প্রবন্ধ

কুরআন ও হাদীসের আলোকে যাদু পর্ব: ১

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

লেখক: ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

কুরআন দ্বারা প্রমাণ

জ্বিন ও শয়তানের অস্তিত্বের প্রমাণঃ জ্বিন ও যাদুর মাঝে গভীর সম্পর্ক রয়েছে; বরং জ্বিন ও শয়তানই হল মূলতঃ যাদুর প্রধান চালিকা শক্তি। কতিপয় লোক জ্বিনের অস্তিত্বের বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং যাদুও অস্বীকার করেছে। তাই আমি এখানে এসবের অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ উপস্থাপন করবঃ

আরোও পড়ুন যাদু কি? | বান মারা, জ্বীন চালান (Magic)

প্রথম: কুরআন দ্বারা প্রমাণ:

(১) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল।” [সূরা আহকাফঃ ২৯]

(২) আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ “হে জ্বিন ও মানব জাতি! তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য হতেই নবী রাসূল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করতো এবং আজকের দিনের সাথে তোমাদের সাক্ষাত হওয়ার ভীতি প্রদর্শন করতো?” [সূরা আনআমঃ ১৩০]

(৩) অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ “হে জিন ও মানুষ সম্প্রদায় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার, অতিক্রম কর; কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে।” [সূরা রহমানঃ ৩৩]

আরোও পড়ুন ক্রিসমাস ট্রি সাজানো-Christmas Tree

(৪) আল্লাহ বলেনঃ “বলঃ আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জীনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছেঃ আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি।” [সূরা জিনঃ ১]

(৫) মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর কতিপয় মানুষ কতক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করতো, ফলে তারা জিনদের আত্ম গৌরব বাড়িয়ে দিতো।” [সূরা জিনঃ ৬]

(৬) আল্লাহ বলেনঃ “শয়তান তো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামায হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে, সুতরাং এখনও কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?” [সূরা আল মায়েদাঃ ৯১]

(৭) আল্লাহ বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।” [সূরা নূরঃ ২১]

আরোও পড়ুনবড় দিন বা ক্রিসমাস (Christmas) কি?

কুরআনে এ সম্পর্কে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে। আর একথা সকলেই জানে যে, কুরআনে কারীমে একটি সূরাই জ্বিন সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আর প্রমাণের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, জ্বিন একবচন শব্দটি কুরআনে কারীমে ২২ বার উল্লেখ করা হয়েছে। আর الجان “আল-জান” বহুবচন শব্দটি সাতবার এবং الشيطان শব্দটি ৬৮ বার আর (الشياطين) বহুবচন শব্দটি সতের বার বর্ণিত হয়েছে। মূলকথা জ্বিন ও শয়তান সম্পর্কে কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে।

হাদীস দ্বারা প্রমাণ

(১) ইবনে মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ এক রাতে আমরা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। অতঃপর আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে হারিয়ে ফেললাম। এ ব্যাপারে আমরা উপত্যকায় এবং বিভিন্ন গোত্রে খোজতে লাগলাম; কিন্তু না পেয়ে আমরা ধারণা করলাম যে, হয়ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে উধাও বা অপহরণ করা হয়েছে। এরপর সেই রাত খুব খারাপ রাত হিসেবে কাটালাম। যখন সকাল হল হঠাৎ দেখি হেরা গুহার দিক থেকে আসছেন। আমরা বললামঃ হে আল্লাহ রাসূল! আপনাকে আমরা না পেয়ে অনেক খোজা-খুজি করেছি তবুও আপনাকে পাইনি? এরপর রাতটি খুব খারাপ কাটিয়েছি।

আরোও পড়ুন অনর্থক বিষয়ে নাক গলাবেন না

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “জ্বিনের এক আহবায়ক আমার কাছে আসে এরপর আমি তার সাথে চলে গেলাম এবং তাদেরকে আমি কুরআনে কারম পড়ে শুনিয়েছি।”

বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে চললেন সেই স্থানে এবং সেখানে আমাদেরকে তিনি জ্বিন সম্প্রদায়ের নিদর্শনসমূহ ও তাদের আগুন জ্বালানোর চিহ্নসমূহ দেখালেন। তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেন তাদের খাদ্য সম্পর্কে। তিনি উত্তরে বলেনঃ তোমাদের জন্য প্রত্যেক সেই হাড় যার উপর (যবাই করার সময়) আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে, তোমাদের হাতের কাছে থাকে যাতে গোশত না হয় এবং তোমাদের পশুর গোবর তা তোমাদের জন্যে খাদ্য।

অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “সুতরাং তোমরা তা দিয়ে এস্তেঞ্জা করো না। নিশ্চয় তা হলো তোমাদের ভাই জ্বিনদের খাদ্য।” (মুসলিমঃ ৪/১৭০)

(২) আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ আমাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “আমি লক্ষ্য করেছি যে, তুমি ছাগল এবং মরুভূমিকে পছন্দ কর। সুতরাং তুমি যখন ছাগলের সাথে মরুভূমিতে থাকবে তখন তুমি নামাযের জন্য আযান দিবে তখন আযানের ধ্বনি খুব উঁচু করবে। কেননা নিশ্চয়ই মুয়াজ্জিনের ধ্বনি জ্বিন, মানুষ এবং অন্য যারাই শুনবে কিয়ামতের দিন তার জন্যে সাক্ষ্য দিবে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেকঃ ১৬৮, বুখারীঃ ২/৩৪৩ ফাতহ, নাসায়ীঃ ২/১২ ও ইবনে মাজাহঃ ১২৩৯)

(৩) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) নিজ বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাদের এক দলের সাথে উকাজ বাজারের দিকে রওয়ানা হন। ইতিমধ্যে শয়তানদের ও আকাশের খবরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তাদের উপর তারকা অগ্নিশিখা বর্ষিত হয়। যার ফলে তারা স্বীয় জাতির নিকট ফিরে আসে। উপস্থিত শয়তানরা জিজ্ঞেস করেঃ তোমাদের কি হয়েছে? তারা উত্তর দেয়ঃ আমাদের ও আকাশের সংবাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের প্রতি তারকা অগ্নিশিখা বর্ষণ করা হয়েছে। তারা শুনে বলেঃ তোমাদের ও আকাশ সংবাদের মাঝে স্বাভাবিক কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি; বরং বড় ধরণের কিছু ঘটে গেছে। সুতরাং তোমরা বিশ্বের পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ কি সে প্রতিবন্ধকতা যা তোমাদের ও আকাশ সংবাদের মাঝে ঘটে গেছে।

অতএব তারা প্রস্থান করে তেহামা অভিমূখে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দিকে। এমতাবস্থায় তিনি উকাজ বাজার অভিমূখে যাত্রাকালে নাখলা উপত্যকায় সাহাবাদেরকে নিয়ে ফজর নামায আদায় করছেন। যখন শয়তানরা (ফজরের) কুরআন তেলাওয়াত শুনল, তখন তারা তা আরো মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করা শুরু করল। অতঃপর তারা বললঃ আল্লাহর শপথ এটিই আমাদের ও আকাশ সংবাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সুতরাং তারা তখন সেখান হতে স্বীয় জাতির নিকট প্রত্যাবর্তন করে বলেঃ হে আমাদের জাতি আমরা নিশ্চয়ই এমন এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সরল পথের দিশারী।

সুতরাং তার প্রতি আমরা ঈমান এনে ফেলেছি। আর আমরা কখনও আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপর আল্লাহ তার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি অবতীর্ণ করেনঃ “বলঃ আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জীনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছেঃ আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি।” [সূরা জিনঃ ১]

নিশ্চয়ই তার প্রতি অবতীর্ণ হয় জিনের কথা । (বুখারীঃ ২/২৫৩ ফাতহ সহ ও মুসলিমঃ ৪/১৬৮ নববীসহ শব্দগুলি বুখারীর)

(৪) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) স্বীয় বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “ফেরেশতা জাতি সৃষ্টি হয় নূর হতে, আর জিনকে সৃষ্টি করা হয় অগ্নিশিখা হতে এবং আদমকে সৃষ্টি করা হয় তাই দিয়ে যা তোমাদেরকে বর্ণনা দেয়া হয়েছে।” (মুসনাদে আহমদঃ ৬/১৫৩, ১৬৮ ও মুসলিমঃ ১৮/১২৩ নববীসহ)

(৫) সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মত চলাচল করে।” (বুখারীঃ ৪/২৮২ ফাতহ সহ, মুসলিমঃ ১৪/১৫৫ নববীসহ)

(৬) আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন পান করে তখন যেন ডান হাতেই পান করে। কেননা নিশ্চয়ই শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতেই পান করে।” (মুসলিমঃ ১৩/১৯১ নববীসহ)

(৭) আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ এমন কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করে না যাকে শয়তান আঘাত করে না। সুতরাং শয়তানের আঘাতের ফলে সে সন্তান জন্মের সময় চীৎকার করে। তবে ঈসা ও তার মাতা ব্যতীত।” (বুখারীঃ ৮/২১২ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৫/১২০ নববীসহ)

(৮) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তার বর্ণনায় বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এমন এক ব্যক্তির বর্ণনা দেয়া হল যে পূর্ণ রাত্রি সকাল পর্যন্ত ঘুমায়। তিনি বলেনঃ সে এমন ব্যক্তি যার উভয় কানে বা তার কানে শয়তান পেশাব করে ফেলে।‘ (বুখারীঃ ৩/২৮ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ৬/৬৪ নববীসহ)

(৯) আবু কাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ ‘সৎ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে, আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন কিছু দেখে যা তার অপছন্দ হয়, সে যেন তার বাম দিকে তিনবার আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্ত্বোনির রাজীম বলে ফুক দেয়, তবে তাকে অবশ্যই তা কোন ক্ষতি করতে পারবে না।‘ (বুখারীঃ ১২/২৮৩ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৫/১৬ নববীসহ)

(১০) আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ ‘তোমাদের মধ্য হতে যখন কেউ হাই তোলে, তখন সে যেন স্বীয় হাত দ্বারা মুখ বন্ধ করে। কেননা শয়তান তাতে প্রবেশ করে।’ (মুসলিমঃ ১৮/১২২ নববীসহ ও দারমীঃ ১/৩২১)

এই বিষয়ে আরও অনেক হাদীস রয়েছে। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হল যে, জ্বিন এবং শয়তানের অস্তিত্ব বাস্তব সত্য। এর মধ্যে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

যাদুর অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ

কুরআন দ্বারা প্রমাণঃ

(১) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা তারই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফুরী করেননি কিন্তু শয়তানরাই কুফুরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারূত-মারত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও ওটা শিক্ষা দিতো না, যে পর্যন্ত তারা না বলতো যে, আমরা পরীক্ষা স্বরূপ, অতএব তুমি কুফরী করো না; অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তদ্বারা কারও অনিষ্ট সাধন করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করছে যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত হয় না এবং নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্যে পরকালে কোনই অংশ নেই এবং যার বিনিময়ে তারা যে আত্ম-বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো!” [সূরা বাকারাঃ ১০২]

(২) মহান আল্লাহ বলেনঃ “মূসা বললেনঃ তোমরা কি এ হক সম্পর্কে এমন কথা বলছো, যখন ওটা তোমাদের নিকট পৌছলো? এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররা তো সফলকাম হয় না!” [সূরা ইউনুসঃ ৭৭]

(৩) মহান আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করলো, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ যাদু এটাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ এখনই এটাকে বানচাল করে দিবেন; (কেননা) আল্লাহ এমন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ সম্পন্ন হতে দেন না। আর আল্লাহ স্বীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী হক প্রতিষ্ঠিত করে দেন, যদিও পাপাচারীরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।” [সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২]

(৪) তিনি আরো বলেনঃ “মূসা (আলাইহিস সালাম) তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলো। আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমিই প্রবল। তোমার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করো, এটা তারা যা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে, তারা যা করেছে তা তো শুধু যাদুকরের কৌশল; যাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না।” [সূরা ত্ত্বো-হাঃ ৬৭-৬৯]

(৫) মহান আল্লাহ বলেনঃ “তখন আমি মূসা-এর নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর, মূসা (আলাইহিস সালাম) তা নিক্ষেপ করলে ওটা একটা বিরাট সাপ হয়ে সহসা ওদের অলীক (মিথ্যা) সৃষ্টিগুলোকে গিলে ফেলল। পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো, আর যা কিছু বানানো হয়েছিল তা বাতিল প্রমাণিত হলো। আর ফিরাউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে গেল। যাদুকরগণ তখন সিজদায় পড়ে গেল। তারা পরিস্কার ভাষায় বললোঃ আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি অকপটে ঈমান আনলাম। (জিজ্ঞেস করা হলো— কোন বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি? তারা উত্তরে বললো) মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি।” [সূরা আরাফঃ ১১৭-১২২]

(৬) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ “বলঃ আমি আশ্রয় নিচ্ছি উষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, অনিষ্ট হতে অন্ধকার রাত্রির যখন তা’ আচ্ছন্ন হয় এবং গিরায় ফুকদান কারিণীর এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতেও যখন সে হিংসা করে।” [সূরা ফালাকঃ ১-৫]

ইমাম কুরতুবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় যখন তারা মন্ত্র পড়ে তাতে।‘ (তাফসীর কুরতুবীঃ ২০/২৫৭)

হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ এর তাফসীরে মুজাহিদ, ইকরিমাহ, হাসান, কার্তাদাহ ও জাহহাক বলেনঃ যাদুকারিনীদের।‘ (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৫৭৩)

ইবনে জারীর আততাবারী বলেনঃ ‘অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর অনিষ্ট হতে যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় তখন তারা তার উপর মন্ত্র পড়ে।‘ (তাফসীর আল-কাসেমীঃ ১০/৩০২)

কুরআনের অনেক আয়াতসমূহ যাদুর বর্ণনা এসেছে যা যাদুর অস্তিত্বের প্রমাণ

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

উৎস (বই) : যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button