শয়তান

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়-৩

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

লেখক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান | সম্পাদনা: আবু শুআইব মুহাম্মদ সিদ্দিক

পর্ব ১ । পর্ব ২

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়-৩

১০) জিনের আছরের চিকিৎসা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে জিনের আছর করা রোগীর চিকিৎসা করেছেন। হাদীসে এসেছে: ইয়ালা ইবনে মুররা বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক বার আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে এক সফরে গেলাম তখন আমরা এক স্থানে অবস্থান করলাম তখন একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখলাম। এক মহিলা নিজের একটি বাচ্চা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হল। বাচ্চাটি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহর দুশমন বের হয়ে যা! আমি আল্লাহর রাসূল। তিনি বলেন, এ কথা বলার পর বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে গেল। যখন আমরা সে স্থান থেকে ফিরে আসছিলাম, তখন বাচ্চাটির মা দুটো ভেড়া, কিছু ঘি ও ছানা নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে ইয়ালা! ভেড়া দুটোর মধ্যে একটি রেখে দাও। অন্যটি মহিলাটিকে ফেরত দাও। আর ঘি ও ছানা রেখে দাও। ইয়ালা বলেন, আমি তাই করলাম। [বর্ণনায় : বুখারী, দালায়েলুন নবুওয়াহ]

হাদীসটি থেকে আমরা জানতে পারলাম:

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাচ্চাটিকে জিন মুক্ত করেছেন। আমি আল্লাহর রাসূল এ কথা শুনেই জিন চলে গেছে।
(২) বাচ্চাটির মা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হাদীয়া দিলেন। কেহ উপকার করলে তাকে হাদীয়া দেয়া যায়। এমনিভাবে জিন মুক্ত করার তদবীর করলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়া যায়।
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীয়ার কিছু অংশ ফেরত দিলেন। হতে পারে মহিলাটি নিজ সামর্থের চেয়ে বেশী দিয়েছে। হয়ত এ কারণে তাদের কষ্ট হবে, এ জন্য রাহমাতুললিল আলামীন হাদীয়ার কিছু অংশ ফেরত দিলেন।

জিনের রোগীর কাছে কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াত তেলাওয়াত করা

আল কুরআন পুরোটাই শিফা বা আরোগ্য লাভের মাধ্যম। আল কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন-কে শিফা বলেছেন। আল কুরআন শারিরিক ব্যাধির চিকিৎসা নয়, বরং আধ্যাত্নিক ব্যাধির চিকিৎসা এ ধরনের খন্ডিত ব্যাখ্যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আল-কুরআনকে আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে শিফা বলেছেন। তিনি বা তাঁর রাসূল কখনো বলেননি যে, শিফা বা আরোগ্য বলতে আধ্যাত্নিক রোগের শিফা বুঝানো হয়েছে। তাই যারা বলবেন, আল কুরআনকে শারিরিক ব্যাধির জন্য শিফা বলা যাবে না তারা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেননি। যাই হোক জিনে ধরা রোগীর কাছে আল কুরআনের বিশেষ বিশেষ কিছু আয়াত তেলাওয়াত করা হলে জিন ছেড়ে যায় আর রোগী ভাল হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. কর্তৃক আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে তেত্রিশটি আয়াতের কথা বর্ণিত আছে। যদিও হাদীসের সনদটি সহীহ নয় কিন্তু আল কুরআনের আয়াতের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি নিজেও একাধিকবার দেখেছি সুন্নাতের পাবন্দ একজন আলেমের কাছে জিনে ধরা রোগী নিয়ে আসা হল। তিনি তেত্রিশটি আয়াত পাঠ করে তাকে শুনালে জিন চলে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এ রকম দৃশ্য বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি। কুরআনের বরকত ও প্রভাব কত যে ব্যাপক তা কি আমরা সকলে অনুধাবন করতে পারি?

আর সে তেত্রিশটি আয়াত হল: সূরা ফাতেহা পর, সূরা আল বাকারার ১ থেকে ৪ আয়াত, সূরা আল বাকারার ২৫৫ থেকে ২৫৭ আয়াত, যার মধ্যে আয়াতুল কুরসী রয়েছে। সূরা আল বাকারার ২৮৪ থেকে ২৮৬ আয়াত। সূরা আল আরাফের ৫৪ থেকে ৫৬ আয়াত। সূরা আল ইসরার (বনী ইসরাইল) ১১০ থেকে ১১১ আয়াত। সূরা আস সাফফাতের ১ আয়াত থেকে ১১ নং আয়াত। সূরা আর রাহমানের ৩৩ আয়াত থেকে ৩৫ নং আয়াত। সূরা জিন এর ১ নং আয়াত থেকে ৪ নং আয়াত। এভাবে তেত্রিশটি আয়াত হয়।
কোন কোন বর্ণনায় এর সাথে সূরা হাশরের ২১ নং আয়াত থেকে ২৪ নং আয়াত পাঠ করার কথা এসেছে। আবার সূরা ইখলাছ, সূরা কাফেরূন, সূরা আল ফালাক ও সূরা আন নাছ পাঠ করার কথাও এসেছে।

তবে মূল কথা হল তেত্রিশ আয়াত পাঠ করতে হবে এমন কোন বিধান নেই। আগেই বলেছি এ সংক্রান্ত হাদীসটির সনদ সহীহ বলে প্রমাণিত নয়। বরং এ আয়াতগুলো ও এর সাথে অন্যান্য যে সকল আয়াতের কথা আলোচনা হয়েছে এগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে খূবই অর্থবহ, তৎপর্যপূর্ণ, বরকতময়। আর অভিজ্ঞতায় এর কার্যকারিতা প্রমাণিত।

যেমন সূরা ফাতেহার কথা সকলে কাছে সুবিদিত যে তার এক নাম হল সূরা শিফা। আয়াতুল কুরসীর ফজিলত সম্পর্কে সকলের জানা। সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহের ফজিলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছে। সূরা সাফফাত পাঠে জিন শয়তান ভয় পেয়ে যায় বলে হাদীসে এসেছে। সূরা ফালাক ও সূরা নাছ সকল প্রকার যাদু টোনা ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ইত্যাদি।

তাই জিনে ধরা রোগীর কাছে এ সকল আয়াত তেলাওয়াত করা হলে জিন ছেড়ে যায় ও রোগী সুস্থ হয় বলে অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত। এবং এটি মহান আল্লাহর কালামের একটি বরকত ও শিফা।
জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসার জন্য তাবীজ-কবচ ব্যবহার, লোহা পড়া, ঘর বন্ধক দেয়া ইত্যাদি তদবীর করা ঠিক নয়। তবে কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত দুআ-জিকির দিয়ে ঝাড়-ফুঁক, তেল পড়া, পানি পড়া ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতি আছে।

১১) জিনের অধিকার রক্ষায় আমাদের করণীয়

হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিনদের ব্যাপারে তোমাদের ভাই শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মুসলিম জিনেরা হল আমাদের ভাই। তাদের অধিকার রক্ষায় যত্নবান হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে –

আলকামা বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, জিনের রাতে আপনাদের মধ্যে কি কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু ঘটনা হল, আমরা এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তাকে আমরা পেলাম না। আমরা তাকে বিভিন্ন ঘাটি ও পাহাড়ে খোঁজ করতে থাকলাম। আমরা বলতে লাগলাম তিনি উধাও হয়ে গেছেন অথবা কেউ তাকে অপহরণ করেছে। আসলে সে রাতটি আমরা অত্যন্ত খারাপভাবে কাটিয়েছি। যখন সকাল হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেরা পর্বতের দিক দিয়ে আমাদের কাছে হাজির হলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে হারিয়েছিলাম।

অনেক খোঁজা-খোঁজি করেছি। আপনাকে না পেয়ে আমরা খুব দু:চিন্তায় (খুব খারাপ) রাত কাটিয়েছি। তিনি বললেন, জিনদের মধ্য থেকে একজন আহবানকারী এসেছিল আমার কাছে। আমি তার সাথে গেলাম। আমি তাদের কুরআন পাঠ করে শুনালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে সে স্থানের দিকে চললেন। তিনি আমাদের তাদের পদচিহ্নগুলো দেখালেন। তাদের আগুনের আলামতগুলোও দেখালেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তাদের খাদ্য-খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তিনি তাদের বললেন, তোমাদের খাবার হল সে সকল জন্তু জানোয়ারে হাড্ডি যা আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করা হয়েছে। এর মধ্যে যা তোমাদের নাগালে আসে তা তোমরা খাবে। এটা তোমাদের জন্য গোশ্‌ত বলে গণ্য হবে। আর তোমাদের পালিত জানোয়ারের গোবরও তোমাদের খাদ্য।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন, তোমরা এগুলো দিয়ে কখনো ইসতেনজা (শৌচ কর্মে ব্যবহার) করবে না। কেননা এটা তোমাদের ভাইদের (জিনদের) খাদ্য।

হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:

(১) জিনদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত ঘটনার সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াত আমরা উল্লেখ করতে পারি।
আর যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল, তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। [সূরা আল আহকাফ, আয়াত ২৯]
(২) সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কত ভালোবাসতেন। তাদের মন্তব্য দ্বারাই বুঝা যায় যে, তাকে না পেয়ে সে দিন তারা জীবনের সবচেয়ে খারাপ রাত অতিবাহিত করেছে।
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রা. কে শিক্ষা দিতে বা তথ্য জানাতে কোন ধরনের কার্পণ্য বা শিথিলতা করেননি। তাঁর বক্তব্যই তাদের জন্য যথেষ্ঠ ছিল। তা সত্বেও তিনি তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছেন। তাদের আলামতগুলো দেখিয়েছেন।
(৪) এ হাদীস থেকে জিনদের দুটো খাদ্যের বিষয় জানতে পারলাম। একটি হল হাড্ডি অন্যটি হল গোবর।
(৫) তাদের খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুটো বস্তুকে শৌচকর্মে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। এটা জিনদের অধিকার রক্ষার একটি বিষয় হিসাবে গণ্য হলো।
(৬) জিনদেরকে আমাদের ভাই বলে তাদের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই জিন মানেই আমাদের শত্রু নয়। তাদের মধ্যে যারা মানুষকে কষ্ট দেয় বা বিভ্রান্ত করে তারাই মানুষের শত্রু ।

কয়লা কি জিনদের খাদ্য?

অনেক ফিকাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়লা দিয়ে ইস্তেন্জা (শৌচ কর্ম) করা যাবে না। কারণ কয়লা হল জিনদের খাদ্য।
এ প্রসঙ্গে অবশ্য একটি হাদীস এসেছে। হাদীসটি হল: জিনদের একটি প্রতিনিধ দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসল। তারা বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মত হাড্ডি, গোবর ও কয়লা দ্বারা ইসতেন্‌জা করে থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা এ গুলোকে আমাদের জন্য খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এ সকল বস্তু দিয়ে ইসতেন্‌জা করতে নিষেধ করেছেন। [বর্ণনায় : আবু দাউদ]
সনদ সূত্রের দিকে দিয়ে হাদীসের মান হল : ইমাম নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল মাজমু শারহুল মুহাজ্জাব গ্রন্থে লিখেন, এ হাদীসটি আবু দাউদ, দারে কুতনী ও বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ হাদীসটিকে যয়ীফ (দুর্বল সুত্র) বলেননি। কিন্তু দারে কুতনী ও বায়হাকী হাদীসটি দুর্বল সুত্রের বলে অভিমত দিয়েছেন।

হাদীসে বর্ণিত হামামা শব্দের অর্থ হল কয়লা। আমাদের সাথীরা ফিকাহ শাস্ত্রে এ রকম লিখেছেন। আর অভিধানবিদরাও এ অর্থ করেছেন।
ইমাম আল খাত্তাবী রহ. বলেন, আল হামাম শব্দের অর্থ আল ফাহাম বা কয়লা। যা সৃষ্টি হয় কাঠ, হাড্ডি ইত্যাদি পোড়ালে। এ দিয়ে ইস্তেনজা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এটাকে জিনদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এটা অপবিত্র করা জায়েজ নয়।
জিন যেমন মুসলমান আছে তেমনি আছে কাফের। এ ব্যাপারে জিনদের বক্তব্য আল্লাহ উল্লেখ করেছেন এভাবে: আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছে মুসলিম এবং আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সীমালংঘনকারী। কাজেই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারাই সঠিক পথ বেছে নিয়েছে। [সূরা আল জিন, আয়াত ১৪]

কাজেই মুসলিম জিনেরা সে সকল অধিকার পাবে যা একজন মুসলিম মানুষ ইসলামের কারণে পেয়ে থাকে ।

জিনদের কুরআন তেলাওয়াত শোনা ও তার উত্তর প্রদান:

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি জিনদের সাথে সাক্ষাতের রাতে তাদের সূরা আর রাহমান পাঠ করে শোনালাম। তারা তেলাওয়াত শুনে তোমাদের চেয়ে উত্তম জওয়াব দিত। যখন এ আয়াত পাঠ করতাম সুতরাং তোমাদের রবের কোন্‌ নিআমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? তখন তারা এর উত্তরে বলত, হে আমাদের রব! আমরা আপনার কোন নিআমতকে অস্বীকার করি না। সকল প্রশংসা তো আপনারই।

হাদীসটি ইমাম তিরমিজী বর্ণনা করেছেন। আলবানী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন আস সিলসিলাতুস সহীহা ১৮৩/৫
এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :

(১) জিনদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করেছেন তার মধ্যে সূরা আর রাহমানও ছিল।
(২) এ জিন সাহাবীরা সূরা আর রাহমান শুনে আল্লাহ তাআলার প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছে তা মানুষ সাহাবীদের চেয়ে সুন্দর উত্তর ছিল বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন।
(৩) কোন কোন ক্ষেত্রে জিনেরা মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেও তারা মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। ক্ষেত্র বিশেষে কেহ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলে সর্বক্ষেত্রে তার শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়াটা জরূরী নয়।
(৪) আল কুরআন পাঠ করে বা তার পাঠ শুনে সে মোতাবেক উত্তর দেয়া সুন্নাত। যেমন আলোচ্য হাদীসে দেখা গেল। আল্লাহ তাআলার কোন প্রশ্ন আসলে তার উত্তর সাথে সাথে প্রদান করা, এমনিভাবে যখন জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের কথা আসে তখন তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আর যখন জান্নাত ও জান্নাতীদের কথা আসে তখন জান্নাত কামনা করা ইত্যাদি হল আল্লাহ তাআলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও আল কুরআন তেলাওয়াতের আদব।

পর্ব ১ । পর্ব ২

সমাপ্ত

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button