প্রশ্নোত্তর
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-২
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়মিত দেওয়া হয় সেখান থেকে নেওয়া প্রশ্নোত্তরগুলো পর্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো। যাতে দ্বীন সম্পর্কে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারি এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর পর্ব-২
প্রশ্ন (৫১) : কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিতভাবে মহল্লার মসজিদে ছালাত না পড়ে অন্য মসজিদে ছালাত আদায় করে, তবে এতে কোন গোনাহ হবে কি?
উত্তর: নিকটবর্তী তথা মহল্লার মসজিদে গমনই উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘লোকেরা যেন তাদের নিকটতম মসজিদে ছালাত আদায় করে, একাধিক মসজিদ খুঁজে না বেড়ায় (ফাওয়ায়েদু তামাম হা/১৪১৬; ছহীহাহ হা/২২০০)। শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, উত্তম হচ্ছে তুমি মহল্লার মসজিদে ছালাত আদায় করবে তাতে লোক সংখ্যা বেশী হৌক বা কম হৌক। কারণ এতে নানাবিধ কল্যাণ রয়েছে (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘৪/১৫২)। আর যে সকল হাদীছে অধিক পদচারণা বা দূরত্বের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো নিকটবর্তী কোন মসজিদ না থাকার সাথে সংশ্লিষ্ট (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৫২)। উল্লেখ্য যে, যদি দূরবর্তী মসজিদে তুলনামূলক তেলাওয়াত বিশুদ্ধ হয় এবং নিকটতম মসজিদে তেলাওয়াতে অনেক ভুল হয় বা নিকটতম মসজিদ শিরক-বিদ‘আতযুক্ত হয় তা’হলে দূরের মসজিদে যাওয়া উত্তম (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘৪/১৫৩)। আর মাঝে মাঝে উভয় মসজিদে ছালাত আদায় করা যেতে পারে, যাতে উভয় মসজিদের দাতারা ছওয়াবপ্রাপ্ত হয় (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ১/৩৪১; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৩২)।
প্রশ্ন (৫২) : ওশরের ধান ওয়ায মাহফিলে দেওয়া যাবে কি?
উত্তর: ওশর বা যাকাতের নির্দিষ্ট আটটি খাত রয়েছে। ওশর সেগুলোতেই দিতে হবে (তওবা ৯/৬০; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৩১-৩৩৯)। এক্ষণে দ্বীনী মাহফিল দ্বীনী জ্ঞান প্রচারের মাধ্যম। আর কুরআনে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ বা আল্লাহর পথ নামে একটি খাত রয়েছে। আর দ্বীনী জ্ঞান প্রচারের কাজ আল্লাহর পথের অন্তর্গত (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৩১-৩৩৯)। সুতরাং এই কাজে ওশরের ফসল দেওয়া যেতে পারে। তবে ঢালাওভাবে নয়, বরং যেখানে প্রকৃত অর্থেই দ্বীনের জ্ঞান প্রচার হ’তে পারে, কেবল সেখানেই দেওয়া যাবে। কেননা অনেক মাহফিলে দ্বীনের নামে শিরক ও বিদ‘আতের প্রচার হয়। যেখানে সাহায্য করা যাবে না।
প্রশ্ন (৫৩) : কোন নারী কোন পুরুষকে ডিভোর্স দেওয়ার কয়েক বছর পর পুনরায় উক্ত পুরুষকে বিবাহ করতে পারবে কি?
উত্তর : পারবে। কারণ নারীর পক্ষ থেকে তালাক নেওয়া শরী‘আতে ‘খোলা’ হিসাবে গণ্য। আর ‘খোলা’র ইদ্দত এক মাস। অতঃপর মোহর, অভিভাবকের অনুমতি ও দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে হ’তে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৩/১৫৩)।
প্রশ্ন (৫৪) : ৬ বছর পূর্বে আমরা প্রেম করে বিবাহ করি। আমরা উভয়েই ব্যাংকে চাকুরী করি। চাকুরীর কারণে উভয়কে ‘আলাদা যেলায় থাকতে হয়। আমাদের কোন সন্তান নেই। কিছু দিন পূর্ব থেকে স্ত্রী আমার সাথে সংসার করতে অনীহা প্রকাশ করছে। আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ী থেকে ধৈর্য ধরতে বলছে। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?
উত্তর : ধৈর্যের সাথে মীমাংসার চেষ্টা করবে এবং প্রয়োজনে স্ত্রীকে চাকুরী ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে একই স্থানে থাকবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তা নিরসনের শারঈ পদ্ধতি হ’ল- প্রথমে তাকে উপদেশ দিতে হবে (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮)। তাতে সমাধান না হ’লে বিছানা পৃথক করতে হবে (নিসা ৪/৩৪)। এতে সমাধান না হ’লে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের মাধ্যমে মীমাংসা করতে হবে (নিসা ৪/৩৫; আহমাদ হা/৬৫৬)। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাহ’লে তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে) প্রহার কর’ (নিসা ৪/৩৪)। এতেও সমাধান না হ’লে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। উল্লেখ্য যে, সূদভিত্তিক ব্যাংকের চাকুরী থেকে নিজেকে হেফাযত করা আবশ্যক, কেননা সূদী হিসাব-নিকাশে জড়িত থাকা কবীরা গোনাহ (মুসলিম হা/১৫৯৮)।
প্রশ (৫৫) : খাবার পাত্র চেটে খাওয়া সুন্নাত। এক্ষণে কেউ হাত দিয়ে না চেটে জিহবা দিয়ে চেটে খেলে সুন্নাত আদায় হবে কি?
উত্তর : হাতের আঙ্গুল দ্বারা মুছে সে আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া সুন্নাত (ওছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ২/২৯৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাওয়ার পর আঙ্গুলগুলি ও পাত্র চেটে খাওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘ওর কোনটিতে বরকত আছে তা তোমরা জান না’ (মুসলিম হা/২০৩৩; মিশকাত হা/৪১৬৫)। জিহবা দিয়ে চেটে খাওয়া যায়, তবে একই পাত্রে একাধিক ব্যক্তি খাওয়ার সময় জিহবা দ্বারা চেটে খাওয়া আদবের খেলাফ।
প্রশ্ন (৫৬) : পিতা খালাতো ভাইয়ের সাথে আমার বোনকে বিবাহ দেয়। পরে ৮ বছরের সন্তান থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে নানাবিধ পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় তালাক নেওয়া হয়। কিন্তু ১ বছর আমাদের বাসায় থাকার পর আমাদের সবার অবাধ্য হয়ে নতুন বিয়ের মাধ্যমে বোন তার সাবেক স্বামীর কাছে ফিরে যায়। এখন আমি তার সাথে আর সম্পর্ক রাখি না। এটা শরী‘আত সম্মত হবে কি?
উত্তর : বোনের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। অবাধ্যতার কারণে সাময়িকভাবে শাস্তিমূলকভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করা যেতে পারে, কিন্তু স্থায়ীভাবে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা নিষিদ্ধ। তাছাড়া উক্ত বিচ্ছেদ যেহেতু ‘খোলা’ তালাক ছিল, অতএব উক্ত নারীর জন্য নতুন বিবাহের মাধ্যমে পূর্বের স্বামীর সাথে সংসার করায় বাধা নেই (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৪৫০-৪৭০ প্রভৃতি)। এক্ষণে বোনের উচিৎ ছিল বৈধ অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে শারঈ পদ্ধতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে সাবেক স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়া। আর পিতা ও ভাই রাযী না হ’লে পরবর্তী অভিভাবকের অনুমতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া (ওছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/১৪৮)। বর্তমান অবস্থায় পিতা বা ভাইয়ের কর্তব্য হবে বোনের ইচ্ছা মোতাবেক তাকে বৈধভাবে প্রাক্তন স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যায়। তখন তারা উভয়ে যদি ন্যায়ানুগভাবে পরস্পরে সম্মত হয়, সে অবস্থায় স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদের বাধা দিয়ো না (বাক্বারাহ ২/২৩১)।
প্রশ্ন (৫৭) : কোন নারী স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে নিজের ছেলের সাথে ওমরায় যেতে পারবেন কি?
উত্তর : পারবে না। বরং ইদ্দত শেষ করে ওমরাহ পালন করবে। কারণ মৃত স্বামীর জন্য স্ত্রীকে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করতে হয় (বাক্বারাহ ২/২৩৪)। অতএব সে ইদ্দত পালন করবে এবং পরবর্তীতে শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকলে ওমরাহ করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/২৯ প্রভৃতি)। কোন নারী ইদ্দতের মধ্যে থাকা অবস্থায় হজ্জে গেলে ওমর (রাঃ) বায়দা থেকে ফিরিয়ে দিতেন (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/১৭০৮; ইরওয়া হা/২১৩২)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে ইদ্দত পালনকারী স্ত্রী হজ্জের সফরে বের হবে না। এ ব্যাপারে চার ইমামের ঐক্যমত রয়েছে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/২৯)। ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে ইদ্দত পালনকারী নারী হজ্জের জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে সফর করবে না। যদি হজ্জের সফরে বের হয় এবং পথে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানতে পারে, তাহ’লে তিনি ফিরে আসবেন এবং স্বামীর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করবেন (মুগনী ৮/১৬৭)। অতএব ইদ্দত পালন শেষেই হজ্জ-ওমরা বা অন্য কোন সফরে বের হ’তে পারে, পূর্বে নয়।
প্রশ্ন (৫৮) : এক ভাই ক্রিকেটে জুয়া খেলতো। পরে হেদায়াত পেয়ে তা ছেড়ে দেয়। এক্ষণে জুয়ার মাধ্যমে যেসব মানুষের টাকা অবৈধভাবে নিয়েছে তা তাকে ফেরত দিতে হবে কি? এটা না করলে সে হক নষ্টের অপরাধে গোনাহগার হবে কি?
উত্তর : উপার্জনের মাধ্যম হারাম হওয়ায় তার লভ্যাংশ সর্বাবস্থায় ভোগ করা নিষিদ্ধ এবং পরিত্যাজ্য। তাকে অবশ্যই খালেছ তওবার সাথে সাথে উক্ত সম্পদ মালিককে ফেরত দিতে হবে। আর মালিককে না পাওয়া গেলে তার নামে ছাদাক্বা করে দিবে (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৩১৩৫)। এমতাবস্থায় সে দরিদ্র হ’লে একান্ত প্রয়োজনীয় সম্পদ রেখে অবশিষ্ট সম্পদ মালিককে ফিরিয়ে দিবে অথবা তার অবর্তমানে তার নামে কিংবা সাধারণভাবে ছাদাক্বা করে দিবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১)।
প্রশ্ন (৫৯) : মাহরাম ছাড়া মেয়েদের মেডিকেল কলেজ-এর হোস্টেলে অবস্থান করে পড়াশোনা করা যাবে কি?
উত্তর : মেয়েদের হোস্টেলে পূর্ণ পর্দার পরিবেশ ও নিরাপত্তা থাকলে সেখানে অবস্থান করে পড়াশোনা করা যাবে (বুখারী হা/৫২৩৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১২/১৭৮)।
প্রশ্ন (৬০) : ছালাতের পূর্বে মিসওয়াক করলে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়, এ হাদীছের সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলো যঈফ (আহমাদ হা/২৬৩৮৩; যঈফাহ হা/১৫০৩)। তবে ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহ’লে প্রত্যেক ছালাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৭৬)।
প্রশ্ন (৬১) : কোন কোন বাস প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের সময় মসজিদে বিরতি দেয়। এমতাবস্থায় জমা করা যাবে কি? না কি প্রতি ওয়াক্তে পড়াই উত্তম হবে?
উত্তর : মুসাফিরের জন্য সফরকালীন যোহর-আছর ও মাগরিব-এশার ছালাত জমা ও কছর করা মুস্তাহাব (বুখারী হা/১১১১)। তবে প্রতি ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথেও ছালাত আদায় করা যায়। কারণ ছালাত নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত (নিসা ৪/১০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১৩৯-৪০ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬২) : জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী যেনায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের একটি সন্তানও আছে। এক্ষণে স্বামীর করণীয় কি?
উত্তর : স্ত্রীর একনিষ্ঠ তওবা সাপেক্ষে স্বামী তাকে স্ত্রী হিসাবে রাখতে পারে (ছহীহাহ হা/৬৬৩)। আর তার থেকে আবারও একই কর্মে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকলে, তাকে তালাক দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। কারণ স্ত্রীর ব্যভিচার চলমান থাকার বিষয়টি জানার পরেও তাকে নিয়ে সংসারকারী পুরুষ দাইঊছ। আর দাইঊছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না (ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৬২)।
প্রশ্ন (৬৩) : বড় দিন উপলক্ষ্যে আমার কোম্পানীর খৃষ্টান মালিক বেশ কিছু হালাল প্যাকেটজাত খাবার উপহার দিয়েছে। এক্ষণে সেগুলি আমি খেতে পারব কি? না পারলে করণীয় কি?
উত্তর: সাধারণভাবে অমুসলিমরা হালাল কোন খাবার হাদিয়া হিসাবে প্রদান করলে তা গ্রহণে দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১/২৫১)। আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না… (মুমতাহিনাহ ৬০/৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, চাওয়া ছাড়াই তোমাকে যা কিছু দেওয়া হয়, তা খাও এবং ছাদাক্বা করো (মুসলিম হা/১০৪৫; মিশকাত হা/১৮৫৪)। সালেম (রাঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) কারো কাছে কিছু চাইতেন না এবং কেউ যদি (না চাওয়া সত্ত্বেও) তাকে কিছু দিতেন, তাহ’লে তিনি এটা প্রত্যাখান করতেন না (মুসলিম হা/১০৪৫; মিশকাত হা/১৮৫৭)। আলী (রাঃ)-কে খৃষ্টানদের ঈদের দিনে কোন কিছু হাদিয়া দেওয়া হ’লে তিনি তা গ্রহণ করতেন (বায়হাক্বী হা/১৮৮৬৫)। জনৈকা মহিলা আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার একজন অগ্নিপূজক প্রতিবেশী আছে, তারা তাদের ঈদের দিনে আমাকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করব কি? তিনি বললেন, তাদের যবেহ করা প্রাণীর গোশত নিবে না। তবে হালাল খাবার বা ফলমূল নিবে (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৪৩৭১)। প্রখ্যাত ছাহাবী আবু বারযা আসলামী (রাঃ) তার পরিবারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অমুসলিমরা তাদের ঈদের দিনে কোন হাদিয়া দিলে হালাল এবং ফলমূল গ্রহণ করবে; অন্য কিছু দিলে প্রত্যাখান করবে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৪৩৭২, ৩২৬৭৪)। উপরোক্ত আছারগুলো উল্লেখপূর্বক ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-সহ বিদ্বানগণ বলেন, এগুলো প্রমাণ করে যে, তাদের আনন্দের দিনের কোন হালাল হাদিয়া গ্রহণে দোষ নেই। তবে সেই দিনে তাদের সাথে আনন্দ করা, সেই আনন্দকে কেন্দ্র করে তাদেরকে হাদিয়া দেওয়া বা তাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে হাদিয়া আদান-প্রদান করা হারাম (ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১/২৫১)। সর্বোপরি বিজাতীয় কোন অনুষ্ঠানের যে কোন কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখাই সর্বোত্তম।
প্রশ্ন (৬৪) : সকাল ও বিকালে যে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লহিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করবে, তাকে আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা দেওয়া হবে, এই হাদীছটি কী ছহীহ?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে একশ’ বার বলবে, ‘সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহি’ এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহ’লে সৃষ্টিকুলের কেউই তার মত মর্যাদা ও ছওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না’ (আবুদাউদ হা/৫০৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪২৫)। উক্ত তাসবীহটি সংক্ষেপে কেবল ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ শব্দে পাঠ করলেও উক্ত মর্যাদা পাবে (মুসলিম হা/২৬৯২; মিশকাত হা/২২৯৭)। তাছাড়া উক্ত তাসবীহটি যতবার পাঠ করবে জান্নাতে ততটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে (তিরমিযী হা/৩৪৬৪; মিশকাত হা/২৩০৪; ছহীহাহ হা/৬৪)। এছাড়া এই তাসবীহটি যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঠ করবে, তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্য হয় (বুখারী হা/৬৪০৫; মিশকাত হা/২২৯৬)।
প্রশ্ন (৬৫) : ছালাতের মধ্যে বায়ুর চাপ আসলে তা আটকে রেখে ছালাত অব্যাহত রাখা যাবে কি?
উত্তর : পেশাব-পায়খানা বা বায়ুর চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে সেটি মাকরূহ। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (মুসলিম হা/৫৬০; মিশকাত হা/১০৫৭)। বায়ুর অতিরিক্ত চাপ থাকলে ছালাতে খুশূ-খুযূ থাকে না। অতএব এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে প্রয়োজন পূর্ণ করে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২/৪৩৫)। কেবল ওয়াসওয়াসার কারণে ছালাত ছেড়ে দিবে না। বরং নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছালাত অব্যাহত রাখবে। কারণ সন্দেহের দ্বারা পবিত্রতা নষ্ট হয় না (বুখারী হা/১৩৭; মুসলিম হা/৩৬২; মিশকাত হা/৩০৬)।
প্রশ্ন (৬৬) : পশুর পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় ঐ পশু কুরবাণী করা যাবে কি?
উত্তর : পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় পশু কুরবাণী করায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই। এছাড়া উক্ত পশুর গোশত খাওয়া যাবে। এমনকি রুচি হ’লে পেটের বাচ্চাও খেতে পারে। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উটনী, গাভী ও ছাগী যবেহ করি এবং কখনো কখনো আমরা তার পেটে বাচ্চা পাই। আমরা ঐ বাচ্চা ফেলে দিব, না খাব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা হ’লে খাও। কারণ বাচ্চার মাকে যবেহ করা বাচ্চাকে যবেহ করার শামিল’ (আবুদাউদ হা/২৮২৮; মিশকাত হা/৪০৯১-৯২)।
প্রশ্ন (৬৬) : সর্দিজনিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য ফেন্সিডিল বা কোন মাদক গ্রহণ করা যাবে?
উত্তর : যাবে না। কারণ ফেন্সিডিল বা অনুরূপ কোন মাদক নেশাদার দ্রব্য, যা স্পষ্ট হারাম। এর দ্বারা চিকিৎসা নেয়া জায়েয নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে আরোগ্য রাখেননি, যা তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন’ (বুখারী হা/১৮, ৪৮০; ইবনু হিববান হা/১৩৯১; ছহীহাহ হা/১৬৩৩)। তারেক ইবনু সুয়াইদ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)- কে মাদকদ্রব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি এটা ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তারেক বললেন, আমরা ঔষধ হিসাবে এটা ব্যবহার করব। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা কোন ঔষধ নয়, বরং এটা নিজেই একটা রোগ (মুসলিম হা/১৯৮৪; আবুদাউদ হা/৩৮৭৩; তিরমিযী হা/২০৪৬, সনদ ছহীহ)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা হারাম বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা করো না’ (ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৬২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৬৩৩)। অতএব ফেন্সিডিলসহ যেকোন হারাম বস্ত্তকে চিকিৎসার উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না।
প্রশ্ন (৬৭) : কাপড়ে বা দেহের কোন অংশে সাদা স্রাব লেগে গেলে তা সহ ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, সাদাস্রাব অপবিত্র নয়। তবে এটি বের হ’লে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে এবং ছালাতের জন্য পুনরায় ওযূ করতে হবে। আর মযীর মতই সাদাস্রাব কাপড়ে বা শরীরে লেগে থাকলে ধুয়ে নেওয়া আবশ্যক নয়। বরং সে পোষাক পরেই ছালাত আদায় করা যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২২১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/২৮৪-৮৬)। অবশ্য ইবনু তায়মিয়া ও উছায়মীন বলেন, সাদাস্রাব বের হ’লে ওযূ নষ্ট হবে না। কারণ এর স্বপক্ষে কোন দলীল নেই (ইবনু হাযম, মুহাল্লা ১/২৩৬; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত পৃ. ২৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৫০৩)। তবে জমহূর বিদ্বানের অভিমতই অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ।
প্রশ্ন (৬৮) : মাইয়েতের জন্য কতদিন পর্যন্ত জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে?
উত্তর : কেউ মারা গেলে এবং তার জানাযায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে তার কবরকে সামনে রেখে একাকী বা জামা‘আতের সাথে মাইয়েতের জন্য যে কোন দিন জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ একাধিক কবরের উপর জানাযার ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী হা/১৩২১; নাসাঈ হা/২০২২; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৩/৩৬৬)। এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ যে সকল কবরের উপর জানাযার ছালাত আদায় করেছেন সেগুলোর কোনটি ছিল একদিন পরে, কোনটি তিনদিন পরে আবার কোনটি সাত বছর পরে। এজন্য বিদ্বানগণ মতপার্থক্য করেছেন। বিশুদ্ধ কথা হ’ল, নিজের জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে যে কোন সময় জানাযা পড়া যেতে পারে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ১৬/৩৪-৩৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৪৬)।
প্রশ্ন (৬৯) : কবীরা ও ছগীরা গোনাহের মধ্যে পার্থক্য কি? কিছু কবীরা ও ছগীরা গোনাহের উদাহরণ জানতে চাই।
উত্তর : কবীরা গুনাহ হ’ল যে সকল গুনাহের ব্যাপারে অভিসম্পাত করা হয়েছে এবং পরকালীন শাস্তি কিংবা দুনিয়ায় হদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর জেনে-শুনে বার বার ছগীরা গুনাহে লিপ্ত হ’লে তাও কবীরা গুনাহে পরিণত হয়। যেমন ওমর ও ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,لاَ كَبِيْرَةَ مَعَ اسْتِغْفَارٍ وَلاَ صَغِيْرَةَ مِنْ إِصْرَارٍ، ‘ইস্তেগফার করলে কাবীরা গোনাহ থাকে না। আর বারবার করলে তা আর ছগীরা গোনাহ থাকে না’ (নববী, শরহ মুসলিম ২/৮৭)। কবীরা গোনাহ অর্থ মহাপাপ বা বড় পাপ। যার শীর্ষে রয়েছে- (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) এরপরে ঐসব গোনাহ, যার শাস্তি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত। যেমন হত্যা, চুরি, ব্যভিচার, জুয়া, লটারী, মদ্যপান, মিথ্যা সাক্ষ্য দান ইত্যাদি (৩) যেসব পাপের জন্য আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) অভিসম্পাত করেছেন। যেমন ঘুষ খাওয়া ও দেওয়া, হিল্লা বিয়ে করা ইত্যাদি (৪) ছগীরা গোনাহ বারবার করা। যেমন কথায় কথায় আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম খাওয়া, দাড়ি মুন্ডন করা ইত্যাদি। কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে কবীরা গোনাহের সংখ্যা ৭ থেকে ৭০০-এর কাছাকাছি। অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা ব্যতীত যা মাফ হয় না। নিম্নে বিশেষ কয়েকটি কবীরা গোনাহ উল্লেখ করা হ’ল : (১) শিরক করা (২) কবরে বা মাযারে সিজদা করা (৩) বিদ‘আত করা (৪) গণক ও জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করা (৫) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ ও মানত করা (৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া (৭) তাক্বদীরকে অবিশ্বাস করা (৮) অলসতাবশতঃ ছালাত ও যাকাত পরিত্যাগ করা (৯) অকারণে রামাযানে ছিয়াম পালন না করা (১০) সামর্থ্যবান ব্যক্তির হজ্জ না করা (১১) যুলুম করা (১২) হত্যা করা (১৩) আত্মহত্যা করা (১৪) চুরি করা (১৫) ডাকাতি করা (১৬) জাদু করা (১৭) ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা (১৮) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া (১৯) ওযনে কম দেওয়া (২০) হারাম খাওয়া (২১) খিয়ানত করা (২২) হালালা করা (২৩) বেপর্দা চলা (২৪) যেনা করা (২৫) যেনার অপবাদ দেয়া (২৬) সমকামিতা করা (২৭) স্ত্রীর পশ্চাতদেশে সঙ্গম করা (২৮) মাসিক অবস্থায় সহবাস করা (২৯) মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা ও পুরুষ মহিলার বেশ ধারণ করা (৩০) পুরুষের রেশমী কাপড় ও স্বর্ণালংকার পরা (৩১) মদ্য পান করা (৩২) জুয়া খেলা (৩৩) সূদ গ্রহণ, প্রদান এবং তা লেখা ও তার জন্য সাক্ষী হওয়া (৩৪) ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান করা (৩৫) মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা কসম খাওয়া (৩৬) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা (৩৭) অহংকার করা (৩৮) পুরুষের কাপড় পায়ের গিটের নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা (৩৯) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা (৪০) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা (৪১) রিয়া বা লোক দেখানো আমল করা (৪২) গীবত করা (৪৩) তোহমত বা অপবাদ দেওয়া (৪৪) অভিশাপ দেয়া (৪৫) দুনিয়ার উদ্দেশ্যে দ্বীন শিক্ষা করা (৪৬) দুনিয়ার লোভে দ্বীন বিক্রি করা (৪৭) বিপদাপদে বা কারো মৃত্যুতে মাথায় ও বুকে আঘাত করা ও চিৎকার করে কান্নাকাটি করা (৪৮) পেশাব থেকে পরিচ্ছন্ন না থাকা (ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী প্রণীত আল-কাবায়ের গ্রন্থ অবলম্বনে)। অন্যদিকে ছগীরা গুনাহ হ’ল- যে সকল গুনাহের ব্যাপারে অভিসম্পাত করা হয়নি এবং পরকালীন শাস্তি কিংবা দুনিয়ায় হদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং সাধারণভাবে নিষেধ করা হয়েছে বা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অপসন্দ করেছেন। যেমন অন্যায়ভাবে রাগ করা, হিংসা করা, গালি দেওয়া, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া, ক্বিবলামুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা, গীবত শ্রবণ করা, মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করা, ঝগড়া করা, কারো প্রস্তাবের সময় বা ক্রয়ের সময় নিজের জন্য প্রস্তাব দেওয়া, বিনা কারণে কুকুর পোষা, মুছল্লীদের অপসন্দে ইমামতি করা, মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করা ইত্যাদি (নববী, শরহ মুসলিম ২/৮৫ ; ফাৎহুল বারী ১/১৮৪; আবু ফায়ছাল বাদরানী, আল ওয়ালা ওয়াল বারা ওয়াল আদাওয়া ফিল ইসলাম পৃ. ২৩)।
প্রশ্ন (৭০) : ঘুমের ভিতরে স্বপ্নদোষ ছাড়াই ধাতু ক্ষয় হয়, বীর্যের মতো আঠালো তরল পদার্থ বের হয়। আমি নিয়মিত ছালাত আদায় করি। কিন্তু এই শীতের ভিতরে রাতে গোসল করে ছালাত পড়াটা অনেক কষ্টের, শরীরের অবস্থাও খারাপ। দেখা যায় সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই সমস্যা হচ্ছে। আমি গোসল না করে শুধু নাপাক জায়গা পরিষ্কার করে ফজর ছালাত আদায় করতে পারব কি?
উত্তর : সাধারণভাবে স্বপ্নের কথা স্মরণ থাক বা না থাক, ঘুম থেকে উঠে কাপড় ভেজা দেখলে গোসল ফরয হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যে স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ করতে পারছে না, অথচ তার কাপড় (বীর্যপাতের কারণে) ভিজা মনে হয়। জবাবে তিনি বলেন, তাকে গোসল করতে হবে। অতঃপর তাঁকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যার স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু তার কাপড়ে কোন চিহ্ন দেখতে পায় না। জবাবে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির গোসল করার প্রয়োজন নেই (আবূদাঊদ হা/২৩৬; মিশকাত হা/৪৪১, সনদ ছহীহ)। উম্মু সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের স্বপ্নদোষ হ’লে কি গোসল করতে হবে? নবী (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে (বুখারী হা/১৩০; মিশকাত হা/৪৩৩)। এক্ষণে সেটা যদি চিকিৎসকের মতানুসারে কোন রোগের কারণে বের হয়, তাহ’লে ওযূ নষ্ট হবে, তবে গোসল ফরয হবে না। সেক্ষেত্রে অপবিত্র স্থান ধুয়ে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১২৭; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৬৯)।
প্রশ্ন (৭১) : কোন অমুসলিম বা মুসলিম চাকুরিজীবী বা ব্যবসায়ী যাদের উপার্জনে হালাল-হারাম উভয়ই আছে তাদের নিকট থেকে কর্যে হাসানাহ নেওয়া বা তাদের সাথে শরীকানা ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : অমুসলিম বা মিশ্রিত উপার্জনকারী থেকে করযে হাসানাহ নেওয়া যাবে। কারণ হারাম উপার্জনের জন্য উপার্জন কারী ব্যক্তি দায়ী হবে, গ্রহণকারী নয়। রাসূল (ছাঃ) তার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে এক ইহুদীর কাছে বর্ম বন্ধক রেখে ত্রিশ কেজি যবের আটা করয বা ধার নিয়েছিলেন। অথচ তারা সূদের সাথে কঠিনভাবে জড়িত ছিল (বুখারী হা/২৯১৬; মিশকাত হা/২৮৮৫; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/২২৭-২৮; উছায়মীন, আল-ক্বওলুল মুফীদ ‘আলা কিতাবুত তাওহীদ ৩/১১২)। তবে যদি বিশেষ কোন সম্পদ বা বস্ত্ত হারাম হয় তাহ’লে জেনেশুনে সেগুলো গ্রহণ করা যাবে না। যেমন কোন চুরিকৃত বস্ত্ত।
প্রশ্ন (৭২) : আমার স্বামী আমার শশুরের পালক পুত্র। যদি সে তার মূল পিতার বদলে পালক পিতার নামে আমাকে বিবাহ করে, তাহ’লে উক্ত বিবাহ সঠিক হবে কি?
উত্তর : স্বামী নিজ পিতার পরিচয় না দেওয়ার কারণে কবীরা গুনাহগার হবে (বুখারী হা/৪৩২৬; মিশকাত হা/৩৩১৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৩৯২)। এজন্য তাকে তওবা করা আবশ্যক। তবে এ কারণে বিবাহ বাতিল হবে না। কারণ পুরুষের বিবাহের জন্য পিতা থাকা বা অভিভাবক থাকা শর্ত নয় (ইবনু মুফলেহ, আল-আদাবুশ শারইয়াহ ১/৪৭৬; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২০/১৮৩; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/২৪; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৪/১৯৩)। এক্ষণে উক্ত বিবাহে দু’জন সাক্ষী এবং মেয়ের অভিভাবকের উপস্থিতিতে ঈজাব ও কবুল হয়ে থাকলে বিবাহ সঠিক হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইসলামে পালক সন্তান বলে কিছু নেই। কেউ কারো সন্তান পালন করে থাকলে ছওয়াব পাবে, কিন্তু পিতৃত্বের পরিচয় গ্রহণ করতে পারে না এবং সেই সন্তান মীরাছ বা উত্তরাধিকার সম্পদেরও অধিকারী হবে না।
প্রশ্ন (৭৩) : আমি দাড়ি রাখার নিয়ত করার পর দেখি একপাশে ঘন হয়ে উঠেছে কিন্তু অন্য পাশে খুবই সামান্য। অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছে কয়েকবার ক্লিন সেভ করলে ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : দাড়ি রাখার জন্য দাড়ি ঘন বা পাতলা হওয়া শর্ত নয়। বরং দাড়ি রাখা আবশ্যক। একদিক পাতলা বা ঘন হওয়া সাময়িক ব্যাপার, যা বয়সের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। সুতরাং দাড়ি সেভ বা মুন্ডন করা যাবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৩৬৩; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ৭/২; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১২৫; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ৮২ পৃ.)।
প্রশ্ন (৭৪) : জানাযার দো‘আর মধ্যে সন্তানগণ ‘রাবিবরহামহুমা কামা...’ দো‘আটি পাঠ করতে পারবে কি? বিশেষত ইমামতির সময় এরূপ করা যাবে কি?
উত্তর : জানাযার ছালাতে তৃতীয় তাকবীরের পর মাইয়েতের জন্য খাছ দো‘আ পাঠের সময় পিতা-মাতার জন্য উক্ত দো‘আ পাঠ করা যায় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৬৫; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৪৭; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১৬৩)।
প্রশ্ন (৭৫) : আমার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম। মান-সম্মানের ভয়ে এভাবেই ১২ বছর একসাথে আছি। বর্তমানে ঋণগ্রস্ত হওয়ায় তিনি পাওনাদারদের আমাকে ও আমার পিতৃ পরিবারকে দেখিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় আমি তালাক চাইলে তিনি তালাকও দিচ্ছেন না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর: স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম হ’লে স্ত্রী উক্ত স্বামীর সাথে সংসার করতে বাধ্য নয়। বরং সে স্বামীর নিকট তালাক চাইতে পারে বা খোলা করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কারণ বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হ’ল পরস্পরের দৈহিক চাহিদা পূরণ করা। আর এর সক্ষমতা না থাকা স্বামীর একটি বড় ত্রুটি। যে কারণে স্ত্রী খোলা করে বিচ্ছিন্ন হ’তে পারে (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ৬/১৯৩; মুগনী ৭/৩২৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/২০৭)। স্মর্তব্য যে, শারঈ ওযর ব্যতীত স্ত্রী স্বামীর নিকট তালাক চাইতে পারে না। কোন কারণ ছাড়াই যদি কেউ স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহ’লে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবূদাঊদ হা/২২২৬; মিশকাত হা/৩২৭৯; ছহীহুত তারগীব হা/২০১৮)। অন্য বর্ণনায় বিনা কারণে তালাকপ্রার্থী নারীকে মুনাফিক বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/১১৮৬; মিশকাত হা/৩২৯০; ছহীহাহ হা/৬৩২)। অতএব এমতাবস্থায় নারী চাইলে ধৈর্য সহকারে স্বামীর সংসারে থাকতে পারে অথবা খোলা করে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যত্র বিবাহ করতে পারে।
প্রশ্ন (৭৬) : পাখির পায়খানা নাপাক কি? এটা কাপড়ে লাগা অবস্থায় ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : যে সকল পাখির গোশত খাওয়া হালাল সে সকল পাখির পায়খানা কাপড়ে লেগে থাকলে সে পোষাকে ছালাত আদায় করা যাবে। তবে সম্ভবপর তা মুছে ফেলবে কিংবা ধুয়ে ফেলবে। আর যে সকল পাখির গোশত হারাম সে সকল পাখি বা প্রাণীর পেশাব বা পায়খানাও নাপাক। এ সকল প্রাণীর পায়খানা কাপড়ে লেগে থাকলে ছালাত আদায় করা যাবে না। বরং আবশ্যিকভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২১/৫৪২-৫৮৬; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪৯২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৪১৪)।
প্রশ্ন (৭৭) : মসজিদের সামনে জনসাধারণের বসার স্থান তৈরী করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। তবে যেন মসজিদে তাদের কোন শব্দ না আসে এবং ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) মসজিদে নববীর অনতিদূরে একটি বড় চত্বর বানিয়েছিলেন, এর নাম রাখা হয়েছিল ‘বুত্বায়হা’। তিনি লোকেদের বলে রেখেছিলেন, যে ব্যক্তি অনর্থক কথা বলবে অথবা কবিতা আবৃত্তি করবে অথবা উঁচু স্বরে (দুনিয়াবী) কথা বলতে চায়, সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৯৩; মিশকাত হা/৭৪৫; আলবানী, ইছলাহুল মাসাজিদ পৃ. ১১২; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১০/৪০-৪১)।
প্রশ্ন (৭৮) : ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে নিয়মিত আযান ও ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে আযান বা ইক্বামত দেওয়া যাবে না এবং এক ওয়াক্ত ছালাতও আদায় করা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের জন্য নির্দিষ্ট ওয়াক্ত নির্ধারণ করেছেন (নিসা ৪/১০৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন ছালাতের সময় উপস্থিত হবে তখন একজন আযান দিবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৩)। সুতরাং জেনেশুনে সময়ের পূর্বে আযান দিলে গুনাহগার হ’তে হবে এবং সময়ের পূর্বে ছালাত আদায় করলে পুনরায় উক্ত ছালাত আদায় করতে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৮৯; ইবনু কুদামা, মুগনী ১/২৯৭;বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৪১)।
প্রশ্ন (৭৯) : ইহরামের কাপড় নাপাক হয়ে গেলে করণীয় কি?
উত্তর : ইহরামের কাপড় কোনভাবে নাপাক হয়ে গেলে ধুয়ে পরিস্কার করতে পারে। আবার পরিবর্তনও করতে পারে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৫৭; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৭/২৬৬)।
প্রশ্ন (৮০) : বর্তমান হারামাইন কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী ইহরামের কাপড় ছাড়া তথা ওমরাহকারী ছাড়া অন্য কেউ মাতাফে নেমে তওয়াফ করতে পারবে না। তাদেরকে কেবল উপরের তলাগুলো দিয়ে তওয়াফ করতে হবে। সেকারণে অনেক ওমরাহকারী ওমরাহ শেষ হওয়ার পরও কৌশল করে ইহরামের কাপড় পরে নীচে তওয়াফ করছেন। এরূপ করা সঠিক হবে কি?
উত্তর : এরূপ করা প্রতারণার শামিল, যা শরী‘আতে বৈধ নয়। কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ওমরাহকারীদের তাওয়াফে সুবিধার জন্য এমন নিয়ম করেছে, যা লংঘন করা সঠিক নয় (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)।
প্রশ্ন (৮১) : নিম্ন ঠোটের নীচে যে দাড়ির মত লোম গজায়, সেগুলো কাচি দ্বারা ছোট করা অথবা চেছে ফেলা যাবে কি?
উত্তর : বিশুদ্ধ মতে কাট-ছাঁট করা যাবে না। কেননা বৃদ্ধাবস্থাতেও রাসূল (ছাঃ)-এর ঠোটের নিম্নভাগে উক্ত লোম ছিল। যার কিছু অংশ সাদা ছিল (বুখারী হা/৩৫৪৫-৪৬)। জনৈক ব্যক্তি নিম্ন ঠোটের নীচের চুল কাটা অবস্থায় ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)-এর নিকট সাক্ষ্য দিতে আসলে তিনি তার প্রতি রেগে যান এবং তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন (জাছছাছ, আহকামুল কুরআন ১/৬৯২; ইমাম গাযালী, ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন ১/১৪৪)। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, এটা বিদ‘আত (ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন ১/১৪৪)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, নিম্ন ঠোটের চুল মুন্ডন করা জায়েয নয়। কারণ এগুলো দাড়ির অংশ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/৪৪)। তবে শায়খ উছায়মীন, ছালেহ ফাওয়ানসহ ভাষাবিদরা মনে করেন, নিম্ন ঠোটের চুল দাড়ির অংশ নয়। কিন্তু তারাও সেগুলো না কাটাকেই উত্তম বলেছেন (মারদাভী, আল-ইনছাফ ১/১৩৪; উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৯/১৭; লিসানুল আরব ৫/২৪১)।
প্রশ্ন (৮২) : আল্লাহ তা‘আলা যে আমাদের রিযিক লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, সেটা কি আমাদের চেষ্টা বা কৃতকর্মের উপরে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, নাকি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন?
উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী মানুষের রিযিক লিখে রেখেছেন। প্রতিটি মানুষের রিযিক নির্দিষ্ট। সেগুলো সে পাবেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের রিযিক আসতে বিলম্ব হচ্ছে এমন মনে করো না। কারণ কোন বান্দাহ ততক্ষণ পর্যন্ত মারা যাবে না যতক্ষণ না তার শেষ রিযিকটুকু তার নিকট পৌঁছে (ছহীহাহ হা/২৬০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩২৩)। তিনি আরো বলেন, যদি কোন লোক তার রিযিক থেকে পলায়ন করে যেমন মৃত্যু থেকে পলায়ন করে থাকে, তাহ’লে রিযিক তাকে অবশ্যই ধরবে, যেভাবে মৃত্যু তাকে অবশ্যই ধরবে (ছহীহাহ হা/৯৫২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৪০)। তবে সেগুলো পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর নির্দিষ্ট রিযিক পাওয়ার জন্য কিছু আমল আছে। যেমন- (১) রিযিক অন্বেষণের জন্য চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তো পৃথিবীকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা তার দিকে দিকে বিচরণ কর এবং আল্লাহর দেওয়া রিযিক ভক্ষণ করে থাক। আর তাঁর দিকেই হবে তোমাদের পুনরুত্থান’ (মুলক ৬৭/১৫)। (২) আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা (বুখারী হা/৫৯৮৫; মিশকাত হা/৪৯১৮)। (৩) সর্বক্ষেত্রে আল্লাহভীতি অবলম্বন করা। আল্লাহ বলেন, বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করে থাকেন (তালাক ৬৫/০২)। (৪) আল্লাহর প্রতি ভরসা করা (তিরমিযী হা/২৩৪৪; মিশকাত হা/৫২৯৯)। (৫) ধৈর্য ধারণ করা (তিরমিযী হা/২৩২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৬৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেকটি জিনিসই আল্লাহর ক্বদর (তাক্বদীর) অনুযায়ী রয়েছে, এমনকি নির্বুদ্ধিতা ও বিচক্ষণতাও (মুসলিম হা/২৬৫৫; মিশকাত হা/৮০)। সর্বোপরি তাক্বদীর নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তাক্বদীরের বিষয় আসবে তখন তোমরা থেমে যাবে’ (ছহীহাহ হা/৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৫)।
প্রশ্ন (৮৩) : কেউ ওমরাহ পালন শেষে বাড়িতে আসলে ৪০ দিন বাড়ি থেকে বের হ’তে পারবে না একথা সঠিক কি? হজ্জ বা ওমরাহ থেকে বাড়ি ফিরে বিশেষ কিছু করণীয় আছে কি?
উত্তর : উক্ত কথা ভিত্তিহীন। আর হজ্জ বা ওমরাহ থেকে ফেরার পর বিশেষ কিছু পালনীয়ও নেই। তবে রাসূল (ছাঃ) হজ্জ বা ওমরা থেকে ফেরার সময় কিছু কাজ করতেন। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন যুদ্ধ, হজ্জ বা ওমরাহ হ’তে ফিরে আসতেন, তখন প্রতিটি উঁচু স্থানে তিনি তিনবার করে তাকবীর দিতেন। আর বলতেন, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর। আ-য়িবূনা, তা-য়িবূনা আ-বিদূনা সা-জিদূনা লিরাবিবনা- হা-মিদূনা। ছাদাকল্লা-হু ওয়া‘দাহু ওয়া নাছারা আবদাহূ ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াহদাহূ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। সাম্রাজ্য তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপরই ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তন করছি তওবাকারী, ইবাদতকারী, সিজদাকারী এবং আমাদের রবের প্রশংসাকারী হিসাবে। আল্লাহ তাঁর ওয়াদাকে সত্যে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং শত্রুদের সমন্বিত শক্তিকে একাই পরাজিত করেছেন (বুখারী হা/৬৩৬৫; মুসলিম হা/২৪২৫)। এছাড়া হজ্জ বা ওমরা ফেরত ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা জানানো যেতে পারে (বুখারী হা/১৭৯৮, ৩০৮২; মুসলিম হা/২৪২৮)। হজ্জ বা ওমরা সম্পন্নকারী ব্যক্তি বাড়িতে ফিরে আত্মীয়-স্বজন বা লোকদের খাওয়াতেও পারে (বুখারী হা/৩০৮৯; মিশকাত হা/৩৯০৫)।
প্রশ্ন (৮৪) : বিবাহ ঠিক হওয়ার পর বিবাহ পড়ানোর কিছুদিন দেরী আছে। এক্ষণে পাত্রীর সাথে পাত্র প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে পারবে কি?
উত্তর : বিবাহের আক্বদ তথা ঈজাব-কবুল সংঘটিত হওয়ার পূর্বে সে স্ত্রী নয়। আর যে স্ত্রী নয় সে অন্যান্য গায়রে মাহরাম নারীর মতই। অতএব বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া প্রস্তাবিত নারীর সাথে সাধারণ কথাবার্তা বা আলাপচারিতা করা যাবে না। বরং তার অভিভাবকের সাথে সার্বিক যোগাযোগ করবে (আহযাব ৩৩/৩২; ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাকা ৩৩/৫১)।
প্রশ্ন (৮৫) : হজ্জ করার নিয়তে টাকা জমা ছিল। কিন্তু পরিবারের কোন সদস্য অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা বাবদ সেই টাকাগুলো ব্যয় হয়ে গেছে। নিয়ত করার পর ব্যয় করা ঠিক হয়েছে কি? এক্ষণে ঐ ব্যক্তি করণীয় কি?
উত্তর : হজ্জের নিয়তে জমাকৃত অর্থ বিশেষ প্রয়োজনে অন্য কাজে খরচ করতে পারে। তবে সক্ষমতা আসলে যত দ্রুত সম্ভব ফরয হজ্জ আদায় করার চেষ্টা করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৮/১২৭-২৮)।
প্রশ্ন (৮৬) : মৃত ব্যক্তির বৈধ অছিয়ত অযৌক্তিক মনে করে তার ওয়ারিছরা তা পূরণ না করলে তাদের গুনাহ হবে কি?
উত্তর : অছিয়তের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা বাস্তবায়ন করা ওয়ারিছদের জন্য অত্যাবশ্যক। যেমন তার মৃত ছেলে বা মেয়ের সন্তানদের জন্য সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করা (বাক্বারাহ ২/১৮১; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৩৭৮)। এই ধরণের বৈধ অছিয়ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক, যা না করলে গোনাহগার হ’তে হবে। আর কিছু অছিয়ত পূরণ করা মুস্তাহাব। যা অমান্য করায় গোনাহ নেই। যেমন কাউকে জানাযার ছালাতে ইমামতি করতে বলা, বিশেষ কোন স্থানে কবর দেওয়া, অন্য দেশে লাশ পাঠানো ইত্যাদি (আবূদাউদ হা/৫১৪২; মিশকাত হা/৪৯৩৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪১৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৩/৪২৩)।
প্রশ্ন (৮৭) : আমার নিছাব পরিমাণ স্বর্ণ আছে কিন্তু যাকাত দেওয়ার নগদ অর্থ নেই। একারণে আমি যদি আমার সন্তানদেরকে তা থেকে দান করি তাহ’লে কি যাকাত দিতে হবে? উল্লেখ্য, আমার সন্তানদের বয়স দুই বছরের মধ্যে।
উত্তর : যাকাত না দেওয়ার নিয়তে এমন ছলচাতুরি করা যাবে না। তবে সাধারণভাবে সন্তানকে নিজের স্বর্ণালকার থেকে দান করা যায়। এমতাবস্থায় প্রত্যেকের স্বর্ণ যদি আলাদাভাবে নিছাব পরিমাণ না হয়, তাহ’লে যাকাত দিতে হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরী করা হবে’ (মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়)। এখানে মালিক বলতে ব্যক্তি মালিকানাকে বুঝানো হয়েছে। অতএব ব্যক্তি মালিকানায় নিছাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলেই কেবল যাকাত ফরয, অন্যথায় নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৬৩; আল-মাওসূ‘আতুল ফিকহিয়া ২৩/২৩২)। উল্লেখ্য যে, পরিবারের একাধিক ব্যক্তি স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহার করলেও যদি তাতে পৃথক পৃথক মালিকানা না থাকে; বরং পরিবারের কোন এক ব্যক্তির মালিকানায় থাকে, তাহ’লে তা নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত আদায় করতে হবে’ (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৬৩)।
প্রশ্ন (৮৮) : ছালাত শেষ করার পর যদি বুঝা যায় বা সন্দেহ হয় যে কাপড়ে নাপাকী লেগে আছে, উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : এমতবস্থায় ছালাত পুনরায় পড়তে হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/১৮৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/৩০২; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/৮)। কারণ রাসূল (ছাঃ) অজ্ঞাতসারে নাপাক জুতা পায়ে পরে ছালাত আদায় করছিলেন। জিব্রাঈল (আঃ) ছালাতের মধ্যে তাকে অবহিত করলে জুতা খুলে ফেলেন, কিন্তু ছালাত পুনরায় পড়েননি (আবুদাউদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬)।
প্রশ্ন (৮৯) : বিবাহযোগ্য ছেলে পাত্রীকে দেখে আসার পর মেয়েকে পসন্দ করেছে। কিন্তু পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন বিবাহ দিতে রাযী নয়। এক্ষণে উক্ত ছেলের করণীয় কি?
উত্তর : পিতা-মাতার জন্য আবশ্যক হ’ল সন্তানের বয়স হওয়ার সাথে সাথে বিবাহ দেওয়া। পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। আর সন্তানের কর্তব্য হ’ল পিতা-মাতাকে রাযী করে বিবাহ করা (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২০/১৮৩; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২/২৪)। এক্ষণে ছেলের করণীয় হবে পিতা-মাতার সঙ্গে সমন্বয় করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করা। তবে পিতা-মাতা দ্বীন বিরোধী সিদ্ধান্ত নিলে তা মান্য করা আবশ্যক নয়।
প্রশ্ন (৯০) : আমি একজন শিক্ষক। ছাত্রদের পড়াশোনার মান বৃদ্ধির জন্য আমি মাঝে মধ্যে তাদের পরীক্ষা নেই। অতঃপর তাদের নিকট থেকে চাঁদা তুলে পুরস্কার ক্রয় করি এবং প্রথম ১০ জনকে পুরস্কৃত করি। এটা কি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে?
উত্তর : এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ এতে টাকার হার-জিত উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হ’ল বৈধ আয়োজনের জন্য বৈধ প্রয়োজনের খরচ মেটানো। অতএব এতে কোন দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ৪৯৬-৯৭ পৃ.; ইবনু ক্বাইয়িম, আল-ফুরুসিয়া ৩১৮ পৃ.; উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ২৬/৫৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/১৬৬-৬৮,১৭৯)।
প্রশ্ন (৯১) : প্রশিক্ষণ শিবির চলাকালীন সময়ে আমরা মসজিদের ময়দানে জুম‘আর ছালাত আদায় করি। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : প্রশিক্ষণ শিবির যদি সফর অবস্থায় হয় তবে সেখানে সাময়িক জুম‘আ কায়েম করা যাবে না। বরং যোহর আদায় করবে কিংবা আশ-পাশের কোন মসজিদে গিয়ে জুম‘আ আদায় করবে। আর যদি মুক্বীম অবস্থায় হয় তাহ’লে অবশ্যই মসজিদে জুম‘আর ছালাত আদায় করবে। তবে যদি মসজিদে মুছল্লীদের স্থান সংকুলান না হয়, তাহ’লে মসজিদের বাইরে জুম‘আর ছালাত কায়েম করা যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৪৮-৪৯; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৭২-৭৩)।
প্রশ্ন (৯২) : সফর অবস্থায় ফরয গোসল করা প্রায় অসম্ভব হ’লে ফজরের ছালাত তায়াম্মুম করে আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। প্রবল শীতের কারণে শারীরিক অসুস্থতা বা রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে ওযূর পরিবর্তে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করা যাবে (আবুদাঊদ হা/৩৩৭; মিশকাত হা/৫৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৬২-৬৩)। আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, ‘যাতুস সালাসিল’ যুদ্ধে শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতার আশংকায় গোসল না করে তায়াম্মুম করে সাথীদের নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। পরে সাথীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই ঘটনা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি কি অপবিত্রাবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেছ? তখন আমি গোসল না করার কারণ ব্যাখ্যা করলাম এবং বললাম, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন কর না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং চুপ থাকলেন (আবুদাঊদ হা/৩৩৪; ইরওয়া হা/১৫৪, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৯৩) : বর্তমানে দাউদ (আঃ)-এর অনুসারী ও যাবূর কিতাবটি আছে কী?
উত্তর : যাবূর অন্যতম একটি আসমানী কিতাব, যা দাঊদ (আঃ)-এর ওপর নাযিল করা হয়েছিল (নিসা ৪/১৬৩)। বর্তমানে সেই কিতাবটি অক্ষত নেই। বর্তমানে মাযামীর নামে একটি কিতাব পাওয়া যায় যেটিকে কেউ কেউ যাবূর মনে করে, যা সঠিক নয়। আর যাবূরে ১৫০টি সূরা থাকলেও তাতে কোন বিধি-বিধান ছিল না। বরং তাতে হিকমতপূর্ণ বাণী ও উপদেশ ছিল। আর বিধানের ক্ষেত্রে দাঊদ (আঃ)-এর অনুসারীরা তাওরাতের অনুসারী ছিল। এজন্য নির্দিষ্টভাবে তাঁর অনুসারী জীবিত নেই। আর তিনি বনূ ইসরাঈলদের নবী ছিলেন (তাফসীরে ইবনু কাছীর ২/৪৬৯; তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৭)।
প্রশ্ন (৯৪) : আমার ভাই আমার নিকটে ঋণ চাইলে আমার হাতে কোন টাকা না থাকায় তার অনুরোধে আমার নামে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাকে দেই। তিনি নিয়মিত উক্ত ঋণ পরিশোধ করেন। এতে আমি গোনাহগার হব কি?
উত্তর : অন্যায় কাজে সহযোগিতার জন্য গোনাহগার হ’তে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর আর গুনাহ ও পাপ কাজে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাক (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (৯৫) : উটের গোশত খেলে ওযূ করা আবশ্যক কি? এই বিধানের যৌক্তিকতা জানতে চাই।
উত্তর : উটের গোশত খেয়ে ওযূ করা আবশ্যক (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৫)। শরী‘আতের প্রতিটি বিধানের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য করা মুমিনের দায়িত্ব। হিকমত বা কারণ যাই হৌক তা শরী‘আতের বিধান। তবে বিদ্বানগণ কিছু হাদীছের আলোকে এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, (১) উটের স্বভাব-চরিত্র জিনদের মত। আর ওযূর মাধ্যমে সে স্বভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৪৫৩১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/১০-১২)। (২) উট কখনও হিংস্র প্রাণীর মত কঠোর, হিংস্র ও উদ্ধত হয়ে যায়। আর তার গোশত খাওয়ার কারণে ব্যক্তির মধ্যে উক্ত স্বভাব ছড়াতে পারে। এই প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ওযূর মাধ্যমে। এজন্য শরী‘আতে উটের গোশত খেয়ে ওযূ করতে বলা হয়েছে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/১০-১২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২৩৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, উদ্ধত ও দাম্ভিক ভাব রয়েছে উট মালিকদের মধ্যে, আর নম্রতা ও গাম্ভীর্য রয়েছে বকরী মালিকদের মধ্যে (বুখারী হা/৪৩৮৮; মুসলিম হা/৫২; মিশকাত হা/৬২৫৮)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘দেখ কঠোরতা এবং অন্তরের কাঠিন্য ঐ সব বেদুঈনদের মধ্যে, যারা তাদের উট নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যেখান থেকে শয়তানের শিং দু’টি উদয় হয় (বুখারী হা/৩৩০২; মুসলিম হা/৫৩০৩)। রাসূল (ছাঃ) উটের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, তোমরা উটের আস্তাবলে ছালাত পড় না, কারণ উট শয়তানী উপাদান থেকে সৃষ্ট (আবূদাউদ হা/১৮৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৫১)। তাছাড়াও উটের চর্বি অনেক গাঢ় হয়, যার প্রভাব ওযূর মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্ন (৯৬) : অফিসে কর্মকালে কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে নফল ছালাত বা ইবাদত করা যাবে কি?
উত্তর : অফিসের কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে নফল ছালাত আদায় করা যাবে না। বরং নিজ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককেই ক্বিয়ামতের দিন স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)। রাসূল (ছাঃ) অন্যের উপকারে নিয়োজিত থাকার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, ‘মসজিদে নববীতে একমাস ধরে ই’তিকাফ করার চাইতে আমার মুসলিম ভাইয়ের কোন প্রয়োজন মিটাতে যাওয়া আমার নিকট অধিক পসন্দনীয় (ছহীহাহ হা/৯০৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৬২৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৬)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় সে, যে লোকদের জন্য সর্বাধিক উপকারী (ছহীহাহ হা/৪২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৮৯)।
প্রশ্ন (৯৭) : কত বছর বয়সে শিশুদের উপর ছিয়াম ফরয হয়ে যায়?
উত্তর: শিশু বালেগ না হ’লে তার উপর ছিয়াম ফরয হয় না (আবুদাউদ হা/৪৪০১; মিশকাত হা/৩২৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫১২)। আর বালেগ হওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন, স্বপ্নদোষ হওয়া, নাভীর নীচে চুল গজানো বা ১৫ বছরে উপনীত হওয়া ইত্যাদি (বুখারী হা/২৬৬৪; মুসলিম হা/১৮৬৮; মিশকাত হা/৩৩৭৬, ৩৯৭৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৩২৩)। তবে শিশুর বয়স ১০ বছর হ’লে বা তারও পূর্বে ছিয়াম রাখার মত শারীরিক সক্ষমতা আসলে শিশুদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/১৬১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/ ১৯-২০, ২৮-২৯, ৮৩)। ছাহাবায়ে কেরাম বলেন, আমরা পরবর্তীতে আশূরার ছিয়াম রাখতাম এবং আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও রাখাতাম। তাদের জন্য তুলার খেলনা তৈরী করতাম এবং তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম। অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ খাবারের জন্য কাঁদতে শুরু করলে তাকে ঐ খেলনা দিতাম। আর এইভাবে ইফতারের সময় এসে পৌঁছত (বুখারী হা/১৯৬০; মুসলিম হা/১১৩৬)। উল্লেখ্য যে, বালেগ হওয়ার পূর্বে আদায়কৃত ছিয়ামের ছওয়াব অবশ্যই পাবে। সাথে সাথে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকে ইবাদতে সহায়তার জন্য তাদের পিতা-মাতাও ছওয়াব পাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩১৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩৭৭)। বিদ্বানগণ বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের আমলের ছওয়াব লিখা হয় কিন্তু কোন গুনাহ লেখা হয় না (মাওয়াহিবুল জলীল ১/৪১৩)।
প্রশ্ন (৯৮) : ছিয়ামরত অবস্থায় কেউ কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়লে তার ছিয়াম কি ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর : হাদীছে বর্ণিত কারণগুলো ছাড়া অন্য কোন গুনাহে লিপ্ত হ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। ছিয়ামের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। তবে ছিয়ামরত অবস্থায় কেউ কবীরা গুনাহে লিপ্ত হ’লে সে ছিয়ামের ছওয়াব পাবে না (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৪/১১৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ২/১২০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অনেক ছায়েম এমন আছে যারা তাদের ছিয়াম দ্বারা ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া আর কোন ফল লাভ করতে পারে না। এমন অনেক ক্বিয়ামরত (কিয়ামুল লাইল আদায়কারী) ব্যক্তি আছে যাদের রাতের ইবাদত রাত্রিজাগরণ ছাড়া আর কোন ফল আনতে পারে না (ইবনু মাজাহ হা/১৬৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১০৮৩)। উল্লেখ্য যে, কেবল নিম্নোক্ত কারণগুলোতে ছিয়াম ভঙ্গ হয়- (১) স্ত্রী সহবাস, ২. ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা, ৩. ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত ঘটানো, ৪. এমন জিনিস ব্যবহার করা যাতে খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়।
প্রশ্ন (৯৯) : জনৈক আলেম বলেন, ছিয়ামরত অবস্থায় কেউ ভুলে অল্প কিছু খেলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। তবে বেশী পরিমাণে খেয়ে ফেললে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত কথার সত্যতা জানতে চাই?
উত্তর : কতিপয় শাফেঈ বিদ্বান এমন মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ হাদীছে কম বা বেশী খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বরং সাধারণভাবে ভুলে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ছায়েম ভুলে কিছু খায় সে যেন তার ছিয়াম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন’ (বুখারী হা/১৯৩৩; মিশকাত হা/২০০৩)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ছিয়ামরত অবস্থায় কেউ ভুল করে অল্প কিছু খেয়ে ফেললে সর্বসম্মতিক্রমে তার ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। কিন্তু বেশী কিছু খেয়ে ফেললে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মতে বেশী কিছু খেলেও ছিয়াম ভঙ্গ হবে না (রওযাতুল ত্বালেবীন ২/৩৬৩)। অতএব ফরয ছিয়াম হৌক বা নফল ছিয়াম হৌক, অল্প পরিমাণে হৌক বা বেশী পরিমাণে হৌক, ছায়েম ভুলে কিছু খেয়ে ফেললে তার ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। বরং যখন স্মরণ হবে তখনই খাবার বন্ধ করে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নিবে।
প্রশ্ন (১০০) : রামাযানে বা রামাযানের বাইরে ছিয়ামত রত অবস্থায় কেউ যদি ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে বা অন্য কোনভাবে বীর্যপাত ঘটায়, তাহ’লে তার ছিয়ামের অবস্থা কি হবে?
উত্তর : কেউ যদি ছিয়ামরত অবস্থায় ভুলবশতঃ স্ত্রী মিলন করে বা বীর্যপাত ঘটায় তাহ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। এমতাবস্থায় ছায়েম তার ছিয়াম পূর্ণ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভুল করে ছিয়াম অবস্থায় দিনের বেলায় স্ত্রী মিলন করে, তার কোন ক্বাযাও নেই, কাফফারাও নেই’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৫২১ প্রভৃতি)। তবে স্ত্রী বা স্বামীর কোন একজনের স্মরণ থাকা সত্ত্বেও স্মরণ করিয়ে না দিলে তাকে উক্ত ছিয়ামের ক্বাযা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। আর কাফফারা হ’ল একটানা দু‘মাস ছিয়াম রাখা বা ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়ানো (মুজাদালাহ ৫৮/৪; মুসলিম হা/১১১১)।
মন্তব্য করুন