প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৩

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৩

প্রশ্ন (১০১) : আমি আমার খালাতো বোনের মেয়েকে ভালোবাসি। সেও আমাদের পসন্দ করে। আমরা বিবাহ করতে চাই। কিন্তু উভয় পরিবার কোনভাবেই রাযী নয়। এক্ষণে আমরা শরী‘আতসম্মত উপায়ে বিবাহ বন্ধনে কিভাবে আবদ্ধ হ’তে পারি?
উত্তর : খালাতো বোনের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয। আলী (রাঃ) তার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে ফাতেমা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন। একজন মেয়ের বিবাহের জন্য তার পিতার অনুমতি শর্ত। পিতা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন মেয়ের বিবাহ জায়েয নয় (আবূদাউদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে হা/২৭০৯)। সেজন্য পিতা-মাতার কর্তব্য উভয় পরিবারের সাথে আলোচনা করে বিবাহের ব্যবস্থা করা। তাহ’লে সমাজে ফিৎনা কমে যাবে। সাথে সাথে ছেলের কর্তব্য হবে পিতা-মাতাকে রাযী করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। পিতা-মাতা সন্তুষ্ট না থাকলে অন্য কোন দ্বীনদার মেয়েকে খুঁজে বিবাহ করবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/২৪)। কারণ পিতা-মাতাকে খুশী করার জন্য দুনিয়াবী কিছু স্বার্থ ত্যাগ করলে আল্লাহ খুশী হন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯)। তিনি বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ (নাসাঈ হা/৩১০৪)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কিছু ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ তার প্রতিদান হিসাবে তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন’ (আহমাদ হা/২০৭৫৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮১২৮)।
প্রশ্ন (১০২) : মহিলাগণ গৃহাভ্যন্তরে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে সরবে তেলাওয়াত করতে পারবে কি?
উত্তর : পারবে। কেননা যে সকল ছালাতে পুরুষ সরবে ক্বিরাআত করে, মহিলারাও সেই সকল ছালাতে সরবে তেলাওয়াত করতে পারে। এ বিধান নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে সমান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈকা মহিলাকে তার পরিবারের ইমামতি করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন (আবুদাঊদ হা/৫৯২; ইরওয়া হা/৪৯৩; ইবনু কুদামাহ, মুগনী, ৩/৩৮. নববী, আল মাজমূ ৩/৩৯০)।
প্রশ্ন (১০৩) : কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হ’লে নফল ছালাত আদায় করতে হবে মর্মে শরী‘আতে কোন নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : শরী‘আতে এরূপ নির্দেশনা রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) যখন কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তেন, তখন তিনি নফল ছালাতে দন্ডায়মান হ’তেন (আবুদাঊদ হা/১৩১৯, মিশকাত হা/১৩২৫, সনদ হাসান)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) যখন কোন দুঃখ বা সংকটের সম্মুখীন হ’তেন, তখন এই দো‘আটি পড়তেন يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীছ’ (হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্বচরাচরের ধারক! আমি আপনার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি) (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৫৪)।
প্রশ্ন (১০৪) : কারো কাছে কর্যে হাসানা না পেয়ে একান্ত বাধ্যগত অবস্থায় সূদের উপর কর্য নেয়া যাবে কি?
উত্তর : কোন অবস্থাতেই সূদের উপর ঋণ নেওয়া যাবে না। কারণ সূদ হারাম। একমাত্র ক্ষুধায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার মত নিরুপায় অবস্থায় পড়লে সে অবস্থাতে হারাম ভক্ষণের অনুমতি রয়েছে (মায়েদাহ ৩)।
প্রশ্ন (১০৫) : ওআইসি-র সিদ্ধান্ত মতে বিশ্বের যে কোন স্থানে রামাযানের চাঁদ দেখা গেলে কি সকল স্থানে সেটি প্রযোজ্য হবে?
উত্তর : ১৯৮৬ সালের ১১-১৬ অক্টোবর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত ওআইসি-র অঙ্গসংস্থা ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিক্বহ একাডেমী’র উক্ত মর্মে গৃহীত ৫নং সিদ্ধান্তটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ সিদ্ধান্তটি স্পষ্টভাবে কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীত। কেননা আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এর ছিয়াম রাখে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৪)। আর রামাযান মাস বিশ্বের সর্বত্র একই দিনে শুরু হয় না। (২) আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সূর্যাস্তের সাথে সাথে ছায়েম ইফতার করবে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৯৮৫)। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, সূর্যাস্তের সময় সর্বত্র এক নয়। এমনকি ঢাকার ৭/৮ মিনিট পরে রাজশাহীতে সূর্যাস্ত হয়। বাংলাদেশের সর্ব পূর্বে বান্দরবনের থানচির ১৭ মিনিট পর সর্ব পশ্চিমের চাঁপাই নবাবগঞ্জে সূর্যাস্ত হয়। মক্কা থেকে কলিকাতার সময়ের দূরত্ব ৩ ঘণ্টা ১২ মিঃ ৩৬ সেকেন্ড এবং ঢাকার দূরত্ব ৩ ঘণ্টা ২০ মিঃ ৪৮ সেকেন্ড। ফলে পশ্চিমে মক্কায় চাঁদ দেখার নির্ধারিত সময় পরে পূর্ব দিকে ঢাকায় চাঁদ দেখা সম্ভব। কিন্তু ঢাকায় তখন রাত থাকায় পরের দিন সন্ধ্যায় সেটা দেখা যায়। সেকারণ কখনো একদিন বা দু’দিন পরে বাংলাদেশে ছিয়াম বা ঈদ পালন করা হয়, স্রেফ চাঁদ দেখার আগপিছ হওয়ার কারণে। রামাযান মাসের এক সফরে সূর্যাস্তের সাথে সাথে রাসূল (ছাঃ) ইফতারের জন্য উটে সওয়ার সাথী আব্দুল্লাহ বিন আবু আওফা-কে ছাতু ও পানি মিশাতে বলেন। ছাহাবী বললেন, এখনো দিন বাকী আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ধমক দিয়ে বললেন, তুমি নামো, আমাদের জন্য ছাতু ও পানি মিশাও! রাবী বলেন, যদি কেউ তখন উটের পিঠে উঠত, তাহ’লে সূর্য দেখতে পেত’ (বুখারী হা/১৯৫৫; মুসলিম হা/১১০১)। এতে বুঝা যায় যে, স্বাভাবিক চোখে সূর্যাস্ত দেখলেই ইফতার করতে হবে। আর এটি একই উদয়স্থলের মধ্যে বসবাসকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশ্বের সমগ্র এলাকার জন্য নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা চাঁদ দেখে ছিয়াম রাখ ও চাঁদ দেখে ছিয়াম ছাড়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৭০)। বড় কথা হ’ল ইসলামের ইতিহাসে কখনো পৃথিবীর সর্বত্র একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালিত হয়েছে বলে জানা যায় না।
প্রশ্ন (১০৬) : রামাযানে ‘বড় শয়তানগুলি শৃঙ্খলিত হয়’ -এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : ‘বড় শয়তানগুলি শৃঙ্খলিত হয়’ এবং ‘প্রতি রাতে আহবানকারী ফেরেশতা মানুষকে আহবান করে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করা হয়’। যার ফলাফল হিসাবে দেখা যায় যে, এ মাসে পৃথিবীতে দুষ্কৃতি কমে যায় এবং নেকীর কাজ সবচেয়ে বেশী হয়। যার ছওয়াব সর্বদা আকাশে উত্থিত হ’তে থাকে। আর রহমতের দরজা সমূহ খোলা থাকার কারণে রামাযানে পৃথিবীতে শান্তি ও সৌহার্দ্যের শান্ত পরিবেশ বজায় থাকে। বড় বিষয় হ’ল, এগুলি অদৃশ্য জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। জিন ও ফেরেশতা মানুষের চর্মচক্ষুতে দেখা যায় না। অনুভব করা যায়। তাদের ব্যাপারে বর্ণিত উপরোক্ত গায়েবী বিষয় সমূহ আমাদের কেবল বিশ্বাস করে যেতে হবে। কেউ অস্বীকার করলে তাকে প্রমাণ পেশ করতে হবে। এ ব্যাপারে যুক্তিবাদী ভ্রান্ত ফের্কা সমূহের সন্দেহবাদ ও অহেতুক কল্পনা বিলাস থেকে মুমিনকে সাবধান থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের যবানের দিকে ইশারা করে বলেন, মনে রেখ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, এই যবান থেকে ‘হক’ ব্যতীত কিছুই বের হয় না’ (হাকেম হা/৩৫৯; আহমাদ হা/৬৮০২, সনদ ছহীহ)। আর আল্লাহ বলেন, ‘তিনি নিজ খেয়াল-খুশীমত কোন কথা বলেন না’। ‘সেটি অহী ব্যতীত নয়, যা তার নিকট প্রত্যাদেশ করা হয়’ (নাজম ৫৩/৩-৪)।
প্রশ্ন (১০৭) : ‘ছায়েমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকটে মিশকের খোশবুর চাইতে সুগন্ধিময়’-এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : এটি আল্লাহর জন্য ছিয়ামের কারণে হয়ে থাকে, অন্য কারণে নয়। ফলে সেটি আল্লাহর নিকটে অতীব প্রিয়। যদিও দুর্গন্ধ হওয়ার কারণে মানুষের নিকট অপ্রিয়। অবশ্য এর অর্থ এটা নয় যে, ছায়েমকে তার মুখ দুর্গন্ধযুক্ত রাখতে হবে। বরং সে প্রয়োজনে সকাল-বিকাল নিয়মিত মিসওয়াক করবে, যাতে দুর্গন্ধ না হয়। কেননা সে মিসওয়াক করুক বা না করুক, ক্বিয়ামতের দিন তার মুখ অবশ্যই মিশকের খোশবুর চাইতে সুগন্ধিময় হবে। এর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে ছিয়ামের উচ্চ মর্যাদা প্রমাণিত হয়। ‘মিসওয়াক’ দ্বারা প্রচলিত কাঁচা বা শুকনা ডালের মিসওয়াক ও পেস্ট-ব্রাশ সবকিছুকে বুঝায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না হ’ত, তাহ’লে আমি তাদেরকে এশার ছালাত দেরীতে এবং প্রতি ছালাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৭৬)। এখানে ‘প্রতি ছালাতে’ অর্থ ‘প্রতি ছালাতের ওযূতে’। যেমন অন্য বর্ণনায় ব্যাখ্যা এসেছে (আহমাদ হা/৭৫০৪; ইরওয়া হা/৭০)। অত্র হাদীছ মেনে চললে ছায়েমের মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার অবকাশ থাকবে না। কিছু ভাই মুছাল্লায় দাঁড়িয়ে পকেট থেকে সরু যয়তুন ডাল বের করে দ্রুত মিসওয়াক শেষে কুলি না করেই মিসওয়াকটি পুনরায় পকেটে রেখে ছালাত পড়েন। তিনি ভাবেন, সুন্নাত আদায়ের নেকী পেলাম। অথচ এটি পবিত্রতার বিরোধী। আর এটি রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকাও নয়। কেননা তিনি বলেন, ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পবিত্রকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারী’ (নাসাঈ হা/৫; আহমাদ হা/২৪২৪৯; মিশকাত হা/৩৮১)। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
প্রশ্ন (১০৮) : একদল আলেম বলেন, কুরআন নাযিল হয়েছে শবেবরাতে। আরেক দল বলেন, শবে ক্বদরে। কোনটি ঠিক?
উত্তর : যারা বলেন শবে ক্বদরে, তাদের কথাই ঠিক। কেননা শবেবরাতে কুরআন নাযিল হয়েছে বলে স্পষ্ট কোন দলীল নেই। আর শবে ক্বদরে নাযিল হয়েছে বলে স্পষ্ট দলীল রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, আমরা এটি নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’ (ক্বদর ৯৭/১)। তিনি বলেন, ‘রামাযান মাস; যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৪)।
প্রশ্ন (১০৯) : চল্লিশা বিদ‘আত হওয়ায় আমাদের সমাজে মৃত্যুর আগেই ‘জীবদ্দশায় ফয়তা’ নামের একটি অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এটি কি জায়েয হবে?
উত্তর : মৃত্যুর আগে হোক বা পরে হোক, ফয়তা নামক প্রচলিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। কেননা বিশেষ কোন উপলক্ষ বা দিবসকে কেন্দ্র করে এভাবে খাওয়ালে তা বিদ‘আতে পরিণত হবে। উল্লেখ্য যে, সাধারণ ছাদাক্বা হিসাবে যেকোন লোককে খাওয়ানোতে দোষ নেই। এতে ধনী-গরীব শর্ত নয়। তবে অসহায়-গরীবদের খাওয়ালে অধিক কল্যাণ রয়েছে (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৭২/২; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৯২)। যেমন জনৈকা বৃদ্ধা ছাহাবী প্রতি জুম‘আয় লোকদের খাওয়ানোর আয়োজন করতেন। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, জুম‘আর দিন আসলে আমরা খুবই খুশী হ’তাম। এক বৃদ্ধা আমাদের জন্য ‘সিলক্ব’ (السِّلْقُ) (শালগম জাতীয় এক প্রকার সুস্বাদু সবজি)-এর মূল তুলে তা তাঁর হাঁড়িতে চড়িয়ে দিতেন। তারপর এতে অল্প কিছু যব ছেড়ে দিতেন। ছালাতের পর আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ খাবার আমাদের সম্মুখে হাযির করতেন। এ কারণেই জুম‘আর দিন আসলে আমরা খুব খুশী হ’তাম। আমরা সকালের আহার এবং বিশ্রাম গ্রহণ করতাম না জুম‘আর পর ব্যতীত (বুখারী হা/৫৪০৩)। তাছাড়া লোকদের খাওয়ানোর ব্যাপারে বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। ছাহাবীগণের সুযোগ হ’লেই তারা পরস্পরকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। এমনকি ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর বাড়িতে প্রায় খাবার পাঠিয়ে দিতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে অন্যকে খাদ্য খাওয়ায় (ছহীহাহ হা/৪৪)। অতএব সাধারণভাবে যেকোন দিন মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো জায়েয; কিন্তু এজন্য বিশেষ কোন উপলক্ষ নির্ধারণ করা বা দিনক্ষণকে গুরুত্বারোপ করা যাবে না।
প্রশ্ন (১১০) : যদি কেউ এক সাথে তিন তালাক দেয়, তবে কি তা কার্যকর হবে? এমতাবস্থায় স্ত্রী যদি অন্যত্র বিবাহ করে, তবে তা সঠিক হবে কি?
উত্তর : এক বৈঠকে তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হয় (মুসলিম হা/১৪৭২)। কাজেই কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। ইদ্দতের (তিন তোহরের) মধ্যে হ’লে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবে। ইদ্দত পার হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিবে (বাক্বারাহ ২/২৩২)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আবু রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি বললেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি জানি ওটা এক তালাকই হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও। অতঃপর তিনি সূরা তালাকের ১ম আয়াতটি পাঠ করে শুনান (আবুদাঊদ হা/২১৯৬, সনদ হাসান)। এক্ষণে উক্ত বিবাহ যদি ইদ্দতের মধ্যে হয়ে থাকে, তাহ’লে দ্বিতীয় বিবাহ বাতিল। আর ইদ্দতের পরে হয়ে থাকলে দ্বিতীয় বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে। অতএব দ্বিতীয় বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে তার ইদ্দতের উপর।
প্রশ্ন (১১১) : জানাযার ছালাতে অতিরিক্ত কাতার করানোতে কোন কল্যাণ আছে কি?
উত্তর : জানাযার ছালাতে প্রথম কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত কাতার করানোতে কল্যাণ রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন মুসলিমের মৃত্যু ঘটলে তিন সারি বিশিষ্ট জামা‘আত দ্বারা জানাযার ছালাত আদায় সম্পন্ন করা গেলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য (জান্নাত ও মাগফিরাত) ওয়াজিব করে দেন। এ কারণে মালেক বিন হুবায়রাহ জানাযার ছালাতে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা কম দেখলে এ হাদীছ অনুযায়ী তাদেরকে তিন সারিতে দাঁড় করাতেন (আবুদাউদ হা/৩১৬৬; মিশকাত হা/১৬৮৭; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১০০)। এজন্য বিদ্বানগণ জানাযার ছালাতের কাতারকে সর্বনিম্ন তিন কাতারে ভাগ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২১৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৩/১৮৭)।
প্রশ্ন (১১২) : আমার বাড়িতে মুরগীর ফার্ম রয়েছে। এতে কেউ কেউ বিরক্ত বোধ করে। আমার কি কোন গুনাহ হচ্ছে?
উত্তর : মুরগীর ফার্ম বাড়িতে রাখতে চাইলে ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্গন্ধ দূর করার চেষ্টা করবে, যাতে প্রতিবেশীদের কষ্ট না হয়। অন্যথায় লোকালয় থেকে দূরে ফার্ম স্থানান্তর করবে (আলী হায়দার আফেন্দী, দুরারুল হুক্কাম ৩/২১৬)। আর যদি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে কেউ এরূপ কাজ করে, তবে সে গুনাহগার হবে (হায়তামী, আয-যাওয়াজের আন ইকতিরাফিল কাবায়ের ১/৪২২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়’ (মুসলিম হা/৪৬; মিশকাত হা/৪৯৬৩)।
প্রশ্ন (১১৩) : কাউকে রক্ত দিতে গেলে মেডিকেল থেকে জুস, বিস্কুট দেওয়া হয়। আবার রক্ত গ্রহীতার আত্মীয়-স্বজনরা ডাব বা হোটেলে ভালো কিছু খাওয়ায়। এগুলো গ্রহণ করা কি রক্ত বিক্রয়ের শামিল?
উত্তর : রক্তদাতার শরীর ঠিক রাখার জন্য মেডিকেল থেকে বা রক্ত গ্রহীতার পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসাবে যা কিছু খাওয়ানো হয়, তা রক্ত বিক্রয়ের হুকুমে পড়বে না। কেননা এটা সামাজিক সৌজন্যবোধ মাত্র (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৮/১০০)। উল্লেখ্য যে, রক্ত ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ বলেন, তোমাদের উপর হারাম করা হ’ল মৃত, রক্ত ও শূকরের গোশত.. (মায়েদাহ ৫/০৩)। আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) রক্তের মূল্য গ্রহণ হারাম করেছেন (বুখারী হা/২২৩৮; মিশকাত হা/২৭৬৫)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, মহান আল্লাহ ইহূদীদের অভিশপ্ত করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছিলেন। কিন্তু তারা তা বিক্রি করে এর মূল্য ভক্ষণ করত। অথচ আল্লাহ যখন কোন জাতির কোন বস্ত্ত খাওয়া হারাম করেন, তখন তার মূল্যও হারাম করেন (আবুদাউদ হা/৩৪৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৫৯)।
প্রশ্ন (১১৪) : সন্তান ছোট থাকতেই ডিভোর্সের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে জনৈক পিতা কন্যাসন্তানের প্রতি কোন খোঁজ-খবর, ভরণ-পোষণ, দায়-দায়িত্ব পালন করেননি। এক্ষেত্রে সমস্ত দায়িত্ব মা ও মামারা পালন করে আসছেন। বিবাহের ক্ষেত্রে উক্ত মেয়ের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব কার? পিতার সাথে যোগাযোগ করে তার অনুমতি /সম্মতি প্রয়োজন নাকি মামারা অভিভাবক হ’তে পারবেন?
উত্তর : পিতার সাথে যোগাযোগ করে তার অনুমতি নিয়েই মেয়ের বিবাহ দিতে হবে। আর পিতা মেয়ের খরচ দেয়া বা দেখা-শোনা না করার জন্য গুনাহগার হবেন। উল্লেখ্য যে, স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে আদালত কর্তৃক কন্যা সন্তানের দায়িত্ব পেয়ে গেলেও বিবাহের ক্ষেত্রে পিতা বা তার অবর্তমানে পিতার নিকটতম আত্মীয়রা অভিভাবক হবে। যদি কাউকে না পাওয়া যায়, তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অভিভাবক হবেন। উল্লেখ্য যে, মা, মামা বা নানা তাদের মেয়ে, নাতনী বা ভাগ্নীর বিবাহে অভিভাবক হ’তে পারবে না (ইজলী, হাশিয়াতুল জামাল ৪/৫২২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৫/৪৬)।
প্রশ্ন (১১৫) : আল্লাহর সৃষ্টিগত ও পরিচালনাগত কাজে কি ফেরেশতাদের ভূমিকা আছে?
উত্তর : ফেরেশতাগণ আমাদের মতই সৃষ্ট জীব। আল্লাহর ইবাদতের জন্য তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য কিছু কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেগুলো তারা কোন প্রশ্ন ছাড়াই পালন করে থাকেন। তার মধ্যে পৃথিবীর পরিচালনার বিষয়ে কিছু কার্যক্রম রয়েছে। যেমন বৃষ্টি বর্ষণ করা, ঝড়-তুফান দিয়ে কাউকে ধ্বংস করে দেওয়া ইত্যাদি। আর এগুলো আল্লাহ তা‘আলার ‘কুন’ বা ‘হও’ আদেশের মত। আর এই নিয়মতান্ত্রিক শৃংখলার মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবী পরিচালনার জন্য ফেরেশতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর আগে বেড়ে কোন কথা বলে না। আর তারা তাঁর আদেশ মতই কাজ করে থাকে। তাদের আগে-পিছে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। আর তারা কোন সুফারিশ করে না, কেবল যার প্রতি তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট এবং তারা থাকে তাঁর ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত’ (আম্বিয়া ২১/২৭-২৮)। শপথ সেই ফেরেশতাগণের! যারা সকল কার্য নির্বাহ করে (নাযে‘আত ৭৯/৫)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘যার উপর নিযুক্ত রয়েছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ। যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয়, তারা তাই করে (তাহরীম ৬৬/৬)। কিছু ফেরেশতা আছেন যারা মানুষের হেফাযতে নিয়োজিত। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতাগণ রয়েছে। যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর হুকুমে’ (রা‘দ ১৩/১১)। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী। তিনি তোমাদের উপর হেফাযতকারী (ফেরেশতাদের) পাঠিয়ে থাকেন। পরিশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন আমাদের দূতগণ (ফেরেশতাগণ) তার আত্মা হরণ করে নেয় এবং এতে তারা আদৌ ত্রুটি করে না’ (আন‘আম ৬/৬১)। অতএব আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে ফেরেশতাগণ আল্লাহর সৃষ্ট জীব। যারা কেবল আল্লাহর হুকুমে আকাশ ও যমীনের বিভিন্ন কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন (১১৬) : পূর্ণ পর্দার সাথে ছালাত শুরু করার পর যদি কোন নারী দেখে যে তার চুলের কিছু অংশ বের হয়ে গেছে, তাহ’লে তাকে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : যদি অসাবধানতাবশত অল্প পরিমাণ চুল বের হয়ে যায়, তাহ’লে তার ছালাত বাতিল হবে না। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যদি কোন মহিলার অল্প পরিমাণে এবং অল্প সময়ের জন্য চুল বা দেহের কোন অংশ প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহ’লে তাকে ছালাত পুনরায় পড়তে হবে না। আর যদি বেশী পরিমাণে বের হয়ে যায়, তাহ’লে তাকে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/১২৩)। এ ব্যাপারে চার ইমামসহ বিদ্বানদের মাঝে ঐক্যমত রয়েছে (আল-মাজমূ‘ ৪/৭৬; মুগনী ২/২৮৭; আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৭৫)।
প্রশ্ন (১১৭) : ব্যাংকে ৫/১০ বছরের মেয়াদে যে টাকা রাখা হয় তার যাকাত দিতে হবে কি?
উত্তরঃ উক্ত টাকা নেছাব পরিমাণ হ’লে তার যাকাত দিতে হবে। কারণ এ টাকার উপর তার পূর্ণ মালিকানা রয়েছে (ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৫৭৩, সনদ ছহীহ)। তিনি ইচ্ছা করলে যখন-তখন টাকা উঠিয়ে খরচ করতে পারেন।
প্রশ্ন (১১৮) : আমার স্ত্রী ৭ মাসের গর্ভবতী। টেস্ট রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেছেন, বাচ্চার মাথার পিছনের খুলি তৈরী হয়নি। তাই বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। ইনজেকশনের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারী করে বাচ্চা ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় মায়ের ক্ষতি হ’তে পারে। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?
উত্তর : যদি বাচ্চা পেটে থাকার কারণে মায়ের জীবননাশের আশংকা থাকে, তবে ঔষধের মাধ্যমে বা যেকোন স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তবে বিষয়টি মানব হত্যার মত গুরুতর হওয়ায় একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে শারঈ বিধান অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২১/২৪৯-২৫১, ৪৪০, ৪৫২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২১/৪২৬-২৭)।
প্রশ্ন (১১৯) : গর্ভাবস্থায় ২ দিন ব্লিডিং হওয়ার পর আর কোন ব্লাড দেখা না গেলে, গোসল করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সময় রক্ত বের হ’লে তা ঋতু হিসাবে গণ্য হবে এবং উক্ত দিনগুলোতে ছালাত ও ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। আর যদি বাচ্চা প্রসবের কিছু পূর্ব থেকে রক্ত দেখা যায়, তাহ’লে তা নিফাসের রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। তখনও ছালাত ও ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। আর যদি হঠাৎ কয়েক ফোঁটা রক্ত নির্গত হয়, তাহ’লে তা কোন বিধানের মধ্যে গণ্য হবে না (মুগনী ১/২৬২; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ঊমদাহ ১/৫১৪-১৫; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৭০)।
প্রশ্ন (১২০) :‘পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে দুনিয়া জান্নাত এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হ’লে দুনিয়া তাদের জন্য জাহান্নাম’ এ হাদীছের সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬২; যঈফুত তারগীব‘ হা/১৪৭৬)। তবে উক্ত হাদীছের মর্ম ছহীহ। কারণ যার উপর পিতা-মাতা সন্তুষ্ট তার উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭; ছহীহাহ হা/৫১৬)। তিনি বলেন, ‘পিতার আনুগত্যে আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে এবং পিতার অবাধ্যতায় আল্লাহর অবাধ্যতা রয়েছে’ (ত্বাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত্ব হা/২২৫৫; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৩৯১; ছহীহুত তারগীব হা/২৫০২)। এই হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী বলেন, মাতাও এর মধ্যে শামিল। বরং মায়ের বিষয়টি আরো গুরুত্ববহ। যেমন অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫০৭)।
প্রশ্ন (১২১) : বাবরী চুল রাখার পর কষ্টকর মনে হওয়ায় তা কেটে ফেলা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। কারণ বাবরী রাখা বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি অভ্যাসগত সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) কখনো চুল বড় রাখতেন, আবার কোন কোন সময়ে ছোট করতেন। এতে কোন বাধা নেই। ছাহাবী ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) একদিন লম্বা চুল নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তার মাথায় গন্ধ অনুভব করে মাছি বসবে, মাছি বসবে বলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। ফলে তিনি ফিরে গিয়ে পরে চুল কেটে খাট করে এলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটি সুন্দর (هَذَا أَحْسَنُ) (আবুদাঊদ হা/৪১৯০; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৩৬, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) অধিকাংশ সময় চুল লম্বা রাখতেন (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১০/৩৬০; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২২/০২)। এমনকি কোন কোন সময় তার চুলে চারটি বেণী করা যেত (আবুদাউদ হা/৪১৯১; তিরমিযী হা/১৭৮১; মিশকাত হা/৪৪৪৬, সনদ ছহীহ)। বড় চুল তিন পদ্ধতিতে রাখা যায়। যথা (১) ওয়াফরা, যা কানের লতি পর্যন্ত (আবুদাঊদ হা/৪২০৬) (২) লিম্মা, যা ঘাড়ের মধ্যস্থল পর্যন্ত (মুসলিম হা/২৩৩৭) (৩) জুম্মা, যা ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত (নাসাঈ হা/৫০৬৬)।
প্রশ্ন (১২২) : যে সকল দেশে ইসলামী আইন পুরোপুরি নেই, সে সকল দেশের বিচারক হওয়া জায়েয কি?
উত্তর : বিচার ব্যবস্থা দুই প্রকারের। ১. শারঈ বিচার ব্যবস্থা ২. দুনিয়াবী বিচার ব্যবস্থা। আর দুনিয়াবী বিচার ব্যবস্থা আবার দুইভাগে বিভক্ত। ১. শরী‘আত সম্মত। ২. শরী‘আত বিরোধী। এক্ষণে কোন মুসলিম দেশে যদি শরী‘আত বিরোধী আইন না থাকে, তাহ’লে তাতে চাকুরী করায় দোষ নেই। তবে এমন বিচার ব্যবস্থায় নিযুক্ত হ’লে সর্বক্ষেত্রে শারঈ বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৭৯৩-৯৪; শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম, তাহকীমুল কাওয়ানীন ৭ পৃ.)।
প্রশ্ন (১২৩) : সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যায় এই কথার সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত বর্ণনা কোন হাদীছের নয়। বরং জনৈক মুফাসসির বর্ণনা করেছেন। তিনি মনে করেন যে, বিসমিল্লাহ-সহ সূরা ফাতিহায় আটটি আয়াত রয়েছে এবং প্রত্যেকটি আয়াত পাঠে জান্নাতের এক একটি দরজা খুলে যাবে (আবু ইউসুফ যায়েদ, ফায়যুর রহমান তাফসীরু জাওয়াহিরিল কুরআন ১/৩২)। ইমাম গাযালী (রহঃ)ও তাঁর রচিত ‘জাওয়াহিরুল কুরআন’ গ্রন্থে উক্ত আলোচনা পেশ করেছেন (জাওয়াহিরুল কুরআন ৬৪-৬৭)। কিন্তু এর পক্ষে কোন হাদীছ ভিত্তিক দলীল নেই।
প্রশ্ন (১২৪) : আমার পিতা-মাতা নানাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছেন। নানা বিয়েটা পরে মেনে নিয়েছিল। তাদের নতুন করে আর বিয়ে দেননি। এখন তাদের বিয়েটা কি বাতিল? আমরা সন্তানরা কি অবৈধ। আমি একজন মুসলিম মেয়ে, আমি অবৈধ হ’লে আমার বিয়ের অলী কে হবে? আমার মা কি অলী হ’তে পারবে? এক বছর পূর্বে আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে আমার অলী ছিল আমার পিতা। এখন আমার বিয়েটাও কি বাতিল? এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?
উত্তর : পিতা-মাতার বিয়েটা সঠিক পদ্ধতিতে না হ’লেও তা শিবহে নিকাহ বা সন্দেহপূর্ণ বিবাহ হয়েছে। আর উক্ত বিবাহ ক্বাযীর মাধ্যমে হওয়ায় এবং পরবর্তীতে পিতা মেনে নেওয়ায় তাদের সন্তানেরা জারজ হিসাবে গণ্য হবে না। আয়েশা (রাঃ) তার ভাই আব্দুর রহমান শামে থাকাকালীন তার ভাতিজী হাফছার বিয়ে মুনযির বিন যুবায়েরের সাথে দেন। আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে আসলে আয়েশার প্রতি রেগে গিয়ে বলেন, আমার সাথে এমন আচরণ করা হ’ল? আয়েশা (রাঃ) মুনযিরের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন, আব্দুর রহমান যা করবে তাই হবে। আব্দুর রহমান সে বিবাহে স্বীকৃতি দেন এবং হাফছাহ তার সাথেই সংসার করেন (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৫৬৯, ১৫৬৪ৎ বায়হাক্বী হা/১৩৬৫৩; শারহু মা‘আনিল আছার হা/৪২৫৫, সনদ ছহীহ)। দ্বিতীয়তঃ প্রশ্নকারীর বিবাহে তার পিতা অলী বা অভিভাবক হওয়ায় বিবাহ শরী‘আত সম্মত হয়েছে (শীরাজী, আল-মুহাযযাব ২/৪২৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ১৬/১৪৬; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৮)। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) অলী ছাড়া বিবাহ বন্ধন বাতিল বলে গণ্য করেছেন (আবুদাউদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)। এরূপ ক্ষেত্রে অলী বা তার প্রতিনিধি বা বর্তমান অভিভাবকের সম্মতিতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় বিবাহের ঈজাব-কবুল করাতে হয় এবং মোহর নির্ধারণ করতে হয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৯/৩৪৬; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৪১/২৪৮)।
প্রশ্ন (১২৫) : অবৈধ মেলামেশা করে এক মেয়ে গর্ভবতী হয়। কিছু দিনের মধ্যে তা প্রকাশ পেলে সমাজের লোক এর সমাধান হিসাবে ঐ দু’জনের বিয়ে দেয়। এই সমাধান কি শরী‘আতসম্মত? এরকম পরিস্থিতির সঠিক সমাধান কি?
উত্তর : যেনা-ব্যভিচার হদযোগ্য কবীরা গুনাহ। এথেকে বেঁচে থাকা মুসলমানের জন্য আবশ্যক। তাদের হদ কায়েম করবে সরকার ও প্রশাসন। তারা সে দায়িত্ব পালন না করলে তারা দায়ী হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই বিবাহ জায়েয নয়। জমহূর বিদ্বান এর বিরোধিতা করেছেন। কেননা গর্ভবতী নারীর সাথে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বৈধ নয় এবং যেনার সন্তান হওয়ায় উক্ত সন্তানও বৈধ নয় (ওছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/৩৩০)। তবে বর্ণিত পরিস্থিতিতে সামাজিক বিশৃংখলা রোধে সমাজ প্রধানদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত বিবাহ বৈধ হয়েছে। এমতাবস্থায় বিবাহের পূর্বে অবশ্যই উভয়কে তওবা করাতে হবে এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মতে সন্তানও পিতা-মাতার দিকে সম্পৃক্ত হবে। কারণ এই সন্তানের দাবীদার অন্য কেউ নয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৯/১২২; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৫/৩৮১-৮২)। এরূপ পরিস্থিতিতে বিবাহ বৈধ হওয়ার পক্ষে কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈ থেকে আছার বর্ণিত হয়েছে (বায়হাক্বী হা/২১২৬৩; মুওয়াত্ত্বা হা/২২, ২৮৮৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৭৪১৭; মাওয়ার্দী, আল-হাবিল কাবীর ৯/১৮৯)। ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) প্রমুখও উক্ত অভিমত সমর্থন করেছেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১০; যাদুল মা‘আদ ৫/৩৮১-৮২; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/১২৭)। আল্লাহ অধিক অবগত।
প্রশ্ন (১২৬) : আমার বয়স ২০ বছর। পিতা আমাকে যেখানে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন তারা পিতার শর্ত মোতাবেক আমাকে একটি সরকারী চাকুরীর ব্যবস্থা করবে। আমি এরূপ শর্তসাপেক্ষে বিবাহ করতে রাযী নই। যদিও পিতা আমাকে চাপ দিচ্ছেন। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : লেনদেনের কোন শর্তসাপেক্ষে বিবাহ করা যাবে না। কেননা তা যৌতুক, যা ইসলামে হারাম (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭৩৮৪-৮৫; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ৯/৫০)। তবে বিবাহের পর কোন শর্ত ছাড়া শ্বশুর বৈধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈধ চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিলে তাতে কোন দোষ নেই (বুখারী হা/১৪৩২; মিশকাত হা/৪৯৫৬)। উল্লেখ্য যে, সর্বাবস্থায় পিতা-মাতাকে খুশি রেখেই বিবাহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা আল্লাহর অবাধ্যতার কোন আদেশ দিলে তা পালন করা যাবে না (লোকমান ৩১/৩১; বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৬৩৫)।
প্রশ্ন (১২৭) : আমার ছেলে হয়েছে। কিন্তু ৭ দিনে আক্বীক্বা করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষণে আমি পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে আক্বীক্বা দিতে পারব কি?
উত্তর : সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করা সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, নাম রাখতে হয় ও তার মাথা মুন্ডন করতে হয়’ (আবুদাঊদ হা/২৮৩৮ প্রভৃতি; ইরওয়া হা/১১৬৫)। অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে তার নাম রাখতে, মাথা মুন্ডন করতে এবং আক্বীক্বা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন’ (তিরমিযী হা/২৮৩২)। তবে যরূরী কারণে সপ্তম দিনের পরে যেকোন দিন আক্বীক্বা করা যেতে পারে (তুহফাতুল মাওলূদ ১/৬৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/৪৩৯; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/২১৫)। শাফেঈ বিদ্বানগণের মতে সাত দিনে আক্বীক্বার বিষয়টি সীমা নির্দেশ মূলক নয় বরং এখতিয়ার মূলক। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, সাত দিনে আক্বীক্বার অর্থ হ’ল, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ সাত দিনের পরে আক্বীক্বা করবে না (নায়লুল আওত্বার ৫/১৫৮ পৃ.; ছহীহাহ হা/২৭২৬)।
প্রশ্ন (১২৮) : মেয়ের বিবাহে যদি তার পিতা উপস্থিত থাকে এবং একজন গায়ের মাহরামকে বিবাহের উকীল হিসাবে নিযুক্ত করে, তবে উক্ত বিবাহ বাতিল হিসাবে গণ্য হবে কি?
উত্তর : উক্ত বিবাহ বিশুদ্ধ হবে। কারণ বিদ্বানগণ বলেন, পিতা তার উপযুক্ত ভাই বা আত্মীয়-স্বজন বা কোন পরহেযগার ব্যক্তিকে বিবাহের অলীর দায়িত্ব দিতে পারে (হাত্তাব, মাওয়াহিবুল জলীল ৩/৪১৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৪১/২৮৯)। তবে বর্তমানে বিবাহে উকীল বাবা নিযুক্ত করা এবং তার সাথে বিশেষ সম্পর্ক রাখার যে প্রচলন রয়েছে তা বৈধ নয়।
প্রশ্ন (১২৯) : পুরুষরা নারীদের মাঝে অফলাইন বা অনলাইনে দাওয়াতী কাজ করতে পারবে কি? এক্ষেত্রে কি কি আদব রক্ষা করা যরূরী?
উত্তর : পুরুষরা নারীদের মাঝে অফলাইন বা অনলাইনে দাওয়াতী কাজ করতে পারে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কেবলমাত্র পুরুষেরাই আপনার হাদীছ শোনার সৌভাগ্য লাভ করছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত করুন। আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব, আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দিবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও (বুখারী হা/৭৩১০; মিশকাত হা/১৭৫৩)। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই নারী-পুরুষদের জন্য বর্ণিত শারঈ বিধান মেনে চলতে হবে। যেমন নির্জনে কথা বলবে না, কমনীয় কন্ঠে কথা বলবে না এবং শারঈ পর্দার বিধান মেনে চলবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২৪০; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৮/৩৩৬)। উল্লেখ্য যে, দাওয়াতী কাজের সূত্র ধরে যেন কোনরূপ অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে না ওঠে, সে ব্যাপারে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর ফিৎনার আশংকা থাকলে বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৩০) : কাপড় কাচার সময় পরনের কাপড়ে সাবানের ফেনা বা কাপড়ের ময়লা পানির ছিটা লাগলে তা পরে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। সাবানের ফেনা বা কাপড়ের সাধারণ ময়লা অপবিত্র নয়। অতএব তা কাপড়ে বা শরীরে লেগে গেলে শরীর অপবিত্র হয় না বা ওযূ ভঙ্গ হয় না। উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মায়মূনাহ (রাঃ) একই পাত্রে গোসল করেছেন, তা এমন পাত্র ছিল যাতে আটার খামীরের চিহ্ন ছিল (নাসাঈ হা/২৪০; মিশকাত হা/৪৮৫; ইরওয়া হা/২৭)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) মাইয়েতকে বরই পাতা এবং কর্ফুর মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করাতে বলেছেন। যা প্রমাণ করে যে, পানির ফেনা বা সাধারণ ময়লা দ্বারা মিশ্রিত হয়ে গেলে সে পানি নাপাক হয়ে যায় না (আল-‘ইনাইয়া শারহুল হেদায়াহ ১/৭১; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ১/১৯৩; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২৫)।
প্রশ্ন (১৩১) : ‘হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাববুল ‘আরশিল আযীম’- দো‘আটি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ৭ বার করে পাঠ করলে সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবে- মর্মে বর্ণিত হাদীছটি আমলযোগ্য কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে হাদীছটি রাসূল (ছাঃ) থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি (যঈফাহ হা/৫২৮৬)। তবে সূরা তওবার শেষ আয়াত ও গুরুত্বপূর্ণ দো‘আ হওয়ায় তা সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে পাঠ করা যেতে পারে (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭,৩৪২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৬৫)। উল্লেখ্য যে, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ) এই দো‘আটি পড়তেন-اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ- উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মে ওয়াল হাযানে ওয়াল ‘আজঝে ওয়াল কাসালে ওয়াল জুবনে ওয়াল বুখলে ওয়া যালা‘ইদ দায়নে ওয়া গালাবাতির রিজা-লে। অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা হ’তে, অক্ষমতা ও অলসতা হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৪৫৮)।
প্রশ্ন (১৩২) : গোসলের ক্ষেত্রে আগে ওযূ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে হবে, না পা ধোয়া বাদ রেখে গোসল শেষে পা ধুতে হবে?
উত্তর : এক্ষেত্রে দু’টি পদ্ধতিই শরী‘আত সম্মত। কেউ চাইলে পুরো ওযূ করে গোসল করবে (বুখারী হা/২৭২; নাসাঈ হা/৪২০)। আবার কেউ চাইলে ওযূর অন্যান্য অঙ্গ ধৈত করে গোসল করে নিবে এবং অবশেষে পা ধৌত করবে (বুখারী হা/২৪৯; মুসলিম হা/৩১৭)। এক্ষেত্রে যদি কোন ব্যক্তি কাদা-মাটির উপর গোসল করে তাহ’লে শেষে পা ধৌত করবে। আর পাকা স্থানে গোসল করলে ওযূর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তারপর গোসল করে নিবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২১৩)।
প্রশ্ন (১৩৩) : শরী‘আতে ময়না তদন্তের বিধান কি? বিশেষত যরূরী প্রয়োজনে করতে হ’লে মৃতের আত্মীয়-স্বজন গোনাহগার হবে কি?
উত্তর : একান্ত বাধ্যগত না হ’লে প্রচলিত ময়না তদন্ত জায়েয নয়। কেননা মুসলিম মাইয়েতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অত্যাবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা জীবিত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গার ন্যায় (আবুদাউদ হা/৩২০৭; মিশকাত হা/১৭১৪)। জাবের (রাঃ) বলেন, মাইয়েতের কবর খোঁড়ার সময় বের হওয়া একটি হাড্ডি ভেঙ্গে অন্যত্র ফেলে দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হাড্ডিটি ভেঙ্গো না। কেননা মৃত ব্যক্তির হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিত অবস্থায় ভাঙ্গার ন্যায়। তোমরা হাড়টিকে কবরের একপাশে চাপা দাও’ (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ হা/৩২০৭ অনুচ্ছেদ ৬৩)। ত্বীবী বলেন, উক্ত হাদীছ দ্বারা জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় মানুষকে সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে (মির‘আত ৫/৪৪৯)। জনৈক ব্যক্তি কবরে হেলান দিয়ে বসে থাকলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি কবর থেকে নেমে পড় এবং কবরবাসীকে কষ্ট দিয়ো না (হাকেম হা/৬৫০২; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫৬৯৬)। অতএব আদালতের যরূরী নির্দেশ ব্যতীত মৃতদেহ কাটাছেঁড়া বা পোস্ট মর্টেম করা অন্যায়। আজকাল পোস্ট মর্টেমের বিষয়টি অনেকটা সস্তা হয়ে গেছে, যা থেকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (১৩৪) : যমযমের পানি দাঁড়িয়ে এবং ক্বিবলামুখী হয়ে পান করা কি সুন্নাত?
উত্তর : যমযমের পানিসহ যেকোন পানাহার বসে করাই সুন্নাত। হাদীছে দাঁড়িয়ে পান করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে (মুসলিম হা/২০২৪; মিশকাত হা/৪২৬৬, ৬৭)। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, দাঁড়িয়ে পানকারী ব্যক্তি যদি জানতো এতে কি ক্ষতি রয়েছে, তাহ’লে সে তা বমি করে দিত’ (আহমাদ হা/৭৭৯৫-৯৬; ছহীহাহ হা/১৭৬)। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের সময় (ভিড়ের মধ্যে) যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪২৬৮) এবং আলী (রাঃ) কূফার মসজিদের আঙিনায় ওযূ করার পর অতিরিক্ত পানি দাঁড়িয়ে পান করেন ও বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখেছি (বুখারী হা/৫৬১৬; মিশকাত হা/৪২৬৯)। উক্ত হাদীছগুলি সম্পর্কে হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, যমযমের পানি দাঁড়িয়ে বা বসে দু’ভাবেই পান করা যায় (ফাৎহুল বারী হা/১৬৩৭-এর আলোচনা)। প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পান করা যে জায়েয, সেটা বুঝানোর জন্যই রাসূল (ছাঃ) এরূপ করেছেন (ফাৎহুল বারী হা/২৬১৫-১৬-এর আলোচনা)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, হজ্জের সময় ভিড়ের কারণে বসার সুযোগ না থাকায় রাসূল (ছাঃ) দাঁড়িয়ে পান করেছিলেন এবং এটাই ছিল তাঁর শেষ আমল (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২১০)। যমযম বা যেকোন পানি করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়ার ব্যাপারে একটি যঈফ বর্ণনার ভিত্তিতে কিছু ফক্বীহ এটি মুস্তাহাব বলেছেন (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৭/৩৪৮)। ছহীহ হাদীছের মোকাবেলায় যা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (১৩৫) : বিবাহের সময় মোহর নির্ধারণ না করা হ’লে বিবাহের পর করণীয় কি?
উত্তর : মোহর নির্ধারণ ব্যতীতও বিবাহ জায়েয (বাক্বারাহ ২/২৩৬; আবুদাউদ হা/২১১৬; মিশকাত হা/৩২০৭)। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে মোহর নির্ধারণ করবে। যদি উভয়ের মাঝে সমঝোতা না হয় তাহ’লে মেয়ের মায়ের সমপরিমাণ মোহর নির্ধারণ করবে বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সমাধান করে নিবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/১৮২; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৩০৫)।
প্রশ্ন (১৩৬) : জনৈক ইমাম বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন নিজ এলাকার সকল মানুষকে ইমাম ছাহেবের সাথে আল্লাহর সামনে হাযির হ’তে হবে। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : মসজিদের ইমাম ছাহেব নয় বরং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ নবী-রাসূলগণের সাথে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। আল্লাহ বলেন, (স্মরণ কর) যেদিন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমামসহ আহবান করব। অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্যতম যুলুম করা হবে না (ইসরা ১৭/৭১)। আয়াতে উল্লিখিত ইমাম শব্দের তাফসীরে ক্বাতাদা ও মুজাহিদ বলেন, ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য নিজ নিজ নবী-রাসূল। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ আমলনামা। ইবনু কাছীর এটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ঐ, তাফসীর)।
প্রশ্ন (১৩৭) : এক দম্পতির উভয় পরিবারের সম্মতিতে কেবল বিবাহ পড়ানো হয়েছে। অলীমা বা আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েকে উঠিয়ে নেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী নির্জনবাস করতে পারবে কি?
উত্তর : শারঈ পদ্ধতিতে বিবাহের ঈজাব ও কবুল হয়ে থাকলে নির্জনবাস করায় কোন বাধা নেই। তবে নিজ বাড়িতে এনে বাসর রাত উদযাপন করে নির্জনবাস করাই সামাজিক দৃষ্টিতে উত্তম (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৩৯২)। উল্লেখ্য যে, দ্রুত অলীমা করা সুন্নাত। কিন্তু বাড়ীতে উঠিয়ে নেওয়ার নামে অহেতুক দেরী করা অবশ্যই বর্জনীয়।
প্রশ্ন (১৩৮) : আমার দেড় কোটি টাকা ঋণ আছে। উক্ত টাকা দিয়ে বাড়ি বানানো হয়েছে। তা থেকে আমি ভাড়া পাই। আমি চাকুরীজীবী হিসাবে বেতন পাই। এক্ষণে আমাকে কি ঋণকৃত টাকার যাকাত দিতে হবে? নাকি আমার বেতন থেকে প্রাপ্ত টাকার যাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে?
উত্তর : বসবাসের জন্য বা ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত বাড়ির জন্য ব্যয়কৃত অর্থের যাকাত দিতে হবে না। তবে অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও বাড়ি ভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ নিছাব পরিমাণ হ’লে এবং এক বছর থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে (বুখারী হা/১৪৬৪; মুসলিম হা/৯৮২; বিন বায, মাজমুঊল ফাতাওয়া ১৪/১৬৭; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১০/২)।
প্রশ্ন (১৩৯) : মলদ্বার দিয়ে সাপোজিটরী ব্যবহার করলে ওযূ ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়। ১. নিজহাতে ব্যবহারকালে মলদ্বারের অভ্যন্তরে হাত প্রবেশ করানো যাবে না। নতুবা ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা যে ব্যক্তি লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে তার ওযূ নষ্ট হবে (নাসাঈ হা/৪৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৫৫; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১৩৩; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২০৬)। ২. সাপোজিটরী প্রবেশ করানোর পর তা পুনরায় বাইরে বের হয়ে গেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১৯২; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৯৩)।
প্রশ্ন (১৪০) : জনৈক আলেম বলেন, সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে কিছু নারী। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন। কারণ শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সর্বপ্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার অনুসারীদের সংখ্যা হবে সর্বাপেক্ষা বেশী এবং আমিই প্রথম জান্নাতের দরজা খুলব (মুসলিম হা/১৯৬; মিশকাত হা/৫৭৪২)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দরজা খোলার জন্য বলব। তখন তার পাহারাদার বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মাদ। তখন পাহারাদার বলবে আপনার সম্পর্কে আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি’ (মুসলিম হা/১৯৭; মিশকাত হা/৫৭৪৩)। তিনি আরো বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমিই সর্বপ্রথম শাফা‘আত করবো এবং আমার শাফা‘আতই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে, তাতে কোন অহংকার নেই। আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের কড়া নাড়ব এবং এতেও কোন অহংকার নেই। আর আমার জন্যই আল্লাহ সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলে দেবেন এবং আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (আহমাদ হা/১২৪৯১; ছহীহাহ হা/১৫৭১)।
প্রশ্ন (১৪১) : স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে মৃত স্ত্রী বা স্বামীকে গোসল দিতে পারবে কি?
উত্তর : স্বামী তার মৃত স্ত্রীকে বা স্ত্রী তার মৃত স্বামীকে গোসল দিতে পারেন যদি তাদের ধৈর্য থাকে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/১১৪ ও ১২২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১০৯)। রাসূল (ছাঃ) স্বীয় স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলেন, ‘যদি আমার পূর্বে তুমি মারা যাও, তাহ’লে আমি তোমাকে গোসল দেব, কাফন পরাব, জানাযা পড়াব ও দাফন করব’ (আহমাদ হা/২৫৯৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫; মিশকাত হা/৫৯৭১)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম যা পরে বুঝতে পেরেছি তাহ’লে তাঁর (রাসূলের) স্ত্রীরাই তাঁর গোসল দিত’ (আবুদাউদ হা/৩১৪১; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/৪৯)। ইসলামের প্রথম খলীফা আবুবকর (রাঃ)-কে তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) এবং ফাতেমা (রাঃ)-কে তার স্বামী আলী (রাঃ) গোসল দিয়েছিলেন’ (বায়াহাক্বী ৩/৩৯৭, দারাকুৎনী হা/১৮৩৩, সনদ হাসান। দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ১২০-২১)। উল্লেখ্য যে, স্বামী বা স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তারা একে অপরকে দেখতে পারবে না, গোসল দিতে পারবে না ইত্যাদি কথাগুলি মনগড়া মাত্র।
প্রশ্ন (১৪২) : আমি একটি দোকান ভাড়া নেওয়ার সময় জামানত হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছি। যেখান থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা ভাড়া হিসাবে কাটা হয়। এক্ষণে যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে উক্ত অর্থ যোগ করে যাকাত বের করতে হবে কি?
উত্তর : যামানত হিসাবে দেওয়া টাকার মালিকানা এখন যামানত গ্রহীতার। সুতরাং যাকাত তিনিই প্রদান করবেন। পরবর্তীতে যামানতকারী উক্ত টাকা ফেরৎ পাওয়ার পর তাকে নির্ধারিত নেছাব অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/২৪)।
প্রশ্ন (১৪৩) : আমাদের এলাকায় হিন্দুদের সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন আছে। তারা এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদে অনুদান দিতে চাচ্ছে। এক্ষণে হিন্দুদের অনুদান গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
Insert Content Here
প্রশ্ন (১৪৪) : যাকাতের পুরো অংশ কোন সমাজকল্যাণ- মূলক সংস্থা বা সংগঠনে বিতরণ করার জন্য জমা করা যাবে কি?
উত্তর : নির্ভরযোগ্য যে কোন সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে যাকাত বিতরণের জন্য জমা দেওয়া যেতে পারে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/১৬৫; মারদাভী, আল ইনছাফ ৩/১৯৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৫৪)।
প্রশ্ন (১৪৫) : শূকরের গোবর সার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কি? এ থেকে উৎপাদিত শাক-সবজি খাওয়ার হুকুম জানতে চাই।
উত্তর : নাপাক প্রাণীর গোবর যমীনে ফেলে রাখলে তার বিধান পরিবর্তন হয়ে যায়। সে হিসাবে শূকরের গোবর ব্যবহারে দোষ নেই। তবে অনেক বিদ্বান তা অপসন্দ করেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৪৪৮; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৫/৬৬৪)।
প্রশ্ন (১৪৬) : প্রতিবেশী একজন অভাবী। দামী জমি-জমা আছে। কিন্তু দুনিয়াবী কারণে তা বিক্রি করতে পারে না। তাদেরকে যাকাতের অংশ দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : প্রকৃত অভাবী হ’লে এবং জায়গা-জমি বিক্রয়ে সক্ষম না হ’লে, তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। নদী পারাপারের নৌকার মালিককে আল্লাহ ‘মিসকীন’ বলেছেন (কাহফ ১৮/৭৯)। অতএব অভাবী প্রতিবেশীকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/১৭৪-৭৬)। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাকাতগ্রহীতা যেন স্বভাবে মিসকীন না হয়, আর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মিসকীন হিসাবে যাহির করে।
প্রশ্ন (১৪৭) : অমুসলিম কেউ মুসলিম হ’তে চাইলে একাকী কালেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করতে পারবে কি?
উত্তর : ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রাথমিক শর্ত তিনটি। (১) ইসলাম গ্রহণের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা (নিসা ১২৫; লোকমান ২২), (২) জেনে-বুঝে কালেমায়ে শাহাদত তথা-‘আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু’ পাঠ করা (হুজুরাত ৪৯/১৫; মুসলিম হা/১৭৬৪, ৮৬৮; মিশকাত হা/৩৯৬৪, ৫৮৬০)। (৩) ইসলামের বিধি-বিধানসমূহ পালন করা (বুখারী হা/২৫; মুসলিম হা/২২)। এক্ষণে ইসলাম গ্রহণকালে সাক্ষী রাখা ও তা সামাজিকভাবে প্রকাশ করা মৌলিক শর্ত নয়; বরং মুস্তাহাব। বিশেষত আইনগতভাবে কার্যকর করার জন্য কোন মুত্তাক্বী আলেমের নিকট ইসলাম কবুল করা ও আদালতে এফিডেভিট করা উত্তম। তবে আত্মরক্ষা বা শারঈ ওযর থাকলে প্রয়োজনে ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখা দোষণীয় নয়। যেমন বাদশাহ নাজাশীর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন ছিল। এরূপ ক্ষেত্রে একাকী কালেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণে বাধা নেই।
প্রশ্ন (১৪৮) : আমার আত্মীয় একজন খৃষ্টান নারীকে বিবাহ করেছে। যে নিজেই বলেছে যে, সে কেবল বিবাহের জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছে। এরূপ নারীর সাথে সংসার করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : কোন অমুসলিম নারী ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে বিবাহ করা এবং তার সাথে সংসার করা জায়েয, যদিও সে বিবাহের জন্য ইসলাম গ্রহণ করে। কারণ এখানে মৌখিক স্বীকৃতিই গ্রহণীয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে’ (বাক্বারাহ ২/২২১)।
প্রশ্ন (১৪৯) : হায়েয শেষ হওয়ার আলামত বুঝার পর গোসল না করে স্বামীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে কি?
উত্তর : স্ত্রীর হায়েয বন্ধ হওয়ার পরে গোসল বা তায়াম্মুম না করা পর্যন্ত তার সাথে দৈহিক মিলন করা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের নিকটবর্তী হয়ো না পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত। অতঃপর যখন তারা ভালভাবে পবিত্র হবে, তখন আল্লাহর নির্দেশ মতে তোমরা তাদের নিকট গমন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২)। আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রী মিলনের জন্য দু’টি শর্তারোপ করেছেন; (১) হায়েয বা নিফাসের রক্ত বন্ধ হওয়া (২) জানাবাতের গোসল করা (তাফসীরে তাবারী ৪/৩৮৪; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৩৭০; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২৪৫)।
প্রশ্ন (১৫০) : একটি বিশেষ খাবারকে হালীম নামকরণ করা হয়ে থাকে। কোন কোন বক্তা আল্লাহর নাম হিসাবে এই শব্দটি কোন খাবারের নাম হিসাবে ব্যবহার করাকে নিষিদ্ধ মনে করেন। এটি কি সঠিক?
উত্তর : হালীম ডাল ও গোশতের মিস্রণে একটি জনপ্রিয় খাবার, যাকে আরবীতে হারিস বলা হয়ে থাকে। কালক্রমে উপমহাদেশে এটি হালীম নামে পরিচিতি লাভ করেছে। হালীম শব্দটি খাদ্যের নাম হিসাবে ব্যবহারে কোন দোষ নেই। কেননা হালীম শব্দটি আল্লাহর নাম ব্যতীত সৃষ্টির নাম হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন আল্লাহ নিজেই ইব্রাহীম ও শু‘আইব (আঃ)-কে ‘হালীম’ বা ধৈর্যশীল বলেছেন (তওবাহ ৯/১১৪; হূদ ১১/৭৫, ৮৭)।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button