীচীন হবে কি?

উত্তর : দাড়িতে মেহেদী বা খেযাব ব্যবহার করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করো এবং ইহূদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না’ (তিরমিযী হা/১৭৫২; মিশকাত হা/৪৪৫৫, হাদীছ ছহীহ)। তবে কোন মুসলমান দাড়িতে খেযাব ব্যবহার না করলে তাকে সুন্নাতের অবহেলা বলা যাবে না। কেননা বিষয়টি অপরিহার্য নয়। হযরত আলী, উবাই বিন কা‘ব, আনাস, সালামা বিন আকওয়া‘ (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী খেযাব ব্যবহার করতেন না (ফাৎহুল বারী হা/৫৮৯৯-এর আলোচনা ১০/৩৫৫ পৃ.)। ত্বাবারাণী বলেন, ছাহাবীদের একদল খেযাব লাগাতেন, একদল লাগাতেন না। ছাহাবীগণের মধ্যে এ নিয়ে কোন বিতর্ক ছিল না (মুসলিম শরহ নববী হা/২১০৩-এর আলোচনা)। তবে কাশফুলের মত সাদা চুল-দাড়ি হ’লে খেযাব লাগানো যরূরী (মুসলিম হা/২১০২)।

প্রশ্ন (53) : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে, আল্লাহ ‘হও’ বললে হয়ে যায়। তাহ’লে ছয় দিনের তাৎপর্য কি?

প্রশ্ন (53) : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে, আল্লাহ ‘হও’ বললে হয়ে যায়। তাহ’লে ছয় দিনের তাৎপর্য কি?

উত্তর : ‘ছয়দিনে’ কথাটি কুরআনে সাত স্থানে এসেছে। যার প্রথম হ’ল সূরা আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত। অত্র আয়াতে ‘দিন’ অর্থ সময়কাল। যার দৈর্ঘ্য হ’ল আখেরাতের হিসাবে হাযার বছর (সাজদাহ ৩২/৫) অথবা পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান (মা‘আরেজ ৭০/৪)। কেননা তখন সূর্য ছিল না। তাই দুনিয়াবী ২৪ ঘণ্টার হিসাব অচল। আর সবই হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। এতে বান্দার কোন হাত নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এ দু’য়ের মধ্যেকার সবকিছুকে সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। অথচ এতে আমাদের কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি’ (ক্বা-ফ ৫০/৩৮)। আর এই ছয়দিন হ’ল রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার। শুক্রবারে আছরের পূর্বেই সবকিছু শেষ করেন। অতঃপর আছর থেকে দিনের শেষ মুহূর্তে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন (মুসলিম হা/২৭৮৯; মিশকাত হা/৫৭৩৪)। আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বলেন, আল্লাহ রবিবার ও সোমবারে পৃথিবী সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার ও বুধবারে আকাশ সমূহ সৃষ্টি করেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবারে খাদ্য সমূহ এবং পৃথিবীর অন্যান্য বস্ত্ত সমূহ সৃষ্টি করেন। শুক্রবারে আছরের পূর্বেই সবকিছু শেষ করেন (বায়হাক্বী হা/১৮১৬১, ৯/৩ পৃ.; কুরতুবী, তাফসীর সূরা আন‘আম ১ আয়াত)। এই ছয় দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে এতটুকুই বলা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা চাইলে এক নিমিষেই সবকিছু ‘হও’ বলে সৃষ্টি করতে পারতেন। তবে বিশেষ হিকমতের কারণে তিনি তা করেননি। বরং প্রকৃতির সবকিছুকে ধারাবাহিক ও নিয়মবদ্ধভাবে করেছেন, যাতে তা মানুষের জন্য শিক্ষণীয় হয়। তাছাড়া আল্লাহর নিকট প্রত্যেকটি বস্ত্তর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে (কুরতুবী, তাফসীর সূরা আ‘রাফ ৫৪ আয়াত)।

প্রশ্ন (52) : আছহাবে কাহফের সদস্য কতজন ছিল? কুরআন ও হাদীছের আলোকে জানতে চাই।

প্রশ্ন (52) : আছহাবে কাহফের সদস্য কতজন ছিল? কুরআন ও হাদীছের আলোকে জানতে চাই।

উত্তর : প্রকাশ্য আয়াত এবং ইবনু আববাস (রাঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ছিল সাত জন (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা কাহফ ২২ আয়াত)। তবে অত্র আয়াতে এসব নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এগুলি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব সংখ্যা মুখ্য নয়, বরং উক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আল্লাহর উপরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাই হ’ল মুখ্য বিষয়।

প্রশ্ন (51) : ছিয়াম অবস্থায় করোনার টিকা গ্রহণ করা যাবে কী?

প্রশ্ন (51) : ছিয়াম অবস্থায় করোনার টিকা গ্রহণ করা যাবে কী?

উত্তর : ছিয়ামরত অবস্থায় করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা যাবে। কেননা ছিয়াম অবস্থায় খাদ্য নয় এরূপ বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। অতএব যেসব টিকা, ইনস্যুলিন, ইনজেকশন বা ভ্যাকসিন খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় না বা শরীরে বাড়তি পুষ্টি যোগায় না, সেগুলো ছিয়াম অবস্থায় চিকিৎসা হিসাবে গ্রহণ করা যাবে। অনুরূপ হাঁপানী রোগের জন্য ছিয়াম অবস্থায় ‘ইনহেলার’ নেওয়া যাবে। কারণ এগুলি স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইনজেকশনের ন্যায় খাদ্য বা পানীয়ের অন্তর্ভুক্ত নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৯৬-৯৯, ১৯/২২৫, ২০/২৮৪; ‘ছিয়াম ও ক্বিয়াম’ ৯০ পৃ.)।

প্রশ্ন (50) : মুক্বীম অবস্থায় ভুলবশতঃ একটানা দু’দিন দু’রাত মোযার উপর মাসাহ করে ওযূ ও ছালাত আদায় করা হয়েছে। এক্ষণে উক্ত ছালাতগুলি পুনরায় আদায় করতে হবে কি? আর মাসাহের সময়কাল কখন থেকে শুরু হবে?

প্রশ্ন (50) : মুক্বীম অবস্থায় ভুলবশতঃ একটানা দু’দিন দু’রাত মোযার উপর মাসাহ করে ওযূ ও ছালাত আদায় করা হয়েছে। এক্ষণে উক্ত ছালাতগুলি পুনরায় আদায় করতে হবে কি? আর মাসাহের সময়কাল কখন থেকে শুরু হবে?

-মাসঊদ পারভেয চিতলমারী, বাগেরহাট। উত্তর : এক দিন ও একরাতের ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ মুকীমের জন্য মোযার উপর মাসাহ করার বিধান একদিন ও একরাত (মুসলিম হা/২৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৫৫৫; মিশকাত হা/৫১৭; ছহীহাহ হা/৩৪৫৫)। আর মাসাহের মেয়াদকাল শুরু হবে মোযার উপর প্রথম মাসাহ করা থেকে; ওযূ করার সময় থেকে বা ওযূ করার পর প্রথম ওযূ ভঙ্গ হওয়া থেকে নয়। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, يمسح عليهما مثل ساعته من يومه وليلته ‘যে সময়ে সে মাসাহ করবে, তখন থেকে একদিন একরাত সে মোযার উপর মাসাহ করবে’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮০৮; আলবানী, সনদ ছহীহ; আলবানী, আল-মাসহু ‘আলাল জাওরাবাইন পৃ. ৯১-৯২; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৪৮৭; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ১/২২৬)।

প্রশ্ন (49) : এমন কোন নিয়মিত আমল বা দো‘আ আছে কি, যা নিয়মিত পাঠ করলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নানা রোগ-ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে?

প্রশ্ন (49) : এমন কোন নিয়মিত আমল বা দো‘আ আছে কি, যা নিয়মিত পাঠ করলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নানা রোগ-ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে?

উত্তর : এমর্মে বিভিন্ন দো‘আ রয়েছে। বিশেষ করে কোন মারাত্মক রোগীকে দেখে তা পাঠ করলে, সেই রোগ তার হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে লোক কোন বিপদগ্রস্ত লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে, ‘আল-হাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী ‘আ-ফা-নী মিম্মাব্তালা-কা বিহী ওয়া ফায্যালানী ‘আলা কাছীরিম্ মিম্মান খালাক্বা তাফ্যীলা’ (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি যে বিপদে তোমাকে জড়িত করেছেন তা হ’তে আমাকে হেফাযতে রেখেছেন এবং তার সৃষ্টিরাজির উপর আমাকে সম্মান দান করেছেন’, সে তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত উক্ত অনিষ্ট হ’তে হেফাযতে থাকবে। তা যে কোন বিপদই হোক না কেন’ (তিরমিযী হা/৩৪৩১; মিশকাত হা/২৪২৯; ছহীহাহ হা/৬০২)। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার সূরা নাস ও ফালাক পাঠ করবে (আবুদাউদ হা/৫০৮২; মিশকাত হা/২১৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৬৪৯)।

প্রশ্ন (48) : ওয়াইস ক্বারনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (48) : ওয়াইস ক্বারনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ওয়াইস বিন আমের আল-ক্বারনী (৫৯৪-৬৫৮ খ্রিঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর যুগের লোক। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়নি। যে কারণে তিনি ছাহাবী নন, বরং তাবেঈ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তাবেঈদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হ’ল ওয়াইস’ (মুসলিম হা/২৫৪২, মিশকাত হা/৬২৫৭)। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, তোমাদের নিকট ইয়ামন থেকে এক ব্যক্তি আসবে, যাকে ডাকা হবে ‘ওয়াইস’ নামে। সে শুধুমাত্র তার মাকে ইয়ামনে রেখে আসবে। তার শরীরে কুষ্ঠ রোগ ছিল। সে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে এক দীনার অথবা এক দিরহাম সমপরিমাণ স্থান ছাড়া আল্লাহ তা দূর করে দেন। তোমাদের যার সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে, সে যেন তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করে (মুসলিম ঐ)। পরবর্তীতে ওমর (রাঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হ’লে, তিনি তার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন জানান। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবী হিসাবে আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অধিক যোগ্য। এসময় তিনি উপরোক্ত হাদীছটি শুনালে তিনি তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন (মুসলিম হা/২৫৪২, আহমাদ হা/২৬৬)।ওয়াইস ক্বারনী ৩৭ হিজরীতে আলী (রাঃ)-এর পক্ষে ছিফফীনের যুদ্ধে নিহত হন (হাকেম হা/৫৭১৬)। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ওয়াইস ক্বারনী’কে জামা দান করেছিলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মহববতে বত্রিশটি দাঁত ভেঙ্গেছিলেন মর্মে প্রচলিত বক্তব্যটি ভিত্তিহীন। এছাড়া এই উম্মতের মধ্যে শুধুমাত্র ওয়ায়েস কুরনীকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খলীল বা দোস্ত বলেছেন মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে, সেটিও ‘জাল’ (সিলসিলা যঈফা হা/১৭০৭)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (47) : মাথা মাসাহ করার পর ঘাড় মাসাহ করতে হবে কি? এ বিষয়ে দলীল সহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (47) : মাথা মাসাহ করার পর ঘাড় মাসাহ করতে হবে কি? এ বিষয়ে দলীল সহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার কোন প্রমাণ নেই। আবূদাঊদে এ সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা যঈফ (আবূদাঊদ হা/১৩২, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯-এর আলোচনা দ্রঃ)। ইমাম নববী একে বিদ‘আত বলেছেন (নায়লুল আওত্বার ১/২৪৫-৪৭)। হেদায়ার ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনুল হুমামের ভাষ্যমতে কেউ কেউ বলেন, এটা বিদ‘আত (ফাৎহুল ক্বাদীর, ১/৫৪)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘ঘাড় মাসাহ-এর ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) হ’তে কোন ছহীহ হাদীছ নেই’ (যাদুল মা‘আদ ১/১৮৭)। ‘যে ব্যক্তি ওযূতে ঘাড় মাসাহ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবে না’ বলে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সেটি মওযূ বা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (46) : নফস ও রূহের মধ্যে পার্থক্য কি?

প্রশ্ন (46) : নফস ও রূহের মধ্যে পার্থক্য কি?

নওদাপাড়া, রাজশাহী। উত্তর : রূহ ও নফসের মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোন পার্থক্য নেই। যদিও পারিভাষিক অর্থে পার্থক্য আছে। যেমন প্রাণীকে ‘নফস’ বলা হয়। কিন্তু ‘রূহ’ বা আত্মা বলা হয় না। আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে(আলে ইমরান ১৮৫)। এতে বুঝা যায় যে, দেহ ও আত্মার মিলিত সত্ত্বাকে ‘নফস’ বলা হয়। আর শুধুমাত্র আত্মাকে ‘রূহ’ বলা হয়। একদা ইহূদীগণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, রূহ হ’ল আল্লাহর একটি আদেশ’ (ইসরা ১৭/৮৫)। যার প্রকৃতি মানুষের জ্ঞানের বাইরে। এমনকি আম্বিয়ায়ে কেরামও এর প্রকৃতি জানতেন না (শাওকানী, যুবদাতুত তাফসীর, ইসরা ৮৫ আয়াতের ব্যাখ্যা)। আর নফস সেটাই, যা আল্লাহ মানব দেহে ফুঁকে দিয়েছেন। মৃত্যুর সময় যা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যখন রূহ কবয করা হয়, তখন তার চোখ তা দেখতে থাকে’ (মুসলিম হা/৯২০; মিশকাত হা/১৬১৯ ‘জানায়েয’ অধ্যায়)। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কি দেখনি যে, মৃত্যুর সময় মানুষের চোখ তাকিয়ে থাকে? ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, ‘তা তো ঐ সময় যখন তার চোখ তার নফসকে দেখতে থাকে’ (মুসলিম হা/৯২১)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (45) : জারজ সন্তান প্রতিপালন করা যাবে কি? এজন্য ঐ ব্যক্তি কোন ছওয়াব পাবে কি?

প্রশ্ন (45) : জারজ সন্তান প্রতিপালন করা যাবে কি? এজন্য ঐ ব্যক্তি কোন ছওয়াব পাবে কি?

উত্তর : পরিচিত বা অপরিচিত যেকোন জারজ সন্তান পালন করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যভিচারিণী গামেদী মহিলার জারজ সন্তানকে জনৈক ছাহাবীর হাতে দিয়ে তাকে লালন-পালনের জন্য আদেশ করেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৬২)। কারণ জারজ হওয়ার জন্য সন্তান দায়ী নয়। অতএব তাকে লালন-পালনের জন্য অবশ্যই ছওয়াব রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষ বা নারী যে কোন সৎকর্ম করলে আমরা তার বিনিময়ে সর্বোত্তম প্রতিদান দেব’ (নাহল ১৬/৯৭)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (44) : ছালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো শরী‘আতসম্মত কি? এটা করায় ছালাত বাতিল হয়ে যাবে কি?

প্রশ্ন (44) : ছালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো শরী‘আতসম্মত কি? এটা করায় ছালাত বাতিল হয়ে যাবে কি?

উত্তর : ছালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো শরী‘আতসম্মত নয়। ইবনু আববাস (রাঃ)-এর গোলাম শো‘বা বলেন, আমি ইবনু আববাসের পাশে ছালাত আদায় করছিলাম। আমি আঙ্গুল ফুটালে তিনি আমাকে ছালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটাতে নিষেধ করেন (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৩৫৮, ইরওয়া হা/৩৭৮-এর ব্যাখ্যা, ২/৯৯ পৃঃ)। এছাড়া এতে ছালাতের খুশূ-খুযূ বিনষ্ট হয়। তবে একারণে ছালাত বাতিল হবে না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২১৯)। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ হবে।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (43) : পীরদের মুরীদ হয়ে কত মানুষ নামাযী হচ্ছে, পাপ কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। অথচ এইসব পীরদের সমালোচনা করায় বহু মানুষ এদের থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। অতএব পীর থেকে সাধারণ মানুষকে বিমুখ করা শরী‘আতসম্মত হবে কি?

প্রশ্ন (43) : পীরদের মুরীদ হয়ে কত মানুষ নামাযী হচ্ছে, পাপ কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। অথচ এইসব পীরদের সমালোচনা করায় বহু মানুষ এদের থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। অতএব পীর থেকে সাধারণ মানুষকে বিমুখ করা শরী‘আতসম্মত হবে কি?

উত্তর : পীরগণ তাদের মুরীদদের নেক আমলের দিকে আহবানের পাশাপাশি শিরক ও বিদ‘আতের দিকে আহবান করেন। আর শিরক-বিদ‘আত মানুষের সকল নেক আমলকে নিষ্ফল করে দেয় (যুমার ৩৯/৬৫)। পীরবাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই যে, তারা মানুষকে কুরআন-হাদীছ থেকে মুখ ফিরিয়ে পীরের ধ্যানে মগ্ন রাখেন। পীরের কথিত কাশফ ও কেরামত এবং ভিত্তিহীন অলীক কল্পকাহিনীসমূহ এদের নিকট প্রধান দলীল হিসাবে গণ্য হয়। যুগে যুগে মানুষকে ধর্মের নামে শিরকে লিপ্ত করেছে এই শ্রেণীর লোকেরা। অথচ কাশফ ও কেরামত ইসলামী শরী‘আতের কোন দলীল নয়। সুতরাং এসব দল থেকে মানুষকে দূরে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো আবশ্যক।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (42) : প্রথম কাতারে ডান পাশে দাঁড়ানোর বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?

প্রশ্ন (42) : প্রথম কাতারে ডান পাশে দাঁড়ানোর বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?

উত্তর : ছালাতে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর বিশেষ ফযীলত আছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রথম কাতারের (মুছল্লীদের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৯৯৭)। তিনি বলেন, ‘পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হ’ল প্রথম কাতার’ (মুসলিম হা/৪৪০, মিশকাত হা/১০৯২)। তবে ইমামের সাথে একাকী ছালাত আদায়কালে ইমামের ডান দিকে দাঁড়াতে হবে (বুখারী হা/৬৯৯, ১১৭; মুসলিম হা/৬৬০; মিশকাত হা/১১০৬)। এছাড়া যখন ইমামের পিছনে দু’পার্শ্ব সমান হবে, তখন কাতারের ডানে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। কিন্তু ডান পাশ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বামে দাঁড়ানো উত্তম হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৮৪)। তবে কোনক্রমেই ডান প্রান্ত থেকে বা মসজিদের উত্তর দেওয়াল থেকে দ্বিতীয় কাতার বা পরবর্তী কাতার সমূহ শুরু করা যাবে না। উল্লেখ্য, কাতারের ডানদিকে দাঁড়ানো সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/১০০৫, সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৮৬)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (41) : স্ত্রী স্বামীকে এরূপ বলেছে যে, ‘তুমি যদি আমাকে স্পর্শ কর, তবে তা তোমার মৃত মায়ের সাথে যেনার সদৃশ হবে’। এক্ষণে এর কাফফারা কি হবে?

প্রশ্ন (41) : স্ত্রী স্বামীকে এরূপ বলেছে যে, ‘তুমি যদি আমাকে স্পর্শ কর, তবে তা তোমার মৃত মায়ের সাথে যেনার সদৃশ হবে’। এক্ষণে এর কাফফারা কি হবে?

উত্তর : এগুলি বাজে কথার অন্তর্ভুক্ত। যা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহ বলেন, সফলকাম মুমিন তারাই, যারা ছালাতে খুশূ-খুযূ অবলম্বন করে’ ‘এবং যারা অনর্থক কাজ এড়িয়ে চলে’ (মুমিনূন ২৩/১-৩)। উল্লেখ্য, স্ত্রীর পক্ষ থেকে যিহার হয় না (ফাতাওয়া মারআতুল মুসলিমাহ ২/৮০৩ পৃঃ; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব-১৯)।

 ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (40) : পৃথক প্রাচীর থাকা সত্ত্বেও মসজিদের পশ্চিম দিকে কবর থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত হবে কি? আর মসজিদ থেকে কবরস্থান কতটুকু দূরে থাকা আবশ্যক? মসজিদ পাঁচতলা থাকলে কবরস্থানের দেওয়ালও পাঁচতলা সমান উঁচু করতে হবে কি?

প্রশ্ন (40) : পৃথক প্রাচীর থাকা সত্ত্বেও মসজিদের পশ্চিম দিকে কবর থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত হবে কি? আর মসজিদ থেকে কবরস্থান কতটুকু দূরে থাকা আবশ্যক? মসজিদ পাঁচতলা থাকলে কবরস্থানের দেওয়ালও পাঁচতলা সমান উঁচু করতে হবে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৯৭২; নাসাঈ হা/৭৬০; ছহীহাহ হা/১০১৬)। তবে মসজিদের দেয়াল ও কবরস্থানের মাঝে যদি রাস্তা থাকে কিংবা কবরস্থানের পৃথক প্রাচীর থাকে, তাহ’লে সে মসজিদে ছালাত আদায় করতে কোন বাধা নেই। এ ক্ষেত্রে মসজিদ পাঁচ-দশ তলা হওয়ায় কোন অসুবিধা নেই। সাধারণ প্রাচীর বা রাস্তা থাকলেই যথেষ্ট হবে।

 ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (39) : দাজ্জাল কি শেষ যামানায় জন্ম লাভ করবে, না পূর্ব থেকেই সে জীবিত রয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (39) : দাজ্জাল কি শেষ যামানায় জন্ম লাভ করবে, না পূর্ব থেকেই সে জীবিত রয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : দাজ্জাল পূর্ব থেকেই জীবিত রয়েছে এবং বিখ্যাত ছাহাবী তামীম দারী (রাঃ) ও তার ত্রিশজন সাথীর সাথে অজ্ঞাত এক দ্বীপে বন্দী অবস্থায় তার সাক্ষাৎ ঘটেছিল। সেখানে দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর আগমন সম্পর্কে জেনে অচিরেই বন্দীদশা থেকে সে মুক্তি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছিল। এ ঘটনাকে রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং সত্যায়ন করেছিলেন (মুসলিম হা/২৯৪২, ৪৬; আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০৮১)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেন, দাজ্জাল শেষ যামানায় খোরাসান থেকে বের হবে (তিরমিযী হা/২২৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৭২)। কিন্তু তার জন্মগ্রহণের কথা বলা হয়নি। অতএব সে পূর্ব থেকেই জীবিত রয়েছে এবং শেষ যামানায় কিয়ামতের প্রাক্কালে বের হবে। বর্তমান যুগের ইহুদী-খৃষ্টান সহ যালেম শাসকদের ‘দাজ্জাল’ আখ্যায়িত করে কোন কোন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল অপপ্রচার চালাচ্ছে। ইসলামী শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (38) : মসজিদের মেহরাবের উপরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এবং একপাশে ‘আল্লাহ’ অপর পাশে ‘মুহাম্মাদ’ লেখা যাবে কি?

প্রশ্ন (38) : মসজিদের মেহরাবের উপরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এবং একপাশে ‘আল্লাহ’ অপর পাশে ‘মুহাম্মাদ’ লেখা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদের মেহরাবের উপরে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লেখা যাবে না। কেননা মসজিদে এরূপ লেখার নিয়ম রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। আর মেহরাবের এক পার্শ্বে ‘আল্লাহ’ অপর পাশে^র্ ‘মুহাম্মাদ’ লিখা শিরক। এতে আল্লাহ ও রাসূলকে তথা স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে সমান গণ্য করা হয়। এইসব লেখার পিছনে সাধারণতঃ এই আক্বীদা কাজ করে যে, যিনিই আল্লাহ তিনিই মুহাম্মাদ। অর্থাৎ আল্লাহই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর রূপধারণ করে দুনিয়াতে এসেছেন (নাঊযুবিল্লাহ)। যার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় ছূফীদের আবিষ্কৃত মীলাদ মাহফিলে পঠিত উর্দূ কবিতার মাধ্যমে। যেমন বলা হয়, ‘ওহ্ জো মুস্তাবী আরশ থা খোদা হো কার, উতার পাড়া হ্যায় মদীনা মেঁ মোছতফা হো কার্। অর্থ: আরশের অধিপতি আল্লাহ ছিলেন যিনি, মুছতফা রূপে মদীনায় অবতীর্ণ হ’লেন তিনি’। এগুলো পরিষ্কারভাবে শিরক। অতএব আল্লাহ ও মুহাম্মাদ পাশাপাশি লেখা থেকে মসজিদকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আজকাল অনেকে এগুলি বাসের মাথায় দু’পাশে লেখেন। অনেকে মুহাম্মাদ-এর বদলে ‘গরীব নেওয়ায’ লেখেন। কোন কোন গাড়ীর মাথায় বড় করে আরবীতে ‘আল্লাহু’ লেখা হয়। এগুলি লেখা অনর্থক। কেননা মসজিদে, ঘর-বাড়ীতে, দেওয়ালে, পাত্রে বা পরিবহনে এসব লেখার কোন প্রমাণ কুরআন-হাদীছে নেই। এতে কোন লাভও নেই। বরং বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করা ও আলহামদুলিল্লাহ বলে কাজ শেষ করার মধ্যেই কেবল আল্লাহর রহমত ও বরকত নিহিত রয়েছে। অতএব এসব অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (37) : আমার কাপড়ের দোকানে মেয়েদের টপস, জিপসি, প্যান্ট, টাইটস ইত্যাদি আধুনিক পোষাক বিক্রয় করে থাকি। এটা শরী‘আতসম্মত হবে কি?

প্রশ্ন (37) : আমার কাপড়ের দোকানে মেয়েদের টপস, জিপসি, প্যান্ট, টাইটস ইত্যাদি আধুনিক পোষাক বিক্রয় করে থাকি। এটা শরী‘আতসম্মত হবে কি?

উত্তর : নগ্নতা প্রকাশক ও যৌন উদ্দীপক যেকোন পোষাক পরিধান করা হারাম (মুসলিম হা/২১২৮, মিশকাত হা/৩৫২৪)। নারী-পুরুষের পোষাক এমন হবে যাতে (১) দেহের গোপনীয় স্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকট হয়ে না ওঠে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪)। (২) ঢিলাঢালা, ভদ্র ও মার্জিত হওয়া (আ‘রাফ ৭/২৬; মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮)। (৩) অমুসলিমদের সদৃশ না হওয়া (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। (৪) অহংকার প্রকাশ না পাওয়া (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩১১-১৪, ৪৩২১; নাসাঈ, ইবনু মাজাহ হা/৪৩৮১)। অতএব কোন ধরনের হারাম পোষাকের ব্যবসা করা শরী‘আতসম্মত নয় (আবুদাঊদ হা/৩৪৮৫ ও ৩৪৮৮, সনদ ছহীহ)।

 ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (36) : প্রবল শীতের কারণে বা রোগ বৃদ্ধির আশংকায় ফরয গোসল না করে তায়াম্মুম বা ওযূ করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্ন (36) : প্রবল শীতের কারণে বা রোগ বৃদ্ধির আশংকায় ফরয গোসল না করে তায়াম্মুম বা ওযূ করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : প্রবল শীতের কারণে শারীরিক অসুস্থতা, রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে ওযূ নয়, বরং তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৩১)। আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, ‘যাতুস সালাসিল’ যুদ্ধে শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতার আশংকায় গোসল না করে তায়াম্মুম করে সাথীদের নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। পরে সাথীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই ঘটনা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি কি অপবিত্রাবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেছ? তখন আমি গোসল না করার কারণ ব্যাখ্যা করলাম এবং বললাম আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন কর না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং চুপ থাকলেন (আবুদাঊদ হা/৩৩৪, ‘ঠান্ডা লাগার ভয় থাকলে অপবিত্র ব্যক্তি কি করবে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (35) : সতর না ঢেকে সামান্য বস্ত্র পরা অবস্থায় ওযূ করলে উক্ত ওযূতে ছালাত আদায় করা যাবে কি, না সতর ঢেকে পুনরায় ওযূ করতে হবে?

প্রশ্ন (35) : সতর না ঢেকে সামান্য বস্ত্র পরা অবস্থায় ওযূ করলে উক্ত ওযূতে ছালাত আদায় করা যাবে কি, না সতর ঢেকে পুনরায় ওযূ করতে হবে?

উত্তর : এ অবস্থায় পুনরায় ওযূ করতে হবে না। কারণ সতর অনাবৃত অবস্থায় ওযূ করা ওযূ ভঙ্গের কারণ সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। ওযূ ভঙ্গের প্রধান কারণ হ’ল, পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া (নিসা ৪/৪৩, বুখারী হা/১৩৫)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (34) : ব্রেসলেটের ম্যাগনেটিক পাথরের মধ্যে কোন ওষধি গুণ আছে কি? যদি থাকে তবে তা ব্যবহার করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

প্রশ্ন (34) : ব্রেসলেটের ম্যাগনেটিক পাথরের মধ্যে কোন ওষধি গুণ আছে কি? যদি থাকে তবে তা ব্যবহার করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : এতে কোন ঔষধি গুণ নেই। এসম্পর্কে যা কিছু ধারণা করা হয়, তা কুসংস্কার মাত্র। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) অসুস্থতা দূর করার জন্য শরীরে কোন কিছু ঝুলাতে নিষেধ করেছেন (তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬)। অতএব রোগ প্রতিরোধ, চোখ লাগা ইত্যাদি যে উদ্দেশ্যেই হৌক না কেন, তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ১৭০৪২)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (33) : আযল-এর বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

প্রশ্ন (33) : আযল-এর বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : ‘আযল’ হ’ল, স্ত্রীমিলনের সময় বাইরে বীর্যপাত করা। যার উদ্দেশ্য স্ত্রীকে গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখা। শারীরিক অসুস্থতা অথবা দুই সন্তানের মাঝে প্রয়োজনীয় ব্যবধান রাখার ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে আযল করা শরী‘আতে বৈধ। জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি একটি কৌশল মাত্র। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ চাইলে এর পরেও গর্ভে সন্তান আসতে পারে। জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমার দাসীর সাথে আমি মিলিত হ’লেও তার গর্ভধারণ আমি পসন্দ করি না। তিনি বললেন, তুমি চাইলে আযল করতে পার, তবে আল্ল­াহ তা‘আলা যা তাক্বদীরে লিখেছেন তা হবেই (মুসলিম হা/৩৬২৯; মিশকাত হা/৩১৮৫)। সন্তানের ভরণ-পোষণের ভয়ে ‘আযল’ করা নিষিদ্ধ। আল্ল­াহ বলেন, ‘তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে সন্তানদেরকে হত্যা করো না। কেননা আমি যেমন তোমাদেরকে রূযী দেই, তেমনি তাদেরকেও রূযী দেব’ (আন‘আম ৬/১৫১)। অতএব আযল পদ্ধতি অথবা বর্তমান যুগে আবিষ্কৃত জন্মনিয়ন্ত্রণের যত পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলো শারীরিক অসুস্থতা অথবা দুই সন্তানের মাঝে প্রয়োজনীয় ব্যবধান রাখার উদ্দেশ্যে অস্থায়ীভাবে গ্রহণ করা জায়েয। স্থায়ীভাবে গর্ভনিরোধ নিষিদ্ধ। মনে রাখতে হবে যে, ইসলামে অধিক সন্তান লাভে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তানদায়িনী নারীকে বিবাহ কর। কেননা আমি ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য উম্মতের চাইতে তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে গর্ব করব’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩০৯১; আহমাদ)। জন্মনিয়ন্ত্রণ বা জন্মনিরোধে উক্ত উদ্দেশ্য যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। যে নারীর যত সন্তান বেশী, সে নারী তত সুখী ও স্বাস্থ্যবর্তী। সন্তান জন্ম দেওয়াই নারীর প্রকৃতি। আর এই প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ করলে তার মন্দ প্রতিক্রিয়া হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (32) :‘ফেরেশতারা শিশুদের সাথে খেলা করার কারণে তারা হাসে বা কাঁদে’- এ বিষয়টির কোন সত্যতা আছে কি?

প্রশ্ন (32) :‘ফেরেশতারা শিশুদের সাথে খেলা করার কারণে তারা হাসে বা কাঁদে’- এ বিষয়টির কোন সত্যতা আছে কি?

উত্তর : কথাটি ভিত্তিহীন। তবে প্রত্যেক মানুষের সাথেই সর্বদা ফেরেশতা থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতাগণ রয়েছে। যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর হুকুমে’ (রা‘দ ১৩/১১)। সে হিসাবে শিশুদের সাথেও ফেরেশতা থাকে। কিন্তু তারা শিশুদের সাথে খেলা করে মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (31) : ছালাতে শেষ বৈঠকে দো‘আ মাছূরাহ পড়ার পর নিজের জন্য ইচ্ছানুযায়ী দো‘আ করা যায় কি? অনেকেই বলেন, তাশাহ্হুদ লম্বা করা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (31) : ছালাতে শেষ বৈঠকে দো‘আ মাছূরাহ পড়ার পর নিজের জন্য ইচ্ছানুযায়ী দো‘আ করা যায় কি? অনেকেই বলেন, তাশাহ্হুদ লম্বা করা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ছালাতের শেষ বৈঠক দো‘আ কবূল হওয়ার অন্যতম প্রধান স্থান। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সবচেয়ে বেশী দো‘আ কবুল হয় শেষ রাতে এবং প্রত্যেক ফরয ছালাতের শেষে (তিরমিযী হা/৩৪৯৯, মিশকাত হা/৯৬৮)। উক্ত হাদীছে ‘ছালাতের শেষ ভাগ’ অর্থ সালামের পূর্বে শেষ বৈঠক (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৩০৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৬৮)। রাসূল (ছাঃ) শেষ তাশাহ্হুদে একাধিক দো‘আ করতেন (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৯০৯)। অতএব শেষ বৈঠকে ইচ্ছা মত দো‘আ করতে কোন বাধা নেই। আর বান্দার যেকোন মনষ্কামনা পেশ করার জন্য ‘রববানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া… আযা-বান্নার’ দো‘আটি পাঠ করাই যথেষ্ট। রাসূল (ছাঃ) এই দো‘আটিই অধিকাংশ সময় পাঠ করতেন’ (বুখারী হা/৪৫২২; মিশকাত হা/২৪৮৭)। এক্ষণে শেষ বৈঠক তুলনামূলক কিছু লম্বা করায় দোষ নেই। তবে এমন লম্বা নয়, তাতে ছালাতের সাযুজ্য বিনষ্ট হয় এবং মুছল্লী বিরক্ত হয়।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (30) : গরু বা অন্য কোন পশুকে কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা এবং এর বিনিময় গ্রহণ করতে কোন বাধা আছে কি?

প্রশ্ন (30) : গরু বা অন্য কোন পশুকে কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা এবং এর বিনিময় গ্রহণ করতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : পশুর ক্ষেত্রে প্রজনন বৃদ্ধির জন্য যে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। কারণ শরী‘আতের বিধান পশুর উপরে প্রযোজ্য নয়। তা কেবল জিন ও ইনসানের প্রতি প্রযোজ্য (যারিয়াত ৫৬; মায়েদাহ ৫/৩)। অতএব কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা জায়েয। আর এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসাবে কাজের বিনিময় গ্রহণেও কোন বাধা নেই।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (29) : খাঁচায় আটকে রেখে পাখি পোষায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

প্রশ্ন (29) : খাঁচায় আটকে রেখে পাখি পোষায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : খাঁচায় আটকে রেখে পাখি পালনে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে অবশ্যই পাখির আহার প্রদানসহ যথাযথ যত্ন নিতে হবে। আনাস (রাঃ)-এর ছোট ভাই আবু উমায়ের বুলবুলি পাখি পুষতেন এবং তার সাথে খেলা করতেন। একদা পাখিটি মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) মজা করে বলেছিলেন, হে আবু উমায়ের! তোমার ছোট বুলবুলিটির কি হ’ল?’ (বুখারী হা/৬১২৯, মুসলিম হা/২১৫০, মিশকাত হা/৪৮৮৪)। আর যথাযথভাবে খাদ্য প্রদান ও যত্ন না নিতে পারলে জায়েয হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এক মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে খেতে না দেওয়ায় মারা যায়। ফলে মহিলাটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় (বুখারী হা/৩৩১৮, মুসলিম হা/২৬১৯; মিশকাত হা/৫৩৪১)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (28) : ‘ক্বিয়ামতের দিন সূর্য সোয়া হাত নীচে নেমে আসবে’ হাদীছের এই বাণীটির যৌক্তিকতা ও ওলামায়ে কেরামের ব্যাখ্যা জানতে চাই।

প্রশ্ন (28) : ‘ক্বিয়ামতের দিন সূর্য সোয়া হাত নীচে নেমে আসবে’ হাদীছের এই বাণীটির যৌক্তিকতা ও ওলামায়ে কেরামের ব্যাখ্যা জানতে চাই।

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টিকুলের অতি নিকটে করে দেওয়া হবে। এমনকি সূর্য প্রায় এক বা দুই মাইলের ব্যবধানে হয়ে যাবে (মুসলিম হা/২৮৬৪, আহমাদ হা/২৩৮৬৪, মিশকাত হা/৫৫৪০)। অতএব প্রশ্নে বর্ণিত ‘সোয়া হাত নীচে নেমে আসবে’ কথাটি সঠিক নয়। হাদীছটির বর্ণনাকারী তাবেঈ সুলাইম বিন আমের (রহঃ) বলেন, আমি জানি না যে ‘মীল’ শব্দ দ্বারা যমীনের দূরত্ব না চোখে সুরমা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত শলাকার দূরত্ব বুঝানো হয়েছে’ (মুসলিম ঐ দ্রঃ)। মূলতঃ এর দ্বারা সূর্যের নিকটবর্তী হওয়ার পরিমাণ বুঝানো হয়েছে (মিরক্বাত হা/৫৫৪০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।

প্রথমতঃ হাদীছ অনুযায়ী সূর্য সেদিন যত নিকটবর্তী হবে এবং তার প্রভাবে মানুষের যে অবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে, দুনিয়াবী হিসাবে তা অবিশ্বাস্য। কিন্তু এটা গায়েবের খবর হওয়ায় মুমিনের জন্য তা সত্য বলে মেনে নেওয়া আবশ্যক। আর এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিদ‘আত (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৩/১৭৮)।

দ্বিতীয়তঃ ক্বিয়ামতের দিন দুনিয়াবী বৈশিষ্ট্য থেকে পৃথক শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষ পুনরুত্থিত হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন এই পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে পরিবর্তন করা হবে এবং সকলেই আল্লাহর সামনে প্রকাশিত হবে, যিনি এক ও মহা পরাক্রান্ত (ইবরাহীম ১৪/৪৮)। সেদিনের দৈর্ঘ্য হবে দুনিয়ার হিসাবে পঞ্চাশ হাযার বছর (মা‘আরেজ ৭০/৪)। অতএব গায়েবের বিষয়ে যুক্তি তালাশ করা নিতান্ত নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। বরং পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে পরকালীন প্রস্ত্ততি গ্রহণ করাই মুমিনের কর্তব্য (বিস্তারিত দ্রঃ মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওছায়মীন ২/৩৬)।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (27) : রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর চাচা আবু ত্বালেব যে দুশমনদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এর বিনিময়ে কি তিনি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন? তার অবস্থা কি হবে?

প্রশ্ন (27) : রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর চাচা আবু ত্বালেব যে দুশমনদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এর বিনিময়ে কি তিনি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন? তার অবস্থা কি হবে?

উত্তর : জান্নাতবাসী হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাচা আবু ত্বালেব এর মৃত্যু মুশরিক অবস্থায় হয়েছিল। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর কারণে জাহান্নামীদের মধ্যে তার শাস্তি সর্বাপেক্ষা সহজতর হবে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি হবে আবু ত্বালেবের। তাঁর দু’পায়ে দু’খানা আগুনের জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে’ (বুখারী হা/৬৫৬২, মুসলিম হা/২১২, মিশকাত হা/৫৬৬৮)। তিনি বলেন, যদি আমি না হ’তাম (অর্থাৎ শাফা‘আত না থাকত), তাহ’লে তিনি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকতেন। অতঃপর আমি তাকে নিম্নস্তর থেকে টাখনু পর্যন্ত উঠিয়ে আনি’ (মুসলিম হা/২০৯)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৫)।

 জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (26) : আদম (আঃ) আরশের পায়ায় লেখা কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ দেখে বলেন, আল্লাহ তুমি আমাকে ‘মুহাম্মাদ’ নামের অসীলায় মাফ করে দাও, তখন আল্লাহ তাকে মাফ করেন। একথার কোন সত্যতা আছে কি?

প্রশ্ন (26) : আদম (আঃ) আরশের পায়ায় লেখা কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ দেখে বলেন, আল্লাহ তুমি আমাকে ‘মুহাম্মাদ’ নামের অসীলায় মাফ করে দাও, তখন আল্লাহ তাকে মাফ করেন। একথার কোন সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘মওযূ‘ বা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫; হাকেম হা/৪২২, তাহকীক যাহাবী, সনদ জাল)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (25) : সূদ গ্রহণ না করে কেবল হেফাযতের উদ্দেশ্যে ব্যাংকে টাকা রাখা যাবে কি?

প্রশ্ন (25) : সূদ গ্রহণ না করে কেবল হেফাযতের উদ্দেশ্যে ব্যাংকে টাকা রাখা যাবে কি?

উত্তর : নিরুপায় অবস্থায় হেফাযতের উদ্দেশ্য ব্যাংকে টাকা রাখা যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহ যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, তা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। তবে তোমরা নিরূপায় হয়ে পড়লে তা স্বতন্ত্র কথা… (আন‘আম ১১৯)। তবে অন্য কোন নিরাপদ ব্যবস্থা থাকলে না রাখাই কর্তব্য। কেননা এরূপ রাখার মাধ্যমে পাপের সহযোগিতা করা হয়। আর আল্লাহ পাপের সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন (মায়েদাহ ৫/২)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (24) : জানাযার ছালাতের সময় লাশ সামনে রেখে মৃতের ঋণ ও অছিয়ত ছাড়াও একজন পরিচালকের মাধ্যম সমাজের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। এরূপ কর্মকান্ড শরী‘আতসম্মত কি?

প্রশ্ন (24) : জানাযার ছালাতের সময় লাশ সামনে রেখে মৃতের ঋণ ও অছিয়ত ছাড়াও একজন পরিচালকের মাধ্যম সমাজের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। এরূপ কর্মকান্ড শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : এরূপ করা শরী‘আতসম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ব্যাপারে কোন আমল পাওয়া যায় না। যিনি ইমামতি করবেন, তিনি উপস্থিত জনসাধরণের উদ্দেশ্যে ঈমান বর্ধক সংক্ষিপ্তভাবে কিছু নছীহত করতে পারবেন। যাতে উপস্থিতগণ নিজেদেরকে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত করতে পারেন (বুখারী হা/৪৯৪৯; আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; মিশকাত হা/১৬৩০)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (23) : ‘আত-তাহরীক’ শব্দের অর্থ কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (23) : ‘আত-তাহরীক’ শব্দের অর্থ কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ‘তাহরীক’ (تحريك) অর্থ আন্দোলন। ‘আত-তাহরীক’ অর্থ বিশেষ আন্দোলন। ইংরেজীতে যাকে বলা যাবে The Movement অথবা That very Movement। অতএব ‘আত-তাহরীক’ বিশেষ একটি আন্দোলনের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। সে আন্দোলন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জীবন গড়ার আন্দোলন। সে আন্দোলন আললাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি ভিত্তিক সমাজ গড়ার আন্দোলন। সে আন্দোলন বিশ্ব মানবতার প্রকৃত মুক্তি আন্দোলন। যে মানুষ নিজের জ্ঞানকে অহি-র জ্ঞানের সামনে বিনা দ্বিধায় সমর্পণ করে দিবে, যে মানুষ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নির্দেশকে সানন্দে মাথা পেতে মেনে নিবে, দুনিয়ার চাইতে আখেরাতকে সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিবে ‘আত-তাহরীক’ ইনশাআল্লাহ তাদেরই মুখপত্র।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (22) : ক্বিয়ামতের দিন জিন জাতি কি মানুষের মতই বিচারের সম্মুখীন হবে? তাদের নবী কে?

প্রশ্ন (22) : ক্বিয়ামতের দিন জিন জাতি কি মানুষের মতই বিচারের সম্মুখীন হবে? তাদের নবী কে?

উত্তর : মানবজাতির ন্যায় জিন জাতিকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি জিন ও মানুষ দিয়ে জাহান্নামকে পূর্ণ করব’ (সাজদাহ ৩২/১৩)। তিনি আরো বলেন, ‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেননি, যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানসমূহ বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনে সাক্ষাতের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করতেন? (আন‘আম ৬/১৩০)। উল্লি­খিত আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জিন জাতি বিচারের সম্মুখীন হবে, তারা জান্নাতী বা জাহান্নামী হবে। সূরা আহক্বাফের ৩১ আয়াতের আলোকে ইবনু কাছীর (রহঃ) একথাকেই প্রধান্য দিয়েছেন (ইবনু কাছীর আহক্বাফ ৩১ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)। আর মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানব ও জিন সহ সমস্ত সৃষ্টির নিকটে নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন (মুসলিম হা/৫২৩; তিরমিযী হা/১৫৫৩; মিশকাত হা/৫৭৪৮)। এছাড়া অন্যান্য নবীগণের সময়ে জিনেরা তাঁদের অনুসারী উম্মত ছিল।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (21) : নবী করীম (ছাঃ)-এর দেহে খাতমে নবুঅতের চিহ্ন কোথায় ছিল এবং তা কেমন ছিল? কোন কোন ছাহাবী তা চুমু দিয়েছিলেন বলে যা প্রচলিত রয়েছে। এর সত্যতা আছে কি?

প্রশ্ন (21) : নবী করীম (ছাঃ)-এর দেহে খাতমে নবুঅতের চিহ্ন কোথায় ছিল এবং তা কেমন ছিল? কোন কোন ছাহাবী তা চুমু দিয়েছিলেন বলে যা প্রচলিত রয়েছে। এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ)-এর খাতমে নবুঅতের চিহ্ন তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থলে ছিল। আর তা ছিল কবুতরের ডিমের মত (মুসলিম হা/২৩৪৪; তিরমিযী হা/৩৬৪৪; মিশকাত হা/৫৭৭৯; ছহীহাহ হা/৩০০৫)। ছাহাবী সালমান ফারেসী (রাঃ) সেটা দেখেই তাকে আখেরী নবী ও সত্যনবী হিসাবে চিনেছিলেন এবং তাতে চুমু খেয়েছিলেন (আহমাদ হা/২৩৭৮৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৯৪)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (20) : রাসূল (ছাঃ) ঋতুবতীদের ঈদের ছালাতে অংশগ্রহণ না করে দো‘আয় শরীক হ’তে বলেছেন। এটা দ্বারা কি উক্ত ছালাতে সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণ হয় না?

প্রশ্ন (20) : রাসূল (ছাঃ) ঋতুবতীদের ঈদের ছালাতে অংশগ্রহণ না করে দো‘আয় শরীক হ’তে বলেছেন। এটা দ্বারা কি উক্ত ছালাতে সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণ হয় না?

উত্তর: এখানে দো‘আয় শরীক হওয়ার অর্থ হ’ল, খুৎবা শ্রবণ করা, তা থেকে নছীহত গ্রহণ করা, উক্ত সমাগমে শরীক হয়ে তাকবীর, তাহলীল, তাহমীদ ও তাসবীহে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। সেকারণ ঊক্ত হাদীছের বর্ণনাকারী উম্মু আতিয়া (রাঃ) বলেন, আমাদের পর্দানশীন কুমারী হায়েযা মহিলারা ঈদের ময়দানে বের হ’তেন। অতঃপর লোকদের পিছনে অবস্থান করে তাদের সাথে তাকবীরে অংশগ্রহণ করতেন (মুসলিম হা/৮৯০; ছহীহাহ হা/৬০০)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘অতঃপর মহিলারা পুরুষদের পিছনে থাকত, তারপর তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর ও তাদের দো‘আর সাথে দো‘আ করত এবং এই দিনের বরকত ও পবিত্রতার প্রত্যাশা করত’ (বুখারী হা/৯৭১)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, ‘মুসলিমদের দো‘আ বলতে সকলকে শামিল করে। উক্ত কথা দ্বারা ঈদের ছালাতের পরে দো‘আ করা বুঝানো হয়, যেমনটি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের শেষে করা হয়। অথচ তা ত্রুটিপূর্ণ। কারণ ঈদায়েনের ছালাতের পর দো‘আ করা রাসূল (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত নয়। আর কেউ তা বর্ণনাও করেনি। বরং তাঁর থেকে প্রমাণিত আছে যে, ছালাতের পরে খুৎবা ছাড়া দ্বিতীয় কোন কাজ করতেন না। সুতরাং ‘দা‘ওয়াতুল মুসলিমীন’ দ্বারা উক্ত অর্থ গ্রহণ করা ঠিক হবে। বরং এর মূল উদ্দেশ্য হ’ল- যিকির-আযকার-দো‘আ, বক্তব্য-নছীহত। কারণ দাওয়াত শব্দটি ব্যাপক’ (মির‘আতুল মাফাতীহ ৫/৩১)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (19) : আমি পেনশন হিসাবে যে অর্থ পেয়েছি তা দ্বারা আমার জন্য হজ্জের ফরযিয়াত আদায় করা যরূরী না স্ত্রী-সন্তানদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা যরূরী হবে? সঠিক সিদ্ধান্ত জানতে চাই।

প্রশ্ন (19) : আমি পেনশন হিসাবে যে অর্থ পেয়েছি তা দ্বারা আমার জন্য হজ্জের ফরযিয়াত আদায় করা যরূরী না স্ত্রী-সন্তানদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা যরূরী হবে? সঠিক সিদ্ধান্ত জানতে চাই।

উত্তর : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এগুলি মানুষের মৌলিক চাহিদা। এক্ষণে যদি পরিবারের জন্য থাকার উপযোগী নিজস্ব কোন বাসস্থান না থাকে, তাহ’লে প্রথমে বাসস্থান নির্মাণ করবে। অতঃপর সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, একজন লোক তাকে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি দরিদ্র মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত নই? আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাকে বললেন, তোমার কি স্ত্রী আছে, যেখানে তুমি শান্তি পেতে পার? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তোমার বাসস্থান আছে কি যেখানে তুমি আশ্রয় নিতে পার? লোকটি বলল, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি ধনী (মুসলিম হা/২৯৭৯, মিশকাত হা/৫২৫৭)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (18) : তাশাহহুদে বসা অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার স্থানের দিকে না আঙ্গুল নাড়ানোর দিকে রাখতে হবে?

প্রশ্ন (18) : তাশাহহুদে বসা অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার স্থানের দিকে না আঙ্গুল নাড়ানোর দিকে রাখতে হবে?

উত্তর : তাশাহহুদে বসা অবস্থায় দৃষ্টি রাখতে হবে আঙ্গুলের ইশারার দিকে। রাসূল (ছাঃ) যখন তাশাহহুদে বসতেন, তখন …তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং তাঁর দৃষ্টি আঙ্গুলের ইশারা বরাবর থাকত তার বাইরে যেত না। (আবুদাউদ হা/৯৮৮, ৯৯০; নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, তাশাহহুদের সময় দৃষ্টি আঙ্গুলের উপর রাখাই সুন্নাত (নববী, শারহ মুসলিম হা/৯১০, নায়লুল আওতার ২/৩১৭)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (17) : জামা‘আতবদ্ধ ছালাতে ইমাম অধিকহারে ভুল করলে মুক্তাদীদের করণীয় কি? এরূপ ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

প্রশ্ন (17) : জামা‘আতবদ্ধ ছালাতে ইমাম অধিকহারে ভুল করলে মুক্তাদীদের করণীয় কি? এরূপ ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : ছালাতে ইমাম ভুল করলে মুক্তাদীদের কর্তব্য হ’ল লোকমা দিয়ে ভুলটি শুধরিয়ে দেওয়া (আবুদাঊদ হা/৯০৭, সনদ হাসান)। আর শুধরানো সম্ভব না হ’লে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ছালাত বাতিল হবে না। আর ইমাম উদাসীনতার কারণে বার বার ভুল করলে এর গুনাহ তার উপরে বর্তাবে, মুক্তাদীর উপরে নয়। ছালাতে ভুলক্রমে কোন ‘ওয়াজিব’ তরক হয়ে গেলে শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। শাওকানী বলেন, ওয়াজিব তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ ওয়াজিব হবে এবং সুন্নাত তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ সুন্নাত হবে (আস-সায়লুল জাররা-র ১/২৭৪ পৃঃ)। কিন্তু ছালাতে ক্বিরাআত ভুল হ’লে বা সের্রী ছালাতে ভুলবশত ক্বিরাআত জোরে বা তার বিপরীত হয়ে গেলে সহো সিজদার প্রয়োজন নেই। স্মর্তব্য যে, ছালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া সফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য (মা‘আরিজ ৭০/৩৪)। আর ছালাতে উদাসীনদের জন্য রয়েছে ‘দুর্ভোগ’ (মাউন ১০৭/৫)। অতএব ইমামদের কর্তব্য হ’ল পূর্ণ সচেতনতার সাথে ইমামতির দায়িত্ব পালন করা।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (16) : ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর সময় যে দু’বার সালাম দেওয়া হয় তা কাকে দেওয়া হয়?

প্রশ্ন (16) : ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর সময় যে দু’বার সালাম দেওয়া হয় তা কাকে দেওয়া হয়?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত আদায়কারী তার ডানে এবং বামে থাকা ভাইদেরকে সালাম প্রদান করবে (মুসলিম হা/৪৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০১৯)। অতএব সালাম ফিরানোর সময় ডানে এবং বামে থাকা ভাইদেরকে সালাম প্রদানের নিয়ত করবে। আর যদি একাকী ছালাত আদায় করে, তাহ’লে ডানে ও বামে থাকা ফেরেশতাদের সালাম প্রদানের নিয়ত করবে (ইমাম নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৫৬, ৪৬২; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩২৬, ৩২৭; শায়খ ওছাইমীন, শারহুল মুমতে‘ ৩/২০৮)। সর্বোপরি রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুসরণে এটা করা হয়। যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (15) : তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন নামক তাফসীরটি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রণীত কি?

প্রশ্ন (15) : তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন নামক তাফসীরটি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রণীত কি?

উত্তর : এ তাফসীরে কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমল এবং বহু স্থানে ভুল তাফসীরের সমাবেশ ঘটেছে। ফলে একে বিশুদ্ধ তাফসীর বলা যায় না। এর মধ্যে উল্লেখিত ভুলগুলোর কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হ’ল : (১) ‘নবী’ বা ‘ওলী’র বরাত দিয়েও আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য প্রার্থনা করা কুরআনের নির্দেশ ও হাদীছের বর্ণনায় বৈধ প্রমাণিত হয়েছে’ (পৃঃ ৯, ৩২৭)। অথচ মৃত নবী বা অন্য কারুর অসীলা দিয়ে প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক (মুসলিম হা/২০৪; মিশকাত হা/৫৩৭৩) (২) ‘সৃষ্ট জগতের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে’… এক হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন’ (পৃঃ ৪২৮)। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল আক্বীদা এবং হাদীছটি জাল (ছহীহাহ হা/৪৫৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। (৩) ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর পবিত্র রওজা শরীফে জীবিত আছেন।… এ কারণই তাঁর পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন করা হয়নি এবং এর ভিত্তিতেই তাঁর পত্নীগণের অবস্থা অপরাপর বিধবা নারীদের মত হয়নি’ (পৃঃ ১০৯৩)। অথচ ‘হায়াতুন্নবী’-র এই আক্বীদা পরিষ্কার শিরকী আক্বীদা (যুমার ৩০) (৪) ‘কোন না কোন একজন মুজতাহিদ ইমামের তাক্বলীদ করা অপরিহার্য। সকল মুজতাহিদ ইমামই সত্য’ (পৃঃ ৭৪৩)। অথচ কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই কেবল অপরিহার্য এবং মুজতাহিদ ইমামগণ ভুলের ঊর্ধ্বে নন (৫) ‘আল্লাহ তা‘আলার কোন আকার নেই’ (পৃঃ ১৪৬৫)। অথচ কুরতুবী স্বীয় তাফসীরে অন্যের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন এভাবে যে, ‘আমরা মানুষকে সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছি’। এর অর্থ অনেকে করেছেন علي صورة الرحمن ‘আল্লাহর আকৃতিতে’। অথচ আল্লাহর বাস্তব আকার (صورة مةشخصة) কোথায় আছে ভাবার্থ ব্যতীত? (ঐ, ২০/১১৪)’। এ বিষয়ে সঠিক আক্বীদা হ’ল এই যে, আললাহর আকার আছে। কিন্তু তার তুলনীয় কিছুই নেই (শূরা ১১)। (৬) ‘এলমে তাছাউফও ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত’ (পৃঃ ৫৯৬)। অথচ দ্বীনী ইলম হাছিল করা ফরয। ইসলামের সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হ’ল তাযকিয়ায়ে নাফ্স বা আত্মশুদ্ধি। পৃথকভাবে ইলমে তাছাউওফের কোন অস্তিত্ব শরী‘আতে নেই। বরং কথিত ছুফীবাদের চোরাগলি দিয়েই মুলমানদের মধ্যে অধিকাংশ শিরক প্রবেশ করেছে (৭) অনুরূপভাবে সূরায়ে ‘মুহাম্মাদ’ ৩৮ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সৈয়ূতীর বরাতে বলা হয়েছে যে, ‘আলোচ্য আয়াতে ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর সহচরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁরা পারস্য সন্তান। কোন দলই জ্ঞানের সেই স্তরে পৌঁছেনি, যেখানে আবু হানীফা ও তাঁর সহচরগণ পৌঁছেছেন’ (পৃঃ ১২৬৩)। এমনিভাবে অসংখ্য শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী আমলের প্রচারণা চালানো হয়েছে অত্র তাফসীর গ্রন্থে। অতএব কেউ পড়তে চাইলে জ্ঞান-বিবেক জাগ্রত রেখেই এ তাফসীর পড়তে হবে। কেননা তার মধ্যে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় ও রয়েছে।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (14) : কুল, লিচু, আঙ্গুর ইত্যাদি ফল পাকার সময় পাখিরা ক্ষতি করায় চাষীরা সুরক্ষার জন্য জাল টাঙিয়ে রাখে। কিন্তু তাতে পাখি বসে আটকা পড়ে এবং মারা যায়। এক্ষণে এরূপ জাল ব্যবহার করায় শরী‘আতে বাধা আছে কি?

প্রশ্ন (14) : কুল, লিচু, আঙ্গুর ইত্যাদি ফল পাকার সময় পাখিরা ক্ষতি করায় চাষীরা সুরক্ষার জন্য জাল টাঙিয়ে রাখে। কিন্তু তাতে পাখি বসে আটকা পড়ে এবং মারা যায়। এক্ষণে এরূপ জাল ব্যবহার করায় শরী‘আতে বাধা আছে কি?

উত্তর : সম্পদ রক্ষার উপকরণ ব্যবহার করাতে ক্ষতিকারক যে কোন কীট-পতঙ্গ বা পশু-পাখী মারা গেলে তাতে তারা দায়ী হবে না। কেননা প্রত্যেকেরই নিজের সম্পদ রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে ডাকাত বা ছিনতাইকারীকে হত্যা করা হ’লে নিহত ব্যক্তি জাহান্নামী হবে। আর মালিক মারা গেলে সে শহীদ হবে (মুসলিম হা/১৪০; মিশকাত হা/৩৫১৩)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (13) : মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের সময় আগত আত্মীয়-স্বজনের আপ্যায়নের জন্য মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার ব্যবস্থা করা বা টাকা-পয়সা দিয়ে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ব্যবস্থা করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

প্রশ্ন (13) : মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের সময় আগত আত্মীয়-স্বজনের আপ্যায়নের জন্য মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার ব্যবস্থা করা বা টাকা-পয়সা দিয়ে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ব্যবস্থা করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : মৃত ব্যক্তির বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজনের আপ্যায়নের জন্য রান্না-বান্না করা যাবে না। বরং প্রতিবেশীরা বা আত্মীয়-স্বজন উক্ত পরিবারের জন্য রান্না করে খাওয়াবে। মুতার যুদ্ধে জা‘ফর বিন আবু তালেব (রাঃ)-এর মৃত্যু খবর আসলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা জা‘ফরের পরিবারের জন্য খাদ্য তৈরী কর। কারণ তার পরিবার এখন শোকে কাতর (তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭৩৯, ১৭৪৩)। প্রত্যেক মুসলিম সমাজে এ সুন্নাতী আমল জারী রাখা অবশ্য কর্তব্য। উল্লেখ্য যে, সমাজে মৃতব্যক্তির জানাযায় আগত সকলকে খাওয়ানোর রীতি চালু আছে, যা সুন্নাত পরিপন্থী। অতএব তা পরিত্যাজ্য।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (12) : বিধর্মীদের সাথে অংশীদারী ভিত্তিতে ব্যবসা করা যাবে কি?

প্রশ্ন (12) : বিধর্মীদের সাথে অংশীদারী ভিত্তিতে ব্যবসা করা যাবে কি?

উত্তর : নিজ ধর্ম যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে বিধর্মী কোন ব্যক্তির সাথে হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে না, তাদের সাথে সদাচরণ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না’ (মুমতাহিনা ৬০/৮)। তিনি বলেন, ‘তোমরা ভাল ও তাক্বওয়াশীল কাজে পরস্পর সহযোগিতা কর। পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৪/২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বারের জমি ও বাগান সেখানকার ইহূদীদেরকে নির্দিষ্ট অংশ প্রদানের শর্তে চাষাবাদ করার জন্য দিয়েছিলেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৯৭২)। খেয়াল রাখতে হবে যেন উক্ত ব্যবসায় কোনভাবে সূদ-ঘুষ বা লেনদেনের কমবেশী ও কোনরূপ প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া হয়। কেননা এগুলি ইসলামী ব্যবসানীতির ঘোর বিরোধী।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (11) : আযানের সময় বিভিন্ন মসজিদের আযান শোনা যায়। এক্ষণে যেকোন একটির উত্তর দিলেই যথেষ্ট হবে, না সবগুলিরই উত্তর দিতে হবে?

প্রশ্ন (11) : আযানের সময় বিভিন্ন মসজিদের আযান শোনা যায়। এক্ষণে যেকোন একটির উত্তর দিলেই যথেষ্ট হবে, না সবগুলিরই উত্তর দিতে হবে?

উত্তর : একটির উত্তর দিলেই যথেষ্ট হবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়াযযিন যা বলে তদ্রূপ বল’… (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭)। অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে…, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮)। উল্লেখ্য যে, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার পরে ‘ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা যাবে না।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (10) : যাকাত ফান্ডের অর্থ ছহীহ আক্বীদা আমলের প্রচারের স্বার্থে নির্মিত মসজিদের সম্প্রসারণ, ইমাম ও মুওয়াযযিনের বেতন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা যাবে কি?

প্রশ্ন (10) : যাকাত ফান্ডের অর্থ ছহীহ আক্বীদা আমলের প্রচারের স্বার্থে নির্মিত মসজিদের সম্প্রসারণ, ইমাম ও মুওয়াযযিনের বেতন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা যাবে কি?

উত্তর : আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন যাকাত বণ্টনের যেসব খাত উল্লেখ করেছেন, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয় (তওবা ৯/৬০)। অতএব যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ সম্প্রসারণ করা যাবে না (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৭৬, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, মাসআলা নং ৩৬৮)। ইমাম বা মুওয়াযযিন অভাবগ্রস্থ হ’লে তাদেরকে দেওয়া যাবে। কিন্তু বেতন হিসাবে দেওয়া যাবে না। স্মর্তব্য যে, ইমাম-মুওয়াযযিন হচ্ছেন সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের দায়-দায়িত্ব সমাজের উপর ন্যস্ত। সুতরাং সমাজের লোকদের উচিত সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানজনক ভাতা বা বেতনের ব্যবস্থা করা (আবুদাঊদ হা/৩৫৮৮, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩৭৪৮)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (09) : গোসল কি ওযূর বিকল্প হ’তে পারে? কেউ যদি ভুলবশতঃ কেবল গোসল করে ছালাত আদায় করে, তবে তা কবুল হবে কি?

প্রশ্ন (09) : গোসল কি ওযূর বিকল্প হ’তে পারে? কেউ যদি ভুলবশতঃ কেবল গোসল করে ছালাত আদায় করে, তবে তা কবুল হবে কি?

উত্তর : ছালাত কবুল হওয়ার জন্য ওযূ শর্ত (মায়েদাহ ৫/৬)। অতএব গোসল ওযূর বিকল্প হবে না। ওযূ না করে গোসল করলে ছালাতের জন্য পুনরায় ওযূ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, বায়ু নিঃসরণের পর ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদের ছালাত কবুল করবেন না (বুখারী হা৬৯৫৪/, মুসলিম হা/২২৫)। এছাড়া ওযূ করার পর সর্বাঙ্গ ধৌত করাই গোসলের সুন্নাতী নিয়ম (বুখারী হা/২৪৮, মুসলিম হা/৩১৬, মিশকাত হা/৪৩৫)। অতএব ওযূ ব্যতীত স্রেফ গোসল করে ছালাত আদায় করলে পুনরায় ওযূ করে তা আদায় করতে হবে।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (08) : যে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মানত করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। এক্ষণে মানত আদায় করতে হবে কি? আর যে বস্ত্ত দান করার মানত করা হয়েছিল তার পরিবর্তে সমমানের বস্ত্ত দান করা যাবে কি?

প্রশ্ন (08) : যে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মানত করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। এক্ষণে মানত আদায় করতে হবে কি? আর যে বস্ত্ত দান করার মানত করা হয়েছিল তার পরিবর্তে সমমানের বস্ত্ত দান করা যাবে কি?

উত্তর : উদ্দেশ্য পূরণ না হ’লে মানত আদায় করতে হবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফৎওয়া নং ৭৬৪২)। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত আমল নিয়তের উপরে নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই হবে, যার সে নিয়ত করবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১)। দ্বিতীয়তঃ যে জিনিসের মানত মেনেছে সেটাই আদায় করতে হবে, যদি তা আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে (বুখারী, মিশকাত হা/৩৪২৭)। সমমানের অন্য বস্ত্ত দ্বারা আদায় করা যাবে না। না পারলে কাফফারা দিতে হবে। তা হ’ল দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম মানের খাদ্য অথবা বস্ত্র দান করা অথবা একজন (মুমিন) ক্রীতদাস মুক্ত করা অথবা তিনদিন (একটানা) ছিয়াম রাখা (মায়েদাহ ৮৯, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪২৯)।

জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (07) : আমার জানা মতে, হিন্দুরা যেমন সিঁদুর ব্যবহার করে স্বামীর মঙ্গলের জন্য, মুসলিমদের মাঝেও নাকফুল পরিধানের নীতি এরূপ কারণেই এসেছে। এক্ষণে মহিলাদের জন্য এটা ব্যবহার করা শরী‘আত সম্মত হবে কি?

প্রশ্ন (07) : আমার জানা মতে, হিন্দুরা যেমন সিঁদুর ব্যবহার করে স্বামীর মঙ্গলের জন্য, মুসলিমদের মাঝেও নাকফুল পরিধানের নীতি এরূপ কারণেই এসেছে। এক্ষণে মহিলাদের জন্য এটা ব্যবহার করা শরী‘আত সম্মত হবে কি?

উত্তর : উক্ত বক্তব্য ভুল। কোন মুসলিম মহিলাই স্বামীর মঙ্গলের জন্য নাকফুল পরে না। বরং এটি নারীদের অলংকার বিশেষ। যা তারা তাদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিধান করে থাকে। অতএব নাকফুল ব্যবহারে শরী‘আতে কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/৩৬)। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় আমার উম্মতের নারীদের জন্য হালাল করা হয়েছে এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫৯৫, আবুদাঊদ হা/৪০৫৭, মিশকাত হা/৪৩৯৪)। উল্লেখ্য, মেয়েদের কান ফুটানোর বিষয়টিও জায়েয আছে। জাহেলী যুগে এটা করা হ’ত। কিন্তু ইসলামী যুগে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এটাতে কোন আপত্তি করেননি (ফিক্বহুস সুন্নাহ পৃঃ ২/৩৪)।জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (06) : জনৈক দানশীল ধার্মিক ব্যক্তি কিছু স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার পর মারা গেছেন। বর্তমানে সেগুলিতে নাচ-গানসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। এক্ষণে এসব পাপের ভার কি কেবল বর্তমান পরিচালকদের না উক্ত প্রতিষ্ঠাতার আমলনামাতেও যুক্ত হবে?

প্রশ্ন (06) : জনৈক দানশীল ধার্মিক ব্যক্তি কিছু স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার পর মারা গেছেন। বর্তমানে সেগুলিতে নাচ-গানসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। এক্ষণে এসব পাপের ভার কি কেবল বর্তমান পরিচালকদের না উক্ত প্রতিষ্ঠাতার আমলনামাতেও যুক্ত হবে?

উত্তর : যেহেতু প্রতিষ্ঠাতা মারা যাওয়ার পর এসব কার্যকলাপ শুরু হয়েছে, সেহেতু তিনি এর জন্য দায়ী হবেন না। বরং বর্তমান পরিচালকগণ এর জন্য গুনাহগার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘একজনের পাপের বোঝা আরেকজন বইবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)। তবে যদি এগুলির পিছনে প্রতিষ্ঠাতার সমর্থন ছিল বলে প্রমাণিত হয়, তবে তিনিও দায়ী হবেন। জানুয়ারী ২০১৫

রশ্ন (05) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, কোন ব্যক্তি ওয়ায মাহফিলে যাওয়ার ইচ্ছা করে সামনের পা বাড়িয়ে পিছনের পা তোলার আগেই সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। একথার কোন সত্যতা আছে কি?

রশ্ন (05) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, কোন ব্যক্তি ওয়ায মাহফিলে যাওয়ার ইচ্ছা করে সামনের পা বাড়িয়ে পিছনের পা তোলার আগেই সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। একথার কোন সত্যতা আছে কি?

উত্তর : এইরূপ শব্দে হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে নেকীর উদ্দেশ্যে পূর্ণ ইখলাছের সাথে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক কোন আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করলে অসংখ্য নেকী পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা নেকী ও পাপ লিখেন। অতএব যে ব্যক্তি কোন নেকী করার ইচ্ছা করে তা বাস্তবায়ন করতে পারে না, আল্লাহ তার পূর্ণ নেকী লিখে থাকেন। আর যে ব্যক্তি তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়, তার আমলনামায় ১০ থেকে ৭শ’র অধিক নেকী লেখা হয়’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৩৭৪ ‘আল্লাহর রহমত প্রশস্ত’ অনুচ্ছেদ, ‘দো‘আ’ অধ্যায়)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য রাস্তায় বের হ’ল, আল্লাহ তাঁর জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)। তিনি বলেন, ‘যখন কোন কওম আল্লাহ্কে স্মরণ করার জন্য একত্রিত হয়ে বসে, তখন ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে নেন, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পাশের ফেরেশতাগণের সামনে তাদের প্রশংসামূলক আলোচনা করেন’(মুসলিম হা/২৭০০; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫০৯; মিশকাত হা/২২৬১)। জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (04) : অনেকে বলে থাকে যে, রাতের অন্ধকারে ছালাত আদায় করা ঠিক নয়, বরং আলো জ্বালিয়ে ছালাত আদায় করতে হবে। এ বক্তব্য সঠিক কি-না জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (04) : অনেকে বলে থাকে যে, রাতের অন্ধকারে ছালাত আদায় করা ঠিক নয়, বরং আলো জ্বালিয়ে ছালাত আদায় করতে হবে। এ বক্তব্য সঠিক কি-না জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : বক্তব্যটি ভিত্তিহীন। আলো ছালাতের কবুল হওয়ার কোন শর্ত নয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় গৃহে অনেক সময় অন্ধকারে ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী হা/৩৮২; মুসলিম হা/৫১২, মিশকাত হা/৭৮৬, ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ)। তবে মসজিদে আলোর ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। যাতে সাপ-বিচ্ছু বা অন্য কিছুর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মুছল্লী সহজে জামা‘আতে শরীক হ’তে পারে। জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (03) : আমাদের মসজিদের ইমাম জুম‘আ ব্যতীত কোন ছালাত আদায় করে না এবং সিগারেট-জর্দা-গুল ব্যবহার করে। তাকে সরিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?

প্রশ্ন (03) : আমাদের মসজিদের ইমাম জুম‘আ ব্যতীত কোন ছালাত আদায় করে না এবং সিগারেট-জর্দা-গুল ব্যবহার করে। তাকে সরিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?

উত্তর : ইমাম যদি জুম‘আ ব্যতীত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত তরককারী হয়, তবে তার পিছনে ছালাত সিদ্ধ হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ছালাত’ (মুসলিম হা/১৩৪, মিশকাত হা/৫৬৯)। প্রশ্নে উল্লিখিত অবস্থায় ইমামকে নছীহত করতে হবে অথবা এড়িয়ে যেতে হবে। আর ঐ ইমামের ছালাত কবুল হয় না মুছল্লীরা যাকে শারঈ কারণে অপসন্দ করে (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১১২২, ২৮)। জানুয়ারী ২০১৫

রশ্ন (02) : মুসলিম মৃতব্যক্তির কাফন-দাফন কার্যে কোন হিন্দু অংশগ্রহণ করতে পারবে কি?

রশ্ন (02) : মুসলিম মৃতব্যক্তির কাফন-দাফন কার্যে কোন হিন্দু অংশগ্রহণ করতে পারবে কি?

উত্তর : মুমিনের কাফন-দাফন সম্পন্ন করা অত্যন্ত নেকীর কাজ। মুসলমানগণ নেকীর আশায় উক্ত কাজে শরীক হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাল। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’ (বায়হাক্বী ৩/৩৯৫; ত্বাবারাণী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ ছহীহ)। কিন্তু হিন্দু বা অমুসলিমদের উক্ত নিয়ত থাকে না। তবে সাধারণভাবে তারা ছোট-খাট যেকোন সহযোগিতা করতে পারে। জানুয়ারী ২০১৫

প্রশ্ন (01) : কোন কোন সময় সালাম দেওয়া বা নেওয়া নিষিদ্ধ?

প্রশ্ন (01) : কোন কোন সময় সালাম দেওয়া বা নেওয়া নিষিদ্ধ?

উত্তর : সালাম সর্বাবস্থায় আদান-প্রদান করা যায়। রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থাতেও হাতের ইশারায় সালামের উত্তর দিতেন (আবুদাউদ হা/৯২৬, তিরমিযী হা/৩৬৭, মিশকাত হা/৯৯১)। কেবল পেশাব-পায়খানার সময় তিনি সালামের উত্তর দিতেন না, বরং বের হয়ে উত্তর দিতেন (যদি সেই ব্যক্তি মওজুদ থাকত) (বুখারী হা/৩৩৭, আবুদাঊদ হা/১৭, মিশকাত হা/৪৬৭, ৫৩৫)। *[আরবীতে ইসলামী নাম রাখুন ও সেই নামে ডাকুন (স.স.)]। জানুয়ারী ২০১৫