প্রশ্নোত্তর
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৫
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৫
প্রশ্ন (২০১) : ঈদুল ফিতরের দিন বা তার পূর্বের দিন গোশত খাওয়ার জন্য গরু যবেহ করা যাবে কি?
উত্তর: ঈদের সুন্নাত মনে না করে শুধুমাত্র গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে ঈদুল ফিতরের দিন বা তার পূর্বের দিন গরু যবেহ করায় কোন দোষ নেই। কারণ ঈদের দিন হচ্ছে আনন্দ ও উৎসবের দিন। এই দিনে বৈধ খেলাধুলা বা খাবারের আয়োজন করা ঈদের আনন্দেরই অংশ (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৮/১৬৭; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/২)।
প্রশ্ন (২০২) : ঈদের দিন খুৎবা চলাকালীন ঈদগাহের উন্নতিকল্পে কৌটা পাঠানো বা মুছল্লীরা টুপি কিংবা রুমাল ব্যবহার করে দান তুলতে পারবে কি?
উত্তর: খুৎবা চলাকালীন নয়, বরং তার পূর্বে বা পরে কৌটা, রুমাল, চাদর ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে মুছল্লীদের নিকট থেকে ছাদাক্বা গ্রহণ করা কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) ঈদের ছালাত শেষে দান-ছাদাক্বার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন (বুখারী হা/৯৮; মিশকাত হা/১৪২৯ ‘ঈদায়েনের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (২০৩) : ঈদের ময়দানে ইমাম বা মুছল্লীরা ছালাত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতে পারবে কি?
উত্তর : পারবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় চাচা আববাস, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন আববাস, ফযল বিন আববাস, জামাতা আলী, তার ভাই জা‘ফর, নাতি হাসান-হোসায়েন, গোলাম যায়েদ বিন হারেছাহ, তৎপুত্র উসামা বিন যায়েদ ও আয়মান ইবনে উম্মে আয়মান প্রমুখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের দিন সকালে উচ্চস্বরে তাকবীর ও তাহলীলসহ ঈদগাহ অভিমুখে রওয়ানা হ’তেন এবং এইভাবে ঈদগাহ পর্যন্ত পৌঁছতেন। অতঃপর ছালাত শেষ হ’লে তাকবীর শেষ করতেন (ইরওয়া হা/৬৫০, ৩/১২৩ পৃ.; দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই ‘ঈদগাহে গমন’ অনুচ্ছেদ ৫১-৫২ পৃ.)।
প্রশ্ন (২০৪) : কোন কাফের-মুশরিক বা হিন্দুদের অর্থ আত্মসাৎ করা যাবে কি?
উত্তর : মুসলিম বা অমুসলিম কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না। মুগীরা (রাঃ) অন্ধকার যুগে কয়েকজন ব্যক্তিকে তার সাথী হিসাবে নেন, পরে তিনি তাদের হত্যা করে তাদের ধন-সম্পদ নিয়ে নেন। অতঃপর তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে ইসলাম কবুল করেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বলেন, আমি তো তোমার ইসলাম গ্রহণকে কবুল করলাম, কিন্তু ধন-সম্পদ যা ধোঁকাবাজির দ্বারা অর্জন করেছ, এতে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই (বুখারী হা/২৭৩১-৩২; আবুদাউদ হা/২৭৬৫)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, অন্যায় কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের কেউ যদি কোন যিম্মীর উপর অত্যাচার করে বা তার হক নষ্ট করে কিংবা তার সামর্থ্যের বাইরে তার উপর কিছু চাপিয়ে দেয় অথবা জোরপূর্বক তার কোন জিনিস নিয়ে নেয়, তবে আমি ক্বিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে বাদী হব’ (আবুদাউদ হা/৩০৫২; মিশকাত হা/৪০৪৭; ছহীহাহ হা/৪৪৫)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই হকদারকে তার হক আদায় করে দেয়া হবে। এমনকি শিংওয়ালা ছাগল যদি শিংবিহীন ছাগলকে গুঁতো মেরে কষ্ট দিয়ে থাকে, সেটারও বদলা নেওয়া হবে (মুসলিম হা/২৫৮২; মিশকাত হা/৫১২৮)। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, মযলূমের হক অবশ্যই আদায় করে নেওয়া হবে (মিরক্বাত)। অতএব মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে কোন মানুষের প্রতি যুলুম করা যাবে না।
প্রশ্ন (২০৫) : কবরস্থানের নামে ওয়াকফকৃত জায়গায় ৩০/৪০ বছর আগের চারটি কবর আছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় গোরস্থান হওয়ায় সে স্থানে আর কোন কবর দেওয়া হবে না। এখন চারটি কবর স্থানান্তর করে সে স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি-না বা কবর ব্যতীত অতিরিক্ত জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি-না?
উত্তর :প্রথমত: সাধারণভাবে মুসলমানদের কবর খনন করে লাশ বের করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয নয়। কারণ মাইয়েতেরা উক্ত জায়গার হকদার, যেমনভাবে কোন ব্যক্তি তার নিজ মালিকানাধীন সম্পত্তির হকদার (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/১৩৯)। শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যদি মুসলমানদের কবর হয় তাহলে কবর খনন করে সে স্থানে মসজিদ নির্মাণ করার অধিকার জীবিতদের নেই (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/২)। দ্বিতীয়ত: কবরস্থানটি ওয়াকফকৃত হওয়ায় তা সাধারণভাবে তা অন্য কাজে ব্যবহার করা বিধেয় নয়; তবে শারঈ ওযর বশতঃ জীবিতদের অধিকতর কল্যাণার্থে তা স্থানান্তর করা যেতে পারে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪২৯; আল-ইখতিয়ারাত ১৭৬ পৃ.; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৯/৫৬০-৬১)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, মুসলমানদের কবর খনন করা যাবে না। তবে মসজিদ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিকল্প কোন জায়গা না থাকলে একান্ত বাধ্যগত অবস্থায় কবর স্থানান্তর করা যেতে পারে (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১১/৩৮৮)। হযরত জাবের (রাঃ) তাঁর পিতার লাশ অন্য মুসলিমের পাশ থেকে যাকে তিনি অপসন্দ করতেন, ৬ মাস পরে উঠিয়ে অন্যত্র দাফন করেছিলেন (বুখারী হা/১৩৫১-৫২;ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১-২; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৪৪, ২৩০ পৃ.)। সেক্ষেত্রে যদি খননকালে লাশের হাড়-হাড্ডি পাওয়া যায়, তবে সেগুলি উঠিয়ে নতুন কবরস্থানে দাফন করা যাবে।
প্রশ্ন (২০৬) : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ লেখা চাদর দিয়ে লাশ ঢেকে দেয়া যাবে কি?
উত্তর: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ লেখা চাদর ব্যবহারে পৃথক কোন ফযীলত নেই। সুতরাং ভ্রান্ত আক্বীদার প্রসার বন্ধ করার জন্য কালেমা, আয়াতুল কুরসী বা কুরআনের অন্য কোন আয়াত লেখা চাদর লাশের উপর বা খাটিয়ার উপর রাখা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক। তাছাড়া এতে কালেমা বা কুরআনের আয়াতগুলি অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৮৪; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/১৬৮)।
প্রশ্ন (২০৭) : আমার পিতা আমার মায়ের সাথে আমার সামনে খুবই মন্দ আচরণ করেন। যা সহ্য করা আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
উত্তর : পিতা-মাতা সন্তানের নিকট সমান সম্মানের পাত্র। যদিও সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অগ্রাধিকার রয়েছে। প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে সচেতন সন্তানের দায়িত্ব হ’ল নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে উভয়কে নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করা এবং তাদের মাঝে মীমাংসা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায় কথা বলবে, তা নিকটজনের বিরুদ্ধে হ’লেও (আন‘আম ৬/১৫২)। তিনি আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়’ (নিসা ৪/১৩৫)। এক্ষণে তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়া উত্তম সদাচরণের অংশ। আর মীমাংসা করে দেওয়ার কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি না করলে পিতা-মাতার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে যা সন্তানের জীবনের জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। রাসূল (ছাঃ) মীমাংসা করার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে (নফল) ছিয়াম, ছালাত ও ছাদাক্বা অপেক্ষাও উত্তম আমলের কথা বলব না? ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, বিবাদমান দু’ব্যক্তির মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। কেননা পরস্পর সম্পর্ক বিনষ্ট করা হ’ল দ্বীন ধ্বংসকারী বিষয় (তিরমিযী হা/২৫০৯; মিশকাত হা/৫০৩৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৮১৪)। সর্বোপরি তাদের মধ্যে মীমাংসার জন্য দো‘আ করবে।
প্রশ্ন (২০৮) : ছালাত আদায় করে না, কিন্তু আচার-ব্যবহার এবং মানুষ হিসাবে অনেক ভালো, এরূপ কারো সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা ও ওঠা-বসা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ছালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয। ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরী। এক্ষণে কেউ ছালাত পরিত্যাগ করলে তাকে নছীহত করার উদ্দেশ্যে তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন’ (মুমতাহিনা ৬০/০৮)। সুতরাং ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এমন ব্যক্তির সাথে সুন্দর ব্যবহার করা বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখায় বাধা নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে যেন তার দ্বারা সে নিজেই প্রভাবিত হয়ে ভুল পথে না যায়।
প্রশ্ন (২০৯) : বিবাহের সময় পাত্র পূর্ণ সম্মতি সহ কেবল আলহামদুলিল্লাহ বললেও সরাসরি ‘কবুল’ বলেনি। উক্ত বিবাহ গ্রহণযোগ্য হবে কি?
উত্তর : সম্মতিসূচক আলহামদুলিল্লাহ বললেও বিবাহ কবুল হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/১১)।
প্রশ্ন (২১০) : ঈদের চাঁদ দেখার পর এবং ঈদের দিন সকালে ছালাতের পূর্ব পর্যন্ত মসজিদের মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর : মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় নিদর্শন প্রচারের জন্য এবং মুছল্লীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য চাঁদ দেখার পর থেকে মাইকে তাকবীর পাঠ করা যাবে। ইমাম বা মুওয়াযযিন মাঝে-মধ্যে মাইকে তাকবীর পাঠ করে থেমে যাবে আর মুছল্লীরা একাকী পাঠ করবে। ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বাজারে গিয়ে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন এবং লোকেরা তা শুনে নিজেরা পাঠ করতেন। এতে বাজার তাকবীর ধ্বনিতে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (ইরওয়া হা/৬৫১)। অনুরূপ ওমর (রাঃ) তাঁর তাঁবুতে তাকবীর ধ্বনি দিতেন তাঁর তাকবীর শুনে মিনাবাসীরা তাকবীর দিত। এতে গোটা মিনা গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (ফাৎহুল বারী হা/৯৭০-এর পূর্বে ‘মিনার দিনগুলির তাকবীর’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (২১১) : ঋতুবতী মহিলাদের জন্য ঈদের ময়দানে গমন করা কি আবশ্যিক?
উত্তর : ঈদের ছালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে নারীদের জন্য মাঠে গমন করা মুস্তাহাব (নববী, শরহ মুসলিম হা/৮৯০-এর আলোচনা ৬/১৭৮; আল-মাজমূ‘ ৫/৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২১০)। আর ঋতুবতী মহিলারাও ঈদের ময়দানে যেতে পারেন। তবে তারা ছালাতের কাতারে না দাঁড়িয়ে পিছনে বসে থাকবেন। অন্যান্য নারীদের সাথে ঈদের তাকবীর ধ্বনি, খুৎবা ও অন্যান্য দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবেন (মুসলিম হা/৮৯০; আলবানী, ছালাতুল ঈদায়েন ১১-১২ পৃ.)।
প্রশ্ন (২১২) : ইক্বামতের কোন পর্যায়ে মুছল্লীরা দাঁড়াবে? আমাদের এলাকায় ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ’ বলার পর সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে। এটা সঠিক কি?
উত্তর: মুছল্লীদের দাঁড়ানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময়সীমা হাদীছে বর্ণিত হয়নি। যখনই ইক্বামত শুরু হবে, তখনই মুছল্লীরা দাঁড়াবে। দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট সময়সীমার ব্যাপারে যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো ইমামগণের অভিমত মাত্র (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৬৭; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৬)। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে আসার পূর্বে ইক্বামত দেওয়া হ’ত এবং ছাহাবীগণ দাঁড়িয়ে কাতার ঠিক করে নিতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসে তাঁর স্থানে দাঁড়াতেন। পক্ষান্তরে আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাতের ইক্বামত হ’লে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না’ (বুখারী হা/৬৩৬, ৬৩৮)। উভয় হাদীছের মধ্যে সমন্বয় করে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উক্ত নিষেধাজ্ঞা ছিল মূলতঃ মুছল্লীদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা কষ্টকর হবে- এই দৃষ্টিকোণ থেকে’ (ফাৎহুল বারী ২/১৪১ ও ১৪২ পৃঃ, ‘আযান’ অধ্যায়-১০; অনুচ্ছেদ-২২)।
প্রশ্ন (২১৩) : ওযূসহ ফরয গোসল করার পর লজ্জাস্থানে একাধিকবার হাত লেগে গেছে। এমতাবস্থায় পুনরায় ওযূ করতে হবে কি?
উত্তর: সাধারণভাবে লজ্জাস্থানে স্পর্শে ওযূ ও ছালাত নষ্ট হয় না (আবুদাঊদ হা/১৮২; মিশকাত হা/৩২০)। যে সকল হাদীছে লজ্জাস্থান স্পর্শে ওযূ নষ্ট হবে বা ওযূ করা আবশ্যক হবে বলা হয়েছে (আবুদাঊদ হা/১৮১; মিশকাত হা/৩১৯)। তার ব্যাখ্যা হ’ল, উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করা (টীকা দ্র. মিশকাত হা/৩২০)। সুতরাং সাধারণ স্পর্শে ওযূ ভঙ্গ হবে না এবং পুনরায় ওযূ করতে হবে না।
প্রশ্ন (২১৪) :এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আদায়কারীর কোন বেতন নির্ধারণ না করে আদায়কৃত অর্থের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মজুরী হিসাবে নির্ধারণ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর: পারিশ্রমিক হিসাবে আদায়কারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অনুরূপ অর্থ নিতে পারবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তিকে যদি আমরা কোন কাজে নিযুক্ত করি এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক প্রদান করি। অতঃপর যদি সে তার চাইতে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তবে সেটি হবে খেয়ানত’ (আবুদাঊদ হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮)।
প্রশ্ন (২১৫) : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ওয়ারিছগণ ঋণ আদায়ে বাধ্য কি? এছাড়া ঋণ আদায়ে ওয়ারিছদের উপর যবরদস্তি করা যাবে কি?
উত্তর : মাইয়েতের সম্পত্তি থাকলে তার সম্পত্তি থেকেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ওয়ারিছগণ উক্ত সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব পালন না করলে চরম গুনাহগার হবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সম্পত্তি বণ্টনের পূর্বে ঋণ পরিশোধ ও অছিয়ত পূরণকে অপরিহার্য করে দিয়েছেন (নিসা ৪/১১)। এক্ষণে মাইয়েতের যদি কোন সম্পদ না থাকে, তাহ’লে সন্তানেরা ঋণ পরিশোধে বাধ্য নয়। কিন্তু পিতার পরকালীন নাজাতের জন্য সন্তানদের ঋণ পরিশোধ করা উচিত। আর পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা তাদের প্রতি সদাচরণের অংশ (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/২৩২; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১০/৭৫-৭৬)।
প্রশ্ন (২১৬) : মোবাইলে বা কম্পিউটারে দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? করা গেলেও পূর্ণ নেকী লাভ করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। এতে পূর্ণ নেকীও অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব হ’তে একটি হরফ পাঠ করবে তার জন্য দশটি নেকী রয়েছে (তিরমিযী হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭)। অতএব মুখস্ত হৌক, মুছহাফ দেখে হৌক আর কম্পিউটারে দেখে হৌক, সবক্ষেত্রেই সমান নেকী অর্জিত হবে। আর মুছহাফ দেখে কুরআন পাঠের বিশেষ ফযীলত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলি যঈফ ও জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৫৬, ১৫৮৬; যঈফুল জামে‘ হা/২৮৫৫)।
প্রশ্ন (২১৭) :পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতের পর নিয়মিতভাবে কোন দো‘আ যেমন সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে তবে তা বিদ‘আত হিসাবে গণ্য হবে কি?
উত্তর : কুরআন বা ছহীহ হাদীছে যে সকল দো‘আ পাঠের নির্দিষ্ট সময়, কাল বা পাত্র উল্লেখ করা হয়নি সে দো‘আগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে পাঠ করা যাবে না। কেউ যদি কোন দো‘আ বা যিকিরকে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ করাকে নিয়ম বানিয়ে নেয়, তাহ’লে তা বিদ‘আত হবে। বরং যে সকল দো‘আ আমভাবে এসেছে সেগুলো নিয়ম না বানিয়ে পাঠ করবে (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২৯-৩১)।
প্রশ্ন (২১৮) : কোন ব্যবসায়ী বাজারে মিথ্যা কথা বলে কোন পণ্য অধিক মূল্যে বিক্রি করে, তবে তার পুরো উপার্জনই হারাম হয়ে যাবে কি?
উত্তর : যে পরিমাণ অর্থ মিথ্যার মাধ্যমে অর্জন করেছে, সে পরিমাণ অর্থ তার জন্য হারাম হবে। তবে ব্যবসায় মিথ্যা বললে বরকত উঠে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তারা সত্য বলে ও সবকিছু খুলে বলে, তাহ’লে তাদের ব্যবসায়ে বরকত দেওয়া হবে। আর তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহ’লে তাদের দু’জনের ব্যবসায়ে বরকত রহিত করা হবে (বুখারী হা/২০৭৯; মিশকাত হা/২৮০২)। মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারীর সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না, তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে (মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫)। অতএব মিথ্যা বলে অতিরিক্ত গৃহীত লভ্যাংশ গ্রহণ করা যাবে না।
প্রশ্ন (২১৯) : আমরা ৬ ভাই। ২ ভাই পিতার সংসারে থাকাকালীন সময়ে পিতার নিকট থেকে কিছু জমি ক্রয় করে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। এটা কি সঠিক হয়েছে? না হ’লে এখন করণীয় কি?
উত্তর : সংসার দেখাশুনা ও অতিরিক্ত শ্রম দেওয়ার কারণে পিতা তাদের কিছু জায়গা কেনায় সহায়তা করে থাকলে, তা দোষণীয় নয়। কারণ এ সময়ে বাইরের কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে তাকে বেতন বা পারিশ্রমিক দিতে হ’ত। সুতরাং এতে ইনছাফের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৫৩)। তবে অন্য ওয়ারিছদের বঞ্চিত করার লক্ষ্যে কাউকে অতিরিক্ত সম্পদ দেওয়া যাবে না; বরং সেটা হবে যুলুম ও হারাম (বুখারী হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৩০১৯)।
প্রশ্ন (২২০) : ছালাতরত অবস্থায় মোবাইলে রিং বেজে উঠলে করণীয় কি?
উত্তর : মোবাইল বন্ধ করেই ছালাতে আসবে। ভুলবশতঃ মোবাইল বন্ধ না করে ছালাত শুরু করলে এবং ছালাতরত অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা যাবে। কেননা ছালাতে বিঘ্ন ঘটায় এমন কাজ ছালাত অবস্থায় প্রতিহত করা যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দরজা বন্ধ করে নফল ছালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় আমি এসে দরজায় শব্দ করলে তিনি আমাকে দরজা খুলে দিয়ে পুনরায় ছালাতে ফিরে গেলেন। দরজা ছিল ক্বিবলার দিকে (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০৫)।
প্রশ্ন (২২১) : বর্তমানে আলু, কলা ও শাক-সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে পানের ওশর দিতে হবে কি?
উত্তর : দিতে হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘শাক-সবজিতে কোন যাকাত (ওশর) নেই’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪১১; মিশকাত হা/১৮১৩)। তবে এসবের ব্যবসার অর্থ যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর সঞ্চিত থাকে, তাহ’লে উক্ত অর্থের ১/৪০ ভাগ যাকাত দিবে (আবুদাঊদ হা/১৫৭৩-৭৪)। অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে। তবে ঐসব ফসল উঠানোর সময় গরীব-মিসকীনকে কিছু দান করবে (বুখারী হা/২৩৩৭)।
প্রশ্ন (২২২) : সাপ বা যে কোন ক্ষতিকর প্রাণী থেকে বাঁচার জন্য কোন দো‘আ আছে কি?
উত্তর : যে কোন প্রাণীর ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করতে হবে। আ‘ঊযু বি কালিমা-তিল্লাহিত তা-ম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্বা’ ‘আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের মাধ্যমে সেই সবের ক্ষতি থেকে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেগুলি তিনি সৃষ্টি করেছেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২২ ‘বিভিন্ন সময়ের দো’আ সমুহ’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (২২৩) : রাতে বিতর ছালাত আদায় করার পর ক্বিয়ামুল লায়েল বা তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : বিতর হ’ল রাত্রির শেষ ছালাত (বুখারী হা/৯৯৮; মিশকাত হা/১২৫৮)। এক্ষণে কেউ রাতের প্রথম অংশে বিতরের ছালাত আদায় করে নিলে সে ক্বিয়ামুল লায়েল বা তাহাজ্জুদ পড়তে পারে। তবে দ্বিতীয়বার আর বিতর পড়বে না। কেননা এক রাতে দু’বার বিতর পড়া যায় না (আবুদাঊদ হা/১৪৩৯; আহমাদ হা/১৬৩৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৬৭; নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৫১২)।
প্রশ্ন (২২৪) : আমার ১০ বছরের ছোট ভাই দেখতে অনেক সুন্দর। এলাকায় ওর মত আর কাউকে পাওয়া যায় না। ইদানীং সে প্রায়ই অসুস্থ থাকছে। ওষুধ খাইয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। কারো বদ নযর লাগার কারণে এরকম হ’তে পারে কি? সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
উত্তর : বদ নযর সত্য। কেবল শিশুই নয়, বড় মানুষও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে পারে। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আসমা বিনতে ঊমাইস (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জা‘ফরের সন্তানদের বদ নযর লাগে। আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়-ফুঁক করব? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কোন বিষয় যদি ভাগ্য পরিবর্তন করত, তাহ’লে বদ নযর সেটি করতে পারত’ (তিরমিযী হা/২০৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৫১০; মিশকাত হা/৪৫৬০)। এতে বুঝা যায় যে, বদ নযর অত্যন্ত ক্ষতিকর। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে তাক্বদীরে লিখিত মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নযর লাগার কারণে হবে’ (ছহীহাহ হা/৭৪৭)। তিনি বলেন, ‘বদ নযর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং উটকে রান্নার পাতিলে পৌঁঁছে দেয়’ (ছহীহাহ হা/১২৪)। অর্থাৎ মেরে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, ‘বদ নযর আল্লাহর অনুমতি ক্রমে কোন ব্যক্তিকে এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যে, সে যেন কোন উঁচু স্থান থেকে হঠাৎ নীচে পড়ে গেল’ (তাবারাণী আওসাত্ব হা/৫৯৭৭, ছহীহাহ হা/৮৮৯)। করণীয় : সাধারণভাবে আকর্ষণীয় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে দেখলে তার প্রতি যেন বদ নযর না লাগে, সেজন্য বরকতের দো‘আ করতে হবে। এতে সে সম্ভাব্য বদ নযরের অকল্যাণ থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫০৯)। অর্থাৎ তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে ‘বারাকাল্লাহু ‘আলাইক’ (আল্লাহ তোমার উপরে বরকত দান করুন! -শারহু ইবনে মাজাহ)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিন ও মানুষের বদ নযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হ’লে তিনি এ সূরা দু’টি গ্রহণ করেন এবং অন্যগুলি ত্যাগ করেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫১১; নাসাঈ হা/৫৪৯৪; মিশকাত হা/৪৫৬৩)। আর কারও উপর বদ নযর লেগেছে এমন অনুভব হয়, তবে সে ব্যক্তির চিকিৎসা দু’ভাবে করা যায়। (১) যদি বদ নযর লাগানো ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়, তাহ’লে নিম্নোক্ত সুন্নাতী পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন সাহল বিন হুনায়েফ (রাঃ)-এর পুত্র আবু উমামাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন ‘আমের বিন রবী‘আহ (রাঃ) সাহল বিন হুনায়েফ-কে গোসল করতে দেখলেন এবং (তার সুন্দর শরীর দেখে) বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! আজকের মতো কোনদিন আমি কাউকে দেখিনি এবং পর্দার আড়ালে রক্ষিত (কুমারী মেয়ের) কোন চামড়াও এরূপ দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর সাহল অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। অতঃপর (এ অবস্থায়) তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আনা হ’ল। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি সাহল-এর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারেন? আল্লাহর কসম! সে তো তার মাথা উঠাতে পারছে না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি কাউকে এজন্য অভিযুক্ত কর? তারা বলল, আমরা ‘আমের বিন রাবী‘আহ-এর ওপর সন্দেহ করি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) আমেরকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠোর ভাষায় ভৎর্সনা করে বললেন, তোমাদের কেউ তার আরেক ভাইকে কেন হত্যা করে? তুমি তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করলে না কেন? তুমি (তোমার শরীরের কিছু অংশ) সাহল-এর জন্য ধুয়ে দাও। তখন ‘আমের নিজের মুখমন্ডল, কনুই পর্যন্ত দুই হাত, আঙ্গুলগুলি সহ দুই পা এবং পায়জামার ভিতরের অঙ্গ পর্যন্ত ধুয়ে পানিগুলো একটি পাত্রে নিলেন। অতঃপর সেই পানি সাহল-এর উপর ঢেলে দেয়া হ’ল। তাতে সাহল সুস্থ হয়ে লোকদের সাথে হেঁটে আসলেন, যেন তাঁর শরীরে কোন কষ্ট ছিল না’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫০৯; মিশকাত হা/৪৫৬২ ‘চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক’ অধ্যায়)। (২) বদ নযরকারী অপরিচিত বা অজ্ঞাত হ’লে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ পাঠ করে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথায় হাত দিয়ে ফুঁক দিবে। তাহ’লে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫১১; মিশকাত হা/৪৫৬৩)। এছাড়াও আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তির মাথায় হাত রেখে নিম্নের দো‘আগুলো তিনবার পাঠ করে ঝাড়-ফুঁক করা যায়।- (ক)أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ، (আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বা-নিওঁ ওয়া হা-ম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লা-ম্মাহ)। অর্থ : ‘প্রত্যেক শয়তান হ’তে আল্লাহর পূর্ণ কালেমা দ্বারা তোমার জন্য পরিত্রাণ চাচ্ছি। আর পরিত্রাণ চাচ্ছি প্রত্যেক বিষাক্ত কীট হ’তে এবং প্রত্যেক ক্ষতিকর বদ নযর হ’তে’ (বুখারী হা/৩৩৭১; মিশকাত হা/১৫৩৫ ‘জানাযা’ অধ্যায় ‘রোগীর সেবা’ অনুচ্ছেদ)। উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করে ইব্রাহীম (আঃ) তার দুই ছেলে ইসমাঈল ও ইসহাককে ঝাড়ফুঁক করতেন এবং রাসূল (ছাঃ) তার দুই নাতি হাসান ও হোসাইনকে ঝাড়ফুঁক করতেন। (খ)بِسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، (বিস্মিল্লা-হি আর্ক্বীকা মিন কুল্লি শাইন ইউযীকা মিন শার্রি কুল্লি নাফ্সিন আও ‘আইনিন আও হাসিদিন আল্ল-হু ইয়াশ্ফীকা বিস্মিল্লা-হি আর্ক্বীকা)। অর্থ : ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি এমন প্রত্যেক বিষয় হ’তে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হ’তে অথবা প্রত্যেক বিদ্বেষী (বদ নযরকারীর) চক্ষুর অকল্যাণ হ’তে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে ঝাড়ফুঁক করছি’ (মুসলিম হা/২১৮৬; মিশকাত হা/১৫৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০)। (গ) রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা দেহে ডান হাত বুলিয়ে দো‘আ পড়বে-أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَّ يُغَادِرُ سَقَمًا- (আয্হিবিল বা’স, রববান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা)। অনুবাদ : ‘কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা কোন রোগীকে ধোকা দেয় না’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩০, ৪৫৫২)। উল্লেখ্য যে, বদ নযর থেকে রক্ষার জন্য অনেকে কপালে কালো টিপ দেয়, কেউ কোমরে জুতা-স্যান্ডেল বাঁধে বা ঝুলিয়ে রাখে। এসকল কর্ম শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। মূলতঃ এগুলি হিন্দুয়ানী প্রথা থেকে আগত। প্রাচীন ভারতে হিন্দুরা যেসকল ধারণা থেকে টিপ ব্যবহার করত তন্মধ্যে একটি হ’ল শিশুর উপর থেকে দুষ্টু শক্তির প্রভাব দূর করা। এমনকি তারা এটিকে তৃতীয় চোখ মনে করত। সুতরাং এরূপ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কোন মুসলমান এরূপ ক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুকরণ করলে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭, ‘পোষাক’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (২২৫) : ওশর কিভাবে বের করতে হবে? উৎপাদন খরচ ও কর্মচারীদের মজুরী দেওয়ার পর অবশিষ্ট ফসল দ্বারা নাকি তাদের মজুরী দেওয়ার পূর্বে মোট ফসল থেকে?
উত্তর : উৎপাদনের খরচ ধর্তব্য নয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/১৮; ইবনুল হুমাম, ফাৎহুল ক্বাদীর ২/২৫০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৫১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৫/৭৫)। মালিকানায় যে ফসল পাবে তা নিছাব পরিমাণ হ’লে তাতে ওশর দিতে হবে। এক্ষত্রে শারঈ মূলনীতি হ’ল বৃষ্টির পানিতে উৎপাদন হ’লে দশভাগের একভাগ এবং সেচের পানিতে উৎপাদন হ’লে বিশ ভাগের একভাগ ওশর দিতে হবে (বুখারী হা/১৪৮৩; মিশকাত হা/১৭৯৭)। আর ওশর ফরয হওয়ার জন্য শর্ত হ’ল ফসল পাঁচ ওয়াসাক বা তিনশ ছা‘ হ’তে হবে যা আনুমানিক ১৮ মন ৩০ কেজি (বুখারী হা/১৪৪৭; মিশকাত হা/১৭৯৪)। উল্লেখ্য যে, শস্য সংগ্রহকারীদের মজুরী, সার প্রদানের খরচ কিংবা ঋণ ইত্যাদি উৎপাদনের খরচসমূহ বাদ দিয়ে হিসাব হবে না। কেননা এসব খরচ যেমন সেচ ইত্যাদির কারণেই যাকাতের পরিমাণ এক-দশমাংশ থেকে কমিয়ে ২০ ভাগের একভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৭৬০৮; ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০০৯৬; মা‘রিফাতুস সুনান হা/৮৩২৯-৩০)। সুতরাং উৎপাদিত ফসলের পুরোটা থেকেই নির্ধারিত অংশ যাকাত প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন (২২৬) : কোন কোন পরিস্থিতিতে একজনের ছিয়াম অন্যজন রেখে দিতে পারবে?
উত্তর : কোন জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ছিয়াম পালন করার বিধান নেই। তবে মাইয়েতের পক্ষ থেকে তিন অবস্থায় ছিয়াম পালন করা যাবে। (১) মাইয়েত যদি কোন ছিয়াম পালনের মানত করে মারা যায় তাহ’লে তার পক্ষ থেকে ছিয়াম পালন করতে হবে। (২) যদি মাইয়েতের রামাযানের ক্বাযা ছিয়াম থাকে এবং ক্বাযা আদায় না করে মারা যায়, তাহ’লে তার তার পক্ষ থেকে ক্বাযা আদায় করতে হবে। (৩) যদি মাইয়েতের উপর কাফফারার ছিয়াম থাকে- সেটা রামাযান মাসে স্ত্রী মিলনের কারণে হ’তে পারে, দিয়াতের কাফফারা হ’তে পারে বা জীবনহত্যার কাফফারা হ’তে পারে (নববী, শরহ মুসলিম ৮/২৫; আল-মাজমূ‘ ৬/৩৭০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৩৬৭,৬৮,৭২; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৪৫০’)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ তার ছিয়াম অনাদায়ী ছিল, তার ওয়ারিছগণ সেটির ক্বাযা আদায় করে দেবে’ (বুখারী হা/১৯৫২; মুসলিম হা/১১৪৭; মিশকাত হা/২০৩৩)।
প্রশ্ন (২২৭) : আল্লাহ কর্তৃক ছিয়ামের প্রতিদান প্রদান করার বিষয়টি কি ফরয ছিয়ামের সাথে খাছ নাকি নফল ছিয়ামের জন্যও প্রযোজ্য?
উত্তর : ফরয-নফল উভয় ছিয়ামের জন্যই প্রযোজ্য। কেননা কোন হাদীছে উক্ত ফযীলতকে ফরয ছিয়ামের সাথে খাছ করা হয়নি (ইমাম বাজী, আল-মুনতাক্বা শারহুল মুওয়াত্ত্বা ২/৬০)।
প্রশ্ন (২২৮) : হযরত আলী (রাঃ)-এর স্ত্রী এবং দাসীর সংখ্যা মোট কতজন ছিল?
উত্তর : ফাতেমা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর আলী (রাঃ) পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে আরো আট জন মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণ হ’লেন- (১) উম্মুল বানীন বিনতে হিযাম, (২) লায়লা বিনতে মাসঊদ, ৩. আসমা বিনতে উমায়েস, ৪. উম্মে হাবীবা বিনতে রাবী‘আ, ৫. উমামা বিনতে ‘আছ, ৬. খাওলা বিনতে জা‘ফর, ৭. উম্মে সাঈদ বিনতে ওরওয়া, ৮. মাহইয়া বিনতে ইমরিল ক্বায়েস (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/৩৬৬-৩৬৮)। তবে কেউ একসঙ্গে ছিলেন না। কারণ ইসলামে চার জনের বেশী স্ত্রী একসঙ্গে রাখার বিধান নেই। তাঁর দাসদাসীর ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না। কেবল এটুকু জানা যায় যে, ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় তাঁর কোন দাস-দাসী ছিল না (বুখারী হা/৫৩৬২; মিশকাত হা/২৩৮৭)।
প্রশ্ন (২২৯) : জেনারেল শিক্ষিত ১২০ জন মহিলা নিয়ে হোয়াটসএ্যাপে আমার একটি ইসলামিক গ্রুপ আছে। যেখানে আমি দাওয়াতী কাজ করি এবং তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেই। সেখানে মাঝে মাঝে অডিও কনফারেন্স হয়, যেখানে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কাউকে কথা বলার সুযোগ দেই না। এভাবে মেয়েদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : নারীদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) নারীদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করেছেন (বুখারী হা/৭৩১০; মিশকাত হা/১৭৫৩)। অতএব ফিৎনার আশংকা না থাকলে গোপনীয়তার সুযোগ না রেখে গ্রুপে মেয়েদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। তবে সর্বাবস্থায় হৃদয়ে তাক্বওয়া ও ইসলামী পর্দার মূলনীতি বজায় রাখতে হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২২৯-৩২,৪০; আব্দুল করীম যায়দান, আল-মুফাছ্ছাল ফী আহকামিল মার‘আ ৩/২৭৬)।
প্রশ্ন (২৩০) : অমুসলিম দেশে কোর্ট পুলিশ হিসাবে চাকুরী করা জায়েয হবে কি? যেখানে আল্লাহর আইন ছাড়া মানব রচিত আইনে বিচার করা হয়। তবে কোর্ট পুলিশ সরাসরি বিচারকার্যে জড়িত নয়। কিন্তু বিচারকার্যে সাহায্য করে থাকেন।
উত্তর : নিজ দ্বীন রক্ষার সুযোগ এবং যুলুম ও অন্যায় দূরীকরণের ইচ্ছা ও ক্ষমতা থাকলে অমুসলিম দেশে যেকোন বৈধ চাকুরী করা যাবে। বিচারকার্য একটি বৈধ পেশা। অতএব মুসলমানদের উপকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে পুলিশে কিংবা বিচারকার্যে সহায়ক হিসাবে চাকুরী করাতে কোন দোষ নেই। আর যদি দ্বীন হেফাযতে বাধা থাকে এবং অন্যায়ে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হয় তাহ’লে উক্ত চাকুরী করা যাবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৮/২৬, ২৮৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/৪৭৬)।
প্রশ্ন (২৩১) : রাগান্বিত অবস্থায় ঋতুবতী স্ত্রীকে একত্রে তিন তালাক দিলে তালাক পতিত হবে কি?
উত্তর : সাধারণভাবে কেউ এক সাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে। তবে প্রশ্নোল্লিখিত দু’টি অবস্থায় তথা ঋতু অবস্থা ও হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ক্রোধের অবস্থায় তালাক পতিত হয় না (তালাক ৬৫/১; বুখারী হা/৫২৫১, ৫৩৩২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩৩/৭৬; বিন বায. ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২২/১৭৯; উছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/২৮৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তালাক ও দাসমুক্তি নেই ‘ইগলাক্ব’ অবস্থায়’ (আবুদাঊদ হা/১৯১৯, মিশকাত হা/৩২৮৫)। আবু দাঊদ বলেন, ‘ইগলাক্ব’ গালাক্ব ধাতু হ’তে ব্যুৎপণ্ণ। যার অর্থ বন্ধ হওয়া। ক্রোধান্ধ, পাগল ও যবরদস্তির অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি লোপ পায়। তাই এ অবস্থাকে ‘ইগলাক্ব’ বলা হয় (ঐ, হাশিয়া ২/৪১৩ পৃঃ)।
প্রশ্ন (২৩২) : আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে শারঈ কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?
উত্তর : মাহরাম বা কুরআনে যে ১৪ জন নারীকে বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা ব্যতীত অন্য আত্মীয়দের বিবাহ করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ‘আত্মীয়রা আত্মীয়দের বিবাহ করো না…’- মর্মে বর্ণিত কথাটি হাদীছ নয়। সম্ভবতঃ ইমাম গাযালী তাঁর আল-ওয়াসীত্ব ও ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থে (২/৪১) এটিকে কয়েকটি হাদীছের মধ্যে উল্লেখ করায় অনেকে ধোঁকায় পতিত হয়েছেন। আসলে হাদীছ হিসাবে এর কোন ভিত্তি নেই (যঈফাহ হা/৫৩৬৫)। তাছাড়া এটি কুরআন ও হাদীছের বিরোধী। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমরা তোমার জন্য হালাল করেছি ঐসব স্ত্রীদের, যাদেরকে তুমি মোহর দিয়েছ এবং ঐসব দাসীদের, যাদেরকে আল্লাহ তোমার জন্য গণীমত হিসাবে প্রদান করেছেন। আর তোমার চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন ও খালাতো বোনকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে (আহযাব ৩৩/৫০)। আর রাসূল (ছাঃ) তার মেয়ে ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহ দেন আপন চাচাতো ভাই আলী (রাঃ)-এর সাথে (শারবীনী, মুগনিল মুহতাজ ৪/২০৬)। অপর দুই মেয়ের বিবাহ দেন আপন চাচা আবু লাহাবের দুই ছেলের সাথে। তিনি নিজেও উম্মে সালামা, আয়েশা, উম্মে হাবীবাসহ অনেক কুরায়েশী আত্মীয়াকে বিবাহ করেন।
প্রশ্ন (২৩৩) : মাসিক অবস্থায় সহবাসের মাধ্যমে আমি গর্ভবতী হয়েছি। স্বামী বলছেন, এ অবস্থায় সহবাসে গর্ভধারণ করলে তৃতীয় লিঙ্গের বাচ্চা হয়। তাই গর্ভপাত করতে হবে। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : প্রথমতঃ মাসিক অবস্থায় স্ত্রী মিলন হারাম। কেউ যদি অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে এরূপ করে, তবে তাকে তওবা করতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৫৭১)। আর কেউ জ্ঞাতসারে করলে তাকে তওবার সাথে সাথে কাফফারা প্রদান করতে হবে। আর এক্ষেত্রে কাফফারা হ’ল হায়েযের প্রথম দিকে মিলন করলে এক দীনার এবং শেষের দিকে মিলন করলে অর্ধ দীনার (আবুদাঊদ হা/২৬৪-৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৬৪০; ইরওয়া হা/১৯৭)। উল্লেখ্য যে, এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) সমান সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ, যার মূল্য বর্তমান বাজারে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয়তঃ হায়েয অবস্থায় মাতৃগর্ভে সন্তান আসলে সেটা হিজড়া হবে এ কথাটি কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। আল্লামা তারতূসী তাঁর ‘তাহরীমুল ফাওয়াহেশ’ গ্রন্থে উক্ত মর্মে একটি আছার বর্ণনা করেছেন, যা ইস্রাঈলী বর্ণনা তথা ভিত্তিহীন (বদরুদ্দীন শিবলী, আকামুল মারজান ১০৫, ১২১ পৃ.)। এছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এমন কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং উক্ত তথ্য যেমন সঠিক নয়, তেমনি হায়েয অবস্থাতেও কারো পেটে সন্তান আসলে গর্ভপাত ঘটানোর বিধান নেই।
প্রশ্ন (২৩৪) : একদিন ফাতেমা (রাঃ) কুরআন পাঠরত অবস্থায় পুরুষদের ৪টি বিবাহের অনুমতি সম্পর্কিত আয়াতটি সামনে আসলে তিনি তৎক্ষণাৎ নিচু কণ্ঠে কুরআন পড়তে থাকেন, যেন আলী (রাঃ) শুনতে না পান। এসময় আলী (রাঃ) মুচকি হেসে বললেন তুমি একাই চার জনের সমান। ঘটনাটির সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। এটি শী‘আদের আবিষ্কৃত কোন বর্ণনা হ’তে পারে। তাছাড়া এতে ফাতেমা (রাঃ)-এর মত ছাহাবীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা হয়। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর আমলে আলী (রাঃ) আবু জাহলের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করার ক্ষমতা রাখি না। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর মেয়ের সাথে আল্লাহর শত্রু আবু জাহলের মেয়ে কখনো একত্রিত হ’তে পারে না (বুখারী হা/৩১১০; মুসলিম হা/২৪৪৯)।
প্রশ্ন (২৩৫) : ১৪ বা ২১শে ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন দিবস পালন করা হয়। আমি এই দিনগুলো পালন না করলেও এই দিনে ফুল বিক্রয় করি। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ইসলামে দিবস পালনের কোন সুযোগ নেই। প্রশ্নোল্লিখিত দিবসদ্বয় অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা ও শিরকী চিন্তাধারায় পরিপুষ্ট। সুতরাং এসব দিবসে ফুল বিক্রয় করে উক্ত কাজে সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না (মায়েদাহ ৫/২)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, শিরক বা কুফরীর কাজে সহযোগিতা করা যাবে না। সেটা কাপড় বিক্রয় বা খাদ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে হৌক। কারণ এতে গুনাহের কাজে সহায়তা করা হয় (মাজমূউল ফাতাওয়া ২৫/৩২৯; ইকিতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ২/৫২০,৫২৬; আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/৪৮৯)। এক্ষণে তার কর্তব্য হবে অন্যায়ের সহযোগিতা থেকে বেঁচে থাকা এবং ভিন্নভাবে হালাল রূযী অনুসন্ধান করা (নাহল ১৬/১০৬; তাগাবুন ৬৪/১৬)।
প্রশ্ন (২৩৬) : ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ অন্য রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে বহু রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব। এক্ষণে এরূপ রোগী স্বেচ্ছায় অঙ্গদান করতে পারবে কি?
উত্তর : যদি মুমূর্ষু ব্যক্তি সজ্ঞানে তার কোন অঙ্গদান করে এবং জীবিত ব্যক্তি তাতে উপকৃত হয় তাহ’লে এতে দোষ নেই। তবে দান বাস্তবায়ন অবশ্যই মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর হ’তে হবে। জীবিত অবস্থায় হ’লে এমন অঙ্গ হওয়া যাবে না যার জন্য দানকারীর অঙ্গহানী হয়ে যায় কিংবা মৃত্যু ঘটে যায় বা মাইয়েতের ওয়ারিছদের জন্য বিব্রতকর হয়। যেমন হাত, পা বা চোখ ইত্যাদি। তবে কিডনী বা দেহাভ্যন্তরের কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দিতে পারে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪২/১২২, ৩৪/২৩৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৬৪-৬৫; শানক্বীতী, আহকামুল জিরাহাতিত তিবিবয়াহ ৩৫৪-৩৯১)। তবে একদল বিদ্বান সর্বাবস্থায় মানব দেহের সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলেন, মৃত্যুর পরেও মানব দেহের কোন অঙ্গ কাট-ছাঁট করা যাবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৬৪-৬৫; ফাতাওয়া দারিল ইফতা আল-মিছরিয়াহ ৭/৩৫৬)।
প্রশ্ন (২৩৭) : ফ্রিল্যান্সারদের কাছে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ফাইভার একটি ইস্রাঈলী প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে পাওয়া যেকোন কাজ করলে ৮০% কর্মী পায় বাকি ২০% ফাইভার পায়। এভাবে কাজের মাধ্যমে একটা ইহূদী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে উপকৃত করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : সাধারণভাবে অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য জায়েয। রাসূল (ছাঃ) খায়বারের ফসলি জমিগুলো ইহূদীদের চাষাবাদ করতে দিয়েছিলেন (বুখারী হা/২২৮৫; মিশকাত হা/২৯৭২)। তখন আল্লাহর রাসূল ছিলেন বিজয়ী ও শক্তিশালী। পক্ষান্তরে খায়বরের ইহূদীরা ছিল প্রজা। বর্তমানে সে অবস্থা নেই। বরং ইস্রাঈল সরকার নিরীহ ফিলিস্তীনী মুসলমানদের উপরে যে মর্মান্তিক অত্যাচার চালাচ্ছে এবং আল-আক্বছা মসজিদকে বিভক্ত করার চক্রান্ত চালাচ্ছে, তাতে তাদের কোন কোম্পানীর সাথে ব্যবসা করা যথাসম্ভব উচিৎ নয়। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ কেবল তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছে। আর যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তারা তো যালিম (মুমতাহিনা ৬০/৮-৯)।
প্রশ্ন (২৩৯) : ছহীহ আক্বীদা-আমল গ্রহণের পর আমি চাকুরীস্থলে বাহ্যিক আমলগুলো বিশুদ্ধ নিয়মে করতে পারলেও গ্রামের বাসায় মানুষের মন্দ কথার কারণে করতে পারি না। এতে কি আমি পাপী হব? আমার করণীয় কি?
উত্তর : সকল স্থানে ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার চেষ্টা করবে। কারণ কারো নিকট সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা গোপন করা বা তার বিপরীত আমল করা জায়েয নয়। কেবলমাত্র জীবননাশের আশংকা থাকলে এটা করা যায়। যেমন করেছিলেন ‘আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ)। যাকে কঠিনভাবে নির্যাতন করা হয় কুফরীর জন্য। অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি তাদের কথা মেনে নেন। পরে মুক্তি পেয়েই তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরবারে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ঐ সময় তোমার অন্তর কিরূপ ছিল’? তিনি বললেন, ‘ঈমানের উপর অবিচল’। তখন আল্লাহ নাযিল করেন, ‘ঈমান আনার পরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্রোধ এবং কঠিন শাস্তি। কিন্তু যাকে বাধ্য করা হয়, অথচ তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে (তার কোন চিন্তা নেই)’ (নাহল ১৬/১০৬)। একমাত্র বেলাল ছিলেন, যিনি তাদের কথা মত কাজ করতেন না, বরং কেবলি বলতেন আহাদ, আহাদ (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ১৪৩ পৃ.)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নির্দেশ করবো তা যথাসাধ্য পালন করবে এবং যে বিষয়ে নিষেধ করবো তা পরিত্যাগ করবে (মুসলিম হা/১৩৩৭; মিশকাত হা/২৫০৫)।
প্রশ্ন (২৪০) : বাসে বা ট্রেনে ভ্রমণকালে কারো স্বপ্নদোষ হ’লে সফর অবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করতে পারবে কি?
উত্তর : যদি ওয়াক্তের মধ্যে অবতরণ করে গোসল করে ছালাত আদায়ের সুযোগ থাকে, তাহ’লে তাই করবে। নইলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (নিসা ৪/৪৩; আবুদাঊদ হা/৩৩৪; ইরওয়া হা/১৫৪)।
প্রশ্ন (২৪১) : আমার মামা সাধারণভাবে স্বচ্ছল। কিন্তু চিকিৎসার জন্য তার অনেক অর্থের প্রয়োজন। এক্ষণে আমি আমার যাকাত থেকে তাকে সাহায্য করতে পারব কি?
উত্তর : চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মত সম্পদ মামার না থাকলে তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। কারণ কুরআনে যে সকল ব্যক্তিদের যাকাত দিতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে ‘মিসকীন’ বা ‘অভাবগ্রস্ত’ অন্যতম। সুতরাং চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে সত্যিকার অর্থে অক্ষম হ’লে তিনি ‘অভাবগ্রস্ত’ হিসাবে গণ্য হবেন ও যাকাতের হকদার হবেন’ (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৫/৩১৯; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১০/০২)।
প্রশ্ন (২৪২) : সিজদার সময় মহিলারা স্বীয় পেটকে রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে কি? দলীল সহ জানতে চাই।
উত্তর : এ মর্মে তিনটি জাল ও যঈফ হাদীছ পাওয়া যায় (বায়হাক্বী হা/৩৩২৪, ৩৩২৫, সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৫২, ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৭৮৭৯, যঈফাহ হা/৫৫০০)। অতএব এভাবে সিজদা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (২৪৩) : বিনোদনের উদ্দেশ্যে অমুসলিম দেশের পর্যটন স্থলে ভ্রমণ করা শরী‘আতসম্মত কি? বিশেষতঃ যেসব স্থানে অমুসলিম কৃষ্টি-কালচার এবং অশ্লীলতার সম্মুখীন হওয়ার প্রকট সম্ভাবনা রয়েছে?
উত্তর : অশ্লীলতা বা গুনাহে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেসব পর্যটন স্থলে যাওয়া হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)। বরং আল্লাহ তা‘আলা সফর করতে বলেছেন যেখানে গেলে তাঁর সৃষ্টির রহস্য অনুধাবন করা যাবে এবং পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির শাস্তির কথা জানা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, তুমি বল, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ কিভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন পুনরায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্ত্তর উপরে সর্বশক্তিমান’ (আনকাবুত ২৯/২০)। তিনি আরো বলেন, বলে দাও! তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর। অতঃপর দেখ মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি কেমন হয়েছে’ (আন‘আম ৬/১১)।
প্রশ্ন (২৪৪) : বিবাহের পর বিয়ের রাতেই মিলনের পূর্বে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে পৃথক পৃথক তিন তালাক দিতে হবে, না এক তালাক দিলেই যথেষ্ট হবে। এরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রী ইদ্দত পালন করবে কি? এক্ষণে তালাকের পর উক্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে করণীয় কি?
উত্তর : বিবাহের পর মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে এক তালাকই যথেষ্ট। এর মাধ্যমে স্ত্রী তালাকে বায়েন হয়ে যাবে। রাজ‘আত করার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তাকে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক দিতে হবে এবং স্ত্রীকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না (আবুদাঊদ হা/২১১৪; ইরওয়া হা/১৯৩৯)। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে থাক এবং তাদের মোহর নির্ধারণ করে থাক, তবে তাদেরকে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক প্রদান কর। অবশ্য যদি স্ত্রীরা মোহর মাফ করে দেয়‘ (বাক্বারাহ ২/২৩৭)। তিনি আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদের বিবাহ করবে; অতঃপর তাকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিবে, তখন তোমাদের জন্য তাদের উপর কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে। অতএব তাদেরকে কিছু সম্পদ দিবে ও সুন্দরভাবে বিদায় করবে’ (আহযাব ৩৩/৪৯)। এক্ষণে তালাকদাতা স্বামী তাকে পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে নতুন মোহর ও ঈজাব-কবূলের মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদন করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৩৭০, ৩৮৯, ৩৯৭; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৯/০২)।
প্রশ্ন (১৪৫) : বাংলাদেশ খেলায় জিততে পারবে না অথবা তুমি পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে না। এ ধরনের কথা কি শিরকের আওতায় পড়ে?
উত্তর : এই ধরনের বাক্য তিন প্রকারের অর্থ বহন করে। (১) ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া। এটা শিরক। কারণ ভবিষ্যতের বিষয় আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না (হূদ ১১/১২৩; আলে ইমরান ৩/১৭৯)। (২) লক্ষণ দেখে বা দূরদৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে কোন কথা বলা। এটা শিরক নয়। যেমন চিকিৎসকেরা রোগীর লক্ষণ দেখে রোগের সংবাদ দেন। আবার চেহারা দেখেও কারো বৈশিষ্ট্য অনুমান করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ কিছু বান্দা আছে যারা কিছু নিদর্শন দেখে লোকদের চিনতে পারে (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/২৯৩৫; ছহীহাহ হা/১৬৯৩)। (৩) সতর্ক করা। ভবিষ্যতের কোন বিষয়ে সতর্ক করার জন্য এরূপ কথা বলা, যা মুবাহ। যেমন শিক্ষক ছাত্রকে বলল, তুমি এভাবে পড়লে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে না। তবে সর্বদা সন্দেহপূর্ণ কথা বলা থেকে বিরত থাকা উত্তম।
প্রশ্ন (২৪৬) : আমাদের এলাকার মসজিদের সভাপতি ও ইমাম ছাহেব মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে কাফের বলে আখ্যায়িত করেন। উক্ত ইমামের পিছনে ছালাত হবে কি?
উত্তর : মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মত প্রসিদ্ধ ছাহাবীকে কাফের আখ্যাদানকারী ব্যক্তি নিজেই কুফরীতে পতিত হয়েছে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে কাফের বলল, তাদের দু’জনের একজন কাফের হবে’ (মুসলিম হা/৬০)। অতএব তার এই ভ্রান্ত আক্বীদা পরিবর্তন না করলে তার পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে না। বরং বিকল্প মসজিদ থাকলে সেখানে গিয়ে ছালাত আদায় করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৯১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২/৭৩)।
প্রশ্ন (২৪৭) : এক বছর পূর্বে ছেলে বিদেশে থাকা অবস্থায় মা মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশে আসার পর ছেলে মায়ের কবরে গিয়ে জানাযার ছালাত আদায় করতে পারবে কি?
উত্তর : পারবে। কেউ মারা গেলে এবং তার জানাযায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে তার কবরকে সামনে রেখে একাকী বা জামা‘আতের সাথে মাইয়েতের জন্য যে কোন দিন জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ একাধিক কবরের উপর জানাযার ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী হা/১৩২১; নাসাঈ হা/২০২২; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৩/৩৬৬)। এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ যে সকল কবরের উপর জানাযার ছালাত আদায় করেছেন সেগুলোর কোনটি ছিল দাফনের একদিন পরে, কোনটি তিনদিন পরে আবার কোনটি সাত বছর পরে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ১৬/৩৪-৩৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৪৬)।
প্রশ্ন (২৪৮) : জনৈক ব্যবসায়ী মানুষের সুবিধার জন্য খুব সামান্য লাভ রেখে সবকিছু বিক্রি করেন। যদিও বাজারদর বেশী থাকে। এভাবে বাজারদরের চেয়ে কম রেখে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্রয়-বিক্রয় ও তাগাদার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা নমনীয়তা পসন্দ করেন’ (তিরমিযী হা/১৩১৯; ছহীহাহ হা/৮৯৯)। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে ব্যক্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং নিজের প্রাপ্য আদায়ের জন্য চাওয়ার ক্ষেত্রে সহনশীল হয়’ (বুখারী হা/২০৭০; মিশকাত হা/২৭৯০)। উক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে যে, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যারা ক্রেতার প্রতি দয়াশীল হয় আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন। আর পণ্যের মূল্য তুলনামূলক কম গ্রহণ করা দয়াশীলতার অন্যতম অংশ। তবে অন্যের ক্ষতি করার জন্য বা ব্যবসায় বাড়তি সুবিধা লাভের জন্য যদি কেউ অন্যায়ভাবে এরূপ করেন, তবে তা নাজায়েয হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ যেন নিজের ক্ষতি না করে এবং অপরের ক্ষতি না করে (ইবনু মাজাহ হা/১৯০৯, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (২৪৯) : ৬ মাস স্বামী-স্ত্রী পৃথক ছিল এমনকি সাক্ষাৎও হয়নি। এমতাবস্থায় উভয়ের মধ্যে তালাক হ’লে স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হবে কি?
উত্তর : ইদ্দত পালন করতে হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৭৪)। কারণ তালাক কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইদ্দত পালন করতে হয়। আল্লাহ বলেন, আর (সহবাসকৃত) তালাকপ্রাপ্তাগণ তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে (বাক্বারাহ ২/২২৮)। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ মর্মে একমত যে, তালাকপ্রাপ্তা নারী যেদিন তালাক পাবে, সেদিন থেকে তিন মাস ইদ্দত পালন করবে (আত-তামহীদ ১৫/৯৯)।
প্রশ্ন (২৫০) : ফরয ছালাত আদায়কালে নিষিদ্ধ সময় চলে আসলে ছালাত চালিয়ে যেতে হবে না ছেড়ে দিতে হবে?
উত্তর: ছালাত সম্পন্ন করবে। কারণ নিষিদ্ধ সময় কেবল নফল ছালাতের সাথে সম্পর্কিত। অতএব ফরয ছালাতের ক্বাযা বা মসজিদে প্রবেশকালীন ছালাত বা ত্বাওয়াফের ছালাত নিষিদ্ধ সময়েও আদায় করতে পারবে (মুসলিম হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৩; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১১/৪২)।
মন্তব্য করুন