প্রশ্নোত্তর
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-১
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-১
প্রশ্ন (১): কাউকে রক্তদান করলে ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?
উত্তর : অন্যকে রক্তদান করা প্রভূত নেকীর কাজ। বিশেষত কারো জীবন বাঁচানোর স্বার্থে রক্তদান করা আরো গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ইহসান কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসানকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে নেকী রয়েছে’ (বুখারী হা/২৩৬৩; মুসলিম হা/২২৪৪; মিশকাত হা/১৯০২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে, আল্লাহ তা‘আলা তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার ভাইয়ের কোন কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলাও ক্বিয়ামতের দিন তার একটি কষ্ট দূর করবেন’ (বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০; মিশকাত হা/৪৯৫৮)। তিনি বলেন, (নেকীর উদ্দেশ্যে কৃত) প্রত্যেক সৎকর্মই ছাদাক্বা (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১৮৯৩)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে অন্যের জন্য উপকারী’ (ছহীহাহ হা/৯০৬)। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে রক্তদান ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়, যদি রোগী মুমূর্ষু হয় এবং অন্য কোন দাতা না পাওয়া যায় (ফৎওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৫/৭০)।
প্রশ্ন (২): বিড়াল পোষার বিধান কি? কিছু মানুষকে দেখা যায় আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর অনুকরণে সুন্নাত মনে করে বিড়াল লালন-পালন করেন।
উত্তর : বিড়াল পোষা জায়েয (মুসলিম হা/১৫৬৯; মিশকাত হা/২৭৬৮)। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম বিড়ালের প্রতি ইহসান করতেন এবং এদের মুখ দেওয়া খাবারকে পবিত্র মনে করতেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়। কারণ যেসব প্রাণী সবসময় তোমাদের আশেপাশে থাকে তাদের মধ্যে বিড়ালও একটি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা ওযূ করতে দেখেছি (নাসাঈ হা/৬৮; মিশকাত হা/৪৮২; ইরওয়া হা/১৭৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, দাঊদ ইবনু ছালেহ বিন দীনার (রহঃ) থেকে তার মাতার সূত্রে বর্ণিত, তার (মায়ের) মুক্তিদানকারিণী মুনীব একবার তার মাকে কিছু হারীস (এক প্রকার খাদ্য) নিয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তার মা বলেন, আমি গিয়ে তাকে ছালাতরত পেলাম। তিনি তখন আমাকে (হাত দিয়ে) ইশারা করলেন, তা রেখে দাও। তখন একটি বিড়াল এলো এবং তা হ’তে কিছু খেল। এরপর আয়েশা (রাঃ) ছালাত শেষ করে বিড়ালের খাওয়া স্থান থেকেই খেলেন এবং বললেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়। ওটা তোমাদের আশেপাশে ঘন ঘন বিচরণকারী জীব। তিনি আরো বলেন, আমি রাসূলকে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট (পানি) দিয়ে ওযূ করতে দেখেছি (আবুদাউদ হা/৭৬; মিশকাত হা/৪৮৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৯৫৮)।
প্রশ্ন (৩) : পিতা-মাতার নামে নাম রাখার বিধান কি? এটি কি সদাচরণের মধ্যে গণ্য হবে?
উত্তর : পিতা-মাতার নামে নাম রাখা যায়। তারা অছিয়ত করে গেলে সেই নামে নাম রাখা সদাচরণের মধ্যে গণ্য হবে। আর সাধারণভাবে ভালোবাসার টানে রাখলে নিয়ত অনুপাতে ছওয়াব হবে। তবে তাদের নামে নাম রাখা আবশ্যক কোন বিষয় নয়। বরং আল্লাহর নিকট ‘আব্দ’ যুক্ত প্রিয় নাম রাখা মুস্তাহাব (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/২৮৭)।
প্রশ্ন (৪) : স্বামী যদি দরিদ্র হয় এবং মৌলিক চাহিদা পূরণ না করে তাহ’লে স্ত্রী তালাক চাইতে পারবে কি?
উত্তর : স্বামীর জন্য কর্তব্য হ’ল স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। তবে স্ত্রীর বিলাসী কামনা পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব নয়। এক্ষণে স্বামী যদি প্রকৃতই স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা পূরণ না করে বা সক্ষম না হয় তাহ’লে স্ত্রীর জন্য তার সাথে থাকা বা না থাকার এখতিয়ার রয়েছে। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, ‘যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর খরচ বহন না করে বা তার প্রতি খরচ করার মত স্বামীর সক্ষমতা না থাকে তাহ’লে স্ত্রীর অধিকার রয়েছে তার সাথে থেকে ধৈর্যধারণ করার বা তার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার (মুগনী ৮/২০৪)। কারণ আল্লাহ বলেন, অতঃপর হয় তাকে ন্যায়ানুগভাবে রেখে দিবে, নতুবা সদাচরণের সাথে পরিত্যাগ করবে (বাক্বারাহ ২/২২৯)। উল্লেখ্য যে, কোন স্ত্রী যদি বিনা ওযরে তালাক চায় তবে তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম করে দেয়া হয় (আবুদাঊদ হা/২২২৬)।
প্রশ্ন (৫) :পঞ্চাশ বার কা‘বা ঘর ত্বাওয়াফ করলে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। এ কথার কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। যেখানে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ৫০ বার বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করবে সে পাপ থেকে ঐ দিনের মত মুক্ত হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছেন (তিরমিযী হা/৮৬৬; সিলাসিলা যঈফাহ হা/৫১০২)।
প্রশ্ন (৬) : স্ত্রী পাপ করলে স্বামীকে কি সেই পাপের ভাগিদার হ’তে হবে?
উত্তর : প্রথমতঃ স্ত্রী স্বামীর অগোচরে কোন পাপ করলে স্বামী পাপী হবেন না। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪ প্রভৃতি)। আর যদি স্ত্রীর পাপের কথা স্বামী জ্ঞাত থাকে এবং সে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহ’লে স্বামী গুনাহগার হবে। কেননা স্বামী তার পরিবারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে (বুখারী হা/৮৯৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছ যে ব্যভিচারের কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না (আহমাদ হা/৫৩৭২; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৬৬)।
প্রশ্ন (৭) : ছোট-বড় শিরকের কারণে আমল ধ্বংস হয়ে যাবে কি? শিরক থেকে তওবা করার পর পূর্বে কৃত নেকীর কাজের কোন ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?
উত্তর : শিরকে আকবারে লিপ্ত হ’লে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং তার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে তোমার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে (যুমার ৩৯/৬৫)। তবে কেউ শিরক করার পরে তওবা করে দ্বীনে ফিরে আসলে পূর্বেকৃত সৎকর্মের ছওয়াব ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন, তবে তারা ব্যতীত, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন (ফুরক্বান ২৫/৭০)। হাকেম বিন হিযাম (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, জাহেলী যুগে আমি যেসব সৎকর্ম করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান পাব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তরে বললেন, ‘তোমার পূর্বকৃত সৎকর্মের বিনিময়ে তুমি ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছ’ (মুসলিম হা/১২৩; ছহীহাহ হা/২৪৮)। আর ছোট শিরকে জড়িত ব্যক্তির সমস্ত আমল নয় বরং সংশ্লিষ্ট আমলটি বাতিল হবে। যেমন রিয়ার কারণে রিয়াকৃত আমলটি বরবাদ হবে (নাসাঈ হা/৩১৪০)।
প্রশ্ন (৮) : অর্থের প্রয়োজনে আমি জমি বন্ধক দিয়ে টাকা নেই। একবছর পর সমপরিমাণ অর্থ তাকে দিয়ে ফিরিয়ে নেই। বন্ধকগ্রহীতা ভোগ করুক বা না করুক সেটা তার ব্যাপার। এভাবে বন্ধক দেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : ঋণের বিনিময়ে লাভ ভোগ করা সূদ (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/২৫০; ছালেহ ফাওযান, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৫০৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/১৭৬-৭৭)। ছাহাবীগণ এমন ঋণ নিষেধ করতেন, যা লাভ নিয়ে আসে (বায়হাক্বী ৩/৩৪৯-৩৫০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭)। তবে বন্ধকদাতার পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় তা ভোগ করা বা তা থেকে উপকৃত হওয়ার অনুমতি থাকলে তা জায়েয হবে। কেননা তা শর্তযুক্ত নয়। উল্লেখ্য যে, সাধারণ অবস্থায় জমি ভাড়া (লীজ) দেওয়া ও নেওয়া এবং তাতে চাষাবাদ করা জায়েয (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৯৭৪, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ১৩ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৯) : হাদীছ অস্বীকারকারীরা কি কাফের? বিদ্বানদের মতামত সহ জানতে চাই।
উত্তর : হাদীছের প্রামাণিকতাকে অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফের এবং ইসলামের গন্ডি বহির্ভূত। কেননা যে হাদীছকে অস্বীকার করে, সে মূলতঃ কুরআনকেই অস্বীকার করে। হাদীছ ব্যতীত দ্বীনের ওপর আমল করা অসম্ভব। এজন্য মুসলিম বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে হাদীছ অস্বীকারকারীকে কাফের আখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ যারা গোটা হাদীছশাস্ত্রকে অস্বীকার করে তারা স্পষ্ট কাফের, কেননা তা রাসূল (ছাঃ)-এর রিসালাতকেই অস্বীকার করার শামিল। অনুরূপভাবে যারা কোন হাদীছকে ছহীহ হিসাবে জানার পরও কোন প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়া তা সরাসরি অস্বীকার করবে সেও কুফরী করবে। এ বিষয়ে ইমামদের মতামত নিম্নে উল্লেখিত হ’ল- (১) খ্যাতনামা তাবেঈ আইয়ূব আস-সাখতিয়ানী (১৩১হি.) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তিকে তুমি হাদীছ শোনাও এবং সে বলে এসব ছাড়ো, আমাদেরকে কুরআন থেকে শোনাও, তবে জেনে রেখ সে একজন পথভ্রষ্ট’ (সুয়ূত্বী, মিফতাহুল জান্নাহ, পৃ. ৩৫)। (২) ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ (২৩৮হি.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির নিকট রাসূল (ছা.)-এর কোন হাদীছ পৌঁছেছে যাকে সে সত্য বলে স্বীকার করেছে, অতঃপর প্রকাশ্যে তা পরিত্যাগ করেছে, সে কাফের (ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ১/৯৯)। (৩) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (২৪১হি.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর হাদীছকে অস্বীকার করল, সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিপতিত হ’ল (ইবনুল জাওযী, মানাক্বিবুল ইমাম আহমাদ, পৃ. ২৪৯)।’ (৪) ইমাম আল-বারবাহারী (৩২৯হি.) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর হাদীছের ব্যাপারে কটূক্তি করবে, তখন তার ইসলামের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হবে। কেননা সে নিকৃষ্ট বক্তব্য এবং নিকৃষ্ট পথের অনুসারী। সে মূলতঃ রাসূল (ছা.) ও তার ছাহাবীদের উপরই কটূক্তি করেছে (শারহুস সুন্নাহ, পৃ. ৮৯)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত অস্বীকার করে, সে যেন পুরো কিতাবকেই অস্বীকার করে। যে ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর কোন একটি হাদীছকে অস্বীকার করে, সে যেন পুরো হাদীছ সম্ভারকেই অস্বীকার করে (শারহুস সুন্নাহ, পৃ. ১০১-১০২)। (৫) ইমাম আল-আজুর্রী (৩৬০হি.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর কিতাবে যে সকল বিষয় ফরয করেছেন, তার কোনটিরই হুকুম জানার সুযোগ নেই রাসূল (ছা.)-এর সুন্নাহ ব্যতীত। এটিই মুসলিম বিদ্বানগণের অভিমত। সুতরাং যে ব্যক্তি এর বাইরে অন্য কোন কথা বলবে, সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে এবং অবিশ্বাসী নাস্তিকদের দলভুক্ত হবে (আশ-শারী‘আহ, ১/৪১২)।’ (৬) ইবনু হাযম (৪৫৬হি.) বলেন, ‘কোন মুসলিম যে তাওহীদকে স্বীকৃতি দিয়েছে তার পক্ষে বিতর্কের সময় কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাতে যা পেয়েছে তা অস্বীকার করারও কোন সুযোগ নেই। যদি সে তার নিকট দলীল স্পষ্ট হওয়ার পরও অস্বীকার করে তবে সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহর হুকুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া হালাল মনে করে এবং এ দু’টির যে কোন একটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করে, সে কাফির। এ বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ১/ ৯৯)। (৭) তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি বলে যে কুরআনে যা পাব তা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করব না, তবে সে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মতে কাফির।… আর যদি কেউ কেবল মুসলিম উম্মাহর ইজমা‘কৃত বিষয়কে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের মধ্যে কুরআন ও হাদীছ থেকে উৎসারিত সকল মতভেদ পূর্ণ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, তবে সে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতে ফাসিক (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ২/৮০)। (৮) ইবনু তায়মিয়াহ (৭২৮ হি.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসূল (ছা.) তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান আনা ওয়াজিব। তার অর্থ আমরা বুঝি আর না বুঝি। কেননা তিনি সত্যবাদী এবং সত্যায়িত ব্যক্তি। কিতাব ও সুন্নাহে যা কিছু তিনি নিয়ে এসেছেন প্রত্যেক মুমিনের জন্য তার ওপর ঈমান আনা ওয়াজিব, যদিও সে তার অর্থ না বোঝে। এটাই সালাফে ছালেহীন এবং ইমামগণের ঐক্যমত দ্বারা সাব্যস্ত (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ৩/৪১)। (৯) শাত্বেবী (৭৯০হি.) বলেন, ‘একটি দল রয়েছে যারা কেবলমাত্র কুরআনকে যথেষ্ট মনে করে, তারা চরম দুর্ভাগা। তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত থেকে বহির্ভূত (আল-মুওয়াফাক্বাত, ৪/৩২৫-৩২৬)।’ (১০) ইবনু ওয়াযীর (৮৪০ হি.) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ প্রমাণিত হওয়ার পরও যারা তা অস্বীকার করে, তারা সুস্পষ্ট কাফের (আল-‘আওয়াছিম মিনাল ক্বাওয়াছিম ২/২৭৪)। (১১) সুয়ূত্বী (৯১১হি.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর কোন ভাষ্য বা কর্মগত হাদীছ অস্বীকার করে এবং সে জানে যে হাদীছ হ’ল ইসলামের মৌলিক দলীল, সে ব্যক্তি কুফরী করল এবং ইসলামের গন্ডী থেকে বেরিয়ে গেল এবং তার হাশর হবে ইহূদী এবং নাছারাদের সাথে অথবা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কোন কাফের দলের সাথে (সুয়ূত্বী, মিফতাহুল জান্নাহ, পৃ. ৬)। (১২) শাওকানী (১২৫০হি.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই পবিত্র সুন্নাহর প্রামাণিকতা এবং শরী‘আতের আহকাম প্রণয়নে তাঁর একচ্ছত্র দ্বীনের অবধারিত জ্ঞান। এ বিষয়ে কেউই মতভেদ করে না, ইসলাম থেকে বহির্ভূত ব্যক্তি ব্যতীত’ (ইরশাদুল ফুহূল, ১/৯৭)। (১৩) বর্তমান যুগের সকল বিদ্বানের ঐক্যমতে, হাদীছ অস্বীকারকারীরা মুরতাদ ও কাফির। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করে। এদের সাথে কোন প্রকার ধর্মীয় ও সামাজিক সম্পর্ক রাখা বৈধ নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৩/১৯৪, মাজমু ফাতাওয়া বিন বায ২/৪০৩, ৩/২৭৩)।
প্রশ্ন (১০) : সফরে ক্বাযা হওয়া একাধিক ছালাত বাসায় পৌঁছে ক্বাযা আদায় করলে তা পুরো আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : বাড়িতে পৌঁছলে মুসাফিরের হুকুম বাতিল হয়ে যায়। ফলে সফরের ক্বাযা ছালাত বাড়িতে বা নিজ এলাকায় পূর্ণ আদায় করতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৪৪৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৭/২৮২, ২৮৭)।
প্রশ্ন (১১) : ওযূ করার সময় কি সালাম আদান-প্রদান করা যাবে?
উত্তর : ওযূ অবস্থায় সালাম দেওয়া ও সালামের জওয়াব দেওয়া জায়েয। তবে ওযূ শেষে জওয়াব দেওয়া উত্তম (আবুদাউদ হা/১৭; মিশকাত হা/৪৬৭; ছহীহাহ হা/ ৮৩৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৫৫)।
প্রশ্ন (১২) : কোন মুশরিক ছেলে বা মেয়ে কালেমা পাঠ করে মুসলিম হ’লে শরী‘আতের দৃষ্টিতে কোর্ট থেকে ধর্ম পরিবর্তনের কাগজ করা এবং নাম পরিবর্তন করা আবশ্যক কি?
উত্তর : মুসলিম হওয়ার জন্য শর্ত হ’ল গোসল করে বিশুদ্ধ নিয়তে কালেমা শাহাদাত পাঠ করা এবং যাবতীয় শিরক ত্যাগ করে ইসলামের জন্য নিজেকে সোপর্দ করা (মুহাম্মাদ আল-ক্বাহত্বানী, মুখতাছারু মা‘আরিজিল কুবূল ১১৯-১২২ পৃ.)। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইনের অনুসরণে অফিসিয়াল প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক এফিডেভিট করা হয়। তবে সেটা শর্ত নয় বা না করা পর্যন্ত মুসলিম হওয়া যাবে না- এমনটি নয়। আর নাম সুন্দর অর্থবোধক হ’লে তা পরিবর্তন করাও আবশ্যক নয়। কারণ বহু ছাহাবীর নাম পরিবর্তন করা হয়নি (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৫৫)।
প্রশ্ন (১৩) : কোন মুসলিম নারী প্রসাধনী হিসাবে সিঁদুর ব্যবহার করতে পারবে কি? যদি তার স্বামী পসন্দ করে তথা স্বামীকে খুশি করার জন্যে কি ব্যবহার করা জায়েয হবে?
উত্তর : কোন মুসলিম সিঁদুর ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ এটি হিন্দুদের ধর্মীয় রীতি বা নিদর্শন। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩১)।
প্রশ্ন (১৪) : তায়েফ সফরকালে রাসূল (ছাঃ) নির্যাতিত হওয়ার পর একটি আঙ্গুর বাগানে বসে যে দো‘আটি করেছিলেন, তা ছহীহ কি?
উত্তর : দো‘আ করার ঘটনাটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত (আর-রাহীক্ব পৃঃ ১২৬; ইবনু হিশাম ১/৪২০)। তবে এর সনদ যঈফ (ত্বাবারাণী, সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৩৩; দ্রঃ সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘তায়েফ সফর’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (১৫) : এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর বিচারে সন্তুষ্ট না হয়ে ওমর (রাঃ)-এর নিকট বিচার চাইলে তিনি তাকে হত্যা করেন। এ ঘটনার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত আছারটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যার সবগুলিই দুর্বল (দুর্রে মানছূর, ইবনু কাছীর, সূরা নিসা ৬৫ আয়াতের আলোচনা দ্রঃ; তাহক্বীক কুরতুবী হা/২২৯৮-৯৯)।
প্রশ্ন (১৬) : সশস্ত্র বাহিনী সহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কুচকাওয়াজে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : কুচকাওয়াজে হোক বা যেখানেই হোক বাদ্যযন্ত্র সর্বাবস্থায় হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘লোকদের মধ্যে কিছু লোক অজ্ঞতাবশে বাজে কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (লোক্বমান ৩১/৬)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এখানে ‘বাজে কথা’ অর্থ গান-বাজনা (ইবনু কাছীর, তাফসীর উক্ত আয়াত)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০; মিশকাত হা/৫৩৪৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাদ্যযন্ত্রকে مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ ‘শয়তানের বাঁশী’ বলেছেন (আবুদাঊদ হা/২৫৫৬)। নাফে‘ বলেন, ‘আমি রাস্তায় ইবনু ওমরের সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের আওয়ায শুনে তাঁর দু’কানে দু’আঙ্গুল প্রবেশ করালেন এবং রাস্তার অন্য পাশে সরে গেলেন। অতঃপর দূরে গিয়ে বললেন, নাফে‘! তুমি কি এখন কিছু শুনতে পাচ্ছ? (নাফে‘ বলেন,) আমি বললাম, না। তখন তিনি তার কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, আমি একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাঁশীর আওয়ায শুনে এরূপ করেছিলেন’ (আহমাদ হা/৪৫৩৫, ৪৯৬৫; আবুদাঊদ হা/৪৯২৪; মিশকাত হা/৪৮১১, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (১৭) : বিবাহের মোহরানা ৪ লক্ষ টাকা ছিল। বিবাহের সময় পরিশোধ করা হয়নি। এখন এর বিনিময়ে স্বামী আমাকে জমি লিখে দিতে চান। এটা সঠিক হবে কি?
উত্তর : স্ত্রীর সম্মতি থাকলে সঠিক হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর’ (নিসা ৪/৪)। তবে স্ত্রী যদি এতে সন্তুষ্ট না হয় বরং নির্ধারিত টাকা দাবী করে তাহ’লে স্বামীকে নির্ধারিত অর্থই প্রদান করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে সকল শর্ত তোমাদের জন্য পালন করা যরূরী, তন্মধ্যে সব চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হ’ল তা-ই, যার (মোহর) দ্বারা তোমরা স্ত্রীর গোপনাঙ্গ হালাল করে থাক (বুখারী হা/৫১৫১; মিশকাত হা/৩১৪৩)।
প্রশ্ন (১৮) : কেউ ছালাতে শেষ বৈঠকে ভুলবশতঃ আত্তাহিইয়াতু..., দরূদ না পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলে তার করণীয় কি?
উত্তর : ছালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ফরয (নাসাঈ হা/১২৭৭; ইরওয়া হা/৩১৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৪৮; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৪৪)। সেজন্য যে ব্যক্তি তাশাহহুদ পাঠ ব্যতীত সালাম ফিরিয়েছে তাকে উক্ত দো‘আ ও দরূদ পাঠ করে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাতে হবে। আর যদি সংশ্লিষ্ট ছালাতের ওয়াক্ত অতিবাহিত হওয়ার পরে মনে পড়ে তাহ’লে পুরো ছালাত আদায় করতে হবে (ইবনুল ক্বাইয়িম, জালাউল আফহাম ১/৩৪৯; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৩০৯, ৩১৫, ৩২৩)। আর কেবল দরূদ ছুটে গেলে সহো সিজদা দেওয়া মুস্তাহাব (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৬৭-৬৮; মির‘আত ৩/২৯৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২৯৭)।
প্রশ্ন (১৯) : কুরআন তেলাওয়াতকালে বা বক্তব্য প্রদানকালে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আযান দিলে আযানের জবাব দান না বক্তব্য বা তেলাওয়াত চালিয়ে যাওয়া কোনটা যরূরী?
উত্তর : এমতাবস্থায় তেলাওয়াত বা বক্তব্য বন্ধ রেখে আযানের জওয়াব দেওয়াই উত্তম। কেননা আযানের জওয়াব পরে দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আর একাধিক আযান হ’লে একটির জওয়াব দিলেই যথেষ্ট হবে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘আযান শুনলে তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের শব্দগুলোর জওয়াব দিবে অতঃপর তেলাওয়াতে ফিরে আসবে’ (আত-তিবইয়ানু ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন ১২৬ পৃ.)। শায়েখ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘সুন্নাত হ’ল যখন কেউ কুরআন তেলাওয়াত করার সময় আযান শুনবে তখন রাসূলের বাণী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুওয়াযযিনের আযানের জওয়াব দিবে’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৫৮)। শায়েখ উছায়মীন বলেন, এমতাবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়াই উত্তম (লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১২/২২)। অতএব আযান শুনে তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জওয়াব দিবে এবং দো‘আ শেষে পুনরায় কুরআন তেলাওয়াত বা বক্তব্য শুরু করবে।
প্রশ্ন (২০) : বিভিন্ন হাদীছে আল্লাহ তা‘আলা বা রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে লা‘নত করা হয়েছে। এর দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? লা‘নত-এর পরকালীন শাস্তি কি?
উত্তর : উক্ত হাদীছ সমূহে লা‘নত শব্দের অর্থ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া, রহমত থেকে দূরে সরে যাওয়া, আল্লাহর রহমত থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য বদ দো‘আ করা ইত্যাদি (ইবনুল মানযূর, লিসানুল আরব ১৩/৩৮৭)। যে সকল বৈশিষ্ট্যের লোকদের লা‘নত করা হয়েছে তারা কবীরা গুনাহগার। তারা তওবা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে তাদের গুনাহ অনুপাতে জাহান্নামে থাকতে হবে (নববী, শরহু মুসলিম ২/৮৫; ফাৎহুল বারী ১২/১৮৪; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৬/১৯৩)।
প্রশ্ন (২১) : নবজাতকের নাভী পড়ে যাওয়ার পর তা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পুঁতে রাখতে হয় কি? এ রেওয়াজের কোন উপকারিতা আছে কি?
উত্তর : এটি বানোয়াট রেওয়াজ। ইসলামী শরী‘আতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এই বানোয়াট প্রথা অবশ্যই বর্জনীয়।
প্রশ্ন (২২) : আমি নিয়ত করেছিলাম যে, আমি কোনদিন দাড়ি কাটবো না। কিন্তু বর্তমানে দেশে কোন প্রকার চাকরি না পাওয়ায় বিদেশ গমনকালে বা ভালো কোন কোম্পানিতে আবেদনের সময় তারা প্রথম শর্ত দেয় যে আমাকে দাড়ি কাটতে হবে। এমতবস্থায় আমার করণীয় কি?
দাড়ি রাখা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর এবং দাড়িকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও (বুখারী হা/৫৮৯২; মিশকাত হা/৪৪২১; শায়েখ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৩৬৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১২৫)। কোন দুনিয়াবী অজুহাতে দাড়ি কাটা যাবে না। বরং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে বিকল্প হালাল পথে রিযিক অন্বেষণ করবে। কারণ রিযিক পূর্ব নির্ধারিত। আর সেটি হালাল পথেই পাওয়া যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর, যা হালাল তাই গ্রহণ কর এবং যা হারাম তা বর্জন কর’ (ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; ছহীহাহ হা/২৬০৭)।
প্রশ্ন (২৩) : বর্তমানে এমন কিছু নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী আছে, যা বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এগুলোতে অতি মাত্রায় সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। মহিলাদের সুগন্ধি ব্যবহার হারাম। কিন্তু উক্ত ব্যবহার্য বস্ত্তর সুগন্ধি যদি স্বামী ব্যতীত অন্য মাহরাম বা গায়ের মাহরাম পায় তাহ’লে গুনাহ হবে কি?
উত্তর : গন্ধ ছড়ায় এমন কিছু মহিলারা ব্যবহার করবে না। সেটি সুগন্ধি নামে বিক্রি হৌক বা অন্য নামে বিক্রি হৌক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পুরুষরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর মেখে কোন মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে গমন করে তাহ’লে সে একজন ব্যভিচারিণী বলে গণ্য হবে’ (নাসাঈ হা/৫১২৬; মিশকাত হা/১০৬৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৪০)। তিনি আরো বলেন, যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহ’লে তার ছালাত গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে (আবুদাঊদ হা/৪১৭৪; মিশকাত হা/১০৬৪; ছহীহাহ হা/১০৩১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, পুরুষের সুগন্ধি হচ্ছে যার গন্ধ প্রকাশ পায় কিন্তু রং গোপন থাকে। আর নারীদের সৌন্দর্য হচ্ছে যার রং প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধি গোপন থাকে (নাসাঈ হা/৫১১৭; মিশকাত হা/৪৪৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২০৬৫)। তবে নারীরা নারীদের মাঝে বা বাড়িতে মাহরামের মাঝে অবস্থানকালে যেকোন সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে (মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর ৩/১৯০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৪০)। এছাড়া বাইরে সুগন্ধ ছড়ায় না এমন কোন হালকা সুবাসযুক্ত ক্রিম ব্যবহারে দোষ নেই। সর্বোপরি সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় করে চলতে হবে (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
প্রশ্ন (২৪) : ইয়াজূজ-মাজূজ কি মানুষের মতই কেউ? তারা কি মুসলিম হিসাবে জন্মগ্রহণকারী? না জন্মগতভাবেই পথভ্রষ্ট। তাদের কাছে কি কোন নবী এসেছিল? তাদের মধ্যে কেউ কি মুসলিম হবে না?
উত্তর : ইয়াজূজ ও মাজূজ মানব জাতিরই অংশ। তারা নূহ (আঃ)-এর ছেলে ইয়াফেছের বংশধর। তারা মানুষ হিসাবে জন্ম নিলেও মুসলিম নয়। কারণ তারা বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মত ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীদেরও ধ্বংসের চেষ্টায় থাকবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৬/১০৪; আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী, ফায়যুল বারী ৪/৩৫৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৩৫৭)। কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন যে, যুলক্বারনাইন প্রাচীর নির্মাণের সময় কিছু ইয়াজূজ ও মাজূজ ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আর তিনি তাদের আর্মেনিয়া অঞ্চলে ছেড়ে দেন। তারাই হ’ল তুর্কী (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৬/৩৮৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৩১২)। ইয়াজূজ-মাজূজের নিকট বিশেষ কোন নবী-রাসূল প্রেরণের বিষয়টি জানা যায় না। তবে তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর পরেও তারা যে ইসলাম গ্রহণ করেনি তা প্রমাণ করে কিছু হাদীছ। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন হে আদম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হ’তে জাহান্নামীদের বের করে দেন। আদম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন।… এ বক্তব্য লোকদের জন্য খুবই কঠিন হ’ল। এমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, দেখ ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায় থেকে হবে ৯৯৯ জন। আর তোমাদের মধ্য থেকে হবে ১ জন। (বুখারী হা/৪৭৪১; মিশকাত হা/৫৫৪১ ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ)। এ হাদীছের ব্যাখ্যায় উছায়মীন (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ স্পষ্ট করে দেয় যে, ইয়াজূজ মাজূজ আদমের বংশধর আর তারা জাহান্নামী (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৬০/২৬)।
প্রশ্ন (২৫) : ক্বিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ব্যবসার কাজে স্ত্রী তাঁর স্বামীকে সহযোগিতা করবে- মর্মে বর্ণিত হাদীছটির ব্যাখ্যা কি?
উত্তর :হাদীছটি সিলসিলা ছহীহাহ গ্রন্থে ছহীহ সূত্রে সংকলিত হয়েছে (হা/৬৪৭)। উক্ত হাদীছের অর্থ হ’ল ক্বিয়ামতের পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম বিস্তার ঘটবে। বাড়িতে বাড়িতে দোকান-পাট তৈরি হবে। যত্রতত্র বাজার ছড়িয়ে যাবে। নারীরাও দোকানে বসবে এবং তাদের স্বামীদেরক ব্যবসায় সহযোগিতা করবে। যেমনটি বর্তমানে ব্যাপকহারে দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, কোন বিষয় ক্বিয়ামতের আলামত হওয়াটা তা নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ করে না। যেমন নারীদের জন্য শারঈ বিধান মেনে ব্যবসা করা বৈধ (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৮/১০৫)।
প্রশ্ন (২৬) : ১৫ বছর পূর্বে আমরা পালিয়ে ক্বাযীর অভিভাবকত্বে বিবাহ করি। আমাদের ১৩ বছরের একটি সন্তান আছে। বিয়ের ১ মাস পর উভয় পরিবার বিবাহ মেনে নেয়। স্ত্রীর শ্বশুর-শাশুড়ী বেঁচে নেই। আমাদের বিবাহ সঠিক হয়েছিল কি? না হ’লে করণীয় কি?
উত্তর : প্রথমতঃ রাসূল (ছাঃ) অলী ছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে বাতিল বলে গণ্য করেছেন (আবুদাউদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে হা/২৭০৯)। এরূপ ক্ষেত্রে অলী বা তার প্রতিনিধি বা বর্তমান অভিভাবকের সম্মতিতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় বিবাহের ঈজাব-কবুল করাতে হয় এবং মোহর প্রদান করতে হয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৯/৩৪৬; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৪১/২৪৮)। দ্বিতীয়তঃ পিতা বিবাহ মেনে নেওয়ায় সেই বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই (শীরাজী, আল-মুহাযযাব ২/৪২৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ১৬/১৪৬)। যেমন আয়েশা (রাঃ) তার ভাই আব্দুর রহমান শামে থাকাকালীন তার ভাতিজী হাফছার বিয়ে দেন মুনযির বিন যুবায়েরের সাথে। আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে আসলে আয়েশার প্রতি রেগে গিয়ে বলেন, আমার সাথে কেমন আচরণ করা হ’ল? আয়েশা (রাঃ) মুনযিরের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন, আব্দুর রহমান যা করবে তাই হবে। আব্দুর রহমান সে বিবাহে স্বীকৃতি দেন এবং হাফছা তার সাথেই সংসার করেন (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৫৬৯, ১৫৬৪; বায়হাক্বী হা/১৩৬৫৩; শারহু মা‘আনিল আছার হা/৪২৫৫, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (২৭) : হযরত মূসা (আঃ) শেষনবীর উম্মত হ’তে চেয়েছিলেন কি? একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যার কোনটাই ছহীহ নয়। বরং কিছু যঈফ ও কিছু জাল (ইবনু বাত্তা, আল-ইবানাতুল কুবরা হা/১৭৯; আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/৬৯৬)। অতএব মূসা (আঃ)-এর সাথে উক্ত বক্তব্য সম্পৃক্ত করা যাবে না।
প্রশ্ন (২৮) : আমার নেফাসের ৩৭তম দিনে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। পবিত্র হয়েছি মনে করে স্বামীকে অবহিত করি। পবিত্রতা অর্জন করে স্বামী-স্ত্রী নির্জনবাস করি। রাতে আবারও রক্ত দেখা যায়। এক্ষণে আমাদের কাফফারা দিতে হবে কি?
উত্তর : হায়েয ও নিফাস অবস্থায় স্ত্রী মিলন করা হারাম। নিফাসের জন্য সর্বোচ্চ চল্লিশদিন অপেক্ষা করতে হবে (আবুদাউদ হা/৩১১; ইরওয়া হা/২১১)। তবে চল্লিশ দিনের পূর্বে কেউ পবিত্র হয়ে গেলে তার উপর ছালাত ও ফরয ছিয়াম আবশ্যক হয়ে যাবে এবং স্বামীর সাথে নির্জনবাস করা জায়েয হয়ে যাবে। এক্ষণে পবিত্রতার লক্ষণ দেখার পরে চল্লিশ দিনের পূর্বেই কেউ স্ত্রী মিলন করে থাকলে কোন কাফফারা দিতে হবে না। তবে অসতর্কতাবশত নিফাস অবস্থায় স্ত্রীর সাথে নির্জনবাস ঘটে যাওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২৫৪; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহু ঊমদাতুল ফিকহ ১/৫২০)।
প্রশ্ন (২৯) : কতদিন পর্যন্ত ছালাত ক্বাযা হ’লে উক্ত ছালাত আদায় করে নিতে হবে? যেমন কেউ ১ মাস ছালাত আদায় না করলে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে, না তওবা করলেই যথেষ্ট হবে?
উত্তর : প্রথমতঃ কেউ ইচ্ছা করে ছালাত ত্যাগ করে থাকলে তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। বরং ছালাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করতে হবে এবং পরবর্তী ছালাতগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। সাথে সাথে অধিকহারে ইস্তিগফার করবে এবং অধিক পরিমাণে নফল ছালাত আদায় করবে যাতে ফরযের পরিপূরক হয়ে যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ১/৪০৪; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৮, ১৯/৮৯)। দ্বিতীয়তঃ কেউ অলসতাবশত বা ব্যস্ততার কারণে ছালাত ছেড়ে থাকলে যখনই সুযোগ পাবে তখনই ক্বাযা ছালাত আদায় করে নিবে। সেটি এক বা একাধিক দিনও হ’তে পারে। আর সেটি ওয়াক্ত অনুপাতে ধারাবাহিক ভাবে আদায় করতে হবে (মুসলিম হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৪; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৪৩৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/১৩৯)।
প্রশ্ন (৩০) : চোখ ও হাতের যেনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করণীয় কি?
উত্তর :প্রথমতঃ দৃষ্টি অবনমিত রাখবে এবং কোন গায়ের মাহরাম নারীর দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকাবেনা। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে’ (নূর ২৪/৩০)। অনুরূপভাবে নারীরাও এমন পোষাক পরে চলাফেরা করবে না, যাতে পুরুষ তাদের প্রতি প্রলুব্ধ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে কেবল যেটুকু প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত। আর তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর রাখে।… আর তারা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকট হয়ে পড়ে’ (নূর ২৪/৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘চোখের যেনা হ’ল (বেগানা) নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা’ (বুখারী হা/৬২৪৩; মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬)। দ্বিতীয়তঃ কুচিন্তা থেকে সাধ্যমত মুক্ত থাকবে এবং কুচিন্তার উদ্রেক হয় এমন যাবতীয় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। বিশেষতঃ আধুনিক যুগের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার কুপ্রভাব থেকে নিজেকে সর্বোতভাবে হেফাযত করবে। আল্লাহ বলেন, প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজ ও আচরণের নিকটবর্তীও হয়ো না (আন‘আম ৬/১৫১)। তৃতীয়তঃ সম্ভব হ’লে দ্রুত বিবাহ করবে। কারণ বিবাহ ব্যক্তিকে যেনা থেকে হেফাযত করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ এটা তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে, লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না সে যেন ছিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার জন্য ঢালস্বরূপ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩০৮০)। চতুর্থতঃ সর্বদা আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে। এজন্য নিম্নোক্ত দো‘আগুলো পাঠ করা যেতে পারে-اَللَّهُمَّ اغْفِرْ ذَنْبِيْ وَطَهِّرْ قَلْبِيْ وَحَصِّنْ فَرْجِيْ ‘আল্ল-হুম্মাগফির যানবী ওয়া তাহহির ক্বালবী ওয়া হাছছিন ফারজী’ (হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ ক্ষমা কর, আমার হৃদয়কে পবিত্র কর এবং আমার লজ্জাস্থানকে হেফাযত কর)। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এক যুবক যেনা করার অনুমতি চাইলে তিনি তার জন্য এই দো‘আ করেন (আহমাদ হা/২২২৬৫; ছহীহাহ হা/৩৭০)। অথবা اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي، ‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন শার্রি সামঈ ওয়ামিন শার্রি বাছারী অমিন শার্রি লিসানী ওয়ামিন শার্রি ক্বালবী ওয়ামিন শার্রি মানিইঈ (হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই আমাদের কর্ণ, চক্ষু, জিহবা ও আমাদের অন্তরের অনিষ্ট হ’তে এবং আমার শুক্র অবৈধ স্থানে পতিত হওয়া থেকে) (আবুদাঊদ হা/১৫৫১; তিরমিযী হা/৩৪৯২; মিশকাত হা/২৪৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৯২, ৪৩৯৯)।
প্রশ্ন (৩১) : নফল ছিয়ামরত অবস্থায় কেউ দাওয়াত দিলে ছিয়াম ভঙ্গ করে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করতে হবে কি? এক্ষেত্রে কোনটির গুরুত্ব বেশী?
উত্তর : এমতাবস্থায় ছিয়াম পালন বা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর। দাওয়াতদাতা কষ্ট পাবে এমন সম্ভাবনা থাকলে ছিয়াম ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। আর আপত্তি না থাকলে ছিয়াম পালন করা উত্তম। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) আমার নিকট এসে বলতেন, তোমাদের কাছে কোন খাবার আছে কি? আমরা না বললে তিনি বলতেন, আমি ছিয়াম রাখলাম। একদিন তিনি আমাদের কাছে আগমন করলে আমরা বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে কিছু হাইস (উত্তম খাবার) হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। আমরা তা আপনার জন্য রেখে দিয়েছি। তিনি বললেন, তা আমার কাছে নিয়ে এসো। অথচ তিনি ছিয়াম অবস্থায় সকাল করেছেন, পরে তা খেয়ে ছিয়াম ছেড়ে দিলেন (মুসলিম হা/১১৫৪; মিশকাত হা/২০৭৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে যদি খাবার জন্য দাওয়াত দেয়া হয়, আর সে ব্যক্তি ছায়েম হয়, তার বলা উচিত, আমি ছায়েম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেয়া হ’লে তার উচিত দাওয়াত কবুল করা। সে ছায়েম হ’লে দাওয়াত দাতার জন্য দো‘আ করবে। আর ছায়েম না হ’লে খাওয়ায় অংশ নেবে (মুসলিম হা/১৪৩১; মিশকাত হা/২০৭৮)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর জন্য খাবার প্রস্ত্তত করা হ’ল। যখন পরিবেশন করা হ’ল তখন একজন লোক বলল, আমি ছায়েম। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তোমার ভাই তোমাকে দাওয়াত করেছে এবং তোমাকে পীড়াপীড়ি করছে। সুতরাং ছিয়াম ছেড়ে দাও। চাইলে এর পরিবর্তে একদিন ছিয়াম পালন করে নিয়ো (বায়হাক্বী, শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৪/৩০৬, সনদ হাসান)। মোদ্দাকথা, নফল ছায়েম তার ছিয়ামের ব্যাপারে স্বাধীন। চাইলে সে পূর্ণ করতে পারে। চাইলে ছেড়েও দিতে পারে (আহমাদ হা/২৬৯৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৫৪; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪৭৮)।
প্রশ্ন (৩২) : সম্পদ আত্মসাৎকারী বা ছিনতাইকারীর বিচার কী হবে? চোরদের মত তাদেরও কি হাত কাটতে হবে?
উত্তর : সম্পদ আত্মসাৎকারী বা ছিনতাইকারী নিঃসন্দেহে কবীরা গোনাহগার ও মহাপাপী এবং তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি (শূরা ৪২/৪২; মুত্বাফ্ফেফীন ৮৩/১-৬)। আদালতে বিচারক তাদের অপরাধের মাত্রা অনুপাতে শাস্তি নির্ধারণ করবেন। সেটি জেল বা জরিমানা বা উভয়টি হ’তে পারে। কিন্তু সকল বিদ্বানদের ঐক্যমতে তার হাত কাটা যাবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১২/৪১৬)। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘লুণ্ঠনকারী, ছিনতাইকারী ও আত্মসাৎকারীর হাত কর্তন করা হবে না’ (দারেমী হা/২৩৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪০২)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের মাল ছিনতাই করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (আহমাদ হা/১৫১১২; মিশকাত হা/৩৫৯৬; ইরওয়া হা/২৪০৩)। হাসান বাছরী ও ইয়াস বিন মু‘আবিয়ার মধ্যে ছিনতাইকারীর হাত কাটা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে তারা খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীযের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। তিনি উত্তরে লিখেন ছিনতাইকারীর হাত কাটা যাবে না। বরং তার পিঠে চাবুক মার এবং তাকে বন্দী কর (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৮৬৬৫)।
প্রশ্ন (৩৩) : যেনার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানকে অপমানসূচক কোন কথা বললে বা তার জন্ম নিয়ে কোন সমালোচনা করলে গোনাহ হবে কী?
উত্তর : হ্যাঁ, যেনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী জারজ সন্তানকে অপমানসূচক কথা বলা বা সমালোচনা করা গুনাহের কাজ। কেননা তার জন্মদাতা যেনাকার নারী-পুরুষের অপরাধের কারণে সে পাপী নয়। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪; ইসরা ১৭/১৫ প্রভৃতি)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যেনার মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তান পিতা-মাতার কোন গোনাহ বহন করবে না (হাকেম হা/৭০৫৩; ছহীহাহ হা/২১৮৬)। উল্লেখ্য যে, ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করা সন্তানেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আহমাদ হা/৬৮৯২; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩৮৩)। আর যারা উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন তাদের মতে হাদীছটির অর্থ হ’ল যে সকল জারজ সন্তান পিতার ন্যায় যেনায় লিপ্ত হয় তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না (ছহীহাহ হা/৬৭৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৩৪) : ছেলেদের ক্ষেত্রে কত বছর বয়স থেকে ছালাত ফরয হয়? ফরয হওয়ার আগে থেকেই কেউ ছালাত আদায় করলে তার নেকী হবে কি?
উত্তর : ছেলেরা বালেগ হ’লে তাদের উপর ছালাত ফরয হয়ে যায়। যদিও ছালাত আদায়ে অভ্যস্ত করতে ১০ বছর বয়স থেকেই তাদেরকে নিয়মিত ছালাত আদায়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এজন্য সে ছওয়াব পাবে (আবুদাউদ হা/৪৩৯৮; মিশকাত হা/৩২৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫১২)। সাধারণতঃ ১৪-১৫ বছর বয়সে ছেলেরা বালেগ হয়। এক্ষণে বালেগ হওয়ার পূর্বে আদায়কৃত ছালাতসহ অন্যান্য ইবাদতের ছওয়াব সে অবশ্যই পাবে। সাথে সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুকে ইবাদতে সহায়তার জন্য তাদের পিতা-মাতাও ছওয়াব পাবেন (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩১৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩৭৭)। বিদ্বানগণ বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের আমলের ছওয়াব লেখা হয়, কিন্তু কোন গোনাহ লিখা হয় না (মাওয়াহিবুল জলীল ১/৪১৩)। তবে বালেগ হওয়ার পর ছালাত ছেড়ে দিলে তাকে গোনাহগার হ’তে হবে।
প্রশ্ন (৩৫) : আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে দো‘আ কবুল হয়। এটা কি কেবল মসজিদের ইক্বামতের জন্য খাছ? না গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানরত নারীরাও ইক্বামত দিয়ে ছালাত শুরুর আগ পর্যন্ত উক্ত সময় পাবে?
উত্তর : শরী‘আতের প্রতিটি বিধান পুরুষের পাশাপাশি নারীর জন্যও প্রযোজ্য। সুতরাং উক্ত ফযীলত মসজিদের ইক্বামতের সাথে খাছ নয়, বরং বাড়িতেও নারীরা উক্ত সময়ে দো‘আ করলে দো‘আ কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন ছালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং দো‘আ কবুল করা হয় (আহমাদ হা/১৪৭৩০; ছহীহাহ হা/১৪১৩)।
প্রশ্ন (৩৬) : নিজের ব্যভিচারে জন্মগ্রহণ করা মেয়েকে বিবাহ করা যাবে কি?
উত্তর : নিজের ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করা কন্যাকে বিবাহ করা যাবে না। কেননা জারজ হ’লেও সে তারই অংশবিশেষ। পিতৃপরিচয় গোপন থাকলেও সে জিনগতভাবে তারই সন্তান। অতএব তাকে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে জমহুর বিদ্বানগণ একমত (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/১১৯; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ৩/১৯৭)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে.. (নিসা ৪/২৩)।
প্রশ্ন (৩৭) : মেয়ের পিতা মেয়েকে স্বামীর নিকট থেকে পৃথক করে নিতে চায়। সেজন্য তিনি গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করছেন। এক্ষণে মেয়ের জন্য করণীয় কি?
উত্তর : গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করা বা হত্যা করা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে শিশুর গঠন শুরু হয়ে গেলে গর্ভপাত করা যাবে না। আর ৪০ দিনেই শিশুর গঠন শুরু হয়ে যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/১৬০)। উল্লেখ্য, গর্ভপাত ঘটানোর অর্থই হ’ল সন্তান হত্যা করা, যা শরী‘আতে হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে তোমরা হত্যা করো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদেরকে দারিদ্রে্যর ভয়ে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করি’ (আন‘আম ৬/১৫১)। কেবলমাত্র মায়ের জীবনের আশংকা থাকলে গর্ভস্থিত ভ্রূণ ফেলে দেওয়া জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২১/৪৫০)। অতএব পিতার এই শরীআ‘ত বিরোধী নির্দেশ পালন করা যাবে না।
প্রশ্ন (৩৮) : পানিজাহাজে বা নৌযানে আরোহণের সময় কোন দো‘আ পাঠ করতে হবে?
উত্তর : নৌযানে আরোহণের নির্দিষ্ট কোন দো‘আ ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়নি। এজন্য সাধারণ বাহনে আরোহণের সময় পঠিতব্য দো‘আটি পাঠ করা যায় (ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৫/৫৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৩/১২৪)। আর সেটি হ’ল- সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়া মা কুন্না লাহূ মুক্বরিনীন। ওয়া ইন্না ইলা রাবিবনা লামুন্ক্বালিবূন। অর্থ : ‘পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাবো’ (যুখরুফ ৪৩/১৩-১৪; মুসলিম হা/১৩৪২)। এছাড়া নূহ (আঃ)-কর্তৃক পঠিত কুরআনে বর্ণিত দো‘আটিও পাঠ করা যায়। আর সেটি হ’ল- বিস্মিল্লা-হি মাজরে-হা ওয়া মুরসা-হা ইন্না রাববী লাগাফূরুর রাহীম। অর্থ : ‘আল্লাহর নামেই এর গতি ও অবস্থান, আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা হূদ ৪১ আয়াত প্রভৃতি)।
প্রশ্ন (৩৯) : আমার নিজের বোনের বিয়ে। তারা তেমন দ্বীনদার নয়। ফলে বিবাহ অনুষ্ঠানে দ্বীনী পরিবেশ থাকবে না। এক্ষণে আমি পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে যদি এই বিয়েতে না যাই এবং আমার স্ত্রীকেও যাওয়ার অনুমতি না দেই, তাহ’লে আমার পিতা-মাতা আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
উত্তর : বড় ভাই হিসাবে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সাধ্যমত ইসলামী পরিবেশ বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করবেন ও সবাইকে উপদেশ দিবেন। অনুষ্ঠানের কিছু অংশ অপসন্দনীয় হ’লেও পুরো অনুষ্ঠান বর্জন করা যাবে না। বোনকে পর্দার বিধান অনুসরণ করে মহিলাদের পরিবেশে রাখার চেষ্টা করবেন। আর অনুষ্ঠানের আগে-পরে ইসলাম অনুমোদিত নয়, এমন কোন কাজ কেউ করলে তারা নিজেরাই দায়ী হবে। কেননা কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। অতএব বোনের বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে পিতা-মাতার আনুগত্য করাই কর্তব্য হবে (আলবানী, ছহীহুত তারগীব হা/৫৬৯)।
প্রশ্ন (৪০) : স্ত্রীর ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের এক সপ্তাহ আগে হওয়ায় ভুলবশত ঋতু অবস্থায় নির্জনবাস হয়। এজন্য কোন কাফফারা দিতে হবে কি?
উত্তর : অনিয়মিত ঋতু হওয়ার কারণে ভুলবশত স্ত্রী মিলন করে থাকলে কোন কাফফারা দিতে হবে না। তবে এই ভুলের কারণে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৩৫৯)।
প্রশ্ন (৪১) : আমি কাপড়ের ব্যবসা করি। ২০০ টাকা দিয়ে একটি কাপড় কিনলে সর্বোচ্চ কত টাকা দরে কাপড়টি বিক্রি করতে পারব?
উত্তর: বাজারদর অনুযায়ী লাভ করবে। কেননা লাভের সীমা শরী‘আতে নির্দিষ্ট করা হয়নি (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৮৯-৯১)। জনৈক ছাহাবী এক দীনার দিয়ে একটি ছাগল কিনে দুই দীনারে বিক্রয় করেছিলেন (আহমাদ হা/১৯৩৮১; ইরওয়া হা/১২৮৭)।
প্রশ্ন (৪২) : জিনেরা কোথায় বসবাস করে? তাদের মৃত্যু হ’লে কিভাবে দাফন করা হয়?
উত্তর : মানুষের মত জিনেরাও যমীনে বসবাস করে (রহমান ৫৫/১০)। গোপনস্থান সমূহে বিশেষ করে টয়লেটে (আবুদাঊদ হা/৬; মিশকাত হা/৩৫৭)। জিনেরাই আগে পৃথিবীতে বসবাস করত। কিন্তু তাদের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তাদেরকে হটিয়ে পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন (বাক্বারাহ ২/৩০)। জিন সহ সকল প্রাণী অবশ্যই মৃত্যুবরণ করে। তবে তাদের দাফন-কাফন সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।
প্রশ্ন (৪৩) : কেউ পূর্বে কোন গোনাহ করে পরবর্তীতে হেদায়াতের পথে ফিরে এসেছে। এমন ব্যক্তিকে অতীতের গোনাহ মনে করিয়ে খোটা দিলে গোনাহ হবে কি?
উত্তর: কোন তওবাকারীকে তার পূর্বের গোনাহ নিয়ে খোটা দেওয়া যাবেনা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গোনাহ থেকে তওবা করে, সে নির্দোষ ব্যক্তির ন্যায়’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না, তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১) টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী (২) খোটা দানকারী এবং (৩) মিথ্যা শপথের মাধ্যমে মাল বিক্রয়কারী’ (মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫)।
প্রশ্ন (৪৪) : শ্বশুর পক্ষের কেউ বরকে কিছু হাদিয়া দিতে পারবে কি?
উত্তর : পরস্পরে হাদিয়া আদান-প্রদান মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া দাও এবং মহববত বৃদ্ধি কর’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৪; মিশকাত হা/৪৬৯৩)। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফাতেমাকে একটা মোটা কাপড়ের চাদর, একটা মশক ও একটা ইযখিরের আঁশভরা চামড়ার বালিশ উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন (আহমাদ হা/৬৪৩; নাসাঈ হা/৩৩৮৪)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, দু’টি যাঁতা, একটি চামড়ার পানপাত্র এবং দু’টি কলস (আহমাদ হা/৮১৯; ৮৩৮)। সাথে একটি দড়ির খাটও (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৯৪৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৫২১০)। তবে অবশ্যই জামাইয়ের আত্মসম্মানের দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোন বিষয় তার পৌরুষে আঘাতের কারণ না হয়। অপরদিকে বিবাহের পূর্বে বা পরে জামাইয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি বা মেয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে শ্বশুর পক্ষের নিকট কোন কিছু দাবী করা বা শর্ত করে নেওয়া নিঃসন্দেহে যৌতুক, যা হারাম।
প্রশ্ন (৪৫) : একই পরিবারের মধ্যে একে-অপরের নানা কর্মকান্ড নিয়ে সংশোধনের নিয়তে পিছনে নিন্দা করলে, তা গীবতের শামিল হবে কি? এর জন্য গোনাহগার হ’তে হবে কি?
উত্তর : গীবত বা পরনিন্দা হারাম। তবে পারিবারিক বিষয় মীমাংসার জন্য নিজেদের মধ্যে দোষ বলা বা সমালোচনা করা জায়েয (নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন ৪১২ পৃ.)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমল সম্পর্কে বলব না, যার ছওয়াবের মর্যাদা ছিয়াম, ছাদাক্বা ও ছালাতের চেয়েও বেশি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা বললাম, সেটি কি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, সে আমল হ’ল, দু’জন মুসলিমের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করা। আর যে ব্যক্তি ঝগড়া ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে, সে যেন দ্বীন মুন্ডনকারী’ (আবুদাউদ হা/৪৯১৯; মিশকাত হা/৫০৩৮; ছহীহাহ হা/২৬৩৯)। অতএব কেবল মীমাংসার উদ্দেশ্যে বা সংশোধনের নিয়তে এরূপ করা যাবে।
প্রশ্ন (৪৬) : ছালাত শেষে রুকূ-সিজদা কমবেশী হয়েছে কি-না বা তাশাহহুদ পাঠ করা হয়েছে কি-না এরূপ সন্দেহ হ’লে করণীয় কি?
উত্তর : সন্দেহের ক্ষেত্রে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি এটি কোন রুকনের ক্ষেত্রে হয় যেমন রুকূ, সিজদা বা শেষ বৈঠকের তাশাহহুদ, তাহ’লে সে রাক‘আত পুনরায় আদায় করতে হবে এবং শেষ বৈঠকে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। যদি কোন ওয়াজিবের ক্ষেত্রে সন্দেহ হয়, যেমন প্রথম বৈঠকের তাশাহহুদ, তা‘দীলে আরকান ইত্যাদি, তাহ’লে শেষ বৈঠকে অবশ্যই সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর কোন সুন্নাত আমলের ক্ষেত্রে সন্দেহ হ’লে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরানো মুস্তাহাব (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১১৫-১৮; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৪)।
প্রশ্ন (৪৭) : জনৈক আলেম বলেছেন, ছালাতের মধ্যে অর্থ বুঝে সবকিছু না পড়লে ছালাত হবে না এবং ১০টি নেকীও অর্জিত হবে না। এটা সঠিক কি?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। ছালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য বা তেলাওয়াতে ছওয়াব পাওয়ার জন্য অর্থ বুঝা শর্ত নয়। তবে দ্বীনকে সঠিকভাবে বুঝা এবং ছালাতে পূর্ণ মনোযোগ আনার জন্য পঠিত সূরা এবং দো‘আগুলির অর্থ সাধ্যমত জানার চেষ্টা করা কর্তব্য (ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ ১/১৮৭; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৫/২)।
প্রশ্ন (৪৮) : পূজার সময় একদল হিন্দু দোকানে দোকানে চাঁদা চায়। সামাজিকতা রক্ষার্থে অনেক সময় চাঁদা দিতে হয়। এতে দানকারী পাপের ভাগিদার হবে কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে দাতাকে পাপের ভাগিদার হ’তে হবে। কারণ এটি সরাসরি শিরকের কাজে সহযোগিতা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘন কাজে সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)। অতএব এমন কাজে চাঁদা প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৪৯) : আমি অল্প বেতনে সরকারী চাকুরী করি এবং পরিবার নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করি। পিতা-মাতা অনেক সহায়-সম্পত্তির মালিক। কিন্তু আমি তাদের কোন আর্থিক সহযোগিতা করতে পারি না বলে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট। আমার বোনদেরও বিবাহ হয়ে গেছে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য আমাকে চাপ দেন। কিন্ত আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর: ওলামায়ে কেরাম পিতা-মাতা কর্তৃক সন্তানের সম্পদ গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করেছেন। যেমন- ১. পিতা-মাতাকে দরিদ্র হ’তে হবে, যাদের কোন সম্পদ নেই এবং কোন উপার্জনও নেই। ২. পিতা-মাতার প্রতি খরচ করার জন্য সন্তানের সামর্থ্য থাকতে হবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) দু’টি শর্ত উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রথমতঃ সম্পদ নেওয়ার কারণে সন্তানের প্রতি যাতে যুলুম না হয়, এর কারণে সে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং পিতা এমন কিছু নিবেন না যা সন্তানের বিশেষ প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয়তঃ পিতা এক সন্তানের সম্পদ নিয়ে আরেক সন্তানকে দিবেন না’ (আল-মুগনী ৬/৬২)। কোন কোন বিদ্বান পিতা কর্তৃক সন্তানের সম্পদ গ্রহণের জন্য ছয়টি শর্ত আরোপ করেছেন। ১. পিতা এমন সম্পদ গ্রহণ করবেন যাতে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা এমন সম্পদ নিবেন যা সন্তানের প্রয়োজন নেই। ২. অন্য সন্তানকে না দেওয়া। ৩. তাদের যে কেউ মৃত্যুশয্যায় না থাকা। ৪. সন্তান মুসলিম ও পিতা কাফির না হওয়া। ৫. সম্পদ মওজূদ থাকা। ৬. মালিকানার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা’ (মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলে শায়খ, ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ৯/২২১)। এক্ষণে উপরোক্ত শর্তগুলো মওজূদ থাকলে পিতার আনুগত্য করে তাদের আর্থিক সহায়তা করবে, অন্যথায় অপারগতা প্রকাশ করে পিতা-মাতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে।
প্রশ্ন (৫০) : ছেলে মারা যাওয়ায় নমীনী হিসাবে কোম্পানী প্রদত্ত পুরো অর্থ তার পিতা পেয়েছেন। আরো কিছু অর্থ আছে যা তাদেরকে প্রদান করা হবে। ছেলে পিতা-মাতা সহ ১ ছেলে, স্ত্রী এবং ছোট ভাই রেখে গেছে। এক্ষণে উক্ত সম্পদ বাকি সদস্যদের মধ্যে কিভাবে বণ্টন করতে হবে?
উত্তর : নমীনী সাময়িকভাবে মৃতের সম্পত্তি প্রাপ্তির একটি মাধ্যম মাত্র। এটি ইসলামী উত্তরাধিকারের কোন পদ্ধতি নয়। এজন্য মাইয়েতের যাবতীয় সম্পত্তি শারঈ পদ্ধতিতে বণ্টন করতে হবে। এক্ষণে মোট সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ করে পিতা-মাতা পাবেন। স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ পাবে এবং বাকী সম্পত্তি আছাবা হিসাবে মাইয়েতের ছেলে পেয়ে যাবে। পিতা-মাতা জীবিত থাকায় মাইয়েতের ভাই কোন সম্পত্তি পাবে না (নিসা ৪/১০-১১; মুয়াত্ত্বা মালেক হা/১৮৫৪; আল-মুনতাক্বা ৬/২২৭)।
মন্তব্য করুন