প্রবন্ধ

বিদ‘আত ও এর মন্দ প্রভাব ২য় পর্ব

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

আল্লাহর সিফাতবা গুণের অপব্যাখ্যার হুকুম

প্রশ্ন:আল্লাহর গুণাগুণের ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যারহুকুম কি?

উত্তর:অপব্যাখ্যা নিন্দনীয় কাজ, আল্লাহরগুণাগুণের ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যা জায়েয নেই। বরং তা যেভাবে এসেছে সেভাবেই সাব্যস্তকরতে হবে, আল্লাহর জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ সেভাবেই এরপ্রকাশ্য অর্থ সাব্যস্ত করতে হবে এবং কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন, রহিতকরণ, পদ্ধতিকরণ এবং সামঞ্জস্যকরণ ব্যতীতই। আল্লাহতা‘আলা তার গুণাগুণ এবং নামের ব্যাপারে বলেছেন:

﴿فَاطِرُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ جَعَلَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا وَمِنَ ٱلۡأَنۡعَٰمِ أَزۡوَٰجٗا يَذۡرَؤُكُمۡ فِيهِۚ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ١١﴾ [الشورى: ١١] 

“তার মত কোনো কিছু নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।” [সূরাশূরা/১১]

কাজেই আমাদের উচিৎ হলো,তা যেভাবেএসেছে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করা। আর আহলে সুন্নাত ও জামাতও একই কথা বলেছেন যে, এগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবে সাব্যস্ত কর, বিনাপরিবর্তন পরিবর্ধনে, বিনা অপব্যাখ্যায়, বিনাপদ্ধতিকরণে। বরং আল্লাহর জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ সেভাবেই এর প্রকাশ্য অর্থবিনা অপব্যাখ্যায় ও বিনা পদ্ধতিকরণে স্বীকার করে নাও। কাজেই আল্লাহর বাণী :

﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥ ﴾ [طه: ٥]

তে বলা হবে: রহমান (আল্লাহ) আরশের উপর উঠেছেন। [সূরাতাহা/৫] এখানে ‘ইসতেওয়া’এবং এ রকম অন্যান্য আয়াতে ‘ইসতেওয়া’হলো: আল্লাহর জন্য যেরকম থাকা উচিৎ সে রকম, তার সাথে সৃষ্টির কোনো সামঞ্জস্য নেই।আহলে হক্বদের নিকট ‘ইসতেওয়া’র অর্থ হলো: উঁচু এবং উপরে উঠা।

এমনিভাবে কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর গুণাগুণের ব্যাপারেযে সকল গুণ এসেছে যেমন: চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি, এ সবগুলোই আল্লাহর নিজস্ব গুণ, এতে সৃষ্টির কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।

আর সাহাবীগণ এবং তাদের পরবর্তীতে আহলে সুন্নাতেরইমামগণ যেমন: আউযা‘ঈ, সাওরী, মালেক, আবু হানিফা, আহমাদ, ইসহাকএবং অন্যান্য ইমামগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) এর উপরই চলেছেন। যেমন নূহ আলাইহিস সালামের ব্যাপারেআল্লাহর বাণী:

﴿ وَحَمَلۡنَٰهُ عَلَىٰ ذَاتِ أَلۡوَٰحٖ وَدُسُرٖ ١٣ تَجۡرِي بِأَعۡيُنِنَا﴾ [القمر: ١٣،  ١٤]

“তখন নূহকে আরোহণ করালাম কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিতএক নৌযানে, যা আমার চোখের সামনে চলল।” [সূরা কামার ১৩-১৪]

মূসা আলাইহিসসালামের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:

﴿ وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِيٓ ﴾ [طه: ٣٩]

“যেন তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও। [সূরাত্বহা/৩৯]

আহলে সুন্নাতগণ এ দু’টিআয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে,  (تجري بأعيننا) থেকে উদ্দেশ্য হলো:আল্লাহ তা‘আলা তার নিয়ন্ত্রনে একে চালিয়েছেন যতক্ষণ না তা জূদীপাহাড়ে গিয়ে থেমেছে। এমনিভাবেولتصنع على عينيথেকে উদ্দেশ্য হলো, মূসা আলাইহিসসালামকে যারা লালন পালন করেছে তারা আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে এবং তার তাওফীকে করেছে।

তদ্রূপ নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লামের ব্যাপারে তাঁর বাণী:

﴿ وَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعۡيُنِنَاۖ ﴾ [الطور: ٤٨]

“আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্য্যধারণ করুন, কেননা আপনি আমার চোখের সামনেই আছেন।” [সূরা তূর৪৮]

এ সকল ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যা নয় বরং আরবী ভাষায় এবংএর পদ্ধতিতে প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা।

এমনিভাবে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর বাণী:

«من تقرب إلي شبراً تقربت إليه ذراعاً ومن تقرب إلي ذراعاً  تقرب إليه باعاً، ومن أتاني يمشي أتيته هرولةً»

“যেব্যক্তি আমার দিকে এক বিগত পরিমাণ এগিয়ে আসবে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়েযাই, যে ব্যক্তি আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার দিকেএক গজ পরিমাণ এগিয়ে যাই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে পায়ে হেটে আসবে আমি তার দিকেদৌড়ে যাই।”এখানে “আল্লাহর আসা”তার যেভাবে আসা উচিৎ বিনা পরিবর্তন পরিবর্ধন, বিনা উদাহরণ এবং বিনা পদ্ধতিকরণে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করে।

এমনিভাবে শেষ রাত্রিতে তার নিম্ন আকাশে নেমে আসা, শোনা, দেখা, রাগান্বিতহওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, হাসি-খুশীইত্যাদি স্থায়ী গুণাবলীর সবগুলোই তার জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ বিনা পরিবর্তনপরিবর্ধন, রহিতকরণ, উদাহরণ এবং বিনাপদ্ধতিকরণে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (তার মত কোনো কিছু নেই এবং তিনি শুনেন ওদেখেন।) এবং এ অর্থে আরো যে সকল আয়াত রয়েছে, এর উপর আমল করা।

কিন্তু গুণাগুণের অপব্যাখ্যা এবং এর প্রকাশ্য অর্থথেকে পরিবর্তন করা হচ্ছে জাহমিয়া এবং মু‘তাযিলাদের মত বিদ‘আতীদেরকাজ, আর সেটি হচ্ছে বাতিল মাযহাব যা আহলে সুন্নাতগণ নিন্দা করেছেন এবং এ থেকে তারামুক্ত, এদের থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।

 

 আউলিয়াদেরকবরে ফাতেহা পাঠের হুকুম

প্রশ্ন:কবর যিয়ারত করতে গিয়ে তাতে ফাতেহা পাঠকরা বিশেষ করে আউলিয়াদের কবরে, যেমন করে থাকে পার্শ্ববর্তীকিছু আরবীয় দেশে। তাদের মধ্যে কিছু লোক বলে থাকে যে, আমরাশির্ক করতে চাইনা কিন্তু কোনো অলির মাযার যদি যিয়ারত না করি তাহলে ঘুমের মধ্যেস্বপ্নে বলে দেয় যে আমাকে যিয়ারত করনি কেন? এর হুকুম কি?

আল্লাহআপনাকে ভালো প্রতিদান দিন।

উত্তর:মুসলিম পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করাসুন্নাত, যেমন আল্লাহ তা বৈধ করেছেন রাসূলের বাণী দ্বারা:

«زوروا القبور فإنها تذكركم الآخرة»

“তোমরাকবর যিয়ারত কর; কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।”[28]

বুরাইদা ইবন হুসাইব রাদিয়াল্লাহু‘আনহুহতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে কবর যিয়ারতের জন্য এ দো‘আ শিক্ষাদিতেন যে, তারা যেন বলে:

«السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، نسأل الله لنا ولكم العافية»

“হেকবরের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ, তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিতহোক, আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরাআল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।”[29]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহুআনহা হতে সহীহ সনদে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কবর যিয়ারত করতেন তখন তিনি বলতেন:

السلام عليكم دار قوم مؤمنين وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، يرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين، اللهم اغفر لأهل بقيع الغرقد

“হেকবরের অধিবাসী মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আল্লাহ আমাদের পূর্বেগমনকারী এবং পরবর্তী গমনকারীদেরকে রহমত করুন। হে আল্লাহ, বাকীআল- গারকাদের অধিবাসীদেরকে ক্ষমা করুন।”

যিয়ারতের সময় তিনি সূরা ফাতেহা বা কুরআন থেকেঅন্য কিছু পাঠ করেন নি, কাজেই যিয়ারতের সময় তা পাঠ করা বিদ‘আত। এমনিভাবে কুরআনের যে কোনো আয়াত পাঠ করা বিদ‘আত, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যেব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়তা প্রত্যাখ্যাত।”

সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি এমনকোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

এবং জুম‘আর খুৎবায় তিনিবলেছিলেন :

“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো, আল্লাহর কিতাব এবংসর্বোত্তম হেদায়েত হলো, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃতকাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”দেখুন, সহীহ মুসলিম এবং সুনান নাসায়ী, তবে নাসায়ী আরো একটু বাড়িয়ে বর্ণনা করেছে, “আরপ্রতিটি পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে”। কাজেই সকল মুসলিমের উচিৎ হলো কবর যিয়ারত ওঅন্যান্য ক্ষেত্রে শরীয়তকেই নির্ধারিত করা এবং বিদ‘আত থেকেসতর্ক থাকা।

সকল মুসলিমের কবর যিয়ারত করা বৈধ, চাইউঁচু দরজার ওলি হোক বা না হোক, প্রতিটি মুমিন নর-নারীইআল্লাহর অলি। আল্লাহ বলেন:

﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ ﴾ [يونس: ٦٢،  ٦٣]

“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেইএবং তারা চিন্তিতও হবে না, যারা ঈমান এনেছে এবং তারাআল্লাহকে ভয় করতো।” [সূরা ইউনুস/৬২-৬৩]

তিনি আরো বলেন:

﴿وَمَا كَانُوٓاْ أَوۡلِيَآءَهُۥٓۚ إِنۡ أَوۡلِيَآؤُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُتَّقُونَ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٤ ﴾ [الانفال: ٣٤]

“তারা আল্লাহর অলি ছিল না, আল্লাহরঅলি হচ্ছে তাকওয়ার অধিকারীগণ কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানেনা।” [সূরা আনফাল/৩৪]

যিয়ারতকারী বা অন্য যে কারো জন্য মৃতের নিকট দো‘আচাওয়া বা তাদের নিকট প্রার্থনা করা, তাদের জন্য মান্নত করাজায়েয নেই। তাদের নিজেদের জন্য বা কোনো রুগীর জন্য অথবা শত্রুদের উপর বিজয় লাভ বা অন্য কোনো প্রয়োজনেরব্যাপারে তাদের নৈকট্য লাভ করে তাদের সুপারিশের আশায় তাদের কবরের পার্শ্বে বা অন্যকোথাও তাদের জন্য পশু জবাই করা জায়েয নেই। কারণ এগুলো হচ্ছে ইবাদত, আরইবাদত সবগুলোই একমাত্র আল্লাহর জন্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]

“তাদেরকে শুধুমাত্র একনিষ্ঠতার সাথে এক আল্লাহরইবাদত করার নির্দেশই দেওয়া হয়েছে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ /৫]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]

“আমি জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবলমাত্রআমারই ইবাদত করার জন্য।” [সূরা আয-যারিয়াহ /৫৬]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]

“এবং সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য, কাজেইতোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা জ্বিন ১৮]

তিনি আরও বলেন:

﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ﴾ [الاسراء: ٢٣]

“এবং তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা কেবলমাত্র তারই ইবাদত কর।” [সূরা ইসরা/২৩]

তিনি আরও বলেন:

﴿ فَٱدۡعُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١٤ ﴾ [غافر: ١٤]

“তোমরা একনিষ্ঠতার সাথে তাকে ডাক, যদিওকাফেরগণ তা অপছন্দ করে।” [সূরা গাফের/১৪]

আরও বলেন:

﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [الانعام: ١٦٢،  ١٦٣]

“হে নবী, আপনি তাদের বলেদিন, আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমারজীবন ও মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তার কোনো অংশিদার নেই, আর এ নির্দেশই আমাকে দেওয়া হয়েছে এবং আমিই সর্ব প্রথম আত্মসমর্পণকারী।” [সূরাআল-আন‘আম/১৬২-১৬৩] এ অর্থে আরও বহু আয়াত রয়েছে।

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,

«فَإِنَّ حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ، وَلَا يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا»

“বান্দার উপর আল্লাহর হক্ব হচ্ছে: তারা তাঁরইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশিদার করবে না।”হাদীসটি মু‘আয রাদিয়াল্লাহু‘আনহুথেকে বর্ণিত।[30]

এ হাদীস সকল ইবাদতকে শামিল করে তথা, সালাত, সাওম, রুকু, সিজদাহ, হজ্জ, দো‘আ, কোরবানী, মান্নত ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদত এর অন্তর্ভুক্ত।

এমনিভাবে পূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলোও সকল প্রকারইবাদতকে শামিল করে।

সহীহমুসলিমে আলী রাদিয়াল্লাহু‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ»

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করবেতার উপর আল্লাহ লা‘নত বর্ষিত হবে।”[31]

সহীহ বুখারীতে উমর রাদিয়াল্লাহু‘আনহুথেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ تُطْرُونِي، كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ، فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ، وَرَسُولُهُ»

“তোমরা আমার অত্যাধিক প্রশংসা করো না যেমনখৃষ্টানগণ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে করেছে, বরং আমিকেবল একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বল যে আমি আল্লাহর বান্দা ওতার রাসূল।”[32]

এছাড়াও এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ এবং তারসাথে শির্ক করা এবং শির্কের অসিলা অবলম্বন করা নিষেধের বহু হাদীস রয়েছে।

আর মহিলাদের জন্য কোনো কবর যিয়ারত নেই, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَعَنَ الله زائرات القبور»

“কবর যিয়ারতকারিনী মহিলার উপর আল্লাহ অভিসম্পাতকরেছেন।”[33]

কেননা এদের কবর যিয়ারতের ফলে পুরুষদের পক্ষ থেকেফেৎনার সম্মুখীন হতে পারে।

ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় সকলের জন্য কবর যিয়ারতনিষিদ্ধ ছিল, অতঃপর যখন ইসলাম ও তাওহীদ ব্যপকতা লাভ করেছেতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলের জন্যকবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন, তারপর ফেৎনার ভয়ে শুধুমহিলাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছেন।

আর কাফেরদের কবর যিয়ারত স্মৃতি এবং উপদেশ গ্রহণকরার জন্য হলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু তাদের জন্য দো‘আ বা ক্ষমা চাওয়া যাবে না।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেসহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি তাঁর মা’রজন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দেননি, তারপর তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দিলেন, কারণ তিনি জাহেলিয়া যুগে তার স্বজাতীর ধর্মের উপর মৃত্যুবরণকরেছেন।

আল্লাহর নিকট সকল নর-নারী মুসলিম ভাইয়ের জন্যদ্বীন বুঝার এবং কথায়, কাজে ও বিশ্বাসে এর উপর কায়েম থাকারতাওফীক প্রার্থনা করছি। আমাদেরসহ সকল মুসলিমকে যেন এর পরিপন্থী বিষয়গুলো থেকেরক্ষা করেন। নিশ্চয়ই তিনি এর অভিভাবক এবং এর উপর ক্ষমতাবান। সালাত ও সালাম বর্ষিতহোক নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন এবং তাঁর সকল সাহাবীগণের উপর।

 এ কথাটির কোনো ভিত্তি নেই বরং তা বিদ‘আত এবং নিন্দনীয়

প্রশ্ন:ব্রিটেন থেকে ইসলামি জামাত প্রশ্ন করেছেযে, কেউ কেউ দো‘আ কুনুতে বলে থাকেন:بين سقفنا وكهيعص تكفينا         (বাইনা সাকফিনা ও কাফ-হা-ইয়া-আইন সদ তাকফীনা)এর হুকুম কি? যারা তা বলে তাদের পিছনে কি সালাত হবে?

উত্তর:এ আমলটি নিন্দনীয় এবং বিদ‘আত, ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। সে যদি এ বিদ‘আতছেড়ে দিয়ে তাওবা না করে তাহলে দায়িত্বশীলদের উচিৎ হলো; তাকেইমামতি থেকে বাদ দিয়ে ভালো একজন ইমাম নিয়োগ করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলাবলেন,

﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ﴾ [التوبة: ٧١]

“মুমিন নর-নারী একজন অপরজনের বন্ধু, তারা সৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকর্মের নিষেধ করে।” [সূরা তাওবা/৭১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»

“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় হতে দেখবেসে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা করা সম্ভব না হলে মুখদ্বারা নিষেধ করবে, অতঃপর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তরেঘৃনা করবে, আর এটিই সবচেয়েদুর্বলতম ঈমান।”[34]

 নবীরসম্মানের দ্বারা অসিলা গ্রহণ করার হুকুম

প্রশ্ন:যে মুসলিম আল্লাহর ফরযগুলো আদায় করে এবংনবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান দ্বারা অসিলাগ্রহণ করে তার হুকুম কি? তাকে কি মুশরিক বলা যাবে? অনুগ্রহ করে উপকার করবেন।

উত্তর:যে মুসলিম আল্লাহকে এক জানবে, তাকে ডাকবে, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবেএবং লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহর অর্থের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই এবং বিশ্বাস করবে যে, মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সত্য রাসূল, জ্বিন ও মানুষের নিকট তাঁকে পাঠিয়েছেন, সেএকজন মুসলিম। কারণ সে কালেমার সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূলকে বিশ্বাস করেছে। অতঃপর সেযদি কোনো অপরাধ করে তাহলে তার ঈমানের ঘাটতি হবে যেমন: ব্যভিচার করা, চুরি করা ও সূদ খাওয়া যতক্ষণ না তা হালাল মনে করবে। কিন্তু শয়তানেরপ্ররোচনায় পড়ে যদি এ অপরাধ করে ফেলে তাহলে তার ঈমানের ঘাটতি হবে এবং ঈমানেরদুর্বলতা হবে।

আর যদি নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসিলা করে বলে, হে আল্লাহ, আমিরাসূলের সম্মান বা তাঁর হক্বের অসিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, তাহলেঅধিকাংশ আলেমের নিকট তা বিদ‘আত, তারঈমান কমে যাবে কিন্তু মুশরিক বা কাফের হবে না। যেমন অন্যান্য অপরাধের দ্বারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না; বরং সে মুসলিমইথেকে যাবে। কারণ দো‘আ এবং দো‘আর পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ। এতেনবীর সম্মান, বা তাঁর হক্ব বা অন্যান্য নবীদের সম্মান বাহক্ব অথবা আহলে বাইতের অন্য কারো সম্মান বা হক্বের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করার কোনো প্রমাণপাওয়া যায় না।

সুতরাং তা ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব। কিন্তু তা শির্ক নয়বরং শির্কের মাধ্যম, তা করলে মুশরিক হবে না বরং অধিকাংশ আলেমেরনিকট সে বিদ‘আতে পতিত হবে; ফলে তার ঈমান কমে যাবে, কেননা দো‘আর পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসেরউপর সীমাবদ্ধ।

কাজেই যে কোনো মুসলিম আল্লাহর গুণ এবং নামেরদ্বারা অসিলা গ্রহণ করবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, সুতরাং এর দ্বারা তোমরা তাকে ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ/১৮০]

অনুরূপ তাওহীদ ও ঈমানের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করবে, যেমন হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন:

«اللهم إني أسألك بأني أشهدُ أنك أنت الله لا إله إلا أنت الأحد الصمدُ الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد»

“হেআল্লাহ, আমি তোমারই নিকট প্রার্থনা করি, কেননাআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া ইবাদতেরযোগ্য কোনো উপাসক নেই, একক সত্তা, যারনিকট সকল কিছু মুখাপেক্ষী, তিনি জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”[35]এটি হচ্ছে তাওহীদের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা।

এমনিভাবে সৎ আমল দ্বারা অসীলা গ্রহণ করাওঅনুমোদিত। যেমন, পাহাড়ের গর্তে আটকে পড়া লোকদের ঘটনা বর্ণনার হাদীসে এসেছে যে, রাত্রি বা বৃষ্টির কারণে কিছু লোক গর্তে প্রবেশ করলে একটি বড়পাথর এসে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিল। তারা চেষ্টা করেও তা সরাতে পারল না। অতঃপর তারাএকে অপরকে বলল, এ পাথর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই; কিন্তু যদি তোমরাতোমাদের কৃত সৎ আমলের দ্বারা দো‘আ কর। তারপর তারা তাদের সৎআমলের অসীলায় দো‘আ করল। তাদের একজন তার মাতা-পিতার সাথে সদ্যবহারেরদ্বারা অসিলা করল ফলে পাথরটি সামান্য সরে গেল, অপর একজনব্যভিচার থেকে বিরত থাকার দ্বারা অসীলা করল, তার একজন চাচাত বোন ছিল, সে তাকে খুব ভালোবাসতো, একদিন তাকে কাছে পাওয়ার জন্যচাইল কিন্তু সে তাতে রাজি হলো না, অতঃপর চাচাত বোনের খুবঅভাব দেখা দিলে তার নিকট এসে কিছু সাহায্য চাইল। সে বলল: তুমি যদি আমার কথায় রাজিহও তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, অতঃপর মেয়েটি একশতবিশটি সোনার দিনারের বদলায় রাজি হলো। তারপর সে যখন ব্যভিচারের জন্য তার দু’পায়ের উপর বসল তখন মেয়েটি বলল: আল্লাহকে ভয় কর, সতীত্বেরহক্ব আদায় ব্যতীত তা নষ্ট করো না। তখন সে আল্লাহর ভয়ে উঠে গেল, ব্যভিচারকরেনি এবং একশত বিশটি দিনারও ছেড়ে দিল। তা স্মরণ করে বলল, হে আল্লাহ, তুমিতো জন, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যকরেছিলাম কাজেই আমাদের এ বিপদ থেকে তুমি রক্ষা কর। পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন্তুএতে তারা বের হতে পারল না, অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি তার আমানতআদায়ের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করে বলল, তার নিকট এক শ্রমিকের পয়সা বাকী ছিল, সে তা না নিয়ে চলে গেলে সে তা ব্যবসার মাধ্যমে বাড়িয়েছে, বাড়তে বাড়তে উঁট, গরু, ছাগলএবং রাখালসহ বহু সম্পদ হয়েছে। তারপর একদিন সে ব্যক্তি এসে তার পারিশ্রমিক চাইলে সবগুলোদিয়ে দিল। তা স্মরণ করে বলল, হে আল্লাহ, তুমিতো জান, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছিলাম কাজেই তুমি আজআমাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা কর, ফলে পাথরটি সরে গেল এবং তারা সকলেই গর্ত থেকে বেরহয়ে চলে গেল।”[36]

এতে প্রমাণিত হয় যে, সৎ আমলদ্বারা অসীলা গ্রহণ করা দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ। আর নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসীলা বা আবু বকর সিদ্দিক,  উমর,  আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বা আহলে বাইতের কারোঅথবা তাদের মত অন্য কারো সম্মানের অসীলা গ্রহণ করার কোনো ভিত্তি নেই বরং তা বিদ‘আত। শর‘ঈ অসীলা হলো: আল্লাহর নাম বা গুণাবলীবা তার প্রতি ঈমানের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা। যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট চাচ্ছি তোমার প্রতি ঈমানের অসিলায় বা তোমার নবীরপ্রতি ঈমানের অসিলায়, বা তোমার প্রতি আমার মহব্বতের অসীলায়বা তোমার নবীর প্রতি আমার মহব্বতের অসীলায়,তা ভালো আর এটিই শর‘ঈ অসীলা।

অথবা তাওহীদের দ্বারা অসীলা গ্রহণ, যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ, আমি তোমারই নিকট চাই, কেননা আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমিছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই, তুমি এক ও একক সত্তা।এটিও ভালো।

অথবা মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার, সালাতেরপ্রতি যত্নবান হওয়া এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থাকার দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা, এ সবগুলোই সৎ আমলের অসীলা গ্রহণ। আর এগুলোই আলেমগণ স্বীকৃতি দিয়েছেন।কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানেরঅসীলা বা অন্য কারো সম্মানের অসীলা গ্রহণ করা বিদ‘আত। পূর্বেতা উল্লেখ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ আলেমের মত হলো যে, তা জায়েয নেই।

 নবীদেরনির্দশনগুলো খুঁজে বের করে এতে সালাত পড়া বা এর উপর মাসজিদ তৈরী করার হুকুম

প্রশ্ন:যে সকল জায়গায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়েছেন সেখানে মাসজিদ বানানো ভালো? নাকি ঐ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া বা সাধারণ বিনোদনের জায়গা বানানো ভালো?

উত্তর:নবীদের নির্দশনগুলো খুঁজে বের করে এতে সালাতপড়া বা এর উপর মাসজিদ তৈরী করা কোনো মুসলিমের পক্ষে জায়েয নেই, কারণতা শির্কের বাহন, এ জন্যে উমর রাদিয়াল্লাহু‘আনহু তা থেকে লোকদেরকে নিষেধ করতেনএবং বলতেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি তাদের নবীদের নির্দশনাবলী অনুসরণের দ্বারাধ্বংস হয়েছে। শির্কের বাহন ধ্বংস করতে এবং বিদ‘আত থেকে লোকদেরকেসতর্ক করতে তিনি হুদাইবিয়ার সেই বৃক্ষটি কেটে ফেলেছেন যার নীচে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাই‘আত করা হয়েছিল, কারণতিনি কিছু লোককে দেখলেন তারা সেখানে গিয়ে এর নীচে সালাত পড়ছে। তিনি কাজে এবংচরিত্রে জ্ঞানী ছিলেন, শির্কের মাধ্যম এবং এর কারণগুলো ধ্বংসকরতে আগ্রহী ছিলেন। আল্লাহ তাকে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার পক্ষ থেকে উত্তম বদলা দিন।তার কারণেই মক্কা, তাবুক ইত্যাদি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দশনাবলীতে কোনো সাহাবী মাসজিদতৈরী করেন নি। কেননা তারা জানতেন যে,তা বিদ‘আত; যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ককরে গেছেন এবং তা শরীয়ত বিরোধী,তা বড় শির্কে পতিত হওয়ারকারণ হতে পারে।

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুনকোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

সহীহ মুসলিমে তাঁর বাণী: “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমলকরবে যা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

এবং জুম‘আর খুৎবায় তিনিবলেছিলেন :

“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব এবংসর্বোত্তম হেদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”

এ অর্থে আরও বহু হাদীস রয়েছে ।

 মাকামে ইব্রাহীম ও ক্বাবা শরীফের দেওয়াল বা কাপড়ে মুছা জায়েয নেই

 প্রশ্ন:কিছু লোককে দেখেছি মাকামে ইব্রাহীমকেসম্মান করে এবং বরকত হাসিলের জন্য তা স্পর্শ করে, এমনিভাবে কা‘বাশরীফকেও স্পর্শ করে থাকে,তা করার হুকুম কি? বিস্তারিতজানতে চাই।

উত্তর:মাকামে ইব্রাহীম, ক্বাবাশরীফের দেওয়াল বা কাপড়ে মুছা, এ সবই না জায়েয, শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম তা করেননি। বরং তিনি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছেন,তা স্পর্শ করেছেন এবং ভিতর থেকে ক্বাবার দেওয়াল স্পর্শ করেছেন। তিনি যখন ভিতরেপ্রবেশ করেছিলেন তখন ভিতর থেকে ক্বাবার দেওয়ালে বুক এবং গাল লাগিয়েছেন এবং এককর্ণারে তাকবীর দিয়েছেন ও দো‘আ করেছেন। আর বাহির থেকে তিনিতা কখনো করেছেন বলে কিছু সাব্যস্ত নেই। বলা হয়ে থাকে যে, তিনিমুলতাযাম (ক্বাবা ঘরের দরজার চৌকাট) ধরেছিলেন, এর সনদ দুর্বল, প্রকৃত পক্ষে কিছু সাহাবা এ রকম করেছিলেন, কাজেইকেউ যদি তা করে ফেলে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আর মুলতাযাম ধরাতেও অসুবিধা নেই। আরহাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা সুন্নাত।

ক্বাবার কাপড় বা দেওয়ালে মুছা বা লেগে থাকা উচিৎনয়, কারণ এর কোনটিরই যেমনি কোনো ভিত্তি নেই তেমনি তারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বা কোনো সাহাবীথেকে সাব্যস্তও নেই, পরবর্তীতে মানুষ তা তৈরী করেছে, বিধায়তা বিদ‘আত।

ক্বাবা শরীফের নিকট কোনো কিছু চাওয়া বা দো‘আ করা অথবা এর দ্বারা বরকত হাসিল করা বড় শির্ক, কারণএতে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি ক্বাবার নিকট রোগমুক্তিচাইবে অথবা রোগ ভালো হওয়ার আশায় মাকামে ইব্রাহীমে মুছবে সে বড় শির্কে পতিত হবে।

তলোয়ারদ্বারা নিজেকে আঘাত করার উৎসব পালন করা নিন্দনীয় কাজ

প্রশ্ন:একটি ব্যাপার দেখে আমি এবং আমার পরিবারেরসকলেই অত্যন্ত হতভম্ব হয়েছি, আর তা হলো: আমাদের গ্রামে কিছুঅনুষ্ঠান এবং জন্মোৎসব পালন করা হয়, এতে কিছু আশ্চর্যআশ্চর্য কাজ হয়ে থাকে। কিছু লোক তলোয়ার বা খঞ্জর দিয়ে নিজেকে আঘাত করে এবং হাত বাহাতের আঙ্গুল কেটে ফেলে। এ সব কাণ্ড কি যুক্তিসঙ্গত? এটি কিশয়তানের কাজ? নাকি জাদু টোনা? যদিশয়তানের কাজ হয়ে থাকে তাহলে তা কিভাবে দেখবেন যে, কেউ যদিবলে তা ঠিক নয় বরং তা জাদু, তাহলে পরের দিনই সে মারাত্মকঅসুস্থ হয়ে পড়ে যা থেকে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যদি তাদের নিকট ক্ষমা চায়তাহলেই ভালো হয়। নিশ্চয়ই তা একটি ফেৎনা, আমরা এর সম্মুখীনহচ্ছি। এ ব্যাপারে আমাদেরকে একটি সঠিক দিক নির্দেশনা দিন, আল্লাহআপনাকে উত্তম বদলা দিন।

উত্তর:সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাতও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর উপর। অতঃপর প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন যে, কিছুলোক অনুষ্ঠান এবং উৎসব পালনের সময় তাদের হাত এবং হাতের অঙ্গুলি কেটে ফেলে এবং যেব্যক্তি এর নিন্দা করবে তাকে বিভিন্ন রোগে আক্রমন করে। এ সবই শয়তানী কাজ, মানুষের জন্য সাজিয়েছে তার আনুগত্য করার জন্য, এমনকি সে যদি বলে: আল্লাহর নাফরমানী করে তার আনুগত্য করতে তারা তা-ই করে থাকে।

আর এ অপরাধীগণ যে কাজ করে থাকে তা হলো: জাদুরমাধ্যমে তারা লোকদের চোখে ধাঁধাঁ বা ভেলকি লাগিয়ে রাখে ফলে তারা মনে করে যে, হাত-পা অথবা হাত-পায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলে, আসলেএর কিছুই নয়, সবকিছুই মিথ্যা এবং জাদু টোনা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قَالَ أَلۡقُواْۖ فَلَمَّآ أَلۡقَوۡاْ سَحَرُوٓاْ أَعۡيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسۡتَرۡهَبُوهُمۡ وَجَآءُو بِسِحۡرٍ عَظِيمٖ ١١٦ ﴾ [الاعراف: ١١٦]

“অতঃপর যখন তারা তাদের রশিগুলো নিক্ষেপ করল তখনলোকদের চোখ ধাঁধিয়ে ফেলল এবং তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলল, এবংতারা মহাজাদু প্রদর্শন করল।” [সূরা আরাফ/১১৬]

কাজেই জাদুকর অন্য লোকদের চোখকে জাদু করে ফলে, তারা রশি এবং লাঠিকে সাঁপ দেখতে পায়, যেমনআল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ ﴾ [طه: ٦٦]

“মুসা বললেন, বরং তোমরা নিক্ষেপ কর, তখনই তার মনে হলো যেন তাদের লাঠি এবং রশিগুলো ছুটাছুটি করছে।” [সূরা ত্বা-হা/৬৬]

মোটকথা, এ সকল জাদুকরী কাজ ভ্রান্ত। এর নিন্দাকরা ওয়াজিব। আর সরকারের উচিৎ হলো: তাদেরকে এবং তাদের মত যারা আছে সকলকে এ কাজ থেকেনিষেধ করা এবং তাদেরকে শাস্তি দেওয়া। ইসলামী শাসন হলে তাদের ক্ষতি থেকে মানুষকেরক্ষার জন্য তাদের উপর ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব। তেমনি কারো জন্মোৎসব পালনকরার কোনো ভিত্তি নেই বরং তা মানুষের তৈরী করা বিদ‘আত, ইসলামে কারো কোনো জন্মোৎসব নেই। বরং নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী অনুযায়ী ইসলামে উৎসব হলো: ঈদুল আযহাএবং ঈদুল ফিতর, হাজিদের জন্য আরাফা দিবস, এবংমিনার দিনগুলো।

কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বা হুসাইন বা অন্য কারো জন্মোৎসব পালন করা ইসলামের স্বর্ণযুগের পর পরবর্তীলোকদের তৈরী করা বিদ‘আত। কাজেই তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করা, একে অপরকে সৎকাজে সহযোগিতা করা, পরস্পরে সৎপরামর্শ দেওয়া এবং আল্লাহ ও রাসূলের বিধানের দিকে ফিরে আসা সকল মুসলিমের উপরওয়াজিব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরঅনুসরণেই রয়েছে সকল কল্যাণ এবং তাঁর ও সাহাবীগণের বিরোদ্ধচারণ রয়েছে যাবতীয় অমঙ্গল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিসসৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

তিনি আরো বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবেযা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

সহীহ বুখারীতে জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম জুম‘আর খুৎবায় বলেছেন,

“অতঃপরসর্বোত্তম বাণী হলো, আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আরনিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”

ইমামনাসায়ী আরো একটু বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন: “এবং প্রতিটি ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে।”

অনুরূপ ইরবাদ্ব ইবন সারিয়ার হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এবং নব রচিত কর্মসমূহ থেকেসাবধান থাক; কেননা প্রতিটি নব আবিষ্কৃত কাজ হচ্ছে বিদ‘আত এবংসকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”

অতএব মিসর, ইরাক, ইরানসহ সকল জায়গার মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার উপদেশ হলো: তারা যেনএ সকল নিন্দনীয় উৎসব পালন করা ছেড়ে দিয়ে শরিয়ত সম্মত ইসলামি উৎসবগুলো পালন করে এবংরাত্রে বা দিনের বেলায় উপযুক্ত সময়ে তাদের মাজলিস যেন কুরআন ও হাদীসের আলোকেদ্বীনের জ্ঞান শিক্ষার জন্য হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর সেই বাণীর উপর আমল করার লক্ষ্যে যা সহীহ হাদীসে এসেছে:

“তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।”[37]

এবং তাঁর বাণী:

“আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকেতিনি দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা দান করেন।”[38]

এবং তাঁর বাণী:

“যে ব্যক্তি জ্ঞান শিক্ষার জন্য বের হবে আল্লাহতার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দিবেন।”[39]

কারো জন্মোৎসব পালনের জন্য একত্রিত হওয়া বিদ‘আত, কাজেই তা ছেড়ে দেওয়া এবং তা থেকেসতর্কতা অবলম্বন করে ভালো পদ্ধতি এবং সদোপদেশের মাধ্যমে পরস্পরে সহযোগিতা করা উচিৎযেন প্রকৃত মুমিন নর-নারীগণ তা বুঝতে পারে এবং মাজলিস যেন হয় আল্লাহ ও রাসূলেরআনুগত্যের জন্য, দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা গ্রহণ এবং বুঝার জন্য, ও পরস্পরে ভালো এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তুকারো জন্মোৎসব পালন করার জন্য একত্রিত হওয়া বিদ‘আত, বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর জন্মোৎসব পালনের জন্য একত্রিত হওয়া। কারণ তিনি উম্মতের জন্য তা বিধানকরেন নি, যেমন পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। যদি তাঁর জন্মোৎসবপালন বৈধ হত তাহলে তিনি তা নিজে করতেন এবং তাঁর সাহাবীগণকে পালন করা শিক্ষা দিতেন, ফলে তাঁর পরবর্তীতে সাহাবীগণ নিজেরা পালন করতেন এবং লোকদেরকে তা শিক্ষা দিতেন তারাতা পালন করতো। যেহেতু এর কোনো কিছুই হয় নি, বিধায় বুঝতে হবে যে তা বিদ‘আত।

 বাড়ী তৈরীর কাজ অর্ধেক বা পূর্ণ হলে পশুজবাই করা

প্রশ্ন:একজন সুদানী মুসলিম ভাই প্রশ্ন করেবলছেন: আমাদের দেশে একটি রেওয়াজ আছে যে, কোনো ব্যক্তি ঘরতৈরী করতে গিয়ে অর্ধেকে পৌঁছিলে বা ঘরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সেখানে উঠার পূর্বেইপশু জবাই করে আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়। এ ব্যাপারেআপনার মতামত কি? নতুন ঘরে উঠার পূর্বে এমন কোনো ভালো কাজ আছেকি যা করা বৈধ। অনুগ্রহ করে তা জানাবেন।

উত্তর:সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত ওসালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁরপরিবার পরিজন, সকল সাহাবী এবং তাঁর পথের অনুসারীদের উপর। অতঃপরএ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। যদি এ পশু জবাই করা দ্বারা জ্বিন হতে রক্ষাবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য হয়, যেমন এর দ্বারা সে বা ঐ ঘরে বসবাসকারীগণ নিরাপদে থাকবে,এমন উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা জায়েয নেই বরং তা বিদ‘আত।আর যদি জ্বিনের জন্য জবাই করে থাকে, তাহলে বড় শির্ক হবে, কেননাতা হবে গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা।

আর যদি তার উপর আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাপ্রকাশার্থে ঘরের অর্ধেক বা ঘর সম্পন্ন হওয়ার পর পশু জবাই করে আত্মীয় স্বজন এবংপ্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ায় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। ভাড়াটে ঘরে না থেকেনিজে ঘর তৈরী করে থাকার মত তার উপর আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে অধিকাংশলোক এটিই করে থাকে। এমনিভাবে কিছু লোক ভ্রমণ থেকে নিরাপদে বাড়ীতে পৌঁছার কারণেআল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে থাকে।কেননা নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভ্রমণ থেকেফিরে আসতেন তখন উঁট জবাই করে লোকদেরকে খাওয়াতেন।

 রজব মাসেসংঘটিত বিদ‘আতসমূহ

প্রশ্ন:কিছু লোক রজব মাসকে কিছু ইবাদতের জন্যনির্দিষ্ট করে থাকে। যেমন, রাগায়েবের সালাত এবং ২৭শে রজবের রাত্রি জাগরণ। শরীয়তেএর কোনো ভিত্তি আছে কি?

উত্তর:রাগায়েবের সালাত বা ২৭ শে রজবে উৎসব পালনকরা এই ধারণায় যে, এ তারিখে ইসরা এবং মেরাজ হয়েছে এ সবই বিদ‘আত, শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। বিজ্ঞ আলেমগণএ থেকে সতর্ক করেছেন এবং আমিও এ ব্যাপারে কয়েকবার লেখার মাধ্যমে লোকদেরকে স্পষ্টজানিয়ে দিয়েছি যে, রাগায়েবের সালাত বিদ‘আত।কিছু লোক রজব মাসের প্রথম জুম‘আ রাত্রিতে তা করে থাকে। এমনিভাবে২৭ শে রজবে উৎসব পালন করে থাকে এ ধারণায় যে, এ তারিখে ইসরাএবং মেরাজ হয়েছে এ সবই বিদ‘আত, শরীয়তেএর কোনো ভিত্তি নেই।

ইসরা এবং মেরাজের সঠিক তারিখ জানা যায় না, যদি জানাও যায় তাহলে এ নিয়ে উৎসব পালন করা জায়েয নেই কারণরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তা পালনকরেননি, তদ্রূপ তাঁর সুপথ প্রাপ্ত খলিফাগণ এবং বাকী অন্যান্যসাহাবীগণও কখনো তা পালন করেননি। যদি তা পালন করা সুন্নাত হত তাহলে তারা অবশ্যইকরতেন।

তাদের অনুসরণ এবং তাদের পথে চলার মধ্যেই সকলকল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]

“আর যারা সর্ব প্রথম হিজরতকারী, আনসারএবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্টহয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেইজান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাইহলো মহা কৃতকার্যতা। [সূরা তাওবা/১০০]

এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যেব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়তা প্রত্যাখ্যাত।”[40]

তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবেযা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[41]

এবং তিনি তাঁর জুম‘আর খুৎবায় বলেছেন,

“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবংসর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[42]

কাজেই সকল মুসলিমের উচিৎ হলো: সুন্নাতের অনুসরণকরা এবং এর উপর দৃঢ় থেকে পরস্পরে নসিহত গ্রহণ করা এবং সকল প্রকার বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লামের নির্দেশ এবং সেই বাণীর উপর আমল করার লক্ষ্যে যেখানে আল্লাহ বলেছেন :

﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائ‍دة: ٢]

“তোমরা পরস্পরে ভালো এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজেসহযোগিতা কর।” [সূরা মায়েদা/২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١،  ٣]

“কসম যুগের, নিশ্চয়ই মানুষক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবংপরস্পরকে হক্বের তাকীদ করে এবং তাকীদ করে ধৈর্যের।” [সূরা আসর ১-৩]

তদ্রূপ নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর বাণী:

«الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ»

“দ্বীন হচ্ছে উপদেশ বা কল্যাণ কামনা, বলা হলো, কার জন্য হে আল্লাহর রাসূল? তিনিবললেন: আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তাররাসূলের জন্য এবং মুসলিমদের ইমাম ও সাধারণ জনগণের জন্য।”[43]

তবে রজব মাসে উমরা করাতে কোনো অসুবিধা নেই, কারণ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু‘আনহু হতে সাব্যস্ত আছে যে,নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে উমরা করেছেন এবং সালাফগণও রজবমাসে উমরা করতেন। যেমন হাফেয ইবনে রজব তার কিতাব (আল লাতায়েফ) এ উমর, তার ছেলে আব্দুল্লাহএবং আয়েশার হাদীস উল্লেখ করেছেন এবং ইবনে সিরিন হতে বর্ণিত আছে যে, সালাফগণওএ রকম করেছেন।

 মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির পাশে যে সকল বিদ‘আতী কথা বলা হয়

প্রশ্ন:কিছু লোক মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট (বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম) শব্দটির পরিবর্তে ৭৮৬ বলে থাকে, সূরাওয়াকি‘আ ৪২ বার, যারিয়াহ ৬০ বার, ইয়াসীন৪১ বার এবং (ইয়া লাতীফ) শব্দটি ১৬৬৪১ বার পড়ে থাকে, এ রকমকরা কি জায়েয আছে? অনুগ্রহ করে জানতে চাই।

উত্তর:শরীয়তে এ রকম নির্দিষ্ট সংখ্যার আমল আছেবলে আমার জানা নেই, আর এ শব্দের পরিবর্তে সংখ্যা বলা এবং তাসুন্নাত হিসাবে বিশ্বাস করা হচ্ছে বিদ‘আত। এমনিভাবে মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির নিকট এভাবে পাঠ করা মৃত্যুর সময় হোক বা মৃত্যুর পর হোক এর কোনো ভিত্তিনেই। কিন্তু দিবা-রাত্রি বেশী বেশী করে কুরআন তেলাওয়াত করা ভালো, কুরআনতেলাওয়াতের শুরুতে, খাওয়া, পানাহার, ঘরে প্রবেশ, স্বামী-স্ত্রী সহবাস ইত্যাদিকাজ কর্মের সময় বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম হতে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে কাজে বিসমিল্লাহবলা হয় না এ রকম প্রতিটি কাজই লেজ কাটা।”[44]অনুরূপভাবে ইয়া লাতীফ বা ইয়া আল্লাহ ইত্যাদি শব্দ নির্দিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করাসুন্নাত নয় বরং তা বিদ‘আত, শরীয়তে এরকোনো ভিত্তি নেই।

তবে সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে বেশী বেশী দো‘আ করা বৈধ, যেমন কেউ বলল: ইয়া লাতীফ! উলতুফবিনা (হে অমায়িক! আমাদেরকে অনুগ্রহ কর, বা আমাদেরকে ক্ষমা কর, বা রহমত কর বা সঠিক রাস্তা দেখাও) ইত্যাদি। তদ্রূপ ইয়া আল্লাহ, ইয়া রহমান, ইয়া রহীম, ইয়াগাফুর, ইয়া হাকীম, ইয়া আযীযু আমাদেরকেঅনুগ্রহ কর, বিজয় কর, আমাদের আমল এবংঅন্তরকে সংশোধন কর ইত্যাদি বলাও জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ﴾ [غافر: ٦٠]

“আর তোমাদের প্রভু বললেন, তোমরাআমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” [সূরা গাফের ৬০]

তিনি আরও বলেন:

﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦ ﴾ [البقرة: ١٨٦]

“আর আমার বান্দা যখন আমার ব্যাপারে আপনাকেজিজ্ঞাসা করে তখন (বলুন) আমি তাদের অতি নিকটে, কোনো আহ্বানকারীআমাকে ডাকলে আমি তার আহবানে সাড়া দেই।” [সূরা বাকারা/১৮৬] তবে শর্ত হচ্ছে, এ যিকিরএর জন্য যা বাড়ানো বা কমানো যাবে না এমন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যাবে না।

কিন্তু যে ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা এসেছে যেমন : (লা ইলাহাইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুলহামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর) প্রতিদিন একশত বার। এটি নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত রয়েছে। এমনিভাবে (সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী ) সকাল সন্ধায় একশত বার, প্রত্যেকফরয সালাতের শেষে সুবহানাল্লাহ, অলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহুআকবার তেত্রিশ বার করে এবং একবার (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর) পড়েশতবার পূর্ণ করবে।[45]এগুলো এবং এ অর্থে আরও যা নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সাব্যস্ত রয়েছে সেগুলোকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় করাযাবে।

মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট মৃত্যুর পূর্বেযদি কিছু আয়াত পাঠ করা হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই, কেননা নবীসাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর প্রমাণ রয়েছে।

আর মৃত্যুর পূর্বে তাকে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এরতালকীন দেওয়াই মুস্তাহাব, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে লা ইলাহাইল্লাল্লাহর তালকীন দাও।”[46]আলেমগণের সঠিক মতে, এখানে ‘মৃত’শব্দদ্বারা উদ্দেশ্য হলো: মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তি, কারণ তারাইতালকীন থেকে উপকার লাভ করে থাকে।

জানাযায় বিদ‘আত

প্রশ্ন:ঐ জাতীর ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলেরহুকুম কি? যখন তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তখন তার আত্মীয় স্বজনএকটি বকরী জবাই করে থাকে যার নাম দেয় আকীকা এবং এর কোনো হাড় ভাঙ্গবে না। অতঃপরহাড্ডি ও গোবরগুলো কবর দিয়ে দেয় এই ধারণায় যে, এটিই ভালো কাজ, যা করা অবশ্যই জরুরী।

উত্তর:ইসলামী শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই, কাজেই সকল প্রকার বিদ‘আত ও অপরাধের ন্যায়তা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তাওবা উচিৎ। কেননা আল্লাহর নিকট তাওবা করায় পূর্বের সকলঅপরাধ ক্ষমা হয়ে যায়, আর সকল প্রকার বিদ‘আত এবং পাপ পঙ্কিলতা থেকে তাওবা করাওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]

“হেমুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, হয়তোতোমরা সফলকাম হতে পারবে।” [সূরা নূর ৩১]

তিনি আরও বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا﴾ [التحريم: ٨]

“হেমুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা নাসূহ (খাটি) কর। [সূরাতাহরীম/৮]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল সহীহ হাদীস এসেছে তাতে শর‘ঈ আকীকাহলো: কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণের সপ্তম দিনে যা জবাই করা হয় তা। ছেলের পক্ষে দু’টি খাসী আর মেয়ের পক্ষে একটি খাসী জবাই করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইনের পক্ষে আকীকা করেছেন।আকীকাদাতা ইচ্ছা করলে এর গোশত ফকীর মিসকীন, পাড়া প্রতিবেশীএবং বন্ধুবান্ধবের মাঝে বন্টন করে দিতে পারে অথবা রান্না করে তাদেরকে দাওয়াত দিয়েখাওয়াতে পারে। আর এটিই শর‘ঈ আকীকা,তা সুন্নাতেমুয়াক্কাদা, তবে কেউ তা না করলে তার পাপ হবেনা।

 মৃতব্যক্তির উপর কুরআন পড়া এবং তার বুকের উপর কুরআন রাখার হুকুম, শোকপালনের নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে কি?

প্রশ্ন:নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোন প্রশ্ন করেবলছেন: মৃত ব্যক্তির উপর কুরআন পড়া এবং তার পেটের উপর কুরআন রাখার হুকুম কি, শোক পালনের নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে কি? যেমনবলা হয়ে থাকে যে, শোক পালনের নির্দিষ্ট সময় হলো: তিন দিন? অনুগ্রহ করে এর হুকুম জানিয়ে উপকার করবেন।

উত্তর:মৃতের উপর বা কবরের উপর কুরআন পড়ার সঠিককোনো ভিত্তি নেই, তা করা বৈধ নয় বরং তা বিদ‘আত।এমনিভাবে তার পেটের উপর কুরআন রাখাও বৈধ নয়। তবে কোনো কোনো আলেম বলেছেন: পেটের উপরলোহা বা ভারী কোনো জিনিস রাখার জন্য যেন লাশ ফোলে না যায়।

আর শোক পালনের নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই, বরং তা মৃত্যুর পর থেকেই পালন করতে পারে জানাযার আগে বা পরে, এর কোনো নির্ধারিত সময় নেই, দিবা- রাত্রিরযে কোনো সময় তা পালন করতে পারে। এমনিভাবে ঘরে, বাইরে, রাস্তায় বা মাসজিদে বা কবরস্থানে ইত্যাদি যে কোনো জায়গায় শোকপালন করতে পারে।

 চল্লিশা বাবাৎসরিক শোক পালন শরীয়ত পরিপন্থী

প্রশ্ন:শোক পালনের ক্ষেত্রে চল্লিশা, বাৎসরিক পালন এবং কুরআন তেলাওয়াত (কুরআন খানী) ইত্যাদি রেওয়াজেরহুকুম কি?

উত্তর:শরীয়তে এ সমস্ত ইবাদতের যেমন কোনো স্থাননেই, তেমনি এর কোনো ভিত্তিও নেই বরং তা বিদ‘আতএবং জাহেলী যুগের কাজ। কেউ মারা গেলে শোকপালনের জন্য আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো ঠিক নয় বরং বিদ‘আত। এমনিভাবে সাপ্তাহিক বা বাৎসরিক অনুষ্ঠান করা জাহেলিয়া যুগের বিদ‘আত। মৃতের পরিবারের সদস্যদের করণীয় হলো ধৈর্য্য ধারণ করে পূণ্যেরআশা করা এবং ধৈর্যশীলদের মত বলা (ইন্না লিল্লাহি অ-ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন)। আল্লাহতাদেরকে অঙ্গীকার দিয়েছেন, তাদের উপর তাদের রবের পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হবে এবংতারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। [সূরা বাকারা ১৫৭] কিন্তু মৃত ব্যক্তির লোকেরা তাদেরনিজেদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলে কোনো অসুবিধা নেই।

মুসলিমদের জন্য বৈধ কাজ হলো: তাদের কেউ মারা গেলেতার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং রহমত কামনা করা আর এ সমস্ত জাহেলিয়া যুগেরঅনুষ্ঠানাদি ছেড়ে দেওয়া। আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের জন্য করণীয় হলো: মৃতেরপরিবারের জন্য খাবার তৈরী করা, কেননা তারা বিপদগ্রস্ত। আব্দুল্লাহ ইবন জা‘ফর ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু‘আনহু এর হাদীসে এসেছে যে, “জা’ফর রাদিয়াল্লাহু‘আনহু যখন মুতার যুদ্ধেশহীদ হন তখন নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনায়তাঁর পরিবারকে নির্দেশ দিলেন জা‘ফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরী করতে, তিনি বলেছিলেন: কেননা তাদের উপর সেই জিনিস এসেছে যা তাদেরকে ব্যস্ত রাখবে।”কিন্তু মৃতের পরিবার অন্য লোকদের জন্য খাবার তৈরী করবে না। তারা যদি তাদের নিজেদেরজন্য বা দূরবর্তী মেহমানদের জন্য তৈরী করে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।

 মৃতের পক্ষথেকে লোকদেরকে খাওয়ানোর জন্য দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত

প্রশ্ন:একজন মুসলিম মারা গেল, তারছেলে-মেয়ে এবং ধন সম্পদ রয়েছে, মৃতের পক্ষ থেকে বকরী জবাইকরে লোকদেরকে সপ্তম দিনে বা চল্লিশার দিনে দাওয়াত করে খাওয়ানো জায়েয হবে কি?

উত্তর:মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা করা বৈধ। আরফকীর মিসকিনকে খাওয়ানো, পাড়া প্রতিবেশীদেরকে অনুগ্রহ করা ভালোকাজ; যা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর সময় বা নির্দিষ্ট দিনে যেমন সপ্তম দিনেবা চল্লিশে, বা বৃহস্পতিবারে বা জুম‘আরাতেবা শুক্রবারে বকরী, গরু, উঁট বা পাখীইত্যাদি জবাই করে মৃতের নামে সদকা করা বিদ‘আত এবং নব আবিষ্কৃতকাজ, যা সালাফদের যুগে ছিল না। কাজেই তা পরিহার ওয়াজিব।কেননা নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

‘‘যে ব্যক্তি আমার এদ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

তিনি আরওবলেন: “আর তোমরা নবআবিষ্কৃত কাজ থেকে বেঁচে থাক কেননা প্রতিটি নবআবিষ্কৃত কাজ হচেছবিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”

 পরিবার এবংমা দিবসের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম

আমি‘‘নাদওয়াহ’’নামক একটি পত্রিকায় ৩০/১১/১৩৮৪ তারিখে একটি লেখা দেখতে পেলাম, যার শিরোনাম ছিল: (মা এবং পরিবারকে সম্মান করা)। লেখক বিভিন্নদিক দিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা তুলে ধরে বলেছেন: বৎসরে একটি দিনকে নির্দিষ্ট করা দরকার, যেখানে মাকে সম্মান করা হবে। তিনি বলেছেন: চিন্তাবিদগণ এদিনটি উদ্ভাবন করতে গিয়ে আরেকটি জিনিসভুলে গেছে। সেটি হলো: এতীম অনাথ শিশুরা যখন মা দিবসে অন্যান্য শিশুদেরকে তাদের মা’দের সম্মানে আনন্দ স্ফুর্তি করতে দেখে তখন তারা মনে কষ্ট পায়, কাজেই এ দিনে গোটা পরিবারকে সম্মানের কথা বলেছেন লেখক এবং ইসলামএ দিনটিকে ঈদ হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, কেননাইসলামী শরীয়ত সর্বদা মাকে সম্মান করা এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব করেছে।সুতরাং মা’র সম্মানের জন্য বৎসরে কোনো একটি দিনকে নির্দিষ্টকরার প্রয়োজনীয়তা বাকী রাখে নি।

ইসলাম এ দিবসটি স্বীকৃতি না দেওয়ায় তিনি ক্ষমাচেয়ে এবং এ দিবসটি উদ্ভাবকদের অন্য একটি ভালো কাজ ভুলে যাওয়ার সমালোচনা করে ভালোইকরেছেন, কিন্তু তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত স্পষ্ট হাদীসের বিরোধী বিদ‘আতসমূহের দিকে যেমনি কোনো ইঙ্গিত করেননি তেমনি এর ক্ষতি, এতে কাফের ও মুশরিকদের সামঞ্জস্যতার দিকেও কোনো ইঙ্গিত করেন নি।

কাজেই আমি অতি সংক্ষেপে লেখক এবং অন্যান্যদেরকেবলতে চাই: এ বিদ‘আতসহ আরো অন্যান্য যে সকল বিদ‘আতইসলামের শত্রুগণ এবং এ দ্বীনে বিদ‘আত প্রচলনে অজ্ঞ লোকগণতৈরী করেছে এতে ইসলামের দুর্ণাম করেছে এবং লোকজনকে ইসলাম থেকে দূরে রেখেছে। আর এতেনারী-পুরুষের একসাথে অবাধে চলাফেরার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা আল্লাহ ব্যতীত কেউবলতে পারবে না।

অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে বহু সহীহ হাদীস এসেছে, যাতে তিনি দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আতসৃষ্টি করা এবং ইয়াহূদী, খৃষ্টান ও মুশরিকদের মত ইসলামেরশত্রুদের সামঞ্জস্য করা থেকে সতর্ক করেছেন। যেমন তাঁর বাণী:

“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিসসৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[47]

সহীহ মুসলিমে এসেছে : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমলকরবে যা আমার শরীয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”অর্থাৎ এটি প্রবর্তকের উপরফিরিয়ে দেওয়া হবে।

এবং তিনি তাঁর জুম‘আরখুৎবায় বলতেন :

“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবংসর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আরনিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[48]

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মাকেবা পরিবারকে সম্মান করার জন্য বৎসরে একটি দিনকে নির্দিষ্ট করা নব আবিষ্কৃত কাজের অন্তর্ভুক্ত; যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি এবংতাঁর কোনো সাহাবীও করেননি, সুতরাং তা পরিহার করে এ থেকেসতর্ক থাকা এবং আল্লাহ ও তার রাসূল যা শরিয়ত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এর মধ্যেইসীমাবদ্ধ থাকা ওয়াজিব।

আর লেখক পূর্বে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইসলামী শরীয়ত সর্বদা মাকে সম্মান করার বিধান করেছে এবং তার সাথে সদ্যবহারেরজন্য উৎসাহ দিয়েছে, তা সত্য বলেছেন। কাজেই   মাকে সম্মান করা, তারসাথে সদ্ব্যবহার করা, তার প্রতি অনুগ্রহ করা এবং তার কথা শোনারব্যাপারে আল্লাহ যা বিধান করেছেন তার উপরই সীমাবদ্ধ থাকা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। আরদ্বীনে নব কাজের উদ্ভাবন করা যা থেকে আল্লাহ সতর্ক করেছেন তা এবং ইসলামের শত্রুদেরসামঞ্জস্যতা, তাদের পথে চলা এবং তাদের চিন্তাধারায় যা ভালোকাজ তা ভালো মনে করাই বিদ‘আত।

এ সম্মান শুধু মা’র জন্য নয়বরং মা-বাবা উভয়কে সম্মান করা, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা এবংসার্বিক দিক দিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য ইসলাম বিধান করেছে, সেই সাথে তাদের অবাধ্যতা, তাদের সাথে সম্পর্কবিচ্ছিন্ন করা থেকে সতর্ক করার সাথে সাথে মা’র হক্ব আদায়েরব্যাপারে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা মা সন্তানকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেনএবং সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা, দুধ পান করান এবং লালন পালনেরক্ষেত্রে অধিক কষ্ট করে থাকেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ﴾ [الاسراء: ٢٣]

“আর তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, একমাত্রতারই ইবাদত কর এবং মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহ কর।” [সূরা ইসরা/২৩]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤]

“আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণেরনির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্টবরণ করে গর্ভে ধারণ করা এবং তার দুধছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” [সূরা লোকমান/১৪]

তিনি আরও বলেন:

﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ ﴾ [محمد: ٢٢]

“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতেবিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।” [সূরা মুহাম্মদ/২২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,

«أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثَلاَثًا، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ – وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ – أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ»

“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় পাপ সম্পর্কে বলব না? একথা তিনি তিনবার বললেন। তারা বললেন হ্যাঁ, বলুনইয়া রাসূলাল্লাহ, তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবংমা-বাবার অবাধ্য হওয়া, তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন অতঃপর সোজাহয়ে বসে বললেন: খবরদার! মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।”[49]

এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে বললেন: হে আল্লাহররাসূল, আমার নিকট থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য কে?

তিনি বললেন: তোমার মা

সে বলল: তারপর কে?

তিনি বললেন: তোমার মা

সে বলল: তারপর কে?

তিনি বললেন: তোমার মা

সে বলল: তারপর কে?

তিনি বললেন: তোমার বাবা। অতঃপর তোমার নিকটতম প্রতিবেশীতারপর তোমার নিকটতম।”[50]

তিনি আরও বললেন: “আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছিন্নকারীজান্নাতে প্রবেশ করবে না।”[51]

তাঁর নিকট থেকে সহীহ সনদে আরও এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার রিযিক বৃদ্ধি এবং বয়স বাড়াতে ভালোবাসেসে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে।”[52]

মাতা-পিতার সাথে সদ্যবহার, আত্মীয়তাসম্পর্ক বজায় রাখা এবং মা’র হক্বের অধিক গুরুত্বের ব্যাপারেবহু আয়াত এবং হাদীস রয়েছে। উপরে যেগুলো উল্লেখ করেছি আশা করি তাই যথেষ্ট। যেব্যক্তি তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে সে ব্যক্তি স্পষ্ট প্রমাণ পাবে যে, সর্বদা মাতা-পিতার প্রতি সম্মান, তাদেরপ্রতি অনুগ্রহ এবং সকল আত্মীয়ের প্রতি অনুগ্রহ করা ওয়াজিব এবং তাদের অবাধ্য হওয়া ওআত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা সবচেয়ে দূষনীয় এবং কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যাআল্লাহকে রাগান্বিত করা ও জাহান্নামে যাওয়া বাধ্য করে। আল্লাহর নিকট এ থেকে আশ্রয়চাই। পাশ্চাত্য সভ্যতা মা’কে সম্মানের জন্য বৎসরে একটি দিনকেনির্দিষ্ট করে বাকী দিনগুলোতে অবহেলা করাসহ বাবা এবং প্রতিবেশীদেরকে যে অবহেলা করেএর চেয়ে ইসলামী সভ্যতা বহুগুণে ভালো।

জ্ঞানীদের অজানা নয় যে, এতেমহা ফেৎনা ফাসাদ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর বিধানেরও পরিপন্থী এবং তা রাসূলেরসতর্ক করা কাজে পতিত হওয়া ওয়াজিব করে। এগুলো দিনকে নির্দিষ্ট করা এবং লোকদেরজন্মোৎসব পালন, স্বাধীনতা দিবস, ক্ষমতাদখল ইত্যাদি ইত্যাদি দিবস পালনেরই অন্তর্ভুক্ত। এ সকল কার্যকলাপ সবই নব আবিষ্কৃতকাজ যাতে মুসলিগণ আল্লাহর শত্রু বিধর্মীদের অন্ধ অনুসরণ করে চলেছে। পক্ষান্তরেশরিয়তের সতর্ক করা এবং নিষিদ্ধ করা কাজ থেকে গাফেল হয়ে আছে। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত সহীহ হাদীসের বাস্তবায়ন যেতিনি বলেছেন: অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের হুবহু অনুকরণ করবে, এমন কি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে তাহলে অবশ্যই তোমরাওসেখানে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কেরাম বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তারাকি ইয়াহূদী ও খৃষ্টান? তিনি বললেন: তবে আর কে? অন্য শব্দে এসেছে: আমার উম্মত পূর্ববর্তী উম্মতের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে বিঘতেবিঘতে এবং হাতে হাতে। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তারা কিপারস্য এবং রুম? তিনি বললেন তাহলে আর কে? অর্থাৎতারাই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এ উম্মতের পূর্ববর্তী উম্মত ইয়াহূদী, খৃষ্টান, অগ্নিপুজক, কাফের ইত্যাদি জাতির চরিত্র এবংকাজ কর্মের অনুসরণের ব্যাপারে যা বলেছেন তাই হয়েছে, এমন কিইসলাম একেবারে সংখ্যালগু হয়ে গেছে। আর কাফেরদের রীতি, তাদেরচরিত্র এবং কাজকর্ম বহুলোকদের নিকট ইসলামের কাজকর্ম থেকে ভালো মনে হচ্ছে, শুধু তাই নয় বরং সৎকর্মগুলো মন্দ এবং মন্দগুলো সৎকর্ম, বিদ‘আতগুলো সুন্নাত আর সুন্নাতগুলো বিদ‘আত হিসাবে অনেকের নিকট পরিচিতি লাভ করেছে। এর কারণ হলো অজ্ঞতা এবংইসলামের সুন্দর চরিত্র ও সৎকর্মগুলো পরিহার করা। ইন্নালিল্লাহি অ-ইন্না ইলাইহিরাজিউন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন সকল মুসলিমকে দ্বীন বুঝার মাধ্যমেতাদের অবস্থাগুলো ঠিক করে নেয়ার তাওফীক দান করেন, তাদেরনেতাদেরকে যেন সঠিক রাস্তা দেখান, এবং আমাদের আলেম ওলেখকদেরকে যেন দ্বীনের শিষ্টাচারিতা তুলে ধরার সাথে সাথে বিদ‘আতএবং সকল প্রকার নব আবিষ্কৃত যা ইসলামের দুর্ণাম করে এবং লোকজনকে ইসলাম থেকে দূরেরাখে তা থেকে সতর্ক করে দেওয়ার তাওফীক দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রতিটি জিনিসের উপরক্ষমতাবান। সালাত ও সালাম হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উপর, তাঁর পরিবার, সকল সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের পথে চলবেও তাদেরঅনুসরণ করবে তাদের উপর।

 কিছু লোক মিথ্যাবিজ্ঞপ্তি প্রচার করে থাকে

রিয়াদের একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকার নিকটথেকে একটি চিঠি এসেছে, তাতে তিনি একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কেজিজ্ঞাসা করছেন যা বিভিন্ন স্কুলে বিতরণ করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু এই:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‘‘অতএব, তুমি আল্লাহর ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞদেরঅন্তর্ভুক্ত হও’’। [সূরা যুমার/৬৬]

‘‘অতঃপর যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে অবতীর্ণনূরের অনুসরণ করে তারাই সফলতা লাভ করবে’’। [সূরা আ‘রাফ/১৫৭]

‘‘তাদেরজন্য দুনিয়া এবং পরকালে রয়েছে সুসংবাদ, আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তননেই, এটিই হচ্ছে মহা বিজয়’’ [সূরাইউনুস/৬৪]

‘‘আল্লাহমুমিনগণকে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন, আর জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন এবং তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন’’। [সূরা ইব্রাহীম/২৭]

এ আয়াতগুলো অন্যদের নিকট পাঠালে কল্যাণ এবং মঙ্গলবয়ে আনে, কাজেই আপনি তা বিভিন্ন জায়গায় নয়টি কপি পাঠালেচারদিনের মধ্যেই আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তা কোনো ঠাট্টা বিদ্রুপ নয় বাআল্লাহর আয়াতের সাথে কোনো খেলা নয়। আপনি চার দিন পরেই এর ফল দেখতে পাবেন।

এ বিজ্ঞাপনটি অন্যের নিকট পাঠানো আপনার উচিৎ, কিছুদিন পূর্বে এটি এক ব্যবসায়ীর নিকট পৌঁছিলে সাথে সাথে তিনি তাঅন্যের নিকট পাঠিয়েছেন। অতঃপর তার ব্যবসায় অন্যান্য সময়ের লাভের চেয়ে সাত হাজারদিনার বেশী লাভের খবর এসেছে। অন্য দিকে তা এক ডাক্তারের নিকট পৌঁছিলে তিনি এরঅবহেলা করেছেন ফলে গাড়ি এক্সিডেন্টে পড়ে সে পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গেছেন, তার লাশ ছড়িয়ে ছিটে পড়ে থাকল আর লোকজন তা নিয়ে বলাবলি করছে। এটিঘটার কারণ হলো: সে অবহেলা করে তা বিতরণ করেনি। হঠাৎ করে তা একটি নিকটমত আরবী দেশেরএকজন কন্ট্রাকটরের নিকট পৌঁছানো হলে সে তা বিতরণে অবহেলা করল ফলে তার বড় ছেলে গাড়িএক্সিডেন্টে পড়ে মারা গেল। সুতরাং আপনি এর পঁচিশটি কপি অন্যের নিকট পাঠান, দেখবেন চার দিনের মধ্যেই সুসংবাদ পেয়ে যাবেন। আর তা অবহেলা করাথেকে সতর্ক থাকবেন। তা ঠিকমত পালন করে কেউ কেউ হাজার হাজার টাকা লাভ করেছে, আর যে ব্যক্তি তা অবহেলা করবে তার জীবন এবং ধন সম্পদ মহা বিপদেথাকবে। কাজেই আল্লাহ আপনাদেরকে তা প্রচার করার তাওফীক দান করুন। নিশ্চয়ই তিনিতাওফীকদাতা।

এ চিঠিটি হাতে পেয়েই আমি নিম্নের লেখাটি লিখেছি:

এ বিজ্ঞাপন এবং এর লেখকের ধারণায় এতে যে উপকার হয়এবং তা অবহেলায় যে ক্ষতি এবং বিপদ বয়ে আনে এ সবই মিথ্যা, এরসত্যতার কোনো ভিত্তি নেই, বরং তা মিথ্যাবাদীদের বানানোমিথ্যা কাহিনী। দেশে বা দেশের বাহিরে কোথাও তা বিতরণ করা জায়েয নেই, বরং তা নিন্দনীয় কাজ। যে ব্যক্তি তা করবে সে পাপী এবং আগে-পরে শাস্তির যোগ্যহবে। কারণ বিদ‘আতের ক্ষতি অত্যন্ত মহা এবং এর পরিণাম অত্যন্তভয়াবহ। এভাবে এ বিজ্ঞপ্তির প্রচারণা অত্যন্ত নিকৃষ্টতর বিদ‘আতএবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করার শামিল। অথচ আল্লাহ তা‘আলাবলেন:

﴿إِنَّمَا يَفۡتَرِي ٱلۡكَذِبَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰذِبُونَ ١٠٥ ﴾ [النحل: ١٠٥]

“যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান রাখে না, তারাইমিথ্যারোপ করে, আর তারাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী।” [সূরা নাহল/১০৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবেযা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]

তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবেযা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

সকল মুসলিমের উচিৎ হলো: কারো হাতে এ জিজ্ঞপ্তিটিপৌঁছিলে সাথে সাথে তা ছিড়ে নষ্ট করে ফেলা এবং লোকদেরকে এ থেকে সতর্ক করে দেওয়া।আমরা এবং বহু আলেম তা অবহেলা করে ছিড়ে ফেলেছি কিন্তু আমাদেরতো ভালো ছাড়া কোনো ক্ষতিহয়নি। এর মতই আরেকটি বিজ্ঞপ্তি যা মদীনার মাসজিদের খাদেমের নামে প্রচার করা হয়েথাকে এবং এ রকম অন্যান্য বিজ্ঞাপনও এর মতই যা উপরে উল্লেখ করেছি। কিন্তু তাআল্লাহর বাণী:‘‘বরং তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তহও’’। এর পরিবর্তে সেটি‘‘হে নবী আপনিবলুন: আমরা রহমানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তার উপরই ভরসা করি’’। [সূরা মুলক/২৯] দ্বারা শুরু করা হয়েছে। সবগুলোই মিথ্যা এবংবানোয়াট, এর সত্যতার কোনো ভিত্তি নেই, এতেকারো উপকার তো হবেই না বরং তা প্রচারকারী ও বিতরণকারী গুনাহগার হবে। কেননা তা পরস্পরেঅসৎকাজের সহযোগিতা এবং বিদ‘আত প্রচার ও এর প্রতি মানুষকেউৎসাহ প্রদান করার নামান্তর।

আল্লাহর নিকট আমাদের এবং সকল মুসলিম ভাইদের জন্যএর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই, যে ব্যক্তি তা তৈরী করেছেআল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন এর মিথ্যা প্রচারকারী, তার প্রতি মিথ্যারোপকারী এবং মানুষের উপকারী জিনিস থেকে অনুপকারীজিনিসের দ্বারা ব্যস্ত রাখার দরুন তাকে পুরোপুরি বদলা দেন। আল্লাহর জন্য এবং তারবান্দার জন্য উপদেশ হিসাবে এর উপর এ সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে।

 হজ্জমৌসুমে মক্কা মুকাররামায়‘‘মুশরিকদের থেকে পবিত্র’’নামে র‌্যালী বের করা বিদ‘আত

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাতও সালাম হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার, সকল সাহাবী এবং যারা তাঁর পথের অনুসরণ করবে তাদের উপর।

আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদেরথেকে সর্বদা পবিত্র থাকা তার সকল মুমিন বান্দার উপর ওয়াজিব করেছেন। এ ব্যাপারেতিনি কুরআন অবতীর্ণ করে বলেন: “তোমাদের জন্যে ইবরাহীম আ: ও তার অনুসারীদের মধ্যেরয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদেরসঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কনেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মাঝে চিরকালের জন্য সৃষ্টি হলোশত্রুতা ও বিদ্বেষ, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমানআন।” [সূরা মুমতাহিনা/৪]

এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লামের শেষ জীবনে এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার অবতীর্ণবাণী হলো, “সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদেরসাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।” [সূরা তাওবা/১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে তিনি নবম হিজরীতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু‘আনহুকে লোকদের হজ্জ করানোর জন্য এবং মুশরিকদের থেকে পবিত্রতার ঘোষণাদেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর তার পিছনেই আলী রাদিয়াল্লাহু‘আনহুকে পাঠালেন লোকদেরকে তা জানিয়েদেওয়ার জন্য। এমনিভাবে আবু বকর, আলী রাদিয়াল্লাহু‘আনহু এরসাথে দু’জন মুয়াজ্জিনকে পাঠালেন চারটি কথা ঘোষণা দেওয়ার জন্য :

“মুমিন ব্যতীত জান্নাতে কেউ প্রবেশ করবে না।

আগামী বছর থেকে কোনো মুশরিক হজ্জ করতে পারবে না।

উলঙ্গ হয়ে কেউ ক্বাবা ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না।

এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর সাথে কারো কোনো চুক্তি থাকলে তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমাবদ্ধথাকবে, আর যার কোনো চুক্তি নেই সে চার মাস পৃথিবীতে ঘুরেদেখতে পারে।”

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“সুতরাং তোমরা চার মাস পৃথিবীতে ঘুরে নাও।” [সূরা তাওবা/২]

চার মাস পর যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে নবীসাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করারনির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “অতঃপর যখন নিষিদ্ধমাসগুলো অতিবাহিত হবে।”অর্থাৎ আল্লাহর বাণী:

﴿ فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]

“অতঃপরযখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন ঐ মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে ধরে আন, তাদেরকে অবরোধ করে রাখ এবংঘাঁটিস্থলসমূহে তাদের সন্ধানে অবস্থান কর। অতঃপর যদি তারা তাওবা করে সালাত আদায়করে এবং যাকাত প্রদান করে; তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ইআল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” [সূরা তাওবা/৫]

এতে উল্লেখিত মাস থেকে বেধে দেওয়া নির্ধারিত সময়কেবুঝানো হয়েছে। আর এটিই মুশরিকদের থেকে পবিত্রতার নিয়ম, সূরাতাওবার শুরুতে তাফসীরবিদগণ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হাদীসগুলোও স্পষ্ট করে দিয়েছে।

আর মুশরিকদের থেকে পবিত্রতার ঘোষণা দেওয়ার জন্যহজ্জ মৌসুমে মক্কা মোকাররমায় র‌্যালী বের করা বা মিছিল বের করা বিদ‘আত, এর কোনো ভিত্তি নেই, এতে মহা ফেৎনা ফাসাদএবং অনিষ্টতা সৃষ্টি হয়। কাজেই যারা এ রকম করে তাদেরকে এ কাজ পরিহার করা উচিৎ। তা বিদ‘আত হওয়ার কারণে এবং এতে মহা ফেৎনা ফাসাদ ও অনিষ্টতা সৃষ্টি হওয়ারকারণে সরকারেরও এ থেকে বাধা দেওয়া কর্তব্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“হে নবী, বলুন, তোমরা যদিআল্লাহকে ভালোবাসার দাবী কর, তবে আমার অনুসরণ কর তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।” [সূরা আলে ইমরান/৩১]

এ ধরনের আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কোনো সাহাবাদের জীবনীতে নেই। এটি যদি ভালোহত তাহলে অবশ্যই তারা করতেন। আল্লাহ বলেন: “তাদের কি শরীক রয়েছে? যারাতাদের জন্য দ্বীনের সেই বিধান গড়বে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?।” [সূরা শূরা/২১]

তিনি আরও বলেন: “আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তোমরাতা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বারণ করেন তা পরিহার কর।” [সূরা হাশর/৭]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবেযা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]

এবং জাবের রাদিয়াল্লাহু‘আনহুহতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম তাঁর জুম‘আরখুৎবায় বলেছেন, “অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েতহলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবংপ্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[53]

তিনি আরও বলেছেন :

“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরিয়তসমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[54]

বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা আমারনিকট থেকে তোমাদের হজ্জের কাজসমূহ শিখে নাও।”[55]

তিনি বিদায় হজ্জে এ ধরনের কোনো র‌্যালী বা মিছিল, বের করেননি, এমনিভাবে তাঁর পরে কোনো সাহাবীওএ রকম করেননি। সুতরাং হজ্জ মৌসুমে তা করা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত একটি বিদ‘আত; যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন। তিনি যেটি করেছেন তা হলো: সূরা তাওবা অবতীর্ণ হওয়ারপর নবম হিজরীতে দু’জন আহবায়ক পাঠিয়েছেন যেন লোকদেরকে জানিয়েদেন যে, পরবর্তী বছরে কোনো মুশরিক হজ্জ করতে পারবে না, উলঙ্গ হয়ে ক্বাবার তাওয়াফ করতে পারবে না, মুমিনব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং চার মাস পর মুশরিকদের সাথে কোনো চুক্তিথাকবে না, কিন্তু যাদের সাথে চুক্তির সীমাবদ্ধ সময় এর চেয়েঅধিক রয়েছে তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত থাকবে। এ আহ্বান বিদায় হজ্জের সময় ছিল না, কারণ এর উদ্দেশ্য নবম হিজরীতেই সাধিত হয়ে গেছে।

ইহকাল ওপরকালের সকল কল্যাণ এবং সুখ নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ, তাঁর পথে চলা এবং তাঁর সাহাদের পথেচলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে, কেননা তারা ও তাদের অনুসারীগণইমুক্তিপ্রাপ্ত এবং বিজয়ী দল।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসারএবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্টহয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেইজান্নাত যার নিম্নদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।এটাই হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]

আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকেএবং সকল মুসলিমকে উপকারী জ্ঞানার্জন, সৎ আমল, দ্বীনেরসঠিক বুঝ দান করেন, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবা এবং কিয়ামতপর্যন্ত তাদের অনুসারীদের পথে চলার তাওফীক দান করেন। ফেৎনার ভ্রষ্টতা, শয়তানের কুমন্ত্রনা এবং সকল প্রকার বিদ‘আতথেকে রক্ষা করেন। নিশ্চয়ই তিনি এর অবিভাবক ও এর উপর ক্ষমতাবান।

[28]মুসলিম শরীফ; হাদীস নং ৯৭৬, ইবনে মাজাহ; হাদীস নং ১৫৬৯

[29]মুসলিম শরীফ ২/৬৭১

[30]বুখারী শরীফ; হাদীস নং ২৮৫৬, মুসলিম শরীফ; হাদীস নং ৩০

[31]হাদীস নং ১৯৭৮।

[32]হাদীস নং৩৪৪৫।

[33]আহমাদ; হাদীস নং ২০৩১, আবু দাউদ; হাদীস নং ৩২৩৬, তিরমিযী; হাদীস নং ৩২০ এবং নাসায়ী, হাদীস নং ২০৪৩।

[34]সহীহ মুসলিম , হাদীস নং ৪৯

[35]আহমাদ,২২৪৪৩, আবু দাউদ১৪৯৩ এবংতিরমিযী ৩৪৭৫।

[36]বুখারী শরীফ ২২১৫, মুসলিম শরীফ ২৭৪৩।

[37]সহীহ বুখারী; হাদীস নং ৫০২৭।

[38]সহীহ বুখারী; হাদীস নং ৭১, সহীহ মুসলিম; হাদীস নং ১০৩৭।

[39]সহীহ মুসলিম; হাদীস নং ২৬৯৯।

[40]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।

[41]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।

[42]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।

[43]সহীহ মুসলিম; হাদীস নং ৫৫।

[44]আহমাদ; হাদীস নং ৮৪৯৫।

[45]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭।

[46]সহীহ মুসলিম; হাদীস নং ৯১৬।

[47]বুখারী ও মুসলিম।

[48]সহীহ মুসলিম।

[49]সহীহ বুখারী হাদীসনং ২৬৫৪; সহীহ মুসলিম হাদীসনং ৮৭।

[50]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৮।

[51]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৬।

[52]সহীহ বুখারী; হাদীস নং ৫৯৮৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৭।

[53]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।

[54]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।

[55]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯৭; বায়হাকী ৫/১২৫।

_________________________________________________________________________________

 

সংকলন: শাইখ আবদুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায

অনুবাদক: মোহাম্মাদ ইদরীস আলী মাদানী

সম্পাদনা: উবাইদুল্লাহ ইবন সোনা মিয়া –  ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সূত্র:ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

সূএঃ Preaching Authentic Islam in Bangla

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button