Sunday , June 4 2023
Home / সালাত / কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো নামাজ পড়া অবস্থায় অবহেলা করা হয়

কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো নামাজ পড়া অবস্থায় অবহেলা করা হয়

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

একজন মুসলমানের উপর নামাজ পড়া অবশ্য কর্তব্য। নামাজ পড়তে যেয়ে আমরা না জানার কারণে কিংবা জেনেও না মানার কারণে কতগুলো বিষয় অবহেলা করি আর যার কারণে আমাদের নামাজগুলো যথার্থরুপে সম্পাদন করা হয় না। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছেঃ

  • নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ করা
  • নামাজে অনর্থক নড়াচড়া করা
  • ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজে ইমামের পূর্বে আগে বেড়ে কাজ করা

বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা একজন মুসলিমের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। তাই বিষয়গুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ করা:

সবচেয়ে বড় চুরি হলো নামাজে চুরি করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “সবচেয়ে জঘন্য চোর হল যে তার নামাজে চুরি করে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে নামাজে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু ও সিজদা পূরা করে না।” (আহমাদ ৫/৩১০; সহীহ আল-জামে ৯৯৭) নামাজে প্রশান্তি ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ এবং রুকু সিজদায় পিঠ সোজা না করা এবং রুকু থেকে উঠার পর সোজা হয়ে না দাড়ান এবং দুই সিজদার মধ্যে সোজা হয়ে না বসা, অধিকাংশ মুসল্লীর মাঝে এ সব ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। কোন মসজিদই এ ধরণের মুসল্লী থেকে মুক্ত নয়। নামাযে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা থাকা নামাজের একটি রুকন, যা ব্যতিরেকে নামাজ সঠিক হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ “কারো নামাজ ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক হবে না যতক্ষণ না রুকু এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা করবে।” (আবু দাউদ ১/৫৩৩; সহীহ আল-জামে ৭২২৪) এতে কোনই সন্দেহ নেই যে এ কাজটি নিন্দনীয় এবং যে এ কাজ করবে সে তিরস্কার এবং শাস্তি পাবার উপযুক্ত।

আবু আব্দুল্লাহ আল-আশয়াবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদের নিয়ে নামাজ পড়লেন, অতপর তাদের সাথে বসে পড়লেন। এরই মাঝে একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল এবং নামাজ পড়তে শুরু করল। সে রুকু সিজদায় ঠোকর মারছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “তোমরা কি একে দেখছ না? নামাজে ঠোকর মারছে, যেমন কাক রক্তে ঠোকর মারে। যে ব্যক্তি রুকু সিজদায় ঠোকর মারে সে হল ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মত যে শুধু একটি দু’টি মাত্র খেজুর খায়, এতে তার কি হবে?” (ইবনে খুজায়মা ১/৩৩২; দেখুন শায়খ আলবানী প্রণীত সিফাতু সালাতিন নবী, পৃ: ১৩১) “হযরত যায়েদ ইবনে ওহাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত হুজাইফা (রা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে রুকু সিজদা পূরা করছিল না। তিনি বললেন, তুমি নামাজই পড়নি। যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যেতে তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের আওতায় তোমার মৃত্যু হতো না।” (বুখারী, ফতহুল বারী ২/২৭৪) নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠাহীন ব্যক্তি যখন থেকেই এ বিধানের কথা জানতে পারবে তখন থেকেই তার উপর ফরজ হবে নামাজে এ অভ্যাস চালু করা এবং পূর্বে যা ঘটে গেছে তার জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা। তাকে পূর্বের সব নামাজ পড়তে হবে না। নিম্নে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস তারা বেলায় প্রযোজ্য হবে না। “তুমি ফিরে গিয়ে আবার নামাজ পড়, কেননা তুমি নামাজই পড়নি।” (বুখারী, দেখুন ফতহুল বারী ২/২৭৪)

নামাজে অনর্থক নড়াচড়া করা:

এ এক মারাত্মক ব্যাধি, এথেকে বিরাট সংখ্যক মুসল্লী নিরাপদ নয়। কেননা তারা আল্লাহর এ বাণীকে বাস্তবায়ন করে নাঃ
“তোমরা আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।” [বাকারাঃ ২৩৮] তারা আল্লাহর এ বাণীও বুঝে নাঃ“মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী, নম্র।” [সূরা মুমিনুনঃ ১-২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাজে কঙ্কর ঠিক করে নেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ “তুমি নামাজে তা স্পর্শ করবে না। যদি একান্তাই প্রয়োজন পড়ে তা হলে মাত্র একবার ঠিক করতে পার।” (আবু দাউদ ১/৫৮১, সহীহ আল-জামে ৭৪৫২, মূল হাদীসটি মুসলিম শরীফে রয়েছে, মুয়াইকীব (রা) কর্তৃক বণিত) উলামাগণ উল্লেখ করেছেন যে বিনা প্রয়োজনে একাধারে অনেক নড়াচড়া করলে নামাজই বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে ওদের কি অবস্থা হবে যারা আল্লাহর সামানে নামাজে দাড়িয়ে ঘড়ি দেখে, কাপড় ঠিক করে, নাকের ভিতর আঙ্গুল ঢোকায়, ডানে-বামে এবং আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তাদের কি এ ভয় নেই যে, তার দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নেওয়া হতে পারে এবং শয়তান তার নামাজকে ছিনতাই করে নিয়ে যেতে পারে?

ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজে ইমামের পূর্বে আগে বেড়ে কাজ করা:

তাড়াহুড়া করা মানুষের প্রকৃতিগত অভ্যাস। “মানুষতো তাড়াহুড়া প্রিয়।” [বনী ইসরাঈলঃ ১১] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ হতে আর তাড়াহুড়া হল শয়তানের পক্ষ হতে।” (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা ১০/১০৪; সিলসিলা ১৭৯৫) অনেক মুসল্লীকেই দেখা যায় ইমামের আগেই রুকু সিজদায় যাচ্ছে, এমনকি সালাম ফিরাবার ক্ষেত্রেও। এটি যদিও অনেকের নিকট তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কিন্তুরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ ব্যাপাড়ে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বেই মাথা উঠায় তার কি এ ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তারা মাথাকে গাধার মাথায় রুপান্তরিত করে দিবেন।” (মুসলিম ১/৩২০-৩২১) যখন মুসল্লীদেরকে ধীরস্থিরভাবে নামাজের জন্য আসতে বলা হয়েছে সেক্ষেত্রে তাদেরকে নামাজে কেমন ধীরস্থির থাকতে হবে তা সহজেই অনুমেয়। অনেকেই আবার ইমামের আগে শুরু হবার আশঙ্কায় দেরীতে শুরু করে। ফকীহ্গণ এব্যাপারে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইমাম সাহেব তাকবীর শেষ করলেই মুক্তাদী তার কাজ শুরু করবে। যখন ইমাম আল্লাহু আকবার বলে শেষ করবে তখনই মুক্তাদী তার কাজ শুরু করবে। এর আগেও করবে না বা পরেও করবে না। এভাবেই সঠিকভাবে কার্যসম্পাদন করতে হবে।

‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহবারা ছিলেন খুবই যত্নবান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগে বেড়ে কোন কাজ করতেন না। তাদের একজন বারা’ ইবনে আযেব (রা) বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে নামাজ পড়তেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু হতে সিজদায় যেতেন তখন তিনি মাটিতে তাঁর কপাল না লাগান পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ নীচু করত না। এরপর আমরা সবাই সিজদায় যেতাম।’ (মুসলিমঃ ৪৭৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবীর দিয়ে নামাজ আরম্ভ করতেন তখন সব কিছুই ধীরস্থিরভাবে করতেন। তিনি তাঁর পিছনের মুসল্লীদের সতর্ক করে দিতেন। তিনি বলতেনঃ “হে লোক সকল! আমি কেবল নামাজ শুরু করেছি, সুতরাং তোমরা রুকু ও সিজদায় আমাকে আগে বেড়ে কিছু করো না।” (বায়হাকী ২/৯৩, ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে এ হাদীসটি হাসান বলে উল্লেখ করা হয়েছে) ইনশাল্লাহ আমরা বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করবো এবং আমাদের নামাজে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে খেয়াল করব।

মহান আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এবং তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবীদের উপর এবং তাদেরকে যারা অনুসরণ করে তাদের উপর বর্ষিত হোক। আমীন।
(মূল লেখাটি বর্তমান সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেমে দীন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ কর্তৃক রচিত এক তথ্যনির্ভর বই থেকে নেওয়া হয়েছে। যে বইটি বাংলায় ‘যে হারাম তুচ্ছ নয়’ শিরোনামে অনুদিত হয়েছে)

বইটির প্রকাশনায়ঃ দাওয়াহ এন্ড এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট, ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী)

Check Also

সালাত ত্যাগকারীর বিধান

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, …

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *