প্রবন্ধ

জান্নাতী রমণী-৩য় পর্ব

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেনা

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু।

জান্নাতী রমণীর পর্দার বিবরণঃ

 ইসলামী শরীয়ত নারীর ইজ্জত-আবরু হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত ও সুউচ্চ করেছে। নারীর পোষাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই,সৌন্দর্যের প্রকাশের মাধ্যমে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল পথ বন্ধ করার জন্য। এটা নারীর সম্মান ক্ষুন্ন করা নয়;বরং তাকে লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করা। সেই সাথে মহান স্রষ্টা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করতঃ তাঁর রেযামন্দী লাভ করে জান্নাতের অধিকারী হওয়া।

 ইসলামী পর্দার মর্যাদা:

 পর্দা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন:

]وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا[

 “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)

তিনি আরো বলেন:

 “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৩)

 আল্লাহ্‌ আরো বলেন,

]وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ[

 “তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)

আল্লাহ্‌ আরো বলেন,

]يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلا يُؤْذَيْنَ[

 “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)

 রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন:

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ

 “নারী গোপন বস্তু।”[50]
অর্থাৎ- তাকে ঢেকে রাখতে হবে।

 পর্দা নারীর পবিত্রতা:আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯) নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পূত-পবিত্রা সংরক্ষিতা থাকবে,আর তবেই তাকে কষ্ট দেয়া হবে না,ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে,নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট,ফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখিন হতে হয়।

 পর্দা নির্মলতা: আল্লাহ্‌ বলেন,“তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)

এ আয়াতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রীদের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে বলা হয়েছে;অথচ তাঁরা হচ্ছেন মুমিনদের সম্মানিত মাতা,পৃথিবীর তাবৎ নারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচাইতে অধিক পূত-পবিত্র। তাদের চাইতে অধিক পবিত্র এমন কোন নারী আছে কি যারা পর্দা না করে বলবে যে আমাদের অন্তর ঠিক আছে?আর অযৌক্তিক কথা বলবে ‘মনের পর্দা বড় পর্দা’? এই আয়াতে পর্দাকে ঈমানদার নারী-পুরুষের হৃদয়ের পবিত্রতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা চক্ষু যখন অবলকণ করে;হৃদয় তখন কামনা করে। আর এজন্যই দৃষ্টিপাত না করাটা হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার কারণ এবং ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট মাধ্যম। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল অন্তরের মানুষদের কুপ্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেয়া হয়। আল্লাহ্‌ বলেন,

]إِنْ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ[

 “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাক,তবে পরপুরুষের সাথে নম্র ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলবে না। এতে দুবর্ল হৃদয়ের লোকদের অন্তরে লালচ (কুবাসনা) সৃষ্টি হবে।” (সূরা আহযাব- ৩২)

পর্দা নারীর আবরণ:রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পসন্দ করেন।” (নাসাঈ) তিনি আরো বলেন: “যে নারী নিজ গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে গিয়ে ¯^xqপোষক খুলবে,সে আল্লাহ্‌ ও তার মাঝের পর্দা ছিঁড়ে ফেলবে।”[51]

পর্দা হল ঈমান:আল্লাহ্‌ তা’আলা ঈমানদার নারী ব্যতীত কাউকে পর্দার নির্দেশ দেন নি। এজন্যই তিনি বলেছেন: “আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন!…”। একদা বনূ তামীম গোত্রের কতিপয় নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা:) এর নিকট আগমণ করে,তাদের পরিধানে ছিল খুবই পাতলা পোষাক। তা দেখে আয়েশা (রাঃ) বললেন,‘তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক,তবে এটা ঈমানদার নারীর পোষাক নয়।’

পর্দা আত্মসম্ভ্রম: আত্মসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন পুরুষের জন্যও পর্দা মানানসই,যে পুরুষ নিজ স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি পরদৃষ্টির লোলুপতায় মর্যাদাবোধে আঘাত প্রাপ্ত হয়। জাহেলী যুগে এবং ইসলামের মধ্যেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। আলী (রা:) বলেন,“আমি শুনলাম তোমাদের নারীরা অনারব কাফের পুরুষদের সাথে বাজারে গিয়ে ভিড় জমায়?তোমাদের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই?যার মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই,তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।”

 বেপর্দার পরিণতি

 পর্দাহীনতা আল্লাহ্‌-রাসূলের নাফরমানী: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ্‌র কোনই ক্ষতি হবে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

]كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى[

“আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। তাঁরা প্রশ্ন করলেন,কে অস্বীকার করে?তিনি বললেন,যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে;আর যে আমার নাফরমানী করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার  করে।”[52]

পর্দাহীনতা অভিশাপ: রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন,“শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবে,যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মত। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর। কেননা তারা অভিশপ্ত।”[53]

বেপর্দা জাহান্নামীদের কাজ: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

]صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ…[

“জাহান্নামবাসী দু’টি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোষাক পরেও উলঙ্গ থাকে…।”[54]

বেপর্দা ইবলীসের সুন্নাত: আদমের সাথে ইবলীসের ঘটনাই আমাদের সামনে ইবলিসের ষড়যন্ত্র উম্মোচন করে দেয়;সে কিরূপ আগ্রহী ছিল লজ্জাস্থান প্রকাশ হওয়া ও পর্দা উম্মোচন করার জন্য। বেপর্দা হচ্ছে শয়তানের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ্‌ বলেন,

]يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمْ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنْ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا[

“হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে;যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলিয়ে দিয়েছে। যাতে করে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে।” (সূরা আ’রাফ- ২৭)

 সুতরাং ইবলিসই হল,বেপর্দা ও লজ্জাহীনতার আহ্বানকারী। আর সেই হল আধুনিক ‘নারী মুক্তি’নামে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নেতা।

বেপর্দা ইহুদী নীতি: মুসলিম জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের ব্যাপারে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র কারো কাছে গোপন নয়। বিশেষ করে নারীর ফিৎনার মাধ্যমে। কেননা নারীর সাথে পুরুষের অবাধ মেলামেশা জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের প্রধান অস্ত্র। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন,

]اتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ[

“তোমরা দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাক। কেননা বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিৎনা ঘটেছিল নারীর মাধ্যমে।”[55]

বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলী রীতি: আল্লাহ্‌ বলেন,“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৩)এ আয়াতে বেপর্দাকে অন্ধকার যুগের বর্বরদের রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহেলী যুগের সবধরণের রীতি-নীতিকে পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন: “মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দু’পায়ের নীচে।”[56]

বেপর্দা চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম: কেননা এর মাধ্যমে নারী পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ। কেননা বেপর্দা তাদের অন্তরে কুচিন্তার উদ্রেক করে;ফলে তারা ধাবিত হয় অশ্লীলতার দিকে।বেপর্দার কারণে নারী হয় সস্তা সামগ্রী। যার বাস্তব প্রমাণ হল বর্তমান প্রচার মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য-সামগ্রী বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নারীকেই ব্যবহার করে থাকে।বেপর্দার কারণেই বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরণের দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- এইডস্‌…। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلافِهِمِ الَّذِينَ مَضَوْا[

“কোন জাতির মধ্যে যখনই অশ্লীলতার প্রকাশ ঘটবে,তখনই তাদের মধ্যে মহামারী,দুর্ভিক্ষ.. প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে;যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।”[57]

বেপর্দা চোখের ব্যভিচারের পথকে সুগম করে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,“চোখের ব্যভিচার হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা।”[58] নি:সন্দেহে দৃষ্টি অবনত রাখার আনুগত্যকে লংঘণ করার কারণেই পৃথিবীতে ফিৎনা-ফাসাদের সূত্রপাত হয়েছে;যা আনুবিক বোমা ও ভূমিকম্পের চাইতে বেশী ক্ষতি করে থাকে মানুষের চরিত্রকে। আল্লাহ্‌ বলেন,

]وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا[

“যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাসম্পন্ন লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি, অত:পর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। ফলে তাদের উপর দন্ড ন্যায়ত: অবধারিত হয়ে পড়ে এবং তখন আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকি।” (সূরা বানী ইসরাঈল- ১৬)

 শরীয়ত সম্মত পর্দার শর্ত সমূহ

   1)নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে। আল্লাহ বলেন,“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)

 আল্লাহ আরো বলেন,“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)

     2)পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্যমন্ডিত না হয়। যাতে ঐ পোষাকের সৌন্দর্য ঢাকার জন্য আরেকটি পর্দার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং পর্দার উপর নকশা ও কারুকার্য খচিত থাকলে বা ঝলমলে পাথর বসানো ও রঙ্গিন হলে সে কাপড় পরিধান করবে না।

   3)পর্দার কাপড় মোটা হবে। এমন পাতলা যেন না হয় যাতে কাপড়ের অভ্যন্তর থেকেও দেহ বা দেহের কান্তি দৃশ্যমান হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে দিয়েছেন,“যে সব মেয়েলোক কাপড় পরেও ন্যাংটা,পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট এবং পুরুষদেরও নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারীনী,তারা জাহান্নামী। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।”[59]

 একটি বিয়ের কনে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হল। তার পরিধানে ছিল খুবই স্বচ্ছ পাতলা কাপড়। তখন তিনি বললেন,‘যে ব্যক্তি এ ধরণের পোষাক পরিধান করে,সে সূরা আন-নূরে বিধৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনেনি।’

   4)পর্দার পোষাক প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে। আঁটসাট বা সংকীর্ণ হবে না,যার দরুন দেহের উচ্চ-নীচ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই বাইরে দৃশ্যমান হয়ে উঠে,যদিও তা স্বচ্ছ বা পাতলা নয়।উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন,দেহ্‌ইয়া কালবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একটি কিবতী (মিছরের তৈরী) মোটা কাপড় উপহার দিয়েছিল। তিনি উহা আমাকে পরিধান করার জন্য প্রদান করলেন। আমি বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। নবীজী আমাকে বললেন,কি ব্যাপার তুমি কিবতী কাপড়টি পরিধান কর না?আমি বললাম,আমার স্ত্রীকে উহা পরিয়ে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন,তাকে আদেশ কর সে যেন ওটার নীচে অন্য একটি কাপড় পরিধান করে নেয়। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে ঐ কাপড়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ হয়ে পড়বে।” (আহমাদ,আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেন।)

   5)আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ[

“যে নারী সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয়,অতঃপর মানুষের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে চলে- যাতে করে তারা তার সুবাশ অনুভব করে,তবে সেই নারী ব্যভিচারী।”[60]

   6)কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। ইসলাম কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করতে নিষেধ করেছে। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে কাফেরদের বিরোধিতা করা। রাসূলে কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

Òযে লোক অপর জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে,সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত গণ্য হবে।” (আবু দাউদ)

   7)পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট পোষাক মেয়েরা পরবে না। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,

]لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ[

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন এমন পুরুষকে যে নারীর সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে,এবং অভিশাপ করেছেন সেই নারীকে যে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে। (বুখারী)

   8)উক্ত পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়। দুনিয়ার সৌন্দর্যে মানুষের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে অতি উচ্চ মূল্যের পোষাক পরিধান করাই হচ্ছে প্রসিদ্ধির পোষাক। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبًا ثُمَّ تُلَهَّبُ فِيهِ النَّارُ[

“যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ কোন পোষাক পরিধান করবে,ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে অনুরূপ পোষাক পরিধান করাবেন,অতঃপর তাতে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জলিত করা হবে।”[61]

 একজন নও মুসলিম নারীর দৃষ্টিতে ইসলামী পর্দা:

‘খাওলা’নাম্নী একজন জাপানী নারী ২৫/১০/১৯৯৩ তারিখে সঊদী আরবের আল কাসীম বুরাইদা শহরের ইসলামী সেন্টারে এসে ইসলাম গ্রহণ ও পর্দা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তা থেকে সংক্ষেপে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করা হল।তিনি ফ্রান্সে অবস্থানকালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর থেকে ইসলামী জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন,ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্দার মধ্যে আমি খুবই আনন্দ ও গৌরব করতে লাগলাম। কেননা পর্দা শুধু আল্লাহ্‌র আনুগত্যের প্রতীকই নয়;উপরন্ত তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন। পর্দার মাধ্যমে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভদ্র ও সম্মানিত মনে করি।

তিনি বলেন,অনেক নারী এমন পোশাক পরেন যাতে তাদের স্তন ও wbZ‡¤^iআকৃতি পরিস্কার ফুটে উঠে। ইসলাম গ্রহণের আগেও আমি এধরণের পোশাক দেখলে A¯^w¯—বোধ করতাম। আমার মনে হত এমন কিছু অঙ্গ প্রদর্শন করা হচ্ছে যা মূলত: ঢেকে রাখা উচিত,বের করা উচিত নয়। একজন মেয়ের মনে যদি এসকল পোশাক এধরণের অস্তিত্ববোধ এনে দেয় তাহলে একজন পুরুষ এ পোষাক পরা মেয়েদের দেখলে কিভাবে প্রভাবিত হবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।

তিনি বলেন,আপনি যদি কোন কিছু লুকিয়ে রাখেন তাহেল তার মূল্য বেড়ে যায়। এমনকি অন্য নারীর চোখেও তা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পর্দানশীন বোনদের কাঁধ ও গলা অপূর্ব সুন্দর দেখায়,কারণ তা সাধারণত: আবৃত থাকে। যখন কোন মানুষ লজ্জার অনুভূতি হারিয়ে নগ্ন হয়ে রাস্তাঘাটে চলতে থাকে,প্রকাশ্য জনসমক্ষে পেশাব,পায়খানা ও যৌনতা করতে থাকে,তখন সে পশুর সমান হয়ে যায়,তাকে আর কোনভাবেই পশু থেকে পৃথক করা যায় না। আমার ধারণা,লজ্জার অনুভূতি থেকেই মানব সভ্যতার শুরু।

 অনেকে প্রশ্ন করতে পারে,পুরুষকে উত্তেজিত না করার উদ্দেশ্যে নারীর সমস্ত শরীর ঢেকে রাখাটা বাড়াবাড়ি এবং অতি-সতর্কতা। একজন পুরুষ কি শুধুমাত্র যৌন আগ্রহ নিয়েই একজন নারীর দিকে তাকায়?একথা ঠিক যে সব পুরুষই প্রথমেই যৌন অনুভূতি নিয়ে নারীকে দেখে না। তবে নারীকে দেখার পর তার পোশাক ও আচরণ থেকে পুরুষের মনে যে যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা তার জন্য খুবই কষ্টকর। এধরণের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পুরুষরা বিশেষভাবে দুর্বল। বর্তমান বিশ্বের ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের পরিমাণ দেখলেই আমরা একথা বুঝতে পারব। নারী-পুরুষের সম্মতিমূলক ব্যভিচার বৈধ করার পরও পশ্চাত্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের ঘটনা ধারণাতীতভাবে বেড়ে চলছে।কেবলমাত্র পুরুষদের প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়ে এবং তাদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে আমরা ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচার বন্ধ করতে পারব না। হিজাব বা ইসলামী পর্দা ছাড়া এগুলো রোধের কোন উপায় নেই। একজন পুরুষ নারীর পরিধানের মিনি-স্কার্টের অর্থ এরূপ মনে করতে পারেন: “তুমি চাইলে আমাকে পেতে পার।”অপরদিকে ইসলামী হিজাব পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়: ‘আমি তোমার জন্য নিষিদ্ধ।’

যারা বেপর্দা হয়ে চলতে ভালবাসেন এবং সেটাকেই সভ্যতা মনে করেন,তাদেরকে আমি প্রশ্ন করব: আপনি কি একজন নুডিস্ট ঘঁফরংঃ বা নগ্নবাদী?আপনি কি নগ্ন হয়ে চলাফেরা করেন?যদি আপনি নুডিস্ট না হন তাহলে বলুন,যদি কোন নুডিস্ট আপনাকে জিজ্ঞেস করেন: ‘কেন আপনি আপনার স্তন ও নিতম্ব ঢেকে রাখেন,অথচ মুখ ও হাতের ন্যায় স্তন ও wbZ¤^Iতো শরীরের ¯^vfvweKঅংশ?’তাহলে আপনি কি বলবেন?এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলবেন,আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি ঠিক সেকথাই বলব। আপনি যেমন শরীরের ¯^vfvweKঅংশ হওয়া সত্বেও স্তন ও wbZ¤^‡Kগোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করেন,আমরা মুসলিম নারীর সমস্ত শরীরকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করি,কারণ মহান স্রষ্টা আল্লাহ্‌ এভাবেই আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এজন্যই আমরা নিকটাত্মীয় (মাহরাম) ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখি।’][62]

¯^vgx‡`iজন্য উপদেশঃ

এতক্ষণ আমরা মুমেন রমণীদেরকে সেই সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দিতে চেয়েছি যা আল্লাহ সুবহানাহু ¯^xqগ্রন্থ আল কুরআনে প্রণয়ন করেছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জীবনীতে বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু একথার অর্থ এটা নয় যে,পুরুষগণ শুধুমাত্র নারীদের উপর কর্তৃত্ব করেই চলবে। আর কর্তৃত্বের পাওয়ার দেখিয়ে সামান্য অযুহাতে (পান থেকে চুন খসলেই) স্ত্রীর উপর যুলম-নির্যাতন করবে। উল্লেখিত নির্দেশাবলী নারী পালন করতে অক্ষম হলে তার উপর অত্যাচার-নিপড়নের ষ্টিম রোলার উঠে আসবে। কেননা স্ত্রীদের সাথে সাদাচরণ করাও পুরুষের উপর আবশ্যক। মহান আল্লাহ্‌ সে দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেনঃ

]وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ[ “আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর।” (সূরা নিসা- ১৯)

আল্লাহ আরো বলেন,

]وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ[

“আর নারীদের উপর তাদের যেরূপ অধিকার আছে নারীদেরও তদানুরূপ ন্যায় সঙ্গত অধিকার আছে এবং তাদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।” (সূরা বাকারা- ২২৮)

সুতরাং প্রত্যেক পুরুষের উপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার সমূহ যথাযথভাবে আদায় করা। অবশ্য এই অধিকার প্রদানের পরও নারীদের থেকে কোন কোন সময় বক্রতা লক্ষ্য করা যায়। কোন অবস্থাতেই তাদেরকে পুরাপুরিভাবে বশে আনা সম্ভব নয়। এজন্য পুরুষকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ[

“তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দাও। কেননা নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে উপরের অংশ। উহা যদি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে দিবে,আর যদি ছেড়ে দাও তো বাঁকাই থাকবে। অতএব তোমরা নারীদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান কর।” (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا[

“নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। তোমার পছন্দমত পথে সে কখনই সোজা হয়ে চলবে না। তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও তো এই বক্র অবস্থাতেই উপকৃত হও। কিন্তু এই বক্রতা সোজা করতে গেলে তাকে ভেঙ্গে দিবে। আর ভেঙ্গে দেয়া মানেই তাকে তালাক প্রদান করা।” (মুসলিম)

নারীদের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে বক্রতা থাকলেই যে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এমন নয়;বরং তার মধ্যে অনেক ভাল গুণও আছে। কোন বিষয় হয়তো আপনি অপছন্দ করছেন কিন্তু তাতেই রয়েছে আপনার জন্য প্রভূত কল্যাণ যা আপনি জানেনই না। এজন্যই আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,

]وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا[

“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। যদি তাদেরকে অপসন্দ কর,তবে মনে রেখো তোমরা হয়তো কোন বিষয়কে অপসন্দ করবে;অথচ আল্লাহ্‌ তাতেই প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।” (সূরা নিসা- ১৯)

আল্লাহ্‌ আরো বলেন,

]وَعَسى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ[

“তোমরা হয়তো কোন বিষয়কে অপছন্দ কর,অথচ উহা তোমাদের জন্য কল্যাণজনক। আর কোন বিষয়কে তোমরা পছন্দ কর;অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণজনক।” (সূরা বাকারা- ২১৬)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

]لا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ[

“কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। কেননা সে হয়তো তার কোন চরিত্রকে অপছন্দ করে কিন্তু অন্য চরিত্রকে অবশ্যই পছন্দ করবে।” (মুসলিম)

অতএব স্ত্রীর নিকট থেকে কোন বিরোধিতা বা অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশ পেলে দ্রুত তাকে উপদেশ দিবে নসীহত করবে। আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে,তাঁর শাস্তির ভয় দেখাবে। তার আবধ্যতা ও গোঁড়ামীর পরিণতি যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে সতর্ক করবে।কিন্তু এরপরও যদি স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতা,হঠকারিতা ও অসৎ চরিত্র লক্ষ্য করা যায়,তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সীমারেখা রয়েছে যা লঙ্ঘন করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে এবং সুন্নাতে নববীতে এর একটি সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছেঃ

মহান আল্লাহ্‌ এরশাদ করেন,

]وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا[

“আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও,তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়,তবে তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।” (সূরা নিসা- ৩৪)

এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ

প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছেঃ তাকে উপদেশ প্রদান করা।

দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ তাকে বিছানায় পরিত্যাগ করা।

তৃতীয় পদক্ষেপঃ প্রহার করা।

উপদেশঃ উপদেশ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে,তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে,বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে।¯^vgxযে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। কারণ নম্র ব্যবহারের দ্বারা যে কাজ আদায় করা সম্ভব হয় রূঢ় ও কর্কষ ব্যবহারে তা সম্ভব হয় না। এজন্য আল্লাহ তা’আলা ফেরাউনকে হেদায়াত করার জন্য যখন মূসা ও হারূন (আঃ)কে প্রেরণ করলেন,তখন তাদেরকে উপদেশ দিলেন,তারা যেন তার সাথে রূঢ় আচরণ না করে। নির্দেশ দিলেন,

]اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى، فَقُولا لَهُ قَوْلا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى[

“তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। অতঃপর তাকে নম্র ভাষায় নসীহত কর। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা আল্লাহকে ভয় করবে।” (সূরা ত্বা-হা- ৪৩-৪৪)

প্রত্যেক ¯^vgxiমনে রাখা উচিত যে,স্ত্রীর দুর্ব্যবহার ও অবাধ্যতার ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে মূসা (আঃ)এর চাইতে শ্রেষ্ট মনে করবেন না এবং স্ত্রীকে ফেরাউনের চাইতে নিকৃষ্ট মনে করবেন না। অতএব স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না।

আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন,

]إِنَّ الرِّفْقَ لاَّ يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ[

“যে কোন বিষয়ে নম্রতা Aej¤^bকরা হলে তা সুন্দর হয়। আর কোন ক্ষেত্রে নম্রতা না থাকলে তা অসুন্দর ও নিকৃষ্ট হয়।” (মুসলিম)

অতএব স্ত্রী সংশোধন হোক,ফিরে আসুক সঠিক পথে এটা আন্তরিকভাবে চাইলে সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত শব্দ এবং দয়া-মায়া ও দরদমাখা বাক্যাবলী চয়ন করে তাকে সদুপদেশ দিবে। এবং সেই সাথে তার সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। আশা করা যায় সেই স্ত্রী সঠিক পথে ফিরে আসবে,সেই সাথে সংসারে ফিরে আসবে ¯^Mx©qপরিবেশ। দাম্পত্য জীবন ভরে উঠবে আনন্দ সুখ ও কল্যাণের আশির্বাদে।কিন্তু তাতে যদি কাজ না হয়,নরম কথায় যদি চিড়া না ভিজে তবে,মহান আল্লাহ্‌ নির্দেশিত দ্বিতীয় পন্থা Aej¤^bকরবে। আর তা হচ্ছেঃ

বিছানায় পরিত্যাগ করাঃ

একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা।এমন কথা নয় যে,তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া।কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করার ব্যাখ্যায় এরশাদ করেন,

]وَلا تَهْجُرْ إِلا فِي الْبَيْتِ[

“তাকে নিজ ঘরের মধ্যেই আলাদা করে রাখবে।” (বুখারী,অনুচ্ছেদ শিরোনাম ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিজ স্ত্রীদেরকে পরিত্যাগ করা’।আবু দাউদ,অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/১৮৩০।

বিছানায় আলাদা করে রাখা’র অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন,তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তার সাথে সহবাস করবে না।তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে।অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন,‘তার সাথে কথা বলবে না।’ (তাফসীর ইবনু কাছীর সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর) ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন,¯^vgxiপ্রতি যদি স্ত্রীর ভালবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয় ও কষ্টকর হবে,ফলে সে সংশোধন হবে।কিন্তু ভালবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে- সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না।’ (তাফসীরে কুরতুবী সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর) সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা হচ্ছেঃ

প্রহার করাঃ

এটি হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্‌ বলেন,وَاضْرِبُوهُنَّ‘এবং তাদেরকে প্রহার করবে।’এর তাফসীরে হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,‘যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোন কাজ না হয়,স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে,তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে।জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষনে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

]…فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ[

“তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছে। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে,তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে,তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে,তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে।” (ছহীহ মুসলিম,অধ্যায়ঃ হজ্জ,হা/২১৩৭)

হাসান বাছরী এই প্রহারের ব্যাখ্যায় বলেন,প্রহার যেন এমন না হয় যার কারণে শরীরে কোন চিহ্ন দেখা যায় বা শরীর ফুলে-ফুটে যায়।আত্বা বলেন,ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল,উক্ত প্রহার কিরূপ হবে?তিনি বললেন,‘মেসওয়াক বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে।’ (তাফসীরে কুরতুবী) অন্য হাদীছে প্রহারের ক্ষেত্রে হালকাভাবে হলেও মুখমন্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাকীম বিন মুআবিয়া আল কুশাইরী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন,নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]وَلا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلا تُقَبِّحْ[

“এবং মুখমন্ডলে প্রহার করবে না ও গাল-মন্দ করবে না।”[63]

একটি সতর্কতাঃ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল হামাদ বলেন,ইসলাম যখন স্ত্রীকে প্রহারের অনুমতি দিয়েছে,তখন এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে,প্রহারের উদ্দেশ্য যেন নিছক স্ত্রীকে কষ্ট ও শাস্তি দেয়া,প্রতিশোধ নেয়া না হয়। স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে জোর-জবরদস্তি সংসার করতে বাধ্য করা যেন না হয়।বরং এই পদক্ষেপ তো তখনই গ্রহণ করবে যখন একান্ত প্রয়োজন দেখা দিবে। আর তা হল,তাকে আদব দেয়া ও সংশোধন করা। এজন্য সেখানে থাকবে মুরব্বী ও শিক্ষকের মত মায়া-মমতা। সেখানে নিষ্ঠুরতা ও কঠোরতা থাকবে না। এখানে প্রবৃত্তির কোন স্থান নেই যে মনে চাইলেই যখন তখন তাকে মারপিট করবে অপমানিত করবে। এজন্য স্ত্রীকে প্রহারের ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত নির্ধারন করা হয়েছে। তা হচ্ছে নিম্নরূপঃ

     ক) স্ত্রীকে উপদেশ প্রদান করার পর এবং তাকে বিছানায় আলাদা রাখার পরও সে যদি নিজ হঠকারিতায় অটল থাকে,তবে প্রহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

     খ) শাস্তি যেন অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যেখানে সদুপদেশ দিলে কাজ হবে সেখানে যেন বিছানায় আলাদা না করা হয়। অথবা বিছানায় আলাদা করার পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই যেন মারপিটের দিকে অগ্রসর না হয়। কেননা অপরাধের চাইতে অধিক শাস্তি প্রদান করলে তা হবে অন্যায়।

     গ) মনের মধ্যে এই নিয়ত রাখবে যে,এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্যার সামাধান করা,তাকে সংশোধন করা ও শিক্ষা দেয়া,সৎপথে ফিরে আসা। এছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই উত্তম পন্থায় হাল্কাভাবে প্রহারের চেষ্টা করবে। ছোট-খাট চড়-থাপ্পড় বা মেসওয়াক দ্বারা আঘাত করলে সেই উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে।

     ঘ) প্রহারের ক্ষেত্রে স্পর্শ কাতর স্থান সমূহ থেকে সতর্ক থাকবে। যেমন মাথা,পেট,মুখমন্ডল প্রভৃতি।

     ঙ) হাড্ডি ভেঙ্গে দিবে না,কোন অঙ্গ নষ্ট করবে না,রক্তাক্ত করবে না এবং একস্থানে বারবার প্রহার করবে না।

     চ) যদি সংশোধন হয়ে যায় বা অবাধ্যতা পরিত্যাগ করে,তবে কথায় কাজে দোষারোপ করবে না বা অন্যায় শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করবে না।[64]

মনে রাখবেন,আপনার স্ত্রী আপনার জীবন সঙ্গী,আপনার সুখ-দুঃখের সাথী,আপনার বিছানার পার্টনার,আপনার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে সে জানে। তার সংস্পর্শ ছাড়া আপনি অচল,তার প্রীতি-ভালবাসা ছাড়া আপনার জীবন বিষাদময়। সুতরাং শয়তানের প্ররচনায় কোন অন্যায় করে বসলে কিভাবে আপনি তাকে নির্দয়ের মত প্রহার করবেন?আবার রাত আসলেই তার উষ্ণ পরশে সুখ অনুভবের চেষ্টা করবেন?এজন্যই সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষক মহানবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

]إِلامَ يَجْلِدُ أَحَدُكُمُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْأَمَةِ وَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ[

“কিভাবে তোমাদের মধ্যে একজন নিজ স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর মত বেত্রাঘাত করে;অথচ দিনের শেষে (রাতে) তার সাথেই সহবাসে লিপ্ত হয়?” (বুখারী ও মুসলিম)

যারা বিনা কারণে স্ত্রীলোকদের মারধোর করে তাদের সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,“এধরণের লোক তোমাদের মধ্যে কখনো ভাল লোক বলে গণ্য হতে পারে না।” (আবু দাউদ হা/১৮৩৪)

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button