প্রবন্ধ

যাকাত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ন ফতোওয়া জেনে নিন (২য় পর্ব)

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেনা

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু।

মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল -উসাইমীন (রঃ)

সংক্ষিপ্ত বর্ননাঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর তাআলার জন্য যিনি আ্মাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকূলের সেরা জীব মানুষ হিসেবে এবং এই সুন্দর পৃথীবিতে পাঠিয়েছেন মুসলিম করে। সেই সাথে শান্তি বর্ষিত হউক নবী (ছাঃ) এর উপর যিনি দ্বীনকে এত সুন্দর করে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন ফরয ততটুকু যতটুকু দ্বীন পালন করতে প্রয়োজন হয়।আর এই দ্বীন অর্জন করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে । বই ফতোওয়া আরকানুল থেকে সংগৃহীত  কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ন  উত্তর জেনে নেই।

প্রশ্ন: (৩৭৬)ব্যক্তিগত গাড়ীতে কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর:এতে কোন যাকাত নেই। স্বর্ণ-রৌপ্য ছাড়া মানুষের ব্যবহৃত কোন বস্তুতে যাকাতনেই। যেমন গাড়ী, উট, ঘোড়া, ঘর-বাড়ী ইত্যাদি। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِ فِي عَبْدِهِ وَلَا فَرَسِهِ صَدَقَةٌ
“মুসলিম ব্যক্তির ক্রীতদাস, ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই।”[6]
প্রশ্ন: (৩৭৭)যাকাত দেয়ার সময় কি বলে দিতে হবে যে, এটা যাকাত?
উত্তর:যাকে যাকাত প্রদান করা হবে সে যদি যাকাতের হকদার হয় কিন্তু সাধারণত: সেযাকাত গ্রহণ করেনা, তাহলে যাকাত দেয়ার সময় তাকে বলে দিতে হবে যে, এটাযাকাত। যাতে করে বিষয়টিতার নিকট সুস্পষ্ট হয় ফলে সে ইচ্ছা হলে যাকাতগ্রহণ করবে ইচ্ছা হলে প্রত্যাখ্যান করবে। আর যে লোক যাকাত গ্রহণে অভ্যস্থতাকে যাকাত দেয়ার সময় কোন কিছু না বলাই উচিত। কেননা এতে তার প্রতি দয়াপ্রদর্শনের খোঁটা দেয়া হয়। আল্লাহ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى
“হে ঈমানদারগণ খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের সাদ্‌কা বা দান সমূহকে বিনষ্ট করে দিও না।” (সূরা বাকারাঃ ২৬৪)
প্রশ্ন: (৩৭৮)এক সস্থান থেকে অন্য সস্থানে যাকাত স্থানান্তর করার বিধান কি?
উত্তর:এক শহর থেকে অন্য শহরে যাকাত স্থানান্তর করলে যদি কল্যাণ থাকে তবে তাজায়েজ। যাকাত প্রদানকারীর কোন নিকটাত্মীয় যাকাতের হকদার অন্য শহরে থাকেতবে তার নিকট যাকাত প্রেরণ করলে কোন অসুবিধা নেই।
অনুরূপভাবেজীবন যাত্রার মান উঁচু এমন দেশে বসবাস করে এবং তুলনামূলক অভাবী দেশে যদিযাকাত প্রেরণ করে তবেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি অন্য শহরে বা দেশেযাকাত প্রেরণ করাতে তেমন কোন কল্যাণ না থাকে তবে তা স্থানান্তর করা যাবেনা।
অন্য সস্থানে বসবাসকারী পরিবারের লোকদের ফিতরা আদায় করা।
প্রশ্ন: (৩৭৯)জনৈক ব্যক্তি মক্কায় থাকে আর তার পরিবার রিয়াদে। সে কি নিজ পরিবারের লোকদের ফিতরা মক্কায় আদায় করতে পারবে?
উত্তর:নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা জায়েজ যদিও তারা তার সাথে তারশহরে না থাকে। অতএব সে মক্কায় আর তার পরিবার রিয়াদে, সে মক্কাতেই তার ওতার পরিবারের ফিতরা আদায় করতে পারে। কিন্তু উত্তম হচ্ছে যে সস্থানে ফিতরাআদায় করার সময় হবে সে স্থানেই উহা আদায় করা। ফিতরা আদায় করার সময় সেযদি মক্কায় থাকে তবে মক্কাতেই আদায় করবে। রিয়াদে থাকলে রিয়াদে।পরিবারের কিছু লোক মক্কায় কিছু রিয়াদে। যারা মক্কায় আছে তারা মক্কায়যারা রিয়াদে আছে তারা রিয়াদে ফিতরা আদায় করবে। কেননা ফিতরা শরীরের সাথেসম্পর্কিত। রোজাদার যেখানে তার ফিতরাও সেখানে।
প্রশ্ন: (৩৮০)ঋণ গ্রস্থের হাতে যাকাত দেয়া উত্তম? না কি তার পাওনাদারের নিকট গিয়ে তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা উত্তম?
উত্তর:বিষয়টির বিধান অবস্থা ভেদে ভিন্ন রকম হতে পারে। ঋণ গ্রস্থ ব্যক্তি যদিদায়মুক্তি ও ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। অর্থ হাতে এলে ঋণ পরিশোধকরবে এরকম বিশস্থ হয় তবে যাকাতের অর্থ তার হাতেই প্রদান করা উচিত। যাতেকরে উহা পরিশোধ করতে পারে। তার ব্যাপারটা গোপন থাকে। দাবীদারদের সামনেলজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
কিন্তুঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যদি বেহিসাবি অপব্যয়ী হয়। তার হাতে অর্থ আসলে ঋণপরিশোধের পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় খাতে তা খরচ করে, তবে যাকাতের অর্থ তাকে নাদিয়ে সরাসরি পাওনাদারের নিকট গিয়ে, প্রাপ্য জেনে নিয়ে- তা পরিশোধ করেদিবে অথবা সাধ্যানুযায়ী তার ঋণ হালকা করে দিবে।
প্রশ্ন: (৩৮১)যারাই যাকাত গ্রহণের জন্য হাত বাড়ায় তারাই কি তার হকদার?
উত্তর:যাকাতের জন্য যে কেউ হাত বাড়ালেই তাকে যাকাত দেয়া উচিত নয়। কেননাসম্পদশালী হওয়া স্বত্বেও অনেক মানুষ পয়সার লোভে হাত বাড়ায়। এসমস্ত লোককিয়ামত দিবসে এমন অবস্থায় আসবে যে তার মুখমণ্ডলে এক টুকরা গোস্তও থাকবেনা (নাউযুবিল্লাহ) সমস্থ মানুষের সাক্ষাতে কিয়ামত দিবসে তার মুখ মণ্ডলেরশুধুমাত্র হাড়-হাড্ডি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ
“যে ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে হাত পাতে সে যেন জাহান্নামের আগুন চাইল। অতএব বেশী চাইলে চাক বা কম চাইলে চাক।[7]“
এসুযোগে আমি সর্তক করছি সেই লোকদেরকে যারা ভিক্ষা বৃত্তি চর্চা করে। সর্তককরছি সেই লোকদেরকে যারা যাকাতের হকদার না হওয়া স্বত্বেও যাকাত গ্রহণ করে।সাবধান! যাকাতের হকদার না হয়েও আপনি যদি যাকাত গ্রহণ করেন, তবে আপনি হারামখেলেন। (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহকে ভয় করুন। অথচ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেন,
وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ
“যে ব্যক্তি অভাব মুক্ত থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অভাব মুক্ত করেন। যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায় আল্লাহ তাকে পবিত্র করে দেন।”[8]
তবেকোন লোক যদি আপনার কাছে হাত পাতে, আর তার বাহ্যিক অবস্থা দেখে আপনি মনেকরেন সে যাকাতের হকদার, তবে তাকে যাকাত দিলে আদায় হয়ে যাবে এবং আপনি দায়মুক্ত হবেন। পরবর্তীতে যদি জানা যায় যে, সে যাকাতের হকদার ছিল না তবেপুনরায় যাকাত দিতে হবে না। দলীল:
عَنْأَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّه عَنْه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهعَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لَأَتَصَدَّقَنَّ  الليلةبِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدِ سَارِقٍفَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ عَلَى سَارِقٍ فَقَالَ اللَّهُمَّلَكَ الْحَمْدُ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِفَوَضَعَهَا فِي يَدَيْ زَانِيَةٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَاللَّيْلَةَ عَلَى زَانِيَةٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَىزَانِيَةٍ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَافِي يَدَيْ غَنِيٍّ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ عَلَى غَنِيٍّفَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى سَارِقٍ وَعَلَى زَانِيَةٍوَعَلَى غَنِيٍّ فَأُتِيَ فَقِيلَ لَهُ أَمَّا صَدَقَتُكَ عَلَى سَارِقٍفَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعِفَّ عَنْ سَرِقَتِهِ وَأَمَّا الزَّانِيَةُفَلَعَلَّهَا أَنْ تَسْتَعِفَّ عَنْ زِنَاهَا وَأَمَّا الْغَنِيُّفَلَعَلَّهُ يَعْتَبِرُ فَيُنْفِقُ مِمَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ
আবুহুরায়রা রা হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন, একদা (বনী ইসরাঈলের) জনৈক ব্যক্তি বলল, অবশ্যই আমি অবশ্যই আর রাতেকিছু দান করব। এ উদ্দেশ্যে সে স্বীয় দান নিয়ে বের হল, এবং (গোপনীয়তারকারণে নিজের অজান্তে) এক চোরের হাতে তা রেখে দিল। সকালে মানুষে বলাবলি করতেলাগল, কি আশ্চর্য! আজ রাতে এক চোরকে দান করা হয়েছে! সে বলল, হে আল্লাহচোরের হাতে আমার দান যাওয়ার কারণে সকল প্রশংসা তোমার জন্য। অবশ্যই (আবার)দান করব। অতঃপর সে তার দান নিয়ে বের হল এবং এক ব্যভিচারিনীর হাতে রেখেদিল। সকালে মানুষ বলাবলি করতে লাগল, কি আশ্চর্য! গত রাতে একজনব্যভিচারিনীকে দান করা হয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহ ব্যভিচারিনীকে দান করারকারণে সমস্ত প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। অবশ্যই (আবার) সাদকা করব। সে তার দাননিয়ে বের হল অতঃপর এক ধনী লোকের হাতে দিয়ে দিল। সকালে মানুষ বলতে লাগল, আশ্চর্য ব্যাপার! আজ রাতে একজন ধনী মানুষকে দান করা হয়েছে। সে বললঃ হেআল্লাহ যাবতীয় প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। চোর ব্যভিচারিনী এবং ধনী লোককে দানকরার কারণে।
তারনিকট আসা হল (কোন ঐশী দূত হতে পারে) অতঃপর তাকে বলা হল, তোমার দানচোরেরহাতে যাওয়ার কারণে- হতে পারে সে চুরি থেকে বিরত থাকবে। আর ব্যভিচারিনী, হতে পারে সে এ দানের কারণে ব্যভিচার থেকে বিরত হবে। আর ধনী ব্যক্তি এ থেকেশিক্ষা গ্রহণ করে হতে পারে সেও তার সম্পদ থেকে দান করবে।[9]
দেখুনসৎ নিয়তের কিরূপ প্রভাব হয়। অতএব যে ব্যক্তি আপনার কাছে হাত পেতেছে আপনিতাকে ফকীর বা অভাবী মনে করে দান করেছেন কিন্তু পরে জানা গেল সে অভাবী নয়সম্পদশালী তবে আপনার যাকাত হয়ে যাবে। পুনরায় আদায় করতে হবে না।
যাকাত বণ্টনের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি যাকাতের হকদার নয়
প্রশ্ন: ৩৮২)জনৈক ধনী ব্যক্তি একজন লোককে বলল আপনি যাদেরকে হকদার মনে করেন তাদের কাছেআমার এই যাকাত বণ্টন করে দিন। এখন এই ব্যক্তি কি যাকাতের কাজে নিযুক্তহিসেবে গণ্য হবে এবং কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী যাকাতের হকদার হবে?
উত্তর:না, এ লোক যাকাতের কাজে নিযুক্ত বলে গণ্য হবে না। ফলে সে যাকাতেরও হকদারহবে না। কেননা সে নির্দিষ্ট ভাবে এক ব্যক্তির যাকাত বণ্টন করার দায়িত্বনিয়েছে। (আল্লাহই ভাল জানেন) পবিত্র কুরআনের বাক্য ভঙ্গির গোপন উদ্দেশ্যহচ্ছে এটাই- আল্লাহ বলেনوالعاملين عليها এখানেعلىঅব্যয় দ্বারা এক প্রকার কর্তৃত্ব বুঝা যায়। অর্থাৎ যাকাত আদায় ওবণ্টনের কাজে সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত কর্মচারী। এ জন্য নির্দিষ্ট ভাবেএকক ব্যক্তির পক্ষ থেকে নিযুক্ত কর্মচারী কুরআনে বর্ণিত উক্ত প্রকারেরঅন্তর্ভুক্ত হবে না।
প্রশ্ন: (৩৮৩)দুর্বল ঈমানের অধিকারী কোন ব্যক্তিকে ঈমান শক্তিশালী করার জন্য যাকাত দেয়া যাবে কি? সে কিন্তু কোন এলাকার নেতা বা সরদার নয়।
উত্তর:মাসআলাটি বিদ্বানদের মাঝে মত বিরোধপূর্ণ। আমার মতে ইসলামের প্রতি ধাবিতকরতে ঈমান শক্তিশালী করার জন্য তাকে যাকাত দিলে কোন অসুবিধা নেই। যদিও সেকোন কবিলা বা এলাকায় সরদার বা নেতা না হয়। যদিও একান্ত ব্যক্তিগতভাবেউক্ত উদ্দেশ্যে দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ বলেন, “তাদের হৃদয়গুলো ইসলামেরদিকে ধাবিত করার জন্য।”যখন ফকীর ও অভাবীকে যাকাত দেয়া বৈধ তখন দুর্বলঈমানের অধিকারী ব্যক্তিকে তা প্রদান করা তো আরও অধিক বৈধ। কেননা কোনব্যক্তির শরীর শক্তিশালী করার চেয়ে তার ঈমানকে শক্তিশালী করা অধিকগুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: (৩৮৪)ইসলামী জ্ঞান শিক্ষায় নিয়োজিত ছাত্রকে যাকাত দেয়ার বিধান কি?
উত্তর:ইসলামী জ্ঞান শিক্ষার কাজে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত ছাত্রদেরকে যাকাত দেয়াজায়েজ, যদিও তারা কামাই রোজগার করার সামর্থ্য রাখে। কেননা ইসলামী জ্ঞানশিক্ষা করা এক প্রকার জিহাদ। আর আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে যাকাতের একটি খাত।আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَاالصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَاوَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِيسَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنْ اللَّهِ وَاللَّهُعَلِيمٌ حَكِيمٌ
“যাকাততো হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাব গ্রস্থদের আর এই যাকাত আদায়ের জন্যনিযুক্ত কর্মচারীদের এবং ইসলামের প্রতি যাদের হৃদয় আকৃষ্ট করতে হয়, গোলামআজাদ করার জন্য, ঋণ পরিশোধে, আল্লাহর পথে জিহাদে আর মুসাফিরদের সাহায্যে। এবিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী অতিপ্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবাঃ ৬০)
কিন্তুশিক্ষার্থী যদি শুধুমাত্র দুনিয়াবী শিক্ষায় সম্পূর্ণরূপে ব্রতী থাকে তবেতাকে যাকাত দেয়া যাবে না। আমরা তাকে বলব তুমি তো দুনিয়ার কর্মেই ব্যস্তআছ। অতএব চাকরী করার মাধ্যমে তো দুনিয়া অর্জন করতে পার। তাই তোমাকে যাকাতদেওয়া যাবে না।
কিন্তুআমরা যদি এমন লোক পাই যে নিজ পানাহার ও বাসস্থানের জন্য রোজগার করতে সক্ষমকিন্তু তার নিকট এমন সম্পদ নাই যা দ্বারা সে বিবাহ করতে পারে, তবে যাকাতেরঅর্থ দিয়ে কি এ ব্যক্তির বিবাহের ব্যবস্থা করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, বিবাহের জন্য তাকে যাকাত দেয়া যাবে। যাকাত থেকে তার পূর্ণ মোহর আদায় করা যাবে।
যদি প্রশ্ন করা হয় বিবাহে অপরাধ ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া কিভাবে জায়েজ হতে পারে?
জবাবেআমরা বলব: কেননা মানুষের বিবাহের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। কখনো খানা পিনরমতই এর প্রয়োজনীয়তা মানুষের জীবনে প্রকট হয়ে দেখা যায়। এ জন্যবিদ্বানগণ বলেন, কারো ভরণ-পোষণের অর্থ বহন করা যার উপর আবশ্যক থাকে তার উপরওয়াজিব হচ্ছে তার বিবাহেরও ব্যবস্থা করে দেয়া- যদি তার কাছে প্রয়োজনীয়সম্পদ থাকে। অতএব পুত্র যদি বিবাহ উপযুক্ত হয় এবং বিবাহের দরকার মনে করেতবে পিতার উপর ওয়াজিব হচ্ছে পুত্রের বিবাহের ব্যবস্থা করে দেয়া। কিন্তুআমি শুনেছি পুত্র যদি বিবাহের কথা উত্থাপন করে তবে কোন কোন পিতা নিজেদেরযৌবন কালের কথা ভুলে গিয়ে পুত্রকে ধমক দেন আর বলেন, নিজের মাথার ঘাম পায়েফেলে পরিশ্রম করে উপার্জন কর তারপর বিবাহ কর। এটা মোটেও জায়েজ না। পিতাসামর্থবান থাকলে পুত্রের সাথে এরকম ব্যবহার করা হারাম। পিতার সামর্থ্য থাকাস্বত্বেও পুত্রের বিবাহের ব্যবস্থা না করলে সে অবশ্যই কিয়ামত দিবসে পিতারবিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে।

একটি মাসাআলাঃজনৈক ব্যক্তির কয়েকটি পুত্র সন্তান আছে। সে যদি উপযুক্ত বড় ছেলের বিবাহনিজের খরচে প্রদান করে, তবে মৃত্যুর পূর্বে ছোট ছেলেদের জন্য কি নিজসম্পত্তি থেকে বড় ছেলের মোহরের অনুরূপ প্রদান করার ওছিয়ত করে যেতে পারে?
উত্তর:না এরূপ করা জায়েজ হবে না। তবে পিতার জীবদ্দশাতেই যদি ছোট ছেলেরা বিবাহেরউপযুক্ত হয় এবং বড় ছেলের ন্যায় তাদের নিজ খরচে বিবাহ দিয়ে দেয় তবে তাজায়েজ। কিন্তু তারা এখনও ছোট তাই মৃত্যুর পর তাদের জন্য আলাদা অনিয়ত করেযাবে তা হারাম। এর দলীল হচ্ছে: নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,
إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى لِكُلِّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ
“নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক অধিকারীকে তার নির্দিষ্ট অধিকার প্রদান করেছেন। অতএব উত্তরাধিকারের জন্য কোন অসিয়ত নেই।”[10]
প্রশ্ন: (৩৮৫)মুজাহিদদেরকে যাকাত প্রদান করা কি জায়েজ?
উত্তর:যাকাত প্রদানের খাত সমূহের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা মুজাহিদদের কথা উল্লেখকরেছেন। অতএব আল্লাহর পথের মুজাহিদদেরকে যাকাত প্রদান করা জায়েজ। কিন্তুআল্লাহর পথে মুজাহিদ কে? জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)কে লড়াইকারী সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, একজন বীরত্ব প্রকাশ করারজন্য লড়াই করে, একজন গোত্রীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য লড়াই করে, একজননিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, এদের মধ্যে কে প্রকৃত পক্ষেআল্লাহর পথে? এর জবাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরইনসাফ পূর্ণ মূল্যবান একটি মাপকাঠি প্রদান করেছেন, তিনি বলেন,
مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
“যেব্যক্তি লড়াই করবে আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে সেই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী।” [11]অতএব প্রত্যেক যে ব্যক্তি আল্লাহরবাণীকে সমুন্নত করার জন্য যুদ্ধ করবে- লড়াই করবে আল্লাহর শরীয়তকেপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে, কাফের রাষ্ট্রে আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম করার জন্যসে-ই আল্লাহর পথে, সেই মুজাহিদ। তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। তাকে নগদ অর্থপ্রদান করবে, যাতে জিহাদের পথে উহা ব্যয় করতে পারে অথবা যাকাতের অর্থদ্বারা যুদ্ধের সরঞ্জাম ক্রয় করে দিবে।
প্রশ্ন: (৩৮৬)মসজিদ নির্মাণের কাজে যাকাত প্রদান করার বিধান কি?
উত্তর:মসজিদ নির্মাণের কাজ কুরআনের বাণী ‘ফি সাবিলিল্লার’অন্তর্ভুক্ত নয়।কেননা তাফসীর বিদগণ ‘ফি সাবিলিল্লার’তাফসীরে উল্লেখ করেছেন: এ দ্বারাউদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।
মসজিদনির্মাণসহ অন্যান্য জনকল্যাণ মূলক কাজে যাকাত ব্যয় করা প্রকৃত কল্যাণেরপথকে বিনষ্ট করারই নামান্তর। কেননা কৃপণতা ও লোভ অনেক লোকের মধ্যেস্বভাবজাত প্রকৃতি। যখন তারা দেখবে মসজিদ নির্মাণ এবং অন্যান্য সব ধরণেরকল্যাণ মূলক ক্ষেত্রে যাকাত দেয়া হচ্ছে, তখন তারা সমস্থ যাকাত সে সকলকাজেই ব্যবহার করা শুরু করবে। ফলে দুঃস্থ অভাবী মানুষ তাদের অভাব অনটনেরমধ্যেই রয়ে যাবে।
প্রশ্ন: (৩৮৭)নিকটাত্মীয়দের যাকাত প্রদান করার বিধান কি?
উত্তর:নিকটাত্মীয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হচ্ছে: নিকটাত্মীয়ের ব্যয়ভার বহন করাযদি যাকাত প্রদানকারীর উপর ওয়াজিব বা আবশ্যক হয়ে থাকে, তবে তাকে (উক্তনিকটাত্মীয়কে) যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। কিন্তু সে যদি এমন ব্যক্তি হয় যারখরচ বহন করা যাকাত প্রদানকারীর উপর আবশ্যক নয়, তবে তাকে যাকাত প্রদান করাজায়েজ। যেমন সহদোর ভাই। যদি ভাইয়ের পুত্র সন্তান থাকে, তবে তার ব্যয়ভারবহন করা অন্য ভাইয়ের উপর আবশ্যক নয়। কেননা তার পুত্র সন্তান থাকার কারণেদু’ভাই পরস্পর মীরাছ (উত্তরাধিকার) পাবে না। এ অবস্থায় উক্ত ভাই যদিযাকাতের হকদার হয় তবে তাকে যাকাত দেয়া যাবে।
অনুরূপভাবেনিকটাত্মীয়ের কোন ব্যক্তি ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে যদি অভাবী না হয়, কিন্তুসে ঋণগ্রস্থ, তবে ঋণ পরিশোধ করার জন্য তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। যদিওউক্ত নিকটাত্মীয় নিজের পিতা মাতা ছেলে বা মেয়ে হোক। যখন এই ঋণ ভরণ-পোষণেত্রুটির কারণে নয়।
উদাহরণ:জনৈক ব্যক্তির পুত্র গাড়ি দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার কারণে বড় একটি জরিমানারসম্মুখীন হয়েছে। অথচ তার নিকট জরিমানা আদায় করার মত কোন অর্থ নেই। এঅবস্থায় তার পিতা নিজের যাকাতের অর্থ পুত্রের ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রদানকরলে তা বৈধ হবে। কেননা এই ঋণ ভরণ-পোষণের কারণে নয়। এমনভাবে কোন মানুষযাকাতের কারণ ছাড়া অন্য কারণে যদি কোন আত্মীয়কে যাকাত থেকে প্রদান করে, তবে তা জায়েজ।
প্রশ্ন: (৩৮৮)যাকাত-সদকা আদায় করা কি শুধু রামাযান মাসের জন্যই বিশিষ্ট?
উত্তর:দান্তসাদকা রামাযান মাসের সাথে নির্দিষ্ট নয়; বরং উহা সর্বাবস্থায়প্রদান করা মুস্থাহাব। আর নেসাব পরিমাণ সম্পদে বছর পূর্ণ হলেই যাকাত দেয়াওয়াজিব। রামাযানের অপেক্ষা করবে না; হ্যাঁ রামাযান যদি নিকটবর্তী হয় যেমনশাবান মাসে বছর পূর্ণ হচ্ছে- তবে রামাযান পর্যন্ত বিলম্ব করে যাকাত বেরকরলে কোন অসুবিধা নেই।
কিন্তুযাকাত যদি উদাহরণ স্বরূপ মুহাররমে আবশ্যক হয়, তবে রামাযান পর্যন্তঅপেক্ষা করা জায়েজ হবে না। অবশ্য যদি পূর্ববর্তী রামাযানে অগ্রিম যাকাতবের করে তবে তা জায়েজ। কিন্তু ওয়াজিব হওয়ার পর বিলম্ব করা জায়েজ নয়।কেননা নির্দিষ্ট কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট ওয়াজিব সমূহ উক্ত কারণ পাওয়াগেলেই আদায় করতে হবে। বিলম্ব করা জায়েজ হবে না। তাছাড়া মানুষের জীবনেরএমন তো কোন গ্যারান্টি নেই যে বিলম্বিত সময় পর্যন্ত সে বেঁচে থাকবে। যদিযাকাত প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করে তার জিম্মায় যাকাত রয়েই গেল।হতে পারে উত্তরাধিকারীগণ বিষয়টি না জানার কারণে তার পক্ষ থেকে যাকাত আদায়করবে না অথবা হতে পারে সম্পদের লোভে ও মোহে পড়ে তারা তা করবে না।
কিন্তুদান-সাদকার জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই। বছরের প্রতিদিনই তার সময়।কিন্তু লোকেরা রামাযান মাসে দান সদকা ও যাকাত প্রদান পসন্দ করে। কেননাসময়টি ফযিলত পূর্ণ। দান ও বদান্যতার সময়। নবী (সঃ) ছিলেন সর্বাধিকদানশীল। রামাযান মাসে তিনি আরও বেশী দানশীল হতেন, যখন জিবরীল (আঃ) তাঁরসাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাঁকে কুরআন পড়াতেন।
কিন্তুজানা আবশ্যক যে রামাযান মাসে যাকাত প্রদান বা দান সাদকার ফযিলত নির্দিষ্টসময়ের (শুধু এক মাস) ফযিলতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এর চাইতে ফযীলতপূর্ণ অন্যকোন সময় বা অবস্থা যদি পাওয়া যায়, তবে সে সময়ই দান করা বা যাকাত প্রদানকরা উত্তম। যেমন রামাযান ছাড়া অন্য সময় যদি ফকীর মিসকিনদের অভাব প্রকটআকার ধারণ করে বা দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা যায়, তবে সে সময় দান করার ছাওয়াবরামাযান মাসে দান করার চাইতে নিঃসন্দেহে বেশী।
অধিকাংশক্ষেত্রে ফকীর মিসকিনদের অবস্থা রামাযান ছাড়া অন্যান্য মাসে বেশী শোচনীয়থাকে। রামাযান মাসে দান সদকা বা যাকাতের ব্যাপকতার কারণে তারা সে সময়অনেকটা অভাব মুক্ত হয়। কিন্তু বছরের অবশিষ্ট সময়ে তারা প্রচণ্ড অভাব ওঅনটনের মাঝে দিন কাটায়। সুতরাং বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করা উচিত।
সদকায়ে জারিয়া কাকে বলে?
প্রশ্ন: (৩৮৯)মানুষ তার জীবদ্দশায় যা দান করে তাকেই কি সদকায়ে জারিয়া বলে? নাকি মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজনের দানকে সদকায়ে জারিয়া বলে?
উত্তর:হাদিছে এরশাদ হয়েছে মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তিনটি আমল ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়।
১)সদকায়ে জারিয়া
২)ইসলামী জ্ঞান, উপকারী বিদ্যা লিপিবদ্ধ করে যাওয়া
৩)সৎ সন্তানদের দু’আ।[12]
এহাদীছের বাহ্যিক অর্থে বুঝা যায়, জীবিত অবস্থায় ব্যক্তির দানকেই সদকাজারিয়া বলা হয়। মৃত্যুর পর তার সন্তানদের দানকে নয়। কেননা মৃত্যুর পরসন্তানদের থেকে যা হবে তা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনাকরে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দু’আ করবে।”
অতএবকোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর পূর্বে কিছু দান করার অসীয়ত করে যায় অথবাওয়াক্‌ফ করে যায়, তবে তা সদকা জারিয়া হিসাবে গণ্য হবে। মৃত্যুর পর কবরেসে তা থেকে উপকৃত হবে। অনুরূপভাবে ইসলামী জ্ঞান, তার উপার্জন থেকে হতে হবে।এমনি ভাবে সন্তান, যদি পিতার জন্য দু’আ করে।
এজন্য কেউ যদি প্রশ্ন করে আমি কি পিতার জন্য দু’রাকাত নামায পড়ব? নাকিনিজের জন্য দু’রাকাত নামায আদায় করে এর মধ্যে পিতার জন্য দু’আ করব? আমিবলব: উত্তম হচ্ছে নিজের জন্য দু’রাকাত নামায আদায় করবেন এবং এর মধ্যেপিতার জন্য দু’আ করবেন।
কেননাএ দিকেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা প্রদান করেছেন।তিনি বলেন, অথবা ‘সৎ সন্তান’যে তার জন্য দু’আ করবে, এরূপ বলেন নি যে তারজন্য নামায আদায় করবে বা অন্য কোন নেক আমল করবে।
স্বামীর সম্পদ থেকে তার বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর দান করা জায়েজ নয়।
প্রশ্ন: ৩৯০)স্ত্রী যদি স্বামীর সম্পদ থেকে নিজের জন্য দান করে বা তা মৃত নিকটাত্মীয়ের জন্য দান করে, তবে তা জায়েজ হবে কি?
উত্তর:একথা নিশ্চিত জানা যে, স্বামীর সম্পদ স্বামীরই। অনুমতি ছাড়া কারো সম্পদ দান করা কারো জন্য বৈধ নয়।
স্বামীযদি অনুমতি প্রদান করে তবে স্ত্রীর নিজের জন্য বা তার মৃত আত্মীয়ের জন্যদান করা জায়েজ, কোন অসুবিধা নেই। অনুমতি না পেলে এরূপ করা হালাল নয়।কেননা এটা তার সম্পদ। আত্মার সন্তষ্টি ছাড়া কারো জন্য কারো সম্পদ খরচ করাবৈধ নয়।
বণ্টনের জন্য যাকাত নিয়ে এসে নিজের কাছেই রেখে দেয়া:
প্রশ্ন: (৩৯১)জনৈক ফকীর এক ধনী লোকের যাকাত নিয়ে আসে এই কথা বলে যে, তার পক্ষ থকে সেতা বিতরণ করে দিবে। তারপর তা সে নিজের কাছেই রেখে দেয়। তার এ কাজের বিধানকি?
উত্তর:এটা হারাম। ইহা আমানতের খিয়ানত। কেননা মালিক তো দায়িত্বশীল হিসেবে তাকেযাকাত দিয়েছে। যাতে করে উহা বণ্টন করে দেয়। অথচ সে নিজেই তা রেখে দেয়।বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন, কোন বস্তুর জিম্মাদার প্রাপ্ত ব্যক্তি উক্ত বস্তুথেকে নিজের জন্য কোন কিছু নিতে পারবে না। অতএব এই ব্যক্তির উপর আবশ্যকহচ্ছে যাকাতের মালিককে একথা বলে দেয়া যে, ইতিপূর্বে যা সে নিয়েছিল তানিজের কাছে রেখে দিয়েছে। মালিক যদি তাতে অনুমতি দিয়ে দেয় তো ভাল, অন্যথাযা সে নিয়েছে তার জিম্মাদার হবে এবং তাকে তা আদায় করতে হবে।
এউপলক্ষে একটি বিষয়ে আমি মানুষকে সতর্ক করতে চাই। তা হচ্ছে, ফকীরথাকাবসস্থায় যাকাত নিয়ে থাকে। তারপর আল্লাহ্‌ তাকে সম্পদশালী করেন।কিন্তু তখনও মানুষ তাকে যাকাত দিতে থাকে আর সেও নিতে থাকে। বলে, আমি তোচাইনি। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আমার কাছে এ রিজিক এসেছে..। কিন্তু এটা হারাম।কেননা আল্লাহ্‌ যাকে অভাব মুক্ত করেন, যাকাত গ্রহণ করা তার জন্য হারাম।
আবারকেউ কেউ যাকাত নিয়ে নিজে খায় না, অন্য মানুষকে দেয়। কিন্তু যাকাতেরমালিক বিষয়টি জানেনা বা তাকে এ ব্যাপারে দায়িত্বও দেয়া হয়নি। এরূপ করাওতার জন্য হরাম। যদিও এলোকের বিষয়টি আগের জনের চাইতে কিছুটা হালকা। কিন্তুতারপরও নাজায়েজ। সে যাকাতের মালিককে বিষয়টি অবহিত করে অনুমতি নিয়েনিবে। অনুমতি না দিলে তার ঘাড়ে জিম্মাদারি রয়ে যাবে। (আল্লাহ্‌ই অধিকজ্ঞান রাখেন)

তথ্যসূত্র:

[1]   . বুখারী, কিতাবুল মুসাক্বাত, অনুচ্ছেদঃ খেজুরের বাগানে কারো যদি চলারপথ থাকে বা পানির ব্যবস্থা থাকে। মুসলিম, অধ্যায়ঃ বেচা-কেনা, অনুচ্ছেদঃ ফলসমৃদ্ধ যে ব্যক্তি খেজুর গাছ বিক্রয় করে ।
[2]  বুখারী, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ যাকাত আবশ্যক হওয়া। মুসলিম, অধ্যায়ঃঈমান, অনুচ্ছেদঃ কালেমায়ে শাহাদাত ও ইসলামী শরীয়তের প্রতি আহবান করা।
[3]  . (বুখারী, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ যাকাত আবশ্যক হওয়া। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ কালেমায়ে শাহাদাত ও ইসলামী শরীয়তের প্রতি আহবানকরা।)
[4] বুখারী ও মুসলিম
[5]   . আবু দাউদ, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: যাকাতুল ফিতর, ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: সাদাকা ফিতর।
[6]   . বুখারী, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: মুসলিম ব্যক্তির ক্রীতদাসে যাকাতনেই। মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: মুসলিম ব্যক্তির ক্রীতদাস ও ঘোড়ারযাকাত নেই।
[7] মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েয।
[8] বুখারী, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ সম্পদের প্রতি লোভমুক্ত না হয়ে সাদকাহয় না। মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ পবিত্র থাকা ও ধৈর্যাবলম্বনকরার ফযীলত।
[9] বুখারী, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ ধনী মানুষের অজান্তে তাকে দান করা।মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ দানকারীর প্রতিদানের আবশ্যকতা যদিও উহাঅপাত্রে দেয়া হয়।
[10]   . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ বেচা-কেনা, অনুচ্ছেদঃ উত্তরাধিকারকে ওছীয়ত করার বর্ণনা। তিরমিযী, ওছীয়ত করার বর্ণনা,
[11]  . বুখারী, অধ্যায়ঃ জিহাদ, অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে।
[12]   . মুসলিম, অধ্যায়ঃ অসীয়ত, অনুচ্ছেদঃ মুত্যুর পর মানুষ যার ছওয়াব পেয়ে থাকে তার বর্ননা।

_______________________________

 সমাপ্ত

(বই ফতোওয়া আরকানুল থেকে সংগৃহীত)

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button