নামায সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ১৭০টি প্রশ্নোত্তর (৪র্থ পর্ব)
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
উত্তরঃ ইমামের পড়ার অনুসরণ করবে এই উদ্দেশ্যে হাতে কুরআন নিয়ে তারাবীহ্ নামায আদায় করা কয়েকটি কারণে সুন্নাতের পরিপন্থীঃ১) একাজ করলে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখার সুন্নাতের উপর আমল করা যায় না।
২) এতে বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়ার দরকার পড়ে। যেমন, কুরআন খোলা, বন্ধ করা, বগলের নীচে বা পকেটে রাখা প্রভৃতি।
৩) নিঃসন্দেহে এই নড়াচড়ার কারণে নামাযে অন্যমনস্ক হবে।
৪) সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। কেননা সুন্নাত ও উত্তম হচ্ছে, সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করা।
৫) এ কারণে হতে পারে নামাযে অন্তর উপস্থিত থাকবে না। ফলে মুছল্লী ভুলেই যাবে সেকি নামাযে আছে না শুধু কুরআন তেলাওয়াত করছে। কিন্তু যদি বিনয়-নম্রতার সাথে দন্ডায়মান হয়ে ডান হাতকে বাম হাতের উপর স্থাপন করে এবং মাথা ও দৃষ্টি অবনত রেখে নামায আদায় করে, তবে অন্তরের উপস্থিতি অনেক বেশী অনুভব করবে এবং মনে থাকবে সে ইমামের পিছনে রয়েছে।
উত্তরঃ আমি মনে করি, একাজ যদি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি ছাড়াই শরীয়তের গন্ডির মধ্যে হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ জন্যই আবু মূসা আল আশআরী (রাঃ) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলেছিলেন, “যদি জানতাম আপনি আমার ক্বেরাত শুনছেন তবে আমি আপনার জন্য কন্ঠস্বর অতি সুন্দর করার চেষ্টা করতাম।” অর্থাৎ- সুন্দর, সুললিত ও উৎকৃষ্ট করার চেষ্টা করতাম। অতএব কেউ যদি কন্ঠস্বর সুন্দর করার চেষ্টা করে এবং এমনভাবে পাঠ করে যা দ্বারা মানুষের অন্তর নরম করা সম্ভব হয় তবে তাতে কোন অসুবিধা আমি মনে করি না। কিন্তু যদি বাড়াবাড়ি করে, যেমন সাধ্যাতিরিক্ত টানে বা গানের সূরের সাথে মিলায় বা প্রতিটি শব্দকেই গানের মত করে উচ্চারণ করার চেষ্টা করে, তবে তা উচিত নয়।
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে, ফরযের পূর্বের সুন্নাত নামাযের সময় হল ফরয নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়ে ঐ নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত। যেমন, যোহরের ফরযের পূর্বের সুন্নাতের সময় শুরু হবে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর যোহরের আযান হলে। আর শেষ হবে যোহর নামায শেষ হলে। আর ফরযের পরের সুন্নাতের সময় হচ্ছে, ফরয নামায শেষ হওয়ার পর থেকে নামাযের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত।কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে কারো যদি পূর্বের সুন্নাত ছুটে যায়, তবে ফরয নামায আদায়ের পর তা কাযা আদায় করতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ওযরে হলে পরে কাযা আদায় করাতে কোন ফায়দা নেই। কেননা বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত সমূহ যদি বিনা ওযরে তার সময় পার করে দেয়; তবে পরে আদায় করলে তা বিশুদ্ধও হবে না এবং কবূলও হবে না।প্রশ্নঃ (২৮৫) ফজরের পূর্বের সুন্নাত ফরযের পর আদায় করা যাবে কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধমতে ফজর নামায শেষ করে সুন্নাত নামাযের কাযা আদায় করাতে কোন অসুবিধা নেই। এটা ফজরের পর নামায আদায় করার নিষিদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা কারণ বিহীন কোন নামায উক্ত সময়ে আদায় করা নিষেধ।কিন্তু যদি ভুলে যাওয়ার আশংকা না থাকে তবে উহা কাযা আদায় করার জন্য সূর্য উঠার পর পর্যন্ত দেরী করা উত্তম।
প্রশ্নঃ (২৮৬) আযানের পূর্বে যদি মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আদায় করে। তবে আযানের পর কি পুনরায় কোন নফল নামায আদায় করতে পারবে?
উত্তরঃ আযান যদি ফজর বা যোহর নামাযের হয়। তবে আযানের পর ফজরের দু’রাকাত ও যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামায আদায় করবে। আর যদি অন্য নামাযের আযান হয় তবুও নফল আদায় করা শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ “প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত রয়েছে।”
প্রশ্নঃ (২৮৭) সুন্নাত নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে তা কি কাযা আদায় করা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ। নিদ্রা বা ভুলে যাওয়ার কারণে যদি সুন্নাত নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে তার কাযা আদায় করা যায়। কেননা তা রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আ’ম বা ব্যাপক হাদীছের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি নামায পড়তে ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্ফারা হচ্ছে স্মরণ হলেই তা আদায় করে নিবে।”
উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের ফরযের পর ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে দু’রাকাত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে, আছরের পর তার কাযা আদায় করতেন।’ কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়ে সময় অতিবাহিত করে দিলে, তার কাযা আদায় করবে না। কেননা সুন্নাত নামায সময় সাপেক্ষ ইবাদত। আর সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদতসমূহ ইচ্ছাকৃতভাবে তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করলে তা কবূল করা হবে না।
প্রশ্নঃ (২৮৮) ফরজ নামায আদায় শেষে সুন্নাত আদায় করার জন্য স্থান পরিবর্তন করার কোন দলীল আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন এক নামাযের সাথে অন্য নামাযকে মিলিয়ে না দেই যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলি বা বের না হয়ে যাই।”
এথেকে বিদ্বানগণ বলেন, ফরয এবং সুন্নাতের মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলে বা স্থানান্তর হয়ে পার্থক্য করা উচিত।
প্রশ্নঃ (২৮৯) চাশতের নামায ছুটে গেলে তার কি কাযা আদায় করা যায়?
উত্তরঃ চাশতের সময় পার হয়ে গেলে তা আদায় করার স্থান ও সময় ছুটে গেল। তাই তা কাযা আদায় করার দরকার নেই। কেননা উহা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার সাথে শর্তযুক্ত। কিন্তু সুন্নাত নামায সমূহ ফরয নামায সমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে তা কাযা আদায় করা যাবে। অনুরূপভাবে বিতর নামাযও কাযা আদায় করা যাবে। ছহীহ্ সুন্নাতে প্রমাণিত হয়েছেঃ
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়ার কারণে বা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে রাতে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতে অক্ষম হলে, দিনের বেলায় ১২ (বার) রাকাআত নামায আদায় করে নিতেন।”
অতএব তিনি বিতরও কাযা আদায় করতেন।
প্রশ্নঃ (২৯০) তিলাওয়াতের সিজদা দেয়ার জন্য তাহারাত বা পবিত্রতা কি আবশ্যক? এই সিজদায় কি দু‘আ পাঠ করতে হবে?
উত্তরঃ কুরআনুল কারীমে নির্দিষ্টভাবে যে সমস্ত সিজদার আয়াত রয়েছে তা পাঠ করার সময় সিজদা প্রদান করা শরীয়ত সম্মত। সিজদার সময় হলে, তাকবীর দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে সিজদা প্রদান করবে। পাঠ করবেঃ (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى সুবহানা রাব্বীয়্যাল আ‘লা) (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী) (اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ فَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু, ফাছাউওয়ারাহু, ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাছারাহু ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালেক্বীন।) (اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ আল্লাহুম্মাক্তুব লী বিহা আজরা, ওয়া যা’ আন্নী বিহা ভিযরা, ওয়াজ্ আলহা লী ইনদাকা যুখরা, ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতাহা মিন আ’বদিকা দাঊদ) অর্থঃ হে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে আমার জন্য প্রতিদান লিখে দাও। আমার গুনাহ্ মোচন কর। আমার জন্য আপনার কাছে তাকে সঞ্চিত করে রাখ। আমার নিকট থেকে তা কবূল করে নাও যেমনটি কবূল করেছো তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে। তারপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবে। তাকবির দিবে না সালামও ফেরাবে না। কিন্তু ছালাত অবস্থায় যদি সিজদার আয়াত পড়ে তবে আবশ্যক হচ্ছে সিজদা দেয়া এবং সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর দেয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামাযের বর্ণনা যারা দিয়েছেন, তারা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি প্রত্যেকবার মাথা নীচু করা ও মাথা উঠানোর সময় তাকবীর দিতেন।
কিন্তু কিছু লোক ছালাতের মধ্যে সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করলে, সিজদার সময় শুধু তাকবীর দেয় উঠার সময় দেয় না। তাদের এ কাজের পক্ষে আমি সুন্নাহ্ থেকে বা বিদ্বানদের উক্তি থেকে কোন দলীল খুঁজে পাইনি।
তিলাওয়াতের সিজদার জন্য তাহারাত বা ওযু আবশ্যক কি না? এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেনঃ পবিত্রতা আবশ্যক। কেউ বলেছেনঃ এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ইবনু ওমার (রাঃ) বিনা পবিত্রতায় সিজদা করতেন। কিন্তু আমি যেটা মনে করি, তা হচ্ছে জন্য বিনা ওযুতে এই সিজদা না দেয়া।
প্রশ্নঃ (২৯১) কখন আল্লাহ্র জন্য সিজদা শুক্র দিতে হয়? এর পদ্ধতি কি? এর জন্য ওযু করা কি আবশ্যক?
উত্তরঃ সিজদায়ে শুক্র দিতে হয়- মানুষ যখন কোন বিপদ থেকে উদ্ধার লাভ করে বা কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হয় বা আনন্দময় কোন কিছু লাভ করে। এ সিজদার নিয়ম নামাযের বাইরে তেলাওয়াতের সিজদার মত। বিদ্বানদের কেউ কেউ এ সিজদার জন্য ওযু এবং তাকবীর আবশ্যক মনে করেন। কেউ শুধু প্রথম তাকবীর দেয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ- তাকবীর দিয়ে সিজদাবনত হবে, তারপর (সুবহানা রাব্বীয়্যাল আ‘লা) বলার পর কিছু দু’আ করবে। এরপর তাকবীর না দিয়েই উঠে যাবে।
প্রশ্নঃ (২৯২) ছালাতে ইস্তেখারার বিধান কি? তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায পড়ে কি ইস্তেখারার দু’আ পড়া যায়?
উত্তরঃ মানুষ যখন কোন কাজ বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা করে; কিন্তু স্থির করতে পারে না কাজটি বাস্তবায়ন করবে না ছেড়ে দিবে? তখন ইস্তেখারার নামায আদায় করা সুন্নাত। তবে করা বা না করার কোন একটি দিক যদি তার কাছে প্রাধান্য পায় এবং স্থির হয়ে যায় তবে সে সময় ইস্তেখারা করা সুন্নাত নয়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক কাজই করতেন। কিন্তু দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করার পরেই তা করে ফেলতেন। তিনি এসব প্রত্যেকটা কাজের জন্য ইস্তেখারা করেছেন এরকম বর্ণনা পাওয়া যায় না।
কোন মানুষ যদি ইচ্ছা করে- নামায আদায় করবে বা যাকাত প্রদান করবে বা কোন হারাম গর্হিত বিষয় পরিত্যাগ করবে বা খানা-পিনা করবে বা ঘুমাবে তবে এ সমস্ত ক্ষেত্রে ইস্তেখারা শরীয়ত সম্মত নয়।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায পড়ে ইস্তেখারার দু’আ পড়া যাবে না। কেননা হাদীছে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে ইস্তেখারার নিয়তে দু’রাকাআত নামায আদায় করার জন্য। সুতরাং অন্য নিয়তে নামায আদায় করে ইস্তেখারার দু’আ পড়লে হাদীছের নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে না।
কিন্তু যদি তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায আদায় করার সময় ইস্তেখারার নিয়ত করে তারপর ইস্তেখারার দু’আ পাঠ করে, তবে হাদীছের প্রকাশ্য ভাষ্য অনুযায়ী তা যথেষ্ট হবে। হাদীছে বলা হয়েছেঃ “তখন ফরয নয় এমন দু’রাকাআত নামায যেন সে আদায় করে।” এখানে শুধু ফরযকেই বাদ দেয়া হয়েছে। তবে যথেষ্ট না হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “যখন কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন..।” এদ্বারা উক্ত দু’রাকাআতের উদ্দেশ্য ইস্তেখারা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আমার মতে উত্তম হচ্ছে, এ দু’রাকাআত নামায আলাদাভাবে শুধুমাত্র ইস্তেখারার নিয়তেই আদায় করা উচিত।
প্রশ্নঃ (২৯৩) ছালাতু তাছবীহ্ নামায কি?
উত্তরঃ ছালাতুত্ তাছবীহ্ নামায নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, এসম্পর্কিত হাদীছ ছহীহ্ নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ‘এসম্পর্কিত হাদীছ মিথ্যা। ইমাম আহমাদ এবং তাঁর অনুসারী ইমামগণ এ নামাযকে মাকরূহ মনে করতেন। কোন ইমামই এ নামাযকে মুস্তাহাব বলেন নি। আর অন্যান্য ইমামগণ আবু হানীফা, মালেক ও শাফেঈ এ সম্পর্কে কোন কিছু শোনেন নি তাই কোন মন্তব্যও করেন নি।” শায়খুল ইসলামের এ কথা খুবই সত্য। কেননা এ নামায বিশুদ্ধ হলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উম্মতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে ছহীহ্ সনদে বর্ণনা করা হত। কেননা তাতে রয়েছে বিরাট প্রতিদান ও উপকার। তাছাড়া সাধারণ নামাযের পদ্ধতি থেকেও তা সম্পূর্ণ আলাদা। বরং সমস্ত ইবাদত থেকে এটি মূলতঃ আলাদা ধরণের। কেননা এমন কোন ইবাদত আমরা দেখিনা, যা আদায় করার জন্য এধরণের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে- প্রতিদিন আদায় করবে অথবা সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার অথবা বছরে একবার অথবা সারা জীবনে হলেও একবার। তাছাড়া কোন বিষয় মৌলিকতা থেকে আলাদা হলে মানুষ তার প্রতি গুরুত্বারোপ করতো, বিষয়টি অন্যরকম হওয়ার কারণে মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচলিত থকাতো। এর কোনটিই না হওয়ার কারণে বুঝা যায়, এ নামায শরীয়ত সম্মত নয়। আর এ কারণেই কোন ইমাম একে মুস্তাহাব বলেননি। (আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (২৯৪) বিবাহের সময় দু’রাকাআত নামায পড়ার বিধান কি? বিশেষ করে বাসর রাতে এ দু’রাকাআতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়?
উত্তরঃ বিবাহের সময় দু’রাকাআত নামায পড়া সম্পর্কে কোন হাদীছ নেই। তবে কোন কোন ছাহাবী বাসর রাতে দু’রাকাআত নামায আদায় করেছেন, এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন ছহীহ্ হাদীছ জানা যায় না। অবশ্য বাসর রাতে শরীয়ত সম্মত কাজ হচ্ছে, নববধুর কপাল ধরে এই দু’আ পাঠ করবেঃ
“হে আল্লাহ্! আপনার কাছে এর কল্যাণ এবং একে যে স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আশ্রয় কামনা করছি এর অকল্যাণ থেকে এবং একে যে স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে।”
এরকম করলে স্ত্রী ভীত হবে বা অপছন্দ করবে এমন আশংকা থাকলে- তার নিকটবর্তী হওয়ার ভান করে আলতো করে কপালে হাত রাখবে এবং তাকে না শুনিয়েই চুপে চুপে উক্ত দু‘আটি পাঠ করবে। কেননা ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ থাকার কারণে কোন কোন নারী এরকম খেয়াল করতে পারে যে, আমার মধ্যে কি অকল্যাণ আছে? এতে সে বিষয়টিকে অন্য খাতে নিতে পারে। সুতরাং ঝামেলা এড়ানোর জন্য নীরবে ও না জানিয়ে দু’আ পাঠ করাই ভাল।
প্রশ্নঃ (২৯৫) নামাযের নিষিদ্ধ সময় সমূহ কি কি? মাগরিবের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আযানের পূর্বে না আযানের পর আদায় করবে?
উত্তরঃ নিষিদ্ধ সময় সমূহ হচ্ছেঃ
১) ফজর ছালাতের পর থেকে তীর বরাবর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার পর ১৫/২০ মিনিটি পর্যন্ত।
২) ঠিক দুপুরের সময়। অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার ১০ মিঃ আগে থেকে যোহরের সময় হওয়া পর্যন্ত।
৩) আছর ছালাতের পর থেকে পরিপূর্ণরূপে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
তবে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায যে কোন সময় আদায় করা শরীয়ত সম্মত। যখনই মসজিদে প্রবেশ করে বসতে যাবে তখনই দু’রাকাআত নামায আদায় করবে। যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ে হয়ে থাকে।
জানা উচিত, বিদ্বানদের মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, কারণ বিশিষ্ট নফল নামায সমূহ আদায় করার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় বলতে কোন কিছু নেই। নিষিদ্ধ সময়েও তা আদায় করতে কোন বাধা নেই। সুতরাং ফজর নামায বাদ বা আছর নামায বাদ বা সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার সামান্য পূর্বে বা রাতে দিনে যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে, বসার আগে দু’রাকাআত নামায আদায় করবেন। অনুরূপভাবে তাহিয়্যাতুল ওযু নামাযও যে কোন সময় আদায় করা যায়।
প্রশ্নঃ (২৯৬) জামাআতে নামায আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ উলামাগণ একথার উপর একমত হয়েছেন যে, জামাআতে নামায আদায় করা শ্রেষ্ঠতম, গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। বিষয়টি আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং এমনকি ভীতির সময় জামাআতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
“আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে (জামাআতের সাথে) নামায পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত পূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও নামায পড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে নামায (অবশিষ্ট এক রাকাআত) পড়ে নিবে। আর এরাও আত্মরক্ষার সরঞ্জাম ও নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। কাফেরগণ এটাই চায় যে, আপনারা যদি নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র ও দ্রব্যসম্ভার থেকে একটু অসতর্ক হন, তবে অমনি তারা একযোগে আপনাদের উপর আক্রমণ চালাবে। আর যদি বৃষ্টির দরুণ আপনাদের কষ্ট হয় অথবা আপনারা পীড়িত হন, তবে নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র খুলে রাখতে কোন পাপ হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে রাখবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি প্রস্তত করে রেখেছেন।” (সূরা নিসাঃ ১০২)
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাতেও অসংখ্য হাদীছ রয়েছে, যা জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব প্রমাণিত করে। যেমন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“নিশ্চয় আমি ইচ্ছা করছি, নামাযের আদেশ দিব, নামায কায়েম করা হবে। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ দিব সে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে আমি বের হব এমন লোকদের উদ্দেশ্যে যারা নামাযের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিব।”
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
“যে ব্যক্তি আযান শুনে তার জবাবে সাড়া দিয়ে আসবে না, ওযর ব্যতীত তার নামায হবে না।”
জনৈক অন্ধ ব্যক্তি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দরবারে এসে জামাআতে না যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বললেন, هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاةِ “তুমি কি আযানের ধ্বনি শুনে থাক?” সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, فَأَجِبْ “তবে অবশ্যই নামাযে হাজির হবে।” আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
‘আমরা দেখেছি সুস্পষ্ট মুনাফিক ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ্র (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীগণ জামাআতের নামায থেকে পশ্চাতে থাকতেন না। আর অসুস্থ ব্যক্তিকে দু’জন ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো।’
সুস্থ দৃষ্টি ভঙ্গিও জামাআতের সাথে নামাযকে ওয়াজিব প্রমাণ করে। ইসলামী উম্মত এক দলভুক্ত জাতি। ইবাদতের একাত্মতা ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যমে একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। আর ইবাদত সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হচ্ছে ছালাত। তাই মুসলিম জাতির উপর আবশ্যক হচ্ছে, এই ইবাদত আদায় করার সময় তারা একতাবদ্ধ হবে।
বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, জামাআতবদ্ধ নামায শ্রেষ্ঠ, গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছেন্ত নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামাআতবদ্ধ হওয়া কি শর্ত? নাকি একাকী নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু জামাআতের সাথে না পড়ার কারণে সে গুনাহগার হবে?
সঠিক কথা হচ্ছে- জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। নামায বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। তাই শরীয়ত সম্মত কোন কারণ বা ওযর ব্যতিরেকে জামাআত পরিত্যাগ করলে গুনাহগার হবে। একথার দলীল হচ্ছে- রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী নামায পড়ার চাইতে জামাআতবদ্ধ নামাযকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ আখ্যা দিয়েছেন। একথার অর্থ হচ্ছে একাকী নামায আদায় করলে যদি বিশুদ্ধ না হতো, তবে তার চেয়ে জামাআতবদ্ধ নামাযকে প্রাধান্য দেয়া হতো না।
মোটকথা প্রত্যেক মুসলিম, বিবেকবান প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে নামাযে হাজির হওয়া। চাই সে বাড়িতে অবস্থান করুক বা সফরে থাকুক।
প্রশ্নঃ (২৯৭) একদল লোক কোন স্থানে বসবাস করে। ঐ বাসস্থানে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা কি তাদের জন্য জায়েয হবে? নাকি মসজিদে গমণ করা আবশ্যক?
উত্তরঃ বাসস্থানে বসবাসকারী লোকদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা। যাদের আশে পাশেই মসজিদ পাওয়া যায়। মসজিদ নিকটে থাকা সত্বেও কোন ব্যক্তি বা দলের জন্য গৃহে নামায আদায় করা জায়েয নেই। তবে মসজিদ যদি দূরে হয়, ফলে আযান শুনতে না পায়, তবে বাড়িতে জামাআত করে নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
কিছু আলেমের কথার উপর ভিত্তি করে অনেক লোক এই মাসআলাটিতে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা বলে থাকেঃ জামাআতে নামায পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, নামাযের জন্য একদল লোকের একস্থানে সমবেত হওয়া। চাই তা মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও। অতএব একদল লোক যদি নিজ বাড়িতেও জামাআতের সাথে নামায আদায় করে, তবে তো উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল- ওয়াজিব আদায় হয়ে গেল। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কেননা মসজিদে জামাআত প্রতিষ্ঠিত করা আবশ্যক। দলীলঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“নিশ্চয় আমার ইচ্ছা হয়, নামাযের আদেশ দেই, নামায কায়েম করা হোক। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ দেই সে লোকদের নিয়ে নামায কায়েম করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে আমি বের হই, এমন লোকদের উদ্দেশ্যে, যারা নামাযের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিব।” অথচ হতে পারে এই লোকেরা নিজ গৃহে নামায আদায় করেছে।
তাছাড়া গুটিকতক লোক একস্থানে সমবেত হয়ে নামায আদায় করলেই যদি জামাআতের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়- মসজিদে যাওয়ার আবশ্যকতা না থাকে, তবে মসজিদ প্রতিষ্ঠারই বা দরকার কি!?
অতএব ঐ লোকদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। তবে যদি মসজিদ বেশী দূরে হয়, সেখানে যেতে কষ্ট হয়, তবে গৃহে নামায আদায় করতে কোন দোষ নেই।
প্রশ্নঃ (২৯৮) কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীর জন্য কোনটি উত্তম- আযান শোনার সাথে সাথে নামাযে যাওয়া? নাকি কিছুটা অপেক্ষা করে কিছু কাজ সম্পাদন করে নামায আদায় করা। আর সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়া অন্যান্য নফল নামায পড়ার ক্ষেত্রে তার বিধান কি?
উত্তরঃ সমস্ত মুসলমানের জন্য উত্তম হচ্ছে, আযান শোনার সাথে সাথে নামাযে যাওয়া। কেননা মুআয্যিন আহবান করেন, ‘হাইয়্যা আলাছ্ছালাহ’ এসো নামাযের দিকে। কোন ধরণের গড়িমসি বা দেরী করলে হয়েতো নামাযটাই ছুটে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আযান শোনার সাথে সাথে মসজিদের পানে ছুটে যাওয়া।
কিন্তু সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়া অন্যান্য নফল নামায পড়া উক্ত কর্মচারীর জন্য উচিত হবে না। কেননা চাকরীর চুক্তির ভিত্তিতে এই সময়টুকুর পাওনাদার হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে সুন্নাতে মুআক্কাদা আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে সাধারণতঃ এর অনুমতি থেকেই থাকে।
প্রশ্নঃ (২৯৯) করো যদি প্রথম এক রাকাআত বা দু’রাকাআত ছুটে যায়, তবে ইমামের সালামের পর সে কি ছুটে যাওয়া রাকাআতের কাযা আদায় করার জন্য সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাবে? নাকি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করেই ক্ষ্যান্ত হবে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ইমামের সালামের পর মুক্তাদী যে ছালাতটুকু পূরা করে থাকে, তা হচ্ছে তার নিজস্ব নামাযের শেষ অংশ। তাই সে শুধু সূরা ফাতিহাই পাঠ করবে। এটা হচ্ছে- যদি চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের ছুটে যাওয়া রাকাআতের সংখ্যা এক বা দুই হয় বা মাগরিবের এক রাকাআত ছুটে থাকে। আর ফজরের কোন রাকাআত ছুটে গেলে ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৮৬) জনৈক ব্যক্তি দু‘মাস যাবত বেহুশ অবস্থায় ছিল। কোন কিছুই অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে না ছালাত আদায় করেছে না রামাযানের ছিয়াম পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ সংজ্ঞাহীন হওয়ার কারণে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক নয়। আল্লাহ্ যদি তার জ্ঞান ফিরিয়ে দেন, তবে সে রামাযানের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করবে। কিন্তু আল্লাহ্ যদি তার মৃত্যুর ফায়সালা করেন, তবে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। তবে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর যদি সার্বক্ষণিক ওযর বিশিষ্ট হয়, যেমন অতি বয়স্ক প্রভৃতি, তবে ফরয হচ্ছেঃ তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।
তবে ছালাত ক্বাযা আদায় করার ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে দু’রকম মত পাওয়া যায়।
১) অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা ইবনু ওমর (রাঃ) একদিন একরাত্রি বেহুঁশ ছিলেন। কিন্তু তিনি ছুটে যাওয়া ছালাত ক্বাযা আদায় করেননি। (মালেক, হা/ ২৩)
২) তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে। এ মত পোষণ করেছেন পরবর্তী যুগের হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ। ইনছাফ গ্রন্থের লিখক বলেন, এটা মাযহাবের বিচ্ছিন্ন মতামত সমূহের অন্তর্গত। এ মতটি আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি তিন দিন বেহুঁশ ছিলেন। তারপর ছুটে যাওয়া ছালাত ক্বাযা আদায় করেছেন। (মালেক, হা/ ২৩)
প্রশ্নঃ (৩০০) মসজিদে প্রবেশ করে ইমামকে শেষ তাশাহুদে পেলে কি নামাযে শামিল হবে? নাকি দ্বিতীয় জামাআত কায়েম করার জন্য অপেক্ষা করবে?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে যে, ইমাম শেষ তাশাহুদে বসে আছেন, তখন যদি দ্বিতীয় জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা থাকে, তবে নামাযে শরীক হবে না; বরং অপেক্ষা করবে। কিন্তু দ্বিতীয় জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তাশাহুদে বসে পড়বে। কেননা বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এক রাকাআত নামায না পেলে জামাআত পাওয়া হল না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ
“যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে পূর্ণ নামায পেয়ে গেল।”
যেমনটি এক রাকাআত নামায না পেলে জুমআর নামায পাওয়া হল না, তেমনি জামাআতের নামায। সুতরাং ইমামের শেষ তাশাহুদে নামাযে শরীক হলে জামাআত পাওয়া হল না। অতএব দ্বিতীয় জামাআতের সম্ভাবনা থাকলে অপেক্ষা করাই ভাল। আর সম্ভাবনা না থাকলে ফিরে যাওয়ার চাইতে শেষ নামাযের তাশাহুদে শামিল হওয়াই উত্তম।
প্রশ্নঃ (৩০১) নফল বা সুন্নাত নামায শুরু করে দিয়েছি। এমন সময় ফরয নামাযের ইক্বামত হয়ে গেল। এখন কি করব?
উত্তরঃ সুন্নাত বা নফল নামায শুরু করার পর যদি ফরয নামাযের ইক্বামত হয়ে যায়, তবে একদল বিদ্বান বলেন, তখনই নামায ছেড়ে দিতে হবে। যদিও শেষ তাশাহুদে বসে থাকে না কেন।
আরেক দল বিদ্বান বলেন, ইমামের সালাম ফেরানোর আগে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার সম্ভাবনা থাকা পর্যন্ত নামায ছাড়বে না।
মত দু’টি পরস্পর বিরোধী। প্রথমটি হচ্ছেঃ শেষ তাশাহুদে বসে থাকলেও নামায ছেড়ে দিতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছেঃ আপনি নামায চালাতে থাকেন। কিন্তু যদি আশংকা করেন যে, আপনার নামায শেষ করে ইমামের সাথে তাকবিরে তাহরিমা দেয়ার আগেই ইমাম সালাম ফিরিয়ে দিবেন, তবে নামায ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে শামিল হবেন।
কিন্তু বিশুদ্ধ ও মধ্যপন্থী মত হচ্ছেঃ ইক্বামত দেয়ার সময় আপনি যদি শেষ রাকাআতে থাকেন তবে হালকা করে সেই রাকাআত পূর্ণ করে নিন। আর যদি প্রথম রাকাআতেই থাকেন তবে নামায ছেড়ে দিন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম) যখন আপনি ইক্বামতের পূর্বে এক রাকাত ছালাত পড়েছেন, তখন নিষিদ্ধ সময়ের আগেই এক রাকাত পড়ে নিয়েছেন। আর যে এক রাকাত নামায পড়ে নিয়েছে সে পূর্ণ নামাযই পেয়েছে। কিন্তু সে অবশিষ্ট রাকাত হালকাভাবে আদায় করবে। কেননা নফল নামাযের এক অংশ পাওয়ার চাইতে ফরয নামাযের এক অংশ পাওয়া অনেক উত্তম। কিন্তু আপনি যদি প্রথম রাকাতেই থাকেন তবে তো পূর্ণ নামায পাওয়ার সময়ই পেলেন না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” অতএব এ অবস্থায় আপনি নামায ছেড়ে দিবেন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“যখন কোন নামাযের ইক্বামত দেয়া হয়; তখন উক্ত ফরয নামায ছাড়া আর কোন নামায নেই।”
প্রশ্নঃ (৩০২) মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা শেষ হওয়ার পূর্বে ইমাম রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদীর করণীয় কি?
উত্তরঃ মুক্তাদী যদি এমন সময় নামাযে শরীক হয় যখন ইমাম রুকূর ইচ্ছা করছেন। আর মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পূর্ণ করতে পারেনি যদি দু’এক আয়াত বা অনুরূপ বাকী থাকে তবে তা পড়ে নিয়েই ইমামের সাথে রুকূতে শামিল হবে। আর এটাই উত্তম। কিন্তু যদি সূরা ফাতিহা পূর্ণ করতে অনেকাংশ অবশিষ্ট রয়ে যায়, আর তা পূর্ণ করতে গেলে ইমামের সাথে রুকূতে শামিল হতে পারবে না আশংকা হয়, তবে ফাতিহা ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে রুকূতে চলে যাবে।
প্রশ্নঃ (৩০৩) মুক্তাদী যদি ইমামকে সিজদা অবস্থায় পায়, তবে কি ইমামের সিজদা থেকে উঠার অপেক্ষা করবে? নাকি সিজদা অবস্থাতেই নামাযে শামিল হবে?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে ইমামকে যে অবস্থাতেই মুক্তাদী পাবে নামাযে শামিল হবে, কোনরূপ অপেক্ষা করবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“তোমরা (ইমামের সাথে) যা পাবে তা আদায় করবে।”
প্রশ্নঃ (৩০৪) যেসমস্ত নামাযে নীরবে কিরাআত পাঠ করা হয় সে সমস্ত নামাযে মুক্তাদীর ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের রুকূ করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত মুক্তাদী পড়তেই থাকবে। যদিও সে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করে থাকে। চুপ থাকবে না। এমনকি প্রথম তাশাহুদের পর শেষের দু’রাকাতেও সূরা ফাতিহা পড়ার পর যদি দেখে ইমাম রুকূ করেননি, তবে অন্য সূরা পড়া শুরু করবে। কেননা নামাযে শরীয়ত অনুমদিত এমন কোন স্থান নেই যেখানে নামাযী চুপ করে থাকবে। তবে শুধু মাত্র ইমামের উচ্চ কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াতের সময় মুক্তাদী নীরব থাকবে ও শুনবে।
প্রশ্নঃ (৩০৫) ইমামের আগে আগে কোন কাজ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের আগে বেড়ে কোন কাজ করা হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তার মাথাটি গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দিবেন না? অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবেন না?”
আরো প্রমাণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“অনুসরণ করার জন্য ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি তাকবীর দেয়ার পর তোমরা তাকবীর দিবে, তিনি তাকবীর দিয়ে শেষ না করলে তোমরা তাকবীর দিবে না। তিনি রুকূ করলে তোমরা রুকূ করবে। তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।”
উল্লেখ্য যে, ইমামের সাথে মুক্তাদীর চারটি অবস্থা রয়েছেঃ
১) ইমামের আগে বেড়ে কোন কিছু করা।
২) ইমামের সাথে সাথে করা।
৩) ইমামের অনুসরণ করা।
৪) ইমামের পিছনে পিছনে করা।
ইমামের আগ বেড়ে কোন কিছু করাঃ অর্থাৎ ইমাম শুরু করার আগেই তা করে নেয়া। এরূপ করা হারাম। একাজ যদি তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রে হয় তবে তার নামাযই হবে না। নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়া ওয়াজিব।
ইমামের সাথে সাথে করাঃ অর্থাৎ ইমামের রুকূর সাথে রুকূ করা, সিজদা করার সাথে সাথে সিজদা করা, উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ানো। প্রকাশ্য দলীল সমূহ অনুযায়ী এরূপ করাও হারাম। তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।”
কোন কোন বিদ্বান বলেছেন এটা হারাম নয়; বরং মাকরূহ। তবে এটা যদি তাকবীরে তাহরীমার সময় হয়, তবে তার নামাযই হবে না। পুনরায় নামায পড়া তার উপর ওয়াজিব।
ইমামের অনুসরণ করাঃ অর্থাৎ ইমামের পর পর দেরী না করে তার অনুসরণ করা। এটাই হচ্ছে সুন্নাতী পদ্ধতি।
ইমামের পিছনে পিছনে করাঃ অর্থাৎ অতিরিক্ত দেরী করে ইমামের অনুসরণ করা। ইহা সুন্নাত বহির্ভূত।
প্রশ্নঃ (৩০৬) গুনাহ্গার (ফাসেক) লোকের পিছনে নামায পড়া কি জায়েয?
উত্তরঃ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি- যদিও সে কিছু কিছু গুনাহ্র কাজে লিপ্ত থাকে- তার পিছনে নামায আদায় করা জায়েয ও নামায বিশুদ্ধ। এটাই বিশুদ্ধ মত। কিন্তু নিঃসন্দেহে পরহেজগার ও বাহ্যিকভাবে পরিশুদ্ধ লোকের পিছনে নামায আদায় করা উত্তম। ঐ গুনাহ্গার ব্যক্তির পাপ সমূহ যদি এমন পর্যায়ের হয় যা ইসলাম ভঙ্গকারী, তাহলে তার পিছে নামায আদায় করা বৈধ হবে না। কেননা তার নিজের নামাযই তো বিশুদ্ধ নয়। কেননা উক্ত পাপের কারণে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে গেছে। অতএব ইমামের নামায যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে তার কি অনুসরণ করা যায়? তখন তো ইমাম ছাড়াই ইমামের অনুসরণের নিয়ত করা হল।
প্রশ্নঃ (৩০৭) নফল আদায়কারীর পিছনে কি ফরয আদায় করা জায়েয হবে? অথবা ফরয আদায় কারীর পিছনে কি নফল আদায় করা চলবে?
উত্তরঃ উভয়টিই বিশুদ্ধ। অনুরূপভাবে আছর নামায আদায়কারীর পিছনে যোহর আদায় করা জায়েয হবে এবং যোহর আদায়কারী ইমামের পিছনে আছর আদায় করা যাবে। কেননা প্রত্যেকে নিয়ত অনুযায়ী আমল করবে। তার ফল পাবে। একারণে ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, আপনি যদি মসজিদে গিয়ে দেখেন ইমাম তারাবীহ্ ছালাত আদায় করছেন, আর আপনার এশা নামায বাকী আছে, তবে তার সাথেই এশা নামায আদায় করে নিন। উহা আপনার জন্য ফরয আদায় হবে আর ইমামের হবে নফল।
প্রশ্নঃ (৩০৮) একটি বিষয় নিয়ে মুছল্লীদের মাঝে মতবিরোধ হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, জনৈক লোক নামায কায়েম হওয়ার পর মসজিদে প্রবেশ করে দেখে কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কাতারে কোন জায়গা নেই। সে কি আগের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিয়ে তাকে নিয়ে নতুন কাতার করবে? না একাকী কাতারে দাঁড়াবে? না অন্য কিছু করবে?
উত্তরঃ নামাযে এসে যদি দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, তবে তার তিনটি অবস্থা রয়েছেঃ
১) কাতারের পিছনে একাকী নামায আদায় করবে।
২) অথবা সামনের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিবে এবং তাকে নিয়ে নতুন কাতার বানাবে।
৩) অথবা কাতার সমূহের আগে চলে গিয়ে ইমামের ডান দিকে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে।
এ তিনটি অবস্থা হচ্ছে যদি সে নামাযে প্রবেশ করতে চায়। চতুর্থ অবস্থা হচ্ছে, এর কোনটিই করবে না। অর্থাৎ-
৪) এ জামাআতে শামিল হবে না, অপেক্ষা করবে।
এ চারটি অবস্থার মধ্যে কোনটি গ্রহণ করা বিশুদ্ধ?
আমরা বলব, এচারটি অবস্থার মধ্যে বিশুদ্ধতম অবস্থাটি হচ্ছে, কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়াবে এবং ইমামের সাথে নামায আদায় করবে। কেননা ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে এবং কাতারে শামিল হয়ে নামায আদায় করা। এই দু’টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন করতে অপারগ হলে অন্যটি বাস্তবায়ন করবে। অতএব আমরা বলব, কাতারের পিছনে একাকী হলেও জামাআতের সাথে নামায আদায় করবেন। যাতে তার ফযীলত লাভ করতে পারেন। এ অবস্থায় কাতারে শামিল হওয়ার ওয়াজিব আপনার উপর থেকে রহিত হয়ে যাবে। কেননা আপনি তাতে অপারগ। আর আল্লাহ্ সাধ্যের বাইরে কোন কাজ বান্দার উপর চাপিয়ে দেননি। তিনি বলেন,
“আল্লাহ্ মানুষের সাধ্যাতিত কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেননি।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬)
তিনি আরো বলেন,
“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬)
এমতের প্রমাণে বলা যায়, কোন নারী যদি কাউকে সাথী হিসেবে না পায় তবুও সে একাকী কাতারের পিছনে দাঁড়াবে। কেননা পুরুষের কাতারে দাঁড়ানো তার অনুমতি নেই। যখন কিনা শরঈ নির্দেশের কারণে পুরুষের কাতারে দাঁড়াতে সে অপারগ, তখন একাকী কাতারে দাঁড়াবে এবং নামায আদায় করবে।
অতএব যে ব্যক্তি কাতার পূর্ণ হওয়ার পর মসজিদে প্রবেশ করবে এবং সে প্রকৃতপক্ষে কাতারে দাঁড়ানোর জন্য স্থান পাবে না, তখন তার এই ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। বাকী থাকবে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। তাই সে কাতারের পিছনে একাকীই দাঁড়াবে ও নামায আদায় করবে। কিন্তু সম্মুখের কাতার থেকে কোন লোককে টেনে নিয়ে আসলে তিনটি নিষিদ্ধ কাজ করা হয়ঃ
ক) আগের কাতারে একটি স্থান ফাঁকা করা হল, ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশের বিরোধী। তিনি কাতারকে বরাবর ও ফাঁকা স্থান পূর্ণ করতে আদেশ করেছেন।
খ) টেনে নিয়ে আসা লোকটিকে তার উত্তম স্থান থেকে কম ছাওয়াবের স্থানে সরিয়ে দেয়া হল। যা রীতিমত একটি অপরাধ।
গ) লোকটির নামাযে ব্যাঘাত ঘটানো হল। কেননা তাকে টানাটানি করলে তার অন্তরে একাগ্রতা কমে যাবে। এটিও একটি অপরাধ।
তৃতীয় অবস্থায় ইমামের ডান দিকে গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়েছেঃ কিন্তু ইহা উচিত নয়। কেননা ইমামের স্থান অবশ্যই মুক্তাদীদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। যেমন করে ইমাম কথায় ও কাজে মুক্তাদীদের থেকে বিশেষ ও আলাদা থাকেন।
এটাই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত। ইমাম মুক্তাদীদের থেকে আলাদা স্থানে তাদের সম্মুখে এককভাবে অবস্থান করবেন। এটাই ইমামের বিশেষত্ব। এখন মুক্তাদীগণও যদি তাঁর সাথে দন্ডায়মান হয়, তবে তো তার উক্ত বিশেষত্ব শেষ হয়ে গেল।
আর চতুর্থ অবস্থায় জামাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা বলা হয়েছেঃ এটা অযৌক্তিক বিষয়। কেননা জামাআতে শামিল হওয়া ওয়াজিব এবং কাতারে শামিল হওয়াও ওয়াজিব। দু’ওয়াজিবের একটিতে অপারগ হলে তার কারণে অপরটিকে পরিত্যাগ করা জায়েয হবে না।
প্রশ্নঃ (৩০৯) মসজিদের উপর তলার লোকেরা নীচের তলার লোকদের দেখতে না পেলে নামায বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ যখন মসজিদ একটিই, উপর তলার লোকেরা যদি ইমামের তাকবীর ধ্বনী শুনতে পায় তবে একে অপরকে দেখার কোন শর্ত নেই। তাদের সকলের নামায বিশুদ্ধ হবে।
প্রশ্নঃ (৩১০) রেডিও-টিভিতে প্রচারিত নামাযের অনুসরণ করা জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে প্রচারিত নামাযে ইমামের অনুসরণ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়েয নয়। কেননা নামাযের জন্য জামাআতের অর্থ হচ্ছে একস্থানে সমবেত হওয়া। অতএব তাদেরকে একস্থানে একত্রিত হওয়া জরূরী। কাতার সমূহ মিলিত করা আবশ্যক। ঐ দু’টি কারণে মিডিয়ার মাধ্যমে নামায জায়েয হবে না। কেননা তা দ্বারা উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। যদি এটা জায়েয হয়, তবে আর মসজিদের কোন প্রয়োজন থাকে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গৃহে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমআর নামায আদায় করে নিবে। নিঃসন্দেহে এটা জামাআত ও জুমআ প্রতিষ্ঠিত করার শরীয়ত নির্দেশিত হিকমতের পরিপন্থী। অতএব নারী-পুরুষ কারো জন্য রেডিও বা টেলিভিশনের অনুসরণ করে নামায আদায় করা বৈধ নয়। (আল্লাহ্ সবাইকে তাওফীক দিন)
১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল- ফরয সালাত দাঁড়িয়েই আদায় করা। যদিও কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়াক বা কোন দেয়ালে হেলান দিয়ে বা লাঠিতে ভর করে দাঁড়াক না কেন।
২) যদিও কোন ভাবেই দণ্ডায়মান হতে সক্ষম না হয় তবে বসে সালাত আদায় করবে। উত্তম হল দাঁড়ানো ও রুকুর অবস্থার ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসবে।
৩) যদি বসেও সালাত আদায় করতে সক্ষম না হয় তবে কিবলা মুখি হয়ে কাত হয়ে শুয়ে সালাত আদায় করবে। এক্ষেত্রে উত্তম হল ডান কাত হয়ে শোয়া। যদি কিবলামুখি হতে সক্ষম না হয় তবে সে দিকে ইচ্ছা মুখ করে সালাত আদায় করবে। তাঁর সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা ফিরিয়ে পরার দরকার হবে না।
৪) যদি ডান কাত হয়ে শুতে অক্ষম হয় তবে চিৎ হয়ে শুয়ে সালাত আদায় করবে। সে সময় পা দুটি থাকবে কিবলার দিকে। উত্তম হল (বালিশ ইত্যাদি দিয়ে) মাথা উপরের দিকে কিছুটা উঠাবে যাতে করে কিবলামুখি হতে পারে। যদি পা দুটিকে কিবলামুখি করতে সক্ষম না হয়, তবে পা যে দিকেই থাক ঐভাবেই সালাত আদায় করবে। সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং পরে তা ফিরিয়ে পড়তে হবে না।
৫) রুগির উপর ওয়াজিব হল সালাতে রুকু ও সিজদা করা। যদি তা করতে সামর্থ্য না হয় তবে মাথা দিয়ে ইশারা করবে। এ সময় রুকুর চেয়ে সিজদার জন্য মাথাটা একটু বেশি নীচু করবে। যদি শুধু রুকু করতে সক্ষম হয় এবং সিজদা করতে না পারে তবে রুকু করবে এবং ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। আর যদি সিজদা করতে সক্ষম হয়, রুকু না করতে পারে তবে সিজদার সময় সিজদা করবে আর রুকুর জন্য মাথা দিয়ে ইশারা করবে।
৬) রুকু সিজদার সময় মাথা নীচু করে যদি ইশারা করতে সক্ষম না হয়, তবে চোখ দিয়ে ইশারা করবে। রুকুর সময় চোখ দুটোকে সামান্য বন্ধ করবে আর সিজদার জন্য বেশী করে বন্ধ করবে। কিন্তু রুকু সিজদার জন্য আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা যেমন কোন কোন রুগী করে থাকে- বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে কুরান-সুন্নাহ বা বিদ্বানদের থেকে কোন দলীল আমি পাই নি।
৭) যদি মাথা বা চোখের মাধ্যমে ইশারা করতেও সক্ষম না হয়, তবে মনে মনে সালাত আদায় করবে। মুখে তাকবীর বলে, কিরাআত পরবে এবং দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজদা করা, তাশাহহুদে বসা ইত্যাদির জন্য মনে মনে নিয়ত করবে। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যার সে নিয়ত করে থাকে।
৮) রুগীর উপর ওয়াজিব হল প্রত্যেক সালাত সঠিক সময়ে আদায় করা এবং সে সময়ে তাঁর উপর যা যা ওয়াজিব তাঁর সবই সাধ্যানুযায়ী আদায় করা। যদি প্রত্যেক সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা তাঁর জন্য কষ্টকর হয় তবে দু সালাতকে একত্রিত আদায় করা জায়েয আছে। যোহর ও আছর দু সালাত একত্রে যোহরের ওয়াক্তে বা দেরি করে আসরের ওয়াক্তে আদায় করবে। এমনিভাবে মাগরীব ও এশা দু’সালাত মাগরীবের ওয়াক্তে একত্রে বা দেরি করে এশার ওয়াক্তে একত্রে আদায় করবে। মোটকথা যেভাবে তাঁর জন্য সহজ হয় সেভাবেই আদায় করবে।
৯) অসুস্থ ব্যক্তি যদি অন্য কোন শহরে চিকিৎসার জন্য সফর করে তবে সে (মুসাফির হিসেবে) চার রাকাআত বিশিষ্ট সালাতকে কসর কবে দু রাকাআত আদায় করবে। অর্থাৎ যোহর, আছর ও এশা দু রাকাআত করে আদায় করবে। যতদিন নিজ শহরে ফিরে না আসে এরূপই করতে থাকবে। চাই সফরের সময় অল্প হোক বা দীর্ঘায়িত হোক।
প্রশ্নঃ (৩১১) উড়োজাহাজে নামায আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সময় হলেই উড়োজাহাজের উপর নামায আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু নামাযের নির্দিষ্ট সময় বা দু’নামায একত্রিত করার সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি বিমান অবতরণ করার সম্ভাবনা থাকে, আর যমীনে থাকাবস্থায় যেভাবে নামায আদায় করতে হয়, সেভাবে যদি বিমানের উপর সম্ভব না হয়, তবে সেখানে ফরয নামায আদায় করবে না। বরং অবতরণ করার পর যমীনে নামায আদায় করবে। যেমনঃ জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে বিমান উড্ডয়ন করল। এখন আকাশে থাকাবস্থায় মাগরিব নামায আদায় করবে না। পরবর্তী এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করার পর নামায পড়বে। কিন্তু যদি দেখে যে, মাগরিব নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তবে এশা নামাযের সাথে মাগরিবকে একত্রিত করার নিয়ত করে নিবে। অতঃপর অবতরণ করে মাগরিব নামাযকে পিছিয়ে দিয়ে এশার সাথে একত্রিত আদায় করবে। কিন্তু যদি বিমান চলতেই থাকে- অবতরণের সম্ভাবনা না থাকে এবং এশা নামাযেরও সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তখন বিমানের উপরেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই মাগরিব ও এশা নামায একত্রিত আদায় করে নিবে।
বিমানের উপর ফরয নামায পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর দিবে। ছানা, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূ করবে। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদা করবে। নিয়ম মাফিক সিজদা করতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসাবস্থায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। নামায শেষ করা পর্যন্ত এরূপই করবে। আর পূর্ণ সময় ক্বিবলামুখী হয়েই থাকবে।
আর নফল নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে, বিমানের সিটে বসে বসেই নামায আদায় করবে। ইশারার মাধ্যমে রুকূ-সিজদা করবে। সিজদার জন্য রুকূর চেয়ে একটু বেশী মাথা ঝুকাবে।
প্রশ্নঃ (৩১২) কতটুকু দূরত্বে গেলে মুসাফির নামায কসর করতে পারে? কসর না করেই কি দু’নামাযকে একত্রিত করা যায়?
উত্তরঃ কোন কোন বিদ্বানের মতে ৮৩ (তিরাশী) কিলোমিটার পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করলে নামায কসর করবে। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতিতে বা দেশীয় প্রথায় যাকে সফর বলা হয় তাতেই নামায কসর করবে। যদিও তা ৮০ কিলোমিটার না হয়। আর মানুষ যদি তাকে সফর না বলে, তবে তা সফর নয়; যদিও তা ১০০ কিঃ মিঃ হয়। এটাই শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)এর মত। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা নির্দিষ্টভাবে সফরের কোন দুরত্ব নির্ধারণ করেননি। অনুরূপভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেও সফরের দুরত্ব নির্ধারণের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি তিন মাইল বা ফারসাখ পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করতেন, তবে নামায কসর করতেন ও দু’রাকাত আদায় করতেন।”
এজন্য শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়ার মতই অধিক সঠিক।
প্রচলিত রীতিনীতিতে মতভেদ দেখা দিলে ইমামদের যে কোন একটি মত গ্রহণ করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইমামগণ সবাই মুজতাহিদ বা গবেষক। এক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রচলিত রীতিনীতি যেহেতু সুনির্দিষ্ট তাই ইহা গ্রহণ করাই অধিক সঠিক।
আর নামায কসর করা বৈধ হলেই কি জমা (বা দু’নামায একত্রিত) করা বৈধ? জবাবে বলব, একত্রিত করণের বিষয়টি শুধু কসরের সাথে নির্দিষ্ট নয়; বরং তা প্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব সফর বা গৃহে অবস্থান যে কোন সময় যদি মানুষ একত্রিত করণের প্রয়োজন অনুভব করে, একত্রিত করবে। অতএব বৃষ্টির কারণে যদি মসজিদে যেতে কষ্ট হয়, তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। শীতকালে যদি কঠিন ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সে কারণে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। নিজের মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। এছাড়া এ ধরণের আরো কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হলে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। ছহীহ্ মুসলিমে আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণ ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা নামাযকে একত্রে আদায় করেছেন।” ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি উম্মতকে সংকটে ফেলতে চাননি।
অর্থাৎ এধরণের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দু’নামাযকে একত্রিত না করলে যে সংকট হওয়ার কথা তিনি তা চাননি।
এটাই হচ্ছে মূলনীতি। মানুষ যখনই দু’নামাযকে একত্রিত না করলে সমস্যা বা সংকটের সম্মুখিন হবে তখনই একত্রিত করণ তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে। আর সমস্যা না হলে একত্রিত করবে না। কিন্তু যেহেতু সফর মানেই সমস্যা ও সংকট তাই মুসাফিরের জন্য দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। চাই তার সফর চলমান হোক বা কোন স্থানে অবস্থান করুক। তবে সফর চলমান থাকলে একত্রিত করা উত্তম। আর সফরে গিয়ে কোন গৃহে বা হোটেলে অবস্থান করলে একত্রিত না করাই উত্তম।
কিন্তু মুসাফির যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে নামায জামাআতের সাথে অনুষ্ঠিত হয়, তখন জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। ঐ সময় নামায কসরও করবে না একত্রিতও করবে না। কিন্তু জামাআত ছুটে গেলে কসর করবে একত্রিত করবে না। অবশ্য একত্রিত করা জরূরী হয়ে পড়লে করতে পারে।
প্রশ্নঃ (৩১৩) জনৈক ব্যক্তি লিখা-পড়ার জন্য জুমআর দিন সন্ধ্যায় রিয়াদ গমণ করে ও সোমবার দিন প্রত্যাবর্তন করে। সে কি মুসাফিরের মত নামায কসর করে আদায় করবে?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি মুসাফির। কেননা লিখা-পড়ার শহর তার স্থায়ী আবাসস্থল নয়। সেখানে থেকে যাওয়ার বা বসবাস করারও কোন নিয়ত সে করেনি। বরং নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে কয়েকদিন তথায় অবস্থান করছে। কিন্তু সে যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে জামাআতের সাথে নামায হয়, তবে নামাযের জামাআতে উপস্থিত হওয়া তার জন্য ওয়াজিব। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মুসাফিরের জন্য জুমআ বা জামাআতে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক নয়- একথার কোন ভিত্তি নেই, কোন দলীল নেই। মুসাফির যদি যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ে থাকে তবুও তার জন্য জামাআতে নামায আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ্ বলেন,
“আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকবেন, তাদের জন্য নামায কায়েম করবেন, তখন তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দন্ডায়মান হবে।” (সূরা নিসাঃ ১০২)
আর যে ব্যক্তিই আযান শুনবে তার জুমআর নামাযে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ্ বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! জুমআর দিন যখন আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহ্র যিকিরের (নামাযের) দিকে আস।” (সূরা জুমআঃ ৯)
প্রশ্নঃ (৩১৪) জুমআর সাথে আছরের নামায একত্রিত করার বিধান কি? যারা শহরের বাইরে থাকে তাদের জন্য কি একত্রিত করা জায়েয?
উত্তরঃ জুমআর সাথে আছর নামাযকে একত্রিত করা জায়েয নয়। কেননা এর পক্ষে হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। একে যোহরের নামাযের সাথে ক্বিয়াস করা ঠিক নয়। কেননা জুমআ ও যোহরের মাঝে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তাছাড়া আসল হচ্ছে প্রত্যেক নামাযকে নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করা। তবে শুধুমাত্র দলীলের ভিত্তিতেই এক নামাযকে অন্য নামাযের সাথে একত্রিত করা যায়।
যারা শহরের বাইরে দু’ বা তিনদিন অবস্থান করবে তাদের জন্য দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। কেননা তারা মুসাফির। কিন্তু তারা যদি শহরের উপকন্ঠে অবস্থান করে- সাধারণভাবে যাদেরকে মুসাফির বলা হয় না- তারা দু’নামায একত্রিত করবে না। দু’নামায একত্রিত করার অর্থ হচ্ছে: যোহর ও আছর দু’নামায এবং মাগরিব ও এশা দু’নামাযকে একত্রিত করা। কিন্তু জুমআ ও আছর কখনই একত্রিত করা জায়েয নয়।
প্রশ্নঃ (৩১৫) সফর অবস্থায় কি কি বিষয়ে রুখসত বা অবকাশ রয়েছে?
উত্তরঃ সফর অবস্থায় চারটি ক্ষেত্রে রুখসত বা অবকাশ রয়েছেঃ
১) চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায দু’রাকাআত আদায় করা।
২) রামাযানে রোযা ভঙ্গ করা। এবং পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করা।
৩) তিনদিন তিনরাত মোজার উপর মাসেহ করা। প্রথমবার মাসেহ করার পর থেকে উক্ত সময়সীমা হিসাব করতে হবে।
৪) যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত আদায় করতে হবে না। তবে ফজরের সুন্নাত এবং অন্যান্য নফল নামায আদায় করা শরীয়ত সম্মত ও মুস্তাহাব।
অতএব মুসাফির সফর অবস্থায় নিম্নলিখিত নামাযগুলো আদায় করতে পারেঃ রাতের নফল (তাহাজ্জুদ), বিতর, ফজরের সুন্নাত, চাশত, তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, সফর থেকে ফেরত এসে দু’রাকাত নামায। সুন্নাত হচ্ছে সফর থেকে ফেরত এসে গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত ছালাত আদায় করা।
প্রশ্নঃ (৩১৬) শুক্রবার দিবসের প্রথম ওয়াক্ত কখন থেকে শুরু হয়?
উত্তরঃ জুমআর দিবসের প্রহর সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি জুমআর দিবসে নাপাকী থেকে গোসল করার মত গোসল করবে, অতঃপর প্রথম প্রহরে মসজিদে গমণ করবে, সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি দুম্বা কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি মুরগী উৎসর্গ করল। যে ব্যক্তি পঞ্চম প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি ডিম উৎসর্গ করল (আল্লাহ্র পথে দান করল)। অতঃপর ইমাম বের হয়ে এলে ফেরেস্তাগণ উপস্থিত হয়ে যিকির (খুতবা) শুনতে বসে পড়েন।”
এ হাদীছে সূর্য উদয় থেকে খুতবার জন্য ইমামের মিম্বরে আরোহণ পর্যন্ত সময়কে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলোর প্রতিটিই বর্তমান সময়ের এক ঘন্টা বরাবর হতে পারে। এর কম বা বেশীও হতে পারে। কেননা দিন ছোট-বড় হয়। মোটকথা সূর্যোদয় থেকে ইমামের আগমণ পর্যন্ত প্রহর হচ্ছে পাঁচটি। কেউ কেউ বলেন, এই প্রহরের গণনা ফজর উদিত হওয়া থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু এটা ভুল। কেননা সূর্যদয়ের পূর্বের সময় তো ফজর নামাযেরই সময়। আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন
প্রশ্নঃ (৩১৭) ইমামের কন্ঠস্বর শুনতে পেলে কি নিজ গৃহে থেকে জুমআর নামায আদায় করা জায়েয হবে?
উত্তরঃ মসজিদে এসে মুসলমানদের জামাআতে শামিল না হলে জুমআর নামায আদায় করা জায়েয হবে না। কিন্তু মসজিদ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে কাতার মিলিত হওয়ার শর্তে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় নামায আদায় করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু বাড়ীতে বা দোকানে ছালাত আদায় করা কোন মানুষের জন্য জায়েয বা বৈধ হবে না। কেননা জুমআ এবং জামাআত অনুষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের একস্থানে সমবেত হওয়া। তারা এক ঐক্যবদ্ধ জাতি একথা প্রমাণ করা। যাতে করে তাদের পরস্পরের মাঝে মমতা ও সমপ্রীতি সৃষ্টি হয়। অজ্ঞ ব্যক্তিরা আলেমদের নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা লাভ করতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে যদি এই অনুমতি দেয়া হয় যে, তারা নিজ গৃহে থেকে রেডিওতে বা মাইক্রোফোনের আওয়াজ শুনে ছালাত আদায় করবে, তবে মসজিদ নির্মাণ ও মুছল্লীদের উপস্থিত হওয়ার কোন দরকার নেই। তাছাড়া এর মাধ্যমে জুমআ ও জামাআত পরিত্যাগ করার দরজা উম্মুক্ত করা হবে।
প্রশ্নঃ (৩১৮) জুমআর দিন মহিলারা কত রাকাআত নামায আদায় করবে?
উত্তরঃ নারী যদি মসজিদে গিয়ে ইমামের সাথে জুমআ আদায় করে, তবে ইমামের অনুসরণ করে দু’রাকাতই আদায় করবে। কিন্তু সে যদি নিজ গৃহে নামায আদায় করে, তবে চার রাকাত যোহর আদায় করবে।
প্রশ্নঃ (৩১৯) যে ব্যক্তি জুমআর ছালাত আদায় করবে সে কি যোহরও আদায় করবে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি জুমআর ছালাত আদায় করল সে যোহরের সময়ের ফরযই আদায় করল। তাই সে আর যোহর আদায় করবে না। কিন্তু কিছু লোক জুমআর নামায আদায় করার পর যোহর নামায আদায় করে থাকে। সাধারণ পরিভাষায় এটাকে আখেরী যোহর বলা হয়। এটি একটি বিদআত। কেননা আল্লাহ্র কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে এর কোন প্রমাণ নেই। অতএব তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। এমনকি যদিও কয়েক স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত হয়, তবুও জুমআর নামায আদায় করার পর কোন মানুষের জন্য যোহর নামায আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং তা নিকৃষ্ট বিদআত। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা একটি সময়ে একের অধিক ইবাদত ফরয করেননি। আর তা হচ্ছে জুমআর নামায। তা তো আদায় করা হয়েছে।
যারা জুমআ আদায় করার পর যোহর আদায় করতে বলেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, “এক শহরে একাধিক জুমআ আদায় করা জায়েয নয়। একাধিক জুমআ হলে যে মসজিদে প্রথমে নামায অনুষ্ঠিত হবে সেটাই জুমআ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যগুলো বাতিল হবে। কিন্তু যেহেতু কোন্ মসজিদে জুমআ প্রথমে হয় তা জানা নেই। তাই সমস্ত জুমআ বাতিল। ফলে তার বদলে পরবর্তীতে যোহর আদায় করতে হবে।”
তাদেরকে আমি বলবঃ এ দলীল ও যুক্তি আপনারা কোথায় পেলেন? এটার ভিত্তি কি কোন হাদীছে আছে? বা ইহা কি বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ও সঠিক যুক্তি সঙ্গত কথা? উত্তর অবশ্যই না। বরং আমরা বলি, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যদি একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হয় তবে সবগুলোই বিশুদ্ধ। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬)
আর শহর প্রশস্ত হওয়ার কারণে অথবা মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে এই শহরের অধিবাসীগণ প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত করেছে, এতে তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় করেছে। আর যে ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় করেছে সে তার উপর নির্ধারিত ফরয বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং কিভাবে একথা বলা যায় যে তার আমল ফাসেদ বা বাতিল হয়ে গেছে, তাই জুমআর পরিবর্তে যোহর নামায আদায় করতে হবে?
তবে বিনা প্রয়োজনে এক শহরে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত করা নিঃসন্দেহে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদার নীতি বিরোধী কাজ। তাই অধিকাংশ বিদ্বানের মত এরূপ করা হারাম। তারপরও আমরা বলতে পারি না যে তাদের ইবাদতই বিশুদ্ধ হবে না। কেননা এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের কোন দায়দায়িত্ব নেই। এ দায়দায়িত্ব বহণ করবে প্রশাসন যাদের অনুমতিতে বিনা প্রয়োজনে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই প্রশাসনের মধ্যে যারা মসজিদ তত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের কাছে আমরা আবেদন করি, প্রয়োজন দেখা না দিলে তারা যেন একাধিক জুমআর মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হতে অনুমতি না দেন। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুপ্রশস্ত ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে একস্থানে সমবেত করে পরস্পরের মাঝে সমপ্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করা, অজ্ঞদেরকে দ্বীনের শিক্ষা দান করা। এছাড়া আরো অনেক বড় বড় উপকারিতা রয়েছে। শরীয়ত সম্মত সমাবেশ সমূহ হচ্ছেঃ কোনটি সাপ্তাহিক, কোনটি বাৎসরিক, কোনটি দৈনিক। দৈনিক সমাবেশ সমূহ হচ্ছে প্রত্যেক গ্রাম ও মহল্লার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত অনুষ্ঠিত করা। কেননা শরীয়ত প্রণেতা যদি মুসলমানদেরকে প্রতিদিন পাঁচবার শহরের একটি মাত্র স্থানে একত্রিত হওয়ার আদেশ করতেন তবে নিঃসন্দেহে তা কষ্টকর হত। এজন্য তাদের প্রতি সহজতা কল্পে এই সমাবেশকে প্রত্যেক মহল্লার প্রত্যেক মসজিদে বৈধ করে দেয়া হয়েছে।
আর সপ্তাহিক সমাবেশ হচ্ছে জুমআর দিবসে। এলাকার সমস্ত লোক সপ্তাহে একবার একস্থানে সমবেত হবে। এজন্য সুন্নাত হচ্ছে তারা একটি মাত্র মসজিদেই একত্রিত হবে বিভিন্ন স্থানে নয়। কেননা সপ্তাহিক এই সমাবেশে আসা তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে না বা বেশী কষ্টকর হবে না। তাছাড়া এতে রয়েছে বিশাল উপকারিতা। সমস্ত লোক একজন মাত্র ইমামের খুতবা শুনবে ও তার নেতৃত্বে ইবাদত আদায় করবে। তিনি তাদেরকে নসীহত করবেন নির্দেশনা প্রদান করবেন। তখন লোকেরা একদিকে নসীহত ও অন্যদিকে নামায নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। তাই বিনা প্রয়োজনে জুমআর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা জায়েয নয়।
আর বাৎসরিক সমাবেশ হচ্ছে, দু’ঈদের নামায। সমস্ত শহরবাসীর জন্য বাৎসরিক দু’টি সমাবেশ। এজন্য একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে একাধিক ঈদগাহ্ কায়েম করা জায়েয নয়।
প্রশ্নঃ (৩২০) আমরা সমুদ্রের মধ্যে (জাহাজে) কাজ করি। জুমআর নামাযের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু যোহরের আযানের সময় হওয়ার আধা ঘন্টা পর স্তলে এসে আযান দিয়ে জুমআর নামায আদায় করা কি আমাদের জন্য জায়েয হবে?
উত্তরঃ শহর বা গ্রামের মসজিদ ছাড়া কোথাও জুমআর নামায অনুষ্ঠিত করা জায়েয হবে না। জলে বা স্তলে যারা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করে তাদের জুমআর নামায বিশুদ্ধ হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত এরূপ ছিল না যে, তিনি শহর বা গ্রাম ছাড়া কোথাও জুমআর নামায অনুষ্ঠিত করেছেন। তিনি কখনো কয়েকদিন ব্যাপি সফর করতেন, কিন্তু সফরে জুমআ অনুষ্ঠিত করতেন না।
অতএব আপনারা এখন সমুদ্রে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন। কখনো উত্তরে কখনো দক্ষিনে স্থানান্তর হতে থাকেন। কখনো নিজ দেশে কখনো অন্য শহরে প্রত্যাবর্তন করেন। অতএব আপনাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যোহরের নামায আদায় করা, জুমআ নয়। যদি আপনারা সফরের দূরত্বে থাকেন তবে নামায সমূহ কসর করে আদায় করবেন।
প্রশ্নঃ (৩২১) জুমআর নামাযের শেষ তাশাহুদে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হলে কি করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি জুমআর দিন শেষ তাশাহুদে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হয় তবে তার জুমআ ছুটে গেল। সে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হবে ঠিকই কিন্তু চার রাকাআত যোহর আদায় করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাআত পেয়ে গেল, সে পূর্ণ ছালাত পেয়ে গেল।”
এ হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে ব্যক্তি এক রাকআতের কম নামায পাবে সে নামায পেল না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি জুমআর নামাযের এক রাকাত পেল সে জুমআর নামায পেয়ে গেল।”
অর্থাৎ ইমামের সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় রাকআত আদায় করলে সে জুমআর নামায পেয়ে গেল।
প্রশ্নঃ (৩২২) জুমআর খুতবার শেষ প্রান্তে ইমাম যখন দু’আ করেন, তখন ‘আমীন’ বলা কি বিদআত?
উত্তরঃ না ইহা বিদআত নয়। ইমাম যদি খুতবায় মুসলমানদের জন্য দু’আ করেন, তবে তার দু’আয় আমীন বলা মুস্তাহাব। কিন্তু তা উঁচু আওয়াযে ও সমবেত কন্ঠে যেন না হয়। প্রত্যেকে আলাদাভাবে নীরবে নীচু কন্ঠে ‘আমীন’ বলবে। যাতে করে সেখানে অন্যের অসুবিধা এবং চেঁচামেচী না হয়।
প্রশ্নঃ (৩২৩) জুমআর খুতবায় দু’আর সময় হাত উত্তোলন করার বিধান কি?
উত্তরঃ জুমআর খুতবায় ইমামের দু’আ করার সময় হাত উত্তোলন করা শরীয়ত সম্মত নয়। জুমআর খুতবায় দু’আ করার সময় খলীফা বিশ্র বিন মারওয়ান দু’হাত উত্তোলন করলে ছাহাবায়ে কেরাম তার প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হচ্ছে ইস্তেস্কার দু’আ। এদু’আ পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি জুমআর খুতবায় বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আয় হাত উত্তোলন করেছেন। লোকেরাও তাঁর সাথে হাত উঠিয়েছেন। এছাড়া জুমআর খুতবায় অন্যান্য দু’আর ক্ষেত্রে হাত উত্তোলন করা উচিত নয়।
প্রশ্নঃ (৩২৪) আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানের বিধান কি?
উত্তরঃ এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, উপস্থিত মুছল্লীগণ যে ভাষা বুঝে না সে ভাষায় জুমআর খুতবা প্রদান করা জায়েয নয়। যদি উপস্থিত মুছল্লীগণ আনারব হন্ত তারা আরবী না বুঝেন, তবে তাদের ভাষাতেই খুতবা প্রদান করবে। কেননা তাদেরকে বুঝানোর জন্য এ ভাষাই হচ্ছে বক্তৃতা করার মাধ্যম। আর জুমআর খুতবার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহ্র বিধি-বিধান বর্ণনা করা, তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করা। তবে কুরআনের আয়াত সমূহ অবশ্যই আরবী ভাষায় পাঠ করতে হবে। অতঃপর মাতৃভাষায় তার তাফসীর করে দিবে। আর মাতৃভাষায় খুতবা প্রদানের দলীল হচ্ছে, আল্লাহ্ বলেনঃ
“আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে নিজ সম্প্রদায়ের ভাষা-ভাষী করে পাঠিয়েছি। যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহ্র বিধান) বর্ণনা করে দেন।” (সূরা ইবরাহীমঃ ৪)
এখানে আল্লাহ্ তা’আলা বর্ণনা করে দিলেন যে, সম্প্রদায়ের লোকেরা যে ভাষা বুঝে সে ভাষাতেই তাদের সামনে বক্তৃতা করতে হবে।
প্রশ্নঃ (৩২৫) জুমআর দিবসে গোসল করার বিধান কি নারী ও পুরুষের সকলের জন্য? এ দিনের এক বা দু’দিন পূর্বে গোসল করার হুকুম কি?
উত্তরঃ জুমআর দিবসে গোসল ও সাজ-সজ্জার বিধান শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই। কেননা সেই জুমআর নামাযে উপস্থিত হবে। গোসল ও সৌন্দর্য গ্রহণ পুরুষকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। নারীদের জন্য এটা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে কোন মানুষ নিজের শরীরে বা অঙ্গে ময়লা-আবর্জনা দেখতে পেলেই তা পরিস্কার করবে। কেননা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়, এতে উদাসীনতা কারো জন্য উচিত নয়।
কিন্তু জুমআর একদিন বা দু’দিন পূর্বে গোসল করলে কোন উপকার নেই। কেননা এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ সমূহ শুধুমাত্র জুমআর দিবসকে কেন্দ্র করেই বলা হয়েছে। আর এ সময়টি হচ্ছে জুমআর দিবস ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে জুমআর নামাযের পূর্ব পর্যন্ত। এটাই হচ্ছে গোসল করার সময়। কিন্তু একদিন বা দু’দিন পূর্বে গোসল করা জুমআর দিবসের জন্য যথেষ্ট হবে না।
প্রশ্নঃ (৩২৬) খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযানের সময় মসজিদে প্রবেশ করলে করণীয় কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন যে, কোন ব্যক্তি জুমআর দিবসে মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে মুআয্যিন খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযান প্রদান করছে। তখন সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ শুরু করবে, মুআয্যিনের আযানের জবাব দিতে ব্যস্ত হবে না। যাতে করে খুতবা শোনার জন্য প্রস্ততি নিতে পারে। কেননা খুতবা শোনা ওয়াজিব আর আযানের জবাব দেয়া সুন্নাত। অতএব সুন্নাতের উপর ওয়াজিবকে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রশ্নঃ (৩২৭) জুমআর মসজিদে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ খুতবা চলা অবস্থায় যদি কেউ মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যেতে চায়, তবে কোন কথা না বলেই তাকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বসে যাওয়ার জন্য তাকে ইঙ্গিত করবে বা তার কাপড় টেনে ধরবে। তবে উত্তম হচ্ছে খতীব নিজেই একাজ করবে এবং তাকে বসিয়ে দিবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় দেখলেন, জনৈক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল, তিনি তাকে বললেন, اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ “বসে পড় তুমি মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।”
প্রশ্নঃ (৩২৮) ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ কালে সালাম প্রদান এবং সালামের জবাব দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের খুতবা চলাবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে শুধুমাত্র দু’রাকাত নামায হালকা করে আদায় করবে। কাউকে সালাম দিবে না। কেননা এ অবস্থায় মানুষকে সালাম দেয়া হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“তুমি যদি জুমআর দিন খুতবা চলাবস্থায় পার্শ্ববর্তী মুছল্লীকে বল ‘চুপ কর’, তবে অনর্থক কাজ করলে।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি কঙ্কর স্পর্শ করবে সে অনর্থক কাজ করবে।”
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন অনর্থক কাজ করে, হতে পারে তার এই কাজ জুমআর ছাওয়াব বিনষ্ট করে দিবে। এ কারণে অন্য হাদীছে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করে তার জুমআ হবে না।” অতএব কেউ যদি আপনাকে সালাম প্রদান করে তবে ‘ওয়া আলাইকুম সালাম’ শব্দে তার জবাব দিবে না। কিন্তু মুখে কোন শব্দ উচ্চারণ না করে মুসাফাহা করতে কোন বাধা নেই। যদিও মুসাফাহা না করাই উত্তম।
অবশ্য বিদ্বানদের কেউ কেউ বলেন, সালামের জবাব দিতে পারে। কিন্তু বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সে সালামের জবাব দিবে না। কেননা খুতবা শ্রবণের ওয়াজিবকে সালামের জবাব প্রদানের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। তাছাড়া এ অবস্থায় সালাম দেয়াও কোন মুসলমানের জন্য উচিত নয়। কেননা এতে মানুষের খুতবা শোনার ওয়াজিব কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হয়। অতএব সঠিক কথা হচ্ছেঃ ইমামের খুতবার সময় সালামও নেই, জবাবও নেই।
প্রশ্নঃ (৩২৯) ঈদের দিন কি বলে একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে?
উত্তরঃ ঈদের জন্য অভিনন্দন জানানো জায়েয। তবে এর জন্য বিশেষ কোন বাক্য নেই। মানুষের সাধারণ সমাজে প্রচলিত যে কোন শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা যেন কোন অশ্লীল শব্দ না হয় বা কাফেরদের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ না হয়।
প্রশ্নঃ (৩৩০) ঈদের নামাযের বিধান কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি ঈদের নামায ফরযে আঈন তথা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। কোন পুরুষের জন্য এ নামায পরিত্যাগ করা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ প্রদান করেছেন। বরং কুমারী পর্দানশীন নারীদেরকেও এ নামাযে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন। তবে ঋতুবতী ছালাত আদায় করবেনা। এ দ্বারা এ নামাযের অতিরিক্ত গুরুত্ব বুঝা যায়। এটাই প্রাধান্যযোগ্য মত এবং শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াও (রহঃ) অনুরূপ মত পোষণ করেছেন।
এ নামাযটি জুমআর নামাযের মত। কিন্তু ছুটে গেল কাযা আদায় করা যাবে না। কেননা কাযা আদায় করার পক্ষে কোন দলীল নেই। এর পরিবর্তে অন্য কোন নামাযও আদায় করবে না। অবশ্য জুমআর নামায ছুটে গেলে তার পরিবর্তে যোহরের ছালাত আদায় করবে। কেননা সময়টি যোহরের নামাযের সময়। কিন্তু ঈদের নামায ছুটে গেলে তার কোন কাযা নেই।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত হচ্ছে, তারা যেন আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করে এবং এই নামাযটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। যাতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও আল্লাহ্র কাছে দু’আ, লোকদের পরস্পর দেখা-সাক্ষ্যাৎ ও প্রীতি-ভালবাসার বিনিময়। দেখবেন মানুষকে যদি কোন খেলাধুলার আসরে আহবান জানানো হয়, তবে কত দ্রুত তারা সেখানে সমবেত হয়। তাদের জন্য কি উচিত নয় মুক্তি দূত বিশ্বনবীর আহবানে সাড়া দিয়ে এই নামাযের জন্য সুবিশাল সমাবেশের আয়োজন করা? যাতে রয়েছে আল্লাহ্র অফুরন্ত ছওয়াব এবং মাগফিরাত। কিন্তু নারীদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, এ নামাযে আসতে চাইলে তারা যেন পুরুষদের সাথে সংমিশ্রিত না হয়। তারা থাকবে মসজিদ বা ঈদগাহের একপ্রানে- পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে। নারীরা যেন আতর-সুগন্ধি মেখে নিজের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটিয়ে বেপর্দা হয়ে বের না হয়। এই কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নারীদেরকে ঈদের নামাযের জন্য বের হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা প্রশ্ন করেছেন: إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ হে আল্লাহ্র রাসূল আমাদের তো কারো কারো চাদর নেই? তিনি বললেন, لِتُلْبِسْهَا أخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا “তার অন্য বোন যেন নিজের চাদর তাকে পরতে দেয়।” আর পর্দার উপযুক্ত চাদর হচ্ছে বর্তমানের বোরকা। এদ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, নারী অবশ্যই পূর্ণ পর্দা করে গৃহ থেকে বের হবে। কেননা নারীর চাদর না থাকলে সে কি করবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এপ্রশ্ন করলে তিনি এরূপ বলেন নি যে, সাধ্যানুযায়ী পর্দা করে বের হবে। বরং বলেছেন, “অন্য বোন বা নারী তার চাদর তাকে পরিয়ে দিবে।” আর ঈদের নামাযের ইমামের উচিত হচ্ছে, ঈদের খুতবার সময় পুরুষদেরকে নসীহত করার সময় বিশেষভাবে নারীদেরকেও নসীহত করবেন। তাদের সাথে বিশেষিত বিধি-বিধান সমূহ বর্ণনা করবেন। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। তিনি পুরুষদের নসীহত করার পর নারীদের দিকে আলাদাভাবে গিয়ে তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করেছেন।
প্রশ্নঃ (৩৩১) এক শহরে একাধিক ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি প্রয়োজন দেখা যায় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন প্রয়োজন দেখা দিলে জুমআর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা যায়। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
“দ্বীনের মাঝে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য কোন অসুবিধা রাখেন নি।” (সূরা হাজ্জঃ ৭৮)
একাধিক স্থানে নামায অনুষ্ঠিত জায়েয না হলে নিশ্চিতভাবে অনেক মানুষ জুমআ ও ঈদের নামায থেকে বঞ্চিত হবে। ‘প্রয়োজন্তু বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেমন শহর অনেক বড়। শহরের সকল প্রান্ত থেকে লোকদের একস্থানে সমবেত হওয়া কষ্টকর, অথবা ঈদগাহে জায়গার সংকুলান না হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এধরণের কোন অসুবিধা না থাকলে একাধিক স্থানে জুমআ বা ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করা যাবে না।
প্রশ্নঃ (৩৩২) দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি কিরূপ?
উত্তরঃ দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রথমে ইমাম উপস্থিত লোকদের নিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার পর অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর দিবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং সূরা ‘ক্বাফ’ পাঠ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবীর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে এবং সূরা পাঠ শুরু করার পূর্বে অতিরিক্ত পাঁচটি তাকবীর প্রদান করবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে সূরা ‘ক্বামার’ পাঠ করবে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ঈদের নামাযে এ দু’টি সূরা পাঠ করতেন। অথবা ইচ্ছা করলে প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়া’ পাঠ করবে।
জেনে রাখুন, জুমআ ও ঈদের নামায দু’টি সূরার ক্ষেত্রে একই, আর দু’টি সূরার ক্ষেত্রে পৃথক। যে দু’টি সূরা উভয় নামাযে পাঠ করতে হয় তা হচ্ছে: ‘সূরা আল আ‘লা’ ও ‘সূরা গাশিয়া’। আর যে দু’টি সূরার ক্ষেত্রে এ দু’নামায পৃথক তা হচ্ছে: ঈদের নামাযে পাঠ করতে হয়, সূরা ‘ক্বাফ’ ও সূরা ‘ক্বামার’। আর জুমআর নামাযে পাঠ করতে হয় সূরা ‘জুমআ’ ও সূরা ‘মুনাফিকূন’। প্রত্যেক ইমামের জন্য উচিত হচ্ছে, এ নামাযগুলোতে উক্ত সূরা সমূহ পাঠ করার সুন্নাতকে পূনর্জীবিত করা। যাতে করে মুসলমানগণ তা জানতে পারে এবং কেউ তা পাঠ করলে যেন প্রতিবাদ না করে।
তারপর নামায শেষ করে ইমাম খুতবা দিবেন। উচিত হচ্ছে খুতবায় নারীদেরকে বিশেষভাবে নসীহত করবে। তাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশনা দিবে অসৎ কাজের ভয়াবহতা বর্ণনা করবে ও তা থেকে নিষেধ করবে।
প্রশ্নঃ (৩৩৩) ঈদের নামাযের পূর্বে দলবদ্ধভাবে মাইক্রোফোনে তাকবীর প্রদান করার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা বৈধ নয়। কেননা এধরণের পদ্ধতি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজে আলাদাভাবে তাকবীর পাঠ করবে।
প্রশ্নঃ (৩৩৪) ঈদের তাকবীর কখন থেকে পাঠ করতে হবে? তাকবীর পড়ার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ ঈদের তাকবীর শুরু হবে রামাযানের শেষ দিন সূর্যাসে-র পর থেকে। শেষ হবে ঈদের নামাযে ইমাম উপস্থিত হলেই। তাকবীরের পদ্ধতিঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। অথবা পাঠ করবেঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থাৎ তাকবীরগুলো দু’বার করে পাঠ করবে অথবা তিনবার করে পাঠ করবে। সবগুলোই জায়েয। পুরুষদের জন্য উচিত হচ্ছে এই তাকবীর সমূহ সর্বস্থানে উঁচু কন্ঠে পাঠ করবে। হাটে-বাজারে, মসজিদে, গৃহে সবখানে। কিন্তু নারীদের জন্য উত্তম হচ্ছে নীচু কন্ঠে তাকবীর পাঠ করা।
প্রশ্নঃ (৩৩৫) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ অধিকাংশ বিদ্বানের মতে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। ওয়াজিব নয়। নিঃসন্দেহে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামাযের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অতি গুরুত্বসহকারে অন্যান্য নামায থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি এ নামায আদায় করেছেন।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ এ নামাযকে ফরযে আঈন বা ফরযে কেফায়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের দলীল হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামাযের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর নির্দেশ মানেই ফরয বা ওয়াজিব। তাছাড়া অন্যান্য নিদর্শন থেকেও এনামাযের অতিরিক্ত গুরুত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া বান্দার ত্রুটির কারণেই এই সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয়ে থাকে এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এটি একটি সতর্কতা। তাই বান্দাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে এই শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে কাকুতি-মিনতী করা এবং ছালাত আদায় করা।
নিঃসন্দেহে এমতের পক্ষের দলীল ও যুক্তি শক্তিশালী। সর্বনিম্ন বিষয়টি ফরযে কেফায়া। আমিও এটাই মনে করি। জমহুর (অধিকাংশ) বিদ্বান যে মত পোষণ করেন্ত অর্থাৎ সুন্নাতে মুআক্কাদা- তাদের মতের পক্ষে ওয়াজিবকে প্রত্যাখ্যান করার কোন দলীল নেই। তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদীছটি তাদের পক্ষে দলীল হতে পারে: গ্রাম্য ব্যক্তিকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর নির্দেশ দিলেন তখন সে প্রশ্ন করল, এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ছাড়া কি আমার উপর অন্য কিছু ফরয রয়েছে? তিনি বললেন, “না, তবে তুমি নফল আদায় করতে পার।” এ হাদীছের মাধ্যমে অন্যান্য নামাযের আবশ্যকতা বা ফরয হওয়া অস্বীকার করা যাবে না- যদি তার যথাপযোক্ত কারণ থাকে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ‘না’ বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্নাত নামায সমূহ যা দিন্তরাতে বার বার আদায় করতে হয় তা আবশ্যক নয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট নামায সমূহের আবশ্যকতা এখানে নিষেধ করা হয়নি।
মোটকথা, আমরা যা মনে করি তা হচ্ছে, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায ফরযে আঈন বা ফরযে কেফায়া। [১]
** ১। এ নামায চারটি রুকু ও চারটি সিজদার মাধ্যমে সর্বমোট দু’রাকাত আদায় করতে হয়। ইমাম প্রথমে সুরা ফাতিহা পাঠ করে দীর্ঘ একটি সুরা পাঠ করবেন, এরপর রুকু করবেন। রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদায় না গিয়ে আবার দীর্ঘ একটি সুরা পাঠ করবেন। তারপর দুটি সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দণ্ডায়মান হবে এবং এ রাকাতও প্রথম রাকাতের ন্যায় দুটি রুকু ও দুটি সিজাদার মাধ্যমে আদায় করবেন।
প্রশ্নঃ (৩৩৬) সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের নামায ছুটে গেলে কিভাবে তা কাযা আদায় করবে?
উত্তরঃ সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের নামায থেকে কারো যদি এক রাকাত ছুটে যায়, তবে সে সম্পর্কে হাদীছে এরশাদ হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“তোমরা যখন নামাযের ইকামত শুনবে তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থির এবং প্রশান্তির সাথে নামাযের দিকে আগমণ করবে। তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।”
অতএব যার এক রাকাত নামায ছুটে যাবে সে উহা পূর্ণ করবে- ইমাম যেভাবে আদায় করেছিল সেভাবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী (পূর্ণ করে নিবে) সাধারণভাবে এ অর্থই বহণ করে। এই প্রশ্নটি থেকে আরেকটি শাখা প্রশ্ন আরো জটিল আকারে দেখা দিয়েছে। তা হচ্ছে, কারো যদি প্রথম রুকূ ছুটে যায় তবে সি কি করবে? উত্তরঃ কারো প্রথম রুকূ ছুটে গেলে তার রাকাতটিই ছুটে গেল। ইমাম সালাম ফেরানোর পরিপূর্ণ রাকআতটি সে পুনরায় আদায় করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাধারণ বাণী একথাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, “আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।”
প্রশ্নঃ (৩৩৭) ইস্তেস্কার নামাযে চাদর উল্টিয়ে নেয়ার কাজটি কখন করতে হবে? দু’আর সময় নাকি গৃহ থেকে বের হওয়ার সময়? আর এই চাদর উল্টানোর হিকমত কি?
উত্তরঃ বৃষ্টি প্রার্থনার নামাযে চাদর উল্টিয়ে নেয়ার কাজটি নামায শেষ করে ইমামের খুতবার সময় করতে হবে। যেমনটি বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। একাজের হিকমত তিনটি উপকারিতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়ঃ
প্রথমতঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ।
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্র কাছে এই আশাবাদ পোষণ করা যে, তিনি দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টিকে সাচ্ছন্দ ও উর্বরতায় পরিবর্তন করে দিবেন।
তৃতীয়তঃ মানুষকে এটি একটি ইঙ্গিত যে, নিজের অবস্থাকে আল্লাহ্ বিমূখতা ও নাফরমানী থেকে পরিবর্তন করে আল্লাহ্র দিকে ধাবিত করা, তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে ধরা। কেননা তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ ভীতি আভ্যন্তরীন পোষাক। আর চাদর বা কাপড় বাহ্যিক পোষাক। অতএব সে বাহ্যিক পোষাককে উল্টিয়ে নেয়ার সাথে সাথে যেন আভ্যন্তরীন পোষাকেরও অবস্থান ঠিক করে নেয়।
প্রশ্নঃ (৩৩৮) কেউ কেউ বলে থাকে, “তোমরা ইস্তেস্কা তথা বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আ না করলেও বৃষ্টি হবে।” একথা সম্পর্কে আপনার মত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি এব্যক্তি ভয়ানক বিপজ্জনক ও অপরাধের কথা বলেছে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
“তোমাদের পালনকর্তা বলেন তোমরা আমাকে ডাক (দু’আ কর) আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফেরঃ ৬০)
আল্লাহ্ তা’আলা মহাজ্ঞানী। নিজ অনুগ্রহ প্রদান করতে কখনো তিনি দেরী করেন, যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে তারা তাঁর কাছে কত অভাবী, কত মুখাপেক্ষী, তিনি ছাড়া তাদের আর কোন রক্ষাকারী আশ্রয়দাতা নেই। তিনি অনেক সময় মানুষের দু’আর কারণে বৃষ্টি নাযিল করেন। কিন্তু অনেক সময় বৃষ্টি হয়ও না। নিঃসন্দেহে এতে আল্লাহ্র কোন হিকমত আছে এবং মানুষের কোন কল্যাণ আছে যা আমাদের জ্ঞানের বাইরে। কেননা আল্লাহ্ সর্বাধিক জ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মানুষ নিজের উপর যতটুকু দয়াশীল আল্লাহ্ তাদের উপর তার চেয়ে অধিক দয়াশীল ও করুণাময়। অনেক সময় মানুষ দু’আ করে কিন্তু কবূল হয় না। কখনো দু’আ করে কাজ হয়, কখনো দু’আ করে কাজ হয় না। এ সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“তোমাদের দু’আ কবূল করা হবে যে পর্যন্ত তাড়াহুড়া না করবে। বলবে, দু’আ তো অনেক করলাম, কিন্তু কবূল হল না।”
তখন অনেক লোক হাহুতাশ করবে আক্ষেপ করবে এবং দু’আ করাই ছেড়ে দিবে। (আঊযুবিল্লাহ্) অথচ মানুষ দু’আ করলেই তাকে ছওয়াব দেয়া হবে। কেননা দু’আ একটি ইবাদত। তাই দু’আ যে ব্যক্তিই করুক না কেন সে-ই লাভবান। বরং হাদীছে এসেছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“যে কোন মুসলিম আল্লাহ্র কাছে দু’আ করবে- যে দু’আয় কোন গুনাহ্ থাকবে না, কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা থাকবে না। তাহলে আল্লাহ্ তাকে তিনটির যে কোন একটি দান করবেন
১) তার দু’আ দুনিয়াতেই কবূল করা হবে
২) আখেরাতে তার জন্য তা সঞ্চয় করে রাখা হবে।
৩) তার দু’আর অনুরূপ একটি অমঙ্গল তার থেকে দূরীভূত করা হবে।”
প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য যে ব্যক্তি ব্যবহার করেছে তাকে নসীহত করছি, আপনি আল্লাহ্র কাছে তওবা করুন। কেননা এটি একটি মহা অপরাধ মূলক কথা। আল্লাহ্র নির্দেশ বিরোধী কথা ও তাঁর সাথে চ্যালেঞ্জ করা।
প্রশ্নঃ (৩৩৯) কোন ব্যক্তি নিজের দাফনের ব্যাপারে স্থান নির্ধারণ করে ওসীয়ত করলে তার বিধান কি?
উত্তরঃ
প্রথমতঃ তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন সে এ স্থান নিজের জন্য চয়ন করল? যদি এরকম হয় যে, উক্ত স্থানে কোন ভন্ড মিথ্যুক ওলীর মাজার আছে। অথবা এমন মাজার আছে যেখানে অহরহ শির্কের চর্চা হয়। অথবা এরকম কোন কারণ আছে যা শরীয়ত বহির্ভূত। তবে এক্ষেত্রে তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন করা যাবে না। বরং সে মুসলিম হলে তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ উল্লেখিত কোন কারণ যদি না থাকে। বরং এমনিই নিজ এলাকায় লাশ স্থানান্তরের ওসীয়ত করেছে। তবে এই ওসীয়ত পূর্ণ করতে গেলে যদি আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তা বাস্তবায়ন করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু যদি দেখা যায় যে, বিশাল আকারের অর্থ ব্যয় না করলে তার ওসীয়তকৃত স্থানে লাশ নেয়া যাবে না, তবে তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন করবে না। বরং মুসলমানদের যে কোন গোরস্থানে দাফন করে দিবে। কেননা আল্লাহ্র নিকট পৃথিবীর সকল স্থানের মর্যাদা একই রকম।
প্রশ্নঃ (৩৪০) মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার তালক্বীন দিতে হবে?
উত্তরঃ মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তালক্বীন দিতে হবে। যে ব্যক্তির রূহ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার কাছে বসে তাকে পাঠ করতে বলবে, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “চাচা! আপনি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন। এই কালেমা দ্বারা আমি আল্লাহ্র কাছে আপনার মুক্তির জন্য সুপারিশ করব।” কিন্তু চাচা আবু তালেব উহা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং শির্কের উপর মৃত্যু বরণ করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ্)
কিন্তু মৃত্যুর পরবর্তী দাফনের পর তালক্বীন দেয়া একটি বিদআত। কেননা এব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীছ প্রমাণিত নেই। তবে দাফনের পর যা করা উচিত সে সম্পর্কে আবূ দাঊদে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মৃতকে দাফন শেষ করলে তার কবরের কাছে দাঁড়াতেন এবং বলতেন,
“তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ়তা কামনা কর। কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।”
কিন্তু কবরের কাছে কুরআন তেলাওয়াত বা সূরা পাঠ বা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালক্বীন দেয়া ভিত্তিহীন বিদআত।
প্রশ্নঃ (৩৪১) দূর-দুরান্ত থেকে নিকটাত্মীয়দের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে বিলম্ব করার বিধান কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“তোমরা জানাযা বহণ করার সময় দ্রুত গতিতে চল। কেননা সে যদি নেক হয় তবে তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে খারাপ লোককে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে।”
কোন কোন নিকটাত্মীয়ের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় বিলম্ব করা উচিত নয়। তবে অল্প কিছু সময় দেরী করাতে কোন দোষ নেই। তারপরও দ্রুত জানাযার ব্যবস্থা করাই উত্তম। নিকটাত্মীয়গণ বিলম্বে পৌঁছলেও কোন অসুবিধা নেই। তারা মৃতের কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করতে পারবে। যেমনটি করেছিলেন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। জনৈক মহিলা মসজিদে নববী ঝাড়- দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে মৃত্যু বরণ করলে লোকেরা বিষয়টি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না জানিয়েই তাকে দাফন করে দেয়। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করেন।”
প্রশ্নঃ (৩৪২) জানাযার নামাযে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবকে সংবাদ দেয়া কি নিষিদ্ধ ‘নাঈ’ তথা ঘটা করে মৃত্যু সংবাদ প্রচারের অন্তর্ভুক্ত হবে? নাকি তা বৈধ?
উত্তরঃ এধরণের সংবাদ প্রদান বৈধ। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাশীর মৃত্যু দিনে তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। তাছাড়া মসজিদে নববীর ঝাড়-র কাজে নিয়োজিত মহিলাটি মৃত্যু বরণ করলে ছাহাবীগণ তাঁকে না জানিয়েই দাফন করে দেয়। তখন তিনি ছাহাবীদেরকে বলেন, “কেন তোমরা আমাকে জানালে না?” অতএব মুছল্লী বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৃত্যু সংবাদ প্রদান করতে কোন দোষ নেই। কেননা এর উদাহরণ হাদীছে পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে জানাযা নামাযে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিকটাত্মীয় ও শুভাকাংখীদেরকে সংবাদ দেয়াতেও কোন দোষ নেই।
**কিন্তু যে বিষয় নিষিদ্ধ তা হচ্ছে, ঘটা করে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা। এর জন্য অর্থ ব্যায় করে মাইকিং করা বা রেডিও, টিভিতে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা। কেননা হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী (সাঃ) মৃত্যু সংবাদ পরিবেশন করতে নিষেধ করেছেন (তিরমিজী) তিনি আরও বলেন “তোমরা মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা থেকে সাবধান! কেননা মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা জাহেলিয়াতের রীতি (তিরমিজি – অধ্যায়ঃ জানাযা)
প্রশ্নঃ (৩৪৩) মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছেঃ গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অতঃপর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আসে- করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (নযর না দিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং ছালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে উভয় ঠোঁটের ভিতরের অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান সাইডের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে। তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পূর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী (ছা:) তাঁর কন্যা যায়নাবের (রাঃ) শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তাঁকে প্রয়োজন মনে করলে তিনবার বা পাঁচবার বা তার চেয়ে অধিকবার গোসল দিতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ (৩৪৪) দুর্ঘটনা কবলিত, আগুনে পুড়া প্রভৃতি কারণে শুধুমাত্র দু’একটি অঙ্গ পাওয়া গেলে তার জানাযা ও গোসলের নিয়ম কি?
উত্তরঃ মৃতের উপর জানাযা পাঠ করার পর যদি তার সামান্য কোন অঙ্গ পাওয়া যায়, তবে তার জানাযা আর পড়তে হবে না। যেমন, জনৈক মৃত ব্যক্তিকে জানাযা দিয়ে আমরা তাকে দাফন করলাম। কিন্তু একটি পা বা হাত কাটা ছিল। দাফন করার পর উহা পাওয়া গেল। এখন এই কর্তিত অংশের জানাযা পড়তে হবে না। কেননা মৃতের উপর তো জানাযা হয়েই গেছে।
কিন্তু যদি মৃতের শরীরের মূল অংশই না পাওয়া যায়। শুধু তার কোন অঙ্গ পাওয়া গেল যেমন মাথা বা পা বা হাত। তবে যা পাওয়া যায় তাই গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে তার জানাযা পড়বে তারপর দাফন করবে। (আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (৩৪৫) জনৈক মহিলার গর্ভস্ত সন্তানের বয়স ছয় মাস হলে তা পড়ে যায়। সে কিন্তু বিভিন্ন ধরণের কষ্টকর ও ক্লান্তিকর কাজ করতো এবং সেই সাথে রামাযান মাসে ছিয়ামও পালন করতো। তার আশংকা হচ্ছে এই গর্ভপাতের কারণ সে নিজেই। কারণ গর্ভ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতো। তাছাড়া জানাযা না পড়েই উক্ত মৃত সন্তানকে দাফন করে দেয়া হয়েছে। তার জানাযা না পড়া কি ঠিক হয়েছে? আর এই মহিলাই বা কি করবে, যে কঠিন পরিশ্রম করার কারণে বাচ্চা মারা গেছে এই অনুশোচনায় ভুগছে।
উত্তরঃ চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর যদি গর্ভস্ত সন্তান পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও দাফন করা ওয়াজিব। কেননা চার মাস পূর্ণ হলে প্রত্যেক ভ্রুণে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। যেমন আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন, তিনি সত্যবাদী এবং সত্যায়িতঃ “তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথমে চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিনে উহা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিনে উহা মাংশ পিন্ডে রুপান্তরিত হয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।”
ইহা একশত বিশ দিন অর্থাৎ চার মাস। সে যদি এই সময়ের পর মাতৃগর্ভ থেকে পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দিতে হবে, কাফন পরাতে হবে এবং জানাযা পড়তে হবে। আর সে মানুষের সাথে ক্বিয়ামত দিবসে পূণঃরুত্থিত হবে।
কিন্তু চার মাসের কম বয়সে পড়ে গেলে তাকে গোসল দিতে হবে না, কাফন পরাতে হবে না এবং জানাযাও দিতে হবে না। কেননা ওটা গোশতের একটি টুকরা মানুষ নয়।
প্রশ্নে উল্লেখিত সন্তানের বয়স ছয় মাস হওয়ার পর গর্ভপাত হয়ে গেছে। ওয়াজিব হচ্ছে, তার গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও জানাযা পড়া। কিন্তু যেহেতু এর কোনটাই করা হয়নি, তাকে দাফন করে দেয়া হয়েছে। তবে কবর কোনটি জানা থাকলে তার কবরে গিয়ে জানাযা নামায আদায় করতে হবে। আর জানা না থাকলে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করে নিবে। যে কোন ভাবে একবার জানাযা পড়ে নিলেই হল।
আর প্রশ্নে উল্লেখিত মহিলাটির যে আশংকা তার কোন ভিত্তি ও প্রভাব নেই। এনিয়ে অনুশোচনায় ভুগা উচিত নয়। অনেক ভ্রুণই এভাবে মাতৃগর্ভে কারণে-অকারণে মরে যায় এবং পড়ে যায়। এনিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই। তাকে কোন কিছুই করতে হবে না। অতএব আবশ্যক হচ্ছে এই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা মন থেকে ঝেড়ে ফেলা এবং স্বভাবিক জীবন যাপন করা। (আল্লাই তাওফীক দাতা ও ক্ষমাকারী।)
প্রশ্নঃ (৩৪৬) জানাযা নামায আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ জানাযা পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ইমাম পুরুষের লাশের মাথা বরাবর, আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে। চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করতে হয়। অন্তরে নিয়ত করে দাঁড়াবে। (আরবীতে বা বাংলায় মুখে নিয়ত বলা বা শিখিয়ে দেয়া বিদআত।) প্রথম তাকবীর দিয়ে আঊযুবিল্লাহ্… বিসমিল্লাহ্… পাঠ করে সূরা ফাতিহা তারপর ছোট কোন সূরা পাঠ করবে। বিদ্বানদের অনেকে ছোট একটি সূরা পাঠ করা সুন্নাত বলেছেন। (তবে ছানা পাঠ করার কোন ছহীহ্ হাদীছ নেই) দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদে ইবরাহীম (যা ছালাতে পাঠ করতে হয়) পাঠ করবে।
এরপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে জানাযার জন্য বর্ণিত যে কোন দু’আ পাঠ করবে। এই দু’আটি পাঠ করা যেতে পারে,
“হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপসি’ত, ছোট ও বড় নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপরে জীবিত রাখুন, এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তার ছওয়াব হতে বঞ্চিত করবেন না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবেন না।”
এবং এই দু’আটিও পড়তে পারে,
“হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন। তাকে মাফ করে দিন। তার আতিথেয়তা সম্মান জনক করুন। তার বাসস্থানকে প্রশস্ত করে দিন। আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে। তাকে গুনাহ হতে এমন ভাবে পরিস্কার করুন যেমন করে সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। তাকে তার (দুনিয়ার) ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করুন। তার (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার দান করুন। আরো তাকে দান করুন দুনিয়ার স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তাকে বেহেসে-প্রবেশ করিয়ে দিন, আর কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব হতে পরিত্রাণ দিন।”
এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।” তারপর ডান দিকে সালাম ফিরাবে। বাম দিকেও সালাম ফেরাতে পারে। পঞ্চম তাকবীর প্রদান করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটাও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত। অতএব কখনো কখনো পঞ্চম তাকবীর দিয়ে জানাযা পড়াও সুন্নাত। আর যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে মানুষের উচিত হচ্ছে সেগুলোর উপর আমল করা। কখনো এটা আমল করবে কখনো ওটা আমল করবে। যদিও চার তাকবীরে জানাযা পাঠ করার বিষয়টি বহুল প্রচলিত।
কয়েকটি লাশ একত্রিত হলে একসাথে জানাযা পড়া যাবে। তখন ইমামের নিকটবর্তী রাখবে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকে, তারপর নাবালেগ পুরুষ, এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা, অতঃপর নাবালেগ মেয়েদেরকে রাখবে। এদেরকে সাাজনোর তারতীব হচ্ছে, মহিলাদের বুক বরাবর পুরুষদের মাথা রাখতে হবে। আর ইমাম দাঁড়াবে পুরুষদের মাথা বরাবর। যাতে করে প্রত্যেকটি লাশের সামনে ইমামের দাঁড়ানো শরীয়ত সম্মত হয়।
লক্ষনীয় একটি বিষয়, সাধারণ মানুষের অনেকে ধারণা করে যে, যারা জানাযা উপস্থাপন করবে তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, ইমামের ডানে বামে দাঁড়ানো। বরং কমপক্ষে একজন হলেও ইমামের সাথে দাঁড়াবে। কিন্তু এটা ভুল। কেননা সুন্নাত হচ্ছে, ইমাম সম্মুখে একাকী দাঁড়াবেন। যদি তারা প্রথম কাতারে স্থান না পায় তবে ইমামের পিছনে প্রথম কাতারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়বে।
প্রশ্নঃ (৩৪৭) মৃত ব্যক্তি যদি বেনামাযী হয় বা বেনামাযী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে বা সে মূলতঃ নামাযী বা বেনামাযী তার বিষয়টি অজানা থাকে, তবে তার জানাযা পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি জানা যায় যে মৃত ব্যক্তি বেনামাযী ছিল, তবে তার জানাযা আদায় করা নাজায়েয। বেনামাযী মৃতের অভিভাবকদের জন্য বৈধ নয়; তার লাশকে মুসলমানদের সামনে জানাযার জন্য উপস্থিত করা। কেননা সে কাফের মুরতাদ। আবশ্যক হচ্ছে, তার জানাযা না পড়া এবং মুসলমানদের গোরস্থান ছাড়া অন্য যে কোন স্থানে গর্ত খনন করে তার লাশ সেখানে নিক্ষেপ করা। তার কোনই মর্যাদা নেই। কেননা ক্বিয়ামত দিবসে তার হাশর হবে ফিরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে।
কিন্তু যে ব্যক্তির অবস্থা অজ্ঞাত বা সন্দেহপূর্ণ তার জানাযা পড়তে হবে। কেননা আসল হচ্ছে সে মুসলিম এবং নামাযী। যতক্ষণ না প্রমাণিত হবে যে সে মুসলমান নয়। তবে সন্দেহ হলে দু’আর ক্ষেত্রে শর্ত করা যায়। দু’আয় এরূপ বলবে: اللهم إن كان مؤمنا فاغفر له وارحمه “হে আল্লাহ্! লোকটি যদি মু’মিন হয় তবে তাকে ক্ষমা কর, দয়া কর…। আর দু’আয় শর্ত করা বৈধ আছে। লে’আনের মাসআলায় স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে ব্যাভিচারের দোষারোপ করে এবং তাদের মধ্যে কেউ চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে, তবে লে’আন করবে। পুরুষ পঞ্চমবারে বলবে, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তবে আমার উপর আল্লাহ্র লা’নত।” আর স্ত্রীও পঞ্চমবারে বলবে, “আমার উপর আল্লাহ্র লা’নত, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই।”
প্রশ্নঃ (৩৪৮) জানাযা নামাযের জন্য কোন সময় নির্ধারিত আছে কি? রাতে কি দাফন করা জায়েয। জানাযার উপস্থিতিতে লোক সংখ্যার কি কোন সীমারেখা আছে?
উত্তরঃ জানাযা নামায আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এই কারণে যে, মৃত্যুর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যখনই মানুষ মৃত্যু বরণ করবে তাকে গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে তার জানাযা আদায় করবে। তা রাতে হোক বা দিনে। দাফন করবে রাতে হোক বা দিনে। তবে তিনটি সময়ে দাফন করা জায়েয নয়:
১) সূর্য উদয় থেকে নিয়ে এক তীর পরিমাণ সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত।
২) মধ্য দুপুরে, সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলা পর্যন্ত। অর্থাৎ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পূর্বে প্রায় দশ মিনিট।
৩) সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্বে। অর্থাৎ এক তীর পরিমাণ সূর্য থাকার পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।
এই তিনটি সময়ে দাফন করা জায়েয নয়। এ সময়গুলোতে দাফন করা নিষেধ অর্থাৎ দাফন করা হারাম। কেননা ঊক্ববা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তিনটি সময়ে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, নামায আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদেরকে দাফন করতে।”
জানাযা নামাযে সর্বনিম্ন কত লোক হতে হবে তার কোন সীমা নির্ধারণ করা নেই। বরং একজন লোকও যদি জানাযা পড়ে যথেষ্ট হবে।
গোরস্থানে গিয়ে জানাযা পড়া জায়েয। এজন্য বিদ্বানগণ গোরস্থানে নামায আদায় করার নিষেধাজ্ঞা থেকে জানাযার বিষয়টিকে স্বতন্ত্র রেখেছেন। তাঁরা বলেন, গোরস্থানে জানাযা নামায আদায় করা জায়েয। হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে, মসজিদে নববী ঝাড়-র কাজে নিয়োজিত মহিলাটির জানাযা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কবরে গিয়ে আদায় করেছিলেন। সে রাতে মৃত্যু বরণ করলে ছাহাবীগণ তাঁকে না জানিয়েই দাফন করে দেয়। অতঃপর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, “তার কবর কোথায় আমাকে দেখিয়ে দাও।” তারপর তিনি তার কবরে জানাযা আদায় করলেন।
প্রশ্নঃ (৩৪৯) গায়েবানা জানাযার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে গায়েবানা জানাযা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে ব্যক্তির জানাযা হয়নি তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। যেমন জনৈক মুসলমান কোন কাফের ভুখন্ডে মৃত্যু বরণ করল অথবা সমুদ্র বা নদীর পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করল কিন্তু তার লাশ পাওয়া গেল না। তখন তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু যার জানাযা পড়া হয়েছে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা এব্যাপারে নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযা ছাড়া হাদীছে আর কোন দীলল নেই। কিন্তু নাজাশীর জানাযা তার নিজ দেশে পড়া হয়নি। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় তার গায়েবানা জানাযা আদায় করেন।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে অনেক নেতৃবৃন্দ ও গোত্রপ্রধান মৃত্যু বরণ করেন কিন্তু এরকম কোন বর্ণনা নেই যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের গায়েবানা জানাযা আদায় করেছেন। বিদ্বানদের মধ্যে আবার কেউ বলেন, মৃত ব্যক্তি যদি এমন পর্যায়ের লোক হয় যার সম্পদ, কার্যক্রম ও জ্ঞান্তবিদ্যা দ্বারা ধর্মের উপকার ও কল্যাণ সাধিত হয়েছে তবে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যায়। আর এরূপ না হলে গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। আবার কেউ বলেন, কোন শর্ত ছাড়াই সব ধরণের ব্যক্তির জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয। এটি সর্বাধিক দুর্বল মত।
প্রশ্নঃ (৩৫০) কোন কোন দেশে মৃত ব্যক্তিকে পিঠের উপর শুইয়ে হাত দু‘টো পেটের উপর রেখে দাফন করা হয়। দাফনের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, মৃতকে ডান কাতে শুইয়ে কিবলামুখি রেখে দাফন করা। কেননা কা’বা শরীফ হচ্ছে সকল মুসলমানের জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থার কিবলা। যেমন করে ঘুমন্ত ব্যক্তির জন্য সুন্নাত হচ্ছে ডান কাতে শোয়া। তেমনি মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে রেখে দাফন করতে হবে। কেননা নিদ্রা ও মৃত্যুকে আল্লাহ্ তা’আলা ওফাতরূপে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“আল্লাহ্ই প্রাণ হরণ করেন জীব সমূহের তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর যার জন্যে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” (সূরা যুমারঃ ৪২)
তিনি আরো বলেনঃ
“আর সেই মহা প্রভুই রাত্রিকালে নিদ্রারূপে তোমাদের নিকট এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম করে থাক তিনি সেটাও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, তারপর পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের কৃত-কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।” (সূরা আনআমঃ ৬০)
প্রশ্নকারী যা দেখেছে তা হয়তো ঐ এলাকার লোকদের অজ্ঞতার ফল। অন্যথা আমি জানিনা বিদ্বানদের কেউ এমত পোষণ করেছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে পিঠের উপর শুইয়ে তার হাত দু‘টোকে পেটের উপর রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ (৩৫১) গোরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং দু’আ করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবরে বা গোরস্থানে কুরআন তেলাওয়া করা বিদআত। এ সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই। আর যে ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই তা আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে উদ্ভাবন করা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত কাজই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।”
অতএব মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, পূর্ববর্তী নেক সম্প্রদায় ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। যাতে করে তারা কল্যাণ ও হেদায়াত লাভ করতে পারে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“নিশ্চয় সর্বত্তোম বাণী হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব, আর সর্বত্তোম হেদায়াত হচ্ছে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হেদায়াত।”
কবরের কাছে গিয়ে মৃতের জন্য দু’আ করাতে কোন অসুবিধা নেই। কবরের কাছে দন্ডায়মান হয়ে সাধ্যানুযায়ী মৃতের জন্য দু’আ করবে। যেমন এরূপ বলবে, “হে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ্ তাকে দয়া কর। হে আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। হে আল্লাহ্ তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। .. ইত্যাদি।
আর কবরের কাছে নিজের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে কেউ যদি সেখানে যায়, তবে তা বিদআত। কেননা শরীয়তের প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন স্থানকে দু’আর জন্য নির্ধারণ করা যাবে না। আর যে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই তা নিজেদের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা বিদআত।
প্রশ্নঃ (৩৫২) কবর যিয়ারত করার নিয়ম কি? নারীদের কবর যিয়ারত করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করার পর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অনুমতি প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
“পূর্বে আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা উহা যিয়ারত করতে পার। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করাবে।”
অতএব মরণের কথা স্মরণ ও উপদেশ গ্রহণের জন্য কবর যিয়ারত করতে হবে। কেননা মানুষ যখন মৃত লোকদের কবর যিয়ারত করবে, যারা কিনা তাদের সাথে তাদের মতই পৃথিবীতে বিচরণ করত, খানা-পিনা করত, দুনিয়াদারী করত। আজ তারাই নিজেদের কর্মের হাতে বন্দী। কর্ম ভাল থাকলে তাদের পরিণাম ভাল। কর্ম মন্দ থাকলে পরিণাম মন্দ- তখন নিঃসন্দেহে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করবে তার অন্তর নরম হবে, সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হবে। তখন আল্লাহ্র নাফরমানী থেকে ফিরে আসবে তাঁর আনুগত্যের দিকে। কবর যিয়ারতের সময় সুন্নাত হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পঠিত দু‘আ পাঠ করা। কবরবাসীকে সালাম দিবেঃ
“হে কবরের অধিবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ! আপনাদের প্রতি শান্তির ধারা বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরাও আপনাদের সাথে এসে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের উপর রহম করুন। আপনাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি।”
আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এমন কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি কবর যিয়ারতের সময় সূরা ফাতিহা, বা সূরা ইখলাছ বা দরূদ শরীফ পাঠ করেছেন। অতএব কবর যিয়ারতের সময় এগুলো পাঠ করা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শরীয়ত বহির্ভূত কাজ।
নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারত কারীনীদেরকে লা‘নত করেছেন। আরো লা‘নত করেছেন কবরে বাতি জ্বালানো ও মসজিদ নির্মাণকারীদেরকে। অতএব নারীদের জন্য কবর যিয়ারত হালাল নয়। এই নিষিদ্ধতা যদি কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু কবর যিয়ারতের নিয়ত ছাড়া অন্য কোন কারণে যদি ঘর থেকে বের হয়; তারপর চলার পথে কবর বা গোরস্থান পাওয়া যায়, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শিখানো পদ্ধতিতে সালাম প্রদান করবে। অতএব ঘর থেকে শুধুমাত্র কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা এর মাধ্যমে নিজেকে ফিৎনার সম্মুখিন করবে। কিন্তু কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য না করে বের হয়ে চলতি পথে পাওয়া কবরে সালাম প্রদান করাতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৩৫৩) মৃতের বাড়ীতে কুরআন খানী অনুষ্ঠান করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোরানখানী মাহফিল করা একটি বিদআত। কেননা ইহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিত ছিল না। কুরআন দ্বারা দুঃখ-চিন্তা হালকা হয়- যদি কোন ব্যক্তি উহা নীচু স্বরে তেলাওয়াত করে থাকে। জোরে চিৎকার করে বা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠ করলে এরূপ হয় না। কেননা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করলে সমস্ত মানুষ তা শুনে থাকে এমনকি খেলা-ধুলায় লিপ্ত লোকদের কানেও তা পৌঁছে কিন্তু তারা তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। এমনকি আপনি দেখবেন যারা গান্তবাদ্য শুনে তাদের কাছেও ঐ কুরআনের আওয়াজ পৌঁছে। তারা গানও শুনছে কুরআনও শুনছে। ফলে তারা যেন এই কুরআনকে ঠাট্টা ও তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত করেছে। কুরআনের অবমাননা করছে।
আর শোক-সমবেদনা জানাতে ও আগত লোকদের স্বাগত জানানোর জন্য মৃতের পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া একটি বিদআত। অনুরূপভাবে মৃতের বাড়ীতে ভোজের আয়োজন করাও একটি বিদআত। কেননা বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে পরিচিত ছিল না। তবে চলতে ফিরতে, মসজিদে বাজারে মৃতের পরিবারকে শোক জানানোতে কোন অসুবিধা নেই। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে সমবেত লোকদের জন্য খাদ্য প্রস্তত করাকে ছাহাবায়ে কেরাম নিষিদ্ধ নিয়াহা বা ‘মৃতের জন্য বিলাপ’ এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। আর মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকে লা‘নত করেছেন। তিনি বলেন,
“উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামত দিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানো হবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।”
(আমরা আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত, তারা যেন এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়। কেননা বিদআত পরিত্যাগে তাদের যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃত ব্যক্তির। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে।”
এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’ একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এই ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকে দেয়া হবে না। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
“একজন অন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪)
আর শাস্তি মানেই দন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “সফর শাস্তির একটি অংশ।” অথচ এখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্ট প্রভৃতি।
সারকথা মুসলিম ভাইদেরকে আমি নসীহত করি, তারা যেন শরীয়ত বহির্ভূত এই কুসংস্কার পরিত্যাগ করে যা তাদেরকে আল্লাহ্ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে এবং মৃতদের শাস্তি বৃদ্ধি করবে।
মন্তব্য করুন