প্রশ্নোত্তর

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৭

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-৭

প্রশ্ন (৩০১) : বাড়িতে মসজিদ হিসাবে একটি ঘরকে ছালাতের স্থান হিসাবে নির্দিষ্ট রেখে নিয়মিতভাবে সেখানে আযান দিয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে মসজিদে ছালাত আদায়ের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?
উত্তর : সক্ষম পুরুষের জন্য এটি জায়েয হবে না। কারণ ছালাত একটি সমষ্টিগত ইবাদত, যা মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে আদায় করা আবশ্যক (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/২০৫; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৩২৩)। তবে মহিলারা বাড়ির ভিতরে একটি কক্ষ নির্বাচন করে সেখানে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতে পারে বরং সেটি অধিকতর শ্রেয় (আহমাদ হা/২৭১৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪০)।
প্রশ্ন (৩০২) : জনৈকা নারীর স্বামী তিন মাস লাইফ সাপোর্টে কোমায় থাকার পর মারা গেছেন। এ সময়টুকু কি উক্ত নারীর ইদ্দতকাল থেকে বাদ যাবে?
উত্তর : মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে ইদ্দত পালন শুরু করবে। জীবনের অস্তিত্ব থাকে বলেই কোমায় রাখা হয়। এক্ষণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকগণ ব্যক্তির ব্রেন এবং হার্ট উভয়টির মৃত্যু নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তাকে মৃত হিসাবে গণ্য করা যাবে না। অতএব স্বামীর মৃত্যুর পরেই নারী ইদ্দত পালন করবে (শানক্বীতি, আহকামুল জিরাহাতিত ত্বিববীইয়াহ ৩২৫ পৃ.; বাকর আবু যায়েদ, ফিক্বহুন নাওয়াযেল ১/২৩২)।
প্রশ্ন (৩০৩) : ছালাতের মধ্যে ক্রন্দন করার বিধান কি? রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এভাবে ক্রন্দন করার দলীল পাওয়া যায় কি?
উত্তর : ছালাতে ক্রন্দন করা অধিক আল্লাহভীরু সৎকর্মশীল লোকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরও বৃদ্ধি পায়’ (ইসরা ১৭/১০৯)। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম ছালাতে ক্রন্দন করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর বর্ণনা করেন, আমি একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। এমতাবস্থায় তিনি ছালাত আদায় করছিলেন এবং ফুটন্ত পানির ডেগের শব্দের ন্যায় কাঁদছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, চাক্কীর শব্দের ন্যায় শব্দ করে কাঁদছিলেন (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১০০০)। আবুবকর (রাঃ) ছালাতে তেলাওয়াতকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন (বুখারী হা/৬৬৪, ৬৮২; মুসলিম হা/৪১৮)। আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ বলেন, আমি ওমরের পিছনে ফজরের ছালাত আদায় করছিলাম। আমি ছিলাম সব পিছনের কাতারে। তিনি সূরা ইউসুফের ৮৬ আয়াত পাঠ করছিলেন আর কাঁদছিলেন (বুখারী ৩/২০৮; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬৫)। ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত মর্মে অধ্যায় রচনা করেছেন। তিনি বলেন, باب إِذَا بَكَى الإِمَامُ فِى الصَّلاَةِ (ইমাম যখন ছালাতে ক্রন্দন করেন সম্পর্কে অধ্যায়)। অতএব আল্লাহর ভয়ে ছালাতে কান্না করা সালাফদের আমল দ্বারা প্রমাণিত (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৩৮)। তবে দুনিয়াবী কোন কারণে ছালাতের ভিতর আওয়ায করে ক্রন্দন করলে ছালাত বিনষ্ট হয়ে যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪১)।
প্রশ্ন (৩০৪) : কেউ যদি মানত করে থাকে যে তার ছেলে সন্তান হ’লে তাকে মাদ্রাসায় পড়াবে। কিন্তু জন্মের পর এখন সে তাকে স্কুলে পড়াচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে কি? এজন্য কোন ক্ষতির শিকার হ’তে হবে কি?
উত্তর : এটা ঠিক হবে না। কারণ মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব। এই মানত ভঙ্গের জন্য আল্লাহ তার অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে দিবেন এবং পরকালে তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন (তওবাহ ৯/৭৫-৭৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য নযর মানে, সে যেন (তা পুরা করে) তার আনুগত্য করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করার মানত করে, সে যেন (তা পূর্ণ না করে এবং) তাঁর অবাধ্যতা না করে’ (আবুদাউদ হা/৩২৮৯; ইরওয়া হা/২৫৮৯)। এক্ষণে কেউ যদি যৌক্তিক কারণে মানত পূর্ণ করতে না পারে তাহ’লে কাফ্ফারা দিবে (ছহীহাহ হা/৪৭৯)। আর মানতের কাফফারা হ’ল কসম ভঙ্গের কাফফারার মতই। আর তা হ’ল দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো বা পোষাক দান করা অথবা একটি দাস মুক্ত করা। এতে অক্ষম হ’লে তিন দিন ছিয়াম পালন করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
প্রশ্ন (৩০৫) : আমাদের দেশে কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একসাথে ছেলে-মেয়েদের ক্লাস নিতে হয়। এমন প্রতিষ্ঠানে কোন নারী কি পর্দার সাথে শিক্ষিকা হিসাবে চাকুরী করতে পারবে?
উত্তর : এমন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা পর্দার সাথে হ’লেও নারীদের জন্য সমীচীন নয়। কারণ এমন কর্মস্থলে নারী-পুরুষের বাধাহীন সহাবস্থানের কারণে ফিৎনার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এজন্য নারীবান্ধব কর্মস্থল খুঁজে নিতে হবে। কোন বিকল্প না থাকলে শারঈ পর্দার বিধান যথাযথভাবে মেনে পাঠদান বা চাকুরী করবে (আহযাব ৩৩/৩২; তওবা ৯/৭১; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)। স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মেনে মহিলারা এরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে পারে। (১) চক্ষু অবনমিত রাখা (নূর ২৪/৩১)। (২) শারঈ পর্দার পোষাক পরিধান করা (নূর ২৪/৩১; আহযাব ৩৩/৫৯)। (৩) অন্যকে আকৃষ্ট না করা (আহযাব ৩৩/৩২; নূর ২৪/৩১)। (৪) নিজে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া (মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪)। (৫) সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা (ছহীহাহ হা/১০৩১)। (৬) কারো সাথে নির্জনে অবস্থান না করা (ছহীহাহ হা/৪৩০)। (৭) পরপুরুষদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকা (আহযাব ৩৩/৫৩)।
প্রশ্ন (৩০৬) : ২৩ বছরের যুবক এইচ.এস.সি পাস করেছে। পিতার ইনকাম হালাল-হারাম মিশ্রিত। পিতা চায় তার খরচে সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুক। আর ছেলে পিতার হারাম ইনকাম ভক্ষণ না করে চাকুরী করে ইনকাম করতে চায়। এক্ষণে তার জন্য করণীয় কি?
উত্তর : সন্তান পিতাকে সম্পূর্ণভাবে হারাম বর্জন করে হালাল ইনকামে উৎসাহিত করবে। তাদেরকে হালাল রিযিক উপার্জনের গুরুত্ব বুঝাবে। তবে এরপরেও যদি পিতা হারাম বর্জন না করে, তবুও তার উপার্জন থেকে সন্তানের পড়ার খরচ গ্রহণ করায় দোষ নেই। কারণ কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪, প্রভৃতি; ওছায়মীন, তাফসীরুল কুরআন ১/১৯৮)। তবে এক্ষেত্রে সন্তান যদি নিজের হালাল উপার্জনে চলতে পারে, তাহ’লে সেটাই তার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে।
প্রশ্ন (৩০৭) : ভালো ঔষধ হ’লে তার প্রচারণার জন্য এবং প্রেসক্রিপশনে লেখার শর্তে ঐ কোম্পানীর সাথে আর্থিক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে কি?
উত্তর : যাবে না। নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে এসব উপহার গ্রহণ করলে ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ নির্বিশেষে হাদিয়া প্রদানকারী কোম্পানীর ঔষধ রোগীদেরকে লিখে দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করতেই উক্ত হাদিয়া প্রদান করা হয়ে থাকে, যা ঘুষ হিসাবে গণ্য (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ২৩/৫৭০)। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঘুষখোর ও ঘুষ প্রদানকারীকে লা‘নত করেছেন (তিরমিযী হা/১৩৩৬; মিশকাত হা/৩৭৫৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২২১১)।
প্রশ্ন (৩০৮) : চাকুরীর পরীক্ষায় যোগ্য নয় এমন কেউ যদি ঘুষ দিয়ে চাকুরী নেয়, তাহ’লে তার চাকুরী করা এবং এর উপার্জন ভক্ষণ করার হালাল হবে কি?
উত্তর : ঘুষ আদান-প্রদান কবীরা গুনাহ। এদের উপর আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয় (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭৫৩)। সুতরাং কোন অযোগ্য ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিলে সে নিজে যেমন অপরাধী, তেমনি অপরের হক নষ্ট করার জন্য দায়ী হবে। এমতাবস্থায় সে খালেছ নিয়তে তওবা ও ইস্তিগফার করবে এবং উক্ত চাকুরী ছেড়ে দিয়ে উত্তম রিযিক অনুসন্ধান করবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৩১-৩২)। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ খুলে দেন এবং এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন’ (তালাক ৬৩/২-৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি আল্লাহর ভয়ে যা কিছুই পরিত্যাগ কর, তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমাকে অধিকতর উত্তম কিছু প্রদান করবেন’ (আহমাদ হা/২০৭৩৯, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩০৯) : কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পরামর্শ অগ্রাধিকার পাবে, না-কি ইস্তেখারার ছালাত অগ্রাধিকার পাবে?
উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা কোন কাজ করার পূর্বে পরামর্শ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার রাসূল (ছাঃ) কোন কাজ করার পূর্বে ইস্তেখারার ছালাত আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এক্ষণে অধিকাংশের মতে, প্রথমে ইস্তেখারার ছালাত আদায় করবে। অতঃপর বিজ্ঞজনদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে (ওছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ৪/১৬২; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১১/৭৩)। তবে সঠিক কথা হ’ল, এটা সুনির্দিষ্ট নয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) কখনও ইস্তেখারা করেছেন, কখনও করেননি, বরং ছাহাবীদের পরামর্শকেই যথেষ্ট মনে করেছেন। আবার প্রয়োজনে কয়েকবারও ইস্তেখারা করা যায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা পর্যন্ত। সুতরাং পরিবেশ ও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে যে কোনটি আগে বা পরে করা যেতে পারে (দ্র. ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আল-ইসলাম সওয়াল জওয়াব নং : ৪৪০০৪৭)।
প্রশ্ন (৩১০) : আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব প্রতিদিন ফজরের ছালাতে রুকূর পর হাত তুলে কুনূত পাঠ করে। এভাবে নিয়মিতভাবে করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ফজরে নিয়মিত কুনূত পাঠ করা সমীচীন নয়। কারণ ফজরে নিয়মিত কুনূত পাঠ করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ এবং মুনকার (যঈফাহ হা/১২৩৮)। বরং রাসূল (ছাঃ) যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তখন ফরয ছালাতে কুনূত পাঠ করেছেন। কখনও একমাস ব্যাপীও কুনূত পাঠ করেছেন (বুখারী হা/১০০২)। তবে একে কেবল ফজর ছালাতের সাথে খাছ করা যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৪২-৪৫)। আর কোন ইমাম যদি ফজরের ছালাতে নিয়মিত কুনূত পাঠ করেন তাহ’লে তার পিছনে মুছল্লীরা তাকে অনুসরণ করে ছালাত আদায় করায় বাধা নেই (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)। তবে ইমামকে সঠিক বিষয়টি জানানো মুছল্লীদের দায়িত্ব। কারণ কতিপয় বিদ্বান ফজরে নিয়মিত কুনূত পাঠ করাকে বিদ‘আত বলেছেন (তিরমিযী হা/৪০২; মিশকাত হা/১২৯২; ইরওয়া হা/৪৩৫)।
প্রশ্ন (৩১১) : পিতা-মাতা সন্তানের সংসার ভাঙ্গার কারণে ক্বিয়ামতের দিন কেমন শাস্তির মুখোমুখি হবেন?
উত্তর : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো কবীরা গুনাহ। যদি পিতা-মাতাও দ্বীনী স্বার্থ ছাড়া দুনিয়াবী কারণে সন্তানের সংসার ভাঙ্গেন, তবে তারাও কবীরা গুনাহগার হবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে, মালিকের বিরুদ্ধে কর্মচারীকে প্ররোচিত করে, ঐ ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয় (আবুদাউদ হা/২১৭৫; মিশকাত হা/৩২৬২; ছহীহুত তারগীব হা/২০৪)। এটি ইবলীসের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইবলীস তার আসনকে পানির উপর স্থাপন করে। অতঃপর মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার নির্ধারিত সৈন্যদলকে পাঠায়। তাদের মধ্যে যে মানুষকে সবচেয়ে বেশী বিপথগামী করতে পারে, তাকে ইবলীস অতি আপন করে নেয়। তাদের কেউ যখন এসে বলে আমি এই এই ভাবে বিভ্রান্ত করেছি, তখন ইবলীস বলে তুমি কিছুই করনি। কিন্তু যখন তাদের কেউ এসে বলে যে, আমি অমুক স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ না করে ছাড়িনি। তখন তাকে সে বলে, তুমি কতই না সুন্দর! এরপর সে তাকে টেনে নেয় ও বুকে জড়িয়ে ধরে’ (মুসলিম হা/২৮১৩; মিশকাত হা/৭১)।
প্রশ্ন (৩১২) : সব পশু-পাখি বা জিনিসপত্র কি আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে?
উত্তর : আল্লাহর সকল সৃষ্টি তথা জীব ও জড় সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। আল্লাহ বলেন, ‘সাত আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যেকার সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা বর্ণনা তোমরা বুঝতে পারো না’ (ইসরা ১৭/৪৪)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই স্ব স্ব দো‘আ ও তাসবীহ জানে’ (নূর ২৪/৪১)। এই আয়াতের তাফসীরে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এটা জীব-জন্তু, উদ্ভিদ এবং জড়পদার্থসহ সকল কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/৭৯, ৬/৭২)। ইমাম নাখাঈ বলেন, ‘যার মধ্যে রূহ আছে সেটাও তাসবীহ পাঠ করে এবং যার মধ্যে রূহ নেই সেটাও তাসবীহ পাঠ করে এবং দরজার চৌকাঠও’ (আল-জামে‘ লি আহকামিল কুরআন ১০/২৬৮)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে খাবার খেতাম এবং খাদ্যের তাসবীহ পাঠ শুনতে পেতাম’ (বুখারী হা/৩৫৭৯; তিরমিযী হা/৩৬৩৩; মিশকাত হা/৫৯১০)।
প্রশ্ন (৩১৩) : ছেলেদের জন্য রূপার আংটি ব্যবহার করা জায়েয হবে কি? এটা কোন পর্যায়ভুক্ত পাপ?
উত্তর : পুরুষেরা রূপা বা চাঁদির আংটি ব্যবহার করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম চাঁদির আংটি ব্যবহার করেছেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, যখন নবী করীম (ছাঃ) পারস্যের রাজা কিছরা এবং রোম সম্রাট কায়ছার এবং নাজাশীর নিকট পত্র লিখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন তাঁকে বলা হ’ল, তারা এমন লিপি গ্রহণ করে না যা মোহর বা সীলযুক্ত নয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি আংটি তৈরি করালেন, তার গোল চাক্কিটি ছিল রূপার। তাতে খোদাই করা ছিল ‘মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ (মুসলিম হা/২০৯২; মিশকাত হা/৪৩৮৬)। আর বুখারীর বর্ণনায় আছে, আংটির লেখাটি তিন পংক্তি বা লাইনে ছিল। মুহাম্মাদ এক পংক্তিতে, রাসূল এক পংক্তিতে এবং আল্লাহ এক পংক্তিতে (বুখারী হা/৫৮৭২)। অতএব ছেলেরা প্রয়োজনে রূপার আংটি ব্যবহার করতে পারবে। উল্লেখ্য যে, পুরুষের জন্য সোনা ভিন্ন অন্য কোন ধাতু দিয়ে তৈরী অলংকার ব্যবহার করা যাবে না, যদি তা নারীদের সদৃশ হয়। যেমন কানের দুল, চেইন, ব্রেসলেট। এছাড়া কোন ভ্রান্ত আক্বীদা নিয়েও আংটি বা ব্রেসলেট ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
প্রশ্ন (৩১৪) : রাসূল (ছাঃ) যেদিন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট অবস্থান করতেন সেদিন লোকেরা অধিকহারে হাদিয়া পাঠাত। রাসূল (ছাঃ)-কে এ বিষয়ে লোকদের নির্দেশনা দিতে বলা হ’লেও তিনি তা করেননি কেন?
উত্তর : এটি রাসূল (ছাঃ) এবং আয়েশা (রাঃ)-এর চাহিদার ভিত্তিতে লোকেরা করত না। বরং তারা আয়েশা (রাঃ)-এর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে করতেন। কারণ আয়েশা (রাঃ) একমাত্র স্ত্রী যার সাথে একই কাপড়ে থাকাকালীন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট অহী নাযিল হয়েছিল। লোকেরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে হাদিয়া প্রদানের জন্য আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে তাঁর অবস্থানের দিন হিসাব করত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা আমার সতীনগণ উম্মু সালামা (রাঃ)-এর নিকট সমবেত হয়ে বললেন, হে উম্মু সালামাহ! আল্লাহর কসম! লোকজন তাদের হাদিয়াসমূহ প্রেরণের জন্য আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে অবস্থানের দিন গণনা করে। আয়েশা-এর মত আমরাও কল্যাণ আকাঙ্ক্ষা করি। আপনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলুন, তিনি যেন লোকদের বলে দেন, তারা যেন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যেদিন যেখানেই অবস্থান করেন সেখানেই তারা হাদিয়া পাঠায়। উম্মু সালামাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে এ বিষয় উল্লেখ করলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তার কথা শুনে মুখ ফিরিয়ে নেন। পরে উম্মে সালামার গৃহে অবস্থানের জন্য রাসূল (ছাঃ) আসলে তিনি পুনরায় তাকে ঐ কথা বলেন। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন। তৃতীয়বারেও তিনি রাসূলকে ঐ কথা বললে তিনি বললেন, হে উম্মে সালামা! আয়েশা-এর ব্যাপারে তোমরা আমাকে কষ্ট দিয়ো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে আয়েশা ছাড়া অন্য কারো শয্যায় একই কাপড়ে শায়িত অবস্থায় আমার উপর অহী নাযিল হয়নি (বুখারী হা/২৫৮১, ৩৭৭৫)। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর নিষেধ না করার বিষয়টি ইনছাফ বহির্ভূত নয়; বরং সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত ছিল।
প্রশ্ন (৩১৫) : কাপড়ে যদি বীর্য লেগে যায় এবং গাঢ় না হওয়ায় শুকানোর পর উঠিয়ে ফেলা সম্ভব না হয় তাহ’লে পুরো কাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে, নাকি পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে?
উত্তর : পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে। জ্যেষ্ঠ তাবেঈ হুমাম বিন হারেছ একদিন আয়েশা (রাঃ)-এর মেহমান হন। এমতাবস্থায় সকালে তিনি কাপড় ধুতে থাকলে আয়েশা (রাঃ)-এর দাসী সেটা দেখেন এবং তাঁকে সেটা অবহিত করেন। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল যে, সে বীর্য দেখলে কেবলমাত্র সে স্থানটি ধুয়ে ফেলবে। আর না দেখা গেলে স্থানটিতে কেবল পানি ছিটিয়ে দিবে। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য ঘষে তুলে ফেলেছি এবং তিনি সেই কাপড়েই ছালাত আদায় করেছেন’ (আবুদাঊদ হা/৩৭১; মুসলিম হা/২৮৮)। অন্য হাদীছে রয়েছে, ইবনু আববাস (রাঃ)-কে কাপড়ে বীর্য লেগে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এগুলো কফ বা শ্লেষার মত। মুছে বা তুলে ফেলে দিলেই যথেষ্ট হবে (দারাকুৎনী হা/৪৪৭; যঈফাহ হা/৯৪৮-এর আলোচনা)।
প্রশ্ন (৩১৬) : ছোট বাচ্চা, গরু বা অন্য কিছু হারিয়ে গেলে তা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : মসজিদের মাইক আযানের জন্য ব্যবহৃত হবে অন্য কাজে নয়। তাছাড়া হারানো সম্পদ খোঁজার জন্য মসজিদের মাইক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (মুসলিম হা/৫৬৮)। তবে বিশেষ সামাজিক প্রয়োজনে যেমন গ্রামে ডাকাত পড়লে, আগুন লাগলে বা শিশু হারিয়ে গেলে তার নিরাপত্তার জন্য মাইকে ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে (ওছায়মীন, দুরুসু ও ফাতাওয়াল হারামিল মাক্কী লিক্বা-১৮; মুহাম্মাদ আল-আমীন হারারী, আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ ৮/২১৩)।
প্রশ্ন (৩১৭) : বাজারে বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংক পাওয়া যায়, যা পান করলে শরীরে এনার্জি তৈরী হয়। ছালাতে মনোযোগ পাওয়া যায়। এগুলো বৈধ হবে কি?
উত্তর : যে কোন প্রকার এনার্জি ড্রিংকে যে এ্যালকোহল মিশ্রিত থাকে, তা প্রমাণিত। যদিও অতিরিক্ত ক্যাফেইন মিশ্রিত থাকায় সেটি অনেক সময় অনুভব করা যায় না। (www.drink aware.co.uk/)। আর কোন খাদ্য ও পানীয়তে অ্যালকোহল অর্থাৎ নেশাদার দ্রব্য মিশ্রিত থাকলে তা গ্রহণ করা হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নেশা আনয়নকারী প্রত্যেক বস্ত্তই মদ এবং প্রতিটি নেশাদার হারাম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৩৮)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘যার বেশী পরিমাণে মাদকতা আসে, তার কম পরিমাণও হারাম’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৬৪৫, সনদ ছহীহ)। অধিকন্তু এটি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং ছালাতের মনোযোগ আনার নামে এ ধরনের মাদকদ্রব্য থেকে সর্বতোভাবে দূরে থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৩১৮) : মসজিদের লাশবাহী কাঠের খাটিয়া পুরাতন হয়ে গেলে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে না জ্বালানী হিসাবে বিক্রি করে মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে?
উত্তর : মসজিদের পুরাতন জিনিসপত্র বিক্রয় করে মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করায় কোন বাধা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/৯২)।
প্রশ্ন (৩১৯) : কবরের কোন পদ্ধতিটি অধিক শুদ্ধ?
উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে কবরের দু’টি পদ্ধতি চালু আছে। ১. লাহাদ তথা বগলী কবর, যা নবী করীম (ছাঃ)-এর কবর ছিল। ২. শাক্ক বা ছাদ কবর, যা বালিমাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (মুসলিম হা/৯৬৬; মিশকাত হা/১৬৯৩)। অতএব মাটি বুঝে যে কোন পদ্ধতির কবর দেওয়া যাবে।
প্রশ্ন (৩২০) : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে মসজিদে শিরনী বা শিন্নী দেওয়া হ’লে তা খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে শিরনী নামে কোন পরিভাষা নেই। বরং কেউ মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজন মাইয়েতের পরকালীন মুক্তির জন্য দো‘আ করবে এবং ছাদাক্বা করবে। যা গোপনে করাই উত্তম। আর প্রকাশ্যে করলে ফকীর-মিসকীনরাই তার বেশী হকদার (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৪/৩০৬; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৯/০২)। মসজিদে মাইয়েতের জন্য শিন্নী দেওয়ার প্রথা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের যুগে ছিল না। অতএব এগুলি পরিতাজ্য।
প্রশ্ন (৩২১) : মহিলাদের জন্য বাড়িতে থাকা অবস্থায় ফরয ছালাত জামা‘আতে না একাকী পড়া উত্তম?
উত্তর : বাড়িতে একাধিক মহিলা থাকলে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা উত্তম। উম্মে সালামা ও আয়েশা (রাঃ) জামা‘আতের সাথে বাড়িতে ছালাত আদায় করতেন এবং তাঁরা কাতারের মাঝে দাঁড়িয়ে ইমামতি করতেন (বায়হাক্বী হা/৫৩৫৫; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪৯৫৩; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১৫৩-৫৪ পৃ.)। আর কোন মহিলা পর্দা সহকারে মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না (আবুদাউদ হা/৫৬৭; মিশকাত হা/১০৬২)। কারণ এর মাধ্যমে সেখানে তারা ইসলামের বিধি-বিধান এবং আদব -আখলাক শিখতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২১৩)।
প্রশ্ন (৩২২) : আমাদের মসজিদে জুম‘আর পূর্বে বয়ান করা হয়। তারপর সুন্নাত ছালাতের জন্য সময় দেওয়া হয়। এটা কি শরী‘আতসম্মত?
উত্তর : এটি শরী‘আতসম্মত নয়। কারণ খুৎবার পূর্বে কোন বয়ান নেই। এতে দু’টি বিদ‘আত রয়েছে- ১. জুম‘আর সুন্নাতী খুৎবার পূর্বে একটি বিদ‘আতী খুৎবা চালু করা এবং ২. জুম‘আর পূর্বে সুন্নাতে রাতেবা চালু করা। অথচ জুম‘আর পূর্বে নফল ছালাত থাক দারব ১৩/২৭৮; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)। বরং খুৎবার আগ পর্যন্ত মুছল্লী যত রাক‘আত খুশী নফল ছালাত আদায় করতে পারে। আর কেউ খুৎবা অবস্থায় উপস্থিত হ’লে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ পড়ে বসবে (মুসলিম হা/৮৭৫)।
প্রশ্ন (৩২৩) : টিকিট ছাড়া রেল ভ্রমণ করলে গুনাহ হবে কি? ট্রেনে চলাচলকালে অনেক সময় টিকেট না থাকলে টিটিকে কিছু হাদিয়া দিলে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এভাবে যাতায়াত করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা বৈধ নয়। এক্ষণে কোন কারণে টিকিট কাটা সম্ভব না হ’লে ট্রেনে দায়িত্বরত কর্মকর্তার নিকট থেকে টিকিট সংগ্রহ করবে। তিনি টিকিট দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে যথাযথ ভাড়া প্রদান করে নিজেকে গুনাহমুক্ত করবে (বুখারী হা/৩৬০৩; মুসলিম হা/১৮৪৩)। আর উক্ত টাকা সরকারকে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গুনাহগার হবে (আবুদাউদ হা/২৯৪৩; ছহীহুত তারগীব হা/৭৭৯)।
প্রশ্ন (৩২৪) : সরকারী খাস জমি দখলে রেখে ভোগ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : সরকারী খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করা যাবে না। তবে সরকারের সাধারণ অনুমতি থাকলে চাষাবাদে বাধা নেই। যেমন নিজ জমির সম্মুখভাগে অবস্থিত রাস্তার জমি ব্যবহার করা তার জন্য অনুমোদিত। আর যদি কোন অরক্ষিত খাস জমিতে সরকারের কোন নির্দেশনা না থাকে, তাহ’লে সেখানে যে চাষাবাদ করবে, সে-ই ফসলের অধিকারী হবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৫/১৮; ছালেহ ফাওযান, আল মুলাখখাছুল ফিক্বহী ২/১৭৯)।
প্রশ্ন (৩২৫) : আমি স্ত্রীর সাথে রাগ করে আমার মাকে বলেছিলাম যে তাকে আমি তালাক দিব। কিন্তু আমার মা একথা স্ত্রীকে বলতে নিষেধ করেছিল। এক্ষণে কেবল মাকে বলার মাধ্যমে তালাক হবে কি?
উত্তর : এমন অনিশ্চয়তাপূর্ণ এবং ভবিষ্যৎবাচক কথা বলায় তালাক হবে না (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/৬১)। অতএব তারা যথারীতি সংসার করে যাবে।
প্রশ্ন (৩২৬) : অজ্ঞতাবশতঃ কেউ শিরকে রত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার বিচার কিভাবে করবেন?
উত্তর : শিরক মহাপাপ, যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না। তবে কোন ব্যক্তি দ্বীনের সঠিক দাওয়াত না পেলে কিংবা অনিচ্ছাকৃত বা অজ্ঞতাবশত শিরকে লিপ্ত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ চাইলে তাকে মুক্তি দিতে পারেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩/২৩১; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৩৯; আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৪/৪৪৯)। কুরআন মাজীদে এসেছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা অজ্ঞতাবশে ভুল করি, সেজন্য আমাদের পাকড়াও করো না (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। এই দো‘আর জওয়াবে আল্লাহ বলেন, আমি ক্ষমা করে দিলাম (মুসলিম হা/১২৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চার ব্যক্তি ঝগড়া করবে। (১) বধির (২) নির্বোধ (৩) অতিবৃদ্ধ এবং (৪) যে ইসলামের দাওয়াত পায়নি (من مات في الفترة)। বধির বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে, অথচ আমি কিছুই শুনতে পাইনি। নির্বোধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি। আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোন দাওয়াতদাতা আমার নিকট আসেনি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট হ’তে আনুগত্যের শপথ নিবেন। এরপর তাদের নিকট একজন দূত প্রেরণ করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন তার উপর ঠান্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮৪১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩৪)।
প্রশ্ন (৩২৭) : আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব মসজিদের মধ্যে অনেক দিন যাবত গাজা খায়। ১ম বার ধরা পড়ার পর কমিটি তাকে ক্ষমা করে দেয়। তারপর ২য় বার ধরা পড়ার পরও কমিটি ক্ষমা করতে চায়। এরূপ ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : এরকম লোককে ইমাম হিসাবে রাখা যাবে না। কারণ ইমামতি একটি মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব, যার পিছনে অসংখ্য মুছল্লী ছালাত আদায় করেন। তবে বাধ্যগত অবস্থায় ফাসেক ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করলে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম যালেম ও ফাসেক ব্যক্তির পিছনে ছালাত আদায় করেছেন (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/১০০৩; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১২৩-১২৭, ৩০/১৪২)।
প্রশ্ন (৩২৮) : কবরস্থানের উন্নয়নের লক্ষ্যে কবরস্থানে বিভিন্ন প্রকার গাছ লাগানো যাবে কি? এছাড়া সেখানে কবরের উপর দিয়ে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : প্রথমতঃ কবরস্থান চাষাবাদের জায়গা নয়। দ্বিতীয়ত: কবরস্থানকে বাগানের সদৃশ সুসজ্জিত করা মূলত: ইহূদী-নাছারাদের কাজ, যার বিরোধিতা করা আবশ্যক। তৃতীয়ত: কবরস্থানে ছায়াদার বৃক্ষরোপণ বা ফুলগাছ লাগানোর নযীর সালাফে ছালেহীন থেকে পাওয়া যায় না। এজন্য আজও আরব বিশ্বের কবরস্থানগুলো শুষ্ক ও অনাড়ম্বর দেখা যায়। যেখানে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। এজন্য হাদীছে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বিদ্বানগণ কবরস্থানকে গাছ-পালায় সুসজ্জিত না করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৪৪৯-৪৫০; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/২; মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম, ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ৩/২০০)।
প্রশ্ন (৩২৯) : সাগরের পানি দোকানে ছিটিয়ে দিলে ব্যবসায় বরকত হয়, বেচাকেনা বেশী হয়। একথার কোন ভিত্তি আছে কি? এরূপ বিশ্বাস করা শিরক হবে কি?
উত্তর : এটি কুসংস্কার। এতে বিশ্বাস করা শিরক। কারণ এখানে আল্লাহকে বাদ দিয়ে সাগরের পানিকে ব্যবসায় বরকতদাতা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অথচ ব্যবসায় বরকত রয়েছে সত্য কথা বলা এবং পণ্যের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার মধ্যে (বুখারী হা/২০৭৯; মিশকাত হা/২৮০২)। এছাড়া ব্যবসার কার্যক্রম সকাল সকাল শুরু করাতেও বরকত রয়েছে (আবুদাউদ হা/২৬০৬; মিশকাত হা/৩৯০৮)।
প্রশ্ন (৩৩০) : জনৈক নারী পরিবারকে না জানিয়ে দু’জন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে এক ছেলেকে বিয়ে করেছিল। বর্তমানে ছেলেটি পালিয়ে গেছে। এদিকে মেয়ের পরিবার মেয়েটিকে বিবাহের জন্য চাপ দিচ্ছে। এক্ষণে ছেলেটি যেহেতু মেয়েটিকে তালাক দেয়নি এমতাবস্থায় মেয়েটি অন্য কোথাও বিবাহ করতে পারবে কি?
উত্তর : অভিভাবক বা সরকারী প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিবাহ না হওয়ায় উক্ত বিবাহ বৈধ হয়নি (আবুদাউদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)। এমতাবস্থায় মেয়েটি অবৈধ বিবাহের পাপ থেকে খালেছ তওবা করবে। অতঃপর ইসলামী বিধান অনুযায়ী আদালতের মাধ্যমে খোলা‘ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং এক ঋতুকাল ইদ্দত পালন শেষে অন্যত্র বিবাহ করবে (তিরমিযী হা/১১৮৫; নাসাঈ হা/৩৪৯৭)।
প্রশ্ন (৩৩১) : আমি দীর্ঘদিন যাবৎ তোতলামি সমস্যাতে ভুগছি। ফলে আমি প্রায়ই হতাশায় ভুগি। ধৈর্য ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। এজন্য কি কোন আমল আছে যার মাধ্যমে আমি এথেকে মুক্তি পেতে পারি?
উত্তর : কুরআন বা হাদীছে এমন রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট কোন আমল বর্ণিত হয়নি। বরং এজন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হ’তে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করবে, যে দো‘আটি আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-কে মুখের জড়তা দূর হওয়ার জন্য পাঠ করার নির্দেশ দেন- রাবিবশ্রাহ্লী ছাদরী ওয়া ইয়াস্সিরলী আম্রী ওয়াহ্লুল্ ‘উক্বদাতাম্ মিল্লিসা-নী, ইয়াফ্ক্বাহূ ক্বাওলী ‘হে আমার প্রভু! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও। আমার করণীয় কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও। আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দাও, যেন তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (ত্বোয়াহা ২০/২৫-২৮)। এছাড়া সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক্ব, ইখলাছ ও আয়াতুল কুরসী পাঠ করে নিজের উপর নিজে ঝাঁড়ফুক করবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২১৩২)।
প্রশ্ন (৩৩২) : মানুষের দেহ থেকে রক্ত বের হয়ে তা তার দেহে বা কাপড়ে কিছুটা লাগলে ছালাত হবে কি? এছাড়া রক্ত বের হ’লে ওযূ ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর : মানুষের শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। কেননা তা অপবিত্র নয়। সুতরাং কারো দেহ থেকে রক্ত বের হ’লে এবং শরীরে বা পোষাকে লেগে থাকলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না (বুখারী ১/৩১৮; তিরমিযী হা/১৫৮২; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৬৩-৬৫; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/১৮৫-১৮৯)।
প্রশ্ন (৩৩৩) : তাসবীহ-তাহলীল, কুরআন তেলাওয়াত ও ছালাতের মত ইবাদতগুলোতে যে পরিমাণ তৃপ্তি পাই, মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করার মাধ্যমে সেরকম কোন তৃপ্তি পাই না। অথচ দান করার মধ্যেও প্রভূত নেকী আছে। এক্ষণে নেকীর কাজে তৃপ্তি পাওয়া মূখ্য হবে, না ছওয়াব অর্জনই মূখ্য হিসাবে গণ্য করতে হবে?
উত্তর : ছওয়াব অর্জনই মূখ্য হতে হবে। তৃপ্তি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তৃপ্তি পাওয়ার জন্য তিনটি কাজ করতে হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকে, সে ঈমানের স্বাদ লাভ করে থাকে। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিকতর প্রিয় হবে। ২. কাউকে ভালোবাসলে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালবাসবে। ৩. আর কুফরী থেকে তাকে আল্লাহ বাঁচানোর পর পুনরায় তাতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপসন্দ করবে, যেমন সে নিজেকে আগুনে নিক্ষিপ্ত করাকে অপসন্দ করে (মুসলিম হা/৪৩; মিশকাত হা/৮)। তিনি আরো বলেন, যে লোক আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে রাসূল হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সে-ই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে (মুসলিম হা/৩৪; মিশকাত হা/৯)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-ছাদাক্বা করে, আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-ছাদাক্বা থেকে বিরত থাকে- সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে (তিরমিযী হা/২৫২১; মিশকাত হা/৩০; ছহীহাহ হা/৩৮০)। সুতরাং দান করার ক্ষেত্রে পিছপা হওয়া যাবে না। সেই সাথে তৃপ্তি অর্জনের জন্য সঠিক জায়গায় দান করার চেষ্টা করতে হবে, যেন দান এমন জায়গায় না হয়, যেখানে অর্থের অপব্যবহার হয় কিংবা শিরক-বিদ‘আতের প্রচার-প্রসারে ব্যয় হয়।
প্রশ্ন (৩৩৪) : মানুষের বয়স ৪০ হ’লে শ্বেত, কুষ্ঠ ও পাগলামির মত ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পাবে। ৫০ বছর হ’লে আল্লাহ তা‘আলা পরকালে কঠিন হিসাব নেন না। ৬০ বছর হ’লে ফেরেশতা বন্ধু হয়ে যায়। ৭০ বছর বয়স হ’লে আল্লাহ তার বান্দাকে দুনিয়ায় দেখতে চান না। এভাবেই ৯০ বছর বয়স হ’লে তার আগে-পরের কোন গোনাহ থাকে না। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে বর্ণনাটির সনদ জাল। অতএব এই ধরনের ভিত্তিহীন কথা রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে সম্পৃক্ত করা যাবে না (মুসনাদে আবী ইয়া‘লা হা/৩৬৭৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৭৫৬০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/২৪৮)। তাছাড়া এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কেননা রাসূল (ছাঃ) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যার বয়স দীর্ঘ হয় ও আমল সুন্দর হয়’ (তিরমিযী হা/২৩২৯; মিশকাত হা/৫২৮৫)।
প্রশ্ন (৩৩৫) : জনৈক ব্যক্তি একদিন চাহিদা পূরণের জন্য স্ত্রীকে আহবান জানালে সুস্থ থাকা সত্ত্বেও অবহেলাবশত সে তা উপেক্ষা করে। তারপর স্বামী অভিমান করে আর কখনো মিলিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তারা এভাবেই জীবন-যাপন করছে। এক্ষণে স্বামীর করণীয় কি?
উত্তর : স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দিয়ে অপরাধ করেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি নিজ স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে আর সে অস্বীকৃতি জানায় এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর রাগ নিয়ে রাত্রি-যাপন করে, তাহ’লে ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত করতে থাকে (বুখারী হা/৩২৩৭)। অতএব উক্ত নারীর কর্তব্য হ’ল স্বামীর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং তওবা করা। আর স্বামীর কর্তব্য হ’ল স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিয়ে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা। নতুবা শয়তান তাদের উপর বিজয়ী হবে এবং তাদেরকে আরও কঠিন পাপে জড়িয়ে ফেলবে।
প্রশ্ন (৩৩৬) : স্কুল মাঠে যেখানে ঈদের ছালাত অনুষ্ঠিত হয়, তার সামনে বা কোন পার্শ্বে শহীদ মিনার থাকলে সেখানে ঈদের ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না এবং তার উপর বসো না (মুসলিম হা/৯৭২; মিশকাত হা/১৬৯৮)। শহীদ মিনার সরাসরি কবর নয়। সেটাকে কবর মনে করে শ্রদ্ধা জানানো শিরক। অতএব সামনে বা পার্শ্বে শহীদ মিনার থাকলে ছালাতের ক্ষতি হবে না।
প্রশ্ন (৩৩৭) : পিতা সন্তানকে মারধর করা অবস্থায় সন্তান রাগের মাথায় পিতার গায়ে হাত তুলে ফেলে। পরে সন্তান লজ্জিত অনুতপ্ত হয়ে পিতার হাত-পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার পরও পিতা তাকে বারবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছেন। এক্ষণে সন্তান ও পিতার করণীয় কি? আল্লাহ কি উক্ত সন্তানকে ক্ষমা করবেন?
উত্তর: পিতার গায়ে হাত তোলা ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহ। পিতা-মাতা অন্যায় করলেও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। এক্ষণে সন্তানের কর্তব্য হ’ল পূর্ণ অনুতপ্ত হয়ে পিতার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেওয়া এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করা। আর পিতার উচিৎ হবে সন্তানকে ক্ষমা করে তাকে খেদমত করার সুযোগ দেওয়া। এতেই উভয়ের জন্য বৃহত্তর কল্যাণ রয়েছে।
প্রশ্ন (৩৩৮) : আমি পেয়ারার ব্যবসা করি। পেয়ারামাখা সুস্বাদু করতে স্যাকারিন মিশ্রিত সরিষাবাটা দিতে হয়। এক্ষণে স্যাকারিন মিশ্রিত সরিষাবাটা দিয়ে পেয়ারা বিক্রয় করা জায়েয হচ্ছে কি?
উত্তর : স্যাকারিন হারাম বস্ত্ত নয়। সেজন্য সরিষার সাথে স্যাকারিন মিশালে গুনাহ নেই। তবে গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত স্যাকারিন মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। কেননা স্যাকারিন একটি মিষ্টিজাতীয় পদার্থ, যাতে কোন পুষ্টিকর উপাদান নেই। এটি মানবদেহে মেশে না। অতএব এক্ষেত্রে উচিৎ হবে, এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং বিকল্প হিসাবে উত্তম কোন বস্ত্ত ব্যবহার করা।
প্রশ্ন (৩৩৯) : দাড়ি নেই এমন মুসলমানকে সালাম দেওয়া যাবে কী?
উত্তর : দাড়ি মুন্ডন করা ফাসেকী কাজ। কেউ দাড়ি মুন্ডল করলে সে গুনাহগার হবে। তবে দাড়ি মুন্ডন ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। সেজন্য দাড়ি মুন্ডনকারীকে সালাম দিতে বাধা নেই (ওছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৬৫/১২)।
প্রশ্ন (৩৪০) : পত্রিকায় রাশিফল দেখা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে রাশিফল নির্ণয় করা নিষিদ্ধ। গণককে বিশ্বাস করলে বা তার কথা সত্য বলে মেনে নিলে আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। হাফছা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে, তার ৪০ দিনের ছালাত কবুল হয় না’ (মুসলিম হা/২২৩০; মিশকাত হা/৪৫৯৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে গেল এবং সে তার কথায় বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তার সাথে কুফরী করল’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৫৯৯; ছহীহাহ হা/৩৩৮৭)। অতএব রাশিফল দেখা বা তা বিশ্বাস করা যাবে না।
প্রশ্ন (৩৪১) : সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করলে তা তার সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট হবে। এক্ষণে তিন বার পাঠ করার পদ্ধতি কি?
উত্তর : দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। ১. প্রত্যেক সূরা ধারাবাহিক একবার করে মোট তিন বার পাঠ করবে। ২. প্রত্যেক সূরা তিন তিন বার করে পাঠ করবে (ইবনু রজব, ফাৎহুল বারী ৭/৪১৪-১৬)। যার নিকট যেটি সহজ হয় সে পদ্ধতিতে আমল করবে।
প্রশ্ন (৩৪২) : ধৈর্য এমন একটি গাছ, যার সারা গায়ে কাঁটা কিন্তু ফল অতি সুস্বাদু- মর্মে বর্ণিত কোন হাদীছ আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। বরং এটি কোন বিদ্বানের হিকমতপূর্ণ বক্তব্য। তবে বাস্তবে ‘ছবর’ (ধৈর্য) নামে একটি বৃক্ষ রয়েছে যার পাতা ‘এলোভেরা’ নামে পরিচিত। এর দ্বারা রাসূল (ছাঃ) চোখের চিকিৎসা করতে বলেছেন। আর ছাহাবায়ে কেরাম এই ছবর বৃক্ষের পাতা তথা ‘এলোভেরা’ দ্বারা চিকিৎসা নিয়েছেন (মুসলিম হা/১২০৪; আহমাদ হা/৪৬৫, ৪৯৭)।
প্রশ্ন (৩৪৩) : আলট্রাসনো করে শিশুর লিঙ্গ জানা জায়েয হবে কি?
উত্তর: এটি জায়েয এবং কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী নয় (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৪/২)। বস্ত্ততঃ গর্ভাশয়ে সন্তানের অবস্থান বা লিঙ্গ জানা যায় ভ্রুণের বয়স চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর। এর পূর্বে মানুষ কিছুই জানতে পারে না। চার মাস পরে এটি আর গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞানভুক্ত থাকে না, বরং আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে এর অবস্থান জানা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, (চার মাসের পূর্বে) মায়ের পেটে কি লুকিয়ে আছে তা জানেন একমাত্র আল্লাহ (বুখারী হা/৪৬৯৭)। তবে জানার চেষ্টা না করাই ভাল। কারণ ইচ্ছার বিরোধী কিছু দেখলে অনেক সময় পিতা-মাতার মন খারাপ হ’তে পারে। অতএব আল্লাহর ইচ্ছার উপরই সন্তুষ্ট থাকা উচিত এবং সুসন্তান হওয়া ও সুস্থ অবস্থায় প্রসব হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকটে প্রাণ ভরে দো‘আ করা উচিত।
প্রশ্ন (৩৪৪) : আমি ছালাতরত অবস্থায় যদি বুঝতে পারি যে আমার জুতাসহ মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে, তাহ’লে আমি কি ছালাত ছেড়ে চোরকে প্রতিহত করতে পারব?
উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় কোন মুছল্লী তার জুতা চুরি হয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারলে ছালাত ছেড়ে নিজের সম্পদ রক্ষা করবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ০৮/০২)। অতঃপর ছালাতে দাঁড়িয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) জান ও মালের ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য ছালাতে সাপ বা বিচ্ছু মারার বৈধতা দিয়েছেন (আবুদাউদ হা/৯২১; মিশকাত হা/১০০৪, ছহীহুল জামে‘ হা/১১৪৭)। ক্বাতাদা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল কোন মুছল্লী যদি বুঝতে পারে যে, শিশু কূপে পড়ে যাচ্ছে তাহ’লে সে কি করবে? তিনি বললেন, ছালাত ছেড়ে তাকে রক্ষা করবে। আর যদি তার জুতা চুরি হ’তে দেখে তাহ’লে কী করবে? তিনি বললেন, ছালাত ছেড়ে দিবে এবং সম্পদ রক্ষা করবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৩২৯১)।
প্রশ্ন (৩৪৫) : বিভিন্ন সময় আরব থেকে শায়েখ-মাশায়েখ বাংলাদেশে আগমন করেন এবং বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা দেন। আরবী ভাষায় খুৎবা প্রদান করায় মুছল্লীরা বুঝতে পারে না। এমতাবস্থায় কোন বাঙ্গালী খুৎবার তরজমা করে দিলে কোন দোষ হবে কি?
উত্তর : খুৎবার সময় অনুবাদ চলবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/১৮১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/১৭৮-৮০)। খুৎবা ও ফরয ছালাত শেষে খুৎবার অনুবাদ করা যেতে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২৫৩; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ০৮/০২)।
প্রশ্ন (৩৪৬) : যদি কারো জমি বন্ধক নিয়ে সেই জমি অন্যের কাছে লীজ দেই, তবে বার্ষিক লীজের টাকা কি আমি নিতে পারব, না সেটা জমির মালিককে দিতে হবে?
উত্তর : বন্ধকী জমি দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে না এবং উপকার গ্রহণের শর্তে জমি বন্ধকও রাখা যাবে না। কারণ এটা ঋণ, আর ঋণ প্রদান করে এর বিনিময়ে লাভ ভোগ করা সূদের অন্তর্ভুক্ত। ছাহাবীগণ এমন ঋণ নিষেধ করতেন, যা লাভ নিয়ে আসে (বায়হাক্বী ৩/৩৪৯-৩৫০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭)। অতএব জমি বন্ধকগ্রহণকারী উক্ত জমি লীজ দিতে পারবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/২৫০; ছালেহ ফাওযান, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৫০৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/১৭৬-৭৭)। আর লীজ দিয়ে থাকলে সেই টাকা জমির মালিককে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, সাধারণ অবস্থায় জমি ভাড়া (লীজ) দেওয়া ও নেওয়া এবং তাতে চাষাবাদ করায় কোন বাধা নেই (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৭৪)।
প্রশ্ন (৩৪৭) : ঘুমানোর পূর্বে নিয়মিতভাবে মোবাইলে দেখে সূরা মুলক পাঠ করা বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত হবে কি?
উত্তর : মোবাইলে কুরআন পাঠ করা যায়। যদিও বিদ্বানগণ মুছহাফ থেকে তেলাওয়াতকে উত্তম বলেছেন। কারণ এতে অন্তরে অধিক পরিতৃপ্তি লাভ হয় (নববী, আত-তিবইয়ান ফি আদাবি হাম্মালাতিল কুরআন ১০০ পৃ.; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১৬৬)। তবে যে পদ্ধতিতেই তেলাওয়াত করা হৌক না কেন মূল বিষয় হ’ল তেলাওয়াতকালে অন্তর থেকে কুরআন অনুধাবন ও হৃদয়াঙ্গম করা (ইবনু তায়মিয়াহ মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/৩৫২)।
প্রশ্ন (৩৪৮) : মাগরিবের ছালাতের সুন্নাত শেষ করার পর নিয়মিতভাবে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : মাগরিব ছালাতের পরে দু’রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবা রয়েছে। এর পরে কেউ নফল ছালাত আদায় করতে চাইলে নিয়মিতভাবে নয়, বরং অনিয়মিতভাবে দুই দুই রাক‘আত করে অনির্ধারিত রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতে পারে (শাওকানী, নায়লুল আওতার ৩/৬৮; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২)। রাসূল (ছাঃ) মাঝে মধ্যে মাগরিব থেকে এশা অবধি অনির্ধারিত রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন (তিরমিযী হা/৬০৪; মিশকাত হা/৬১৬২; ছহীহাহ হা/২৫৮৫)।
প্রশ্ন (৩৪৯) : বুখারী ১৯৬১ ও ৬২ নং হাদীছ দ্বারা রাসূল (ছাঃ) যে নূরের তৈরী তা প্রমাণিত হয় কি?
উত্তর : উক্ত হাদীছদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা ‘ছওমে বিছাল’ পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে ছওমে বিছাল করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করি (বুখারী হা/১৯৬১)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছওমে বিছাল হ’তে নিষেধ করলেন। লোকেরা বলল, আপনি যে ছওমে বিছাল পালন করেন! তিনি বললেন, আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয় (বুখারী হা/১৯৬২)। উক্ত হাদীছদ্বয় দ্বারা কোনভাবেই প্রমাণিত হয় না যে, রাসূল (ছাঃ) নূরের তৈরি ছিলেন। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে কাউকে খাওয়ানো হ’লেই তাঁকে নূরের তৈরি বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কেবল নবীকে নয় বরং অসুস্থ ব্যক্তিকেও খাওয়ান এবং পান করান। তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের রোগীদেরকে পানাহারের জন্য বাধ্য করো না। কেননা (তারা না খেলেও) আল্লাহ তাদেরকে পানাহার করিয়ে থাকেন’ (তিরমিযী হা/২০৪০; মিশকাত হা/৪৫৩৩; ছহীহাহ হা/৭২৭)। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা মরিয়ম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে অমৌসুমের ফল খাওয়াতেন (আলে-ইমরান ৪/৩৭)। অতএব নবী করীম (ছাঃ)-কে আল্লাহর পক্ষ থেকে পানাহার করানো দ্বারা এই দলীল গ্রহণ করার অবকাশ নেই যে, তিনি নূরের তৈরী ছিলেন।
প্রশ্ন (৩৫০) : কেউ যদি না জেনে হারাম টাকা বিনিয়োগ করে অনেক বেশী মুনাফা অর্জন করে এবং পরে তওবা করতে চায় তাহ’লে কি মুনাফাসহ আসল টাকা দান করতে হবে নাকি শুধু হারাম অংশটুকু দান করতে হবে?
উত্তর : মূল হারাম হ’লে লাভও হারাম হবে। তবে কেউ যদি না জেনে বিনিয়োগ করে থাকে, তবে হারাম সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর উক্ত হারাম মূলধন নেকীর আশা ব্যতীত জনকল্যাণে ব্যয় করে দিলে লভ্যাংশ হালাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যার নিকটে তার প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশ এসে গেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তার জন্য পিছনের সব গোনাহ মাফ। তার (তওবা কবুলের) বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫; শানক্বীতী, আযওয়াউল বায়ান ৭/৪৯৮)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ওছায়মীন প্রমুখ বিদ্বানগণ বলেন, হারাম জানার পূর্বে যা কিছু গ্রহণ করেছে, তা তওবার পরে নিজের জন্য রেখে দিতে পারে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৪৪৩; যাদুল মা‘আদ ৫/৬৯১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/৪৫)।

 

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button