প্রবন্ধ

যাদুর প্রকারভেদ

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

লেখক: ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী

ইমাম রাযী (রাহেমাহুল্লাহ) নিকট যাদুর প্রকারভেদ

ইমাম রাযী (রাহেমাহুল্লাহ) যাদুকে সাত ভাগে বিভক্ত করেছেন।

(১) তারকা পূজারীদের যাদু: এরা সাতটি ঘূর্ণায়মান তারকার পূজা করত এবং তাদের বিশ্বাস ছিল যে, এই তারকাসমূহ বিশ্বকে পরিচালনাকারী এবং এগুলোর নির্দেশেই মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গল হয়ে থাকে। আর এগুলোর কাছে আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে প্রেরণ করেছেন।

 কল্পনা ও ধারণা দ্বারা মানুষ খুবই প্রভাবিত; কেননা মানুষের স্থলে রশি অথবা বাশের উপর যত সহজে চলা সম্ভব তা গভীর সমুদ্রে অথবা বিপদজনক কিছুর উপরে বা ঝুলন্ত বাশের উপর চলা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেনঃ যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত যে, নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়া রুগীর কোন লাল জিনিস দেখা উচিত নয়। এটি শুধু এজন্য যে মানুষের প্রকৃতিই হলো সীমাহীন ধারণাপ্ৰবন।

আরোও পড়ুনকুরআন ও হাদীসের আলোকে যাদু পর্ব: ১

(৩) জ্বিনেরসহায়তায়যাদু: জিন দু’প্রকার: (১) মুমিন ও (২) কাফির। কাফের জিনদেরকেই শয়তান বলা হয় । ইমাম রাযী বলেনঃ যাদুকররা শয়তানদের মাধ্যমে যাদু ক্রিয়া পৌছিয়ে থাকে।

(৪) ভেল্কিবাজী ও নজর বন্দী: এটি এমন কলাকৌশল যার ফলে মানুষের দৃষ্টি ও মনযোগ সবদিক হতে আকর্ষণ করে কোন নির্ধারিত ক্ষেত্রে গন্ডিভূত করে তাকে আহমক বানিয়ে দেয়।

(৫) চমকপ্রদ কর্ম প্রদর্শনমূলক: এটি কোন যন্ত্র সেট করে দেখানো হয়। যেমনঃ কোন অশ্বারোহীর নিকট একটি শিঙ্গা রয়েছে যা মাঝে মাঝে এমনি এমনি বেজে ওঠে বা যেমন এ্যালারম ঘড়ি নির্দিষ্ট সময়ে বেজে ওঠে। এমনটি কেউ অন্যভাবে সাজিয়ে যাদু প্রকাশ করে। তিনি বলেনঃ এটি প্রকৃতপক্ষে বাস্তব বিষয়, যাদু নয়, যে এর বিদ্যা অর্জন করবে সে তা করতে সক্ষম।

আরোও পড়ুনযাদু কি? | বান মারা, জ্বীন চালান (Magic)

(৬) কোন বিশেষ দ্রব্য ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে: যেমন খাদ্যতে বা তৈলে মিশিয়ে। তিনি বলেনঃ জেনে রাখুন বিশেষ দ্রব্যের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। যেমনঃ ম্যাগনেট।

(৭) যাদুকরমানুষেরঅস্তরেরবিশ্বাসকেজয়করেযাদুকরেথাকে: যেমন সে দাবী করল যে, সে ইসমে আজম জানে এবং জ্বিন তার অনুগত তার এই সব কথার দ্বারা যখন কোন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করা হয় এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্য করতে না পারে। তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তখন সে তার বুদ্ধিমত্তা হারিয়ে ফেলে সে মুহুর্তে যাদুকরের দ্বারা সম্ভব যা চায় তাই করতে পারে।

একজনের কথা অন্যজনের নিকটে গোপন, সূক্ষ ও আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে লাগান যা মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচারিত। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৮)

ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ “ইমাম রাযী উল্লেখিত অনেক প্রকারই যাদু বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কেননা সবগুলির মধ্যেই সূক্ষতা পাওয়া যায়। আর যাদুর আভিধানিক অর্থ হলো যার কারণ অতি সূক্ষ ও গোপনীয়।” (ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৭)

আরোও পড়ুনক্রিসমাস ট্রি সাজানো-Christmas Tree

ইমাম রাগেব (রাহেমাহুল্লাহ)-এর নিকট যাদুর প্রকার

ইমাম রাগেব (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুর ব্যবহার বিভিন্ন অর্থে হয়ে থাকেঃ

(১) প্রত্যেক ঐ জিনিস যা অতি সূক্ষ ও গোপনীয় হয়ে থাকে। তাইতো বলা হয় سحرت الصبى অর্থাৎ আমি বাচ্চাটিকে প্রতারিত করেছি ও আকৃষ্ট করেছি। অতএব যেই কোন কিছুকে আকৃষ্ট করতে পারে সেই তাকে যেন যাদু করল। এরই অন্তর্ভুক্ত হলো কবিদের কবিতা, অন্তর কেড়ে নেয়ার জন্য। অনুরূপ আল্লাহর বাণীঃ “আমাদের দৃষ্টির বিভ্ৰাট ঘটানো হয়েছে না বরং আমরা যাদুগ্ৰস্ত হয়ে পড়েছি।” [সূরা হিজরঃ ১৫]

আরোও পড়ুনবড় দিন বা ক্রিসমাস (Christmas) কি?

এরই অন্তর্ভুক্ত হলো হাদীসে বর্ণিতঃ إن من البيان لسحرا নিশ্চয় কিছু বক্তব্য রয়েছে যাদুময়ী ।

(২) যা প্রতারণার মাধ্যমে হয়ে থাকে, যার কোন বাস্তবতা নেই, যেমনঃ ভেল্কিবাজদের কর্ম-কান্ড, হাতের প্যাচের সূক্ষতার মাধ্যমে মানুষকে নজর বন্দী করে ফেলে।

(৩) শয়তানের সাহায্যে তার নৈকট্য গ্রহণ করতঃ যা কিছু অর্জন হয় এর প্রতিই আল্লাহর বাণীর ইঙ্গিতঃ  “কিন্তু শয়তানরাই কুফুরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিতো।” [সূরা বাকারাঃ ১০২]

(৪) তারকা পূজার মাধ্যমে জ্যোতিষীদের যাদু। (ফাতহুল বারী হতে গৃহীতঃ ১০/২২২ ও রাগেব ইস্পাহানীর আল-মুফরাদাত এ- س-ح-ر দ্রষ্টব্য)

যাদুর প্রকারভেদ কেন্দ্রিক একটি প্রতিপাদন

ইমাম রাযী, রাগেব ও অন্যান্য মনীষীদের যাদুবিদ্যার প্রকারভেদ সম্পর্কে গবেষণা ও প্রতিপাদনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা যাদুর মধ্যে এমন কিছুও অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়। তার কারণ হলো তারা তা যাদুর শাব্দিক/আভিধানিক অর্থের ভিত্তিতে করেছেন। অর্থাৎ যার কারণ সূক্ষ ও গোপনীয়। এ থেকে তারা আশ্চর্যজনক সৃষ্টি বা কিছু হাতের মার-প্যাচে করা হয়ে থাকে বা মানুষের মাঝে একে অপরের গোপনে যা লাগিয়ে থাকে এ ধরণের অনেক কিছুকে যাদুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে যার কারণ সূক্ষ, অস্পষ্ট ও গোপনীয়।

আরোও পড়ুনঅনর্থক বিষয়ে নাক গলাবেন না

উল্লেখিত বিষয়গুলি আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়; বরং আমাদের এখানে আলোচ্য বিষয় ও লক্ষ্য কেন্দ্রিকভূত হবে প্রকৃত যাদুর মধ্যে, যে যাদুর ক্ষেত্রে যাদুকর সাধারণত ভরসা ও নির্ভর করে থাকে জ্বিন, শয়তানের উপর ।

আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য হলো, যা ইমাম রাযী ও রাগেব বর্ণনা করেছেন যার নাম দেয়া হয় তারকার আধ্যাত্মিকতা বা কীর্তি; কিন্তু এক্ষেত্রেও বাস্তব কথা হলো, তারকা আল্লাহর এক সৃষ্টি, তার হুকুমের অধীন অতএব তারকার কোন সৃষ্টির উপর আধ্যাত্মিকতা বা নিজস্ব কোন প্রভাব নেই।

কেউ যদি বলেঃ আমরা তো প্রত্যক্ষ করে থাকি যে, কতিপয় যাদুকর যারা তাদের ধারণা মতে তারকার জন্য কিছু নাম উচ্চারণ করে তন্ত্রমন্ত্র পড়ে বা তার দিকে ইশারা-ইঙ্গিত করে ও সম্বোধন করে। যার ফলে দর্শকের সামনে যাদুক্রিয়াও বাস্তবরূপ নেয়?

তার উত্তরঃ যদি ব্যাপারটি এমনই হয় তবে এটি প্রকৃতপক্ষে তারকার প্রভাবে নয়; বরং তা শয়তানের প্রভাবে যাদুকরকে পথভ্রষ্ট করা ও ফিতনায় পতিত করার জন্যই হয়ে থাকে। যেমন বর্ণিত আছে যে, যখন তারা পাথরের মূর্তিকে সম্বোধন করত, তখন শয়তান সে মূর্তির ভেতর থেকে স্বশব্দে উত্তর দিত। আর তারা মনে করে যে, তা তাদের মা’বুদ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। তাই মানুষকে পথভ্রষ্ট করার বহুপস্থা রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানুষ ও জ্বিন শয়তানের অনিষ্ট হতে রক্ষা করুন।

আমীন!!

উৎস (বই) : যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button