প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৪

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৩

প্রশ্ন (১৫১) : আমি একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। আমি জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ বিক্রি করতে পারব কি?
উত্তর : সাময়িক জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করা যাবে। তাছাড়া কোন স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না এবং স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধ করা নিষিদ্ধ (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/১৯৩; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/৩৯৪)।
প্রশ্ন (১৫২) : আমার মৃত দাদীর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২০ শতক। তার ৪ ছেলে এবং ১ মেয়ে। এখন ঐ জমি কিভাবে বণ্টন হবে?
উত্তর : এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান (নিসা ৪/১১) ভিত্তিতে সম্পদ ভাগ হবে। সে হিসাবে জমিতে মোট ভাগ হবে ৯টি। যার ৮ ভাগ পাবে ৪ ছেলে এবং একভাগ পাবে ১ মেয়ে।
প্রশ্ন (১৫৩) : হিজড়াদের সামনে পুরুষ বা নারীদের পর্দার বিধান কি?
উত্তর : হিজড়াদের সামনে পর্দা করতে হবে। হাদীছে এসেছে, উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) তার ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ উমাইয়াকে উদ্দেশ্য করে এক হিজড়াকে বলতে শুনলেন, আল্লাহ যদি আগামীতে তায়েফ বিজয় দান করেন তবে আমি তোমাকে এমন এক নারীকে দেখাবো, যে চার ভাজে সামনে আসে এবং আট ভাঁজে পিছনে যায়। নবী করীম (ছাঃ) এ কথা শুনে বললেন, এদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও (ইবনু মাজাহ হা/১৯০২; আবুদাউদ হা/৪৯২৯, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘সাবধান! এরা যেন কখনো তোমাদের কাছে আসতে না পারে’ (বুখারী হা/৪৩২৪; মুসলিম হা/২১৮০; মিশকাত হা/৩১২১)। অতএব প্রত্যেক নারী-পুরুষ হিজড়াদের থেকে পূর্ণ পর্দা করবে (মিরক্বাত ৫/২০৫৭)।
প্রশ্ন (১৫৪) : মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় দুনিয়াবী বই-পুস্তক যেমন পাঠ্যপুস্তক, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বই ইত্যাদি অধ্যয়ন করা যাবে কি?
উত্তর : ই‘তিকাফ অবস্থায় নফল ছালাত, যিকির, তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও কুরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি ইবাদতে ব্যস্ত থাকা মুস্তাহাব। তবে একান্ত প্রয়োজনে ইবাদতের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য বইপত্র পড়তে পারে (বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ২/৩৬৩; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২২৮)। উল্লেখ্য যে, ই‘তিকাফের মূল উদ্দেশ্য নিরন্তর ইবাদতের মাধ্যমে লায়লাতুল কদর অন্বেষণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
প্রশ্ন (১৫৫) : আমরা নতুন দম্পতি। এখনই সন্তান নিতে চাই না। কিন্তু একান্ত সময় ভুলবশতঃ কিছু হয়ে গেছে। এক্ষণে ঔষধের মাধ্যমে তা বন্ধ করায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : সন্তান গর্ভে আসার পর কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না বা গর্ভপাত করা যাবে না। সুতরাং গর্ভে যখন সন্তান চলে এসেছে তখন ধৈর্য ধারণ করবে এবং আল্লাহর ফয়ছালার জন্য অপেক্ষা করবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা বন্দী দাসীর সাথে মিলিত হই। কিন্তু আমরা তাদের (বিক্রয় করে) মূল্য হাছিল করতে চাই। এমতাবস্থায় আযল সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তোমরা কি এরূপ করে থাক! তোমরা যদি তা (আযল) না কর তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা যে সন্তান জন্ম হওয়ার ফায়ছালা করে রেখেছেন, তা অবশ্যই জন্ম নিবে (বুখারী হা/২২২৯; মুসলিম হা/১৪৩৮)।
প্রশ্ন (১৫৬) : মসজিদের ছাদে টয়লেট থাকলে তাতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কি?
উত্তর : ক্ষতি হবে না। তবে মসজিদের সম্মানার্থে সরাসরি মুছাল্লার উপরে বাথরুম নির্মাণ না করাই উত্তম (আলবানী, রিহলাতুল খায়র, টেপ নং ১০)।
প্রশ্ন (১৫৭) : আমি রাত সাড়ে ৯-টায় ঢাকা থেকে আবুধাবীতে ট্রানজিট হয়ে পরদিন সকাল ১০-টায় আমেরিকা পৌঁছি। এর মধ্যে সবমিলিয়ে ২৫ ঘণ্টা সময় পার হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ফলে মাঝখানে আমি কেবল ফজরের ওয়াক্ত পেয়েছি। এক্ষণে অন্য ওয়াক্তের ছালাতগুলোর ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
উত্তর : দিন-রাত হয় ২৪ ঘণ্টায়। অতএব ২৪ ঘণ্টার হিসাব করে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে নিবে। দাজ্জাল আগমনের সময়কালে যখন একদিন এক বছরের সমান হবে তখনকার ছালাতের ব্যাপারে ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বলেন, না। তোমরা (দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসাবে) অনুমান করে ছালাত আদায় করবে (মুসলিম হা/২৯৩৭; মিশকাত হা/৫৪৭৫)।
প্রশ্ন (১৫৮) : বর্তমান সময়ে যে পাখির ব্যবসা করা হয় তা তাদের আটকিয়ে রেখে করা হয়। কিন্তু যদি তাদের সঠিকভাবে পরিচর্যা ও লালন-পালন করা হয় তাহ’লে এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : খাঁচায় বন্দী রেখে পাখি লালন-পালন করা এবং এগুলোর ব্যবসা করা যাবে। কেননা বন্দী না রাখা ব্যতীত তা থেকে উপকার গ্রহণ করা যায় না। তবে পাখিকে পানি ও খাদ্য ঠিক মত প্রদান করতে হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/১৯৩; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৯/১৪৮)।
প্রশ্ন (১৫৯) : আমি গোপনে কিছু টাকা মসজিদে দান করার প্রতিজ্ঞা করেছি। কিন্তু আমার পিতা-মাতা অসহায়। এমতাবস্থায় প্রতিশ্রুত অর্থ থেকে কিছু অংশ তাদের পিছনে ব্যয় করা যাবে কি?
উত্তর : এমতাবস্থায় নিয়ত পরিবর্তন করে পিতা-মাতার জন্য ব্যয় করায় কোন বাধা নেই। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিভাবে খরচ করবে? বলে দাও যে, ধন-সম্পদ হ’তে তোমরা যা ব্যয় করবে, তা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করবে’ (বাক্বারাহ ২/২১৫)। অত্র আয়াতে খরচের সর্বোত্তম স্তর সম্পর্কে বলা হয়েছে পিতা-মাতার প্রতি খরচ করা। উল্লেখ্য যে, দানের নিয়ত করার পর তা গ্রহীতার হস্তগত হওয়ার পূর্বে দাতা নিয়ত পরিবর্তন করতে পারেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/১৮৭; বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ২/২৯৮)।
প্রশ্ন (১৬০) : হাদীছ নাকি এসেছে যে, সফরকালে পাঁচটি সূরা পাঠ করলে সফরের চাইতে সাথীদের চেয়ে বরকত বেশী হয়। উক্ত সূরাগুলো কি কি?
উত্তর : বিসমিল্লাহসহ সূরা কাফিরূন, নাছর, নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ পাঠ করলে সফরকালীন বিশেষ ফযীলত পাওয়া যায় মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ ও মুনকার (আলবানী, যঈফাহ হা/৬৯৬৩; যঈফুল জামে‘ হা/৮৮)। অতএব এটি আমলযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (১৬১) : কুরআনে বলা হয়েছে স্বজাতীয় মহিলা ব্যতীত অন্যদের সামনে পর্দা করতে হবে। এক্ষণে অমুসলিম মহিলাদের সামনে পর্দা করতে হবে কি?
উত্তর : বিশুদ্ধমতে মুসলিম নারীরা অমুসলিম নারীদের থেকে সেভাবে পর্দা করবে যেভাবে মাহরাম পুরুষদের থেকে পর্দা করে থাকে। অর্থাৎ অমুসলিম নারীদের সামনে সাধারণভাবে মাথা, মুখমন্ডল, হাত ও পা প্রদর্শন করতে পারবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/৪১৭, ২/৫৮২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৩৯; কুরতুবী, তাফসীর সূরা নূর ৩১ আয়াত)।
প্রশ্ন (১৬২) : ক্বায়লূলা কখন এবং কতক্ষণ যাবৎ করা সুন্নাত? যোহরের ছালাতের আগে না পরে? হাদীছের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর : ক্বায়লূলা তথা দুপুরের পর স্বল্প বিশ্রাম করা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্বায়লূলা কর, কারণ শয়তান ক্বায়লূলা করে না’ (ছহীহাহ হা/১৬৪৭)। আর ক্বায়লূলার সময় হচ্ছে যোহর ছালাতের পর। যেমন ছাহাবীগণ বলেন, জুম‘আর (ছালাতের) পরই আমরা ক্বায়লূলা এবং দুপুরের খাবার গ্রহণ করতাম (বুখারী হা/৯৩৯; মিশকাত হা/১৪০২)। অতএব যোহরের পর থেকে আছরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যেকোন সময় ক্বায়লূলা করা মুস্তাহাব (ইবনু কাছীর, সূরা নূর ৫৮ আয়াতের তাফসীর)।
প্রশ্ন (১৬৩) : আমার পিতা ধার্মিক মানুষ। কিন্তু নকশবন্দী তরীকার কঠোর অনুসারী। এর পিছনে বহু অর্থ ব্যয় করেন। কুরআন-হাদীছের অবমাননায় নানা কথা বলেন। আমরা ভাই-বোন তার সাথে বসলেই পীরের ওয়ায শুরু করেন। এমতাবস্থায় পিতার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ?
উত্তর : পিতা-মাতার সাথে সর্বাবস্থায় সদাচরণ করতে হবে। তবে শিরক বা বিদ‘আতযুক্ত কোন আমল করতে নির্দেশ দিলে তা সম্মানের সাথে পরিহার করবে। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। অবশ্য পার্থিব জীবনে তুমি তাদের সাথে সদ্ভাব রেখে চলবে’ (লোকমান ৩১/১৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৪, ৩৬৯৬)। অতএব সাধ্যমত পিতাকে ছহীহ আক্বীদার দিকে আহবান করবে এবং তাদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করবে।
প্রশ্ন (১৬৪) : অফিসের কোন কাজে পাঠালে খুব অল্প খরচে যাওয়া-আসা করে খরচ হিসাবে অফিস থেকে সিএনজি বা উবারের ভাড়ার ভাউচার দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : যাতায়াতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে ঠিক সে পরিমাণই ভাউচারে লিখবে। অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের কারণে একদিকে মিথ্যা অন্যদিকে প্রতারণার অপরাধ হবে। এরূপ হারাম থেকে সর্বতোভাবে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০,২৭৭৩, ৪৮২৪)।
প্রশ্ন (১৬৫) : আত্মীয়-স্বজন বেশী হওয়ায় মেয়ে সন্তানের আক্বীক্বা হিসাবে দু’টি ছাগল দিতে চাই অথবা বাজার থেকে কিছু গোশত কিনে আক্বীক্বার গোশতের সাথে একত্রিত করে খাওয়াতে চাই। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আক্বীক্বা দেওয়া সুন্নাত। প্রয়োজনে বড় ছাগল ক্রয় করে আক্বীক্বা দিবে। এর পরেও মেহমানদের জন্য পর্যাপ্ত না হ’লে বাজার থেকে গোশত ক্রয় করে খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৫৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৪৩০; ইবনুল কাইয়িম, তোহফাতুল মাওদূদ ১০০ পৃ.)। উল্লেখ্য যে, দাওয়াতে যেন বাড়াবাড়ি ও প্রদর্শনী প্রকাশ না পায়, সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে (ইবনু রুশদ, আল-বায়ান ওয়াত-তাহছীল ৩/৩৮৬, ৩৯৫)।
প্রশ্ন (১৬৬) : জানাযার ছালাতে শেষ পর্যায়ে যোগদান করলে তার করণীয় কি?
উত্তর : ছালাত পূর্ণ করবে। ইমামের সাথে যে অংশ পাবে সেগুলো তার জন্য প্রথম অংশ হবে (বুখারী হা/৬৩৫; মিশকাত হা/৬৮৬)। আর এজন্য সে প্রথম তাকবীরের সূরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সূরা মিলাবে অতঃপর দরূদ ও জানাযার দো‘আ পাঠ করবে এবং লাশ উঠানোর পূর্বেই ছালাত সমাপ্ত করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩৯৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৪৯)।
প্রশ্ন (১৬৭) : ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় যদি অমনোযোগিতা এসে যায় তাহ’লে সূরা ফাতিহা পুনরায় পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : ছালাত আদায়ে খুশূ‘-খুযূ বজায় রাখতে হবে। এক্ষণে তেলাওয়াতের সময় কারো মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হ’লে বা মনোযোগ না থাকলে পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। বরং যখনই ধারণা করবে যে, তার মনোযোগ নেই, তখনই মনোযোগ ফিরিয়ে আনবে (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৯৯; ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১২০/২০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)।
প্রশ্ন (১৬৮) : মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর দলকে হাদীছে ফি’আতুল বাগিয়া বলা হয়েছে কি? এর দ্বারা কি এ দলটিকে জাহান্নামীদের দল বুঝানো হয়েছে?
উত্তর : আল-ফি‘আতুল বাগিয়াহ বা ‘বিদ্রোহী দল’ বলতে হাদীছে কী বুঝানো হয়েছে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর ‘আম্মার দু’টো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) তা দেখে তাঁর দেহ হ’তে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা তাকে আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, তখন আম্মার বললেন, আমি ফিৎনা হ’তে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই (বুখারী হা/৪৪৭)। অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় একদল বিদ্বান বলেন, ‘বাগিয়া’ দ্বারা উদ্দেশ্য ওছমান (রাঃ)-এর হত্যার বিচার দাবীকারী। যার অর্থ দাঁড়ায় আম্মার (রাঃ)-কে ওছমান হত্যার বিচার দাবীকারীরা হত্যা করবে। আর জাহান্নামের দিকে আহবান করার অর্থ হচ্ছে-জাহান্নামে যাওয়ার কারণের দিকে আহবান করবে। আর তা হ’ল আমীরের আনুগত্য না করা। এর অর্থ সরাসরি জাহান্নাম উদ্দেশ্য নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৫/৭৪)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, প্রকৃত অর্থেই উক্ত বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা বিদ্রোহী দল। তবে বিদ্রোহী দল হওয়া অর্থ ইসলাম থেকে খারিজ নয়। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘যদি মুমিনদের দুই দল পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর সীমালংঘন করে, তাহ’লে তোমরা ঐ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যে দল সীমালংঘন করে। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের (সন্ধির) দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে, তাহ’লে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালবাসেন। মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়। অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/৯-১০)। অত্র আয়াতদ্বয়ে বিবদমান দুই দলকেই আল্লাহ মুসলিম এবং পরস্পর ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ করে যে, আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ) উভয়ে মুসলিম ও ছাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্যে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ভুল ইজতিহাদ ছিল যে, আলী (রাঃ) তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদের বিচারহীন অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন। আর বিদ্রোহী দল দ্বারা উদ্দেশ্য যুদ্ধরত বিচ্ছিন্ন একটি দল যারা আম্মারকে হত্যা করেছিল। সরাসরি মু‘আবিয়া (রাঃ) নন। যারা উক্ত দলের কাজকে সমর্থন করবে তারা ঐ দলেরই আওতাভুক্ত হবে। কিন্তু মু‘আবিয়া বা আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) কেউ আম্মারের হত্যাকে সমর্থন করেননি (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৫-৭৪-৭৫)। ছাহেবে তোহফা বলেন, বিদ্রোহী দল বলতে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর দলভুক্ত একদল লোককে বুঝানো হয়েছে (তোহফাতুল আহওয়াযী ১০/২০৪)। এজন্য আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী অনেকের মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, সঠিক কথা উভয় দলই তাদের ইজতিহাদে সঠিক ছিলেন (উমদাতুল ক্বারী ৪/২০৮)। তবে আব্দুল কাহের জুরজানী (রহঃ) বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ও মুহাদ্দিছ বিদ্বানগণ একমত যে, মু‘আবিয়া (রাঃ) ছিলেন বিদ্রোহী এবং আলী (রাঃ) তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমনের ব্যাপারে সঠিক ছিলেন, যেমন তিনি ‘উটের যুদ্ধে’ সঠিক ছিলেন (আমীর কাহলানী, আত-তানভীর ১১/৪৩)। মোটকথা আলী (রাঃ) তাঁর ইজতিহাদে সঠিক ছিলেন এবং তাঁর দল লোকদেরকে জান্নাতে যাওয়ার পথে তথা আমীরের আনুগত্য করার মাধ্যমে মুসলিম জামা‘আতকে সুসংহত করার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অন্যদিকে মু‘আবিয়া (রাঃ) ওছমান হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে তিনি এবং তাঁর দল ইজতিহাদে ভুল করেছেন। তবে তাদেরকে জাহান্নামীদের দল বলা যাবে না। কেননা নিঃসন্দেহে উভয় দলই মুসলমান ছিলেন এবং সর্বাবস্থায় তাদের প্রতি সুধারণা রাখাই আমাদের জন্য কর্তব্য হবে। হাদীছে জাহান্নামের দিকে আহবানের অর্থ বিচ্ছিন্নতার পথে আহবান। কেননা তারা ভুল ইজতিহাদের মাধ্যমে খলীফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
প্রশ্ন (১৬৯) : স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে তুমি অমুক কাজটি করলে মনে করবে যে তালাক হয়ে গেছে। তারপরও যদি তালাকের নিয়ত না রেখে স্ত্রীর নিষেধ করা কাজটি স্বামী করে ফেলে তাহ’লে কি তালাক হয়ে যাবে?
উত্তর : স্ত্রীর এমন কথা বৈবাহিক সম্পর্কে কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদানের অধিকারী নয়। এক্ষণে স্বামী যদি স্ত্রীকে এমন শর্তযুক্ত কথা বলে এবং স্ত্রী উক্ত শর্ত ভঙ্গ করে তাহ’লে স্ত্রী এক তালাক হয়ে যাবে (নববী, রওযাতুল ত্বালেবীন ৬/৮; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/১২৫)।
প্রশ্ন (১৭০) : বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি ইসলামের সাথে অনেক সাংঘর্ষিক বিষয় সংশ্লিষ্ট বিভাগে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা জায়েয কি?
উত্তর : অমুসলিমদের ধর্মীয় গ্রন্থ বা সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত বই-পুস্ত্তক সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাঠ করা সমীচীন নয়। কারণ এতে ঈমান হারানোর আশংকা রয়েছে। তবে যাদের সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার যোগ্যতা আছে বা তাদের ধর্মীয় অসারতাকে প্রতিহত করার সক্ষমতা রয়েছে, তারা এ সকল বই-পুস্তক পড়তে পারে। এক্ষণে কোন শিক্ষার্থী যদি মনে করে উক্ত বিভাগে অধ্যয়নে তার ঈমান চলে যেতে পারে তাহ’লে সে বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করবে। আর ঈমানের উপর টিকে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে উক্ত বিভাগে পড়াশুনা চালিয়ে যাবে, সাধ্যমত ভ্রান্ত চিন্তাধারাগুলো সংস্কারের চেষ্টা চালাবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১৩/৫২৫; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৩৪/১৮৫; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৪/৩৮৬)।
প্রশ্ন (১৭১) : আমি যেখানে কাজ করি সেখানে ব্রেলভী মসজিদ রয়েছে। সেখানে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা যাবে, না কি একাকী বাসায় আদায় করতে হবে?
উত্তর : বিকল্প না থাকলে তাদের মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করবে। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হ’ল, আহলে ক্বিবলার পিছনে ছালাত আদায় করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৩/৩৫৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৩৮২-৮৩; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৩৭৪)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ওরা তোমাদের ইমামতি করবে। যদি তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করে তাহ’লে তোমরা ছওয়াব লাভ করবে। আর যদি ওরা ভুল করে তাহ’লে তোমরা ছওয়াব পেয়ে যাবে, কিন্তু তারা গুনাহগার হবে (আহমাদ হা/৮৬৪৮, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, অচিরেই এমন কিছু লোক ইমামতি করবে, যদি তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করে তবে তোমরা ছওয়াব পাবে এবং তারাও ছওয়াব পাবে। আর যদি তারা কোন ত্রুটি করে তাহ’লে তার গুনাহ সে ভোগ করবে, ছালাতের ছওয়াব তোমরা পেয়ে যাবে (ছহীহ ইবনু হিববান হা/২২২৮; ছহীহুত তারগীব হা/৪৮৩)। তবে ইমাম যদি স্পষ্ট শিরক বা কুফরীতে লিপ্ত বলে জানা যায়, তাহ’লে তার পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৩৬৪) ।
প্রশ্ন (১৭২) : জনৈক ইমাম বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) শিশুদের তাবীয দিতেন। তাই ছোটদের তাবীয দেওয়া যাবে, কিন্তু বড়দের নয়। আর হাদীছে বর্ণিত তামীমা দ্বারা তাবীয নয় বরং তাগা, সুতা এগুলো বুঝায়। আর তাবীযই ভালো করবে বা নাপা ওষুধই ভালো করবে এরকম মনে করলে শিরক হবে। সাধারণভাবে ব্যবহার করলে শিরক হবে না। এসব কথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে এরূপ আমল পাওয়া যায় না। পবিত্র কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীয করা যদিও কতিপয় বিদ্বান জায়েয বলেছেন, কিন্তু তা জায়েয হওয়ার পক্ষে স্পষ্ট দলীল নেই। বরং কুরআন তেলাওয়াত ও আয়াত দ্বারা ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে কুরআন থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত বায়হাক্বীর একটি হাদীছ থেকে তাবীয লটকানো প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেখানে এমন কোন কথা নেই, যা দ্বারা স্পষ্টভাবে তাবীয লটকানো প্রমাণিত হয়। অনুরূপভাবে আব্দুল্লাহ ইবনু আমরের ব্যক্তিগত আমল সংক্রান্ত একটি হাদীছ তাবীয লটকানোর পক্ষে পেশ করা হয় (তিরমিযী হা/৩৫০৮)। কিন্তু প্রথমতঃ সেখানে উল্লেখ রয়েছে যে, এটি তিনি কেবল সেই শিশুদের জন্য করতেন, যারা এখনো কথা বলতে শেখেনি। দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি যঈফ (যঈফুত তারগীব হা/৯৯১)। পক্ষান্তরে এর বিপক্ষে একাধিক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যা দ্বারা সকল প্রকার তাবীয লটকানো নিষিদ্ধ ও শিরক প্রমাণিত হয়। যেমন ঈসা ইবনু হামযাহ (রহঃ) বলেন, একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইবনু উকায়েম-এর নিকট গেলাম। দেখি তার শরীরে লাল ফোস্কা পড়ে আছে। আমি বললাম, আপনি তাবীয ব্যবহার করবেন না? উত্তরে তিনি বললেন, ‘নাঊযুবিল্লাহি মিন যা-লিক্’ তা হ’তে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এটার জন্য কোন কিছু লটকায় তাকে তার প্রতি সোপর্দ করে দেওয়া হয়’ (তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৫৬)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে ব্যক্তি কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে কল্যাণ দান করবেন না (আহমাদ হা/১৭৪৪০; ছহীহাহ হা/৪৯২)।’ অন্য হাদীছে রয়েছে ‘জাদু, তাবীয, অবৈধ প্রেম ঘটানোর মন্ত্র নিঃসন্দেহে শিরক’ (আবুদাউদ হা/৩৮৮৩; মিশকাত হা/৪৫৫২; ছহীহাহ হা/৩৩১)। উল্লেখিত হাদীছসমূহে স্পষ্টভাবে সকল প্রকার তাবীয লটকানোকে শিরক বলা হয়েছে। অতএব কোন অপব্যাখ্যা বা ছলনা করে শিরকী কাজকে বৈধ করার কোন সুযোগ নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৪৫৩)। বরং শিরক থেকে নিরাপদে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো মুমিনের সবচেয়ে বড় কর্তব্য।
প্রশ্ন (১৭৩) : সরকারী চাকুরীতে যা পাই তাতে চলতে অনেক কষ্ট হয়। অফিস টাইমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অফিসের পিসি, প্রিন্টার, কাগজ, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বাড়তি ইনকাম করা জায়েয হবে কি? জায়েয হ’লে অফিসের অতিরিক্ত খরচগুলো হিসাবে করে অফিসে জমা দিতে হবে কি?
উত্তর : ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অতিরিক্ত সময়ে বাড়তি ইনকাম করা যেতে পারে। তবে অফিসের মূল কাজ ব্যাহত করে কোন কাজ করা যাবে না। আর অফিসের জিনিসপত্র ব্যবহারের কারণে অফিসকে অবশ্যই নির্ধারিত খরচ ও সার্ভিস চার্জ প্রদান করবে। এতে কোন অপরাধ হবে না ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় তা আমানতের খেয়ানত হিসাবে গণ্য হবে।
প্রশ্ন (১৭৪) : মৃত্যুপথযাত্রী রোগী অছিয়ত করেছেন যেন তার অপারেশন করানো না হয়। চিকিৎসক বলছেন, অপারেশন করলে বাঁচতেও পারে, নাও পারে। এক্ষণে রোগীর অছিয়তের বিপরীতে অপারেশন করানো জায়েয হবে কি?
উত্তর : রোগীর আত্মীয়রা রোগীরা অধিকতর কল্যাণের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিবে। যদি তার জীবনের প্রত্যাশা ও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহ’লে অবশ্যই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিবে। উল্লেখ্য যে, রোগী বা মাইয়েতের সকল অছিয়ত বাস্তবায়ন করা আবশ্যক নয় (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৬৪; ওছায়মীন, আল লিক্বাউশ শাহরী ৫০/২০)।
প্রশ্ন (১৭৫) : স্বামী বলেছেন তুমি অমুক কাজ করলে আমি তোমার সাথে থাকবো না। কিন্তু কখনো আমি অসাবধানতাবশে তা করেও ফেলতে পারি। এক্ষণে এমন কিছু করে ফেললে সত্যিই কি আমাদের তালাক হয়ে যাবে?
উত্তর : স্বামী উক্ত কথা বলার দ্বারা তালাক উদ্দেশ্য নিয়ে থাকলে এবং স্ত্রী শর্তযুক্ত কাজ করে ফেললে তা এক তালাক গণ্য হবে। আর যদি স্ত্রীকে সতর্ক করা এবং ধমক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলে থাকে, তবে তাতে কোন সমস্যা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ৩৩/৬০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২২/১৯৩; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/১২৫)।
প্রশ্ন (১৭৬) : যে মাসের রামাযান শুরু হবে শুক্রবার দিয়ে সেই রামাযানের ১৫ তারিখে আকাশে একটি বিকট আওয়াজ হবে এবং তাতে ৭০ হাযার মানুষ অজ্ঞান, ৭০ হাযার অন্ধ, ৭০ হাযার বোবা এবং অসংখ্য মানুষ মারা যাবে। বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : বর্ণনাগুলো জাল ও মুনকার (আলবানী, যঈফাহ হা/৬১৭৮-৭৯)। ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ‘এটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে বানোয়াট বর্ণনা’ (আল-মাওযূ‘আত ৩/১৯১)। শায়েখ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘এ হাদীছের কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই। বরং এটা বাতিল ও মিথ্যা। মুসলমানদের জীবনে বহু বছর পেরিয়ে গেছে যাতে মধ্য রামাযানে জুম‘আর রাত পড়েছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ উক্ত জাল বর্ণনার বিবরণমত আকাশে কোন বিকট আওয়াজ শোনা যায়নি। অতএব এই বাতিল বর্ণনা প্রচার করা জায়েয নয়। বরং এর অসারতা প্রচার করা কর্তব্য’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৩৩৯-৩৪১)। অতএব উক্ত মর্মে উল্লিখিত জাল ও বানোয়াট বর্ণনার ভিত্তিতে আতঙ্কিত না হয়ে সর্বদা আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ইবাদতে রত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৭৭) : আমি ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। গ্রামের বাড়িতে ঋণ করে একটি বাড়ি ক্রয় করি। যেখানে আমার পিতা-মাতা থাকে এবং আমি গ্রামে গেলে সেখানে থাকি। এখন যাকাত বের করার সময় কি আমার ঋণকৃত টাকাও হিসাব করে যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : কেউ যদি বসবাসের জন্য বা ভাড়া দেওয়ার জন্য বাড়ি বানাতে ঋণ করে তাহ’লে উক্ত ঋণকৃত অর্থের যাকাত দিতে হবে না। তবে ভাড়া বাসা থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকা নিছাব পরিমাণ হ’লে এবং তা এক বছর মালিকানায় থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/১৬৭; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৩/২৪৭-৪৯)। উল্লেখ্য যে, প্রচলিত ব্যাংকঋণ গ্রহণ করে বাড়ি করা হারাম, কেননা তা সূদের উপর প্রতিষ্ঠিত।
প্রশ্ন (১৭৮) : আমার সাথে যার বিবাহের কথা হচ্ছে তার বাসায় তার প্রাপ্তবয়স্ক ছোট ভাই এবং পিতা-মাতা একত্রে অবস্থান করে। যদিও সে আমার ৮ বছরের ছোট। একই বাসা হওয়ায় তার সামনে সবসময় নেক্বাব দিয়ে থাকা অনেক কঠিন হবে। এমতাবস্থায় নেকাব খোলা রাখা যাবে কি?
উত্তর : দেবর গায়ের মাহরাম। অতএব তার সামনেও যথাসম্ভব মুখমন্ডল ঢেকে রেখে পূর্ণ পর্দা করে চলবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কোন নারীদের নিকট গমন (নিঃসঙ্গভাবে গৃহে প্রবেশ) করো না। (এটা শুনে) জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কি বলেন? (উত্তরে) তিনি বললেন, দেবর তো মৃত্যুসম (বিপদজনক) (বুখারী হা/৫২৩২; মুসলিম হা/২১৭২; মিশকাত হা/৩১০২)।
প্রশ্ন (১৭৯) : সরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে পরিচিতি থাকার কারণে তাদের মাধ্যমে সুফারিশ করিয়ে অনেককে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেই। একাজ করার জন্য চাকুরী গ্রহীতার নিকট থেকে কিছু হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কি?
উত্তর : সুফারিশের বিনিময়ে কোন প্রকারের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না। সেটি ঘুষ হবে। যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট কোন প্রার্থী আসত, তখন তিনি তাঁর সঙ্গীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন (এর জন্য) ‘তোমরা সুফারিশ কর, তোমাদেরকে পরস্কার দেওয়া হবে। আর আল্লাহ তাঁর নবীর যবানে যা পসন্দ করেন, তা ফায়ছালা করে দেন’ (বুখারী হা/১৪৩২; মুসলিম হা/২৬২৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের জন্য সুফারিশ করল, অতঃপর তার জন্য হাদিয়া দিল তারপর সুফারিশকারী তা গ্রহণ করল, তাহ’লে সে সূদেরই এক বড় দরজায় উপনীত হ’ল (আবুদাউদ হা/৩৫৪১; মিশকাত হা/৩৭৫৭)। অতএব কারো জন্য সুফারিশ করা ছওয়াবের কাজ। কিন্তু এর বিনিময় গ্রহণ করা হারাম।
প্রশ্ন (১৮০) : কবরবাসীকে শোনানোর জন্য কবরের পাশে কুরআন মাজীদ পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : এটি নিষিদ্ধ। কেননা কবরবাসী শুনতে পায় না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃত ব্যক্তিকে’ (নামল ২৭/৮০)। আর ‘তুমি শুনাতে পারো না কোন কবরবাসীকে’ (ফাত্বির ৩৫/২২)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে হ’লেও কবরস্থানে কুরআন নিয়ে যাওয়া বিদ‘আত’ (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৬২)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নামে কবরের পাশে অথবা অন্য কোন স্থানে কুরআন পাঠ করা বিদ‘আত’ (যাদুল মা‘আদ ১/৫৮৩)। শায়েখ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবরের পাশে বা অন্য কোন স্থানে কুরআন পাঠ করা বিদ‘আত’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৩৩৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/৪৩)। ওছায়মীন ও আলবানী একই কথা বলেছেন (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ৯/০২; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১৯১ পৃ.)। এছাড়া কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইয়াসীন পাঠের ফযীলত সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তা মওযূ‘ বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৪৬)। অতএব কবরবাসীকে শুনানোর জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নয়।
প্রশ্ন (১৮১) : সাহারীর আযান দেওয়া জায়েয কি? উক্ত আযানে হাইয়া আলাছ ছালাহ এবং ...ফালাহ বলা যাবে কি?
উত্তর : সাহারীর আযান দেওয়া সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আমলে এই সুন্নাত জারী ছিল (বুখারী হা/৬১৭; মিশকাত হা/৬৮০)। সাহারীর আযানে ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ’ যথারীতি বলবে কিন্তু ‘আছ-ছালাত খায়রুম মিনান নাওম’ বলবে না। কারণ সাহারীর আযান দেওয়া হয় যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত হয়ে এবং তাহাজ্জুদ আদায়কারীগণ ছালাত শেষ করে সাহারী গ্রহণ করে (নাসাঈ হা/৬৪১)। অতএব সাহারীর আযান ছালাতের আযানের মতই হবে। তবে ফজরের আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’ বলবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৪৩; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৭৭; আরকানুল ইসলাম ২৮৪ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৮২) : আমার মলদ্বার দিয়ে মাঝে মধ্যেই রক্ত বের হয়। এ থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য আমাকে কি গোসল করতে হবে? না কেবল ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হবে?
উত্তর : এতে গোসল করতে হবে না। বরং ধূয়ে ফেলে ওযূ করতে হবে। তবে কারো যদি নিয়মিত এটা হয়, এমনকি ছালাতের সময়ও রক্ত বের হয় তাহ’লে তার বিধান মুস্তাহাযা নারীর বিধানের ন্যায়। অর্থাৎ ওযূ করে মলদ্বারে তুলা দিয়ে ছালাত শুরু করবে। এর মধ্যে রক্ত বের হ’লে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৫৪১; ২/৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/২৬১)।
প্রশ্ন (১৮৩) : যদি ইমাম ও মুওয়াযযিন নিয়মিত সুন্নাত ও নফল ছালাত আদায় না করে, তাহ’লে তার পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : তার পিছনে ছালাত আদায়ে দোষ নেই। তবে কেবল ইমাম ও মুওয়াযযিনই নয় প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক বর্ণিত সুন্নাত ও নফল ছালাতগুলো গুরুত্ব সহকারে আদায় করা এবং অবহেলা না করা (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ৬/২)।
প্রশ্ন (১৮৪) : শাওয়াল মাসের ৬টি ছিয়াম রাখার ফযীলত কি? এগুলি কি ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হবে? কারণবশতঃ উক্ত মাসে আদায় করতে না পারায় পরের মাসে ক্বাযা আদায় করলে কি এর নেকী পাওয়া যাবে?
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রামাযানের ছিয়াম পালন শেষে শাওয়াল মাসের ছয়টি ছিয়াম পালন করল, সে যেন সারা বছর ছিয়াম পালন করল’ (মুসলিম হা/১১৬৪; মিশকাত হা/২০৪৭)। অন্য হাদীছে এক বছরের হিসাব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এভাবে দিয়েছেন যে, ‘রামাযানের একমাস ছিয়াম (১০ গুণ নেকী ধরলে) ১০ মাসের সমান এবং (শাওয়ালের) ছয়টি ছিয়াম দু’মাসের সমান’ (ইবনু মাজাহ হা/১৭১৫; ইরওয়া হা/৯৫০-এর আলোচনা)। এভাবে মোট বারো মাস বা সারা বছর। এই ছিয়ামগুলো ধারাবাহিকভাবে পালন করা উত্তম। তবে আলাদাভাবেও করা যায় (নববী, আল মাজমূ‘ ৬/৩৭৯)। শাওয়াল মাসের ছিয়াম শাওয়াল মাসের মধ্যে করাই কর্তব্য। কারণ শাওয়াল পার হ’লে শাওয়াল মাসের ছিয়াম পালনের সুযোগ থাকে না। আর রামাযানের ক্বাযা ছিয়াম বছরের যেকোন সময়ে আদায় করা যায় (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। ব্যস্ততার কারণে আয়েশা (রাঃ) তাঁর রামাযানের ছুটে যাওয়া ছিয়াম পরবর্তী শা‘বান মাসে আদায় করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩০)। তবে ফরযের ক্বাযা যত দ্রুত সম্ভব আদায় করাই উচিৎ (মির‘আত ৫/২৩)।
প্রশ্ন (১৮৫) : তরকারীর লবণ চেখে স্বাদ পরীক্ষা করে দেখলে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে কী?
উত্তর : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কেউ তরকারী বা অন্য কিছুর স্বাদ পরীক্ষা করলে তাতে কোন দোষ নেই (বুখারী ৭/২৮৮)। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ছিয়াম অবস্থায় কোন কিছুর স্বাদ গ্রহণ না করাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে করলে ক্ষতি নেই (মুগনী ৪/৩৫৯)। উল্লেখ্য যে, স্বাদ নিলেও ঢোক গেলা যাবে না। কারণ সেটি খাওয়ার শামিল হবে।
প্রশ্ন (১৮৬) : আমি স্কুলে শিক্ষাদান করার সময় প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত সব বয়সের মেয়ে শিক্ষার্থীরা থাকে। এসময় প্রাপ্তবয়স্কদের দিকে তাকিয়ে পাঠদান করা যাবে কি? মাঝে মাঝে মনের অজান্তে দৃষ্টি চলে যায়, এতে কোন পাপ হবে কি?
উত্তর : নারী-পুরুষের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এই ব্যবস্থা না থাকলে সাধ্যমত দৃষ্টি নত রেখে পাঠদান করবে (নূর ২৪/৩০-৩১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে বলেন, ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য মাফ। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়’ (আবুদাঊদ হা/২১৪৯ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১১০)। তবে প্রয়োজনে বা বাক্যালাপকালে দৃষ্টি প্রদানে সাধারণভাবে বাধা নেই, যদি তা কামনামুক্ত থাকে। কিন্তু কামনাপূর্ণ কুদৃষ্টি সর্বাবস্থায় হারাম (নববী, শরহ মুসলিম হা/৩৩৮-এর আলোচনা ৪/৩১ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৮৭) : কবরস্থানের পাশে হিন্দুদের জমি আছে। তারা তা কবরস্থানে দান করতে চায়। উক্ত দান গ্রহণ করা যাবে কি?
উত্তর : অমুসলিমদের সকল প্রকার হালাল বস্ত্তর দান গ্রহণ করা যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ২/৫২)। রাসূল (ছাঃ) অমুসলিমদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/২৬১৭)।
প্রশ্ন (১৮৮) : ‘এক সময় আসবে যখন এই উম্মত ছালাতকে হত্যা করবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত মর্মে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এর কোনটির সনদে ইনকিতা‘ বা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। আবার কোনটি যঈফ (ইবনুল জাওযী, আয-যু‘আফা ওয়াল মাতরূকীন ১/৩০১, সনদ যঈফ)।
প্রশ্ন (১৮৯) : আমার স্ত্রীর যাকাত ফরয হওয়ার মত সম্পত্তি আছে। আমি তাকে না জানিয়ে তার সম্পদের যাকাত আদায় করতে পারব কি?
উত্তর : যাকাত আদায় করা একটি ফরয ইবাদত। আর এই ইবাদত পালনের জন্য নিয়ত শর্ত। সুতরাং দাতাকে না জানিয়ে তার পক্ষ থেকে তার সম্পদের যাকাত আদায় করা যাবে না। বরং সম্পদের মালিকের অনুমতি বা অবগতি সাপেক্ষে অন্য যে কেউ যাকাত আদায় করতে পারে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/১৫৮)।
প্রশ্ন (১৯০) : আমরা ফলমূল বা খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে অনেক সময় পরীক্ষা করার জন্য ফল মালিকের অনুমতি ব্যতীত ১/২টি ফল খেয়ে থাকি। এভাবে অনুমতি ব্যতীত ফল খাওয়া গুনাহ হবে কি?
উত্তর : বিক্রেতার অনুমতি সাপেক্ষে খাদ্যদ্রব্য চেখে খাদ্যের স্বাদ বা মান যাচাই করা যাবে (বাহূতী, আর-রওযুল মুরবি‘ ৪/৩৩১)। তবে ক্রয়ের উদ্দেশ্য না থাকলে চেখে দেখা যাবে না।
প্রশ্ন (১৯১) : কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করে এর অর্থ ফকীর বা মিসকীনকে দান করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) একটি গরুর চামড়া বিক্রয় করে এর মূল্য ছাদাক্বা করে দেন (ইসহাক বিন রাহওয়াইহ, মাসায়েলে ইমাম আহমাদ ৮/৪০৪৮-৪৯)। উল্লেখ্য যে, উক্ত অর্থ নিজে ভোগ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (ছহীহুত তারগীব হা/১০৮৮)।
প্রশ্ন (১৯২) : না জানার কারণে কয়েক বছরের ফিৎরা আদায় করা হয়নি। এক্ষণে তওবা করতে হ’লে করণীয় কি?
উত্তর : ছাদাক্বাতুল ফিৎর বা ফিৎরা ধনী-গরীব, ছোট-বড় প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয। সুতরাং তা পরিহার করা কবীরা গুনাহ। এক্ষণে কেউ তওবা করতে চাইলে তাকে যেমন অনুতপ্ত হ’তে হবে, তেমনি অধিকাংশ বিদ্বানের মতে বকেয়া ফিৎরাগুলো আদায় করতে হবে, যেমনভাবে বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা হয় (ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৪/২৬৬)। তবে সাধ্যে না কুলালে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহ সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না (বাক্বারাহ ২/২৮৬)।
প্রশ্ন (১৯৩) : আমার স্ত্রীর ঋণ আছে। সে তা আদায় করতে অক্ষম। এক্ষণে আমি তাকে ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাতের মাল দিতে পারব কি?
উত্তর : স্ত্রীর ঋণ শোধ করার মত কোন সম্পদ না থাকলে সে যাকাতের হকদার। আর যাকাতের হকদার হিসাবে স্বামী ঋণগ্রস্ত স্ত্রীকে ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাত দিতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/৫৬, ৬২)।
প্রশ্ন (১৯৪) : আমি জনৈক ব্যক্তিকে ঋণ দিয়েছি। কিন্তু এখন তিনি আমার ঋণ পরিশোধে অক্ষম। এক্ষণে ঋণগ্রস্ত হিসাবে আমি যদি তাকে আমার যাকাতের টাকা দেই এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি আমার ঋণ পরিশোধ করেন, তাহ’লে আমার জন্য ঐ টাকা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ঋণগ্রস্ত হিসাবে তাকে যাকাত দেয়া যাবে। অতঃপর উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে যদি সে ঋণ পরিশোধ করে তাতে কোন দোষ নেই (দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘যাকাতা ও ছাদাক্বা’ বই ‘বিবিধ মাসায়েল’ অনুচ্ছেদ, মাসআলা ২৩ পৃ. ১০১)। উল্লেখ্য যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির হাতে যাকাতের টাকা হস্তান্তর না করে নিজের যাকাত থেকে ঋণের টাকা কেটে নিলে তা বৈধ হবে না।
প্রশ্ন (১৯৫) : আগামীতে আমার বিবাহ হবে। কিন্তু কনের পরিবার তেমন দ্বীনদার নয়। অনুষ্ঠানের আয়োজনে মেয়েকে অনেক সাজগোজ করিয়ে প্রদর্শনী করা সহ নানা রকম গোনাহের আয়োজন চলছে, যা আমার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কনের এসব পাপের জন্য আমাকে গোনাহের ভাগিদার হ’তে হবে কি?
উত্তর : বিবাহের ৪টি শর্তের মধ্যে দ্বীন হ’ল প্রধান। অতএব কনে বা তার পরিবারে যদি দ্বীন না থাকে, তাহ’লে বিবাহ বাতিল করাই উচিৎ। এরপরেও যদি করতেই হয়, তাহ’লে কনের পাপের বোঝা স্বামী বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪, ইসরা ১৫/১৫)।
প্রশ্ন (১৯৬) : আমি না জানার কারণে বিবাহের সময় স্ত্রীর পরিবারের নিকট থেকে মোটর সাইকেল নিয়েছিলাম। এক্ষণে এ পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমার করণীয় কি?
উত্তর : প্রকাশ্যে বা আকারে-ইঙ্গিতে দাবী করা কিংবা বাধ্য করে মোটর সাইকেল নিয়ে থাকলে সেটি পাপের কাজ হয়েছে। অতএব তা সরাসরি কিংবা তার সমমূল্য স্ত্রীর পরিবারকে ফেরত দিতে হবে। আর ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি তার সম্মান বা অন্য কিছুতে কোন যুলুম ও অন্যায় করে থাকে, তাহ’লে সেদিন আসার পূর্বেই সে যেন আজই তার নিকট হ’তে (ক্ষমা চাওয়া অথবা প্রতিশোধ দেওয়ার মাধ্যমে) নিজেকে মুক্ত করে নেয়; যেদিন (ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য) না দীনার থাকবে, না দিরহাম। (সেদিন) যালেমের নেক আমল থাকলে তার যুলুম অনুপাতে নেকী তার নিকট থেকে কেটে নিয়ে (মযলূমকে দেওয়া) হবে। পক্ষান্তরে যদি তার নেকী না থাকে (অথবা নিঃশেষ হয়ে যায়) তাহ’লে তার (মযলুম) বিবাদীর গোনাহ নিয়ে তার ঘাড়ে চাপানো হবে (মুসলিম হা/২৫৮১; বুখারী হা/৬৫৩৪; মিশকাত হা/৫১২৭)।
প্রশ্ন (১৯৭) : আমার স্ত্রী নিজের ইচ্ছামত পর্দা করে। মাহরাম, গায়ের-মাহরামের ব্যাপারে কোন সাবধানতা অবলম্বন করে না। এ ব্যাপারে শারঈ বিধান বুঝাতে গেলে পরিবারে নানা অশান্তি সৃষ্টি করে। এক্ষণে শান্তি বজায় রাখার জন্য তাকে তার মত চলতে দিলে আমাকে দাইয়ূছ হিসাবে গোনাহগার হ’তে হবে কি?
উত্তর : স্বামী হিসাবে কর্তব্য হ’ল স্ত্রীকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে যথাসাধ্য নছীহত করা এবং শারঈ পর্দার গুরুত্বের ব্যাপারে সচেতন করা। এভাবে স্বামী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে সে গোনাহগার হবে না। তবে নিঃসন্দেহে বেপর্দা এবং স্বামীর অবাধ্য হওয়ার কারণে স্ত্রী কবীরা গোনাহগার হবে। আর ধারাবাহিকভাবে নছীহত করা সত্ত্বেও যদি কোনভাবেই স্ত্রীর মধ্যে পরিবর্তন না আসে, তাহ’লে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে তাকে তালাক দিতে হবে।
প্রশ্ন (১৯৮) :ওয়াক্তের মধ্যে প্রবেশের পর ছালাত আদায়ের পূর্বেই যদি ঋতু শুরু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে পবিত্র হওয়ার পর উক্ত ছালাতের ক্বাযা আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : এ বিষয়ে বিদ্বানদের মতপার্থক্য থাকলেও ক্বাযা আদায় করাই কর্তব্য এবং অধিক সতর্কতাপূর্ণ। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ছালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছালাত আদায়ের অবকাশ দিয়েছিলেন। অতএব কোন ছালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে হায়েয শুরু হ’লে উক্ত ছালাতের কাযা আদায় করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৩/৩৩৫; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২১৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২০৫)।
প্রশ্ন (১৯৯) : নারীরা পর্দা ঘেরা স্থানের মধ্যে থেকে জানাযায় ইমামের সাথে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে কি?
উত্তর : মহিলারা পৃথকভাবে পর্দা বজায় রেখে ইমামের সাথে বা পৃথকভাবে জানাযার ছালাত আদায় করতে পারবে। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩, মিশকাত হা/১৬৫৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮২)। অতএব অন্যান্য ছালাতের মত নারীরা আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দার সাথে ছালাতে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু কোনভাবেই পুরুষদের কাতারে দাঁড়াবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৪৬; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৪/২২)। তবে মহিলাদের কবরে মাটি দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে (বুখারী হা/১২৭৮; মুসলিম হা/৯৩৮)।
প্রশ্ন (২০০) : আমি ওযূ করার পর মোযা পরিধান করেছি। কিন্তু ওযূ ভঙ্গের কোন কারণ ঘটেনি। এক্ষণে আমি যদি মোযা খুলে নিই তাহ’লে আমার ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর : ওযূ অবস্থায় মোযা পরিধানের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ ওযূ অবস্থাতে মোযা খুললে ওযূ ভঙ্গ হয় না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/১৭৯,২১৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৭৯)।

 

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button