প্রবন্ধ

শারঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করা

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মূল : মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

এমন অনেক স্ত্রীলোক আছে যারা স্বামীর সঙ্গে একটু ঝগড়া-বিবাদ হলেই কিংবা তার চাওয়া-পাওয়ার একটু ব্যত্যয় ঘটলেই তার নিকট তালাক দাবী করে। অনেক সময় স্ত্রী তার কোন নিকট আত্মীয় কিংবা অসৎ প্রতিবেশী কর্তৃক এরূপ অনিষ্টকর কাজে প্ররোচিত হয়। কখনো সে স্বামীকে লক্ষ্য করে তার জাত্যভিমান উষ্কে দেওয়ার মত শব্দ উচ্চারণ করে। যেমন সে বলে, ‘যদি তুমি পুরুষ হয়ে থাক তাহলে আমাকে তালাক দাও’। কিন্তু তালাকের যে কি বিষময় ফল তা সবার জানা আছে। তালাকের কারণে একটি পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। সন্তানরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এজন্য অনেক সময় স্ত্রীর মনে অনুশোচনা জাগতে পারে। কিন্তু তখন তো আর করার কিছুই থাকে না। এসব কারণে শরী‘আত কথায় কথায় তালাক প্রার্থনাকে হারাম করে সমাজের যে উপকার করেছে তা সহজেই অনুমেয়। হযরত ছাওবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا الطَّلاَقَ مِنْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِকোন মহিলা যদি বিনা দোষে স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাতের সুগন্ধি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে’।[1]

হযরত উক্ববা বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, اَلْمُخْتَلِعَاتُ وَالْمُنْتَزِعَاتُ هُنَّ الْمُنَافِقَاتُখোলাকারিণী ও সম্পর্ক ছিন্নকারিণী রমণীগণ মুনাফিক’।[2]

হাঁ যদি কোন শারঈ ওযর থাকে যেমন- স্বামী ছালাত আদায় করে না, অনবরত নেশা করে কিংবা স্ত্রীকে হারাম কাজের আদেশ দেয়, অন্যায়ভাবে মারধর করে, স্ত্রীর শারঈ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করে। কিন্তু স্বামীকে নছীহত করেও ফেরানো যাচ্ছে না এবং সংশোধনেরও কোন উপায় নেই সেক্ষেত্রে তালাক দাবী করায় স্ত্রীর কোন দোষ হবে না। বরং দ্বীন ও জীবন রক্ষার্থে তখন সে তালাক প্রার্থনা করতে পারে।


[1]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩২৭৯।

[2]. আহমাদ, ছহীহাহ হা/৬৩২।

দাইয়ূছী

যে নারী বা পুরুষ পর্দা মানে না তাকে ‘দাইয়ূছ’ বলা হয়। ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِى يُقِرُّ فِى أَهْلِهِ الْخُبْثَ

‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। লাগাতার শরাব পানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছ, যে নিজ পরিবারের মধ্যে বেহায়াপনাকে জিইয়ে রাখে’।[1]

আমাদের যুগে পর্দাহীনতার নিত্যনতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। বাড়ীতে কন্যা কিংবা স্ত্রীকে একজন বেগানা পুরুষের পাশে বসে আলাপ করতে দেখেও বাড়ীর কর্তা পুরুষটি কিছুই বলেন না। বরং তিনি যেন এরূপ একাকী আলাপে খুশীই হন। মহিলাদের কোন বেগানা পুরুষের সাথে একাকী বাইরে যাওয়াও দাইয়ূছী। ড্রাইভারের সাথে অনেক স্ত্রীলোককে এভাবে একাকী বাইরে যেতে দেখা যায়। বিনা পর্দায় তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়াও দাইয়ূছী। এভাবে বাইরে বের হলে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের প্রতি পড়ে।

আবার ফিল্ম কিংবা যে সকল পত্রিকা পরিবেশকে কলুষিত করে ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় সেগুলি আমদানী করা এবং বাড়ীতে স্থান দেয়াও দাইয়ূছী। সুতরাং এসব হারাম থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।


[1]. আহমাদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৬৫৫।

কুলক্ষণ (اَلطِّيَرَةُ)

কুলক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَـذِهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوْا بِمُوْسَى وَمَن مَّعَهُ-

‘যখন তাদের (ফের‘আউন ও তার প্রজাদের) কোন কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের অলুক্ষণে বলে গণ্য করত’ (আ‘রাফ ১৩১)

আরবরা যাত্রা ইত্যাদি কাজের প্রাক্কালে পাখি উড়িয়ে দিয়ে তার শুভাশুভ নির্ণয় করত। পাখি ডাইনে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হতে বিরত থাকত। এভাবে শুভাশুভ নির্ণয়ের বিধান প্রসঙ্গে মহানবী (ছাঃ) বলেন, اَلطِّيَرَةُ شِرْكٌ ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক’।[1]

মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করাও তাওহীদ পরিপন্থী হারাম আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের ছফর মাসে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা হয় ও প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে চিরস্থায়ী কুলক্ষণ মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজ ১৩ সংখ্যাকে ‘অলুক্ষণে তের’ বা Unluckey thirteen বলা হয়। কেউ যদি তের ক্রমিকে একবার পড়ে যায় তাহলে তার আর দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। অনেকে কানা-খোঁড়া, পাগল ইত্যাকার প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে। দোকান খুলতে গিয়ে পথে এমনিতর কোন কানা-খোঁড়াকে দেখতে পেলে তার আর দোকান খোলা হয় না। অশুভ মনে করে সে ফিরে আসে। অথচ এ জাতীয় আক্বীদা পোষণ করা হারাম ও শিরক। এজন্য যারা কুলক্ষণে বিশ্বাসী রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে তাঁর উম্মতের   অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেননি। ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ

‘যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সেই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়’।[2]

কেউ কোন বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হ’লে তাকে এজন্য কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা এখানে কোন অর্থ কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দো‘আ, যা আব্দুল্লাহ বিন আমর বর্ণিত হাদীছে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই সে শিরক করে। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উহার কাফফারা কি হবে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে-

اَللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।

‘হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোন কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোন (হক) মা‘বূদও নেই’।[3]

তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে বাড়ে ও কমে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করা। যেমন ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন,

وَمَا مِنَّا إِلاَّ (أَيْ إِلاَّ وَيَقَعُ فِيْ نَفْسِهِ شَيْءٌ مِّنْ ذَلِكَ) وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ-

‘আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তা দূর করে দেন’।[4]


[1]. আবুদাঊদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৪৫৮৪।

[2]. তাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৯৫।

[3]. আহমাদ হা/৭০৪৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫।

[4]. আবুদাঊদ হা/৩৯১০; মিশকাত হা/৪৫৮৪।

আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করা

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য হতে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েয নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম মূলতঃ এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

أَلاَ إِنَّ اللهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ، مَنْ كَانَ حَالِفًا بِاللهِ فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ

‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে’।[1]

ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল’।[2]

অপর এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَلَفَ بِالْأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে আমানত বা গচ্ছিত দ্রব্যের নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[3]

সুতরাং কা‘বা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।

কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে তবে তার কাফফারা হ’ল কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন ছহীহ হাদীছে এসেছে-

مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِىْ حَلِفِهِ بِاللاَّتِ وَالْعُزَّى . فَلْيَقُلْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ

‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উযযার নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।[4]

উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শিরকী ও হারাম কথা কতিপয় মুসলমানের মুখে উচ্চারিত হ’তে শোনা যায়। যেমন বলা হয়, ‘আমি আল্লাহ ও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার উপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ হতে হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নীচে আপনি আছেন’। ‘উপরে খোদা, নীচে হুদা’। ‘আল্লাহ ও অমুক যদি না থাকত’। ‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’। ‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’। ‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলুক্ষণে’। ‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই গালি দেয়া হয় বলে হাদীছে কুদসীতে এসেছে।[6] সুতরাং সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ।

আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে عبد বা দাস অর্থবোধক শব্দ এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আবদুল মসীহ, আবদুর রাসূল, আবদুন নবী, আবদুল হুসাইন, গোলাম রাসূল ইত্যাদি।

আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের পরিপন্থী। যেমন ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা, দশ যেখানে আল্লাহ সেখানে, দ্বীন আল্লাহর দেশ সকল মানুষের, বিপ্লবের নামে শপথ করে বলছি, খাঁটি আরব হওয়ার নামে শপথ করে বলছি ইত্যাদি।

কোন রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’ বলাও হারাম (শাহজাহান ও জাহাঙ্গীরও এ পর্যায়ভুক্ত)। একইভাবে কোন মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা ‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা যাবে না। কেননা ‘কাযীউল কুযাত’ একমাত্র আল্লাহ।

কোন কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোন শব্দ ব্যবহার করাও সিদ্ধ নয়।

আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত না’, ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’ এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়। কারণ এমন কথা বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়।

 


[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪০৭।

[2]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৪১৯।

[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৪২০।

[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪০৯।

[6]. বুখারী হা/৬১৮১।

মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস

মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস কুরআন-হাদীছ উভয়ের আলোকেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ

‘তারা আপনাকে মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, উহা অশুচি। সুতরাং মাসিকের সময় তোমরা স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না’ (বাক্বারাহ ২২২)

পবিত্রতা লাভের পর তারা গোসল না করা পর্যন্ত তাদের নিকটে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা একই সাথে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন, فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ ‘যখন তারা ভালমত পাক-পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের নিকটে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২২)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اِصْنَعُوا كُلَّ شَىْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ ‘সহবাস ব্যতীত তোমরা তাদের সাথে সব কিছুই কর’।[1]

মাসিকের সময় সহবাস যে কঠিন পাপ তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণী হ’তে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’।[2]

অজ্ঞতাবশতঃ যদি কোন ব্যক্তি মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস করে তাহলে তাকে এজন্য কোন কাফফারা দিতে হবে না। কিন্তু জেনেশুনে যারা এ কাজ করবে তাদেরকে নির্ধারিত এক দীনার বা অর্ধ দিনার কাফফারা দিতে হবে। এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে।[3]


[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৫।

[2]. তিরমিযী; মিশকাত হা/৫৫১।

[3]. তিরমিযী হা/১২৫, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৫৩, সনদ ছহীহ।

পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন

দুর্বল ঈমানের কিছু লোক তাদের স্ত্রীদের সাথে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে মেলামেশা করতে দ্বিধা করে না। অথচ এটা কবীরা গোনাহ। যারা এ কাজ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا ‘যে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন করে সে অভিশপ্ত’।[1]

পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী রমণীর সাথে মিলিত হয় কিংবা পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা অস্বীকার করে’।[2]

অবশ্য কিছু সতী-সাধ্বী স্ত্রী তাদের স্বামীদেরকে এ কাজে বাধা দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক স্বামীই তাদের কথা না মানলে তালাকের হুমকি দেয়। আবার যেসকল স্ত্রী আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করে তাদেরকে প্রতারণাচ্ছলে ধারণা দেয় যে, এ জাতীয় কাজ বৈধ। কারণ আল্লাহ বলেন, نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যে পন্থায় ইচ্ছা গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২৩)

অথচ নবী করীম (ছাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘স্বামী স্ত্রীর সামনে দিয়ে, পিছন দিয়ে, যেকোন ভাবে যেতে পারবে, যতক্ষণ তা সন্তান প্রসবের দ্বারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে’।[3] আর এটা অবিদিত নয় যে, পশ্চাৎদ্বার দিয়ে   সন্তান প্রসব হয় না। সুতরাং আয়াতে সঙ্গমের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কথা বলা হয়নি; বরং একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতির মধ্যে যেটা ইচ্ছা সেটা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। এসব অপরাধের মূলে রয়েছে বিবাহিত শালীন জীবনের পাশাপাশি গণিকাগমনের জাহেলী প্রথা, সমকামিতা এবং যত্রতত্র প্রদর্শিত অশ্লীল নীল ছবি। নিঃসন্দেহে এ জাতীয় কাজ হারাম। উভয়পক্ষ রাযী থাকলেও তা হারাম হবে। কেননা পারস্পরিক সম্মতিতে কোন হারাম হালাল হয়ে যায় না।


[1]. আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩১৯৩।

[2]. তিরমিযী; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯১৮।

[3]. আবুদাঊদ হা/২১৬৪, সনদ হাসান।

 [box type=”info” align=”” class=”” width=”600″]আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক! মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের শ্বাশত বাণী ছড়িয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন এবং সকলকে জানার সুযোগ করে দিন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে -এ লাইক করুন[/box]

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button