প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৮

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৮

প্রশ্ন (৩৫১) : কোন কারণে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হ’লে দাঁতে ক্যাপ পরানো যাবে কি? এটা সৃষ্টির পরিবর্তন হিসাবে গণ্য হবে কি?
উত্তর : এটা সৃষ্টির পরিবর্তন নয়; বরং চিকিৎসা হিসাবে গণ্য হবে। কুলাবের যুদ্ধে আরফাজাহ বিন আস‘আদ-এর নাক কাটা গিয়েছিল। তিনি রূপার দ্বারা একটি নাক তৈরি করেছিলেন। অতঃপর তাতে দুর্গন্ধ দেখা দিলে নবী করীম (ছাঃ) তাঁকে স্বর্ণের নাক তৈরি করতে নির্দেশ দিলেন (আবুদাঊদ, হা/৪২৩২, মিশকাত হা/৪৪০০ ‘পোষাক’ অধায়, ‘আংটি’ অনুচ্ছেদ, সনদ হাসান)।
প্রশ্ন (৩৫২) : সম্প্রতি বাংলাদেশে সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালু হয়েছে। যে পদ্ধতিতে এটি করা হয়েছে তা কি ইসলামী শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : এ পদ্ধতি শরী‘আতসম্মত নয়। বরং এটি সূদী পদ্ধতি। এখান থেকে মুসলমানদের বেঁচে থাকা আবশ্যক। সরকার ঘোষিত সার্বজনীন পেনশনের রূপরেখাটি প্রচলিত বীমা পদ্ধতি বা ব্যাংকের ডিপিএসের মত, যা গারার (অস্পষ্টতা) ও রিবা (সূদ)-নির্ভর। অর্থাৎ একজন নাগরিক নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত নির্ধারিত হারে নিয়মিত চাঁদা দিবে। বিপরীতে নির্দিষ্ট বয়সে সরকার তাকে আমৃত্যু পেনশন তথা ঋণের বিনিময়ে সূদ দিবে। এই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার চুক্তি সরাসরি সূদের আওতায় পড়ে। কারণ যে ঋণ লাভ নিয়ে আসে তা-ই সূদ (ইরওয়া হা/১৩৯৭)। সূদ সর্বাবস্থায় হারাম (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। তবে সরকার নাগরিকদের কল্যাণে সার্বজনীন বেকার ভাতা বা দরিদ্র ভাতা চালু করতে পারে। যাতে সকল নাগরিক সূদমুক্ত জীবন পরিচালনা করতে পারে। এছাড়াও সরকার চাইলে ব্যবসায় লভ্যাংশের ভিত্তিতে সূদমুক্ত ইসলামী স্কীম চালু করতে পারে। প্রশ্নকারী : আফযাল হোসাইন, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
প্রশ্ন (৩৫৩) : কোন মানসিক ভারসম্যহীন ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করে তবে তাকে আত্মহত্যার শাস্তি ভোগ করতে হবে কি?
উত্তর : আত্মহত্যা মহাপাপ এবং তার জাহান্নামী হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে সে পরকালীন শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে (১) পাগল, যতক্ষণ না সুস্থ হয়, (২) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয় এবং (৩) নাবালক শিশু, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়’ (আবুদাউদ হা/৪৪০৩; মিশকাত হা/৩২৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫১৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪৫/১৭২)। প্রশ্নকারী : আবু তাহের সাজিদ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন (৩৫৪) : পানির ব্যবস্থা না থাকায় তায়াম্মুম করে ফরয ছালাত আদায় করার কিছুক্ষণ পর পানির ব্যবস্থা হয়ে গেলে এবং ওয়াক্ত থাকলে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করার পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পেয়ে গেলেও পুনরায় ছালাত আদায় করার প্রয়োজন নেই। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেন, দুই লোক সফরে বের হ’ল। পথিমধ্যে ছালাতের সময় হ’ল, অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না। তাই তারা দু’জনই পাক মাটিতে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করে নিল। অতঃপর ছালাতের সময়ের মধ্যেই তারা পানি পেয়ে গেল। তাই তাদের একজন ওযু করে আবার ছালাত আদায় করল এবং দ্বিতীয়জন তা করল না। এরপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে তা বর্ণনা করল। যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করেনি তাকে তিনি বললেন, তুমি সুন্নাতের উপরই ছিলে। এ ছালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করেছে তাকে বললেন, তোমার জন্য দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে (আবুদাউদ হা/৩৩৮; মিশকাত হা/৫৩৩, সনদ ছহীহ)। প্রশ্নকারী : এম হোসাইন, আসাম, ভারত।
প্রশ্ন (৩৫৫) : আমি সঊদী প্রবাসী। ইক্বামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আমি অবৈধভাবে আছি। আমাকে গুনাহগার হ’তে হবে কি?
উত্তর : শরী‘আত বিরোধী নয় রাষ্ট্রের এমন বিধিনিষেধ পালন করা আবশ্যক। কোন দেশের আইন উপেক্ষা করে সেখানে অবস্থান করা সমীচীন নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর’ (মায়েদাহ ৫/১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না’ (তিরমিযী হা/১৩৫২; মিশকাত হা/২৯২৩)। এক্ষণে আপনার করণীয় হবে ইক্বামা নবায়ন করা নতুবা নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করা। প্রশ্নকারী : মঈনুল ইসলাম, বরিশাল।
প্রশ্ন (৩৫৬) : জনৈক ব্যক্তি জীবিতাবস্থায় সম্পদের কিছু অংশ কিছু ওয়ারিছের নামে রেজিস্ট্রি করে যান। বাকী অংশ তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট কয়েক বছর পর বণ্টন করার অছিয়ত করে যান। এরূপ করা সঠিক হয়েছে কি?
উত্তর : সুন্নাত হ’ল মৃত্যুর পরে ওয়ারিছদের মধ্যে শরী‘আত মোতাবেক সম্পত্তি বণ্টন হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর পরে সম্পদ বণ্টনের কথা আলোচনা করেছেন (নিসা ৪/১১-১২)। তাছাড়া জীবদ্দশায় সম্পদ বণ্টন করে দিলে নিজেই অসহায় হয়ে যেতে পারে। এক্ষণে কেউ যদি তার যাবতীয় সম্পদ বা কিছু সম্পদ ওয়ারিছদের মাঝে বণ্টন করে দিতে চায়, তাহ’লে ফারায়েয অনুযায়ী যথানিয়মে বণ্টন করে দিতে হবে (মারদাভী, আল-ইনছাফ ৭/১৪২; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৬/০২)। যেমন ছাহাবী সা‘দ বিন ওবাদা (রাঃ) তার জীবদ্দশায় তার যাবতীয় সম্পদ বণ্টন করে সফরে বের হয়ে যান এবং সে সফরেই মারা যান (সুনান সাঈদ বিন মানছূর হা/২৯১, ২৯২)। প্রশ্নে বর্ণনা অনুযায়ী কিছু ওয়ারিছকে বিশেষভাবে সম্পদ লিখে দেওয়া হয়েছে, যা শরী‘আতসম্মত হয়নি। অন্যদিকে মৃত্যুর কয়েক বছর পরে সম্পদ বণ্টন করার অছিয়ত করা হয়েছে, যা ঠিক হয়নি। কারণ মানুষ মারা গেলে সে আর সম্পত্তির মালিক থাকে না। বরং জীবিত ওয়ারিছেরা তার মালিক হয়ে যায়। অতএব এই বণ্টন ও অছিয়ত কোনটাই সঠিক হয়নি এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমতাবস্থায় উক্ত সম্পত্তি ওয়ারিছগণ শরী‘আত অনুযায়ী সঠিকভাবে আপোষে সমঝোতার মাধ্যমে পুনর্বণ্টন করে নিবেন। প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুৃক।
প্রশ্ন (৩৫৭) : ছালাতের সময় মুওয়াযযিন বা যিনি ইক্বামত দিবেন তাকে ইমামের পিছনে দাঁড়ানো আবশ্যক কি?
উত্তর : মুওয়াযযিন বা যিনি ইক্বামত দিবেন তাকে ইমামের পিছনে দাঁড়ানো আবশ্যক নয়। তবে দায়িত্বশীল হিসাবে তিনি ইমামের পিছনে দাঁড়াতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞজন (ছালাতে) আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। তারপর দাঁড়াবে তাদের নিকটবর্তী স্তরের লোক। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চস্বরে বললেন। আর তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না (মুসলিম হা/৪৩২; মিশকাত হা/১০৮৯)। প্রশ্নকারী : মঈন মাহমূদ, বাগমারা, রাজশাহী।
প্রশ্ন (৩৫৮) : স্ত্রী অনুমতি ছাড়াই পিতার বাড়িতে চলে যাওয়ার কিছুদিন পর আমি তাকে আইনগতভাবে তালাক দেই। এভাবে বিচ্ছেদের ১০ বছর পর সে মোহরানা দাবী করছে। এক্ষণে তাকে মোহরানা দিতে হবে কি?
উত্তর : স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতীত পিতার বাড়িতে চলে যাওয়া অবাধ্যতা এবং গুনাহের কাজ। তবে তার চলে যাওয়াটা মোহরানা মাফের কারণ নয়। এক্ষণে স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক হওয়ায় স্ত্রীকে তার প্রাপ্য মোহরানা দিতে হবে। প্রদান না করলে তিনি ঋণী থাকবেন। উল্লেখ্য যে, স্ত্রী খোলা‘ তথা স্বামীর কাছে নিজ থেকে তালাক চাইলে বা আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহরানা দিতে হবে না। বরং নগদ মোহরানা দেওয়া থাকলে স্ত্রীই স্বামীকে সেই মোহরানা ফেরত দিবে কিংবা সমঝোতা করবে (বুখারী হা/৫২৭২; মিশকাত হা/৩২৭৪; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৯/৩৯৯; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৩৯২)। প্রশ্নকারী : মুনীরুল ইসলাম, শাহজাহানপুর, বগুড়া।
প্রশ্ন (৩৫৯) : আমাদের ৪ বছরের বিবাহিত জীবনে অনেকবার ঝগড়ার সময় স্বামী আমাকে বলেছেন, তোমার ভালো না লাগলে বাড়ি চলে যাও আর আসতে হবে না, বা কখনো বলেছেন, বাড়ি চলে যাও। যদিও কখনো আমরা ১ মাসও আলাদা অবস্থান করিনি। স্বামী এসব কথা ‘কেনায়া তালাক’ হিসাবে গণ্য হবে কি? বিশেষত স্বামী যদি তালাকের নিয়তে এরূপ বলে থাকেন?
উত্তর : প্রথমতঃ তালাকের নিয়তসহ এমন ইঙ্গিতবহ বাক্য উল্লেখ করে তালাক প্রদান করাকে ‘কেনায়া তালাক’ বলে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৩০২)। অতএব তালাকের নিয়তে স্বামী এসব কথা বলে থাকলে প্রত্যেক মাসের পবিত্রতাকালীন সময়ে প্রদত্ত তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ তালাকের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই কেউ বললে এমন ইঙ্গিতবহ কথা তালাক হিসাবে গণ্য হবে না। কিন্তু অনর্থক এমন কথা বলা থেকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। কেননা তালাক কোন হালকা বিষয় নয়। যেমন আয়েশা (রাঃ) বলেন, জাওনের কন্যাকে (ابْنَةُ الْجَوْنِ) যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট একটি ঘরে পাঠানো হ’ল আর তিনি তার নিকটবর্তী হ’লেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও’ (বুখারী হা/৫২৫৪; ইবনু মাজাহ হা/২০৫০)। আর এটাই ছিল তার জন্য তালাক। প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
প্রশ্ন (৩৬০) : আমি মসজিদুল হারামে কর্মরত। আমাদের কোম্পানীর খাবার অনেক খারাপ হওয়ায় আমরা খেতে পারি না। অন্যদিকে ঘরে রান্না করা নিষিদ্ধ। তারপরও মাঝে মাঝেই হিটারে রান্না করে খাই। এভাবে গোপনে রান্না করে খাওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : রাষ্ট্রের আইন-কানূন শরী‘আতবিরোধী না হ’লে তা মেনে চলা আবশ্যক (শানক্বীতী, আযওয়াউল বায়ান ৩/২৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে (তিরমিযী হা/১৩৫২; মিশকাত হা/২৯২৩)। অতএব প্রশাসনিক নিয়ম সাধ্যমত মানার চেষ্টা করবে। সম্ভব না হ’লে কোম্পানীর নিকট বিষয়টি তুলে ধরবে এবং তাদের নীতি পরিবর্তনের দাবী জানাবে। তাতেও কাজ না হ’লে অন্যত্র চাকুরী নিবে।
প্রশ্ন (৩৬১) : খালি গায়ে ঘুমালে শয়তান শরীরে বসবাস করে মর্মে কোন দলীল আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে সাধারণভাবে শয়তান মানব দেহের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে তাকে ধোঁকা দিয়ে থাকে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে, সে যেন নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা শয়তান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে’ (মুসলিম হা/২৩৮; মিশকাত হা/৩৯২)। অন্যত্র এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, এমন এক লোকের কথা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করা হ’ল, যে ফজরের ছালাতের জন্য জাগ্রত না হয়ে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটায়। তিনি বললেন, তার কানে শয়তান প্রস্রাব করে দিয়েছে (বুখারী হা/১১৪৪; মিশকাত হা/১২২১)। তাছাড়া শয়তান মানুষের চুলে তিনটি গিট মেরে দীর্ঘ ঘুমের জন্য উৎসাহিত করে। দো‘আ পাঠ করা, ওযূ করা ও ছালাত আদায়ের মাধ্যমে এই গিটগুলো খুলে যাওয়ার ব্যাপারে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (বুখারী হা/১১৪২; মিশকাত হা/১২১৯)। অতএব শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য শোয়ার সময় সূরা ইখলাছ, ফালাক, নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব দেহের সর্বত্র হাত বুলাবে এবং আয়াতুল কুরসী পড়ে ডান কাতে ঘুমিয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে।
প্রশ্ন (৩৬২) : বিবাহের ৪ মাস পর স্বামী বিদেশে চলে যায়। কিছুদিন পর আমি জৈবিক চাহিদার কষ্টে অন্যত্র বিবাহ করার জন্য স্বামীর নিকটে তালাক চাই। কিন্তু স্বামী তাতে রাযী হয় না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : স্বামীর উচিৎ স্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে তালাক প্রদানের মাধ্যমে স্ত্রীকে মুক্ত করে দেওয়া। নইলে স্বামী গোনাহগার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘এক্ষণে যদি তোমরা ভয় কর যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা ঠিক রাখতে পারবে না, তাহ’লে স্ত্রী কিছু বিনিময় দিলে তা গ্রহণে উভয়ের কোন দোষ নেই। এটাই আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা তা অতিক্রম করো না। যারা আল্লাহর সীমারেখা সমূহ অতিক্রম করে, তারা হ’ল সীমালংঘনকারী (বাক্বারাহ ২/২২৯; বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ৫/২১২;, ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৩২৩-২৫)। তবে স্ত্রী পরকীয়ার কারণে স্বামীর নিকট তালাক চাইলে সে পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। স্মর্তব্য যে, শারঈ ওযর ব্যতীত স্ত্রী স্বামীর নিকট তালাক চাইতে পারে না। কোন কারণ ছাড়াই যদি কেউ স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহ’লে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবূদাঊদ হা/২২২৬; মিশকাত হা/৩২৭৯; ছহীহুত তারগীব হা/২০১৮)। অন্য বর্ণনায় বিনা কারণে তালাকপ্রার্থী নারীকে মুনাফিক বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/১১৮৬; মিশকাত হা/৩২৯০; ছহীহাহ হা/৬৩২)। অতএব উক্ত অবস্থায় নারী চাইলে ধৈর্য সহকারে স্বামীর সংসারে থাকতে পারে অথবা খোলা‘ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যত্র বিবাহ করতে পারে।
প্রশ্ন (৩৬৩) : একজন মেয়ে আল্লাহর কসম করে বলেছে, কোন গায়ের মাহরাম ছেলেদের সাথে কখনো কথা বলবে না। কিন্তু তাকে বাইরে যেতে হয়। অনেক সময় ছেলেদের সাথে যেমন রিকশাওয়ালাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়। এক্ষণে তার করণীয় কি? তাকে কি নিয়মিত কাফফারা দিতে হবে নাকি একবার কাফফারা দিলেই যথেষ্ট হবে?
উত্তর : কসমের সময় প্রয়োজনীয় কথা বলার বিষয়টি নিয়তে রাখলে কোন কাফফারা দিতে হবে না। আর নিয়তে না রাখলে একবার কাফফারা দিলেই যথেষ্ট হবে (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৫/১৩২-১৩৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৩/৬২)। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য। কিন্তু পাকড়াও করবেন যেগুলি তোমরা দৃঢ় সংকল্পের সাথে কর। এরূপ শপথ ভঙ্গের কাফফারা হ’ল, দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম মানের খাদ্য প্রদান করা যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খাইয়ে থাক অথবা অনুরূপ মানের পোষাক প্রদান করা অথবা একটি ক্রীতদাস বা দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে ব্যক্তি এতে সক্ষম হবে না, সে তিনদিন ছিয়াম পালন করবে। এটাই তোমাদের শপথ সমূহের কাফফারা যখন তোমরা তা করবে’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
প্রশ্ন (৩৬৪) : আমার বোন প্রতি রাতে সূরা মূলক পাঠ করে। বর্তমানে রাতে প্রায়ই স্বামী ফোন করে দীর্ঘক্ষণ কথা বলায় বোন উক্ত আমলটি দিনের বেলা করে ফেলে। এতে কি সে রাতের মত অনুরূপ ফযীলত পাবে?
উত্তর : সূরা মুলক রাতে পাঠ করার যেমন ফযীলত রয়েছে তেমনি সাধারণভাবে যেকোন সময় পাঠেরও ফযীলত রয়েছে। তবে এটি রাতে পাঠ করাই উত্তম। সূরা মুলক সাধারণভাবে পাঠের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এটি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবে (ছহীহুল জামে‘ হা/২০৯২)। তিনি আরো বলেন, ‘সূরা মুলক কবরের আযাব থেকে বাধাদানকারী’ (ছহীহাহ হা/১১৪০; ছহীহুল জামে হা/৩৬৪৩)। একটি বর্ণনা এসেছে, এই সূরাটি রাতে পাঠ করলে মৃত্যুর পরে যখন মাইয়েতকে কবরে রাখা হবে এবং মাটি সবদিকে থেকে চাপ দিবে, তখন এই সূরা সবদিক থেকে মাটিকে প্রতিহত করবে (হাকেম হা/৩৮৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৭৫; ছহীহাহ হা/১১৪০)। অতএব দিনে বা রাতে এই সূরা নিয়মিত পাঠকারীর জন্য বিশেষ প্রতিদান রয়েছে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৪/৩৩৪-৩৫)। এক্ষণে কেউ দিনে পাঠ করলে দিনে পাঠের ফযীলত পাবে। আর রাতে পাঠ করলে রাতের পাঠের জন্য বিশেষ ফযীলত পাবে (ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৫/১৫)। সুতরাং কেউ খালেছ নিয়তে সূরা মুলক দিনে পাঠ করলেও কবর আযাব থেকে রক্ষা ও জান্নাত লাভে ধন্য হ’তে পারবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৩৬৫) : সূরা বাক্বারার ৬২ ও মায়েদার ৬৯ আয়াত অনুযায়ী বুঝা যায় যে, ইহূদী, নাছারা ও অগ্নিপূজকেরাও কেবল আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করলে এবং সৎকর্ম করলে জান্নাতে চলে যাবে। হাদীছ অস্বীকারকারীরা এর দ্বারা বলতে চায় যে, তারাও জান্নাতে যাবে। এর সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : সূরা বাক্বারার ৬২ আয়াতে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই মুমিন, ইহূদী, নাছারা ও ছাবেঈদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকটে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’। অন্যদিকে সূরা মায়েদাহ ৬৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুসলিম, ইহূদী, ছাবেঈ ও নাছারাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও ক্বিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা কোনরূপ চিন্তান্বিত হবে না’। উক্ত আয়াতদ্বয়ের প্রকাশ্য অর্থ হ’ল যারা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে তারা জান্নাতে চলে যাবে সে যে ধর্মের অনুসারী হৌক না কেন। কিন্তু কুরআনের একটি আয়াতকে আরেকটি আয়াত ব্যাখ্যা করে। প্রথমত আয়াত দু’টি সূরা আলে ইমরান ৮৫ আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। যাতে বলা হয়েছে, ‘আর যে ব্যক্তি ‘ইসলাম’ ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং ঐ ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫ )। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার কসম করে বলছি, এ উম্মতের যে কেউ চাই যে ইহূদী হৌক বা খৃষ্টান হৌক, আমার আগমনবার্তা শুনেছে, অথচ আমি যে শরী‘আত নিয়ে এসেছি, তার উপরে ঈমান আনেনি, সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে’ (মুসলিম হা/১৫৩; মিশকাত হা/১০)। একদিন ওমর (রাঃ) তাওরাতের কয়েকটি পৃষ্ঠা নিয়ে পড়ছিলেন। তা দেখে নবী করীম (ছাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি মূসাও আজ জীবিত থাকতেন, তাহ’লে আমার অনুসরণ ব্যতীত তার কোন উপায় থাকত না’ (মিশকাত হা/১৯৪, ১৭৭; ইরওয়া হা/১৫৮৯)। দ্বিতীয়তঃ আয়াতগুলো মানসূখ হিসাবে না ধরলেও এর অর্থ তাদের পক্ষে যাবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আয়াতদ্বয়ে যেমন মুমিনদের সাফল্যের কথা বলেছেন তেমনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পূর্বে যে সকল ইহূদী-নাছারারা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করেছেন তাদের কোন ভয় বা চিন্তা থাকবে না। আর মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের পরে তাঁকে অমান্য করে অন্য আসমানী কিতাবে বিশ্বাস করলে তারা জান্নাতী হবে না। তৃতীয়তঃ যারা তাওরাত ও ইনযীলে বিশ্বাস করে তারা কুরআন ও শেষনবীতে বিশ্বাস আনতে বাধ্য। কারণ তাওরাত ও ইনযীলে কুরআন ও শেষনবীর প্রতি বিশ্বাস আনাকে আবশ্যিক করা হয়েছে (ইবনু কাছীর, কুরতুবী, তাফসীর উক্ত আয়াতদ্বয়)।
প্রশ্ন (৩৬৬) : ভুলে গিয়ে ফরয গোসল না করেই কয়েক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেছি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : কেউ অপবিত্র অবস্থায় ছালাত আদায় করলে তার ছালাত হবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাক-পবিত্রতা ছাড়া ছালাত এবং হারাম ধন-সম্পদের দান-খয়রাত কবূল হয় না (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১)। তিনি আরো বলেন, যার ওযূ ছুটে গেছে তার ছালাত কবূল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওযূ করে (বুখারী, মিশকাত হা/৩০০)। এক্ষণে যে কয় ওয়াক্ত ছালাত পবিত্রতা ব্যতীত আদায় করা হয়েছে সেগুলো পুনরায় আদায় করতে হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২৩০)।
প্রশ্ন (৩৬৭) : আমি রাগবশতঃ আমার স্ত্রীকে গত দু’মাস আগে তার পিতার নাম ধরে তাকে এক তালাক, দুই তালাক এবং তিন তালাক বলেছি। এখন আমি আমার স্ত্রীর থেকে আলাদা আছি। কেউ কেউ বলছেন, আমাদের সংসার এখনো পুরোপুরি ভেঙ্গে যায়নি। এক্ষণে আমি তার সাথে সংসার করতে চাইলে আমার করণীয় কী?
উত্তর : এক বৈঠকে তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হয় (মুসলিম হা/১৪৭২; আহমাদ হা/২৮৭৭; হাকেম হা/২৭৯৩)। কাজেই কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। ইদ্দতের (তিন তোহরের) মধ্যে হ’লে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবে। আর ইদ্দত পার হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিবে (বাক্বারাহ ২/২৩২)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আবু রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি বললেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি জানি ওটা এক তালাকই হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও। অতঃপর তিনি সূরা তালাকের ১ম আয়াতটি পাঠ করে শুনান (আবুদাঊদ হা/২১৯৬; বায়হাক্বী, হা/১৪৯৮৬, সনদ হাসান)।
প্রশ্ন (৩৬৮) : আলেমদেরকে ‘আল্লামা, মাওলানা, হুজুর, শায়েখ’ ইত্যাদি শব্দ দিয়ে সম্বোধন করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। কারণ এইগুলো সম্মানসূচক শব্দ, যা আঞ্চলিক পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর যে কোন পরিভাষা শরী‘আহ বিরোধী না হ’লে তা ব্যবহারে কোন দোষ নেই (আল-ফারাবী, আছ-ছিহাহ ৫/১৯৯০; নববী, আল-আযকার ৩৬২-৬৩, ৫৭৫; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১/১৯১; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৯২৭)।
প্রশ্ন (৩৬৯) : এসএসসি, এইচএসসি অথবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য পরীক্ষার দিনগুলোতে ছিয়াম রাখা যাবে কী?
উত্তর : এব্যাপারে সরাসরি কোন দলীল না থাকায় শায়েখ বিন বাযসহ কিছু বিদ্বান একে বিদ‘আত বলেছেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৯২)। বরং এজন্য ছালাতের শেষ বৈঠকে বা একাকী ছালাত শেষে হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রাণ ভরে দো‘আ করাই যথেষ্ট। এছাড়া নেককার মুরববীদের দো‘আ নিতে হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসসান বিন ছাবেতের জন্য দো‘আ করে বলেছিলেন, আল্লাহ তুমি তাকে পবিত্র রূহ জিব্রীল দ্বারা শক্তিশালী কর’ (বুখারী হা/৪৫৩; মুসলিম হা/২৪৮৫; মিশকাত হা/৪৭৮৯)। সেকারণ পরীক্ষার হলে বসার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা এবং ‘আল্ল-হুম্মা আইয়িদ্নী বেরূহিল কুদুস’ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তি বৃদ্ধি কর’ বলা উত্তম।
প্রশ্ন (৩৭০) : বৈষয়িক ব্যাপারে পিতা-মাতার আনুগত্য করতে হবে। কিন্তু মা যদি ছেলের বউ নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তাকে তালাক দেওয়ার জন্য ছেলেকে নির্দেশ দেয়, তাহ’লে ছেলে কি তা শুনতে বাধ্য?
উত্তর : এমন ক্ষেত্রে আনুগত্য আবশ্যিক নয়। শারঈ কারণে পিতা-মাতা স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে পিতা-মাতার আনুগত্য করতে হবে। যেমন ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর এবং ইবনু ওমর তার পিতা ওমর (রাঃ)-এর নির্দেশ মেনে স্ব স্ব স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। তবে শারঈ কারণ না থাকলে তাদের কথায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে না। ইবনু আববাস ও আবুদ্দারদা (রাঃ)-কে পিতা-মাতার আদেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা বলেন, ‘আমি তোমাকে স্ত্রী তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারছি না আবার পিতা-মাতার অবাধ্যতা করারও আদেশ করছি না। প্রশ্নকারী বললেন, তাহ’লে আমি এই নারীর ব্যাপারে কি করব? ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, (স্ত্রীকে রেখেই) পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ কর’ (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৯০৫৯, ১৯০৬০; হাকেম হা/২৭৯৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৪৮৬)। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘আমার পিতা আমার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন। (আমি কি করব?) তিনি বললেন, তুমি তালাক দিয়ো না। বর্ণনাকারী বলল, ওমর (রাঃ) কি তার ছেলে আব্দুল্লাহকে স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেননি? তিনি বললেন, তোমার বাবা কি ওমরের মত হয়েছেন’? (মুহাম্মাদ ইবনু মুফলেহ, আল-আদাবুশ শার‘ইয়াহ ১/৪৪৭)। অর্থাৎ সব পিতা-মাতার আদেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে না। একদিন প্রখ্যাত তাবেঈ আত্বা (রহঃ)-কে একজন লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যার স্ত্রী ও মা রয়েছেন। আর তার মা তার স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট। তিনি বললেন, ‘সে যেন তার মায়ের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং মায়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে’। তাকে বলা হ’ল, সে কি তার স্ত্রীকে তালাক দিবে? তিনি বললেন, না। তাকে বলা হ’ল, মা যে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ব্যতীত খুশি নন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট না করুন। স্ত্রী তার হাতে রয়েছে, সে যদি তালাক দেয় তাতেও কোন দোষ নেই। আবার না দিলেও কোন দোষ নেই’ (মারওয়াযী, আল-বির ওয়াছ ছিলাহ হা/৫৮, সনদ হাসান)। শায়েখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে মায়ের কথায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, ‘তার জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হালাল হবে না। বরং তার জন্য আবশ্যক হ’ল মায়ের সাথে সদাচরণ করা। আর স্ত্রীকে তালাক দেওয়া সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৩/১১২)।
প্রশ্ন (৩৭১) : হজ্জ পালনকারীগণ প্রতিদিন বারবার বায়তুল্লাহ নফল তাওয়াফ করে। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম এভাবে বারবার তাওয়াফ করতেন কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে বায়তুল্লাহ তওয়াফে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ তওয়াফ করল এবং দু’রাক‘আত ছালাত পড়ল, তা একটি ক্রীতদাসকে মুক্ত করার সমতুল্য’ (ইবনু মাজাহ হা/২৯৫৬; মিশকাত হা/২৫৮০)। তিনি আরো বলেন, ‘কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা‘আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি ছওয়াব নির্ধারণ করেন (তিরিমিযী হা/৯৫৯; ছহীহুত তারগীব হা/১১৪৩)। এই সকল হাদীছের উপর ভিত্তি করে ছাহাবায়ে কেরাম এবং সালাফগণ যথাসাধ্য তওয়াফ করতেন। বিশেষ করে যারা দূরবর্তী এলাকা থেকে আগমন করতেন (ফাকেহী, আখবারে মক্কা হা/৩৯৪-৩৯৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/২২৫)। তবে অধিক ভিড়ের কারণে বিঘ্ন সৃষ্টি হ’লে নিজে একাধিকবার তওয়াফ না করে অন্যকে সুযোগ করে দিবে।
প্রশ্ন (৩৭২) : বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আয়োজিত একটি ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণ করতে চাই। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : বিশ্বব্যাংক বা সরকারের অর্থায়নে বৈধ কাজের ট্রেনিং করাতে কোন দোষ নেই। কারণ এমন প্রশিক্ষণের সাথে সূদী লেনদেনের সম্পর্ক নেই। অতএব এধরনের ব্যবস্থাপনায় ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণ করা জায়েয (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব; ওছায়মীন, আল-কাউলুল মুফীদ ৩/১১২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিকহিয়া ১৫/৭৮)।
প্রশ্ন (৩৭৩) : কেউ ১ ওয়াক্ত ছালাত ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করলে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে বলে জানি। কিন্তু কেউ এরূপ কাজ করে আবার ফিরে আসলে তার জন্য কি তওবা, কালেমা পাঠ ও গোসল করা আবশ্যক হবে?
উত্তর : ছালাতের ফরয হুকুমের প্রতি বিশ্বাস রেখে কেউ অলসতাবশত ছালাত পরিত্যাগ করলে সে কবীরা গুনাহগার হবে। যা থেকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। আর এর মাধ্যমে আমলগতভাবে সে কুফরী কাজ করলেও বিশ্বাসগত- ভাবে সে কাফির হবে না, যদিও সে নিয়মিত ছালাত আদায় না করে বা এ ব্যাপারে সীমালংঘনকারী হয়। কেননা সে ছালাতের ফরয হুকুম অস্বীকারকারী নয় (ইবনু রুশদ, আল-বায়ান ওয়াত তাহছীল ১৭/২৩৩)। আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘সারকথা হ’ল, ছালাত ত্যাগ করা ব্যক্তি ফাসেক। আর তার পরিণতির বিষয়টি আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন এবং চাইলে ক্ষমা করবেন (আলবানী, ছহীহাহ হা/৩০৫৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; হুকমু তারিকিছ ছালাত ১/৫১)। অতএব ছালাত পরিত্যাগকারীর বিধান সরাসরি কাফিরের মত নয়। তাই তার জন্য তওবা করে নিয়মিত ছালাত আদায় করাই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন (৩৭৪) : একজন মুসলমানের কোন কোন অপরাধের জন্য তার জানাযা পড়া ইমাম বা পরহেযগার ব্যক্তির জন্য হাদীছে নিষেধ রয়েছে? আবার কোন কোন অপরাধ থাকা সত্ত্বেও তার জানাযা পড়া যায় বলে উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর : এরূপ কবীরা গোনাহ সমূহের মধ্যে রয়েছে। যেমন- (১) গণীমতের মাল আত্মসাৎকারী (আবুদাউদ হা/২৭১০; মিশকাত হা/৪০১১)। (২) আত্মহত্যাকারী (মুসলিম হা/৯৭৮)। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি (বুখারী হা/২২৯৫; মিশকাত হা/২৯০৯)। (৪) ছালাত পরিত্যাগকারী, (৫) যাকাত আদায় থেকে বিরত থাকা ব্যক্তি, (৬) যেনাকারী, (৭) প্রকাশ্য মদপানকারী ইত্যাদি (আহমাদ হা/২২৬০৮; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/৮৩)। এছাড়া কোন মুসলমান কাফেরের জানাযা পড়বে না এবং ছালাত অস্বীকারকারী ব্যক্তির জানাযা হবে না। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ, রাসূল এবং ইসলামের বিধানে বিশ^াসী ব্যক্তি কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হ’লেও তার জানাযা আদায় করতে হবে এবং তার জন্য দো‘আ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ ব্যক্তি ইমামতি করবে এবং দো‘আ করবে। আর বিজ্ঞ আলেমগণ বিরত থাকবেন, যাতে পাপী লোকেরা শিক্ষা নিতে পারে।
প্রশ্ন (৩৭৫) : মৃত ব্যক্তিকে অতি আবেগের বশে চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করার বিধান সম্পর্কে ইসলামে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?
উত্তর : মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া জায়েয। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওছমান বিন মাযঊনকে মৃত অবস্থায় চুম্বন করেন। তখন তিনি ক্রন্দনরত ছিলেন এবং তাঁর অশ্রু ওছমানের চেহারার উপর পড়ছিল’ (তিরমিযী হা/৯৮৯; আবুদাঊদ হা/৩১৬৩; মিশকাত হা/১৬২৩)। তিনি আরো বলেন, ‘আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মৃত অবস্থায় চুম্বন করেছিলেন’ (বুখারী হা/১২৪১, ৪৪৫৬-৫৭; মিশকাত হা/১৬২৪)। অতএব মাইয়েতকে মাহরাম ব্যক্তিরা বা পুরুষ পুরুষকে এবং নারীরা নারী মাইয়েতকে চুম্বন করতে পারে।
প্রশ্ন (৩৭৬) : পিতা-মাতার যদি ভুলও হয়, তবুও তাদেরকে ভুল ধরিয়ে দেওয়া বা তাদের বিপরীত বলা জায়েয নয়। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত কথা ভিত্তিহীন। বরং দ্বীন হ’ল নছীহত (মুসলিম হা/৫৫; মিশকাত হা/৭৯৬৬)। পিতা বা অন্য যে কেউ ভুল করলে তার সংশোধনের কথা তাকে জানাতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একজন মুমিন তাঁর ভাইয়ের জন্য আয়না স্বরূপ। সে তার কোন ভুল দেখলে সংশোধন করে দেয়’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/৯২৬)। তবে পিতা-মাতার সাথে অবশ্যই ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে এবং সদাচরণ করতে হবে’ (লোকমান ৩১/১৫)।
প্রশ্ন (৩৭৭) : মেয়েদের সৌন্দর্য যেন প্রকাশ না পায় সেকারণে পর্দা ফরয। এক্ষণে কোন মেয়ে যদি কুশ্রী বা কাউকে আকৃষ্ট করার মত না হয় তবে কি তার জন্য পর্দা করা আবশ্যক?
উত্তর : গায়ের মাহরাম নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হওয়াটা স্বভাবজাত। অতএব নারীর পর্দার জন্য তার সৌন্দর্য ধর্তব্য নয়। বরং প্রত্যেক নারীকে ইসলামী পর্দার বিধান মেনে চলতে হবে। আল্লাহ বলেন, আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে কেবল যেটুকু প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত। আর তারা যেন তাদের মাথার কাপড় বক্ষদেশের উপর রাখে…আর তারা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে, যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকট হয়ে না পড়ে’ (নূর ২৪/৩১)।
প্রশ্ন (৩৭৮) : আপন ভাগনীর মেয়ে তথা নাতনীকে বিবাহ করা যাবে কী?
উত্তর : বোনের নাতনী নিজ নাতনী সমতুল্য, যে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী’ (নিসা ৪/২৩)। উক্ত আয়াতে বোনের নাতনী ভাগিনেয়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৬৫; সারাখ্সী, আল-মাবসূত্ব ৩০/২৯১; আল-ফিক্বহুল ইসলামী ৯/১২০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/৩৮৪, ৩৮৭)।
প্রশ্ন (৩৭৯) : হিজামা করিয়ে পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে কি? অনেকে বলছে পারিশ্রমিক নেওয়া হারাম। অথচ হিজামার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম যেমন, ক্যাপ, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, ভায়োডিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, যা ব্যয়বহুল। এসব আগে ব্যবহার হ’ত না, কেবল মুখ দিয়ে রক্ত টেনে বের করা হ’ত। এছাড়া বাসা ভাড়াসহ তার নিজের শ্রম রয়েছে। তাহ’লে থেরাপিষ্ট কেমন করে তার ব্যয় মেটাবেন?
উত্তর : হিজামাকে চিকিৎসা পেশা হিসাবে গ্রহণ করা এবং এর বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং তাকে মজুরী দিয়েছেন। যদি এটি হারাম হ’ত বা তিনি নিকৃষ্ট মনে করতেন, তবে তিনি মজুরী দিতেন না’ (বুখারী হা/২১০৩; আবুদাঊদ হা/৩৪২৩)। আনাস (রাঃ)-কে শিঙ্গাকারীর উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, আবূ ত্বয়বাহ রাসূল (ছাঃ)-কে শিঙ্গা লাগিয়ে দিলে তিনি তাকে দুই ছা‘ খাদ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুসলিম হা/১৫৭৭)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) জনৈক শিঙ্গাকারীকে ডেকে শিঙ্গা লাগালেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমার পারিশ্রমিক কত? সে বলল, তিন ছা‘। তিনি এক ছা পারিশ্রমিক হ্রাস করলেন এবং তার মজুরী দিলেন (মুখতাছারুশ শামায়েল হা/৩১২, সনদ ছহীহ)। তাছাড়া ইবনু আববাস, আলী, ইবনু ওমর ও আনাস বিন মালেকের মত ছাহাবীরা উক্ত হাদীছ বর্ণনা করায় বুঝা যায় যে, হিজামার উপার্জন হালাল এবং এটি চলমান ছিল। অন্যদিকে কিছু কিছু হাদীছে রাসূল (ছাঃ) শিঙ্গা লাগিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকে নিম্ন মানের বলেছেন (মুসলিম হা/১৫৬৮; মিশকাত হা/২৭৬৩)। অন্য বর্ণনায় তা গ্রহণে নিষেধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/২১৬৫)। উক্ত হাদীছ সমূহের ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ দু’টি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। প্রথমতঃ নিষেধের হাদীছগুলো মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়তঃ মানসূখ ধরা না হ’লেও একে উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শাফেঈ বিদ্বানগণ মনে করেন যে, এটি নিরুৎসাহিত করার কারণ ছিল রক্তের মত অপবিত্র বস্ত্ত মুখের ভিতরে গ্রহণ করার কারণে। সেজন্য ইমাম নববীসহ বিদ্বানগণ বলেন, এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীছসমূহ দ্বারা কাজটির বিনিময় গ্রহণ অপসন্দনীয় বুঝানো হয়েছে (শরহ নববী, উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৬/১৩৩)। বরং এই কাজটি মজুরী ছাড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে তার মুসলিম ভাইকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে অধিক ছওয়াব অর্জন করতে পারে (ওছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৭/১৮৯)। অতএব হালাল কর্ম হিসাবে এর বিনিময় গ্রহণ হারাম হবে না (ওছায়মীন, শরহ বুলুগুল মারাম হা/৯১০)।
প্রশ্ন (৩৮০) : নাপিত হিসাবে আমি মূলত চুল কাটলেও মাঝে মাঝে ভোক্তার চাহিদা মোতাবেক দাড়িও কাটতে হয়। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ভোক্তার নির্দেশনায় হ’লেও পাপের কাজে সহযোগিতা করা যাবে না। কেননা আল্লাহ রাববুল আলামীন অন্যায় কাজে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (৩৮১) :আমি জনৈক নারীর সাথে তাকে বিবাহ করব বলে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছি। কিন্তু আমার পিতা-মাতা আমার ওয়াদা পালনে বাধা দিচ্ছেন। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : শরী‘আতে বিবাহের পূর্বে এরূপ ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই পিতা-মাতার নির্দেশ মেনে নিতে হবে। কেননা শরী‘আত বিরোধী নির্দেশ ছাড়া অন্য সকল ব্যাপারে পিতা-মাতার আনুগত্য করা অপরিহার্য (নিসা ৪/৩৬; আনকাবূত ২৯/৮; ইসরা ১৭/২৩, ২৪, লোক্বমান ৩১/১৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯, মিশকাত হা/৪৯২৭; ছহীহাহ হা/৫১৬)।
প্রশ্ন (৩৮২) : ক্রোধ নিবারণের জন্য অনেকে কানফুল দিয়ে থাকে। অনেকে ওযূ করতে বলে। এগুলো শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে এরূপ চিকিৎসার কোন ভিত্তি নেই। এছাড়া ক্রোধ দমনে ওযূ করা সম্পর্কিত হাদীছটিও যঈফ (আবুদাঊদ হা/৪৭৮৪, যঈফাহ হা/৫৮২)। বরং রাগ কমানোর জন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা যখন রেগে যাবে তখন আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম পাঠ করবে (বুখারী হা/৬০৪৮; মুসলিম হা/২৬১০;, মিশকাত হা/২৪১৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, এ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বসে যাবে এবং বসে থাকলে শুয়ে যাবে (আবুদাঊদ হা/৪৭৮২, মিশকাত হা/৫১১৪)।
প্রশ্ন (৩৮৩) : লাইব্রেরীতে শিরক ও বিদ‘আত মিশ্রিত বই-পুস্তক বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে কি?
উত্তর : পেশা হিসাবে বই বিক্রয়ের পেশা নিঃসন্দেহে হালাল ও উত্তম। এর মাধ্যমে বিশুদ্ধ দ্বীন প্রচারে বড় ভূমিকা রাখা যায়। যা সর্বাধিক নেকী হাছিলের মাধ্যম। তবে শিরক ও বিদ‘আতের দিকে আহবানকারী বই-পুস্তক বিক্রি করলে কঠিন গুনাহের ভাগিদার হ’তে হবে। এটা তার জন্য গুনাহে জারিয়াহ বা চলমান পাপে পরিণত হবে, যা মৃত্যুর পরও জারী থাকবে (মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮)।
প্রশ্ন (৩৮৪) :কারো জন্য মাগফিরাত প্রার্থনার সময় তার রূহের মাগফিরাত কামনা করতে হবে নাকি সরাসরি ব্যক্তির মাগফিরাত কামনা করতে হবে?
উত্তর : যেহেতু রূহই মানুষের মৌলিক বিষয়, সেজন্য আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাত কামনার প্রচলন রয়েছে। তবে হাদীছের বর্ণনায় দেখা যায়, রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম রূহ নয়; বরং ব্যক্তির নাম ধরেই দো‘আ করতেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আবু সালামাকে ক্ষমা করে দাও (মুসলিম হা/৯২০; মিশকাত হা/১৬১৯)। তাছাড়া রূহ মূল হ’লেও শরীর সমেতই ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারিত হয়। কবরের শাস্তিও কেবল রূহের উপর নয়, শরীরের উপরও হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, এছাড়া পাপীর জন্য তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়, ফলে তার একদিকের পাঁজর অপর দিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায় (আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; মিশকাত হা/১৩১, সনদ ছহীহ)। প্রতিটি মানুষ কবর থেকে উঠে হাশরের মাঠে সমবেত হবে বলে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (বুখারী হা/৪৯৩৫; মিশকাত হা/৫৫২১; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৪/২৮৪; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৬)।
প্রশ্ন (৩৮৫) : হিজামার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বার ও তারিখের কোন কথা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে কি? বর্ণিত হ’লে সেগুলোর ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : চন্দ্র মাসের ১৭, ১৯ বা ২১ তারিখে হিজামা করানো মুস্তাহাব। কারণ এই দিনগুলোতে রাসূল (ছাঃ) হিজামা করাতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কাঁধের দু’পার্শ্বে এবং কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে শিঙ্গা লাগাতেন এবং তিনি ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন (তিরমিযী হা/২০৫১; ছহীহাহ হা/৯০৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৬৪)। আনাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সতেরো, ঊনিশ ও একুশ তারিখে শিঙ্গা লাগাবে সে সকল রোগ হ’তে নিরাময় থাকবে (আবুদাউদ হা/৩৮৬১; ছহীহাহ হা/৬২২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৬৮)। এছাড়া দিনের ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার হিজামা লাগাতে উৎসাহিত করা হয়েছে (ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৬৬)। এই দিনগুলোতে হিজামা ব্যবহার করা বিজ্ঞানসম্মত। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এই হাদীছগুলো বিজ্ঞানসম্মত বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, মাসের দ্বিতীয় অর্ধের শেষের দিকে হিজামা লাগানোতে অধিক উপকার রয়েছে (যাদুল মা‘আদ ৪/৫৪)। অতএব এই তারিখগুলোর সাথে দিনগুলো মিলে গেলে রোগী সর্বাধিক উপকার লাভ করতে পারে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৩৮৬) : অনেক ব্যক্তি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যেহেতু হিজামা করিয়ে দীনার বা দিরহাম না দিয়ে ২ ছা‘ খাদ্য দিয়েছেন, সুতরাং হিজামা করিয়ে খাদ্যই দেওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে তারা হিজামার খাদ্যের পারিশ্রমিককে ছাদাক্বাতুল ফিৎরের সাথে ক্বিয়াস করেছেন। এ ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের বক্তব্য কি?
উত্তর: কাজের পারিশ্রমিক মালিক এবং শ্রমিকের সন্তুষ্টি অনুযায়ী আদান প্রদান করতে হবে। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত (নিসা ৪/২৯)। তাছাড়া অন্যান্য হাদীছগুলোতে ছা‘-এর উল্লেখ নেই। বরং মজুরীর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ফিৎরা এমন একটি ইবাদত, যা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আদায় করতেন মর্মে হাদীছে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। সুতরাং ফিৎরার সাথে তুলনা করে হিজামার মজুরী হিসাবে খাদ্য নির্ধারণ করা সঠিক নয়।
প্রশ্ন (৩৮৭) :কোন নারীকে হূরে ‘আইনদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দো‘আ করা যাবে কি?
উত্তর: এতে বাধা নেই। কারণ এর অর্থ হচ্ছে তার জন্য জান্নাতের দো‘আ করা। আবু নুহায়লা (রহঃ)-কে বলা হ’ল, আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! রোগ কমিয়ে দিন, কিন্তু ছওয়াব কমাবেন না। তাকে বলা হ’ল, আরো দো‘আ করুন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নৈকট্য লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমার মাকে আয়তলোচনা হূরদের অন্তর্ভুক্ত করুন (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৯৪৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫০৪, সনদ ছহীহ)। তবে কারো জন্য কেবল জান্নাত প্রাপ্তির দো‘আ করাই যথেষ্ট।
প্রশ্ন (৩৮৮) : জনৈক বক্তা বলেন, মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে যেমন ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি বাড়িতে সুন্নাত ছালাত আদায় করলে ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য শব্দে শব্দে সঠিক নয়, তবে মর্মের দিক দিয়ে সঠিক। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, বাড়িতে একাকী নিভৃতে সুন্নাত বা নফল ছালাত আদায় করলে অনুরূপ ছওয়াব পাওয়া যায়, যেরূপ ফরয ছালাত একাকী আদায়ের চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করলে পাওয়া যায় (ছহীহাহ হা/৩১৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৫৩)। তাছাড়া সাধারণভাবে নফল ছালাত বাড়িতে আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তির ফরয ছালাত ছাড়া অন্যান্য ছালাত আমার এ মসজিদে আদায়ের চাইতে তার নিজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম (মুসলিম হা/৭৮১)। তবে বাড়ীতে সুন্নাত পড়ার সুযোগ না থাকলে মসজিদেই সুন্নাত পড়বে।
প্রশ্ন (৩৮৯) :জনৈক স্বামীর দু’জন স্ত্রী। একজন নিঃসন্তান। আরেকজনের সন্তান আছে। স্বামী সমান ভাগে উভয় স্ত্রীর নামে জমি ক্রয় করেছে। কিন্তু নিঃসন্তান স্ত্রী মারা যান। এক্ষণে জমি কিভাবে বন্টিত হবে?
উত্তর: স্বামী জীবিত থাকায় এবং সন্তান না থাকায় স্বামী পাবেন মৃত স্ত্রীর মোট সম্পত্তির অর্ধেক। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তোমরা অর্ধেক পাবে, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি থাকে, তবে তোমরা সিকি পাবে, তাদের অছিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধের পর’ (নিসা ৪/১২)। আর স্ত্রীর পিতা-মাতা জীবিত থাকলে মা পাবেন এক-তৃতীয়াংশ এবং পিতা আছাবা হিসাবে বাকী সম্পত্তি পাবেন। পিতা জীবিত না থাকলে এবং মা ও ভাইয়েরা জীবিত থাকলে মা পাবেন এক-ষষ্টাংশ এবং বাকী সম্পত্তি ভাইয়েরা আছাবা হিসাবে পেয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (মধ্যে মীরাছ বণ্টনের) ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। যদি দুইয়ের অধিক কন্যা হয়, তাহ’লে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি কেবল একজনই কন্যা হয়, তবে তার জন্য অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে। আর যদি না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই ওয়ারিছ হয়, তাহ’লে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর’ (নিসা ৪/১১)।
প্রশ্ন (৩৯০) : ঋণদাতা কি ঋণগ্রহীতার বাসায় দাওয়াত খেতে পারবে? এটা কি সূদ হবে?
উত্তর: ঋণদাতাকে ঋণগ্রহীতা তুচ্ছ কোন হাদিয়া দিলেও সেটি গ্রহণ করা সূদ’ (বুখারী হা/৩৮১৪; মিশকাত হা/২৮৩৩)। অতএব ঋণদাতার সন্তুষ্টির জন্য বিশেষভাবে দাওয়াত দেয়া যাবে না। তবে যদি তাদের মধ্যে আগে থেকে সাধারণ যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া থাকে তবে দাওয়াত খাওয়ায় বাধা নেই (ইবনু মাজাহ হা/২৪৩২; সনদ যঈফ; মিশকাত হা/২৮৩১)। এটা সূদ নয়। স্মর্তব্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, সবশেষে নাযিল হয়েছে সূদের আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন অথচ আমাদের জন্য সূদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দান করেননি। অতএব তোমরা সূদ এবং সন্দেহ থেকে দূরে থাক’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৭৬; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৮৩০)।
প্রশ্ন (৩৯১) : আমরা দুই ভাই শেয়ারে একটি ভাটায় কাজ নিয়েছিলাম। এখন সে আমার হিসাবে ৩ লক্ষেরও অধিক টাকার কোন হিসাব দেয়নি। আমি চাইলেও তাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারি না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর: প্রথমতঃ ভাইকে সঠিক হিসাব প্রদানের জন্য নিজে বা কাউকে দিয়ে অনুরোধ জানাবে এবং সামাজিকভাবে চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ ইসলাম পারস্পরিক কল্যাণকামিতার ধর্ম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দ্বীন হ’ল কল্যাণ কামনার নাম। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আললাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিমদের শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য (মুসলিম হা/৫৫; মিশকাত হা/৭৯৬৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একজন মুমিন তাঁর ভাইয়ের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তার কোন ধরনের ভুল দেখলে সংশোধন করে দেয়’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/৯২৬)। দ্বিতীয়ত: হক আদায় করা সম্ভব না হ’লে ভাইকে সম্ভবপর ক্ষমা করে দিবে। কেননা ক্ষমা আল্লাহর অন্যতম গুণ, যে গুণে গুণান্বিত হ’তে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর ক্ষমা করতে না পারলে পরকালে পাওয়ার আশায় ছেড়ে দিবে। পরকালে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় পাবেন ইনশা‘আল্লাহ। আর যারা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা বান্দার হক বিনষ্টের অপরাধে অপরাধী হবে। এজন্য ক্বিয়ামতের দিন তাকে নিজ ছওয়াব থেকে এর বিনিময় আদায় করতে হবে। যদি ছওয়াব শেষ হয়ে যায়, তবে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার আমলনামায় যোগ হবে। অতঃপর সে নিঃস্ব অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।
প্রশ্ন (৩৯২) :কোন কোন মাদ্রাসায় কেউ ছাগল বা অন্য কিছু ছাদাক্বা করলে মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী সবাই তা খায়। এভাবে সবার জন্য ছাদাক্বা খাওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর: ছাদাক্বা দুই প্রকারের। (১) ঐ যাকাত, যা হকদার ব্যতীত অন্যদের জন্য হারাম। চাই সে শিক্ষক হৌক বা ছাত্র হৌক। তবে যাকাতের হকদার তার যাকাতের সম্পদ থেকে কোন ধনীকে দাওয়াত করে খাওয়ালে তাতে দোষ নেই। যেমন বারীরা (রাঃ)-এর যাকাতের অংশ থেকে রাসূল (ছাঃ) গোশত খেয়েছিলেন। তিনি বারীরাকে বললেন, তোমার জন্য এটি ছাদাক্বা। কিন্তু আমার জন্য হাদিয়া’ (বুখারী হা/১৪৯৩; মিশকাত হা/১৮২৫)। (২) সাধারণ ছাদাক্বা, যা বণ্টনের নির্দিষ্ট কোন খাত নেই। এই ছাদাক্বা গ্রহণ সবার জন্য জায়েয। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, নফল ছাদাক্বা ধনীদের জন্য জায়েয। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২৩৬)। ইবনু কুদামাহ বলেন, ধনীদের জন্য ফরয ছাদাক্বা গ্রহণ করা হারাম। তবে নফল বা সাধারণ ছাদাক্বা জায়েয (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৭৬)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, বনু হাশেমের জন্য ফরয যাকাত হারাম। তবে নফল ছাদাক্বা হারাম নয়। যেমন তারা ছাদাক্বার কুয়া থেকে পানি পান করতেন এবং বলতেন, আমাদের জন্য ফরয ছাদাক্বা হারাম, নফল ছাদাক্বা নয় (মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/২৬১)। ইমাম বাজী বলেন, নফল ছাদাক্বা ধনী-গরীব সবাইকে খাওয়ানো যাবে (আল-মুনতাক্বা ৭/৩২০)। আল্লামা যুরক্বানী ও আযীমাবাদী বলেন, নফল ছাদাক্বা হাদিয়ার স্থলাভিষিক্ত। অতএব এই দান ধনী-গরীব সবাই খেতে পারে (শারহুয যুরক্বানী ২/১৮৪; আওনুল মা‘বূদ ৫/৩১)। এক্ষণে মাদ্রাসায় সাধারণ ছাদাক্বা হিসাবে কিছু প্রদান করা হ’লে তা শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরা খেতে পারে। আর যাকাত বা মানত থেকে দান করা হ’লে কেবল হকদাররাই খেতে পারবে। আবার যাকাতের হকদাররা যদি শিক্ষক ও কর্মচারীদের দাওয়াত দেন, তবে তারাও সেই খাবারে অংশগ্রহণ করতে পারবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৪/৩০৬; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯-১০/০২)।
প্রশ্ন (৩৯৩) : অতিরিক্ত বর্ষার সময় কবর সংরক্ষণের জন্য কবরের উপর পলিথিন বা এই জাতীয় কোন কার্পেট দিয়ে ঢাকা যাবে কি? প্রশ্নকারী : মাহবূব আলম, তেরখাদিয়া, রাজশাহী। উত্তর : বৃষ্টির পানি দ্বারা কবর ভাঙ্গনের সম্ভাবনা থাকলে সাময়িকভাবে কবরের উপর পলিথিন দ্বারা আবৃত রাখা যায়। তবে স্থায়ীভাবে কবরকে সংরক্ষণ করার জন্য কবর পাকা করা যাবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/৪৩৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৩১০)। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কবরে চুনকাম করতে, এর উপর ঘর বানাতে এবং বসতে নিষেধ করেছেন (তিরমিযী হা/১০৫২; মিশকাত হা/১৭০৯, সনদ ছহীহ)।
উত্তর: ছাদাক্বা দুই প্রকারের। (১) ঐ যাকাত, যা হকদার ব্যতীত অন্যদের জন্য হারাম। চাই সে শিক্ষক হৌক বা ছাত্র হৌক। তবে যাকাতের হকদার তার যাকাতের সম্পদ থেকে কোন ধনীকে দাওয়াত করে খাওয়ালে তাতে দোষ নেই। যেমন বারীরা (রাঃ)-এর যাকাতের অংশ থেকে রাসূল (ছাঃ) গোশত খেয়েছিলেন। তিনি বারীরাকে বললেন, তোমার জন্য এটি ছাদাক্বা। কিন্তু আমার জন্য হাদিয়া’ (বুখারী হা/১৪৯৩; মিশকাত হা/১৮২৫)। (২) সাধারণ ছাদাক্বা, যা বণ্টনের নির্দিষ্ট কোন খাত নেই। এই ছাদাক্বা গ্রহণ সবার জন্য জায়েয। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, নফল ছাদাক্বা ধনীদের জন্য জায়েয। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২৩৬)। ইবনু কুদামাহ বলেন, ধনীদের জন্য ফরয ছাদাক্বা গ্রহণ করা হারাম। তবে নফল বা সাধারণ ছাদাক্বা জায়েয (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৭৬)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, বনু হাশেমের জন্য ফরয যাকাত হারাম। তবে নফল ছাদাক্বা হারাম নয়। যেমন তারা ছাদাক্বার কুয়া থেকে পানি পান করতেন এবং বলতেন, আমাদের জন্য ফরয ছাদাক্বা হারাম, নফল ছাদাক্বা নয় (মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/২৬১)। ইমাম বাজী বলেন, নফল ছাদাক্বা ধনী-গরীব সবাইকে খাওয়ানো যাবে (আল-মুনতাক্বা ৭/৩২০)। আল্লামা যুরক্বানী ও আযীমাবাদী বলেন, নফল ছাদাক্বা হাদিয়ার স্থলাভিষিক্ত। অতএব এই দান ধনী-গরীব সবাই খেতে পারে (শারহুয যুরক্বানী ২/১৮৪; আওনুল মা‘বূদ ৫/৩১)। এক্ষণে মাদ্রাসায় সাধারণ ছাদাক্বা হিসাবে কিছু প্রদান করা হ’লে তা শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরা খেতে পারে। আর যাকাত বা মানত থেকে দান করা হ’লে কেবল হকদাররাই খেতে পারবে। আবার যাকাতের হকদাররা যদি শিক্ষক ও কর্মচারীদের দাওয়াত দেন, তবে তারাও সেই খাবারে অংশগ্রহণ করতে পারবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৪/৩০৬; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯-১০/০২)।
প্রশ্ন (৩৯৪) : প্রসবকালীন অথবা গর্ভকালীন মৃত্যুবরণকারী মা শহীদের মর্যাদা পাবেন কি?
উত্তর : বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে কোন মুসলিম নারী মারা গেলে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর পথে (জিহাদে) নিহত হওয়া ছাড়া আরো সাত ব্যক্তি শহীদ হয়; প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ডুবে গিয়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ফুসফুসের প্রদাহ বা যক্ষ্মা রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, পুড়ে গিয়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং সে মহিলাও শহীদ যে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায় (আবুদাঊদ হা/৩১১১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৫৬১)।
প্রশ্ন (৩৯৫) : অনেক মহিলাকে দেখা যায় অনলাইনে বোরকা, হিজাব ইত্যাদি বিক্রি করেন। সেখানে তারা নিজেরা বা অন্য কোন নারীকে মডেল বানিয়ে বোরকা ও হিজাব পরিয়ে ভিডিও বিজ্ঞাপন তৈরী করেন। এভাবে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : কোন নারীকে মডেল বানিয়ে কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া জায়েয নয়। কারণ নারী প্রদর্শনীর বস্ত্ত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নারীরা পর্দার মানুষ। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে তোলে (তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯; ছহীহাহ হা/২৬৮৮)। তবে অন্য কোন বৈধ পন্থা অবলম্বন করে ব্যবসা করতে পারে।
প্রশ্ন (৩৯৬) : ভাই কি তার বোনকে আদব শিক্ষা দেওয়ার জন্য শাসন করতে পারবে?
উত্তর : ভাই তার বোনকে বয়োজ্যেষ্ঠ হিসাবে শাসন বা নছীহত করতে পারবে। বিশেষত পিতা-মাতার অবর্তমানে বা তাদের অনুমতিক্রমে ভাই তার বোনকে আদব শিক্ষা দেওয়ার জন্য শাসন করতে পারে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১০/২১-২২)। উল্লেখ্য যে, শাসনের নামে শারীরিক নির্যাতন করা ইসলামের আদর্শ নয়। মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম আস-সুলামী বলেন, ‘আমার পিতা-মাতা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্যে উৎসর্গীত হৌন! তাঁর চেয়ে এত চমৎকার কোন শিক্ষক আমি তাঁর পূর্বে বা পরে দেখিনি। তিনি আমাকে ধমক দেননি, প্রহার করেননি এবং গালি বা বকাবকিও করেননি (মুসলিম হা/৫৩৭; মিশকাত হা/৯৭৮)। শিশুদের মৌলিক আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য পিতা-মাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা গুরুজনরা মৃদু প্রহার বা দৈহিক শাস্তি দিতে পারেন। তবে সেটা যেন যুলুমের পর্যায়ে না যায় কিংবা শিশু যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক (বুখারী হা/৬৮৪৯)।
প্রশ্ন (৩৯৭) : আমি মূলত ঢাকায় বসবাস করি। মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে ২-৩ দিনের জন্য বেড়াতে যাই। সেখানে আমি ছালাত জমা‘ ও ক্বছর করতে পারব কি?
উত্তর : মুসাফির হিসাবে গ্রামের বাড়িতে ছালাত জমা‘ ও ক্বছর করা যাবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/৩৪; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৮৭ পৃ.)। যদিও তার সফর নিজ গ্রামের বাড়ি বা জন্মস্থানে হোক না কেন। এক্ষেত্রে তার বর্তমান অবস্থানই মুক্বীম হওয়ার স্থান হিসাবে গণ্য হবে, জন্মস্থান বা গ্রামের বাড়ি নয় (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২১৬; ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২৩/৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/১৪৭)।
প্রশ্ন (৩৯৮) : দশ বছরের বাচ্চাদের বিছানা পৃথক করে দিতে হবে। কিন্তু মাঝে মাঝে কি মা ছেলেকে নিয়ে ঘুমাতে পারবে? নাকি এটা একেবারেই নিষিদ্ধ?
উত্তর : শিশুর বয়স দশ বছর হয়ে গেলে বিছানা আলাদা করতে হবে। যেমন ছেলে শিশু থেকে মায়ের বিছানা, মেয়ে শিশু থেকে পিতার বিছানা কিংবা ভাই-বোন পরস্পরের বিছানা আলাদা হওয়া আবশ্যক। এক্ষণে জায়গার সংকটের কারণে কখনও মা তার ছেলে সন্তানকে নিয়ে একই বিছানায় ঘুমাতে বাধ্য হ’লে সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং মাঝে বালিশ বা প্রতিবন্ধকতা রাখবেন (মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর ৫/৫২১; ইবনুল আবেদীন, রাদ্দুল মুহতার ৬/৩৮২)।
প্রশ্ন (৩৯৯) : হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর ঘোড়ার সত্যিই কি দু’টো ডানা ছিল?
উত্তর : এ ব্যাপারে কুরআন বা হাদীছে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। বরং তাফসীর ইবনু জারীরে সূরা ছোয়াদ ৩১ আয়াতে বর্ণিত الصَّافِنَاتُ (দ্রুতগামী অশ্বরাজি) শব্দের তাফসীরে কয়েকটি মতামত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ইবনু যায়েদ বলেন,وَكَانَتْ لَهَا أَجْنِحَةٌ ‘ঘোড়াগুলির ডানা ছিল’। ইব্রাহীম তায়মী বলেন, كَانَتْ عِشْرِينَ فَرَسًا ذَاتَ أَجْنِحَةٍ ‘বিশটি ডানাওয়ালা ঘোড়া ছিল’। এতদ্ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূক বা হুনায়েনের যুদ্ধ থেকে ফেরার পর তাঁর কক্ষের সামনে দুলতে থাকা পর্দার ওপাশে আয়েশা (রাঃ)-এর খেলনাগুলো দৃষ্টিগোচর হ’ল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! এগুলো কি? আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরা আমার মেয়ে (খেলনা)। এসময় তিনি খেলনাগুলোর মাঝে কাপড়ের দুই ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়া দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কি? আয়েশা (রাঃ) বললেন, ঘোড়া। তিনি বললেন, ঘোড়ার আবার দু’টি ডানা হয় নাকি? আয়েশা (রাঃ) বললেন, আপনি কি শুনেননি সোলায়মান (আঃ)-এর ঘোড়ার অনেকগুলো ডানা ছিল। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এটা শুনে রাসূল (ছাঃ) এমনভাবে হেসে উঠেন যে, আমি তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত দেখতে পেলাম’ (আবুদাঊদ হা/৪৯৩২; মিশকাত হা/৩২৬৫)। বিদ্বানগণ মনে করেন যে, আয়েশা (রাঃ) ঘোড়ার ডানা থাকার বিষয়টি আহলে কিতাবদের থেকে শুনে থাকতে পারেন। আর এজন্য রাসূল (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর কথা শুনে অবাক হয়ে হেসে ফেলেছিলেন। আর আহলে কিতাবদের বর্ণনা সত্য বা মিথ্যা দু’টিই হ’তে পারে (আবুদাঊদ হা/৩৬৪৪; ছহীহাহ হা/২৮০০)।
প্রশ্ন (৪০০) : কোন কোন অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হ’তে পারবে? স্বামীর কোন নির্দেশনা যদি স্ত্রী অকল্যাণকর মনে করে সেক্ষেত্রে স্ত্রীর করণীয় কি?
উত্তর : শরী‘আত বিরোধী নয় স্বামীর এমন যেকোন আদেশ-নিষেধ পালন করা স্ত্রীর কর্তব্য। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আনুগত্যের ক্ষেত্রে বিবাহিতা নারীর জন্য পিতা-মাতার উপর স্বামীই অগ্রগণ্য (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬১)। এক্ষণে স্বামীর কোন কথা বা কাজ অকল্যাণকর মনে হ’লে স্ত্রী স্বামীকে উত্তম পন্থায় বোঝানোর চেষ্টা করবে কিংবা অপর কারো মাধ্যমে বুঝাবে। এভাবে পারস্পরিক সমঝোতা ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। এটি স্বামীর অবাধ্যতা হিসাবে গণ্য হবে না।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button