প্রবন্ধ

রমাদান মাসে একজন মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

সংকলন : মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী |সম্পাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

তিনঃ কুরআন তেলাওয়াত করা এবং এর মর্ম উপলব্ধি করা

রামাদান মাস কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলের সাথে কুরআন পাঠ করতেন। তার সীরাত অনুসরণ করে প্রত্যেক মু’মিনের উচিত এ মাসে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা, বুঝা এবং আমল করা। ইবনু আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كَانَ جِبْرِيلُ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ»

“জিবরীল রামাদানের প্রতি রাতে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে নিয়ে কুরআন পাঠ করতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৮)

যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, তার ব্যাপারে আল্লাহ এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, সে দুনিয়ায় ভ্রষ্ট হবে না এবং আখিরাতে দুর্ভাগা – হতভাগাদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। আল্লাহ বলেন,

﴿فَإِمَّا يَأۡتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدٗى فَمَنِ ٱتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشۡقَىٰ ١٢٣ ﴾ [طه: 123]

‘‘সুতরাং যে আমার দেয়া হিদায়াতের পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং দু:খ কষ্টে পতিত হবে না।’’ (সূরা ত্বা-হা: ১২৩)

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু রামাদানে প্রতিদিন একবার কুরআন খতম করতেন। সালাফে সালেহীন নামাযে ও নামাযের বাইরে কুরআন খতম করতেন। রামাদানের কিয়ামুল লাইলে তাদের কেউ তিনদিনে, কেউ সাতদিনে এবং কেউ দশদিনে কুরআন খতম করতেন। ইমাম যুহরী রামাদান এলেই হাদীস পাঠ ও ইলমের মজলিস ত্যাগ করে কুরআন পাঠে লেগে যেতেন।

খেয়াল রাখতে হবে যে, কুরআন কারীম শুধু খতম করার জন্যই নাযিল হয়নি। তাই কোনরূপ অর্থ না বুঝে, চিন্তাভাবনা না করে অন্তরে আল্লাহ ভীতি ও বিনম্রভাব সৃষ্টি না করে কবিতার মত কুরআন আবৃত্তি করে যাওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ নিজেই বলেন,

﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩﴾ [ص: 29]

‘‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ গ্রহণ করে উপদেশ।’’ (সূরা সোয়াদ: ২৯)

 

চারঃ আল্লাহর রাস্তায় বেশী বেশী দান ও সদকা করা

আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা ও ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সব সময় যাতে সামর্থবান ব্যক্তিবর্গ এ ইবাদাত পালন করে সে ব্যাপারে ইসলাম ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছে। আর রামাদান মাসে এ ইবাদাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কেননা ইমাম বুখারী ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ ……. فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنْ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ»

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানুষের চেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন। আর রামাদান মাসে যখন জিবরীল তার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতেন তখন তিনি আরো দানশীল হয়ে উঠতেন…..। জিবরীলের সাক্ষাতে তিনি বেগবান বায়ুর চেয়েও বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৮)

রামাদান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দানশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ মূলত তিনটিঃ

  1. রামাদান মাসে দান-সদকাসহ সকল উত্তম আমলের সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
  2. রামাদান মাসে তিনি খুববেশী কুরআন তেলাওয়াত করতেন। আর কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

﴿مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ ﴾ [البقرة: 245]

‘‘কে সে, যে আল্লাহকে করযে হাসানা প্রদান করবে? অত:পর তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।’’ (সূরা আল-বাকারাহ : ২৪৫)

﴿مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١﴾ [البقرة: 261]

“যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীস উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা । আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন।আর আল্লাহ দানশীল সর্বজ্ঞ।’’ (সূরা আল-বাকারাহ: ২৬১)

﴿هَٰٓأَنتُمۡ هَٰٓؤُلَآءِ تُدۡعَوۡنَ لِتُنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبۡخَلُۖ وَمَن يَبۡخَلۡ فَإِنَّمَا يَبۡخَلُ عَن نَّفۡسِهِۦۚ وَٱللَّهُ ٱلۡغَنِيُّ وَأَنتُمُ ٱلۡفُقَرَآءُۚ﴾ [محمد: 38]

‘‘দেখ, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।’’(সূরা মুহাম্মাদ: ৩৮)

 

রামাদানের প্রতি রাতে জিবরীলের সাক্ষাতে তিনি ভীষণভাবে দান করতে অনুপ্রাণিত হতেন, যেমন সহীহ বুখারীর বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে।

 

পাঁচঃ উমরা পালন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي»

‘‘রামাদান মাসে উমরা করা হজ্জের সমতুল্য’’ অথবা ‘‘আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য’’। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৬৯০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৬)

 

ছয়ঃ ইতেকাফ

রামাদান মাসের শেষ দশদিন ইতেকাফে বসা অতি উত্তম ইবাদাত। শুরুতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশদিন ইতেকাফে বসেন। এরপর লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে মাঝের দশদিন  ইতেকাফে বসেন। এরপর যখন লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশদিনে হওয়া স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন থেকে তিনি শেষ দশদিন ইতেকাফে বসতে লাগলেন। অত:পর তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণ ইতেকাফে বসেন। হাদীসে এসেছে,

«اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ الْأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ فَاعْتَكَفَ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهوَسَلَّمَ خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْيَرْجِع….. »

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশদিন ইতেকাফ করেন। (সাহাবারা বলেন) আর আমরাও তার সাথে ইতেকাফ করলাম। এরপর জিবরীল আসলেন এবং বললেন, যা আপনি অনুসন্ধান করছেন তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মাঝের দশদিন ইতেকাফ করলেন। (সাহাবারা বলেন)আমরাও তার সাথে ইতেকাফ করলাম। এরপর জিবরীল আসলেন এবং বললেন, যা আপনি অনুসন্ধান করছেন তা আপনার সামনে রয়েছে। তারপর বিশ রামাদান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দিলেন এবং বললেন, যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ইতেকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে…..”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮০)

 

সাতঃ রামাদানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه»

‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রিতে (নামাযে) দাঁড়ায়, তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হল”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০২)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের শেষ দশ রাতে নিজে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকতেন এবং পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِه»

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের শেষ দশদিনে আল্লাহর ইবাদাতে এতটা পরিশ্রম করতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৫)

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ وَأَحْيَا لَيْلَهُ وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ»

‘‘যখন রামাদানের শেষ দশদিন এসে যেত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরনের কাপড় মজবুত করে বাঁধতেন। (অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুতি নিতেন) এবং নিজে রাত্রে জাগতেন এবং পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৪)

 

তিনি সাহাবাদেরকেও লাইতুল ক্বদর অনুসন্ধান এ ব্যাপৃত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

«الْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ فِي كُلِّ وِتْرٍ»

“তোমরা শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে এ রাত্রি তালাশ করো”। (সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ৭৯২)

এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীস রয়েছে যার সারকথা হলো – লাইলাতুল ক্বদর রামাদানের শেষ দশদিনের যে কোন রাত্রে হতে পারে। তবে বেজোড় রাত্রিসমুহের যে কোন একটিতে হুওয়ার সম্ভাবনা বেশী। অনেক উলামার মতে – সবচেয়ে বেশী সম্ভাবনাময় হল ২৭ তম রাত্রি।

 

আটঃ বেশী বেশী দো, যিকর এবং ইস্তেগফার করা

রামাদানের দিনগুলোতে পুরো সময়টাই ফযীলতময়। তাই সকলের উচিত এ বরকতময় সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা- দো‘আ, যিকর ও ইসস্তেগফারের মাধ্যমে। কেননা রামাদান মাস দো‘আ কবুল হওয়ার খুবই উপযোগী সময়, যেমন প্রবন্ধের শুরুতে একটি হাদীসের বর্ণনায় বলা হয়েছে।

নয়ঃ সকল প্রকার ইবাদতে নিজেকে ব্যাপৃত রাখা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসে অন্য মাসের চেয়েও বেশী বেশী ইবাদাত করতেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল রামাদান মাসে সকল ধরনের ইবাদাত বেশী বেশী করা। তিনি ছিলেন সবচেয়ে দানশীল এবং রামাদানে আরো বেশী দানশীল হয়ে যেতেন,  কেননা এ সময়ে তিনি সদকা, ইহসান ও কুরআন তেলাওয়াত, নামায, যিকর ও ইতেকাফ ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদাত অধিক পরিমাণে করতেন। তিনি রামাদানে এমন বিশেষ ইবাদাত সমূহ পালন করতেন যা অন্য মাসগুলোতে করতেন না। (যাদুল মাআ‘দ ১/৩২১)

সালাফে সালেহীনও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে এ মাসকে অধিক গুরুত্ব দিতেন এবং সকল ইবাদাতের জন্য অবসর হয়ে যেতেন। এমন কি ইমাম মলেক রাহেমাহুল্লাহ ও ইমাম যুহরী রাহেমাহুল্লার ন্যায় ব্যক্তিবর্গও শিক্ষাদান ও ফাতওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে বিশেষ ইবাদাত যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে – তার জন্য নিজেদের নিয়োজিত রাখতেন।

দ্বিতীয় ভাগঃ শরীয়ত যা বর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছে

শরীয়তের পক্ষ থেকে মূলত: ছোট-বড় সকল গোনাহ ও পাপ সর্বদা বর্জন করার নির্দেশ এসেছে। আর রামাদান মাস  ফযীলতের মাস এবং আল্লাহর ইবাদাতের প্রশিক্ষণ লাভের মাস হওয়ায় এ মাসে সর্বপ্রকার গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করা অধিক বাঞ্ছনীয়। তদুপরি রামাদান মাসে সৎকাজের সওয়াব ও নেকী বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, তাই রামাদানের সম্মান ও ফযীলতের কারণে এ মাসে সংঘটিত যে কোন পাপের শাস্তি অন্য সময়ের তুলনায় ভয়াবহ হবে এটাই স্বাভাবিক।

এজন্যেই রোযাদারদের উচিত তাকওয়া বিরোধী সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ পরিপূর্ণভাবে বর্জন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَه»

‘‘যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করে না তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৪)

‘‘মিথ্যা কথা ও তদনুযায়ী কাজ’’ কথাটি দ্বারা মূলত: রোযা অবস্থায় উম্মতের সকলকে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। আর ‘‘আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’’ কথাটি দ্বারা রোযা অসম্পূর্ণ হওয়ার, কিংবা কবুল না হওয়ার অথবা রোযার সওয়াব না হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِم»

‘‘তোমাদের কেউ রোযার দিনে অশ্লীল কথা যেন না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সাথে ঝগড়া করলে শুধু বলবে, আমি রোযাদার ।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৫)

উপরোক্ত হাদীস দু’টোর আলোকে সারকথায় আমরা বলতে পারি  যে, আমাদের ঈমান, আমল ঠিক রেখে ইসলামী বিরোধী সকল কাজ বিশেষভাবে রামাদানে এবং আমভাবে সর্বদাই বর্জন করতে হবে। তাহলে আমাদের সিয়াম সাধনা হবে অর্থবহ এবং এ সাধনার মূল লক্ষ্য তাকওয়া অর্জন করা হবে সহজসাধ্য । আল্লাহ আমাদের সকল আমল কবুল করুন এবং আমাদের সবাইকে আরো উত্তম আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button