প্রবন্ধ

আবূ যর (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণ

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

আবূ যর (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণ

আবু জামরাহ (রাঃ) হতে  বর্ণিত।তিনি বলেন, আব্দুললাহ ইবনু আব্বাস (রা:) আমাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকেআবূ যর (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, আবূ যর (রা:) বলেছেন, আমি গিফার গোত্রের একজন মানুষ।আমরা জানতে পারলাম যে, মক্কায় এক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নবী বলেদাবী করছেন। আমি আমার ভাইকে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সাথেআলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ-খবর  নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐলোকটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফিরে আসল।

অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি খবর নিয়ে এলে?সে বলল, আল্লাহ্‌র কসম! আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশদেন এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার খবরে আমি সন্তুষ্ট  হতেপারলাম না। অতঃপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কার দিকেরওয়ানা  হলাম। মক্কায় পৌঁছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এমন যে, আমি তাকে চিনিনা এবং কারো নিকট জিজ্ঞেস করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানিপান করে মসজিদে থাকতে লাগলাম।

একদিন সন্ধ্যা বেলা আলী (রা:) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে আমার প্রতি ইশারাকরে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী।আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমারসঙ্গে আমার বাড়িতে চল। আবূ যর বলেন, অতঃপর আমি তার সাথে তার বাড়ি চললাম।পথে তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি আর আমিও ইচ্ছা  করে কোন কিছুবলিনি। তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোরবেলায় আবার মসজিদে গেলাম ঐব্যক্তি সম্পর্কে  জিজ্ঞেস করার জন্য। কিন্তু ওখানে এমন কোন লোক ছিল না যে ঐব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। তিনি বলেন, ঐদিনও আলী (রা:) আমার নিকট দিয়েচলার সময় বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি? আমিবললাম, না। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে চল।

পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বল, তোমার ব্যাপার কি? কেন  এ শহরে এসেছ?

আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখার আশ্বাস দেন তাহলে  তা আপনাকে বলতে পারি।

তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি গোপন করব।

আমি  বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, এখানে এমন এক লোকের আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নবীবলে দাবী করেন। আমি তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য আমার ভাইকেপাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলতে পারেনি।তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি।

আলী (রা:)বললেন, তুমি সঠিক পথপদ্রর্শক পেয়েছ। আমি এখনই তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়ারজন্য রওয়ানা হয়েছি। তুমি আমাকে অনুসরণ কর এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করবতুমিও সে গৃহে প্রবেশ করবে। রাস্তায় যদি তোমার বিপদজনক কোন লোক দেখতে পাইতবে আমি জুতা ঠিক করার অজুহাতে দেয়ালের পার্শ্বে সরে দাঁড়াব, যেন আমিজুতা ঠিক করছি। আর তুমি চলতেই থাকবে।

আলী (রা:) পথ চলতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর অনুসরণ করে চলতে লাগলাম। তিনিনবী (সাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলে আমিও তাঁর সঙ্গে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করলেন।আর আমি তৎক্ষণাৎ মুসলিম হয়ে গেলাম।

নবী (সাঃ) বললেন, হে আবূ যর। এখনকার মত তোমার ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখেতোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয়ের খবর জানতে পারবে তখন এসো। আমিবললাম, যে আল্লাহ্‌ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ  পাঠিয়েছেন  তাঁর  শপথ!  আমিকাফির-মুশরিকদের সামনে উচ্চৈঃস্বরে তাওহীদের বাণী ঘোষণা করব। (ইবনু আব্বাস (রা:) বলেন) এই কথা বলে তিনি মসজিদে হারামে গমন করলেন, কুরাইশের লোকজনওসেখানে উপস্থিত ছিল। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ! আমি নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্যদিচিছ যে,

”আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন (হক্ব) মা’বূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রাসূল।”

এতদশ্রবণে কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। তারা আমার দিকেএগিয়ে আসল এবং আমাকে এমন নির্মমভাবে প্রহার করতে লাগল, যেন আমি মরে যাই।তখন আব্বাস (রা:) আমার নিকট পৌঁছে আমাকে ঘিরে রাখলেন। অতঃপর তিনিকুরাইশদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য। তোমরা গিফারবংশের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছ, অথচ  তোমাদের  ব্যবসা-বাণিজ্যের  কাফেলাকে  গিফার গোত্রের নিকট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়? একথা শুনে তারা আমার নিকট থেকে দূরে  সরে  পড়ল। পরদিন  ভোরবেলা  কা’বাগৃহে  উপস্থিত  হয়ে গত দিনের মতই  আমি  আমার  ইসলাম  গ্রহণের  পূর্ণ  ঘোষণা  দিলাম। কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। গতকালের মতআজও তারা নির্মমভাবে আমাকে মারধর করল। এই দিনও আব্বাস (রা:) এসে আমাকেরক্ষা করলেন এবং কুরাইশদেরকে উদ্দেশ্য করে ঐ দিনের মত বক্তব্য রাখলেন। ইবনুআব্বাস (রা:) বলেন, এটাই ছিল আবূ যর (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণের প্রথম ঘটনা(বুখারী হা/৩৫২২ ‘মানাকিব’অধ্যায়, ‘আবূ যর গিফারীর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা’অনুচেছদ, হা/৩৮৬১ ‘আনছারদের মর্যাদা’অধ্যায়)।

 

শিক্ষা:

১.হক্ব অন্বেষণের জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

২. হকের পথের পথিকরা নানান মুসীবতের সম্মুখীন হন। এক্ষেত্রে তাদেরকে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে।

৩. সমাজের প্রচলিতরসম-রেওয়াজের বিরুদ্ধে কথা বললে নানা বিদ্রূপাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীনহতে হয় কিংবা নানা ব্যঙ্গাত্মক নামে ডাকা হয়। কিন্তু তাতে বিচলিত না হয়েসত্য প্রচারে অটল থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button