কিয়ামতের আলামত সমূহ (পর্ব-২)
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
৯. নবুঅতের মিথ্যা দাবীদারদের আত্মপ্রকাশ : ভন্ড নবীদের আগমন ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। এদের আবির্ভাব রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই হয়েছিল। এদের কেউ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে নবুঅত ভাগাভাগি করতে চেয়েছিল। তাদের একজন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এ মর্মে পত্র লিখেছিল যে, ‘হে মুহাম্মাদ! আমাকে তোমার সাথে নবুঅতে অংশীদার করা হয়েছে। পৃথিবীর অর্ধেক ভূমি তোমার এবং অর্ধেক আমার। তবে কুরাইশ সম্প্রদায় সীমালংঘনকারী’। রাসূল (ছাঃ) পত্রের জওয়াবে লিখেন, ‘যারা হেদায়াতের উপরে আছে তাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। এই পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহর। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এর উত্তরাধিকারী করেন। আর শুভ পরিণাম কেবল আল্লাহভীরুদের জন্যই’।[1] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুসায়লামার পত্র পাঠান্তে তার দু’জন দূতকে এ মর্মে জিজ্ঞেস করেন যে, মুসায়লামা সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি? তখন তারা বলে, আমরা তা-ই বলি, সে যা বলে (অর্থাৎ সে যে নবুঅতের দাবী করে, আমরা তাতে বিশ্বাসী)। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! দূতদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা যদি না থাকত, তবে আমি তোমাদের দু’জনের শিরশ্ছেদ করতাম’।[2] এরূপ মিথ্যুক ও নবুঅতের ভন্ড দাবীদারদের ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, Check this suche lottozahlen
لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ عَظِيمَتَانِ، يَكُونُ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَتُهُمَا وَاحِدَةٌ، وَحَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبٌ مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللهِ…–
‘ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ দু’টি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবী হবে অভিন্ন। আর যতক্ষণ ত্রিশের কাছাকাছি মহামিথ্যাবাদী দাজ্জাল (ভন্ডনবীর)-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বলে দাবী করবে….’।[3] অন্যত্র তিনি বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ ثَلاَثُونَ كَذَّابًا دَجَّالاً كُلُّهُمْ يَكْذِبُ عَلَى اللهِ وَعَلَى رَسُولِهِ- ‘ক্বিয়ামত ততক্ষণ সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা সবাই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করবে’।[4] তিনি আরো বলেন,
لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِيْنَ وَحَتَّى يَعْبُدُوْا الأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِى أُمَّتِى ثَلاَثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى-
‘মুশরিকদের সাথে আমার উম্মতের কতিপয় গোত্র মিলিত না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, এমনকি তারা মূর্তিপূজাও করবে। আমার উম্মতের মধ্যে খুব শীঘ্রই ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে। এদের সকলেই দাবী করবে যে, সে নবী। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোন নবী নেই’।[5]
عَنْ حُذَيْفَةَ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : فِىْ أُمَّتِىْ كَذَّابُوْنَ وَدَجَّالُوْنَ سَبْعَةٌ وَعِشْرُوْنَ مِنْهُمْ أَرْبَعُ نِسْوَةٍ وَإِنِّى خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى–
হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে সাতাশজন মহামিথ্যুক দাজ্জালের (ভন্ড নবীর) আগমন ঘটবে। এদের মধ্যে চারজন হবে নারী। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোন নবী নেই’।[6] উল্লেখ্য যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) যে সর্বশেষ নবী এটি কুরআন, হাদীছ ও ইজমায়ে উম্মাত দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষনবী। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত’ (আহযাব ৩৩/৪০)।
কতিপয় ভন্ড নবীর পরিচয় :
(১) আসওয়াদ আনাসী : এ ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর আমলে ইয়ামানে নবুঅতের দাবী করে। সে প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করলেও পরে মুরতাদ হয়ে যায় এবং তার মুমিনা স্ত্রীকে হত্যা করে। এ সংবাদ পেয়ে রাসূল (ছাঃ) ইয়ামানের মুসলমানদের নিকটে পত্র প্রেরণ করেন, যাতে তিনি ভন্ড নবীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধের জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। মুসলমানরা আসওয়াদ আনাসীর পরবর্তী স্ত্রীর সহায়তায় তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। সে নিহত হ’লে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে জানিয়ে দেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,
بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُ أَنَّهُ وُضِعَ فِى يَدَىَّ سِوَارَانِ مِنْ ذَهَبٍ، فَفُظِعْتُهُمَا وَكَرِهْتُهُمَا، فَأُذِنَ لِى، فَنَفَخْتُهُمَا فَطَارَا ، فَأَوَّلْتُهُمَا كَذَّابَيْنِ يَخْرُجَانِ . فَقَالَ عُبَيْدُ اللهِ أَحَدُهُمَا الْعَنْسِىُّ الَّذِى قَتَلَهُ فَيْرُوزٌ بِالْيَمَنِ ، وَالآخَرُ مُسَيْلِمَةُ-
‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম, আমাকে দেখানো হ’ল যে আমার হাত দু’টিতে স্বর্ণের দু’টি চুড়ি রাখা হয়েছে। আমি সে দু’টি কেটে ফেললাম এবং অপসন্দ করলাম। অতঃপর আমাকে অনুমতি প্রদান করা হ’ল, আমি উভয়টিকে ফুঁ দিলাম, ফলে উভয়টি উড়ে গেল। আমি চুড়ি দু’টির এ ব্যাখ্যা প্রদান করলাম যে, দু’জন মিথ্যা নবুঅতের দাবীদার বের হরে। ওবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, এদের একজন হ’ল, আল-আনসী, যাকে ইয়ামানে ফায়রুয (রাঃ) কতল করেছেন। আর অপরজন হ’ল মুসায়লামা।[7]
(২) মুসায়লামা বিন হাবীব আল-কাযযাব : সে মনে করত অন্ধকারে তার নিকট অহী নাযিল হয়। সে নবুঅত ভাগাভাগি করার প্রস্তাব দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট পত্র পাঠিয়েছিল। একবার সে নিজে গিয়েও এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে একবার মিথ্যুক মূসায়লামা (মদীনায়) এসেছিল। সে বলতে লাগল, মুহাম্মাদ (ছাঃ) যদি আমাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করে যায়, তাহ’লে আমি তাঁর অনুগত হয়ে যাব। সে তার গোত্রের বহু লোকজনসহ এসেছিল। রাসূূল (ছাঃ) ছাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাসকে সাথে নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হ’লেন। সে সময় রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। মুসায়লামা তার সাথীদের মধ্যে ছিল, এমতাবস্থায় তিনি তার কাছে পৌঁছে বললেন, যদি তুমি আমার কাছে এ তুচ্ছ ডালটিও চাও, তবে এটিও আমি তোমাকে দেব না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহর ফায়ছালা লংঘিত হ’তে পারে না। যদি তুমি আমার আনুগত্য থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর, তাহ’লে অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি, যেমনটি আমাকে (স্বপ্নযোগে) দেখানো হয়েছে। এই ছাবিত আমার পক্ষ থেকে তোমাকে জবাব দিবে’।[8]
আবুবকর (রাঃ) খালিদ বিন ওয়ালিদ, ইকরিমা ও শুরাহবিল (রাঃ)-এর নেতৃত্বে মুসায়লামার বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। তার নিজ শহর ইয়ামামায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে চল্লিশ হাযার সৈন্য নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। অবশেষে হামাযা (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহশী বিন হারবের বর্শার আঘাতে সে নিহত হয়। সে কুরআনের সূরা ও আয়াতের আদলে বহু সূরা ও আয়াত রচনা করেছিল।[9]
(৩) তুলায়হা বিন খুওয়াইলিদ আসাদী : সে প্রথমে নবুঅতের দাবী করে এবং খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। নবম হিজরীতে প্রতিনিধি দলের সাথে মদীনা এসে ইসলাম কবুল করে। রাসূল (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করলে সে আবার নবুঅতের দাবী করে। ফলে মুসলমানরা তার সাথে একাধিকবার যুদ্ধ করেন। পরে সে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়। তিনি ইসলামের বিধি-বিধান পালন করতেন। মুসলমান সৈন্যদের সাথে যোগদান করে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। পরবর্তীতে আলী (রাঃ)-এর আমলে খারেজীদের বিরুদ্ধে নাহাওয়ান্দের যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করেন।[10]
(৪) সাজাহ বিনতে হারেছ তাগলিবী : সে আরবীয় খৃষ্টান নারী। সে রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে নবুঅতের দাবী করে। তার গোত্রসহ আশপাশের বহু মানুষ তার অনুসারী হয়ে যায়। সে ইয়ামামা এসে মুসায়লামা কাযযাবকে সত্যায়ণ করে এবং তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মুসায়লামা ইয়ামামার যুদ্ধে মারা গেলে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে। পরে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর আমলে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং বছরায় হিজরত করেন। তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।[11]
(৫) মুখতার বিন আবী ওবায়দ ছাক্বাফী : সে তাবেঈ যুগের ভন্ডনবী। সে প্রথমে শী‘আ ও পরে নবুঅতের দাবী করে। সে মনে করত তার নিকট জিবরীল (আঃ) আগমন করেন। মুছ‘আব বিন যুবায়ের তার বিরুদ্ধে একাধিকবার যুদ্ধ করেন। কোন এক যুদ্ধে সে মারা যায়।[12] রাসূল (ছাঃ) তার ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘ছাক্বীফ গোত্রে মিথ্যুক ও সন্ত্রাসী খুনী ব্যক্তির জন্ম হবে’। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, কথিত আছে যে, এই মিথ্যাবাদী ব্যক্তিটি হ’ল মুখতার ইবন আবু ওবায়দ (সে দাবী করত যে, তার নিকট জিবরীল আসেন) আর সন্ত্রাসী খুনী ব্যক্তিটি হ’ল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। হিশাম ইবনু হাসসান (রহঃ) বলেন, যে সমস্ত ব্যক্তিদের হাজ্জাজ বেধে এনে হত্যা করেছিল তাদের সংখ্যা এক লাখ বিশ হাযারে পৌঁছে যায়।[13]
(৬) হারেক বিন সাঈদ আল-কাযযাব : সে দিমাষ্কে নবুঅতের দাবী করে। সে যখন জানতে পারে যে, তার ভন্ডামীর কথা খলীফা আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান জেনে ফেলেছেন। তখন সে আত্মগোপন করে। একজন বছরী তার অবস্থান জানতে পারলে বিষয়টি তিনি খলীফাকে জানিয়ে দেন। খলীফা আব্দুল মালেক তার বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করলে তারা তাকে আটক করে নিয়ে আসে। আব্দুল মালেক তাকে বুঝানোর জন্য একজন দক্ষ আলেম নিয়োগ করেন। কিন্তু সে কোন মতেই ইসলামে ফিরে না আসায় তাকে হত্যা করা হয়।[14]
(৭) মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী : কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের ‘কাদিয়ান’ শহরের জনৈক ভন্ডনবী মির্যা গোলাম আহমাদ (১৮৩৫-১৯০৮)-এর মাধ্যমে। সে বর্তমান ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর যেলার ‘কাদিয়ান’ নামক উপশহরে জন্মগ্রহণ করে। ১৮৯১ সালের ২২শে জানুয়ারী নিজেকে মসীহ ঈসা ও ১৮৯৪ সালের ১৭ই মার্চ ইমাম মাহদী এবং ১৯০৮ সালের ৫ই মার্চ নিজেকে নবী হিসাবে ঘোষণা করে। এই ভন্ডের প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার কারণে কাদিয়ানীরা নিঃসন্দেহে কাফের। তাদের মুসলমান হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।[15] এভাবে যুগে যুগে ভন্ডনবীদের আগমন ঘটতে থাকবে। অবশেষে দাজ্জাল এসে ৩০তম সংখ্যা পূরণ করবে। সে প্রথমে ইসলামের দিকে মানুষকে আহবান করবে, এরপর নবুঅতের দাবী করবে। অতঃপর নিজেকে সৃষ্টিকর্তা দাবী করবে।[16]
১০. খারেজীদের আবির্ভাব : রাসূল (ছাঃ) যে সকল বিষয়কে ক্বিয়ামতের আলামত বলে উল্লেখ করেছেন খারেজীদের উদ্ভব তার অন্যতম। খারেজী হ’ল প্রত্যেক এমন ব্যক্তি যে এমন হক ইমামের (শাসক) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যাকে লোকেরা ইমাম হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে। চাই এই বিদ্রোহ ছাহাবীগণের যুগে হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদার বিরুদ্ধে হোক বা তাদের পরবর্তী তাবেঈনে এযামের যুগে কিংবা তৎপরবর্তী যে কোন শাসকের যুগে হোক।[17]
ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী খারেজী বলতে প্রত্যেক এমন সম্প্রদায়কে বুঝায়, যারা চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের মতামত কিংবা তাদের রায় অবলম্বনকারী, তা যেকোন যুগেই হোক না কেন।[18] ড. নাছির আল-আক্বল বলেন, খারেজী হচ্ছে, যারা গোনাহের কারণে অন্য মুসলমানকে কাফের বলে এবং মুসলিম শাসক ও সাধারণ লোকজনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তিনি আরো বলেন, খারেজী নামটি যেমন পূর্বের খারেজীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রত্যেক এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যে তাদের নীতি গ্রহণ করে এবং তাদের পন্থা অবলম্বন করে।[19] খারেজীরা ইসলামের জন্য এতই মারাত্মক যে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে জাহান্নামের কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেনে, الْخَوَارِجُ كِلاَبُ النَّارِ ‘খারিজীরা হ’ল জাহান্নামের কুকুর’।[20] আবু উমামাহ বলেন, আসমানের নীচে সর্বাধিক নিকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি তারা, যারা জাহান্নামের কুকুর (খারিজীরা) এবং সর্বোত্তম নিহত তারা যারা তাদের হত্যা করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। এরা (খারিজীরা) ছিল মুসলিম, পরে কাফের হয়ে যায়। আবূ গালিব বলেন, আমি বললাম, হে আবু উমামাহ! এটা কি আপনার মন্তব্য? তিনি বলেন, বরং আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তা বলতে শুনেছি।[21] তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ হ’ল খারেজীরা কাফের নয়। বরং তারা ভ্রান্ত আক্বীদা সম্পন্ন।[22]
খারেজীদের উদ্ভব রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই ঘটেছিল। তবে তখন ভ্রান্ত দল হিসাবে তাদের পরিচিতি হয়নি। প্রথম খারেজী ছিল যুল খুওয়াইছিরা তামীমী। যে রাসূল (ছাঃ)-এর বণ্টন নীতির ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিল। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম এবং তিনি কিছু জিনিস বণ্টন করছিলেন। এমন সময় বানী তামীম গোত্রের যুল-খুওয়াইছিরা নামক এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূূল! ইনছাফ করুন। তখন রাসূূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হতভাগা, তোমার জন্য আফসোস! আমি যদি ইনছাফ না করি, তাহ’লে কে ইনছাফ করবে? আমি যদি ইনছাফ না করি তাহ’লে তুমি তো ক্ষতিগ্রস্ত ও বিফল হয়ে যাবে। অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূূল (ছাঃ)! আমাকে তার শিরশ্ছেদ করার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা তার এমন কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছে, যাদের ছালাত ছিয়ামের তুলনায় তোমাদের কেউ তার ছালাত-ছিয়াম তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে অথচ তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তীর যেভাবে শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারাও সেভাবে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে। অতঃপর সে (ধনুকধারী) তীরের ফলার মূলভাগ পরীক্ষা করে দেখে। এতে সে কিছুই দেখতে পায় না। তারপর সে তীর পরীক্ষা করে দেখে, এতেও সে কিছু পায় না। অবশেষে সে তীরের পালক পরীক্ষা করে দেখে এতেও সে কিছু পায় না, তীর এত দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায় যে, রক্ত বা মলের দাগ এতে লাগতে পারে না। তাদের নিদর্শন হ’ল, তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হবে যার এক বাহুতে মহিলাদের স্তনের ন্যায় একটি অতিরিক্ত মাংসপেশী থাকবে এবং তা থলথল করতে থাকবে। এদের আবির্ভাব এমন সময় হবে যখন মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এ কথা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে শুনেছি এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাদের সাথে যখন যুদ্ধ করেছিলেন, আমি স্বয়ং তার সাথে ছিলাম। অতঃপর তিনি উল্লিখিত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে আনার জন্য নির্দেশ দিলেন। তাকে খুঁজে পাওয়া গেল এবং আলীর সামনে উপস্থিত করা হ’ল। আমি তার প্রতি লক্ষ্য করে দেখলাম তার মধ্যে সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে, যা রাসূল (ছাঃ) তার সম্বন্ধে বলেছিলেন’।[23] অন্য হাদীছে রয়েছে, লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বের হয়ে যায়। তারা মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে এবং মুসলমানদেরক হত্যা করবে। যদি আমি তাদেরকে পাই তাহ’লে আদ জাতির মত হত্যা করব’।[24] সুয়াইদ ইবনু গাফালা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে,
يَأْتِى فِى آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ حُدَثَاءُ الأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ، يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، يَمْرُقُونَ مِنَ الإِسْلاَمِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، لاَ يُجَاوِزُ إِيمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ، فَأَيْنَمَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ، فَإِنَّ قَتْلَهُمْ أَجْرٌ لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-
‘শেষ যামানায় একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে স্থুলবুদ্ধির অধিকারী। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে (দ্রুত গতিতে ও চিহ্নহীনভাবে) বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ অতিক্রম করবে না। যেখানেই তাদের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হবে, তাদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। তাদের হত্যাকারীদের জন্য এই হত্যার প্রতিদান রয়েছে ক্বিয়ামতের দিন’।[25] অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّ بَعْدِىْ مِنْ أُمَّتِىْ أَوْ سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ مِنْ أُمَّتِى قَوْمٌ يَقْرَءُوْنَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَلاَقِيْمَهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَخْرُجُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ ثُمَّ لاَ يَعُوْدُوْنَ فِيْهِ هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ وَالْخَلِيقَةِ-
‘আমার পরে আমার উম্মতের মধ্যে বা অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তীর যেভাবে শিকার ভেদ করে চলে যায় তারাও তেমনিভাবে দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে। অতঃপর তাতে ফিরে আসবে না। সৃষ্টিকুলের মধ্যে তারা নিকৃষ্ট ও অধম’।[26] তিনি আরো বলেন,
سَيَكُونُ فِىْ أُمَّتِى اخْتِلاَفٌ وَفُرْقَةٌ قَوْمٌ يُحْسِنُونَ الْقِيلَ وَيُسِيئُونَ الْفِعْلَ وَيَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ لاَ يَرْجِعُونَ حَتَّى يَرْتَدَّ عَلَى فُوقِهِ هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ وَالْخَلِيقَةِ طُوبَى لِمَنْ قَتَلَهُمْ وَقَتَلُوهُ يَدْعُونَ إِلَى كِتَابِ اللهِ وَلَيْسُوا مِنْهُ فِى شَىْءٍ مَنْ قَاتَلَهُمْ كَانَ أَوْلَى بِاللهِ مِنْهُمْ. قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ مَا سِيمَاهُمْ قَالَ : التَّحْلِيقُ-
‘অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। তারা এমন হবে যে, তারা উত্তম কথা বলবে, আর নিকৃষ্ট কাজ করবে। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের গলার হাড় অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে ছুটে যায়, যা আর ফিরে আসে না। আর তারা তাদের রাস্তা (মতবাদ) থেকে ফিরে আসবে না, যেরূপ নিক্ষিপ্ত তীর- নিক্ষেপের স্থানে ফিরে আসে না। তারা সৃষ্টি জগতে নিকৃষ্টতম ও অধম। ঐ ব্যক্তি ভাগ্যবান যে তাদেরকে হত্যা করল এবং তারা তাকে হত্যা করল। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকে কিন্তু নিজেরা তার অনুসরণ করে না। যে ব্যক্তি তাদের সাথে লড়াই করবে সে-ই হবে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, মাথা মুন্ডন করা’।[27]
তবে এদের পরিচিতি ঘটে আলী (রাঃ)-এর আমলে। আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মাঝে ছিফফীনের যুদ্ধের পর যে সমাধান হয়েছিল এরা সেটিকে প্রত্যাখ্যান করে আলী (রাঃ)-এর দল থেকে বেরিয়ে যায়। আর দল ত্যাগের কারণেই তাদেরকে খারেজী বলা হয়। পরে তারা তিনজন মহান ব্যক্তি তথা আলী, মু‘আবিয়া ও আমর ইবনুল আছ (রাঃ)-কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তারা হত্যা করার দিন ধার্য করল ৪০ হিজরীর ১৭ই রামাযান। পরে তারা আলী (রাঃ)-কে হত্যা করতে সক্ষম হ’লেও বাকী দু’জনকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়।[28]
১১. ছাহাবীগণের যুগ অতিক্রান্ত হওয়া : পৃথিবী থেকে ছাহাবীগণের বিদায় ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। আবূ বুরদাহ (রাঃ)-এর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
صَلَّيْنَا الْمَغْرِبَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قُلْنَا لَوْ جَلَسْنَا حَتَّى نُصَلِّىَ مَعَهُ الْعِشَاءَ قَالَ : فَجَلَسْنَا فَخَرَجَ عَلَيْنَا فَقَالَ: مَا زِلْتُمْ هَا هُنَا. قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّيْنَا مَعَكَ الْمَغْرِبَ ثُمَّ قُلْنَا نَجْلِسُ حَتَّى نُصَلِّىَ مَعَكَ الْعِشَاءَ قَالَ : أَحْسَنْتُمْ أَوْ أَصَبْتُمْ. قَالَ فَرَفَعَ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ وَكَانَ كَثِيْرًا مِمَّا يَرْفَعُ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ، فَقَالَ: النُّجُومُ أَمَنَةٌ لِلسَّمَاءِ فَإِذَا ذَهَبَتِ النُّجُومُ أَتَى السَّمَاءَ مَا تُوعَدُ وَأَنَا أَمَنَةٌ لأَصْحَابِى فَإِذَا ذَهَبْتُ أَتَى أَصْحَابِى مَا يُوعَدُونَ وَأَصْحَابِى أَمَنَةٌ لأُمَّتِى فَإِذَا ذَهَبَ أَصْحَابِى أَتَى أُمَّتِى مَا يُوعَدُونَ-
‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে মাগরিবের ছালাত আদায় করলাম। এরপর আমরা বললাম, যদি আমরা তাঁর সঙ্গে এশার ছালাত আদায় করা পর্যন্ত বসতে পারতাম (তাহ’লে ভাল হ’ত)। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বসে থাকলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের কাছে এলেন। এরপর বললেন, তোমরা এখানে কতক্ষণ পর্যন্ত বসে আছ? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার সঙ্গে মাগরিবের ছালাত আদায় করেছি। এরপর আমরা বললাম যে, এশার ছালাত আপনার সঙ্গে আদায় করার জন্য বসে থাকব। তিনি বললেন, তোমরা বেশ ভাল করেছ অথবা (বললেন,) তোমরা ঠিকই করেছ। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আসমানের দিকে মাথা উত্তোলন করলেন এবং তিনি অনেক সময়ই তাঁর মাথা আসমানের দিকে উঠিয়ে রাখলেন। এরপর বললেন, তারকারাজি আসমানের জন্য নিরাপত্তা (রক্ষাকবচ) স্বরূপ। যখন তারকারাজি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তখন আসমানের জন্য প্রতিশ্রুত বিপদ আসন্ন হবে (অর্থাৎ ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে)। আর আমি আমার ছাহাবীদের জন্য রক্ষাকবচ স্বরূপ। যখন আমি বিদায় নেব তখন আমার ছাহাবীদের উপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে অর্থাৎ ফিতনা-ফাসাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়ে যাবে)। আর আমার ছাহাবীগণ সমগ্র উম্মতের জন্য নিরাপত্তা (রক্ষাকবচ) স্বরূপ। যখন আমার ছাহাবীগণ বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উম্মাতের উপর প্রতিশ্রুত সময় (ক্বিয়ামত) উপস্থিত হবে।[29] (অর্থাৎ ক্বিয়ামত ঘনিয়ে আসবে, শিরক, বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়বে, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে, শয়তানের শিং উদয় হবে, নাছারাদের রাজত্ব কায়েম হবে, মক্কা ও মদীনার অবমাননা করা হবে ইত্যাদি।
এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জনগণের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ ছাহাবী) তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ ছাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। তারপর জনগণের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী (শত্রুদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভে ধন্য কিংবা কোন ব্যক্তির (ছাহাবীর) সাহচর্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবেঈ) তখন তারা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ তাবেঈর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কি কেউ আছেন, যিনি রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের সাহচর্য লাভকারী কোন বক্তির (তাবেঈর) সাহচর্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবে‘-তাবেঈ)। বলা হবে, আছেন। তখন তাদেরকে (ঐ তাবে‘-তাবেঈর বরকতে) জয়ী করা হবে।[30]
যুবায়ের বিন আদী বলেন, আমি আনাস বিন মালেকের নিকট এসে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর! তোমাদের নিকটে যেই দিন বা সময় আসবে তার পরবর্তী দিন তার তুলনায় খারাপ হ’তে থাকবে যতক্ষণ না তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। আমি রাসূল (ছাঃ)-কে এমনটিই বলতে শুনেছি’।[31]
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, তোমাদের জীবনে এমন কোন দিন আসবে না যেদিন পূর্বের দিনের তুলনায় খারাপ হবে না। এভাবে ক্বিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। আমি বলছি না জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যা সে পেয়েছে বা এমন সম্পদ যা দ্বারা সে উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু তোমাদের জীবনে যতদিন যাবে পূর্বের দিনের তুলনায় জ্ঞান কমে যাবে। যখন জ্ঞানীরা বিদায় নিবে তখন লোকদের উপর এমন অবস্থা বিরাজ করবে যে, তারা সৎকাজের আদেশ দিবে না ও অসৎকাজে বাধা দিবে না। এমন সময় তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।[32] ১০০ হিজরী সালে ছাহাবীগণের যুগ শেষ। সর্বশেষ ছাহাবী ছিলেন আবুত তুফায়েল আমের বিন ওয়াছিলা কেনানী/লায়ছী। তিনি ১০০-১১০ হিজরী সনের দিকে মৃত্যুবরণ করেন।[33] এরপর আর কোন ছাহাবী জীবিত ছিলেন না।
১২. বিভিন্ন ফিৎনার আবির্ভাব ঘটা : বিভিন্ন প্রকারের ফিৎনা-ফাসাদ ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূল বলেন,
بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِى كَافِرًا أَوْ يُمْسِى مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا-
‘আধার রাতের ন্যায় ফিৎনা আসার পূর্বেই তোমরা নেক আমলের দিকে ধাবিত হও। (কেননা এমন এক সময় আসবে) যে সময় সকালে একজন মু’মিন হ’লে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় মুমিন হ’লে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে’।[34] অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّ بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيْهَا مُؤْمِنًا وَيُمْسِى كَافِرًا وَيُمْسِى مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا الْقَاعِدُ فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِى وَالْمَاشِى فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِى، فَكَسِّرُوا قِسِيَّكُمْ وَقَطِّعُوا أَوْتَارَكُمْ وَاضْرِبُوْا بِسُيُوفِكُمُ الْحِجَارَةَ فَإِنْ دُخِلَ عَلَى أَحَدٍ مِنْكُمْ فَلْيَكُنْ كَخَيْرِ ابْنَىْ آدَمَ –
‘ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় চরম ফিৎনা আসতে থাকবে। ঐ সময় সকাল বেলা যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে এবং সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে সকাল বেলা কাফের হয়ে যাবে। এ সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দন্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে, দন্ডায়মান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে এবং চলমান ব্যক্তি দ্রুত ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। এ সময় তোমরা তোমাদের ধনুক ভেঙ্গে ফেল, ধনুকের ছিলা কেটে ফেল এবং তোমাদের তরবারিগুলো পাথরের উপর আঘাত করে ভেঙ্গে ফেল। তোমাদের কারো ঘরে বিপর্যয় ঢুকে পড়লে সে যেন আদম (আঃ)-এর দু’পুত্রের মধ্যে উত্তম জনের (হাবিল) ন্যায় হয়ে যায়’।[35] কেউ মারতে এলে নিজে তাকে মারবে না। যেমন হাবীল তার ভাইকে বলেছিলেন, ‘যদি তুমি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তোমার হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যার জন্য আমার হাত বাড়াবো না। আমি বিশ্ব প্রভু আল্লাহকে ভয় করি। আমি মনে করি এর ফলে তুমি আমাকে হত্যার পাপ ও তোমার পাপ সমূহের বোঝা একত্রে নিয়ে জাহান্নামবাসী হবে। আর সেটাই হ’ল যালেমদের যথাযোগ্য কর্মফল (মায়েদাহ ৫/২৮-২৯)। একদা রাসূল (ছাঃ) চাদর মুড়ি দিয়ে লোকদের সামনে বের হয়ে বললেন,أَيُّهَا النَّاسُ، أَظَلَّتْكُمُ الْفِتَنُ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، أَيُّهَا النَّاسُ، لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ بَكَيْتُمْ كَثِيْرًا وَضَحِكْتُمْ قَلِيْلًا- ‘হে লোক সকল! অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় ফিৎনা তোমাদের আচ্ছাদিত করবে। হে লোক সকল! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহ’লে অধিকহারে কাঁদতে ও অল্প হাসতে।[36] ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
أَظَلَّتْكُمَ الْفِتَنُ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، أَنْجَى النَّاس فِيهَا صَاحِبُ شَاهِقَةٍ، يَأْكُلُ مِنْ رِسْلِ غَنَمِهِ، أَوْ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ الدَّرْبِ آخِذٌ بِعَنَانِ فَرَسِهِ، يَأْكُلُ مِنْ فِيء سَيْفِهِ-
‘অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় ফিৎনা তোমাদের আচ্ছাদিত করবে। লোকদের মাঝে উচু পাহাড়ে আরোহনকারীই কেবল সেই ফিৎনা থেকে রক্ষা পাবে। যে তার ছাগলের দুধ পান করে দিনাতিপাত করবে। অথবা এমন লোক রক্ষা পাবে যে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে সর্বদা রাস্তায় প্রস্ত্তত থাকবে। তার তরবারী যা উপার্জন করে দিবে তা থেকে সে খাবে’।[37]
১৩. বিভিন্ন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়া : সমাজ, রাষ্ট্র ও সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়া ক্বিয়ামতে অন্যতম আলামত। ফিৎনা-ফাসাদ সমাজে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে লোকেরা ফিৎনার ভয়ে মৃত্যু কামনা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না (বিপদাপদের কারণে) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মৃত ব্যক্তির স্থানে হওয়া কামনা করবে’।[38] উল্লেখ্য, সাধারণভাবে বিপদ-আপদের কারণে মৃত্যু কামনা করা যাবে না।[39]
আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أُمَّتِىْ هَذِهِ أُمَّةٌ مَرْحُوْمَةٌ لَيْسَ عَلَيْهَا عَذَابٌ فِى الآخِرَةِ عَذَابُهَا فِى الدُّنْيَا الْفِتَنُ وَالزَّلاَزِلُ وَالْقَتْلُ- ‘আমার এ উম্মত দয়াপ্রাপ্ত, পরকালে এদের কোন শাস্তি হবে না, আর ইহকালে তাদের শাস্তি হ’ল ফিৎনাসমূহ, ভূমিকম্প ও যুদ্ধ বিগ্রহ’।[40] ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ عِنْدَ بَابِ حَفْصَةَ فَقَالَ بِيَدِهِ نَحْوَ الْمَشْرِقِ الْفِتْنَةُ هَا هُنَا مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ. قَالَهَا مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا. وَقَالَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ فِى رِوَايَتِهِ قَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ بَابِ عَائِشَةَ-
‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাফছাহ (রাঃ)-এর দরজার নিকট দন্ডায়মান ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ফিৎনা এ দিক থেকে আসবে-যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। এ কথাটি তিনি দুই বা তিনবার বলেছেন’।[41] রাসূল (ছাঃ) পূর্বের দিকে ইঙ্গিত করে ইরাকসহ পুরো প্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। কারণ ইরাক থেকেই খারেজী, শী‘আ, মু‘তাযিলা, জাহমিয়া, মাজূসী, মানুবিয়া, মুযদাকিয়াসহ বহু ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব ঘটেছে। অপরদিকে চিন ও ভারত থেকে হুন্দুসিয়া, বুযিয়া, কাদিয়ানী, বাহাইয়া ও তাতারদের আবির্ভাব ঘটেছে এবং পরবর্তীতে দাজ্জাল ও ইয়াজূজ-মাজূজের ফিৎনার আবির্ভাব ঘটবে।
সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলতেন, হে ইরাকবাসী! আশ্চর্য! ছগীরা (গুনাহ) সম্পর্কে তোমাদের কতই না প্রশ্ন। অথচ কবীরা (গুনাহ) করতে তোমাদের দ্বিধা নেই। আমি আমার পিতা ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলতেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইংগিত করে বলতে শুনেছি, ফিৎনা এদিক থেকে আসবে-যেদিক থেকে শয়তানের দুই শিং উদিত হয়। অথচ তোমরা পরস্পর হানাহানি করছ’।[42] মাহমূদ বিন লাবীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন,
اثْنَتَانِ يَكْرَهُهُمَا ابْنُ آدَمَ الْمَوْتُ وَالْمَوْتُ خَيْرٌ لِلْمُؤْمِنِ مِنَ الْفِتْنَةِ وَيَكْرَهُ قِلَّةَ الْمَالِ وَقِلَّةُ الْمَالِ أَقُلُّ لِلْحِسَابِ-
‘দু’টি জিনিসকে আদম-সন্তান অপসন্দ করে; (তার মধ্যে প্রথম হ’ল) মৃত্যু, অথচ মুমিনের জন্য ফিৎনা থেকে মৃত্যুই উত্তম। আর (দ্বিতীয় হ’ল) ধন-স্বল্পতা, অথচ ধন-স্বল্পতায় হিসাব কম হবে’।[43] হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
لَيُوشِكَنَّ أَنْ يُصَبَّ عَلَيْكُم الشَّرُّ مِنَ السَّمَاءِ حَتَّى يَبْلُغَ الْفَيَافِيَ، قَالَ : قِيلَ : وَمَا الْفَيَافِيُ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ، قَالَ : الأَرْضُ الْقَفْرُ-
‘অবশ্যই তোমাদের উপর আকাশ থেকে অনিষ্টতা নাযিল করা হবে যা নির্জন ভূমিতেও পোঁছবে। তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আবু আব্দিল্লাহ! ফায়াফী কি? তিনি বললেন, মরুভূমি’।[44] অর্থাৎ মরুভূমিতে ফিৎনা ছড়িয়ে পড়বে। অবশ্য এই ফিৎনার সময় যারা ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য মহাপুরস্কার রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘এর পরেই ছবরের সময়। আর সে সময় ছবর করা এরূপ, যেন জ্বলন্ত আগুন হাতে রাখা। সে সময় যে ব্যক্তি নেক আমল করবে, সে পঞ্চাশ জনের সমান ছওয়াব পাবে। তখন জনৈক ছাহাবী জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের মাঝের পঞ্চাশ জনের নেকীর অনুরূপ নেকী সে পাবে? তিনি বলেন, ‘তোমাদের মত পঞ্চাশ জনের ছওয়াবের অনুরূপ ছওয়াব সে পাবে’।[45]
চলবে
[1]. ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ১/২৫২; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/২৯৭।
[2]. আবূদাউদ হা/২৭৬১; মিশকাত হা/৩৯৮২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩২০।
[3]. বুখারী হা/৬৫০৬, ৭১২১; মিশকাত হা/৫৪১০; মুসলিম হা/১৫৭।
[4]. আহমাদ হা/৯৮১৭; আবূদাউদ হা/৪৩৩৪, সনদ ছহীহ।
[5]. আবূদাউদ হা/৪২৫২; তিরমিযী হা/২২১৯; আহমাদ হা/২২৫০৫ মিশকাত হা/৫৪০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৭৩।
[6]. আহমাদ হা/২৩৪০৬; মু‘জামুল কাবীর হা/৩০৬; ছহীহাহ হা/১৯৯৯।
[7]. বুখারী হা/৪৩৭৯; আহমাদ হা/২৩৭৩।
[8]. বুখারী হা/৪৩৭৯; আহমাদ হা/২৩৭৩; আল-বিদায়াহ ৫/৫০।
[9]. আল-বিদায়াহ ৬/৩২৩-৩২৭।
[10]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৫০৪; আল-বিদায়াহ ৭/১১৯।
[11]. আল-বিদায়াহ ৬/৩১৯-১২৬; মুকরীযী, ইমতাউল আসমা ১৪/২৪১।
[12]. নববী, আল-মাজমূ‘ ১৯/২৭২; আল-বিদায়াহ ৮/৩১৫-১৬।
[13]. তিরমিযী হা/২২২০; মিশকাত হা/৫৯৮৪, সনদ ছহীহ।
[14]. যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ৫/৩৯০; ইবনুল জাওযী, আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল উমামে ওয়াল মুলূকে ৬/২০৭।
[15]. মাসিক আত-তাহরীক, সম্পাদকীয়, ফেব্রুয়ারী ২০০৪।
[16]. উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১৫।
[17]. শাহরাস্তানী, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল ১/১১৪; মাসিক আত-তাহরীক, খারেজীদের আক্বীদা ও ইতিহাস ২০ বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা পৃঃ ১৭।
[18]. আল-ফাছলু ফিল মিলালে ওয়াল আহওয়ায়ে ওয়ান নিহালে ২/৯০।
[19]. ড. নাছির আল-আক্বল, আল-খাওয়ারেজ আউয়ালুল ফিরাক ফী তারীখিল ইসলাম ১/১৯।
[20]. ইবনু মাজাহ হা/১৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৪৭।
[21]. তিরমিযী হা/৩০০০; ইবনু মাজাহ হা/১৭৬; মিশকাত হা/৩৫৫৪; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৩৪।
[22]. নববী, শারহে মুসলিম ৭/১৬০; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/২৮২; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ৩/৪৬।
[23]. বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/১০৬২; মিশকাত হা/৫৮৯৪।
[24]. বুখারী হা/৭৪৩২; মুসলিম হা/১০৬৪; মিশকাত হা/৫৮৯৪।
[25]. বুখারী হা/৩৬১১; আবূদাউদ হা/৪৭৬৭; ইবনু মাজাহ হা/১৬৮; মিশকাত হা/৩৫৫৩।
[26]. মুসলিম হা/১০৬৭; মিশকাত হা/৩৫৪৩।
[27]. আবূদাউদ হা/৪৭৬৫; মিশকাত হা/৩৫৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৬৮।
[28]. তারীখে ইবনু খালদূন ২/৬৪৫-২৪৬; আল-ইস্তি‘আব ৩/১১২৩-২৬; আল-বিদায়াহ ৭/৩২৫-৩২৯।
[29]. মুসলিম হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/৫৯৯৯; ছহীহুল জামে’ হা/৬৮০০।
[30]. বুখারী হা/৩৬৪৯; মুসলিম হা/২৫৩২; মিশকাত হা/৬০০০।
[31]. আহমাদ হা/১২৮৬১; ইবনু হিববান হা/৫৯৫; ছহীহাহ হা/১২১৮।
[32]. ফাৎহুল বারী ১৩/২১; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/৩৭৪।
[33]. আল-বিাদয়াহ ৯/১৯০; যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/৪৭০, ৪/৪৬০।
[34]. মুসলিম হা/১১৮; হাকেম হা/২৪৬০; মিশকাত হা/৫৩৮৩।
[35]. আবূদাউদ হা/২৫৫১; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৬১; ছহীহাহ হা/১৫২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১২২১; ইরওয়া হা/২৪৫১।
[36]. আহমাদ হা/২৪৫৬৪, সনদ ছহীহ।
[37]. হাকেম হা/২৪৬০; ছহীহাহ হা/১৪১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৩৫।
[38]. বুখারী হা/৭১১৫; মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪১০।
[39]. বুখারী হা/৫৬৭১।
[40]. আবূদাউদ হা/৪২৭৮; মিশকাত হা/৫৩৭৪; ছহীহাহ হা/৯৫৯।
[41]. বুখারী হা/৩২৭৯; মুসলিম হা/২৯০৫।
[42]. মুসলিম হা/২৯০৫।
[43]. আহমাদ হা/২৩৬৭৩ ; মিশকাত হা/৫২৫১; ছহীহাহ হা/৮১৩।
[44]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৮৫৫৪।
[45]. আবূদাউদ হা/৪৩৪১; ছহীহাহ হা/৪৯৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৭২।
আরোও পড়ুনঃ
[box type=”info” align=”” class=”” width=”600″]আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক! মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের শ্বাশত বাণী ছড়িয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন এবং সকলকে জানার সুযোগ করে দিন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে -এ লাইক করুন[/box]
মন্তব্য করুন