প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৬

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৬

প্রশ্ন (২৫১) : আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলে। বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। বাকি তিন ছেলে-মেয়ের লেখা পড়াতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। আমি আমার প্রতিবন্ধী মেয়েকে আমার সম্পত্তি থেকে অতিরিক্ত কিছু সম্পদ আগাম দিতে পারব কি?
উত্তর : পারবে। তবে সন্তানদের কিছু হেবা বা দান করতে চাইলে দু’টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। (১) শারঈ উত্তরাধিকার আইন অনুপাতে হেবা বা দান করতে হবে। (২) অন্য সন্তানদের সম্মতি সাপেক্ষে হেবা বা দান করতে হবে। এর বাইরে তাদের প্রতি খরচের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে তারতম্য হ’তে পারে। কিন্তু হেবা বা দান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সমতার বিধান পালন করতে হবে (বুখারী হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৩০১৯; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৮/১৮৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৩৭৭)।
প্রশ্ন (২৫২) : স্ত্রীর পরিবার বা তার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি স্বামীর কি দায়িত্ব রয়েছে?
উত্তর : স্ত্রীর পরিবারের প্রতি স্বামী সাধ্যমত সদাচরণ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে তোমরা নিশ্চয় মিসর জয় করবে। তা এমন একটি দেশ যেখানে কীরাত (আঞ্চলিক মুদ্রার নাম) ব্যবহার হয়ে থাকে। তোমরা যখন তা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা তাদের সাথে সৌহার্দ্য ও আত্মীয়তার অথবা বলেছেন, সৌহার্দ্য ও শ্বশুরাত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে’ (মুসলিম হা/২৫৪৩; মিশকাত হা/৫৯১৬)। অত্র হাদীছে শ্বশুর পক্ষের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে রক্তসম্পর্কীয়দের ন্যায় তাদের প্রতি কোন হক বা অধিকার নির্ধারিত নেই (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২৪/০২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব)।
প্রশ্ন (২৫৩) : আমি বেকার হওয়ায় শ্বশুর আমার স্ত্রীকে তার বাসায় নিয়ে গেছে। স্ত্রী আমার কাছে আসতে চায়। কিন্তু শ্বশুর পরিবার আসতে দিতে রাযী নয়। তারা মেয়েকে বলেছে, স্বামীর কাছে ফিরে যেতে হ’লে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর করণীয় কি?
উত্তর : কোন মেয়ের বিবাহ হয়ে গেলে সে স্বামীর অধীনে চলে যায়। সেজন্য স্ত্রী চাইলে পরিবারের অসম্মতিতেও স্বামীর নিকট চলে যেতে পারে। তবে পিতা-মাতাকে বুঝানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, বিবাহিতা নারীর স্বামীই আনুগত্যের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার উপর অগ্রগণ্য। তার জন্য স্বামীর আনুগত্য করা আবশ্যক (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬১)। অন্যত্র তিনি বলেন, পিতা-মাতা বা অন্য কেউ আদেশ দিলেও স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাইরে বের হ’তে পারবে না। এ বিষয়ে চার ইমামের ঐক্যমত রয়েছে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬৩)। স্বামীর আনুগত্যের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন (তিরমিযী হা/৩৫৯; মিশকাত হা/৩২৫৫)।
প্রশ্ন (২৫৪) : কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে বৈধ কর্মকান্ডের সাথে সাথে নাচ-গানের মত শরী‘আতবিরোধী কাজও হবে। জেনে-শুনে এরূপ অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা দেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : জেনে-শুনে অন্যায় কাজে দৈহিক বা আর্থিক কোনভাবে সহযোগিতা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না (মায়েদাহ ৫/২)। তবে বাধ্যগত কারণে অন্তরে ঘৃণা রেখে চাঁদা প্রদান করলে গোনাহ হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ আমার নিকট থেকে প্রয়োজন পূর্ণ করে যায়। অথচ তা গোপন করে (অর্থাৎ সে হারাম কাজে লিপ্ত হয়)। অথচ এর বদলা হ’ল জাহান্নাম। ওমর (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আপনি তাদের দেন কেন? তিনি বললেন, তারা না পেলে যাবে না (এজন্য দেই)। আর আল্লাহ আমার জন্য কৃপণতা পসন্দ করেন না’ (আহমাদ হা/১১১৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/৮৪৪)।
প্রশ্ন (২৫৫) : তিন ব্যক্তির দো‘আ কবুল করা হয় না। (১) যে ব্যক্তির দুশ্চরিত্রা স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না। (২) যে ব্যক্তির অন্য লোকের কাছে পাওনা আছে, কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখেনি। (৩) যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয় অথচ আল্লাহ বলেন, তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের সম্পদ দিয়ো না’ হাদীছটির বিশুদ্ধতা এবং ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ ছহীহ (ছহীহাহ হা/১৮০৫)। হাদীছের ব্যাখ্যাও স্পষ্ট। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক দো‘আ করবে, কিন্তু দো‘আ কবুল হবে না। কারণ তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অমান্য করেছে। উক্ত তিন শ্রেণী হ’ল, (১) যার চরিত্রহীন স্ত্রী রয়েছে। যার দ্বারা সে অনবরত কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু সুযোগ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তার কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্ত করছে না। এ সময় দো‘আ করলে তার দো‘আ কবূল হবে না। (২) যার কোন ব্যক্তির নিকট পাওনা রয়েছে কিন্তু সাক্ষী রাখেনি। ফলে সে বর্তমানে অস্বীকার করছে আর এতে সে কষ্ট পাচ্ছে। নিম্নে বর্ণিত আল্লাহর বাণী অমান্য করার কারণে তার দো‘আ কবূল হবে না। আল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের মধ্যেকার দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে (বাক্বারাহ ২/২৮২)। (৩) যে ব্যক্তি কোন নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয়। আর সে উক্ত সম্পদ অকাতরে অপচয় করে বিনষ্ট করে। ফলে সে নিজেই অপচয়কারী হিসাবে গণ্য হয়। ফলে সে দো‘আ করলে দো‘আ কবূল হবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের সম্পদ দিও না (নিসা ৪/৫; ছান‘আনী, আত-তানভীর ৫/২৪১; ‘উমদাতুল ক্বারী ১২/২৪৬)।
প্রশ্ন (২৫৬) : আমি কয়েক মাস আগে কিছু টাকা দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় করি। ক্রয় করার সময় আমি জানতাম যে, এটা হারাম। কিন্তু এখন আমি এ হারাম থেকে ফিরে আসতে চাচ্ছি। এক্ষণে আমি ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো অন্য কারো নিকটে বিক্রি করে মূল টাকা জমা করতে পারব কি? নাকি এর মাধ্যমে অন্যকে হারামের মধ্যে নিক্ষেপ করার শামিল হবে?
উত্তর : ক্রিপ্টোকারেন্সি এক প্রকার জুয়া। সেহেতু এর ক্রয়-বিক্রয় বা এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া বৈধ নয়। এক্ষণে হারাম থেকে মুক্তি পেতে নিজের বিনিয়োগ সেখান থেকে উঠিয়ে নিবে। সম্ভব না হ’লে ছেড়ে চলে আসতে হবে। কারণ হারাম বস্ত্ত বা খাদ্য যেমন নিজে ভোগ করা হারাম তেমনি এগুলো অন্য কারো কাছে বিক্রয় করে এর দ্বারা উপকৃত হওয়াও হারাম (আহমাদ হা/২৬৭৮; নববী, শরহ মুসলিম ১১/৮; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৪/৪১৫)।
প্রশ্ন (২৫৭) : বাস-ট্রাক, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের সামনে আল্লাহু আকবার, বিভিন্ন আয়াত ইত্যাদি লেখা হয়। এটা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর : যানবাহনের সামনে আল্লাহর নাম বা বিভিন্ন আয়াত লেখা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কারণ এসব স্থানে এগুলো টাঙানো হ’লে পদদলিত বা পড়ে গিয়ে অপদস্থ হ’তে পারে। তাছাড়া তাবীয ঝুলানোর ন্যায় অনেকে গাড়ি বা যানবাহনে এগুলো লিখে বরকত অর্জন করতে চায়, যা শিরক। বরং মুখে বিসমিল্লাহ বলে গাড়ি চালাবে। এছাড়া যানবাহনে আরোহণের দো‘আ পড়বে।
প্রশ্ন (২৫৮) : কোন স্ত্রী যদি স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা হয়, তাহ’লে এ অত্যাচারের কথা তার পরিবারকে বা অন্য কাউকে জানানো যাবে কি? এতে কি গীবতের গোনাহ হবে?
উত্তর : স্ত্রী নিজের নিরাপত্তার জন্য তার স্বামীর নির্যাতনের কথা পিতা-মাতা বা নিকটতম অভিভাবকদের জানাতে পারবে। এটা গীবতের মধ্যে গণ্য হবে না। আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) তার স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হ’লে তিনি পিতা আবুবকর (রাঃ)-কে অভিযোগ করেন। অভিযোগ শুনে আবুবকর (রাঃ) মেয়েকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়ে বলেন, কারো স্বামী যদি সৎ হয়, আর এ অবস্থায় মারা যায় এবং স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে না করে তাহ’লে সে জান্নাতে ন্যায়পরায়ণ স্বামীর সাথে অবস্থান করবে’ (ত্বাবাক্বাতে ইবনু সা‘দ ৮/১৯৭; ছহীহাহ হা/১২৮১-এর আলোচনা)। অতএব সম্ভবপর স্বামীর সাথে সদ্ভাবে সংসার করবে। পরিবেশ না থাকলে অভিভাবকদের অবহিত করে মীমাংসার চেষ্টা করবে।
প্রশ্ন (২৫৯) : যাকাতের অর্থ নির্ধারিত ৮টি খাতের সব খাতে ব্যয় করতে হবে কি? না যেকোন একটি খাতেও ব্যয় করা যাবে?
উত্তর : আটটি খাতের সবক’টি খাতে বণ্টন করা যরূরী নয়; বরং যেকোন একটি খাতে প্রদান করলেও যথেষ্ট হবে। (কাসানী, বাদায়েঊছ ছানায়ে‘ ২/৪৬ ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/২৪৭; দ্র. ‘যাকাত ও ছাদাক্বা’ বই)।
প্রশ্ন (২৬০) : প্রাপ্ত বয়স্ক ভাই-বোন বা দুই ভাই একই বিছানায় থাকতে পারবে কি?
উত্তর : প্রাপ্ত বয়স্ক ভাই-বোন একই বিছানায় অবস্থান করবে না। কারণ এতে বড় পাপ সংঘটিত হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হ’লে তাদেরকে ছালাত শিক্ষা দাও এবং দশ বছর হ’লে তার (ছালাতের) উপর তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও’ (আবুদাঊদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৫৭২)। অনুরূপভাবে দু’জন পুরুষ বা দু’জন নারীর জন্য একই কাপড়ের নীচে ঘুমানো অনুচিৎ। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ের নীচে যেন শয়ন না করে। (অনুরূপভাবে) কোন নারী অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ের নীচে যেন শয়ন না করে (মুসলিম হা/৩৩৮; মিশকাত হা/৩১০০)। তবে একই বিছানায় আলাদা কাপড়ের নিচে বা উভয়ের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব রেখে দুই ভাই ঘুমাতে পারে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৭/২০৪)।
প্রশ্ন (২৬১) : স্ত্রী পাপ করলে স্বামীকে কি সেই পাপের ভাগিদার হ’তে হবে?
উত্তর : স্ত্রীর প্রকাশ্য অপকর্ম ও স্ত্রীর যেকোন অপকর্মে স্বামী বাধা না দিলে বা নীরব থাকলে ঐ স্বামী পাপী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। অতএব সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে’ (বুখারী হা/২৭৫১; মিশকাত হা/৩৬৮৫)। তিনি আরো বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছ; যার পরিবারে ব্যভিচার বা কুকর্ম হয় এবং সে তা সমর্থন করে’ (মিশকাত হা/৩৬৫৫; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৬৬)।
প্রশ্ন (২৬২) : ফুলের তোড়া দিয়ে কাউকে বরণ করা কি ইসলামে জায়েয?
উত্তর : কাউকে স্বাগত জানানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলের তোড়া প্রদান করা ইসলামের রীতি নয়। এতে অর্থেরও অপচয় হয়। তাছাড়া এর মাধ্যমে অমুসলিমদের রীতিকে উৎসাহিত করা হয়। এজন্য এত্থেকে বিরত থাকাই উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। আর মৃতের কবরে, শহীদ মিনারে বা কারো প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া হারাম। কারণ এগুলি অমুসলিমদের রীতি এবং শিরকী আক্বীদা মিশ্রিত। উল্লেখ্য যে, সাধারণভাবে যে কোন সময় ফুল হাদিয়া হিসাবে প্রদান করলে কিংবা সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করলে দোষ নেই। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি, রোগীর মানসিক তৃপ্তি, বিবাহ অনুষ্ঠানের সজ্জা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফুলের উপহারে বা ব্যবহারে কোন বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা পরস্পরকে হাদিয়া দাও। মহববত বাড়াও (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৭, সনদ হাসান)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, কারো নিকট কোন ফুল আনা হ’লে সে যেন ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তা ওযনে হালকা ও ঘ্রাণে উত্তম (মুসলিম হা/৫৭৭৬)।
প্রশ্ন (২৬৩) :দেশের মধ্যে অন্য কোন স্থানে বা বিদেশে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সংবাদ পেলে সূর্য গ্রহণের ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : যে দেখবে বা যে এলাকায় দেখা যাবে কেবল তারাই সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের ছালাত আদায় করবে (নাসাঈ হা/১৪৮৩, ১৫০২; শায়েখ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩২)।
প্রশ্ন (২৬৪) : সন্তানরা বিভিন্ন শহরে থাকে এবং ঈদের সময় পিতা-মাতার বাড়িতে বেড়াতে আসে। এমতবস্থায় ঈদুল আযহার সময় পিতা যদি সবার পক্ষ থেকে কুরবানী দেন, সেটাই কি যথেষ্ট হবে, নাকি প্রত্যেক সন্তানকে আলাদাভাবে কুরবানী দিতে হবে?
উত্তর : সন্তানেরা যদি পিতা-মাতার সাথে আর্থিকভাবে জড়িত থাকে কিংবা বাড়িতে এসে একই খাবারে অংশগ্রহণ করে তাহ’লে পিতা সবার পক্ষ থেকে কুরবানী দিলেই যথেষ্ট হবে। কিন্তু আলাদা বাড়িতে অবস্থান করলে এবং আলাদা রান্না হ’লে প্রত্যেককে আলাদাভাবে কুরবানী দিতে হবে (বাযী, আল-মুনতাক্বা ৩/৯৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/৪০৬)।
প্রশ্ন (২৬৫) : আমার স্বামী কথিত আহলে কুরআন মতাদর্শে বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন যে, প্রত্যেক ওয়াক্তে ফরয ছালাত দু’রাক‘আত করে। তার মতে, প্রচলিত হাদীছগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষণে আমি কি তার সাথে সংসার করতে পারব?
উত্তর : যারা কুরআনের সাথে হাদীছকে শরী‘আতের দলীল হিসাবে বিশ্বাস করে না, তারা সুস্পষ্ট কাফির। কারণ হাদীছ অনুসরণ করা কুরআনেরই নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও’ (হাশর ৫৯/৭)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)। এরূপ অসংখ্য আয়াত আছে যেখানে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ অনুসরণ করাকে অপরিহার্য বলা হয়েছে। কেননা রাসূল (ছাঃ) নিজের মনগড়া কোন কথা বলতেন না, বরং তার ওপর যা অহী নাযিল হ’ত, তা-ই বলতেন (নাজম ৩-৪)। রাসূল (ছাঃ) হাদীছ অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছলে সে বলবে যে, আমি এসব কিছু জানি না। যা আল্লাহর কিতাবে পাব, তারই আমরা অনুসরণ করব’ (আবুদাউদ হা/৪৬০৫; মিশকাত হা/১৬২)। তিনি আরো বলেন, ‘জেনে রাখো! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত। সাবধান! এমন এক সময় আসছে যখন বিলাসী মানুষ তার গদিতে বসে বলবে, তোমাদের জন্য এ কুরআনই যথেষ্ট। সেখানে যা হালাল পাবে, তাকে হালাল জানবে। আর সেখানে যা হারাম পাবে, তোমরা তাকে হারাম জানবে। অথচ আল্লাহর রাসূল যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার ন্যায়’ (আবুদাউদ হা/৪৬০৪; মিশকাত হা/১৬৩)। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা মযবূতভাবে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৩৩৩৮; মিশকাত হা/১৮৬; হাকেম হা/৩১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৩৭)। সুতরাং যারা হাদীছকে অস্বীকার করে, তারা কুরআনের নির্দেশ অমান্য করার কারণে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতার কারণে সকল বিদ্বানের ঐক্যমতে সুস্পষ্ট কাফির এবং মুরতাদ হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষণে কোন স্বামী যদি হাদীছকে অস্বীকার করে তাহ’লে স্ত্রী প্রথমে স্বামীকে সঠিক ইসলামের দাওয়াত দিবে। অতঃপর স্বামী কোনভাবেই তা মেনে না নিলে তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা কোন মুসলমান ব্যক্তি কাফিরের জন্য হালাল নয় (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৪/৩১৫)।
প্রশ্ন (২৬৬) : কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে প্রতিদিন মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে টাকা ও সোনা-দানা দান করে এবং বিশেষ নেকীর আশায় জুম‘আর ছালাত আদায় করতে আসে। এসব মানুষ বিশ্বাস করে যে, এখানে দান-মানত বা জুম‘আর ছালাত আদায় করলে মনের আশা পূরণ হয় এবং অধিক নেকী অর্জিত হয়। এরূপ বিশ্বাস সঠিক কি?
উত্তর : প্রথমতঃ হাদীছে বর্ণিত তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোন মসজিদে ছওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিনটি মসজিদ ব্যতীত (ছওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যায় না। সেগুলো হ’ল মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আক্বছা’ (বুখারী হা/১১১৫; মুসলিম হা/২৪৭৫; মিশকাত হা/৬৯৩)। অন্য সকল মসজিদের গুরুত্ব সমান। দ্বিতীয়তঃ মনের আশা পূরণ করা বা না করার বিষয়টি আল্লাহর হাতে। এতে কোন মসজিদ বা স্থানের গুরুত্ব নেই। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব বস্ত্তর উপাসনা করে, যা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। অথচ তারা বলে এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুফারিশকারী’ (ইউনুস ১০/১৮)। তৃতীয়তঃ কোন স্থান বা মসজিদ মানুষের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে এমন বিশ্বাস করা শিরক। যা থেকে বেঁচে থাকা মুসলিমের জন্য আবশ্যক। অতএব ‘মনের আশা পূরণ হয়’ এই নিয়তে উক্ত মসজিদে সফর করা, জুম‘আ আদায়ের উদ্দেশ্যে আগমন করা, মানত করা বা দান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ থেকে বেuঁচ থাকা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য।
প্রশ্ন (২৬৭) : মানুষ ও পাথরকে জাহান্নামের ইন্ধন হিসাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষণে কোন পাথর বা মানুষকে জাহান্নামের ইন্ধন হিসাবে ব্যবহার করা হবে?
উত্তর : পাপী মানুষ ও পাথরকে জাহান্নামের অন্যতম ইন্ধন হিসাবে ব্যবহার করা হবে। মানুষের মধ্যে যারা আল্লাহতে অবিশ্বাসী, বিদ্রোহী এবং পাথরের মধ্য হ’তে ঐ সকল পাথরকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হবে, যে সকল পাথর দ্বারা মূর্তি বানিয়ে আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়। এর উদ্দেশ্য পাথরকে শাস্তি দেওয়া নয় বরং মূর্তিপূজারীদের পুজিত বস্ত্তর হীনকর অবস্থা বর্ণনা করা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা কাফের, তারা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন’ (জিন ৭২/১৫)। তিনি আরো বলেন, বস্ত্ততঃ তোমরা এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তোমরা পূজা কর, সবই তো জাহান্নামের ইন্ধন। তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে (আম্বিয়া ২১/৯৮)। আর পাথরের মূর্তিগুলোকে জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিরাটকায় দুর্গন্ধযুক্ত কঠিন কালো (সালফার) পাথরও জাহান্নামের ইন্ধন হিসাবে ব্যবহার করা হবে, যা বহুগুণে দাহ্যকর (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/১১০)।
প্রশ্ন (২৬৮) : আমরা কয়েকজন মিলে অনলাইন থেকে পড়াশুনা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কোর্স কিনতে চাচ্ছি। প্রতিটি কোর্সের মূল্য কয়েক হাজার টাকা। তাই সবাই সম্মিলিতভাবে কিনলে প্রত্যেকের উপকার হয়। কিন্তু কোর্স-এর পাঠদানকারী বলছেন, প্রত্যেককে আলাদাভাবে কিনতে হবে, না হ’লে পরকালে তিনি ক্ষমা করবেন না। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?
উত্তর : কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন জিনিস তার অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না। সেটা যে ধরনের বস্ত্তই হোক। সুতরাং কপিরাইট করা থাকলে বা মালিকের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সে জিনিস গ্রহণ করা নাজায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৫/৪১৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/১৮৮; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৯/১৭৮)। অতএব এক্ষেত্রে প্রয়োজনে উক্ত ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে তার অনুমতিসাপেক্ষে সম্মিলিতভাবে কোর্সগুলো কেনা যেতে পারে, নতুবা নয়।
প্রশ্ন (২৬৯) : সূরা ইখলাছ ১০ বার পাঠ করলে জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ ছহীহ (আহমাদ হা/১৫৬৪৮;ছহীহাহ হা/৫৮৯)। অতএব উক্ত ফযীলত প্রাপ্তির আশায় সূরা ইখলাছ পাঠ করা যায়।
প্রশ্ন (২৭০) : ঘর-সংসার সামলানো ও স্বামী-সন্তানের সেবা-যত্ন করতে নারী কি বাধ্য? এর শারঈ কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তর : ঘর-সংসার সামলানো ও স্বামী এবং সন্তানদের দেখাশুনা করা স্ত্রীর মৌলিক দায়িত্ব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নারী তার স্বামীর গৃহের ও সন্তানদের দায়িত্বশীল। এজন্য সে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হবে’ (মুসলিম হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘নারী তার গৃহ ও সন্তানদের তদারকির ব্যাপারে দায়িত্বশীল’ (ফাৎহুল বারী ১৩/১১৩)। শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব হ’ল তার সন্তানদের আদব-কায়দা শেখানো এবং তাদের বিষয়াদি ঠিকঠাক রাখা (শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ৩/১৫০; আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/৫১৭)। সুতরাং স্বামীর অনুগত থেকে তার প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করা এবং তার ঘর-সংসার ও সন্তানাদির সার্বিক দেখভাল ও সম্পদের সংরক্ষণ করা স্ত্রীর শারঈ কর্তব্যের অন্তুর্ভুক্ত।
প্রশ্ন (২৭১) : পিতা ছূফীবাদী আক্বীদাসহ নানা শিরকী আক্বীদায় বিশ্বাসী। নিয়মিত ছালাতও আদায় করেন না। তিনি আমার বিয়ের ওলী হ’তে পারবেন কি?
উত্তর : সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার অবস্থান। সেজন্য পিতা-মাতার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করবে এবং নছীহত করবে। এক্ষণে পিতা যদি স্পষ্ট শিরকী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং তার মাঝে সংশোধনের ইচ্ছা না থাকে, তবে তিনি মেয়ের বিবাহের অভিভাবকত্ব হারাবেন এবং পরবর্তী অভিভাবকগণ তথা দাদা, চাচা, ভাই প্রমুখ দায়িত্ব পালন করবেন (ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/১৪৮-৪৯, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৮৪ প্রভৃতি)।
প্রশ্ন (২৭২) : আমার স্বামী ৩-৪ বছর পরপর ৩৫০ থেকে ৪০০ আত্বীয়-স্বজন নিয়ে মিলনমেলার আয়োজন করে থাকেন। সেখানে অধিকাংশ মহিলা আত্মীয়রা সঠিকভাবে পর্দা করেন না। সেখানে স্টেজে পরিচয়পর্ব থাকে। তাকে পর্দার বিষয়টি বললে তিনি বলেন, রক্তের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এভাবে আয়োজন করা প্রয়োজন। এটা সঠিক হচ্ছে কি?
উত্তর : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা বা দৃঢ় করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উত্তম কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সালাম প্রদানের মাধ্যমে হ’লেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর’ (ছহীহাহ হা/১৭৭৭)। তবে যে কোন বৈধ আয়োজন শারঈ বিধান অক্ষুণ্ণ রেখেই করতে হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)। এক্ষণে আত্মীয়-স্বজনদেরকে পর্দার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নছীহত করতে হবে এবং নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার পৃথক ব্যবস্থা রেখে এমন আয়োজন করা যেতে পারে। তবে কেবল মিলনমেলা নয়; বরং অধিকতর প্রয়োজন হ’ল গরীব আত্মীয়-স্বজনকেকে সাহায্য করা। তাতে দ্বিগুণ ছওয়াব পাওয়া যাবে (তিরমিযী হা/৬৫৮; ইবনু মাজাহ হা/১৮৪৪; মিশকাত হা/১৯৩৯)।
প্রশ্ন (২৭৩) : এক ব্যক্তির বিবাহপূর্ব জনৈকা নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। বিবাহের পর আগের সম্পর্ক থেকে তওবা করা সত্ত্বেও ভুলবশত তার সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয়। এখন সে চরম অনুতপ্ত এবং হতাশায় ভুগছে। তওবা করে এর ক্ষমা পাওয়া যাবে কি? অপকর্মের কারণে বিবাহিত স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের কোন ক্ষতি হবে কি?
উত্তর : খালেছ নিয়তে তওবা করতে হবে। বান্দা তার পাপ থেকে ফিরে আসতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বিশুদ্ধ তওবা করলে আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা কবুল করেন তার মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৪৩)। তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে- (১) একমাত্র আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার নিয়তে খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে। কেননা ক্বিয়ামতের দিন মানুষের হৃদয় ও কর্ম উভয়টির দিকে দৃষ্টি দিবেন (মুসলিম হা/২৫৬৪; ঐ, মিশকাত হা/৫৩১৪)। (২) কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হ’তে হবে। (৩) পুনরায় সে গোনাহে জড়িত না হওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি পাপটি বান্দার সাথে যুক্ত থাকে, তাহ’লে উপরের তিনটি শর্ত পূরণের সাথে চতুর্থ শর্ত হিসাবে তাকে বান্দার নিকটে ক্ষমা চাইতে হবে ও তাকে খুশী করতে হবে। নইলে তার তওবা শুদ্ধ হবে না’ (নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন, ‘তওবা’ অনুচ্ছেদ)। উল্লেখ্য যে, কোন নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ইসলামী দন্ডবিধির আওতাভুক্ত মহাপাপ। ইসলামী রাষ্ট্র দন্ডবিধি প্রয়োগ করবে। তবে অবৈধ সম্পর্কের অপরাধে বৈধ সম্পর্ক নষ্ট হবে না। অতএব বিবাহিত স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থাকবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যেনা হালাল সম্পর্ককে হারাম করতে পারে না’ (ইবনু শায়বাহ, বায়হাক্বী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৮৮১, ৬/২৮৭-৮৮ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৭৪) : আমি জানি যে, কর্যে হাসানাহ দেওয়া অধিক নেকীর কাজ। কিন্তু আমি যদি নিশ্চিত জানতে পারি যে সে আমার টাকা নিয়ে এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করে এবং নতুনভাবে ঋণ নেয়। সেক্ষেত্রে কি আমি অন্যায় কাজে সহযোগিতার দায়ে পাপী হব?
উত্তর: জেনেশুনে এমন অপরাধে সহযোগিতা করলে পাপী হ’তে হবে। এজন্য তাকে ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত করে নিতে হবে যে, উক্ত টাকা কোন অবৈধ কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সে ওয়াদা দিলে তাকে ঋণ দিবে, অন্যথায় দিবে না। কারণ পাপের কাজে সহযোগিতা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)। তবে কোন ব্যক্তি সূদী ঋণ থেকে খালেছ তওবা করে মুক্তির পথ অনুসন্ধান করলে তাকে সূদমুক্ত হওয়ার জন্য সহযোগিতায় দোষ নেই।
প্রশ্ন (২৭৫) : আমাদের এলাকায় বন্ধক দু’ভাবে হয়ে থাকে। যেমন আমার এক বিঘা জমি আছে, টাকার প্রয়োজন, কিন্তু জমি বিক্রি করা সম্ভব নয়। অন্য একজনের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার জমি তাকে দিলাম। সেক্ষেত্রে যতদিন টাকা ফেরত না দিচ্ছি ততদিন এই জমি তার দখলে থাকবে এবং তিনি চাষাবাদ করবেন এবং এর থেকে প্রাপ্ত সকল ফসল তিনি নিজেই ভোগ করবেন। দ্বিতীয়তঃ জমি আমার দখলে থাকবে এবং আমিই এর চাষাবাদ করবো। যদি তিনি চাষাবাদের খরচ বহন করেন তাহ’লে ফসলের অর্ধেক ভাগ পাবেন আর চাষাবাদের খরচ বহন না করলে ৩ ভাগের এক ভাগ ফসল পাবেন। আমি বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি প্রথম নিয়মটি স্পষ্ট সূদ। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে দ্বিতীয় নিয়মে বন্ধক দিলে সেটা কি সূদ হবে?
উত্তর : উল্লিখিত দ্বিতীয় পদ্ধতিও সূদী। কারণ এখানে ঋণের বিনিময়ে অতিরিক্ত লাভ তথা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল নেওয়া হচ্ছে। আর যে ঋণ লাভ নিয়ে আসে সেটাই সূদ। উবাই ইবনে কা’ব, ইবনে মাস‘উদ ও ইবনে আববাসসহ (রাঃ) অনেক ছাহাবী তা গ্রহণ করতে নিষেধ করতেন (বায়হাক্বী, ইবনু আবী শায়বাহ হা/২০৬৮৯; ইরওয়া হা/১৩৯৭, সনদ ছহীহ)। অতএব উক্ত পদ্ধতিতেও জমি বন্ধক রাখা যাবে না।
প্রশ্ন (২৭৬) : স্বেচ্ছায় বিষ খাওয়া বা গলায় দড়ি দেওয়া ব্যক্তির পরকালীন শাস্তি কি? তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে?
উত্তর : আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ। এই মহাপাপের ভাবনা থেকে মুমিনকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যে ব্যক্তি যেভাবে আত্মহত্যা করবে জাহান্নামে সে সেই পদ্ধতিতেই শাস্তি ভোগ করবে। তবে তাওহীদে বিশ্বাসী আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি স্থায়ী জাহান্নামী হবে না। বরং শাস্তি ভোগ করে জান্নাতে ফিরে আসবে। এক্ষণে যে সকল হাদীছে আত্মহত্যাকারীর স্থায়ী জাহান্নামী হওয়ার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর তিনটি অর্থ হ’তে পারে- (১) কেউ যদি আত্মহত্যাকে বৈধ মনে করে এই পাপে জড়িয়ে পড়ে তাহ’লে সে কাফির হয়ে যাবে এবং স্থায়ী জাহান্নামী হবে। (২) যে কোন কষ্ট, দুঃখ বা বিপদের কারণে শয়তানী প্ররোচনায় আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। কিন্তু এই অপরাধের শাস্তি ভোগ করার পর তা থেকে বেরিয়ে আসবে। স্থায়ী বলতে সুদীর্ঘ সময় বা এই পাপের কঠোরতা বুঝানো হয়েছে যা থেকে মুমিনের হেফাযতে থাকা আবশ্যক (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব)। (৩) আত্মহত্যা এমন এক মহাপাপ, যা স্থায়ী জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কিন্তু তাওহীদ বিশ্বাস থাকার কারণে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/১৫১-১৫২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৩৩১)।
প্রশ্ন (২৭৭) : একজন পুরুষ কি তার মা, খালা, ফুফুর সাথে কোলাকুলি করতে পারবে? অন্যদিকে একজন নারী কি তার পিতা, চাচা বা মামার সাথে কোলাকুলি করতে পারবে? আমার জানামতে নারীদের জন্যও পরস্পর বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে শারঈ বিধান কি?
উত্তর : কোলাকুলি বা মুআ‘নাকা অর্থ কাঁধে কাঁধ মিলানো এবং মহববতে জড়িয়ে ধরা। মাহরাম পুরুষ বা নারীর সাথে সাধারণভাবে কোলাকুলি করা যায়। তবে বিরত থাকাই উত্তম। আর কোলাকুলির বিষয়টি সফর থেকে ফিরে আসা ব্যক্তির সাথে খাছ বলে বিদ্বানগণ আলোকপাত করেছেন (বিন বায, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৭৭-৭৯; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৭৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/১২৮)। উল্লেখ্য যে, কোলাকুলির বিভিন্ন পদ্ধতি আছে, যেগুলো সামাজিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারো সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ কোলাকুলি করা নিষিদ্ধ (মু‘জামুলুগাতিল ফুক্বাহা ৪৩৮ পৃ.; ওছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী ১৩/১৯)।
প্রশ্ন (২৭৮) : জনৈক ব্যক্তি ২০ শতক জমি ৩০ হাযার টাকায় এই শর্তে বিক্রি করেছে যে সে যদি কখনো টাকা ফেরত দিতে পারে, তাহ’লে ক্রেতা জমি ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। এতে জমি রেজিষ্ট্রি হবে না। ফলে জমি সে অন্য কারো কাছে বিক্রিও করতে পারবে না। এরূপ বিক্রি জায়েয হবে কি?
উত্তর : এই পদ্ধতিতে জমি বিক্রয় হয়নি; বরং টাকার বিনিময়ে জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। এরূপ পদ্ধতিতে জমি বন্ধক রাখা জায়েয। তবে বন্ধক গ্রহীতা উক্ত জমি চাষাবাদ করে উপকার লাভ করতে পারবে না। কারণ বন্ধককৃত জমি থেকে উপকার গ্রহণ করা সূদ (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/২৮৯)। আর যে ঋণ লাভ আনয়ন করে সেটাই সূদ (ইরওয়া হা/১৩৯৭)। উবাই ইবনে কা‘ব, ইবনে মাস‘উদ ও ইবনে আববাসসহ (রাঃ) অনেক ছাহাবী এরূপ গ্রহণ করতে নিষেধ করতেন (বায়হাক্বী, ইবনু আবী শায়বাহ হা/২০৬৮৯; ইরওয়া হা/১৩৯৭, সনদ ছহীহ)। অতএব উক্ত পদ্ধতিতে বিক্রয় করা যাবে না এবং এর দ্বারা যে ব্যক্তির কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে তিনি কোন উপকারের বিনিময় হিসাবে গ্রহণ করবেন না।
প্রশ্ন (২৭৯) : আমি পাঁচ সন্তানের জননী। কয়েক বছরে গ্রহণযোগ্য শারঈ কারণে অনেকগুলো ফরয ছিয়াম ক্বাযা হয়ে গেছে। বর্তমানে আগের সেসব ছিয়াম পালন করার মত শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। এক্ষণে আমার করণীয় কী?
উত্তর : শারঈ কারণে ছুটে যাওয়া বিগত বছরের ছিয়ামগুলোর ক্বাযা আদায় করতে হবে (মুসলিম হা/৩৩৫; মিশকাত হা/২০৩২; ওছায়মীন, ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম ৪৫৫পৃ.)। এক্ষণে নারীর বার্ধক্যের কারণে বা অসুস্থতার কারণে যদি ছিয়ামগুলোর ক্বাযা আদায়ে সক্ষমতা না থাকে, তাহ’লে প্রতিটি ছিয়ামের বিনিময়ে ফিদিয়া প্রদান করতে হবে কিংবা একজন করে মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে (ফাতাওয়াছ ছিয়াম ১২১ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৮০) : জনৈক শিক্ষক মসজিদে আগেই উপস্থিত হন। কিন্তু দায়িত্বের কারণে তাকে ছাত্রদের দাঁড়ানোর পর জামা‘আতে শরীক হ’তে হয়। এক্ষণে তিনি তাকবীরে উলার সাথে ছালাত আদায়ের নেকী পাবেন কি?
উত্তর: তাকবীরে উলার সময়সীমার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। বিশুদ্ধ মতে, ইমাম যখন তাকবীরে তাহরীমা প্রদান করবেন তখন মুছল্লীকে মসজিদে উপস্থিত থেকে ছালাতে অংশগ্রহণ করতে হবে, তাহ’লে সে তাকবীরে উলা’র ফযীলত লাভ করবে, অন্যথায় নয়। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, মুস্তাহাব হ’ল, ইমামের তাকবীরে তাহরীমা পাঠের পূর্বে কাতারে শামিল হওয়া। ‘আল্লাহু আকবার’ বলার পরে কেউ শামিল হ’লে তাকবীরে উলার ফযীলত পাবে না (রওযাতুত ত্বালেবীন ১/৪৪৬)। আর এটিই শায়খ উছায়মীন, ছালেহ আল-ফাওযান প্রমুখ বিদ্বানদের অভিমত (ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২/১৯২; আল-মুলাখখাছুল ফিক্বহী ১/১৪০)। অপর একটি মতে, সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত পর্যন্ত। কারণ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা ছালাতের ইক্বামত শুনলেই ওযূ করে ছালাত আদায় করতে আসতাম (আবুদাউদ হা/৫১০; ইবনু হিববান ১৬৭৪, সনদ হাসান)। এই মতকে সমর্থন করেছেন ইমাম আবু হানীফাসহ একদল বিদ্বান (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২০৬; রাদ্দুল মুহতার ৪/১৩১)। তবে প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তি যতদ্রুতসম্ভব ছালাতে যোগদান করবেন এবং আশা করা যায় ওযরের কারণে তিনি তাকবীরে উলার নেকী পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
প্রশ্ন (২৮১) : আমি মৃত্যুকে স্মরণের উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিদিন সকালে পিতার কবর যিয়ারত করি এবং সেখানে দাঁড়িয়ে মা’সহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের জন্য দো‘আ করি। নিয়মিতভাবে এরূপ করায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?
উত্তর: কবর যিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কিন্তু যে সকল ইবাদতের ব্যাপারে হাদীছে সময়, কাল বা স্থান নির্ধারণ করা হয়নি সেগুলো পালন করার ক্ষেত্রে নিয়ম বানিয়ে নেওয়া যাবে না। বরং মাঝে মধ্যে কবর যিয়ারত করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য দো‘আ করবে। এমনকি জুম‘আর দিনকেও কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/১১৩; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৯/০২)।
প্রশ্ন (২৮২) : মেয়েরা পর্দার মধ্যে থেকে তোলা ছবি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করতে পারবে কি? বিশেষতঃ যে পেজের ফ্রেন্ড লিস্টে অনেক গায়ের মাহরাম পুরুষ রয়েছে?
উত্তর: পর্দার সাথে হ’লেও ফেসবুকে অপ্রয়োজনীয় ও যথেচ্ছ ছবির ব্যবহার থেকে নারীদের সতর্ক থাকা উচিৎ। কারণ এতেও ফিৎনা ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)।
প্রশ্ন (২৮৩) : মেয়ের পিতা বিদেশে থাকেন। অন্য নিকটাত্মীয় তেমন কেউ বিবাহে উপস্থিত থাকবেন না। এক্ষণে পিতা প্রশ্নকারী : পরিচিত কাউকে ফোনে ওলীর দায়িত্ব দিলে বিবাহ শুদ্ধ হবে কি?
উত্তর: পিতা যে কাউকে ওলীর দায়িত্ব দিয়ে মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করতে পারেন। তাছাড়া আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করতে পারেন। বরং আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেই ওলী হিসাবে মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করা উত্তম হবে (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২০/২০৮)।
প্রশ্ন (২৮৪) : পায়ের ব্যথার কারণে মসজিদের টাইলসের উপর ছালাত আদায় কষ্টকর হ’লে পৃথক জায়নামাযে (মুছাল্লায়) ছালাত আদায় করায় বাধা আছে কি?
উত্তর : অসুস্থতার কারণে পৃথক জায়নামায (মুছাল্লা) ব্যবহার করে ছালাত আদায় করা যাবে। এতে কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৭৯)।
প্রশ্ন (২৮৫) : একবার সহবাসের পর ওযূ না করে পুনরায় মিলিত হ’লে এবং মিলনের পর গর্ভবতী হ’লে ঐ বাচ্চার কোন সমস্যা হয় কি?
উত্তর : সুন্নাত হচ্ছে দ্বিতীয়বার মিলনের পূর্বে ওযূ করে নেওয়া। কারণ এতে মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায় (ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৩)। তবে ওযূ বা গোসল না করলেও কোন বাধা নেই (ত্বাহাবী, শরহু মা‘আনিল আছার হা/৭৮৯)। সুতরাং ওযূ ছাড়া মিলন করার পর গর্ভে সন্তান আসলে সন্তানের কোন সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। এটি সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারমাত্র ।
প্রশ্ন (২৮৬) : চাচা অন্যায় করার কারণে আমার পিতা দাদার সম্মতিতে দাদার পুরো সম্পদ নিজের নামে করে নিয়েছেন। এখন পিতা মারা যাওয়ার পর চাচাকে সম্পত্তির ভাগ দেওয়া কি আমাদের জন্য আবশ্যক?
উত্তর : পিতা ও দাদার পরকালীন মুক্তির জন্য চাচার প্রাপ্য অংশ প্রদান করা ভাতীজাদের উপর আবশ্যক (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৯/৪৯৪)। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ওয়ারিছদের নায্য অধিকার কুরআনে নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং রাসূল (ছাঃ) হাদীছে সন্তানদের মাঝে ইনছাফ করাকে ফরয করে দিয়েছেন (নিসা ৪/১১; বুখারী হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৩০১৯)। এখানে কারো ব্যক্তিগত অন্যায় ধর্তব্য নয়। সুতরাং ভাতীজাদের জন্য করণীয় হ’ল, চাচার প্রাপ্য অংশ বের করে তার নিকট হস্তান্তর করা।
প্রশ্ন (২৮৭) : পাত্র-পাত্রী ছাত্র অবস্থায় বিবাহ করতে চায় এই শর্তে যে, ছেলে চাকুরী হওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলের পিতা ছেলের খরচ বহন করবে এবং মেয়ের পিতা মেয়ের সব খরচ বহন করবে। এমন শর্তে বিয়ে করা বৈধ হবে কি?
উত্তর: এমন শর্তে বিয়ে করা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না’ (আবুদাউদ হা/৩৫৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭১৪)। সুতরাং আল্লাহর প্রতি ভরসা করে বিয়ে করবে। তিনিই রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তোমরা তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদেরও। যদি তারা নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন (নূর ২৪/৩২)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলতেন, ‘তোমরা বিবাহের মাধ্যমে রিযিক অন্বেষণ কর। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন (তাফসীরে ত্বাবারী ১৯/১৬৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে, তাকে সাহায্য করা আল্লাহর জন্য হক হয়ে যায় (তিরমিযী হা/১৬৫৫; মিশকাত হা/৩০৮৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৩০৮)।
প্রশ্ন (২৮৮) : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অমুসলিম শিক্ষার্থীরা তাদের উপাসনালয় নির্মাণের আবেদন করে মিছিল-মিটিং করছে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় কি?
উত্তর : কর্তৃপক্ষ তাদের ধর্ম পালনের সুযোগ দিতে পারে, তবে ধর্ম পালনে সহায়তা করবে না। কারণ তাদের ধর্ম পালন অর্থ আল্লাহর সাথে শিরক করা। আর কোন শিরকী কাজে কোনভাবেই সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দানকারী (মায়েদাহ ৫/০২)। এক্ষণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অমুসলিমদের আর্থিক সহায়তা দিতে বাধ্য করলে বাধ্যগত অবস্থায় সহায়তা করা যাবে। এতে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা অধ্বঃস্তন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না (নাহল ১৬/১০৬)।
প্রশ্ন (২৮৯) :ক্বিয়ামতের আলামত হ’ল, ‘লোকেরা মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করবে কিন্তু সেখানে দু‘রাক‘আত ছালাত আদায় করবে না’- মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে, লোকেরা মসজিদের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করে চলে যাবে। অথচ তাতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে না এবং পরিচিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে সালাম প্রদান করা হবে না (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩২৬; ছহীহাহ হা/৬৪৯)।
প্রশ্ন (২৯০) : অসুস্থতা, দুর্বলতা বা অন্য কারণে দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য কি ইমামতি করা বৈধ? এ ক্ষেত্রে মুক্তাদীগণ কিভাবে তার পেছনে ইক্তেদা করবে?
উত্তর : অসুস্থ বা মা‘যূর ব্যক্তি বসে ইশারায় রুকূ-সিজদা করে ইমামতি করতে পারবেন। কারণ রাসূল (ছাঃ) ওযরের কারণে বসে ছালাতে ইমামতি করেছিলেন। আর আবুবকর (রাঃ) তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে এবং অন্যান্য ছাহাবীগণ তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ইক্তেদা করেছিলেন (বুখারী হা/৬৮৭; মুসলিম হা/৪১৮; মিশকাত হা/১১৪৭)। এক্ষণে ইমাম দাঁড়িয়ে ছালাত শুরু করার পর যদি অসুস্থতার কারণে মাঝে বসে ছালাত আদায় করেন, তবে মুক্তাদীরা বাকী ছালাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে (বুখারী হা/৬৬১; মিশকাত হা/১১৪৭)। আর অসুস্থ ইমাম বসে ছালাত শুরু করলে মুক্তাদীরাও বসে ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/৬৮৮; মিশকাত হা/১১৩৯)। অতএব অসুস্থ বা মা‘যূর ব্যক্তির ছালাতে ইমামতি করায় বাধা নেই, যদি মুক্তাদীদের অনুসরণে সমস্যা না হয়।
প্রশ্ন (২৯১) : ত্বাওয়াফের সময় কথা বলা যায় কি? ত্বাওয়াফরত অবস্থায় এবং ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ভিডিও কলে কথা বলা বা ভিডিও করা যাবে কী?
উত্তর : ত্বাওয়াফ অবস্থায় অতি সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় কথা বলা যায়। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বা ভিডিও ধারণ করার মত অতিরঞ্জিত কর্ম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ, ছাফা-মারওয়ার সাঈ এবং জামরায় কংকর নিক্ষেপ ইত্যাদি কেবলমাত্র আল্লাহর যিকরের জন্য (আবুদাউদ হা/১৮৮৮; আহমাদ হা/২৪৫১২, সনদ হাসান)। তিনি আরো বলেন, বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ করা ছালাতের ন্যায়। অতএব কথা কম বলবে (নাসাঈ হা/২৯২২)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ ছালাতের ন্যায়। তবে এতে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলার বৈধতা রেখেছেন (হাকেম হা/১৬৮৬; ইরওয়া হা/১২১)। অতএব ত্বাওয়াফের আদব রক্ষার্থে এবং খুশু-খুযূ বজায় রাখার জন্য অপ্রয়োজনীয় কথা বা ভিডিও করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (২৯২) : ছেলের ক্রয়কৃত জমিতে মা ছেলের অনুমতি সাপেক্ষে একটি ভবন নির্মাণ করেছে, যেখানে মা ও ছেলে পরিবার সহ বসবাস করত। ভবনের অন্য ফ্ল্যাট থেকে ২০ হাযার টাকা ভাড়া আসে। করোনায় ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এক্ষণে উক্ত ভাড়া মা পাবেন না ছেলের পরিবার পাবে?
উত্তর: উক্ত সম্পদে মা ও ছেলের পরিবার উভয়ে অংশীদার হবে। কারণ একজন জায়গা ক্রয়ে বিনিয়োগ করেছেন, অন্যজন ভবন নির্মাণে বিনিয়োগ করেছেন। পূর্ব থেকে লিখিত বা মৌখিক চুক্তি থাকলে সে অনুপাতে উভয় পরিবার লভ্যাংশ ভোগ করবেন। না থাকলে মা এবং ছেলের পরিবার সমঝোতার মাধ্যমে লভ্যাংশ ভাগ করে নিবেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৫/২৩-২৪)।
প্রশ্ন (২৯৩) : যে রোগীর জন্য দাঁড়ালে বসা কষ্টকর হয়, বসলে দাঁড়াতে কষ্টকর হয়, তিনি কীভাবে ছালাত আদায় করবেন? তিনি কি তার সম্পূর্ণ ছালাতে বসে পড়বেন; নাকি দাঁড়িয়ে পড়বেন?
উত্তর : যিনি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে সক্ষম, কিন্তু বসতে অক্ষম, তিনি দাঁড়িয়েই ছালাত আদায় করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)। তিনি রুকূ ও সিজদা দাঁড়ানো অবস্থাতেই ইশারায় আদায় করবেন। রুকূতে সামান্য মাথা নোয়াবেন এবং সিজদাতে কিছু বেশী মাথা নোয়াবেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১০৭)। কেননা ‘আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৫)। আর দাঁড়াতে অক্ষম হ’লে, বসেই ছালাত আদায় করবেন। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘যখন রাসূল (ছাঃ) ভারী হয়ে গেলেন, তখন তিনি অধিকাংশ (নফল) ছালাত বসে পড়তেন’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৯৮)। উল্লেখ্য যে, সাময়িক অক্ষমতা, ক্ষতি বৃদ্ধির আশংকা, অতি কষ্টসাধ্য হওয়া সবই অক্ষমতার পর্যায়ভুক্ত (নববী, রওযাতুত ত্বলিবীন ১/২৩৪; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/১০৬)। যেমন রাসূল (ছাঃ) একদা ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তার ডান পাঁজরে আঁচড় লাগে। আনাস বলেন, এ সময় তিনি কোন এক ছালাত আমাদের নিয়ে (ব্যথার কারণে) বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে বসে আদায় করি (বুখারী হা/৭৩২)। এই হাদীছে সুস্পষ্ট যে, তিনি দাঁড়াতে অক্ষম ছিলেন না। কিন্তু দাঁড়ানো কষ্টসাধ্য হওয়ায় তিনি বসে ছালাত আদায় করেন। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) একদা ইমরান বিন হুছায়েনকে বলেন, তুমি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় কর। যদি না পার, বসে আদায় কর। যদি তা-ও না পার তবে শুয়ে আদায় কর (বুখারী হা/১১১৭; মিশকাত হা/১২৪৮)। অন্য হাদীছে এসেছে রাসূল (ছাঃ) তাঁর এক অসুস্থ ছাহাবীকে দেখতে গেলেন। এমতাবস্থায় আমি তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি তার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন যে, তিনি কাঠের উপর কপাল রেখে ছালাত আদায় করছেন (কাঠের উপর সিজদা করছেন)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইশারা করলে তিনি কাঠটি ছুঁড়ে ফেলে একটি বালিশ নিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি বালিশ সরিয়ে দাও এবং যদি পার মাটিতে সিজদা কর; অন্যথায় ইশারা করে আদায় কর। আর রুকূর তুলনায় সিজদায় মাথা কিছুটা বেশী নীচু কর’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৩০৮২; ছহীহাহ হা/৩২৩)। সুতরাং শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছালাতের যে কোন রুকন সাধ্য মোতাবেক দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে কিংবা ইশারায় আদায় করা যাবে। এতে কোন বাধা নেই।
প্রশ্ন (২৯৪) : পিতা হালাল উপার্জন করেন। কিন্তু দাদী কয়েকটা এনজিও থেকে কিস্তি তোলেন। যৌথ পরিবার হওয়ায় আমাদের মধ্যে হালাল-হারাম সংমিশ্রণ হয়ে যাচ্ছে। দাদা-দাদীকে অনেক বুঝানোর পরও তারা বুঝতে চান না। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?
উত্তর: নছীহত করা সত্ত্বেও দাদা-দাদী তওবা না করলে তাদের হারাম আয়ের জন্য তারাই দায়ী হবেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা নয়। কারণ একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না (বাক্বারাহ ২/২৮৬; আন‘আম ৬/১৬৪)।
প্রশ্ন (২৯৫) : ছালাতের জন্য ওযূর পানি বা তায়াম্মুমের মাটি পাওয়া না যাওয়ায় সেভেন আপ (কোল্ড ড্রিংক্স) দিয়ে ওযূ করেছি? এটা জায়েয হয়েছে কি?
উত্তর: কোল্ড ড্রিংক্সে পানির রং, স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যায়। অতএব এতে ওযূ করা জায়েয হবে না। এতে ওযূ করে ছালাত আদায় করলে তাকে পুনরায় পবিত্র পানিতে ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে (মুগনী ১/১১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২৬)। উল্লেখ্য যে, পবিত্র পানি বা তায়াম্মুমের মাটি পাওয়া না গেলে বাধ্যগত অবস্থায় ওযূ বা তায়াম্মুম ছাড়াই ছালাত আদায় করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১৮৪)।
প্রশ্ন (২৯৬) : কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাময়িকভাবে টাখনুর নীচে কাপড় নামানো যাবে কি?
উত্তর : শারঈ ওযর থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় এমনটি করা যাবে, নতুবা নয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশে পাজামা বা লুঙ্গী টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে চলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৩১১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যেটুকু টাখনুর নীচে থাকবে, সেটুকু জাহান্নামের আগুণে জ্বলবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৩১৩ ‘পোষাক’ অধ্যায়)। টাখনুর নীচে আজকাল যেভাবে ঝুলিয়ে ফুলপ্যান্ট-পাজামা তৈরী ও পরিধান করা হয়, তা অহংকারবশে বলেই গণ্য হবে। উল্লেখ্য যে, ছালাত বা ছালাতের বাইরে পুরুষের জন্য সর্বাবস্থায় টাখনুর উপরে কাপড় রাখতে হবে।
প্রশ্ন (২৯৭) : কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েকদিন অনশন করে একপর্যায়ে মারা যায়, তাহ’লে সেটা আত্মহত্যা হিসাবে বিবেচিত হবে কি?
উত্তর : প্রচলিত অনশন ধর্মঘট আত্মহত্যার শামিল। এতে মারা গেলে নিঃসন্দেহে সে আত্মহত্যাকারী হিসাবে গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না’ (নিসা ৪/২৯)। তিনি বলেন, ‘যে কেউ সীমালংঘন ও যুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে শীঘ্রই আমরা জাহান্নামে প্রবেশ করাবো’ (নিসা ৪/৩০)। উল্লেখ্য যে, অন্যায়ের প্রতিবাদ শারঈ পদ্ধতিতে করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখবে সে যেন তা তার হাত দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি হাত দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন মুখ দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি মুখ দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন অন্তর দিয়ে বাধা দেয়, আর এটি হ’ল দুর্বল ঈমানের পরিচয় (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)। অতএব অনশন ধর্মঘটের নামে না খেয়ে নিজেকে হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন (২৯৮) : আমরা সিঙ্গাপুরে কাজ করি। সেখানে জুম‘আর দিনে ছুটি নেই। খুব অল্প সময়ের জন্য ছুটি দেওয়া হয়। মসজিদে গেলে সময় থাকে না। আমরা যেখানে কাজ করি সেখানে সবাই মিলে আযান দিয়ে জুম‘আ আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : জুম‘আ যেমন সমষ্টিগত একটি ইবাদত, তেমনি এটা ইসলামের বড় নিদর্শন। সুতরাং যত্রতত্র জুম‘আ কায়েম করা যাবে না। বরং মসজিদে গিয়ে জুম‘আর ছালাত আদায় করবে। সম্ভব না হ’লে যোহরের ছালাত আদায় করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/১৭৮)। তবে অত্র এলাকায় মসজিদ না থাকলে সবাই মিলে সাময়িকভাবে কোন গৃহে বা স্থানে একজনের আযান ও খুৎবা প্রদানের শর্তে জুম‘আ ক্বায়েম করতে পারে (ফাতাওয়া লাজানা দায়েমাহ ৮/২১০)।
প্রশ্ন (২৯৯) : মুসলিম ঘরের সন্তান হয়েও ১০ বছর পূর্বে ৪ বছর যাবৎ আমি মূর্তিপূজার মত জঘন্য শিরকের সাথে জড়িত ছিলাম। পরে আমি তা থেকে ফিরে আসি এবং তওবা করি। আমি জেনেছি শিরকের গুনাহ কখনো ক্ষমা হয় না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে এবং সে গোনাহ পুনরায় না করলে আল্লাহ শিরকের গোনাহ ক্ষমা করে দেন। যেমন তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (যুমার ৩৯/৫৩)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন’ (ফুরক্বান ২৫/৬৯)। এক্ষণে পূর্বের কর্মের জন্য অনুশোচনা করবে এবং অধিকহারে সৎকর্ম সম্পাদন করতে থাকবে।
প্রশ্ন (৩০০) : ঋণ গ্রহণের শারঈ পদ্ধতি কি?
উত্তর: ঋণদাতা ও গ্রহীতার জন্য নিম্নের কয়েকটি বিষয় পালন করা কর্তব্য। যেমন (১) ঋণ গ্রহণ বা প্রদানের বিষয়টি উভয় পক্ষের স্বাক্ষরে লিখিত হওয়া (বাক্বারাহ ২/২৮৪)। (২) যথাসময়ে পরিশোধের মানসিকতা থাকা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঋণ নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন’ (বুখারী হা/২৩৮৭)। সাবধানতার জন্য বিষয়টি সাথে সাথে স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখতে হবে। যাতে হঠাৎ মারা গেলে তারা সেটি পরিশোধ করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দো‘আ কবুল হয় না; (১) যে তার দুশ্চরিত্র স্ত্রীকে তালাক দেয় না। (২) যে ঋণ দিয়ে সাক্ষী রাখে না এবং (৩) যে নির্বোধকে নিজের অর্থ প্রদান করে; অথচ আল্লাহ বলেছেন, তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের অর্থ প্রদান করো না (ছহীহাহ হা/১৮০৫)। উল্লেখ্য যে, ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে কবরে শাস্তি হ’তে থাকবে। তার পক্ষে ঋণের দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত মাইয়েতের শাস্তি চলতেই থাকবে (হাকেম হা/২৩৪৬; আহমাদ হা/১৪৫৭৬)।

 

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button