প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৯

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৯

প্রশ্ন (৪০১) : ছালাত আদায়কালে লজ্জাস্থানে হালকা পানি অনুভব হ’লে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে কি?
উত্তর : লজ্জাস্থান থেকে হালকা পানি বের হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ। সুতরাং ওযূ করার পর কারো লজ্জাস্থান থেকে কোন তরল পদার্থ বের হ’লে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় সে ছালাত ছেড়ে দিয়ে লজ্জাস্থান ধুয়ে পুনরায় ওযূ করবে এবং কাপড়ের উপরে পানির ছিটা দিয়ে ছালাত আদায় করবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১৪৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২২/৬৬-৬৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৩১)।
প্রশ্ন (৪০২) : কোন নারী যদি ইদ্দত শেষ হওয়ার পর জানতে পারে যে সে গর্ভবতী, তাহ’লে তার ইদ্দত পালনের হুকুম কি এবং সেই সন্তানের হুকুম কি হবে?
উত্তর : ইদ্দত পালন শেষে স্ত্রী যদি জানতে পারে যে, তার পেটে সন্তান রয়েছে তাহ’লে তার ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। আল্লাহ বলেন, গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল হবে গর্ভ খালাস হওয়া পর্যন্ত (তালাক ৬৫/৪)। উক্ত সন্তানের মালিক হবে পূর্বের স্বামী। পূর্বের স্বামী উক্ত সন্তান গ্রহণ না করলে সন্তান মায়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে (নববী, শরহ মুসলিম ১/২০২, ৯/৩৩৩; ফাৎহুল বারী ১/২৪৬-৪৮)।
প্রশ্ন (৪০৩) : কোন দুষ্টু জিন যদি কোন নারীর সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহ’লে উক্ত নারীর করণীয় কি? এতে কি তার গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে?
উত্তর : সরাসরি কোন জিন কোন মানুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে না। সে স্বপ্নে কিছু করতে পারে বা ওয়াসওয়াসা দিতে পারে। তবে কোন কোন বিদ্বান বলেন, জিনেরা আমলহীন পুরুষ বা নারীর সাথে মিলন করতে সক্ষম। সেটা তিনটি পদ্ধতিতে হ’তে পারে। ১. স্বপ্নের মাধ্যমে। এব্যাপারে সবার ঐক্যমত রয়েছে। ২. মানুষের আকৃতি ধারণ করে নারী বা যুবকের সামনে উপস্থিত হওয়া এবং মিলিত হওয়া। এর সম্ভাবনার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এর মাধ্যমে গর্ভধারণ হওয়ার কোন দৃষ্টান্তও পাওয়া যায় না। ৩. জাগ্রত অবস্থায় অদৃশ্য কাউকে অনুভব করা এবং আনন্দ উপভোগ করা এবং বীর্যপাত ঘটা। এই তিনটির কোন একটির অবস্থায় বীর্যপাত ঘটলে গোসল ফরয হয়ে যায় (মারদাভী, আল-ইনছাফ ১/২৩৬; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৯/৩৯-৪৬, দলীলসহ; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/২৯৯)। উল্লেখ্য যে, এমন ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে সকাল-সন্ধায় তিনবার করে সূরা নাস, ফালাক ও ইখলাছ পাঠ করা, বাড়িতে অধিকহারে সূরা বাক্বারাহ ও আয়াতুল কুরসী পাঠ করা কর্তব্য। তাছাড়া ঘুমানোর পূর্বে সূরা কাফেরূন, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করে তিনবার সারা শরীরে হাত বুলাবে এবং আয়াতুল কুরসী পাঠ করে ঘুমাবে। তাহলে একজন ফেরেশতা ঘুম ভাঙ্গা পর্যন্ত তাকে পাহারা দিবে এবং শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে পারবে না’ (বুখারী হা/২৩১১; মিশকাত হা/২১২৩)।
প্রশ্ন (৪০৪) : কাতারের ডানে দাঁড়ানোর বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?
উত্তর : ছালাতে কাতারের ডানে দাঁড়ানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীছগুলি যঈফ (তামামুল মিন্নাহ ১/২৮৮; যঈফ আবুদাউদ হা/১০৪; সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, টেপ নং ১৬৯)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, একাধিক মুছল্লী থাকা অবস্থায় ইমামের ডানে দাঁড়ালে বিশেষ ফযীলতের কোন দলীল নেই (ফাৎহুল বারী ২/২১৩; বিস্তারিত: মারবিয়াতু ফী ফাযলে মায়মানাতিছ ছাফ গ্রন্থ)। তবে একজন মুক্তাদী হলে তাকে ইমামের ডান পাশে দাঁড়াতে হয় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১০৬)। সে হিসাবে পিছনের কাতার ইমাম বরাবর ডানে-বামে সোজা রেখে ডান দিকে কিছুটা বেশী রাখা যায়।
প্রশ্ন (৪০৫) : শেষ যামানায় তিনটি কারণে বেশী বেশী ভূমিকম্প হবে। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশ সমূহে এত ভূমিকম্প হওয়ার কারণ কি?
উত্তর : বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেমন- (১) কখনও আল্লাহ মুসলমানদের সতর্ক করা ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য ভূমিকম্প দেন (ইসরা ১৭/৫৯)। (২) কখনো আল্লাহ নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভূমিকম্প পাঠান (বুখারী হা/১০৫৯; মিশকাত হা/১৪৮৪)। (৩) কখনও সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝানোর জন্য ভূমিকম্প হয়ে থাকে (ফুছছিলাত ৪১/৫৩)। এছাড়া অন্যায়-অত্যাচার ও কোন বিশেষ পাপের কারণেও ভূমিকম্প বৃদ্ধি পায় (রোম ৩০/৪১)। এজন্য দেখা যায় যে, ওমর (রাঃ)-এর আমলে মদীনায় ভূমিকম্প হ’লে তিনি বলেন, ‘হে লোকেরা তোমাদেরই কোন পাপের কারণে এই ভূমিকম্প এসেছিল। এবার যদি আসে তাহ’লে আমরা তোমাদেরসহ তোমাদের বাড়ি-ঘর রক্ষা করতে পারব না’ (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৮৩৩৫, সনদ ছহীহ)। ওমর বিন আব্দুল আযীযের আমলে ভূমিকম্প হ’লে তিনি গভর্ণরদের চিঠি লিখে নির্দেশনা দেন যাতে লোকেরা প্রচুর পরিমাণে ছাদাক্বা করে (হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫/৩০৪)। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম জনপদগুলোতে ভুমিকম্প পাঠানোর মাধ্যমে যেমন তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা নেন, তেমনি তাঁর কিছু প্রিয় বান্দাকে জান্নাতে নিতে চান। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার এ উম্মতের উপর আল্লাহর রহমত আছে। আখেরাতে তারা (স্থায়ী) আযাব ভোগ করবে না। বরং তাদের কাফ্ফারা এভাবে হবে যে, দুনিয়াতে তাদের শাস্তি হবে ফিতনা-ফাসাদ, ভূমিকম্প এবং হত্যা’ (আবুদাউদ হা/৪২৭৮; মিশকাত হা/৫৩৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৯৬)।
প্রশ্ন (৪০৬) : ছালাত অবস্থায় কোন কারণে ইমাম পরিবর্তন হ’লে সহো সিজদা ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর : যেকোন ওযরে ছালাতের ভিতর প্রথম ইমাম মুছল্লীদের মধ্য হ’তে পিছন থেকে যে কাউকে ইমাম বানাতে পারেন। ওমর (রাঃ) ছালাতে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হ’লে তিনি আব্দুর রহমান বিন ‘আওফকে ইমাম বানিয়ে পিছনে সরে যান এবং আব্দুর রহমান ছালাত শেষ করেন। কিন্তু তিনি সহো সিজদা করেননি (বুখারী হা/৩৭০০; ফাৎহুল বারী ৭/৬৪)। অতএব ছালাতে ইমাম পরিবর্তনের জন্য কোন সহো সিজদা দিতে হবে না।
প্রশ্ন (৪০৭) : সকাল বেলার যিকরগুলো ফজরের ছালাতের পূর্বে বা ছালাতের পর হাঁটাহাঁটির সময় করা যাবে কি? অনুরূপভাবে সন্ধ্যার যিকরগুলো বাদ এশা করা যাবে কি?
উত্তর : সকাল ও সন্ধ্যার যিকিরগুলো পাঠের সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য মত হ’ল, সন্ধ্যার যিকিরসমূহ আছরের পর থেকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত এবং সকালের যিকিরসমূহ ফজর উদয় থেকে ইশরাকের ছালাতের ওয়াক্ত পর্যন্ত পাঠ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তোমার গোনাহের জন্য ক্ষমা চাও এবং সন্ধ্যায় ও সকালে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা কর’ (গাফের ৪০/৫৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর সন্ধ্যায় ও সকালে’ (রূম ৪০/১৭)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে’ (ক্বাফ ৫০/৩৯)। অন্য আয়াতে রয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর মনে মনে কাকুতি-মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়। আর তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। সবগুলো আয়াতের সমন্বয় করে বিদ্বানগণ বলেন, সকাল-সন্ধ্যার যিকির ও দো‘আসমূহ পাঠের সময়সীমার ব্যাপারে প্রশস্ততা রয়েছে। তবে উত্তম সময় হ’ল ফজর ও মাগরিব ছালাতের পর (নববী, আল-আযকার ১/১৫৭; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২৪/০২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/২০১)।
প্রশ্ন (৪০৮) : আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আমার এক ভুলের কারণে উনি ঠান্ডা মাথায় জেনে-বুঝে আমাকে এক তালাক দেন। তখন আমি ঋতু অবস্থায় ছিলাম। উনি সেটা জানতেন না। এমতাবস্থায় উক্ত তালাক পতিত হয়েছে কি?
উত্তর : ইবনু ওমর (রাঃ) তার স্ত্রীকে ঋতু অবস্থায় তালাক দিলে সেটি গণ্য করা হয়নি (আবুদাঊদ হা/২১৮৫)। অতএব ঋতু অবস্থায় তালাক পতিত হবে না। স্বামী উক্ত বিষয়টি জানুন বা না জানুন। বরং জেনে-শুনে ঋতু অবস্থায় তালাক দিলে তিনি গুনাহগার হবেন (ওছায়মীন,ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/২৬৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৫৮)। তবে শায়েখ বিন বায সহ জমহূর বিদ্বানগণ মনে করেন, স্ত্রীর ঋতুর বিষয়টি জেনে স্বামী তালাক দিলে তালাক হবে না। কিন্তু না জানা অবস্থায় তালাক দিলে এক তালাক পতিত হবে। কেননা অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এটা এক তালাক রাজ‘ঈ গণ্য করা হয় (বুখারী হা/৫২৫৩; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/৫৯; ফাতাওয়াত তালাক ৪৪ পৃ.;বিস্তারিত দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘তালাক ও তাহলীল’ বই)।
প্রশ্ন (৪০৯) : কোন পরিবারের কেউ বিদেশে মারা গেলে দেশে তার পরিবারকে তিনদিন বাড়িতে রান্না করা থেকে বিরত থাকতে হবে কি?
উত্তর : কেউ মারা গেলে পরিবারের জন্য রান্না বন্ধ রাখা আবশ্যক নয়। তবে প্রতিবেশীদের উচিৎ শোকাহত পরিবারের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে অন্তত তিন দিন পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা। জা‘ফর বিন আবী তালিব মু‘তার যুদ্ধে শহীদ হ’লে রাসূল (ছাঃ) তার পরিবারের জন্য খাবার পাঠানোর নির্দেশ দেন (আবুদাউদ হা/৩১৩২; মিশকাত হা/১৭৩৯)। অতএব দেশে হৌক বা বিদেশে হৌক কেউ মারা গেলে তার পরিবারের জন্য কমপক্ষে এক দিনের খাবার ব্যবস্থা করা প্রতিবেশীদের কর্তব্য। এ কর্তব্য পালন করার মত কেউ না থাকলে মাইয়েতের বাড়ীতে রান্না করায় কোন দোষ নেই।
প্রশ্ন (৪১০) : শায়েখ আলবানী (রহঃ) তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থে ফজরের ২য় আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’ বলাকে বিদ‘আত বা সুন্নাত বিরোধী বলেছেন। এটা কি সঠিক?
উত্তর : শায়েখ আলবানী (রহঃ) বিভিন্ন দলীলের ভিত্তিতে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’-কে ফজরের প্রথম আযানের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, যা তাহাজ্জুদের আযান নামে খ্যাত এবং দ্বিতীয় আযানের সাথে সম্পৃক্ত করাকে বিদ‘আত ও সুন্নাত বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন (তামামুল মিন্নাহ ১/১৪৮)। তবে অন্যান্য বিদ্বানগণের নিকটে এটি আলবানী (রহঃ)-এর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ, যা সঠিক নয়। কারণ প্রথম আযান দ্বারা যে ওয়াক্ত প্রবেশের পর আযানকে এবং দ্বিতীয় আযান দ্বারা ইক্বামতকে বুঝানো হয়েছে তা একাধিক ছহীহ হাদীছ ও সালাফগণের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৮৩-৮৪; আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৬১-৬৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৬৩)। অতএব উক্ত বাক্য কেবল ফজরের আযানের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রশ্ন (৪১১) : আমার পিতা আমাদের বাড়ির সামনের অংশ জনৈক হিন্দু পরিবারের কাছে বিক্রি করতে চান। আমার আশংকা যে তারা ধর্মীয় আচার পালন করলে আমাদের ও প্রতিবেশীদের কষ্টের কারণ হবে। এক্ষণে বিধর্মীর কাছে বিক্রি করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : সাধারণভাবে অমুসলিমদের কাছে জমি বিক্রয়ে বাধা নেই (বুখারী হা/২০৯৬; মুসলিম হা/১৬০৩)। তবে যদি জানা যায় যে, এই জমি ক্রয় করে অমুসলিমরা শিরক করবে বা মূর্তিপূজা করবে, অথবা ভবিষ্যতে নিজের জন্য দ্বীন পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে, তাহ’লে তাদের নিকট জমি বিক্রয় করা উচিৎ হবে না (ইবনু কুদামাহ ৫/৪০৮; বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ৩/৫৫৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/৪৫-৪৬)। কারণ এতে আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে সহযোগিতা করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দানকারী’ (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (৪১২) : ভবিষ্যতে পড়াশুনার কি হবে, কি চাকুরী করব, বহু গোনাহ করেছি তার পরিণতি কি হবে এসব নিয়ে সবসময় দারুণ ভয় ও চিন্তা হয়। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?
উত্তর : সর্বাবস্থায় নেক আমল করতে হবে এবং তাক্বদীরের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস করতে হবে। কারণ তাক্বদীরে বিশ্বাস না করলে মানুষ যেকোন ব্যর্থতায় অস্থির হয়ে পড়ে। কিন্তু মুমিন কখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। সে কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটাই বিস্ময়কর। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য হয় না। আনন্দের মুহূর্ত এলে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ-কষ্টে সে ধৈর্যধারণ করে। ফলে সেটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়’ (মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭)। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (তওবাহ ৯/৫১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তাতেই পরিতুষ্ট থাক, তবে তুমিই মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী হবে’ (তিরমিযী হা/২৩০৫; ছহীহাহ হা/৯৩০)। তিনি আরো বলেন, ‘যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। আর এ কথা জেনে রাখ যে, যদি মানবজাতির সকলে মিলে তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (ভাগ্যলিপি) শুকিয়ে গেছে’ (তিরমিযী হা/২৫১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭)। অতএব নেক আমলের পাশপাশি তাক্বদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস করলে অস্থিরতা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি বিগত গুনাহের জন্য অধিকহারে তওবা-ইসতিগফার করবে।
প্রশ্ন (৪১৩) : আইনের ছাত্র হিসাবে আমার ইচ্ছা বিচারক হিসাবে ক্যারিয়ার গড়া এবং সততার সাথে বিচারকার্য পরিচালনা করা। কিন্তু অধিকাংশ আলেম এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন অথবা হারাম বলেন। অথচ এভাবে এড়িয়ে গেলে তো একসময় কেবল দেশের অমুসলিম নাগরিকরাই বিচারক হবে। যেটা আমাদের জন্য আরো ক্ষতির কারণ হবে। এক্ষণে পেশাটি কেন হারাম সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : যদি বিচারক হিসাবে হককে হক হিসাবে আর বাতিলকে বাতিল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা, হককে তার প্রাপকের নিকটে পৌঁছে দেয়ার এবং মযলূমকে সাহায্য করার সুযোগ থাকে এবং তা বাস্তবায়ন করা যায়, তাহ’লে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে শরী‘আতে বাধা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও আল্লাহভীরুতার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করো এবং পাপ ও অবাধ্যতার কাজে সাহায্য করো না’ (মায়েদাহ ৫/০২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/২৩১; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/৬০৯-৬১০)। আর বৃটিশ আইন প্রচলনের দায়ভার বর্তাবে সরকারের উপর। যতদিন ইসলামী আইনের বিপরীতে তা চালু থাকবে, ততদিন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ পাপী হ’তে থাকবে। কেননা আল্লাহর বিধানের বিপরীতে অন্যের বিধান কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় (ইউসুফ ৪০, মায়েদাহ ৫০ প্রভৃতি)। সুতরাং যিনি বিচারক হিসাবে কাজ করবেন তার আবশ্যিক দায়িত্ব হবে সত্যের সাক্ষ্য দেয়ার পাশাপাশি নিজ অবস্থানে থেকে ইসলামী আইনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা এবং ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক আইনগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করা। এটা তার ঈমানী দায়িত্ব (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)। এতদ্ব্যতীত প্রচলিত আইনের সবকিছুই যে শারঈ আইনের বিরোধী, তা নয়। যেমন সিভিল আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন, দন্ডবিধি ও কিছাছ ব্যতীত ফৌজদারী আইনের অন্যান্য ধারা প্রভৃতি। সুতরাং একজন আল্লাহভীরু বিচারক সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং আল্লাহর আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে এ পেশায় জড়িত থাকতে পারেন।
প্রশ্ন (৪১৪) : প্রতি ওয়াক্ত ছালাত বা যেকোন নফল ছালাত শুরুর পূর্বে বিশেষ কোন দো‘আ আছে কি?
উত্তর : নফল বা ফরয কোন ছালাত শুরুর পূর্বে বিশেষ কোন দো‘আ বর্ণিত হয়নি। বরং ছালাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ছানা হিসাবে বিভিন্ন দো‘আ বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর কোন একটি পাঠ করলে যথেষ্ট হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/১৬৫, ৮/১৬৭, ১০/১২)।
প্রশ্ন (৪১৫) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, যোহরের সুন্নাত বাড়ীতে আদায় করলে ২ রাক‘আত এবং মসজিদে আদায় করলে ৪ রাক‘আত পড়তে হবে। উভয়ের নেকী সমান হবে। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : এরূপ বক্তব্য সঠিক নয়। বরং যোহরের সুন্নাত বাড়ীতে বা মসজিদে যেখানেই হোক চার বা দুই রাক‘আত আদায় করবে (বুখারী হা/৯৩৭; মিশকাত হা/১১৬০; আবুদাউদ হা/১২৬৯; মিশকাত হা/১১৬৭)। উভয় আমলই শরী‘আত সম্মত।
প্রশ্ন (৪১৬) : জনৈক আলেম বলেন ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে শারঈ কোন নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : কতিপয় বিদ্বান ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (আল-মাওসূ‘আতিুল ফিকহিয়া ৪৩/৩৭৮)। কারণ আলী (রাঃ) একদিন যোহরের ছালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে কূফা মসজিদের চত্বরে বসে পড়লেন। অবশেষে আছরের ছালাত আদায়ের সময় হয়ে গেল। তখন পানি আনা হ’ল। তিনি পানি পান করলেন এবং নিজের মুখমন্ডল ও উভয় হাত ধৌত করলেন। এরপর আলী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় ওযূর উদ্বৃত্ত পানি পান করে নিলেন। এরপর তিনি বললেন, লোকজন দাঁড়িয়ে পান করাকে ঘৃণা করে, অথচ আমি যেমন করেছি, নবী করীম (ছাঃ)ও তেমন করেছেন (বুখারী হা/৫৬১৬; মিশকাত হা/৪২৬৯)। তবে অন্য বর্ণনায় আলী (রাঃ) বলেন, তারা কোথায় যারা ধারণা করেন যে, দাঁড়িয়ে পানি পান করা উচিত নয়? (আহমাদ হা/৯৪৩)। এজন্য জুমহূর বিদ্বানের মতে, উক্ত হাদীছে অযূর পানি দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব হওয়ার কথা বলা হয় নি; বরং প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানি পান করা যায়, তা বর্ণিত হয়েছে (আহমাদ হা/৯৪৩)।
প্রশ্ন (৪১৭) : জনৈক ব্যক্তির আমল ও আক্বীদায় স্পষ্ট শিরক ছিল। তিনি তওবা করেছেন কি-না সেটাও আমার জানা নেই। এক্ষণে তার জানাযায় তার জন্য মাগফিরাতের দো‘আ করতে পারব কি?
উত্তর : সাধারণভাবে যেকোন গুনাহগার মুসলিমের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করা যাবে (নাসাঈ হা/১৯৬৪; নববী শরহ মুসলিম ৭/৪৮)। তবে কেউ যদি এমন স্পষ্ট শিরকে লিপ্ত হয় যা ইসলাম থেকে বের করে দেয় তাহ’লে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘নবী ও মুমিনদের উচিত নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়’ (তওবা ৯/১১৩)। সর্বোপরি যে কোন মুসলিম ব্যক্তি পাপাচারী হ’লেও কালেমার উপর মৃত্যু হ’লে সাধারণভাবে তার প্রতি সুধারণা রেখে এবং তওবা করার সম্ভাবনা মাথায় রেখে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন (৪১৮) :জামা‘আতে ছালাতের মধ্যে ওযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে বিশেষত সামনের কাতারে যেসব ব্যক্তি থাকেন তাদের পক্ষে ছালাত ছেড়ে ১০-১৫ কাতার মুছল্লী ডিঙিয়ে বাইরে আসা কঠিন ও লজ্জাকর হয়। এক্ষণে ওযূ ছাড়া ছালাত চালিয়ে গিয়ে পরে পুনরায় ছালাত আদায় করলে শারঈ কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : ‘ওযূ ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না’ (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১)। ওযূ ভঙ্গের কারণে কাতার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের সুতরা। অতএব মুক্তাদীদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে আসা দোষের নয়। এক্ষণে যদি কাতার থেকে বের হওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহ’লে বাধ্যগত অবস্থায় ইমামের সালাম ফিরানো পর্যন্ত কাতারে বসে বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরালে বেরিয়ে এসে ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব টেপ নং ২৯৬)।
প্রশ্ন (৪১৯) : মালাকুল মউত তিন ব্যক্তির জান কবযের সময় ক্রন্দন করেছিলেন। তারা কারা? কথাটির সত্যতা আছে কি?
উত্তর : মালাকুল মাউত বা আযরাঈল কারো জান কবয করতে গিয়ে কেঁদেছেন মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। বরং মালাকুল মাউতের কান্না সম্পর্কে যে বর্ণনাগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হয় কিচ্ছা-কাহিনী, না হয় ইস্রাঈলী বর্ণনা (আবুশ শায়েখ আছবাহানী, আল-‘আযমাহ হা/৪৪৭; আবু নু‘আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬/২৭)। আল্লাহ তা‘আলা মালাকুল মাউতকে প্রাণীর জান কবয করার জন্য সৃষ্টি করেছেন (সাজদাহ ৩২/১১)। সুতরাং এই কাজ করতে গিয়ে তার কান্নার প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন (৪২০) : আমাদের ক্লাসের ভদ্র ও পর্দানশীন একজন মেয়ে আমাকে প্রায় প্রতিদিন মেসেজ করেন ক্লাসের পড়া সম্পর্কে জানার জন্য। এর মধ্যে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা হয়। এভাবে কথা বলা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর : এভাবে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েয নয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন কোন পুরুষ কোন পরনারীর সাথে নির্জনে কথা বলে, তখন সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান’ (তিরমিযী হা/১১৭১; মিশকাত হা/৩১১৮)। আর মোবাইলে কোন পরনারীর সাথে নিয়মিতভাবে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা শয়তানকে ডেকে নেওয়ার শামিল। অতএব এভাবে নিয়মিত কথা বলা যাবে না।
প্রশ্ন (৪২১) : আমার স্ত্রীকে আমি শারঈ নিয়ম অনুযায়ীই বিবাহ করেছি। কিন্তু তার পূর্বের স্বামী তাকে তালাক দেয়নি। আমাদের সন্তানও আছে। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?
উত্তর : পূর্বের স্বামী তালাক না দেওয়া পর্যন্ত এবং তালাক শেষে ইদ্দত পালন সম্পন্ন না হ’লে আরেকজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে না। তবে স্ত্রী যদি স্বামীর নিকট হ’তে খোলা‘ নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এক ঋতুকাল ইদ্দত পালন করে তাহ’লে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে। উপরোক্ত দু’টি পদ্ধতির একটিও না হয়ে থাকলে দ্বিতীয় বিয়ে শরী‘আতসম্মত হয়নি (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/১০৮; বিন বায, ফাতাওয়াত-তালাক ১/৩৫)। এক্ষণে দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ করতে হ’লে স্ত্রী আদালত বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দারস্থ হবে এবং খোলা‘ তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হবে। অতঃপর এক ঋতুকাল ইদ্দত পালন শেষে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। আর পূর্বের পাপের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/০২)।
প্রশ্ন (৪২২) : আমার অফিস প্রধান অন্য একজন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে একটি পণ্য ১০ টাকায় কিনে থাকে। এরপর তিনি আমাকে পণ্যটি কেনার দায়িত্ব দেন। আমার সাথে ঐ ব্যবসায়ীর ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি আমার জন্য ২ টাকা করে কম রাখেন। এতে আমি প্রচুর লাভবান হই। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ব্যতীত কৌশলে অতিরিক্ত লাভ করা ঘুষ গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, আমরা যাকে অর্থের বিনিময়ে কোন কাজে নিযুক্ত করি, তার অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলে তা হবে খেয়ানত বা আত্মসাৎ’ (আবুদাঊদ হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮)। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ করলে সে এসে বলল যে, এগুলি যাকাতের মাল এবং এগুলি আমাকে দেওয়া হাদিয়া। এ ঘটনা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, কর্মকর্তাদের কি হ’ল যে তারা এরূপ বলছে! সে তার পিতা-মাতার বাড়ীতে বসে থেকে দেখুক কে তাকে হাদিয়া দেয়? যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! যা কিছুই সে গ্রহণ করবে ক্বিয়ামতের দিন তা কাঁধে নিয়ে সে হাযির হবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৭৭৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,هَدَايَا الْعُمَّالِ غُلُولٌ ‘কর্মচারীর হাদিয়া গ্রহণ আত্মসাৎ স্বরূপ’ (আহমাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/৭০২১)। তবে প্রতিষ্ঠান বা মালিকের সম্মতি থাকলে তা গ্রহণ করায় দোষ নেই।
প্রশ্ন (৪২৩) : সালাফী বিদ্বানগণ বলেন, আগে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম নয় বরং আগে মানুষের আক্বীদা-আমল শিরক-বিদ‘আতমুক্ত করতে হবে। কিন্তু শরী‘আতে কোন বিধান আগে বাস্তবায়ন করতে হবে, কোনটি পরে করতে হবে, এরূপ কোন নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : নবী-রাসূলগণের জীবনীতে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে (আহযাব ৩৩/২১)। আর তাদের চিরন্তন জীবনাদর্শ থেকেই জানা যায় যে, আগে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং পরে রাষ্ট্র বা শাসন ক্ষমতা, যদি আল্লাহ তাকে দেন। আর ইক্বামতের দ্বীন অর্থ ইক্বামতে তাওহীদ। ইক্বামতে হুকূমত নয়। যেমনটি অনেকে ধারণা করে থাকে। নবী রাসূলগণ সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাওয়াত নয়। মূলতঃ ইসলামী আক্বীদা ও আমল নিজের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। আল্লাহ যাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করবেন, তার উপর ইসলামের বিধিবিধান পালন করা যেমন ফরয, তেমনি রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করাও তেমনি ফরয। কিন্তু রাষ্ট্র কায়েম করাই ইসলাম এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন করাই হ’ল ইক্বামতে দ্বীন, এটি হ’ল চরমপন্থী খারেজীদের আক্বীদা। ইসলামের মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাসের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। একদল লোক জিহাদ বলতে কেবল ক্বিতাল বা ‘সশস্ত্র সংগ্রাম’কেই বুঝিয়ে থাকেন। মূলত জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর হ’ল ক্বিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ, যা করার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন (১) একজন প্রতিষ্ঠিত ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত আমীর থাকা, (২) উপযুক্ত প্রতিপক্ষ থাকা, (৩) জিহাদের প্রকাশ্য ঘোষণা থাকা। এগুলি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্বিতাল ফরয হয় না, যেমন নিছাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে যাকাত ফরয হয় না। স্মর্তব্য যে, একজন মুসলিম হিসাবে সর্বদা বাতিলের বিরুদ্ধে জিহাদের চেতনা থাকা এবং শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকা অবশ্যই যরূরী। কিন্তু একক ও বিচ্ছিন্নভাবে জিহাদের নামে অস্ত্রবাজি করা অবৈধভাবে মানুষ হত্যা করার পর্যায়ভুক্ত হবে। বস্ত্তত তাওহীদের মর্মবাণীকে জনগণের নিকটে পৌঁছে দেওয়া ও তাদের মর্মমূলে প্রোথিত করাই হ’ল প্রকৃত দাওয়াত এবং জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আপোষহীন জিহাদই হ’ল দ্বীন কায়েমের সঠিক পদ্ধতি। আর আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমেই সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধন সম্ভব। এটাই হ’ল নবীগণের চিরন্তন তরীকা (দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’ এবং ‘ইক্বামতে দ্বীন’ বই)।
প্রশ্ন (৪২৪) : বাথরুমে প্রবেশের সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং বের হওয়ার সময় ডান পা সামনে দিয়ে বের হবে- উক্ত বক্তব্যের সত্যতা দলীলসহ জানতে চাই।
উত্তর : যেকোন সম্মানজনক এবং ভালো কাজে রাসূল (ছাঃ) ডান হাত এবং ডান পা এবং ছোট কাজে বাম হাত ও বাম পা ব্যবহার করতেন (আবুদাউদ হা/৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৯১২)। যেমন ওযূ, গোসল, লেনদেন, খাবার গ্রহণ, মুছাফাহা, মসজিদে প্রবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডান হাত ও ডান পা ব্যবহার করা এবং ইস্তিঞ্জা, নাক পরিষ্কার, হাই দমন, লজ্জাস্থান স্পর্শ, মসজিদ থেকে বের হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাম হাত ও বাম পা ব্যবহার করতেন। রাসূলের উপরোক্ত কর্মসমূহের ভিত্তিতে বিদ্বানগণ বাথরুমে প্রবেশের সময় বাম পা এবং বের হওয়ার সময় ডান পা ব্যবহার করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৩৮৪, ২/৭৭; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/১০৮; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ১/৩৪৫)।
প্রশ্ন (৪২৫) :কোন পাপ কাজ করার মানত করার পর তা না করে থাকলে কাফফারা দিতে হবে কি?
উত্তর : পাপ থেকে বিরত থাকবে এবং কাফফারা দিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানত দু’প্রকার। অতএব যে ব্যক্তি নেক কাজের জন্য মানত করবে, তা কেবল আল্লাহর জন্য হবে। আর যে ব্যক্তি গুনাহের কাজের জন্য মানত করে, তা কেবল শয়তানের জন্য হবে। এই জাতীয় মানত পূরণ করতে নেই। তবে কসম ভঙ্গ করলে যেরূপ কাফফারা আদায় করতে হয়, অনুরূপ তা করতে হবে (নাসাঈ হা/৩৮৪৫; মিশকাত হা/৩৪৪৪)। আর কসম ভঙ্গের কাফফারা হ’ল দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো অথবা বস্ত্র দান করা অথবা একটি দাস মুক্ত করা। এতে অসমর্থ হ’লে তিন দিন ছিয়াম পালন করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
প্রশ্ন (৪২৬) : বন্যার ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বসতঘরে পানি চলে আসছে। পানির অপবিত্রতা বোঝা যাচ্ছে এবং পাকাবাড়ি হওয়ায় তায়াম্মুম করার মতো মাটিও পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় ওযূ করার উপায় কি?
উত্তর : ধুলা-বালি বা ঘাস-পাতা ইত্যাদি পানিতে পড়ার কারণে পানি নাপাক হয় না; যতক্ষণ না এর রং, গন্ধ বা স্বাদের পরিবর্তন হয়। সেজন্য পানি অপবিত্র হওয়ার নিশ্চিত প্রমাণ না পেলে সে পানি দিয়েই ওযূ করে ছালাত আদায় করবে (মুগনী ১/২৫; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৭)। আর পানি নাপাক হওয়ার তিনটি কারণের কোন একটি পাওয়া গেলে তাতে ওযূ করা যাবে না (দারাকুৎনী হা/৪৭)। অতএব এক্ষেত্রে পবিত্র পানি না পাওয়া গেলে পাকা দেয়ালে হাত স্পর্শ করে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩০৯; ইবনু জাবরীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ১/২৭৭)।
প্রশ্ন (৪২৭) :পারিবারিকভাবে ছেলে-মেয়ের বিবাহ ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু আকদ হবে ৮ মাস পর। এমতাবস্থায় ছেলে-মেয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ বা ফোনে কথা বলতে পারবে কি?
উত্তর : আকদ সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখা যাবে না। কারণ তার সাথে বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত সম্পর্কটা গায়রে মাহরাম নারীর মতই। উল্লেখ্য যে, বিবাহ ঠিক করে দীর্ঘ দিন আকদ না করা এবং বিবাহবিহীন যোগাযোগ রক্ষা করা অনৈসলামিক সংস্কৃতি, যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক (ওছায়মীন, ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫৭৮,৭৯)। অতএব বিবাহের মত ছওয়াবের কাজকে আটকে না রেখে দ্রুত আকদ সম্পন্ন করতে হবে।
প্রশ্ন (৪২৮) : নারী-পুুরুষের রূপচর্চার ক্ষেত্রে শরী‘আতের সীমারেখা কি? তারা কি পরিমাণ রূপচর্চা করতে পারবে?
উত্তর : নারী-পুরুষ তাদের দেহের কোন প্রকার বিকৃতি না ঘটিয়ে এবং শরী‘আত নিষিদ্ধ কাজ না করে রূপচর্চা করতে পারে। যেমন ভ্রূ উপড়াবে না, দুই দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করবে না বা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন হয় এমন কাজ করবে না ইত্যাদি (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২২/০২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/২২৩)। তবে নারীর রূপচর্চা কেবল স্বামী ও মাহরামদের সামনে হ’তে হবে। কোনভাবেই গায়ের মাহরাম পুরুষদের নিকট প্রদর্শন করা যাবে না।
প্রশ্ন (৪২৯) : শ্বশুর-শাশুড়িকে আববা-আম্মা বলে সম্বোধন করা যাবে কি?
উত্তর : সম্মানের জন্য স্ত্রীর পিতা-মাতাকে বা স্বামীর পিতা-মাতাকে আববা-আম্মা বলে সম্বোধন করাতে কোন দোষ নেই। কারণ তারা পিতা ও মাতা সমতুল্য (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২১/১২৫)। উল্লেখ্য যে, নিজের পিতা-মাতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে আসল পিতা-মাতা হিসাবে গ্রহণ করা ও তাদের পরিচয়ে পরিচিত হওয়া হারাম (বুখারী হা/৪৩২৮; মুসলিম হা/৬৩)।
প্রশ্ন (৪৩০) : পিতা মারা যাওয়ার পর মা তার গহনা খুলে আমাকে দিয়ে দিয়েছে। তার ধারণা এসময় গহনা পরে থাকলে স্বামীর বিপদ হবে। এ ধারণা সঠিক কি?
উত্তর : স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে স্ত্রী ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালনকালে সব ধরনের সৌন্দর্য বর্জন করবে। এর মধ্যে গহনাও শামিল (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/১৯)। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যে রমণীর স্বামী মারা গেছে, সে (ইদ্দতকালে লাল বা) হলুদ এবং গেরুয়া রঙের কাপড় পরবে না, অলঙ্কার পরবে না, চুলে বা হাতে মেহেদী লাগাবে না এবং চোখে সুরমা লাগাবে না (আবুদাউদ হা/২৩০৪; মিশকাত হা/৩৩৩৪; ইরওয়া হা/২১২৯)।
প্রশ্ন (৪৩১) : কোন মেয়ে পূর্ণ পর্দার বিধান পালন করে তার স্বামীর সাথে গার্মেন্টসের দোকান দিয়ে একত্রে ব্যবসা করতে পারবে কি?
উত্তর : শারঈ পর্দার বিধান মেনে মহিলারাও ব্যবসা করতে পারে এবং ব্যবসায় স্বামীকে সহযোগিতা করতে পারবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৮/১০৭)।
প্রশ্ন (৪৩২) : ফজরের ছালাতের সময় গোসল ফরয হয়েছে; কিন্তু বিদ্যুৎ নেই ও পানিও নেই। প্রতিবেশী থেকে পানি আনাও বেশ কঠিন। এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়ার সম্ভবনা না থাকলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (মায়েদাহ ৫/৬; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৫/৩৪২)। আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, ‘যাতুস সালাসিল’ যুদ্ধে শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতার আশংকায় গোসল না করে তায়াম্মুম করে সাথীদের নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। পরে সাথীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই ঘটনা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি কি অপবিত্র অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেছ? তখন আমি গোসল না করার কারণ ব্যাখ্যা করলাম এবং বললাম আল্লাহ বলেছেন, ‘নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং চুপ থাকলেন (আবুদাঊদ হা/৩৩৪ ‘ঠান্ডা লাগার ভয় থাকলে অপবিত্র ব্যক্তি কি করবে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ; ইরওয়া হা/১৫৪)। এছাড়া আহত ব্যক্তিও গোসল না করে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করতে পারবে (আবুদাঊদ হা/৩৩৬, ৩৬৭, ‘আহত ব্যক্তির তায়াম্মুম করা’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৪৩৩) : আমাদের এলাকার হিন্দু এমপি মসজিদে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এক্ষণে মসজিদের দেয়ালে তার নামে নেমপ্লেট বসানো যাবে কি?
উত্তর : কোন অমুসলিম মসজিদে শর্তহীন দান করলে তা গ্রহণে কোন দোষ নেই। রাসূল (ছাঃ) অমুসলিমদের শর্তহীন অনুদান বা হাদিয়া গ্রহণ করতেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৪৯৯)। তাছাড়া মুসলিম রাষ্ট্রের এমপি রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে অনুদান দিলে সেটা অমুসলিমের দান বলে গণ্য হবে না। তবে মসজিদের নেমপ্লেটে কোন অমুসলিমের নাম লেখা যাবে না।
প্রশ্ন (৪৩৪) : আমার আবাদ করার মত জমি আছে। কিন্তু চাষ করার মত সক্ষমতা নেই। অন্য মানুষকে জমি চাষ করতে দিলে শরী‘আত সম্মত পদ্ধতি কি কি?
উত্তর : জমি ইজারা বা ভাড়া দেওয়া যায়। বর্গাও দেওয়া যায় (নাসাঈ হা/৩৮৯৪; আহমাদ হা/১৫৪২)। এসব ক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিতে চুক্তি বাস্তবায়ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ কর না, উভয়ের সন্তুষ্টিতে ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)। রাসূল (ছাঃ) জমি ফেলে না রেখে চাষাবাদ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তির কোন জমি-জায়গা আছে সে যেন তা চাষ করে অথবা তার ভাইকে চাষ করতে দেয়। যদি সে চাষ না করে, তবে জমি নিজের কাছেই রেখে দিবে (বুখারী হা/২৬৩২; মুসলিম হা/১৫৩৬; মিশকাত হা/২৯৭৭)।
প্রশ্ন (৪৩৫) : স্বামীর ঋণের টাকা পরিশোধ করা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক কি? ১৪ বছর যাবৎ স্বামী ঋণী হয়ে আছে। স্ত্রী পিতার বাসা থেকে কিছু সম্পদ পাওয়ায় ঋণ পুরো পরিশোধ না করে ফ্লাট ক্রয়ের চিন্তা করছে। এটা সঠিক হবে কি?
উত্তর : স্ত্রী স্বামীর ঋণের টাকা পরিশোধে বাধ্য নয়। কেননা স্ত্রী ও সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীর উপর। তবে স্ত্রী স্বামীর সংসারে ব্যয় করে স্বামীর প্রতি ইহসান করতে পারে। আবূ সাঈদ খুদরী বলেন, ইবনু মাসঊদের স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আপনি ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা ছাদাক্বা করার ইচ্ছা করেছি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) মনে করেন, আমার এ ছাদাক্বায় তার এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশী। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ইবনু মাসউদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ ছাদাক্বার অধিক হকদার (বুখারী হা/১৪৬২; ইরওয়া হা/৮৭৮)।
প্রশ্ন (৪৩৬) :জেনে শুনে গানের অনুষ্ঠানের জন্য মাইক ও সাউন্ডবক্স ভাড়া দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : যাবে না। কারণ এতে অন্যায় কাজে সহায়তা করা হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দানকারী (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (৪৩৭) : মসজিদ বা যে কোন প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক নিজের প্রয়োজনে ক্যাশ থেকে ঋণ নিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কোন খরচ করতে পারবে কি?
উত্তর : কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে হিসাবরক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারে (খারশী, শারহু মুখতাছারু খলীল ৭/১৯৪)। তবে কাউকে না জানিয়ে ক্যাশ থেকে কোন টাকা নেওয়া খেয়ানত হিসাবে গণ্য হবে। কারণ হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংরক্ষণ করা। বরং বিদ্বানগণ ওয়াকফকৃত সম্পদ থেকে ঋণ প্রদান করাকে নাজায়েয বলেছেন (মুগনী ৫/৯৫; মানছুর বাহুতী, শারহু মুনতাহাল ইরাদাত ২/১০০)। অতএব মাদ্রাসা ও মসজিদের অর্থ থেকে নিজের প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
প্রশ্ন (৪৩৮) : মাগরিবের আযানের সময়,اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا إِقْبَالُ لَيْلِكَ، وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ، وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ، فَاغْفِرْ لِي ‘আল্লা-হুম্মা ইন্না হা-যা- ইক্ববা-লু লায়লিকা ওয়া ইদবা-রু নাহা-রিকা ওয়া আছওয়া-তু দো‘আ-তিকা ফাগফির লী’-মর্মে বর্ণিত দো‘আটি পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ যঈফ (আবুদাউদ হা/৫৩০; মিশকাত হা/৬৬৯)। সুতরাং এসময় বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত দো‘আসমূহ পাঠ করবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/১৬)।
প্রশ্ন (৪৩৯) : সূরা নিসার ১নং আয়াতের ব্যাখ্যায় জনৈক বক্তা বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দাবী করে যে, হিন্দু ধর্ম সনাতন ধর্ম’। তাদের এই দাবী মিথ্যা বরং ইসলামই সনাতন ধর্ম। কেননা প্রথম মানুষ আদম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নবী। আর ইসলাম তখন থেকেই। আরো বলছে, সর্বপ্রাচীন ধর্ম ইসলাম আর সর্বাধুনিক ধর্মও ইসলাম। তার এই দাবী কি সঠিক?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক। হিন্দু বা সনাতন ধর্ম কোন আসমানী ধর্ম নয়; বরং তাদের ধর্মগুরুদের রচিত ধর্ম মাত্র। আর ইসলামই প্রথম ও প্রাচীনতম ধর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মনোনীত একমাত্র দ্বীন হ’ল ইসলাম (আলে ইমরান ৩/১৯)। তিনি আরো বলেন, ‘আর তুমি আহলে কিতাব ও (মুশরিক) উম্মীদের বল, তোমরা কি ইসলাম কবুল করলে? যদি করে, তবে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হ’ল। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে তোমার দায়িত্ব কেবল পৌঁছে দেওয়া (আলে ইমরান ৩/২০)। ইবরাহীম (আঃ)-এর ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘যখন তার পালনকর্তা তাকে বলেছিলেন, তুমি আত্মসমর্পণ কর। সে বলেছিল, আমি বিশ্বপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। একই অছিয়ত করেছিল ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকূবও। (আর তা এই যে,) হে আমার সন্তানেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য এই ধর্মকে মনোনীত করেছেন। অতএব অবশ্যই তোমরা মরো না মুসলিম না হয়ে (বাক্বারাহ ২/১৩১-১৩২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ইব্রাহীম না ইহূদী ছিলেন, না নাছারা ছিলেন। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম (আলে ইমরান ৩/৬৭)। সুতরাং আদম (আঃ) থেকে মূসা ও ঈসা (আঃ) সহ সকল নবী-রাসূলের ধর্ম ছিল ইসলাম (নামল ২৭/৩০-৩১; আলে ইমরান ৩/৫২)। অতএব এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আদি ও প্রাচীনতম ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং সর্বাধুনিক ধর্মও ইসলাম। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য একমাত্র ধর্ম।
প্রশ্ন (৪৪০) : হানযালা ইবনু ছাফওয়ান নামে কোন নবী পৃথিবীতে এসেছিলেন কি?
উত্তর : হানযালা ইবনু ছাফওয়ান নামের একজন নবীর কথা কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়। কিন্তু বর্ণনাগুলোর সনদ যঈফ হওয়ায় বিদ্বানগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কুরআনে যেভাবে এসেছে সেভাবে বিশ্বাস করার বিষয়টি তারা গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পূর্বে মিথ্যারোপ করেছিল নূহের সম্প্রদায়, কূয়াবাসীরা ও ছামূদ সম্প্রদায়’ (ক্বাফ ৫০/১২)। উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনু কাছীরসহ অনেক মুফাস্সির কুয়াবাসীর নবী হিসাবে হানযালা ইবনু ছাফওয়ানের নাম উল্লেখ করেছেন (আল-বিদায়াহ ১/২২৭, ২/২১২; তাফসীরে ছা‘লাবী ৭/২৭; তাফসীরে রাযী ২৩/২৩৩)। তবে বর্ণনাটি সনদবিহীন হওয়ায় পরবর্তী বিদ্বানগণ তা গ্রহণ করেননি (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৪/৪৪৯)।
প্রশ্ন (৪৪১) : বহু দিন হায়েয বন্ধ থাকার পর কালো রক্ত আসলে সেটি হায়েয হিসাবে গণ্য হবে কি?
উত্তর : হায়েয বন্ধের বহুদিন পরেও কালো রক্ত দেখা দিলে তা হায়েয হিসাবে গণ্য হবে। কারণ হায়েয়ের রক্ত কালোও হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন হায়েযের রক্ত আসবে তখন তা কালো হয়, যা সহজে চেনা যায়। এ রক্ত দেখলে ছালাত আদায় করবে না (আবুদাউদ হা/৩০৪; মিশকাত হা/৫৫৮)। কারণ হায়েয বন্ধ হওয়ার নির্দিষ্ট বয়স নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৯/২৪০)।
প্রশ্ন (৪৪২) : ইয়াহইয়া (আঃ)-কে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল? এ ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় কি?
উত্তর : ইহুদীরা বহু নবীকে হত্যা করেছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা নিজেদের উপর আল্লাহর গযবকে ফিরিয়ে নিল। এটা এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহে অবিশ্বাস করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত’ (বাক্বারাহ ২/৬১)। তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে এবং আল্লাহর আয়াত সমূহে অবিশ্বাস করার কারণে ও অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করার কারণে… আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দিয়েছেন (নিসা ৪/১৫৫)। ইয়াহইয়া (আঃ)-কেও তারা হত্যা করেছিল। তাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সেবিষয়ে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন- আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) বলেন, আমার ধৈর্যের বিকল্প আর কী আছে? অথচ ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ)-এর মাথা বনু ইস্রাঈলের একজন পতিতার কাছে হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩০৬৭৬, সনদ ছহীহ)। জনৈক ব্যক্তি তার চরিত্রহীন ভাতিজীকে বিয়ে করতে চাইলে ইয়াহইয়া (আঃ) নিষেধ করেন। এতে ভাতিজী ও তার মা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে হত্যা করার জন্য প্ররোচিত করে এবং বলে ইয়াহইয়া (আঃ)-এর মাথা না নিয়ে আসা পর্যন্ত আমরা খুশী হব না। তখন ঐ লোক ইয়াহইয়া (আঃ)-এর মাথা কেটে পাঠায় (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩১৯০৫; তারীখু ত্বাবারী ১/৫৮৬)। তবে মূল ঘটনা আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্ন (৪৪৩) : জনৈক আলেম বলেন, রাসূল (ছাঃ) তার সমগ্র জীবনে চারটি ওমরা এবং দু’টি হজ্জ করেছেন। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) তার সমগ্র জীবনে চারটি ওমরা এবং একটি হজ্জ করেছেন (মুসলিম হা/১২৫৩; তিরমিযী হা/৮১৫)। তবে হজ্জ ফরয হওয়ার পূর্বে মক্কায় থাকা অবস্থায় তিনি একাধিকবার হজ্জ করেছেন মর্মে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তা শরী‘আতের বিধান হিসাবে আসার পূর্বে পালন করায় তা ধর্তব্য নয় (তিরমিযী হা/৮১৫, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৪৪৪) : সাধারণ মানুষ কাউকে কল্যাণের শিক্ষা দিলে সেও কি আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমগ্র সৃষ্টজীবের প্রার্থনায় শামিল হবে?
উত্তর : কোন ব্যক্তি বিশুদ্ধ নিয়তে ছওয়াবের আশায় কাউকে মানবতার জন্য علم نافع বা উপকারী কোন শিক্ষা দান করলে সে আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল সৃষ্টজীবের দো‘আয় শামিল হবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, ফেরেশতাকুল, আসমানসমূহ ও যমীনের অধিবাসীগণ এমনকি পিপিলিকা তার গর্ত থেকে এমনকি পানির মাছও মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য দো‘আ করতে থাকে (তিরমিযী হা/২৬৮৫; মিশকাত হা/২১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪২১৩)। অত্র হাদীছে এমন কল্যাণের শিক্ষা দানের কথা বলা হয়েছে যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাত দেয়। নির্দিষ্ট কোন ইলম বা জ্ঞানের কথা বলা হয়নি (মির‘আত ১/৩১৯; মিরকাত ১/২৯৮; তোহফা ৭/৩৮০)।
প্রশ্ন (৪৪৫) : একজন বিধবা যুবতীর দুই সন্তান এখন বালেগ। সে একজন পুরুষকে মাত্র পাঁচ হাযার টাকা মোহর দিয়ে বিবাহ করে এবং তার দুই ছেলেকে বিয়েতে সাক্ষী রেখে কোনরূপ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সংসার করছে। এই বিবাহ কি বৈধ হয়েছে?
উত্তর : বিবাহের অন্যতম প্রধান শর্ত হ’ল অলী উপস্থিত থাকা এবং তার সম্মতি থাকা। উক্ত বিবাহে দুই জন বালেগ সন্তান সাক্ষী থাকলেও অলী না থাকায় বিবাহ শুদ্ধ হয়নি (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমমে‘ ১৩/৩২৪, ১২/৯৯)। আর দু’জন বালেগ সন্তানের একজন অলী এবং অপরজন সাক্ষী হ’লেও একজন সাক্ষী কম হবে, যা জায়েয নয় (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ৭/৪৬)। অতএব বর্ণনা মতে, উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি (আল-মাওসূ‘আতুল ফিকহিয়া ৪১/৩০০)। এক্ষণে উক্ত নারী পুনরায় সঠিক নিয়মে বিবাহ করবে এবং কৃত পাপের জন্য আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হয়ে তওবা করবে।
প্রশ্ন (৪৪৬) : জনৈক ব্যক্তি মানত করেন যে, তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তার এলাকার সব নতুন মসজিদের বৈদ্যুতিক তারের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি কয়েক বছর উক্ত ব্যবস্থা করলেও বর্তমানে করতে চাচ্ছেন না। এজন্য কি তাকে কাফফারা দিতে হবে?
উত্তর : কেউ ভালো কাজ করার নিয়ত করলে সে তা পূরণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের মানত করে, সে যেন অবশ্যই তা আদায় করে। আর যে ব্যক্তি তাঁর নাফরমানীর মানত করে, সে যেন অবশ্যই তা না করে’ (বুখারী হা/৬৬৯৬; মিশকাত হা/৩৪২৭)। এক্ষণে অর্থনৈতিক অক্ষমতার কারণে উক্ত কাজ না করলে তাকে কিছু দিতে হবে না। কিন্তু সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মানত পূরণ না করলে তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে (ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৮৮)। আর কসম ভঙ্গের কাফফারা হ’ল দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য বা বস্ত্র দান করা অথবা একটি দাস মুক্ত করা। এতে অক্ষম হ’লে তিন দিন ছিয়াম পালন করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
প্রশ্ন (৪৪৭) : অতি বৃষ্টির কারণে অনেক পুকুর ভেসে যায়। ফলে চাষ করা মাছ পুকুরের ঘের থেকে বেরিয়ে যায়। অনেকে সেই মাছ ধরে। সেই মাছের মালিক পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় ঐ মাছ ধরা জায়েয হবে কি?
উত্তর : কোন পুকুর বা ঘেরের মাছ তা শনাক্ত করা সম্ভব হ’লে মালিককে ফেরৎ দিবে। নইলে ঐ মাছ ধরা ও খাওয়া জায়েয। কারণ তখন তা আর কারো মালিকানায় থাকে না (ইমাম মালেক, আল-মুদাউবেনা ৪/৪৭৩)।
প্রশ্ন (৪৪৮) : আমরা তিন ভাই দুই বোন। আমাদের একটি চাষের জমি আছে, যা আমাদের পরিবারের আয়ের উৎস। কিন্তু বড় ভাই ঐ জমি থেকে ওয়ারিছের অংশ নিয়ে বাড়ি করতে চান। এক্ষণে তিনি কি পিতার মৃত্যুর আগেই জমি ভাগ বের করে নিয়ে বাড়ি করতে পারবেন?
উত্তর : পিতার অনুমতি ও ভাই-বোনসহ অন্যান্য ওয়ারিছদের সম্মতি থাকলে পিতার জীবদ্দশায় বড় ভাই তার নিজের ভাগ বুঝে নিয়ে বাড়ি বানাতে পারেন। যা তিনি পিতার মৃত্যুর পর পুনরায় দাবী করতে পারবেন না। যেমন ছাহাবী সা‘দ বিন ওবাদা (রাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর যাবতীয় সম্পদ বণ্টন করে সফরে বের হয়ে যান এবং সেই সফরে মারা যান (সুনান সাঈদ ইবনু মানছূর হা/২৯১-৯২)। তবে পিতা এটা না চাইলে ওয়ারিছরা সেটা পারবে না (মারদাভী, আল-ইনছাফ ৭/১৪২)।
প্রশ্ন (৪৪৯) : শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে ছোট-বড় হওয়ার মানদন্ড কি? বয়স না পেশাগত পদমর্যাদা? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : মর্যাদার মাপকাঠি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রূপ হ’তে পারে। যেমন (১) পদমর্যাদা : আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের (নিসা ৪/৫৯)। (২) ইলম : আল্লাহ বলেন, তুমি বল, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বস্ত্ততঃ জ্ঞানীরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে (যুমার ৩৯/৯)। রাসূল (ছাঃ) ছালাতে ইমামতির ক্ষেত্রে জ্ঞানীদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন (মুসলিম হা/৬৭৩; মিশকাত হা/১১১৭)। (৩) বয়স : ইমামতির ক্ষেত্রে সব কিছুতে দুই ব্যক্তি সমান হ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনামতে বয়সে যিনি বড় তিনি ইমামতি করবেন (মুসলিম হা/৬৭৩)। সর্বোপরি তাক্বওয়া ও ঈমানই মর্যাদার প্রধানতম মাপকাঠি। আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট সবচাইতে সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশী আল্লাহভীরু’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।
প্রশ্ন (৪৫০) : জুম‘আর দিন আখেরী যোহর পড়তেই হবে, না পড়লে জুম‘আ আদায় হবে না। একথার কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তর : জুম‘আর দিনে আখেরী যোহর নামে কোন ছালাত নেই। বরং জুম‘আর পরে সুন্নাত ছালাত রয়েছে। তা দুই, চার বা ছয় রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন জুম‘আর ছালাত আদায় করে, তখন সে যেন তারপরে চার রাকা‘আত (সুন্নাত) ছালাত আদায় করে’ (মুসলিম হা/৮৮১; ইবনু মাজাহ হা/১১৩২)। রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর ছালাত আদায় করে তাসবীহ ও যিকির পাঠ করে তারপর বাড়িতে গিয়ে দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম হা/৮৮২)। এজন্য ইবনু ওমর (রাঃ) সহ সালাফগণ জুম‘আর দিনে মসজিদে সুন্নাত আদায় করলে চার রাক‘আত পড়তেন এবং বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাক‘আত পড়তেন (তিরমিযী হা/৫২৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। ‘আখেরী যোহর’ নামে জুম‘আর ছালাতের পরে পুনরায় যোহরের চার রাক‘আত একই ওয়াক্তে পড়ার যে রেওয়াজ চালু আছে, তা নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। কারণ জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। এক্ষণে যে ব্যক্তি জুম‘আ আদায়ের পর যোহর পড়ে, তার পক্ষে কুরআন, সুন্নাহ এবং কোন বিদ্বানের সমর্থন নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ)। গ্রামে জুম‘আ হবে কি হবে না, এই সন্দেহে পড়ে কিছু লোক দু’টিই পড়ে থাকে।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button