প্রবন্ধ

ছিয়াম সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ন ফতোওয়া (২য়-পর্ব)

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেনা

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু।                                     

 মূল:আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:) অনুবাদক:শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী

সংক্ষিপ্ত বর্ননাঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর তাআলার জন্য যিনি আ্মাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকূলের সেরা জীব মানুষ হিসেবে এবং এই সুন্দর পৃথীবিতে পাঠিয়েছেন মুসলিম করে। সেই সাথে শান্তি বর্ষিত হউক নবী (ছাঃ) এর উপর যিনি দ্বীনকে এত সুন্দর করে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন ফরয ততটুকু যতটুকু দ্বীন পালন করতে প্রয়োজন হয়।আর এই দ্বীন অর্জন করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে । বই ফতোওয়া আরকানুল থেকে সংগৃহীত  কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ন  উত্তর জেনে নেই

ঋতুবতী ফজরের পূর্বে পবিত্র হলে রোযা রাখবে।

প্রশ্নঃ (৪১৭) ঋতুবতী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে, তবে তার রোযার বিধান কি?
উত্তরঃফজরের পূর্বে পবিত্র হয়েছে এব্যাপারে নিশ্চিত হলে, তার ছিয়াম বিশুদ্ধহবে। কেননা নারীদের মধ্যে অনেকে এমন আছে, ধারণা করে যে পবিত্র হয়ে গেছেঅথচ সে আসলে পবিত্র হয়নি। এই কারণে নারীরা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে আসতেনতাদের লজ্জাস্থানে তুলা লাগিয়ে উক্ত তুলার চিহ্ন দেখানোর জন্য যে, তারা কিপবিত্র হয়েছেন? তখন তিনি বলতেন, لَا تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاءَ ‘তোমরা তাড়াহুড়া করবে না যতক্ষণ না তোমরা কাছ্‌ছা বাইযা (বা সাদা পানি)না দেখ।’অতএব নারী অবশ্যই ধীরস্থীরতার সাথে লক্ষ্য করবে এবং নিশ্চিত হবেপূর্ণরূপে পবিত্র হয়েছে কিনা। যদি পবিত্র হয়ে যায় তবে ছিয়ামের নিয়তকরে নিবে। ফজর হওয়ার পর গোসল করবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু নামাযের দিকেলক্ষ্য রেখে দ্রুত গোসল সেরে নেয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে সময়ের মধ্যেইফজর নামায আদায় সম্ভব হয়।
আমরাশুনতে পাই অনেক নারী ফজরের পূর্বে বা পরে ঋতু থেকে পবিত্র হয়, কিন্তুতারা গোসল করতে দেরী করে নামাযের সময় পার করে দেয়। পরিপূর্ণ পবিত্র ওপরিচ্ছন্ন হওয়ার যুক্তিতে সূর্য উঠার পর গোসল করে। কিন্তু এটা মারাত্মকধরণের ভুল। চাই তা রামাযান মাসে হোক বা অন্য মাসে। কেননা তার উপর ওয়াজিবহচ্ছে সময়মত নামায আদায় করার জন্য দ্রুত গোসল সেরে নেয়া। নামাযেরউদ্যেশ্যে গোসলের ওয়াজিব কাজগুলো সারলেই যথেষ্ট হবে। তারপর দিনের বেলায়আবারো যদি পরিপূর্ণরূপে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করে, তবে কিঅসুবিধা আছে?
ঋতুবতীনারীর মত অন্যান্য নাপাক ব্যক্তিগণ (যেমন স্ত্রী সহবাস বা স্বপ্ন দোষেরকারণে নাপাক) নাপাক অবস্থাতেই ছিয়ামের নিয়ত করতে পারবে। এবং ফজর হওয়ারপর গোসল করে নামায আদায় করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো কখনো স্ত্রী সহবাসের কারণে নাপাক অবস্থাতেই ছিয়ামের নিয়তকরতেন এবং ফজর হওয়ার পর নামাযের আগে গোসল করতেন।[37] (আল্লাহ্‌ই অধিকজ্ঞান রাখেন।)

 প্রশ্নঃ (৪১৮) রোযা অবস্থায় দাঁত উঠানোর বিধান কি?

উত্তরঃসাধারণ দাঁত বা মাড়ির দাঁত উঠানোতে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাতে রোযা ভঙ্গহবে না। কেননা এতে শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে না। তাই রোযাও ভঙ্গ হবেনা।
প্রশ্নঃ (৪১৯) রোযা রেখে রক্ত পরীক্ষা (Blood test) করার জন্য রক্ত প্রদান করার বিধান কি? এতে কি রোযা নষ্ট হবে।
উত্তরঃব্লাড টেষ্ট করার জন্য রক্ত বের করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা ডাক্তারঅসুস্থ ব্যক্তির চেক আপ করার জন্য রক্ত নেয়ার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তুএই রক্ত নেয়া অল্প হওয়ার কারণে শিঙ্গা লাগানোর মত এর কোন প্রভাব শরীরেদেখা যায় না, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। আসল হচ্ছে ছিয়াম ভঙ্গ না হওয়া-যতক্ষণ পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের জন্য শরীয়ত সম্মত দলীল না পাওয়া যাবে। আরসামান্য রক্ত বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে এখানে এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না।
কিন্তুরোগীর শরীরে রক্ত প্রবেশ করার জন্য বেশী পরিমাণে রক্ত প্রদান করা রোযাভঙ্গের অন্যতম কারণ। কেননা এর মাধ্যমে শিঙ্গা লাগানোর মত শরীরে প্রভাবপড়ে। অতএব ছিয়াম যদি ওয়াজিব হয়, তবে এভাবে বেশী পরিমাণে রক্ত দান করাজায়েয নয়। তবে রোগীর অবস্থা যদি আশংকা জনক হয়, মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষাকরলে তার প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে এবং ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত যে, এইরোযাদারের রক্তই শুধু রোগীর উপকারে আসবে ও তার প্রাণ বাঁচানো সম্ভবপর হতেপারে, তবে এই অবস্থায় রক্ত দান করতে কোন অসুবিধা নেই। রক্ত দানের মাধ্যমেরোযা ভঙ্গ করে পানাহার করবে। অতঃপর এই রোযার কাযা আদায় করবে। (আল্লাহ্‌ইঅধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (৪২০) রোযাদার হস্ত মৈথুন করলে কি রোযা ভঙ্গ হবে? তাকে কি কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃরোযাদার হস্ত মৈথুন করে যদি বীর্যপাত করে তবে তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।দিনের বাকী অংশ তাকে ছিয়াম অবস্থায় কাটাতে হবে। এ অপরাধের জন্য আল্লাহ্‌রকাছে তওবা করতে হবে এবং উক্ত দিনের রোযা কাযা আদায় করতে হবে। কিন্তুকাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে না। কেননা কাফ্‌ফারা শুধুমাত্র সহবাসের মাধ্যমে রোযাভঙ্গ করলে আবশ্যক হবে।

প্রশ্নঃ (৪২১) রোযাদারের জন্য আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃরোযাদারের আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। চাই তৈল জাতীয়হোক বা ধোঁয়া জাতীয়। তবে ধোঁয়ার সুঘ্রাণ নাকের কাছে নিয়ে শুঁকবে না।কেননা এতে একজাতীয় পদার্থ আছে যা পেট পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন রোযা ভঙ্গ হয়েযাবে। যেমন পানি বা তদানুরূপ বস্তু। কিন্তু সাধারণ ভাবে তার সুঘ্রাণ নাকেঢুকলে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৪২২) নাকে ধোঁয়া টানা এবং চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃউভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, নাকে ভাপের ধোঁয়া টানা নিজ ইচ্ছায় হয়েথাকে। যাতে করে ধোঁয়ার কিছু অংশ পেটে প্রবেশ করে, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হয়েযাবে। কিন্তু ড্রপ ব্যবহার করে উহা পেটে পৌঁছানোর ইচ্ছা করা হয় না; বরংএতে উদ্দেশ্য হচ্ছে নাকে বা চোখে শুধু ড্রপ ব্যবহার করা।
প্রশ্নঃ (৪২৩) রোযাদারের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃনাকের ড্রপ যদি নাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননালাক্বীত বিন সাবুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন, وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًاছিয়াম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।[38] অতএব পেটে পৌঁছে এরকম করে রোযাদারের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়।কিন্তু পেটে না পৌঁছলে কোন অসুবিধা নেই।
চোখেড্রপ ব্যবহার করা সুরমা ব্যবহার করার ন্যায়। এতে রোযা নষ্ট হবে না।অনুরূপভাবে কানে ড্রপ ব্যবহারেও রোযা বিনষ্ট হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রেনিষেধাজ্ঞার কোন দলীল নেই। এবং যে সব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এগুলো তারওঅন্তর্ভূক্ত নয়। চোখ বা কান দ্বারা পানাহার করা যায় না। এগুলো শরীরেরঅন্যান্য চামড়ার লোমকুপের মত।
বিদ্বানগণউল্লেখ করেছেন, কোন লোকের পায়ের তলায় যদি তরল কোন পদার্থ লাগানো হয় এবংএর স্বাদ গলায় অনুভব করে, তবে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহাখানা-পিনা গ্রহণের স্থান নয়। অতএব সুরমা ব্যবহার করলে, চোখে বা কানে ড্রপব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হবে না- যদিও এগুলো ব্যবহার করলে গলায় স্বাদ অনুভবকরে।
অনুরূপভাবে চিকিৎসার জন্য অথবা অন্য কোন কারণে যদি কেউ তৈল ব্যবহার করে, তাতেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
এমনিভাবেশ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য যদি মুখে পাইপ লাগিয়ে অক্সিজেনের মাধ্যমেশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে চলমান করা হয়, এবং তা পেটে পৌঁছে, তাতেওরোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা পানাহারের অন্তর্ভূক্ত নয়।

প্রশ্নঃ (৪২৪) রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে?
উত্তরঃহ্যাঁ, তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে। কেননা স্বপ্নদোষ রোযা বিনষ্ট করে না। এটাতো মানুষের অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। আর নিদ্রা অবস্থায় সংঘটিত বিষয় থেকে কলমউঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে একটি সতর্কতাঃ বর্তমান যুগে অনেক মানুষ রামাযানের রাতে জেগেথাকে। কখনো আজেবাজে কর্ম এবং কথায় রাত কাটিয়ে দেয়। তারপর গভীর নিদ্রায়সমস্ত দিন অতিবাহিত করে। বরং মানুষের উচিত হচ্ছে, রোযার সময়টাকে যিকির, কুরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি আনুগত্যপূর্ণ ও আল্লাহর নৈকট্যদানকারী কাজেঅতিবাহিত করা।
প্রশ্নঃ (৪২৫) রোযাদারের ঠান্ডা ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃঠান্ডা-শীতল বস্তু অনুসন্ধান করা রোযাদার ব্যক্তির জন্য জায়েয, কোনঅসুবিধা নেই। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযা রেখে গরমেরকারণে বা তৃষ্ণার কারণে মাথায় পানি ঢালতেন।[39] ইবনু ওমর (রাঃ) রোযা রেখেগরমের প্রচন্ডতা অথবা পিপাসা হ্রাস করার জন্য শরীরে কাপড় ভিজিয়ে রাখতেন।কাপড়ের এই সিক্ততার কোন প্রভাব নেই। কেননা উহা এমন পানি নয়, যা নাড়ীপর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
প্রশ্নঃ (৪২৬) রোযাদার কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি পেটে পৌঁছে যায়, তবে কি তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তরঃরোযাদারকুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে পৌঁছেযায়, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে তার কোন ইচ্ছা ছিল না। আল্লাহ্‌বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্‌ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।(সূরা আহযাবঃ ৫)

প্রশ্নঃ (৪২৭) রোযাদারের আতরের সুঘ্রাণ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ৪২১ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ (৪২৮) নাক থেকে রক্ত বের হলে কি রোযা নষ্ট হবে?
উত্তরঃনাক থেকে রক্ত বের হলে রোযা নষ্ট হবে না- যদিও বেশী পরিমাণে বের হয়। কেননা এখানে ব্যক্তির কোন ইচ্ছা থাকেনা।
সতর্কতা বশতঃ ফজরের দশ/পনর মিনিট পূর্বে পানাহার বন্ধ করা।
প্রশ্নঃ (৪২৯) রামাযানের কোন কোন ক্যালেন্ডারে দেখা যায় সাহুরের জন্য শেষ টাইমনির্ধারণ করা হয়েছে এবং তার প্রায় দশ/পনর মিনিট পর ফজরের টাইম নির্ধারণকরা হয়েছে। সুন্নাতে কি এর পক্ষে কোন দলীল আছে নাকি এটা বিদআত?
উত্তরঃনিঃসন্দেহে ইহা বিদআত। সুন্নাতে নববীতে এর কোন প্রমাণ নেই। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা সম্মানিত কিতাবে বলেন,
]وَكُلُواوَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْالْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَىاللَّيْلِ[
এবংপ্রত্যুষে (রাতের) কাল রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ততোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণকর।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَنَّبِلَالًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ لَا يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
নিশ্চয়বেলাল রাত থাকতে আযান দেয়, তখন তোমরা খাও ও পান কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মেমাকতূমের আযান শোন। কেননা ফজর উদিত না হলে সে আযান দেয় না।[40] ফজর নাহতেই খানা-পিনা বন্ধ করার জন্য লোকেরা সময় নির্ধারণ করে যে ক্যালেন্ডারতৈরী করেছে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত ফরযের উপর বাড়াবাড়ী। আরএটা হচ্ছে আল্লাহ্‌র দ্বীনের মাঝে অতিরঞ্জন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ
অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক। অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক। অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক।[41]

প্রশ্নঃ (৪৩০) এয়ারপোর্টে থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেছে মুআয্‌যিন আযান দিয়েছে, ইফতারও করে নিয়েছে। কিন্তু বিমানে চড়ে উপরে গিয়ে সূর্য দেখতে পেল। এখনকি পানাহার বন্ধ করতে হবে?
উত্তরঃখানা-পিনা বন্ধ করা অবশ্যক নয়। কেননা যমীনে থাকাবস্থায় ইফতারের সময়হয়ে গেছে সূর্যও ডুবে গেছে। সুতরাং ইফতার করতে বাধা কোথায়? রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ
এদিক থেকে যখন রাত আগমণ করবে এবং ঐদিক থেকে দিন শেষ হয়ে যাবে ও সূর্য অস্ত যাবে, তখন রোযাদার ইফতার করে ফেলবে।[42]
অতএবএয়ারপোর্টের যমীনে থাকাবস্থায় যখন সূর্য ডুবে গেছে, তখন তার দিনও শেষহয়ে গেছে, তাই সে শরীয়তের দলীল মোতাবেক ইফতারও করে নিয়েছে। সুতরাংশরীয়তের দলীল ব্যতীরেকে আবার তাকে পানাহার বন্ধ করার আদেশ দেয়া যাবে না।
প্রশ্নঃ (৪৩১) রোযাদারের কফ অথবা থুথু গিলে ফেলার বিধান কি?
উত্তরঃকফ বা শ্লেষা যদি মুখে এসে একত্রিত না হয় গলা থেকেই ভিতরে চলে যায় তবেতার রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু যদি গিলে ফেলে তবে সে ক্ষেত্রে বিদ্বানদেরদু’টি মত রয়েছেঃ
১ম মতঃ তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা উহা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত।
২য়মতঃ রোযা নষ্ট হবে না। কেননা উহা মুখের সাধারণ থুথুর অন্তর্গত। মুখেরমধ্যে সাধারণ পানি যাকে থুথু বলা হয় তা দ্বারা রোযা নষ্ট হয় না। এমনকিযদি থুথু মুখের মধ্যে একত্রিত করে গিলে ফেলে তাতেও ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবেনা।
আমরাজানি আলেমগণ মতবিরোধ করলে তার সমাধান কুরআন-সুন্নাহ্‌ থেকে খুঁজতে হবে।কিন্তু এক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাতে সুস্পষ্ট কোন উক্তি নেই। এ বিষয়ে যখনসন্দেহ হয়ে গেল, তার ইবাদতটি নষ্ট হয়ে গেল না নষ্ট হল না। তখন আমাদেরকেমূলের দিকে ফিরে যেতে হবে। মূল হচ্ছে দলীল ছাড়া ইবাদত বিনষ্ট না হওয়া।অতএব কফ গিলে নিলে রোযা নষ্ট হবে না।
মোটকথাকফ নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিবে। উহা গলার নীচে থেকে মুখে টেনে নিয়ে আসারচেষ্টা করবে না। কিন্তু মুখে এসে পড়লে বাইরে ফেলে দিবে। চাই রোযাদার হোকবা না হোক। কিন্তু গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হবে এর জন্য দলীল দরকার।

প্রশ্নঃ (৪৩২) খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করলে কি ছিয়াম নষ্ট হবে?
উত্তরঃখাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করে যদি তা গিলে না ফেলে, তবে ছিয়াম নষ্ট হবে না।কিন্তু একান্ত দরকার না পড়লে এরূপ করা উচিত নয়। এ অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতযদি পেটে কিছু ঢুকে পড়ে তবে ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।
প্রশ্নঃ (৪৩৩) রোযা রেখে হারাম বা অশ্লীল কথাবার্তা উচ্চারণ করলে কি ছিয়াম নষ্ট হবে?
উত্তরঃআমরাআল্লাহ্‌ তা’আলার নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই জানতে পারি ছিয়াম ফরযহওয়ার হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহ্‌ ভীতি অর্জন করা ওআল্লাহ্‌র ইবাদত করা। আল্লাহ্‌ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হেঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিলতোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরাবাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থেতাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ্‌র নির্দেশিত বিষয় বাস্তাবায়ন করা, তাঁর নিষেধথেকে দূরে থাকা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যেব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা অভ্যাস ও মূর্খতা পরিত্যাগ করলনা, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।[43] অতএব এ কথানিশ্চিত হয়ে গেল যে, রোযাদার যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন করবে এবংসবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে। মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা বলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথাচরিত্র ধ্বংসকারী অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকেবিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথেপরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ্‌।
কিন্তুআফসোসের বিষয় অধিকাংশ রোযাদার রামাযানের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্যকরে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরয কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোনপার্থক্য নেই। গর্হিত ও অশ্লীল কথা কাজে লিপ্ত থাকে। মিথ্যা, ধোঁকাবাজীপ্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যেছিয়ামের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত বিষয় ছিয়ামকে ভঙ্গ করেদিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
প্রশ্নঃ(৪৩৪) মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়ার বিধান কি? ইহা কি ছিয়াম নষ্ট করে?
উত্তরঃমিথ্যা দেয়া অন্যতম কাবীরা গুনাহ্‌। আর তা হচ্ছে না জেনে কোন বিষয়েস্বাক্ষ্য দেয়া অথবা জেনে শুনে বাস্তবতার বিপরীত সাক্ষ্য প্রদান করা। এতেছিয়াম বিনষ্ট হবে না। কিন্তু ছিয়ামের ছওয়াব কমিয়ে দিবে।

প্রশ্নঃ (৪৩৫) ছিয়ামের আদব কি কি?
উত্তরঃছিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে, আল্লাহ্‌ভীতি অর্জন করা তথা আল্লাহরআদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হেঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিলতোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরাবাক্বারাঃ ১৮৩)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ[
যেব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা কাজ-কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগকরল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।[44]
ছিয়ামেরআরো আদব হচ্ছে, বেশী বেশী দান-খায়রাত করা, নেককাজ ও জনকল্যাণ মূলক কাজবাস্তবায়ন করা। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেনসর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি। রামাযান মাসে যখন জিবরীল (আঃ) তাঁকে কুরআন শিক্ষাদিতেন তখন তিনি আরো বেশী দান করতেন।[45]
আরোআদব হচ্ছে, আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। যাবতীয়মিথ্যাচার, গালিগালাজ, ধোকা, খিয়ানত, হারাম অশ্লীল বস্তু দেখা বা শোনাপ্রভৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা প্রতিটি মানুষের উপর ওয়াজিব। বিশেষ করেরোযাদারের জন্য তো অবশ্যই।
রোযার আদব হচ্ছে, সাহুর খাওয়া। এবং তা দেরী করে খাওয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةًতোমরা সাহুর খাও। কেননা সাহুরে রয়েছে বরকত।[46]
ছিয়ামেরআদব হচ্ছে, দ্রুত ইফতার করা। সূর্য অস্ত যাওয়া নিশ্চিত হলে বা অস্তযাওয়ার অনুমান প্রবল হলেই সাথে সাথে দেরী না করে ইফতার করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَমানুষ কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।[47]
ইফতারের আদব হচ্ছে, কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা, সম্ভব না হলে যে কোন খেজুর দ্বারা। খেজুর না পেলে পানি দ্বারাই ইফতার করবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৬) ইফতারের জন্য কোন দু’আ কি প্রমাণিত আছে? রোযাদার কি মুআয্‌যিনের জবাব দিবে নাকি ইফতার চালিয়ে যাবে?
উত্তরঃদু’আ কবূল হওয়ার অন্যতম সময় হচ্ছে ইফতারের সময়। কেননা সময়টি হচ্ছেইবাদতের শেষ মূহুর্ত। তাছাড়া মানুষ সাধারণতঃ ইফতারের সময় অধিক দুর্বলহয়ে পড়ে। আর মানুষ যত দুর্বল হয় তার অন্তর তত নরম ও বিনয়ী হয়। তখনদু’আ করলে মনোযোগ আসে বেশী এবং আল্লাহ্‌র দিকে অন্তর ধাবিত হয়।
ইফতারের সময় দু’আ হচ্ছেঃاللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُহে আল্লাহ্‌ আপনার জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনার রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।[48]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফতারের সময় এই দু’আ পাঠ করতেনঃذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُতৃষ্ণা বিদূরিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা তরতাজা হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ চাহে তোপ্রতিদান সুনিশ্চিত হয়েছে।[49] হাদীছ দু’টিতে যদিও দুর্বলতা রয়েছে কিন্তুকোন কোন বিদ্বান উহাকে হাসান বলেছেন। মোটকথা এগুলো দু’আ বা অন্য কোন দু’আপাঠ করবে। ইফতারের সময় হচ্ছে দু’আ কবূল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত।কেননা হাদীছে এরশাদ হয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِنَّ لِلصَّائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّছিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময়কার দু’আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না।[50]
আর ইফতারের সময় মুআয্‌যিনের জবাব দেয়া শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُমুআয্‌যিনের আযান শুনলে তার জবাবে সে যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বল।[51] এহাদীছটি প্রত্যেক অবস্থাকে শামিল করে। তবে দলীলের ভিত্তিতে কোন অবস্থাব্যতিক্রম হলে ভিন্ন কথা।

প্রশ্নঃ (৪৩৭) ছিয়াম কাযা থাকলে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখার বিধান কি?
উত্তরঃনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْرَ
যেব্যক্তি রামাযানের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে সারাবছর রোযা রাখার প্রতিদান লাভ করবে।[52] কোন মানুষের যদি রোযা কাযা থাকে আরসে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, সে কি রামাযানের পূর্বে রোযা রাখল নারামাযানের পর।
উদাহরণঃজনৈক লোক রামাযানের ২৪টি রোযা রাখল। বাকী রইল ছয়টি। এখন সে যদি কাযাআদায় না করেই শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, তাকে কি বলা যাবে সে রামাযানেররোযা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখল? কেননা সে তো রামাযানের রোযাপূর্ণই করেনি। অতএব রামাযানের রোযা কাযা থাকলে শাওয়ালের ছয় রোযারপ্রতিদান তার জন্য প্রমাণিত হবে না।
অবশ্যআলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, কারো রোযা কাযা থাকলে তার জন্য নফল রোযাজায়েয কি না? কিন্তু আমাদের এই মাসআলাটি এই মতবিরোধের অন্তর্ভূক্ত নয়।কেননা শাওয়ালের ছয়টি রোযা রামাযানের সাথে সম্পর্কিত। যে ব্যক্তিরামাযানের রোযা পূর্ণ করেনি তার জন্য উক্ত ছয় রোযার ছওয়াব সাব্যস্তহবেনা।

কাযা রোযা বাকী রেখে মৃত্যু বরণ করলে তার বিধান।

প্রশ্নঃ(৪৩৮)জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি রামাযানে রোযা কাযা করেছে। কিন্তু পরবর্তী মাস শুরুহওয়ার চারদিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। তার পক্ষ থেকে কি কাযা রোযাগুলোআদায় করতে হবে?
উত্তরঃতার এই অসুখ যদি চলতেই থাকে সুস্থ না হয় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেতবে তার পক্ষ থেকে কাযা আদায় করতে হবেনা। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
আরযে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করেনিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হচ্ছে, সুস্থহলেই কাযা রোযাগুলো দ্রুত আদায় করে নেয়া।
কিন্তুরোযা রাখতে সমর্থ হওয়ার পূর্বেই যদি মৃত্যু বরণ করে, তবে রোযার আবশ্যকতারহিত হয়ে যাবে। কেননা সে তো এমন কোন সময় পায়নি যাতে সে রোযাগুলো কাযাআদায় করতে পারে। যেমন একজন লোক রামাযান আসার পূর্বেই শাবানে মৃত্যু বরণকরল। অতএব রামাযানের রোযা রাখা তার জন্য আবশ্যক নয়। কিন্তু অসুস্থতা যদিএমন হয় যা সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনেরবিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৯) রামাযানের রোযা বাকী থাকাবস্থায় পরবর্তী রামাযান এসে গেলে কি করবে?
উত্তরঃএকথা সবার জানা যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন,
]فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
কাজেইতোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোকঅসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করেনিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব এ লোকটি যখন শরীয়ত সম্মত দলীলের ভিত্তিতেরোযা ভঙ্গ করেছে, তখন আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নার্থে তা কাযা আদায় করাউচিত। পরবর্তী রামাযান আসার পূবেই উহা কাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব।কেননা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমার রামাযানের কিছু রোযা বাকী রয়ে যেত। কিন্তুশাবান মাস না আসলে আমি উহা কাযা আদায় করতে পারতাম না।’[53] আর তার কারণছিল রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে তাঁরব্যস্ততা। সুতরাং আয়েশা (রাঃ)এর উক্ত বাণী থেকে প্রমাণিত হয় যে, পরবর্তীরামাযান আসার পূর্বে উহা অবশ্যই কাযা আদায় করতে হবে।
কিন্তুসে যদি পরবর্তী রামাযান পর্যন্ত দেরী করে এবং রোযাটি রয়েই যায়, তবে তারউপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ্‌র কাছে তওবা ইস্তেগফার করা, এই শীথিলতার জন্যলজ্জিত অনুতপ্ত হওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব তা কাযা আদায় করে নেয়া। কেননাদেরী করলে কাযা আদায় করার আবশ্যকতা রহিত হয়ে যায় না।

প্রশ্নঃ (৪৪০) শাওয়ালের ছয়টি রোযা পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি কি?
উত্তরঃশাওয়ালের ছয়টি রোযা পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ঈদের পর পরইউহা আদায় করা এবং পরস্পর আদায় করা। বিদ্বানগণ এভাবেই বিষয়টি উল্লেখকরেছেন। কেননা এতে রামাযানের অনুসরণ বাস্তবায়ন হয়। হাদীছে বলা হয়েছে যেব্যক্তি রামাযানের পরে পরে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে..।তাছাড়া এতে নেককাজ সম্পাদনে তাড়াহুড়া করা হল, যে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করার প্রতিউদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এতে বান্দার দৃঢ়তার প্রমাণ রয়েছে। দৃঢ়তামানুষের পরিপূর্ণতার লক্ষণ। সচেতন বান্দা সুযোগ হাতছাড়া করে না। কেননামানুষ জানে না পরবর্তীতে কি তার জন্য অপেক্ষা করছে। অতএব বান্দা কাঙ্খিতলক্ষ্যে পৌঁছতে চাইলে তাকে প্রতিটি নেক কর্মের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবেসুযোগের সৎ ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্নঃ (৪৪১) শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখার জন্য কি ইচ্ছামত দিন নির্ধারণ করাজায়েয? নাকি তার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট করা আছে? এ দিনগুলো রোযা রাখলেকি উহা ফরযের মত হয়ে যাবে এবং প্রতি বছর আবশ্যিকভাবে রোযা পালন করতে হবে?
উত্তরঃনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন,
]مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْرَ[
যেব্যক্তি রামাযানের রোযা রাখার পর শওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে সারাবছর রোযা রাখার প্রতিদান লাভ করবে।[54] এ ছয়টি রোযার জন্য কোন দিননির্দিষ্ট করা নেই। মাসের যে কোন সময় রোযাগুলো রাখা যায়। চাই মাসের প্রথমদিকে হোক বা মধ্যখানে বা শেষের দিকে। লাগাতার হোক বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে হোক-সবই জায়েয। বিষয়টি প্রশস্ত- সুযোগ সম্পন্ন (আল্‌ হামদুল্লিাহ্‌)। তবেরামাযান শেষ হওয়ার পর পরই মাসের প্রথম দিকে দ্রুত করে নেয়া বেশী উত্তম।কেননা এতে নেক কাজে প্রতিযোগিতা করা হল, যা কাম্য।
কোন বছর এ ছিয়াম পালন করবে কোন বছর করবে না তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ ছিয়াম নফল ফরয নয়।
প্রশ্নঃ (৪৪২) আশুরা ছিয়ামের বিধান কি?
উত্তরঃনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরত করে মদীনা আগমণ করে দেখেনইহুদীরা মুহার্‌রামের দশ তারিখে রোযা পালন করছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
আমরামূসার অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে অধিক হকদার। তিনি নিজে সে দিনেররোযা রাখলেন এবং ছাহাবীদেরকেও নির্দেশ দিলেন।[55] বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিতইবনু আব্বাসের হাদীছে বলা হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আশুরা দিবসে রোযা রেখেছেন এবং ছাহাবীদেরকে রোযা রাখার ব্যাপারে নির্দেশদিয়েছেন। এ রোযার ফযীলত সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, أَحْتَسِبُ عَلَىاللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُআল্লাহ্‌র কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।[56] কিন্তু ইহুদীদের বিরোধীতা করার জন্য তিনি এর একদিন পূর্বে ৯ তারিখ অথবা একদিন পরে ১১ তারিখ রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুতরাংআশুরার রোযার ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, মুহার্‌রমের দশ তারিখের সাথে ৯ তারিখঅথবা ১১ তারিখের রোযা রাখা। অবশ্য ১১ তারিখের চেয়ে ৯ তারিখ রোযা রাখা অধিকউত্তম।
প্রশ্নঃ (৪৪৩) শাবান মাসে রোযা রাখার বিধান কি?
উত্তরঃশাবান মাসে রোযা রাখা এবং অধিক হারে রাখা সুন্নাত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَশাবান মাস ছাড়া অন্য কোন সময় আমি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে এত বেশী রোযা রাখতে দেখিনি।[57] এ হাদীছ অনুযায়ী শাবান মাসেঅধিকহারে রোযা রাখা উচিত।
বিদ্বানগণবলেন, শাবান মাসে রোযা রাখা সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাযের অনুরূপ। এই রোযাযেন রামাযান মাসের ভুমিকা। অর্থাৎ রামাযানের পূর্বের সুন্নাত রোযা।অনুরূপভাবে শাওয়ালের রোযা রামাযানের পরের সুন্নাত ¯^iƒc| যেমন ফরয নামাযেরআগে ও পরে সুন্নাত রয়েছে।
তাছাড়াশাবান মাসে রোযার উপকারিতা হচ্ছে, নিজেকে রামাযানের রোযা রাখার ব্যাপারেপ্রস্তুত করা, রোযায় অভ্যস্ত করে তোলা। যাতে করে ফরয রোযা রাখা তার জন্যসহজসাধ্য হয়।[58]

প্রশ্নঃ (৪৪৪) যার অভ্যাস আছে একদিন রোযা রাখা ও একদিন ছাড়া। সে কি শুক্রবারেও রোযা রাখতে পারে?
উত্তরঃহ্যাঁ। কোন মানুষ যদি এক দিন পর পর রোযা রাখার অভ্যাস করে থাকে এবং তাররোযার দিন শুক্রবার হয় বা শনিবার বা রোববার হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। তবেসে দিন যেন এমন না হয় যখন রোযা রাখা হারাম। যেমন দু’ঈদের দিন, আইয়্যামেতাশরীকের দিন (কুরবানী ঈদের পরের তিন দিনকে আইয়্যামে তাশরীক বলা হয়)। তখনরোযা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। নারীদের ক্ষেত্রে ঋতু বা নেফাসের দিনগুলো রোযারাখা হারাম।
প্রশ্নঃ (৪৪৫) ছওমে বিছাল কাকে বলে? এটা কি শরীয়ত সম্মত?
উত্তরঃছওমেবিসাল বা অবিচ্ছিন্ন ছিয়াম হচ্ছে, ইফতার না করে দু’দিন একাধারে রোযারাখা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরকম রোযা রাখতে নিষেধকরেছেন। আর বলেছেন, কেউ যদি অবিচ্ছিন্ন করতে চায়, তবে শেষ রাতে সাহুরেরসময় পর্যন্ত মিলিত করতে পারে।[59] সাহুর পর্যন্ত রোযাকে অবিচ্ছিন্ন করণজায়েয, সুন্নাত নয়; কোন ফযীলতপূর্ণ কাজও নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করাকেকল্যাণের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
]لا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ[
মানুষততদিন কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।[60] কিন্তুসাহুরের সময় পর্যন্ত রোযাকে চালিয়ে যাওয়া বৈধ করেছেন। লোকেরা যখন বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি তো ইফতার না করেই রোযা চালিয়ে যান? তিনি বললেন, আমার অবস্থা তোমাদের মত নয়, আমাকে আমার পালনকর্তা খাওয়ান ও পান করান।[61]
প্রশ্নঃ (৪৪৬) বিশেষভাবে জুমআর দিবস রোযা নিষেধ। এর কারণ কি? কাযা ছিয়ামও কি এদিন রাখা নিষেধ?
উত্তরঃনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, لا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ ولا ليلتها بقيامএককভাবে শুধুমাত্র শুক্রবারের দিনে রোযা রাখবে না এবং রাতে ক্বিয়াম করবেনা।[62] রোযা রাখার জন্য এককভাবে এ দিনকে বেছে নেয়া নিষেধের হিকমত হচ্ছে, জুমআর দিন সপ্তাহিক ঈদের দিন। জুমআ ইসলামের তৃতীয় ঈদ হিসেবে গণ্য। প্রথমঈদ হচ্ছে রামাযান শেষে ঈদুল ফিতর। দ্বিতীয়টি কুরবানীর ঈদ। আর তৃতীয়টিহচ্ছে, সাপ্তাহিক ঈদ জুমআর দিন।[63] একারণেই আলাদাভাবে এদিনে রোযা রাখতেনিষেধ করা হয়েছে।
তাছাড়াএদিনে পুরুষদের জন্য উচিত হচ্ছে আগেভাগে জুমআর নামাযে যাওয়া, দু’আ যিকির ওকুরআন তেলাওয়াতে মাশগুল হওয়া। এদিনটি আরাফার দিবসের অনুরূপ। আরাফারদিবসে হাজীগণ রোযা রাখবেন না। কেননা এদিন তিনি দু’আ ও যিকিরে মাশগুলথাকবেন। একটি মূলনীতি হচ্ছে: কয়েকটি ইবাদত যদি একত্রিত হয়, তখন যেটাপিছানো সম্ভব হবে না সেটা তাৎক্ষণিক আদায় করবে এবং যেটি পিছানো সম্ভব হবেতা পিছিয়ে দিয়ে পরে আদায় করবে।
যদিপ্রশ্ন করা হয় যে, জুমআর দিন সাপ্তাহিক ঈদের দিন হওয়ার কারণে যদি রোযারাখা নিষেধ হয়ে থাকে, তবে তো অপর দু’টি ঈদের মত এদিনে অন্যান্য রোযা রাখাওহারাম হয়ে যায়?
উত্তরেআমরা বলবঃ এদিনটির বিধান অন্য দু’ঈদের চেয়ে ভিন্ন। কেননা ইহা প্রতি মাসেচারবার আগমণ করে। একারণে এদিনে রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে হারামনয়। তাছাড়া দু’ঈদের মাঝে আরো বিশেষ যে বৈশিষ্ট রয়েছে তা জুমআর দিনে নেই।
কিন্তুযদি জুমআর পূর্বে একদিন ও পরে একদিন রোযা পালন করে, তখন বুঝা যাবে যে, এককভাবে জুমআর দিবস রোযা পালন করার উদ্দেশ্য ছিল না। আর এটা জায়েয।[64]
এককভাবেজুমআর দিনে রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা নফল এবং কাযা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রজোয্য।কেননা হাদীছের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাধারণভাবে একথাই বুঝা যায়। তবে যদি কোনমানুষ এরকম ব্যস্ত থাকে যে, তার কাযা ছিয়াম জুমআর দিবস ছাড়া অন্য সময়আদায় করা সম্ভব নয়, তখন তার জন্য এককভাবে সে দিন রোযা পালন করা মাকরূহনয়। কেননা তার ওযর রয়েছে।

প্রশ্নঃ (৪৪৭) কোন মানুষ যদি নফল ছিয়াম ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কি গুনাহগারহবে? যদি সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে, তবে কি কাফ্‌ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃকোন মানুষ নফল রোযা রেখে যদি পানাহার বা স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করেফেলে, তবে কোন গুনাহ্‌ নেই। নফল রোযা শুরু করলেই তা পূর্ণ করা আবশ্যক নয়।তবে হজ্জ-ওমরার কাফ্‌ফারার রোযা পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু নফল ছিয়াম শুরুকরার পর পূর্ণ করাই উত্তম। তাই নফল ছিয়াম রেখে স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমেভঙ্গ করলে কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। কেননা তা পূর্ণ করা আবশ্যক নয়।
কিন্তুছিয়াম যদি ফরয হয় এবং স্ত্রী সহবাস করে তবে তা নাজায়েয। কেননা বিশেষপ্রয়োজন না দেখা দিলে ফরয ছিয়াম ভঙ্গ করা জায়েয নয়। তবে রামাযানের রোযাযদি তার উপর ফরয থাকে এবং দিনের বেলা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, তবেকাফ্‌ফারা দিতে হবে। রামাযানের রোযা যদি তার উপর ফরয থাকেএকথার অর্থ হচ্ছে:যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জনই সফরে থাকে, দু’জনেই রোযা রাখে, তারপর সহবাসেরমাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করে, তবে তারা গুনাহগার হবে না। তাদেরকে কাফ্‌ফারা দিতেহবেনা। অবশ্য তাদেরকে উক্ত দিনের ছিয়াম কাযা আদায় করতে হবে।

প্রশ্নঃ (৪৪৮) এতেকাফ এবং এতেকাফকারীর বিধান কি?
উত্তরঃএতেকাফ হচ্ছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় আল্লাহ্‌র আনুগত্য করার জন্য মসজিদেঅবস্থান করা। লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য এতেকাফ করা সুন্নাত।আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এদিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেন,
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
মসজিদেএতেকাফ করা অবস্থায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না।(সূরা বাক্বারাঃ১৮৭) ছহীহ্‌ বুখারীতে প্রমাণিত আছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এতেকাফ করেছেন, তাঁর সাথে ছাহাবায়ে কেরামও এতেকাফ করেছেন।[65] এতেকাফের এই বিধান শরীয়ত সম্মত। তা রহিত হয়ে যায়নি। ছহীহ্‌ বুখারী ওমুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন, এমনকি আল্লাহ্‌তাকে মৃত্যু দান করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন।[66]
ছহীহ্‌মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছেন। তারপর দ্বিতীয়দশকে এতেকাফ করেছেন। অতঃপর বলেন,
إِنِّياعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّاعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ثُمَّ أُتِيتُ فَقِيلَ لِي إِنَّهَا فِيالْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَفَلْيَعْتَكِفْ
নিশ্চয়আমি রামাযানের প্রথম দশকে এতেকাফ করে এই রাত্রি (লায়লাতুল কদর) অনুসন্ধানকরেছি। তারপর দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করেছি। অতঃপর ঐশী আগন্তুক কর্তৃক আমাকেবলা হয়েছে, নিশ্চয় উহা শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এতেকাফ করতেচায়, সে যেন এতেকাফ করে।[67] অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে এতেকাফ করেছে। ইমামআহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘এতেকাফ করা যে সুন্নাত সে সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে কোনমতবিরোধ আমার জানা নেই।’
তাই কুরআন-সুন্নাহ্‌ ও ইজমার দলীলের ভিত্তিতে এতেকাফ করা সুন্নাত।
এতেকাফকরার স্থান হচ্ছে, যে কোন শহরে অবস্থিত মসজিদ। যেখানে জামাতে নামাযঅনুষ্ঠিত হয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ মসজিদ সমূহে ইতেকাফ করাঅবস্থায়..।উত্তম হচ্ছে জুমআর মসজিদে এতেকাফ করা। যাতে করে জুমআ আদায় করারজন্য বের হতে না হয়। অন্য মসজিদে এতেকাফ করলেও কোন অসুবিধা নেই, তবেজুমআর জন্য আগে ভাগে মসজিদে চলে যাবে।
এতেকাফকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, আল্লাহ্‌র আনুগত্যপূর্ণ কাজ তথা কুরআনতেলাওয়াত, যিকির, নফল নামায প্রভৃতিতে মাশগুল থাকা। কেননা এতেকাফেরউদ্দেশ্যই হচ্ছে এটা। মানুষের সামান্য কথাবার্তায় কোন অসুবিধা নেই বিশেষকরে কথা যদি উপকারী হয়।
এতেকাফকারীর জন্য স্ত্রী সহবাস ও স্ত্রী সোহাগ বা শৃঙ্গার প্রভৃতি হারাম।
মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ভাগে বিভক্তঃ
1)    জায়েয। শরীয়ত অনুমদিত ও অভ্যাসগত যরূরী কাজে বের হওয়া। যেমন জুমআরনামাযের জন্য বের হওয়া, পানাহার নিয়ে আসার কেউ না থাকলে সে উদ্দেশ্যেবের হওয়া। ওযু, ফরয গোসল, পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া।
2)    ওয়াজিব নয় এমন নেকীর কাজে বের হওয়া। যেমন, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া। তবে এতেকাফ শুরু করার সময় এসমস্ত কাজের জন্য বেরহওয়ার যদি শর্ত করে নেয়, তবে জায়েয হবে। অন্যথায় নয়।
3)   এতেকাফের বিরোধী কাজে বের হওয়া। যেমন বাড়ী যাওয়া বা কেনা-বেচারজন্য বের হওয়া। স্ত্রী সহবাস করা। এ সমস্ত কাজ কোনভাবেই এতেকাফকারীর জন্যজায়েয নয়।

________সমাপ্ত_______

[৩৭].বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের গোসল করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নাপাক অবস্থায় ফজর হয়ে গেলেও ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে।

[৩৮].আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিও্বতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃনাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্‌, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।

[৩৯]. আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ তৃষ্ণায় রোযাদারের মাথায় পানি ঢালা।

[৪০].বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী তোমাদেরকে যেন বাধা না দেয়…। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ:ফজর হলেই ছিয়াম শুরু হয়ে যায়।

[৪১]. মুসলিম, অধ্যায়ঃ ইলম, অনুচ্ছেদঃ “অতিরঞ্জণকারীগণ ধ্বংশ হোক।”

[৪২]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সফরে রোযা রাখা ও রোযা ভঙ্গ করা।

[৪৩].বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবংতার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্‌ থেকে নেয়াহয়েছে।

[৪৪].বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবংতার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্‌ থেকে নেয়াহয়েছে।

[৪৫]. বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: নবী ব রামাযানে সর্বাধিক দানশীল হতেন।

[৪৬]. বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের বরকত। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের ফযীলত।

[৪৭]. বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: দ্রুত ইফতার করা। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের ফযীলত।

[৪৮].আবু দাউদ, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইফতারের দুআ। তবে এই দুঙূআটির সনদ (সূও্ব) দুর্বল তাই উহা গ্রহণযোগ্য নয়। ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৬-৩৯ পৃঃ যঈফআবু দাঊদ, আলবানী)

[৪৯]. আবু দাউদ, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইফতারের দুআ। (এ হাদীছটি ছহীহ,  ইরওয়াউল গালীল হা/৯২০)

[৫০]. [হাদীছ ছহীহ] ইবনু মাজাহ্‌, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/ ১৭৪৩, ১৭৫৩।

[৫১].বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ আযান শুনলে কি বলতে হয়। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ মুআয্‌যিনের অনুরূপ জবাব দেয়া মুস্তাহাব।

[৫২]. মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব।

[৫৩]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: কাযা ছিয়াম কখন আদায় করবে।

[৫৪]. মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব।

[৫৫]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আশুরার রোযা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আশুরার রোযা।

[৫৬]. মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেকমাসে তিনটি এবং আরাফার দিবসে রোযা রাখা মুস্তাহাব।

[৫৭]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাবানের রোযা।

[৫৮].নির্দিষ্ট আকারে শুধুমাত্র মধ্য শাবানে অর্থাৎ ১৫ তারিখে রোযা রাখা বিদআত।আমাদের দেশে এটাকে শবে বরাতের রোযা বলা হয়। কেননা এর ভিত্তি ছহীহ্‌সুন্নাহ্‌ থেকে প্রমাণিত নয়। ইবনু মাজার বর্ণনায় বলা হয়ঃ “মধ্য শাবানএলে তোমরা রাতে ইবাদত করবে ও দিনে রোযা পালন করবে..।”এ হাদীছটি জাল। কেননাএর সনদে ইবনু আবী সাবরাহ্‌ নামক জনৈক বর্ণনাকারী রয়েছে। সে হাদীছ জালকরত। (আহকামু রজব ওয়া শাবান।)- অনুবাদক।

[৫৯]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সাহুরের সময় পর্যন্ত ছিয়াম মিলিত করা।

[৬০]. বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: দ্রুত ইফতার করা। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুর খাওয়ার ফযীলত।

[৬১].বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুর খাওয়ার বরকত; কিন্তু সাহুরখাওয়া ওয়াজিব নয়। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: মিলিতভাবে রোযারাখা নিষেধ।

[৬২]. মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: এককভাবে জুমআর দিন রোযা রাখা মাকরূহ।

[৬৩]. রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় জুমআর দিন ঈদের দিন।” (আহমাদ হা/৭৬৮২)

[৬৪].রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেহ যেনশুধুমাত্র জুমআর দিবসে রোযা না রাখে। তবে এর পূর্বে একদিন বা পরে একদিনমিলিয়ে রোযা রাখতে পারে।” (বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/১৮৪৯)

[৬৫]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ইতেকাফ, অনুচ্ছেদঃ ইতেকাফ করা।

[৬৬]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ইতেকাফ, অনুচ্ছেদঃ শেষ দশকে এতেকাফ করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ এতেকাফ, অনুচ্ছেদঃ রামাযানের শেষ দশকে এতেকাফ করা।

[৬৭]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ইতেকাফ, অনুচ্ছেদঃ শেষ দশকে ইতেকাফ করা।

            (ফতোয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button