তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ
রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। রামাযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে ‘তারাবীহ’ এবং রামাযান ও অন্যান্য সময়ে শেষরাতে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয়।
তারাবীহ : মূল ধাতু رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ (রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ : প্রশান্তির বৈঠকসমূহ (আল-মুনজিদ)
তাহাজ্জুদ : মূল ধাতু هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা। সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা বা রাত্রি জেগে ছালাত আদায় করা (আল-মুনজিদ)।
উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুল লায়েল সবকিছুকে এক কথায় ‘ছালাতুল লায়েল’ বা ‘রাত্রির নফল ছালাত’ বলা হয়। রামাযানে রাতের প্রথমাংশে যখন জামা‘আত সহ এই নফল ছালাতের প্রচলন হয়, তখন প্রতি চার রাক‘আত অন্তর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হ’ত। সেখান থেকে ‘তারাবীহ’ নামকরণ হয় (ফাৎহুল বারী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব)। এই নামকরণের মধ্যেই তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যে, তারাবীহ প্রথম রাতে একাকী অথবা জামা‘আত সহ এবং তাহাজ্জুদ শেষরাতে একাকী পড়তে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানের রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দু’টিই পড়েছেন মর্মে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না’। [1]
রাত্রির ছালাতের ফযীলত : রাত্রির ছালাত বা ‘ছালাতুল লায়েল’ নফল হ’লেও তা খুবই ফযীলতপূর্ণ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ، رَوَاهُ مُسْلِمٌ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ-
‘ফরয ছালাতের পরে সর্বোত্তম ছালাত হ’ল রাত্রির (নফল) ছালাত’।[2] তিনি আরও বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ فَيَقُوْلُ مَن يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَّسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَن يَّسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ- وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْهُ: فَلاَ يَزَالُ كَذَالِكَ حَتَّى يُضِيْئَ الْفَجْرُ-
‘আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? এভাবে তিনি ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহবান করেন’। [3]
তারাবীহর জামা‘আত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসের ২৩, ২৫ ও ২৭ তিন রাত্রি মসজিদে জামা‘আতের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছেন। প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দিন নিজের স্ত্রী-পরিবার ও মুছল্লীদের নিয়ে সাহারীর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ছালাত আদায় করেন। [4] পরের রাতে মুছল্লীগণ তাঁর কক্ষের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি যে, এটি তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায় কি-না (خَشِيْتُ أَنْ يُّكْتَبَ عَلَيْكُمْ)। আর যদি ফরয হয়ে যায়, তাহ’লে তোমরা তা আদায় করতে পারবে না’…। [5]
তারাবীহর ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি রামাযানের রাত্রিতে ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রাত্রির ছালাত আদায় করে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হয়’।[6]
তারাবীহর জামা‘আত ঈদের জামা‘আতের ন্যায় :
ইমাম শাফেঈ, আবু হানীফা, আহমাদ ও কিছু মালেকী বিদ্বান এবং অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, তারাবীহর ছালাত জামা‘আতে পড়া উত্তম, যা ওমর (রাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম চালু করে গেছেন এবং এর উপরেই মুসলমানদের আমল জারি আছে। কেননা এটি ইসলামের প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহের (لأنه من الشعائر الظاهرة) অন্তর্ভুক্ত। যা ঈদায়নের ছালাতের সাথে সামঞ্জস্যশীল’।[7]
রাক‘আত সংখ্যা : রামাযান বা রামাযানের বাইরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে রাত্রির এই বিশেষ নফল ছালাত তিন রাক‘আত বিতরসহ ১১ রাক‘আত ছহীহ সূত্র সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন আয়েশা (রাঃ) বলেন,
مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيْدُ فِيْ رَمَضَانَ وَلاَ فِيْ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّيْ أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّيْ أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلاَثًا، متفق عليه-
অর্থ :