প্রবন্ধ

বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব

বিদআতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “নযীরহীনভাবে কিছু নব আবিস্কার করা ।” যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : “তিনি (নযীরবিহীন) আসমান ও যমীনের স্রষ্টা” সূরা বাকারাহ /১১৭

পারিভাষিক অর্থে বিদআত বলা হয় : “ধর্মের মধ্যে যে নবাবিস্কৃত ইবাদাত , বিশ্বাস ও কথার সমর্থনে কুরআন ওসুন্নাহের মধ্যে কোন দলীল মিলে না অথচ তা ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় তাকেইবিদ’আত বলা হয় ।” ব্যক্তি , সমাজ , ধর্মীয় মাসআলা মাসায়েলের উপরবিদ’আতের কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক । তবে বিদ’আতের স্তর রয়েছে । স্তরভেদেবিদ’আতের ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো প্রযোজ্য । একটি কথা মনে রাখতে হবে ক্ষেত্রবিশেষে বিদ’আতকে যত ছোটই ভাবা হোক , তা রাসূল (সাঃ) এর এ (শরী’আতের মাঝেপ্রত্যেক নবাবিস্কারই বিদ’আত আর প্রত্যেক বিদ’আত ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেকভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম) বাণীর আওতা হতে কোন অবস্থাতেই বের হবে না ।অতএব বিদ’আতের ভয়ানক ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো আমাদের জানা দরকার । এ করণেইনিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো উল্লেখ করা হলঃআল্লামাহ শাতেবী (রহঃ) সহ অন্যান্য ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বিদ’আতের যে সব কুপ্রভাব উল্লেখ করেছেন সেগুলো নিম্নরুপঃ

১. বিদআতীর কোন আমল কবুল করা হবে না :রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার  করবেবা কোন নবাবিষ্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ওমানুষের অভিশাপ……. তার ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া কবুলকরা হবে না ….।” বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০ ।ইমাম আওযা’ঈবলেন কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলেম বলেছেন : বিদ’আতীর সালাত , সিয়াম , সাদাকাহ , জিহাদ , হাজ্জ , উমরাহ , কোন ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়াগ্রহণযোগ্য হবে না । অনুরুপ কথা হিশাম ইবনু হাস্সানও বলেছেন ।আইউব আস-সুখতিয়ানী বলেন : বিদ’আতী তার প্রচেষ্টা যতই বৃদ্ধি করবে আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে ।এছাড়াযে বিদ’আতকে পছন্দ করে তার ধারনা শরীয়ত পূর্ণ নয় , অথচ আল্লাহ তা’আলাবলেছেন : “আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি” সূরামায়েদা/২ ) কারণ তার নিকট যদি দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যেয়েই থাকে তাহলে সেশরীয়তের মধ্যে নতুন কিছুর প্রবেশ ঢুকাবে কেন বা তাকে অবহিত করার পরেও কেনইবা বিদ’আতের উপর আমল করবে ।

২. বিদআত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত বিদআতীর কোন প্রকার তওবাহ করার সুযোগ জুটবে না : “আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিদ’আতির বিদ’আতকে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তওবারপথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন” – সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১৩০পৃ হাদীস নং ৫৪ ।

৩. বিদআতী নবী (সাঃ) এর হাওযে কাওসারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে :আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন , “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছেযাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিতহবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাওআমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন : তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনারপরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছেতাকে আমি বলবো : দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা” সহীহ মুসলিম হা/৪২৪৩ ।

৪. বিদআতী অভিশপ্ত :কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কারকরবে বা কোন নবাবিস্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ওমানুষের অভিশাপ ।” বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০ ।

৫. বিদআতীর নিকট যাওয়া ও তাকে সম্মান করা ইসলামকে ধ্বংস করার শামিল :পূর্বোল্লিখিত হাদীসটিই এ দলীল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে । ( যদিওআল্লামাহ শাতেবী (রহঃ) একটি দূর্বল হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন ।) কারণবিদআতীকে আশ্রয় দিলেই তাকে সম্মান করা হয় । আর যখন এ কারণে ইবাদাতগুলোকবুল করা হয় না , তখন আশ্রয়দানকারী তার ইসলামকে যে ধ্বংস করে দিল তাতে কোনসন্দেহ নেই ।বিশিষ্ট তাবে’ঈ হাসসান ইবনু আতিয়াহ (রহঃ) হতে বর্ণিতহয়েছে তিনি বলেন : “কোন সম্প্রদায় যখন তাদের দ্বীনের মধ্যে কোন বিদ’আত চালুকরে তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের থেকে অনুরুপ একটি সুন্নাতকে উঠিয়ে নেন ।অতঃপর কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের নিকট সুন্নাতটি আর ফিরিয়ে দেন না” । -মুকাদ্দিমা দারেমী ।আরো এসেছে যে , “কোন ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনপ্রকার বিদ’আত চালু করলেই সে তার চেয়ে উত্তম সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে” । -আল ইতিসাম ১/১৫৩ ।ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : “প্রত্যেক বছরই লোকেরা একটি করে বিদ’আত চালু করবে আর একটি করে সুন্নাতকেমেরে ফেলবে । শেষ পর্যন্ত বিদ’আত জীবিত হবে আর সুন্নাতগুলো মারা যাবে” । -আল ইতিসাম ১/১৫৩ ।

৬. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট হতে বিদআতীর দূরত্ব বাড়তেই থাকবে :হাসান বছরী হতে বর্ণিত , তিনি বলেন : বিদ’আতী সালাত , সিয়াম ও ইবাদাতে যতইতার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করবে ততই আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে ।আইউব আস-সুখতিয়ানী বলেন : বিদ’আতী তার প্রচেষ্টা যতই বৃদ্ধি করবে আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে ।রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসেও এ অর্থের ইঙ্গিত বহন করছে । তিনি খারেজিদেরসম্পর্কে বলেছেন : “…… তারা দ্বীনের মধ্য হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবেতীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায় ।” (বুখারী , মুসলিম) ।এ বেরিয়ে যাওয়াতাদের বিদ’আতের কারণেই । এ হাদীসের মধ্যেই বলা হয়েছে “অথচ তাদের সালাত ওসিয়ামের তুলনায় তোমাদের সালাত ও সিয়ামগুলোকে তোমরা তুচ্ছ মনে করবে” ।

৭. বিদআত ইসলামী লোকদের মাঝে দুশমনী , ঘৃণা , বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করে :কারণ বিদ’আত লোকদেরকে বিভক্তির দিকে আহবান করে , কুরআন তারই প্রমাণ দিচ্ছে। আর এ থেকেই দুশমনী ও ঘৃণার সৃষ্টি হয় । আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : “তোমরাসেই সব লোকদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে সুস্পষ্টপ্রমাণাদি আসার পরেও মতভেদ করেছে , তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব” – সূরাআলে-ইমরান : ১০৫ ।তিনি আরও বলেন : “নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথতোমরা তারই অনুসরণ কর , তোমরা বহু পথের অনুসরণ করো না , কারণ তা তোমাদেরকেতাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে” – সূরা আন’আম : ১৫৩ ।তিনি আরওবলেন : “নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং তারা দলে দলেবিভক্ত হয়ে গেছে আপনি তাদের কোন কিছুতেই অংশীদার নন” – সূরা আন’আম : ১৫৯ ।হাসান বছরী (রহঃ) বলেন : তুমি বিদ’আতীর নিকট বসবে না , কারণ সে তোমার হৃদয়কে রোগাক্রান্ত করে দিবে ।অতএবদ্বীন পরিপূর্ণরুপে ও সুস্পষ্টভাবে আসার পরেও যদি কোন ব্যক্তি তাতেসন্তুষ্ট না হতে পেরে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায় , তা ইসলামের মধ্যেবিভক্তির কারণ এতে কোন সন্দেহ নেই । আর এ বিভক্তিই পরস্পরের মাঝে দুশমনীসৃষ্টি করে । যার জলন্ত প্রমাণ আমরা সমাজের মাঝে দিবালোকের ন্যায় প্রত্যক্ষকরছি । অতএব বাস্তবতাও তার বিরাট একটি দলীল ।

৮. বিদআত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শাফাআত প্রাপ্তি হতে বাধা প্রদান করবে :কারণ হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে যে , বিদ’আতীকে হাওযে কাওছারের পানি পান করাহতে বঞ্চিত করা হবে । তিনি তাদের দূর হয়ে যেতে বলবেন । এটি প্রমাণ করছে যেতারা তাঁর শাফা’আত হতেও বঞ্চিত হবে ।এখানে শাতেবী (রহঃ) একটিদূর্বল হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণ করে , সেটির অর্থকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন ।সেটি হচ্ছে ‘বিদ’আতী ছাড়া আমার উম্মাতের সবাই আমার শাফা’আত পাবে’ (আল-ইতিসাম ১/১৫৯) ।

৯. বিদআত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয় :বাস্তব নমুনায় এর বিরাট প্রমাণ । সালাত শেষে জামা’বদ্ধ হয়ে হাত তুলে দো’আকরলে , সালাতের পরে পঠিতব্য মুতাওয়াতির সূত্রের সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিতদো’আ ও যিকিরগুলো পড়া হয় না । এছাড়া ইসলামের বিভিন্ন ইবাদাতের মধ্যেদূর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এরুপ বহু আমল আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যাসরাসরি সহীহ হাদীসর বিপরীত আমল । বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দে নিকট এর চেয়ে আর বেশীকিছু বলা প্রয়োজন মনে করছি না । অতএব দূর্বল বা জাল হাদীসের উপর আমল করলেসহীহ সুন্নাহ বিতাড়িত হবেই ।  সালাফদের ভাষ্য উল্লেখ করে পূর্বে (৫) এবিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।

১০. বিদআত সৃষ্টিকারী তার নিজের ও তার অনুসরণকারী বিদআতের সাথে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সমপরিমাণ গুনাহের অংশীদার হবে :রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে তার গুণাহও তার অনুসাররি গুণাগ বহন করবে । অনুসরণকারীদের গুণাহ সমূহে সামান্যপরিমাণ ঘাটতি না করেই” (বুখারী ও মুসলিম)কোন সন্দেহ নেই বিদ’আতেরদিকে আহবান করা বা তার উপর আমল করা পথভ্রষ্টতারই একটি অংশ । কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন : ‘সব বিদ’আতই ভ্রষ্টতা’ ।

১১. বিদআতীর অমঙ্গলজনক শেষ পরিণতির ভয় রয়েছে :কারণ বিদ’আতী গুণাহের সাথে জড়িত , আল্লাহর অবাধ্য । আল্লাহ যা হতে নিষেধকরেছেন সে তার সাথে জড়িত । তার সে অবস্থায় মৃত্যু হলে অমঙ্গলজনক মৃত্যুহওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । এছাড়া কিয়ামত দিবসে তাকে অমঙ্গলজনক পরিণতির সম্মুখীনহতে হবে । এর প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস , যা পড়লে সহজেই বঝা সম্ভব ।

১২. বিদআতীর উপর দুনিয়াতে বেইজ্জতী আর আখেরাতে আল্লাহর ক্রোধ চাপিয়ে দেয়া হবে : (আখেরাতেও বেইজ্জতী হতে হেব তার প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস)  আল্লাহতা’আলা বলেন : “অবশ্যই যারা গাভীর বাচ্চাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে তাদের উপরতাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দুনিয়াতেই ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এসে পড়বে ।মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি” (সূরা আরাফ:১৫২) ।সামেরীরপ্ররোচনায় গাভীর বাচ্চা দ্বারা তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল এমনকি তারা তারইবাদাতও করেছিল । আল্লাহ তা’আলা আয়াতের শেষে বলেছেন : “মিথ্যারোপকারীদেরকেআমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে  থাকি এটি ব্যাপকভিত্তিক কথা । এর সাথে বিদ’আতেরওসাদৃশ্যতা আছে । কারণ সকল প্রকার বিদ’আতও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের শামিল ।যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : “নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ বিনা জ্ঞানে হত্যা করেছে এবং আল্লাহতাদেরকে যেসব রিযিক দিয়েছিলেন , সেগুলোকে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেহারাম করে দিয়েছে । নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি” (সূরাআন’আম : ১৪০)।অতএব আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে যে ব্যক্তিই বিদ’আত সৃষ্টিকরবে তাকেই তার বিদ’আতের কারণে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে । তাবেঈ’দের যুগেবাস্তবে বিদ’আতীদের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছিল । তাদেরকে তাদের বিদ’আত নিয়েপালিয়ে বেড়াতে হয়েছে ।

১৩. সুন্নাতের বিরোধীতা করার কারণে বিদআতী নিজেকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করে :সুফিয়ান ইবনু ওয়াইনাহ বলেন : আমি ইমাম মালেক (রহঃ) কে যে ব্যক্তি মদীনারমীকাতে পৌঁছার পূর্বেই ইহরাম বাঁধলো তার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনিউত্তরে বললেন : সে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচারণকারী । তার উপরদুনিয়াতে ফিতনার তার আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি । তুমি কিআল্লাহ তায়ালার বাণী শুননি । “যারা তাঁর নির্দেশের বিরোধীতা করবেতারা যেন সতর্ক হয় তাদেরকে ফিতনা পেয়ে যাওয়া বা তাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তিগ্রাস করা থেকে” (সূরা আন-নূর : ৬৩ )

১৪. বিদআতের অন্যতম ভয়াবহতা কারণ এই যে ,সহীহ সুন্নাহ , তার ধারক – বাহক ও তার উপর আমলকারীকে বিদ’আতী ঘৃণা করবে এবং তাকে মন্দ জানবে ।

১৫. বিদআতী নিজেকে শরীআতের মধ্যে কিছু সংযোজনকরী হিসাবে প্রকাশ করে :অথচ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে তাঁর বান্দাদের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন । “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরআমার নেয়ামাতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসাবেপছন্দ করলাম ।” সূরা মায়েদা /৩

১৬. বিদআত হচ্ছে জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলা :শরী’আতের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কিছু বানিয়ে বললে তা যে কতই ভয়ানক সেটিঅনুধাবন করা যায় আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী (সাঃ) কে সম্বোধন করে বলানিম্নোক্ত কঠোর ভাষার আয়াতগুলিতে : “সে যদি আমার নামে কোন কিছু রচনাকরতো , তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম , অতঃপর তার গ্রীবা কেটে দিতামতোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতো না” (সূরা আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৭) ।রাসূল (সাঃ) কেও নিজের পক্ষ হতে কিছু বনিয়ে বলার অনুমতি দেয়া হয়নি , এ আয়াত তারজাজ্বল্য প্রমাণ । তেমন তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলতেন না । আল্লাহতা’আলা বলেন : “আর তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না , যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহী নাযিল হয়” (সূরা আন-নাজম:৩-৫) ।

১৭. বিদআতীর জ্ঞান উলট-পালট হয়ে তার নিকট সব কিছুই গোলমেলে হয়ে যায় ফলে সে বিদ’আতকে সুন্নাত আর সুন্নাতকে বিদ’আত মনে করে ।অতএববিদ’আতের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পেতে হলে , আমাদের মাঝে প্রচলিত বিদ’আতগুলোহতে সতর্ক হয়ে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহ মাফিক আমল করা ছাড়াআখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই । আসুন আমরাদুর্বল ও বানোয়াট হাদীসগুলো জেনে সেগুলো পরিত্যাগ করি এবং সহীহ হাদীসের উপরভিত্তি করে আমাদের জীবন গড়ি ।

বিদআতের সাথে জড়িত হওয়ার কারণগুলো নিম্নরুপ :১. কুরআন , সুন্নাহ ও আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ।২. অতীতের সত্যানুসারী ব্যক্তিগণের মত ও পথের অনুসরণ না করা ।৩. প্রবৃত্তি বা মনোবৃত্তির অনুসরণ করা ।৪. সন্দেহমূলক বস্তুর সাথে জড়িত থাকা ।৫. শুধুমাত্র স্বীয় বুদ্ধির উপর নির্ভর করা ।৬. বড় বড় আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে তার অন্ধ অনুসরণ করা , যা গোঁড়ামির দিকেনিয়ে যায় । আর তখনই সে কুরআন ও সুন্নাতের দলীলগুলোকে অমান্য করে ।৭. মন্দ লোকদের সংস্পর্শে থাকা ও চলা ।পাঠকভাই ও বোনেরা ! যে ব্যক্তি উপরোক্ত আলোচনা বুঝতে সক্ষম হবেন , আমার মনে হয়সে ব্যক্তি নিজেকে বিদ’আত ও তার ভয়াবহত হতে রক্ষার্থে এখন থেকে যাচাই – বাছাই করে পথ চলবেন । যাতে করে অসতর্কতা বশতঃ বিদ’আতের মধ্যে জড়িয়ে না যান ।যে আমলই আমরা করি না কেন তা যাচাই – বাছাই করেই করা উচিত । কারণ হতে পারেবহু আমল আমার , আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দুর্বল বা বানোয়াটহাদীসের উপর নির্ভরশীল ।রসূল (সাঃ) এর নিম্নোক্ত বাণী কোন ব্যক্তিরভুলে যাওয়া ঠিক হবে না : “আমার এ নির্দেশের মাঝে যে ব্যক্তি এমন কিছু  নবাবিষ্কার করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত ছিল না , তা পরিত্যজ্য ।” (বুখারীহা/২৬৯৭ ; মুসলিম হা/৩২৪২ ; আবু দাউদ হা/৩৯৯০ ; ইবনু মাজাহ হা/১৪)তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার উপর আমার কোন নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য ।” মুত্তাফাকুন আলাইহি হা/৩২৪৩ ।অতএবআমরা কার স্বার্থ রক্ষার্তে তথাকথিত হুজুরদের ধোঁকায় পড়ে নবী (সাঃ) হতেসহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসগুলো ছেড়ে দিয়ে নিজেদেরকে বিপদগামী করব ? আসুন ! আমরা রাসূল (সাঃ) এ শাফায়াত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নিজেদেরকে তাঁর সহীহসুন্নাহমুখী করি । আর অনুধাবন করি নিম্নোক্ত হাদীসটি । কারণ একমাত্র তাঁরসহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিষয়টি যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ এটি তারই প্রমাণবহন করছে : রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা যদিমূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার আর কোন সুযোগ ছিলনা ।” মুসনাদ ইমাম আহমাদ হা/১৪৬২৩ ।অতএব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সার্বিক কল্যাণ একমাত্র রাসূল (সাঃ) এর আদর্শের মধ্যেই আমাদেরকে খুঁজে নিতে হবে ।আসুন ! আমরা জাল ও য’ঈফ হাদীসগুলো জানি এবং তথাকথিত হুজুরদের জাল ও য’ঈফ হাদীসনির্ভর ফতোয়া ও আক্বীদাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করি । আল্লাহ আমাদের সবাইকেতাঁর ও তাঁর নবীর যথাযথ অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন । আমীন ।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button