হয়োনা তুমি রমজানের আবেদ
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
লেখক : মুহাম্মদ বিন হামাদ আল-হামূদ আন নাজদী
হয়োনা তুমি রমজানের আবেদ
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বন্ধু। আমরা সবাই তার প্রিয় বান্দা হতে চাই। কিন্তু কীভাবে? ক্ষণিকের তরে ইবাদত করলে কীভাবে তুমি আল্লাহর প্রিয় হবে? মাহে রমজান ইবাদতের মৌসুম বটে, কিন্তু তার মানে কী রমজান চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইবাদত ফুরিয়ে যাবে? দীর্ঘ এক মাস যাবত যে সকল আমলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছে, তা সারা বছরই বাকী থাকে। এমনকি যতদিন জীবিত থাকে ততদিনই অবশিষ্ট থাকে। প্রকৃত মুমিন মৃত্যু পর্যন্ত আমল করতে থাকে।
জনৈক বুযুর্গকে বলা হলো অনেক মানুষকে শুধুমাত্র রমজানে ইবাদত করতে দেখা যায়। তিনি বলেন : সে জাতি বড়ই হতভাগ্য, যারা কেবলমাত্র রমজানেই আল্লাহর হক সম্পর্কে সচেতন থাকে। যে ব্যক্তি সারা বছর ঠিকমত ইবাদত করে সে-ই প্রকৃত সফল নেককার। এরশাদ হচ্ছে : “তুমি মৃত্যু আসা পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করতে থাক”। [সূরা হিজর : ৯৯]
ইমাম ইবনে রজব রহ. বলেন : মাস, বছর, দিন-রাত, মৃত্যু ও আমলের সময় নির্ধারক। আস্তে আস্তে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যে সত্ত্বা এগুলোর অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তিনি সর্বযুগে সব সময় একক ও অদ্বিতীয়। বান্দার ইবাদত সম্পর্কে সর্বদা তিনি সচেতন। প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে বান্দা আল্লাহ তাআলার কোন না কোন নেয়ামতে ডুবে থাকে। মুমিন বান্দার জীবনে এমন কোন মূহুর্ত অতিবাহিত হয় না, যে সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত কোন না কোন দায়িত্ব না থাকে। খাঁটি মুমিন সর্বদা আশা ও ভয়ের মাঝে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে তার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রেমিক কখনও বিরক্ত বোধ করে না। তাছাড়া রবের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য ব্যতীত বান্দার চাওয়া পাওয়ার আর কিইবা থাকতে পারে?
আল্লাহর আনুগত্য ব্যতীত যে সময়টুকু অতিবাহিত হয়েছে তা বিফল। তাঁর জিকির থেকে বিমুখ থাকার সময়টুকু আক্ষেপ ও অনুশোচনার কারণ। শত আফসোস ঐ সময়ের উপর, যা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে নষ্ট হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন আমল শুরু করলে, তা রীতিমত করার চেষ্টা করতেন। আয়েশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ও অন্যান্য মাসে রাত্রিকালীন নামাজ এগার রাকাআতের বেশি পড়তেন না। অতএব বুঝা গেল, তিনি অন্যান্য মাসেও কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
মাহে রমজানে কোন আমল বা অজিফা ছুটে গেলে তা শাওয়ালে কাজা করে নিতেন। একবার তিনি রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতে পারেননি। পরে তা শাওয়াল মাসের প্রথম দশ দিনে আদায় করে নিয়েছেন।বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ মুসলিম শরীফে আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখবে, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।
মাহে রমজানের পর রোজা রাখার তাৎপর্য
আল্লামা ইবনে রজব রহ. বলেন, শাওয়াল মাসে রোজা রাখার তাৎপর্য অনেক। রমজানের পর রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার আলামত স্বরূপ। কেননা আল্লাহ তাআলা কোন বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে পরেও অনুরূপ আমল করার তৌফিক দিয়ে থাকেন। নেক আমলের প্রতিদান বিভিন্নরূপ। তার মধ্যে একটি হলো পুনঃরায় নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ রোজা ও অন্যান্য ইবাদত বাকি এগার মাসেও চালু রাখা চাই। কেননা যিনি রমজানের রব, বাকি এগার মাসের রব তিনিই।
তিনি আরো বলেন, তবে ইবাদতের মোকাবেলায় গুনাহের কাজ করলে নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। অতএব, কোন ব্যক্তি রমজানের পরপরই হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, তার সিয়াম স্বীয় মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয়। এবং রহমতের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।গুনাহের পর ভাল কাজ করা কতইনা উৎকৃষ্ট আমল। কিন্তু তার চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট আমল হলো নেক কাজের পর আরেকটি নেক কাজে মশগুল হওয়া। অতএব, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যাতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত হকের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করেন। সাথে সাথে অন্তর বিপথে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ চাও। কেননা আনুগত্যের সম্মানের পর নাফরমানির বেইজ্জতি কতইনা নিকৃষ্ট।
হে তওবাকারী যুবসমাজ!
গুনাহ একবার ছেড়ে দিয়ে আবার সেদিকে ফিরে যেও না। যদি তোমরা ভাল কাজের উপর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পার, তাহলে প্রবৃত্তির অস্থায়ী আনন্দের পরিবর্তে স্থায়ী ঈমানি স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন পার্থিব স্বার্থ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে তাকে তার চেয়েও উত্তম বস্তুর দ্বারা পুরস্কৃত করবেন। এরশাদ হচ্ছে: “আল্লাহ তাআলা যদি তোমাদের অন্তরে কল্যাণের আলো দেখতে পান, তাহলে তোমাদের হারানো বস্তুর চেয়েও উত্তম জিনিস দান করবেন। শুধু তা-ই নয়, সাথে সাথে তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন”। [সূরা আনফাল: ৭০]
হে অন্তর পরিবর্তনকারী রব, তুমি আমাদের আত্মাসমূহ তোমার মনোনীত দ্বীনের উপর অটল রাখ।
[box type=”info” align=”” class=”” width=”600″]আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক! মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের শ্বাশত বাণী ছড়িয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন এবং সকলকে জানার সুযোগ করে দিন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে -এ লাইক করুন[/box]
মন্তব্য করুন