প্রবন্ধ

ইমাম ইমাম মেহদীর আগমন

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

ইমাম ইমাম মেহদীর আগমন

ইমাম ইমাম মেহদীর আগমন

সহীহ হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমন করে এই উম্মতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করবেন । উম্মাতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে। ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শক্ররা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যান বিরাজ করবে।

ইমাম মাহদীর পরিচয়ঃ

তাঁর নাম হবে আমাদের নবী (ছাঃ) এর নামের মতই এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী (ছাঃ) এর পিতার নামের মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ) এর বংশ থেকে। ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল ফাতেমী আল হাসানী।(নিহায়া. অধ্যায়ঃ আল ফিতান ওয়াল মালাহিম।)

ইমাম মাহদীর আগমনের স্থানঃ

তিনি পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তবে পূর্ব দিক বলতে মদীনা মনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছ। নবী (ছাঃ) বলেনঃ

“তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যপক হত্যাকান্ড চালাবে।

হদীছের বর্ননাকারী বলেনঃ

এরপর নবী (ছাঃ) এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ননা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়াআত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী”।

(ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী বলেনঃ ‘আল্লাহর খলীফা’ কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ।)

ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ “ উল্লেখিত হাদীছে যে ধন ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন ভান্ডার। তিনজন খলীফার পু্‌এ তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। সর্বশেষ আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন। শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্নিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য। কা’বা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে”।

মাহদী আগমণের দলীলসমূহঃ

ইমাম মাহদীর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছ। কোন কোন হাদীছে প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুনাগুণ উল্লেখিত হয়েছ। তাঁর আগমণ সত্য হওয়ার জন্য এ সমস্ত হাদীছই যথেষ্ট।

) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (ছাঃ) হতে বর্ননা করেন, আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন,গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে ,মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে।”।

(মুস্তাতরাকুল হাকীম। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছিটিকে সহীহ বলেছেন সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং ৭১১)

২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী (ছাঃ) বলেনঃ আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি । মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম নির্যাতন দূর করে ন্যায় ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আকাশ যমিনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন(মুসনাদে আহমাদ। ইমাম হায়জামী বলেনঃ হাদীছের বর্ননাকারীগন নির্ভরযোগ্য। মাজমাউ য্ যাওয়ায়েদ(৭/৩১৩-৩১৪)

৩) নবী (ছাঃ) বলেনঃ মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী হতে জুলুম নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায় ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন

৪) উম্মে সালাম (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমাননদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের উমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন”।

[আল মানারুল মুনীফ (পৃষ্ঠা নং-১৪৭-১৪৮) ইমাম ইবনুল কায়্যুম বলেনঃ হাদীসের সনদ ভাল।]

৬) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেনঃ

ঈসা ইবনে মারইয়াম যেই ইমামের পিছনে নামায পড়বেন তিনি হবেন আমাদের মধ্যে হতে। (আবু নুয়াইম আখবারুল মাহদী নামক গ্রন্থে হাদীছটি বর্ননা করেছেন। (সহীহুল জামে আস-সাগীর, হাদীছ নং- ৫৭৯৬।)

৭) নবী (ছাঃ) বলেন ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে না যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরুপ ( মুসনাদে আহমাদ) অর্থাৎ তাঁর নাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।

৮) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী (ছাঃ) বলেছেনঃকাবা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরন করা হবে। সৈন্যরা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালমা বলেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে

( মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)

৯) হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেনঃ অচিরেই এই ঘরের অর্থা কাবা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহন করবে। শত্রু র সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্ততি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে । সৈন্যরা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)

১০) আয়েশা (রাঃ) বলেনঃএকদা রাসূল (ছাঃ) ঘুমের ঘোরেএলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কাবার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী (ছাঃ) বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তাআলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন”।

(মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)

তাদেরকে নিয়তের উপর পুনরুতথিত করার অর্থ তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা নিজেদের ভ্রান্ত জেনেও উক্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হবে তারা জাহান্নামী হবে। আর যাদেরকে বাধ্য করে আনা হবে তাদের কোন অপরাধ হবেনা। এমনিভাবে পথিক ও পার্শ্ববর্তী স্থানের লোকেরাও উক্ত ভূমিধ্বস থেকে রেহাই পাবেনা। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোক নিজ নিজ আমল নিয়ে পুনরুত্থিত হবে। উপরের তিনটি হাদীছ থেকে জানা গেল যেই লোকটি কা’বার প্রান্তে আশ্রয় গ্রহন করবেন তিনি হবেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভক্ত । তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হবেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ভূমিধসের মাধ্যমে ধ্বংস করবেন।

বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম মাহদী সম্পর্কিত কিছু হাদীছঃ

১) নবী (ছাঃ) বলেনঃ “সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন”। অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামাতে শরীক হয়ে (আঃ) তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।

(বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীসুল আম্বীয়া,মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)

২) জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল (ছাঃ) কে বলত শুনেছি. “ আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলানদের আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর মধ্যে হতেই । এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন”।

(মিসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।)

৩) নবী (ছাঃ ) বলেনঃ “আখেরী যামানায় আমারর উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণীতভাবে ধন সম্পদ বিতরণ করবে”। ( মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান )

মাহদী আগমনের ব্যবপারে কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্যঃ

ক) হাফেজ আবুল হাসান আল-আবেরী (রঃ) বলেনঃ “ মাহদী সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী (ছাঃ) থেকে মতাওয়াতির হিসেবে বর্ণিত হয়েছ। তিনি আহলে বায়ত তথা নবী )ছাঃ) এর বংশধরের অন্তর্ভূক্ত হবেন। সাত বছর রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্বকালে পৃথিবীর ন্যায় ইনসাফে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাঁর রাজত্বকালে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আগমণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। ঈসা (আঃ) তার পিছে নামায পড়বেন।

খ) ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ “যতদূর জানা যায় মাহদীর ব্যাপারে ৫০টি মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সহীহ, হাসান ও সামান্য ত্রু টি বিশিষ্ট হদীছ, যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারনে ত্রু টিমুক্ত হয়ে গেছে। সুতরায় বিনা সন্দেহে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির”।

গ) শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রঃ) বলেনঃ মাহদীর বিষয়টি অতি সুস্পষ্ট। এব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। তাঁর আগমন সত্য। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্ল্হ আল হাসানী আল ফাতেমী। আখেরী যামানায় তিন আগমণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। অন্যায় অবিচার প্রতিহত করবেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও কল্যানের ঝান্ডা বলুন্দ করবেন। যে ব্যক্তি আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আগমণকে অস্বীকার করবে তার কথায় কর্ণপাত করা যাবেনা।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button