সমকামের শাস্তি ও সমকামের চিকিৎসা
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে,
যিনি পরম করুনাময় অসীম দয়ালু।
সমকামের শাস্তি ও সমকামের চিকিৎসা
কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরুপ হত্যা করতে হয়। আব্দুল্লাহ বিন আবব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
مَنوَجَدتُمُوهُ يَعمَل عَمَلَ قَومِ لُوطٍ فَقتُلُو ا الفاَعِلَ وَالمَفعُولَ بِهِ
“ কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে”। (আবূ দাউদঃ ৪৪৬২, তিরমিযীঃ ১৪৫৬, ইবনে মাজাহঃ ২৬০৯)
উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
اُرجُمُو الأَعلَي وَالأَسفَلَ، اُرجُمُوحُمَا جَمِيعَا
“ উপর-নীচের উভয়কেই রজম করে হত্যা করো”। (ইবনু মাজাহঃ ২৬১০)
আবূ বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) এবং হিশাম বিন আব্দুল মালিক (রাঃ) সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির (রঃ) থকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
كَتَبَ خلَدُبنَ الوَلِيدُ إِلَى أَبِي بَكرٍ الصِّدِّيقِ-رَضِيَ اللّحُعَنهَ- أَنَّهُ وَجَدَرَجُلاً فِي بَعضِ ضَوَاحِي العارَبِ يُنكَهُ كَمَا تُنكَهُ المَرأَةُ، فَجَمَعَ لِذَلِكَأُبُوبَكرٍ أَصحاَبَارَاسُ لِ اللَّهَِسُولُ اللَّهِ صَلى اللهُ عَلَيهِ وَسَللَّم ، وَفِهِم عَلِيُّبنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللّحُعَنهَ فَقَالَ عَلِيٌ -رَضِيَ اللّحُعَنهَ- إِنَّهَذَا ذَنبٌ لَم تَعمَل بِهِ إُمَّةٌ إِلَّا أُمَّةٌ وَاحِدَةً، فَفَعَللَّهُ بِهِم مَا قَد عَلِمتُم، أَرَى أَن تَهرِ قَهُ بِالنَّارِ، فَاجتَمَعَ رَأَيُ أَصحَابِرَسُلِ اللَّهِ-َسُولُ اللَّهِ صَلى اللهُ عَلَيهِ وَسَللَّم-أَن يُّحرَقَ بِالنَّارِ، فَأَمَرَبِهِ أَبُو بَكرٍ أَن يُّحرَقَ بِالنَّارِ
“ খালিদ বন ওয়ালীদ (রাঃ) একদা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবূ বকর (রাঃ) সকল সাহাবাদেরকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাদের মধ্যে আলী (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেনঃ এ এমন একটি গুনাহ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহ তা’আলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন হযরত আবূ বকর (রাঃ) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ফরমান জারি করেন”। (বায়হাক্বী/শু’আবুল ঈমান. হাদীস ৫৩৮৯)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
يُنظَرُ أَعلَى بِنَاءٍفِي القَريَةِ، فَيُرمَى اللُّوطِيُّ مِنهَا مُنَكَّسًا، ثُمَّ يُتبَعُ بِلحِجَارَةِ
“ সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার উপর পাথর মারা হবে। (ইবনু আবী শাইবাহ, হাদীস ২৮৩২৮ বায়হাক্বী ৮/২৩২)
সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না। রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
اَيَنظُرُ اللَّهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى رَجُلً أَوِ امرَأَةًفِى الدُّبُر
“ আল্লাহ তা’আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার মলদ্বারে গমন করে”। (ইবনু আবী শায়বাহ, হাদীসঃ ১৬৮০৩; তিরমিযীঃ১১৬৫)
সমকামের চিকিৎসাঃ
উক্ত রোগ তথা সমকামের নেশা থেকে বাঁচার উপায় অবশ্যই রয়েছে। তবে তা এ জাতীয় রোগীর পক্ষ থেকে সাদরে গ্রহণ করার অপেক্ষায়।
রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসাঃ
দৃষ্টিশক্তি হিফাযতের মাধ্যমেঃ
কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত একটি তীর যা শুধু মানুষের আফসোসই বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। তা হলেই সমকামের প্রতি অন্তরে আর উৎসাহ জন্ম নিবে না। এ ছাড়াও দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রনের অনেকগুলো ফায়দা রয়েছে যা নিম্নরুপঃ
১) তাতে আল্লাহ তা’আলার আদেশ মানা হয়। যা ইবাদতেরই একাংশ এবং ইবাদাতের মধ্যেই সমূহ মানব কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
২) বিষাক্ত তীরের প্রভাব থেকে অন্তর বিমুক্ত থাকে। কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর।
৩) মন সর্বদা আল্লাহ অভিমুখী থাকে।
৪) মন সর্বদা সন্তুষ্ট ও শক্তিশালী থাকে।
৫) অন্তরে এক ধরনের নূর তথা আলো জন্ম নেয় যার দরুন সে উত্তরোত্তরর ভালোর দিকেই ধাবিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ
“ (হে রাসূল!) তুমি মি’মিনদের বলে দাও : তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করে”। (নূরঃ ৩০)
এর কয়েক আয়াত পরই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ
“ আল্লাহ তা’আলাই আকাশ ও পৃথিবীর জ্যোতি। (সত্যিকার ঈমানদারের অন্তরে) তার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার। যার মধ্যে রয়েছে একটি প্রদীপ”। (নূরঃ ৩৫)
৬) হক্ব ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে বিশেষ প্রভেদজ্ঞান সৃষ্টি হয় যার দরুন দৃষ্টি সংযতকারীর যে কোন ধারণা অধিকাংশই সঠিক প্রমাণিত হয়। ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ ত’আলা লূত সম্প্রদায়ের সমকামীদেরকে অন্তদর্দৃষ্টিশূন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
“ আপনার জীবনের কসম! ওরা তো মত্ততায় বমূঢ় হয়েছে তথা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছ ফেলেছে”। (হিজরঃ ৭২)
৭) অন্তরে দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও শক্তি জন্ম নেয় এবং মানুষ তাকে সম্মান করে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ
“ সম্মান ও ক্ষমতা তো আল্লাহ তা’আলা, তদীয় রাসূল (ছাঃ) ও (সত্যিকার) ঈমানদারদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা তো তা জানে না। (মুনাফিকুনঃ ৮)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
مَن كَانَ يُرِيدُ الْعِزَّةَ فَلِلَّهِ الْعِزَّةُ جَمِيعًا ۚ إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ
“কেউ উযযত ও সম্মান চাইলে সে যেন জেনে রাখে, সকল সম্মানই তো আল্লাহ তা’আলার । (অতএব তার কাছেই তা কামনাচ করতে হবে। অন্যের কাছে নয়) তারই দিকে পবিএ বাণীসমূহ তথা যিকির ইত্যাদি আরোহণ করে এবং নেক আমলই তা উন্নীত করে”। (ফা’ত্বিরঃ ১০) সুতরাং আল্লাহর আনুগত্য, যিকির ও নেক আমলের মাধ্যমেই তারই নিকট সম্মান কামনা করতে হবে।
৮) তাতে মানব অন্তরে শয়তানের ঢুকার সুগম পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, সে দৃষ্টি পথেই মানব অন্তরে প্রবেশ করে খালিস্থানে বাতাস প্রবেশের চাইতেও অতি দ্রুত গতিতে। অতঃপর সে দেখা বস্তুটির সুদৃশ্য দৃষ্টি ক্ষেপণকারীর মানসপটে স্থাপন করে। সে দৃষ্ট বস্তুটির মূর্তি এমনভাবে তৈরি করে যে, অন্তরে তখন তাকে নিয়েই ব্যস্ত হতে বাধ্য হয়। এরপর সে অন্তরকে অনেক ধরনের আশা ও অঙ্গীকার দিতে থাকে। অন্তরে উত্তরোত্তর কুপ্রবৃত্তির তাড়না জাগিয়ে তোলে। সে মনের মাঝে উত্তজনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তাতে বহু প্রকারের গুনাহর জ্বালানি ব্যবহার করে আরো উত্তপ্ত করতে থাকে। অতঃপর হৃদয়টি সে উত্তপ্ত আগুনে লাগাতার পুড়তে থাকে। সে অন্তর্দাহ থেকেই বিরহের উত্তপ্ত ঊর্ধ্ব শ্বাসের সৃষ্টি।
৯) অন্তর সর্বদা মঙ্গলজনক কর্ম সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ পায়। অবৈধ দৃষ্টি ক্ষেপনে মানুষ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। অন্তর গাফিল হয়ে যায়। প্রবিত্তি পূজায় ধাবিত হয় এবং সকল ব্যাপারে এক ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হয়। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা রাসূল (ছাঃ) কে এদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
“ যার অন্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি এবং যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এমনকি যার কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করেছে আপনি তার আনুগত্য করবেন না”। (কাহাফঃ ২৮)
১০) অন্তর ও দৃষ্টির মাঝে অন্যটি খারাপ হতে বাধ্য। তেমনিভাবে একটি সুস্থ থাকলে অন্যটিও সুস্থ থাকতে বাধ্য। সুতরাং যে দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রন করবে তার অন্তরও তারই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসাঃ
তাওহীদ বিরোধী উক্ত রোগে কেউ আক্রন্ত হলে তাকে সর্ব প্রথম এ কথা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সে উক্ত রোগে আক্রন্ত হয়েছে শুধু মূর্খতা এবং গাফিলতির দরুনই। অতএব সর্ব প্রথম তাকে আল্লাহ তা’আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ, তার সাধারণ নীতি ও নিদর্শন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। অতঃপর তাকে এমন কিছু প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ইবাদত করতে হব যার দরুন সে উক্ত মত্ততা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এরই পাশাপাশি সে আল্লাহ তা’আলার নিকট সবিনয়ে সর্বদা এ দোয়া করবে যে, আল্লাহ তা’আলা যেন তাকে উক্ত রোগ থেকে ত্বরিত মুক্তি দেন। বিশেষ করে সম্ভবনাময় স্থান, সময় ও অবস্থায় দোয়া করবে। যেমনঃ আযান ও ইক্বামতের মধ্যবের্তী সময়, রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশ, সিজদাহ এবং জুমার দিনের শেষ বেলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
সংক্ষিপ্তকারে চিকিৎসাসমূহঃ
১) প্রথমে আল্লাহ তা’আলার নিকট উক্ত গুনাহ থেকে খাটি তাওবা করে নিন। কারণ, কেউ আল্লাহ তা’আলা নিকট একমাত্র তারই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য অথবা তারই কঠিন শাস্তি থেকে বাচার জন্য তাওবা করে নিলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তা কবুল করবেন এবং তাকে সেভাবেই চলার তাওফীক দিবেন।
২) আল্লাহ তা’আলার প্রতি দৃঢ় একনিষ্ঠ হোন। এটিই হচ্ছে এর একান্ত মহৌষধ। আল্লাহ তা’আলা ইউসুফ (আঃ) কে এ একনিষ্ঠতার করনেই ‘ইশক্ব এবং প্রায় নিশ্চিত ব্যভিচার থেকে রক্ষা করেন
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ ۚ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ
“ তাকে (ইউসুফ (আঃ) কে) মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্যই এভাবে আমি আমার নির্দশন দেখালাম। কারণ, তিনি তো ছিলেন আমার একান্ত একনিষ্ঠ বান্দাহদের অন্যতম”। (ইউসুফঃ ২৪)
৩) ধৈর্য ধরুন। কারণ, কোন অভ্যাসগত কঠিন পাপ ছাড়ার জন্য ধৈর্যের একান্তই প্রয়োজন। সুতরাং ধৈর্য ধারণের বার বার কসরত করতে হবে। এমনিভাবেই ধীরে ধীরে এক সময় ধৈর্য ধারণ অভ্যাসে পরিণত হবে। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিবেন। আল্লাহ তা’আলা কাউকে এমন কিছু দেন নি যা ধৈর্যের চাইতেও উত্তম এবং বিস্তর কল্যাণকর”। (বুখারীঃ ১৪৬৯,৬৪৭০; মুসলিমঃ ১০৫৩)
এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, মনের কোন চাহিদা পূরণ করা থেকে ধৈর্য ধারণ করা অনেক সহজ তা পূরণ করার পর যে কষ্ট, শাস্তি, লজ্জা, আফসোস, লাঞ্ছনা, ভয়, চিন্তাও অস্থিরতা পেয়ে বসবে তা থেকে ধৈর্য ধারন করার চাইতে। তাই একেবারে শুরুতেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
৪) মনের বিরোধিতা করতে শিখুন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মনের বিরোধিতা করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
“যারা আমার উদ্দশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের সাথেই রয়েছেন”। ( আনকাবূতঃ ৬৯)
৫) আল্লাহ তা’আলা যে সর্বদা আপনার কর্মকান্ডের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আছেন তা অনুভব করতে শিখুন। সুতরাং উক্ত কাজ করার সময় মানুষ আপনাকে না দেখলেও আল্লাহ তা’আলা যে আপনার প্রতি দেখেই আছেন তা ভাবতে হবে। এরপরও যদি আপনি উক্ত কাজে লিপ্ত থাকেন তখন অবশ্যই এ কথা ভাবতে হবে যে, আল্লাহ তা’আলার সম্মান ও মর্যাদা আপনার অন্তরে নেই। তাই আল্লাহ তা’আলা আপনার উক্ত কর্ম দেখলেও আপনার এতটুকুও লজ্জা হয় না। আর যদি আপনি এমন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তা’আলা আপনার কর্মকান্ড দেখছেনই না তা হলে তো আপনি নিশ্চয়ই কাফির।
৬) জামাতে নামায পড়ার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হোন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
“নিশ্চয় নামায অল্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে”। (আনকাবূতঃ ৪৫)
৭) বেশি বেশি নফল রোযা রাখেতে চেষ্টা করুণ। কারণ, রোযার মধ্যে বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি উত্তজনা প্রশমনেরও এক বাস্তবমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। যেমনিভাবে রোযা আল্লাহ ভীরুতা শিক্ষা দেয়ার জন্যও বিশৈষ সহযোগী।
আব্দুল্লাহ বিন মাঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“হে যুবকরা! তোমাদের কেউ সঙ্গমে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ বিবাহ তার চোখকে নিম্নগামী করবে এবং তার লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কারণ, রোযা তার জন্য একান্ত যৌন উত্তজনা প্রতিরোধক”। (বুখারীঃ ১৯০৫, ৫০৬৬; মুসলিমঃ ১৪০০)
৮) বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন। কারণ, কুরআন হচ্ছে সর্ব রোগের চিকিৎসা। তাতে নূর, হিদায়ত,মনের আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। সুতরাং উক্ত রোগে রোগাক্রন্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, মুখস্থ ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষনা করা অবশ্যই কর্তব্য যাতে তার অন্তর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়।
৯) বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করুন। কারণ, আল্লাহ তা’আলার যিকিরে অন্তরের বিরাট একটা প্রশান্তি রয়েছে এবং যে অন্তরে সর্বদা আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে শয়তান সে অন্তর থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। সুতরাং এ জাতীয় ব্যক্তির জন্য যিকির অত্যন্ত উপকারী।
১০) আল্লাহ তা’আলার সকল বিধি বিধানের প্রতি যত্নবান হোন। তা হলে আল্লাহ তা’আলাও আপনার প্রতি যত্নবান হবেন। আপনাকে জিন ও মানব শয়তান এবং অন্তরের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করবেন। তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা আপনার ধার্মিকতা, সততা, মানবতা এবং সম্মানও রক্ষা করবেন।
১১) অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ কার্য সম্পাদন করুন। তাহলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সহজে আপনি একটি হালাল ক্ষেত্র পেয়ে যাবেন। জান্নাতের হুরের কথা বেশি বশি স্মরণ করুন। যাদের চোখ হবে বড় বড় এবং যারা হবে অতুলনীয়া সুন্দরী লুক্কায়িত মুক্তার ন্যায়। নেককার পুরুষেদের জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পেতে হলে দুনিয়ার এ ক্ষনিকের অবৈধ স্বাদ পরিত্যাগ করতেই হবে।
১২) শ্মশ্রুবিহীন সে প্রিয় ছেলেটি থেকে খুব দূরে থাকুন। যাকে দেখলে আপনার অন্তরে সে লুক্কায়িত কামনা-বাসনা দ্রুত জাগ্রত হয়। এমন দূরে থাকবেন যে, সে যেন কখনো আপনার চোখে না পড়ে এবং তার কথাও যেন আপনি কখনো শুনুতে না পান। কারণ, বাহ্যিক দুরুত্ব অন্তরের দূরত্ব সৃষ্টি করতে অবশ্যই বাধ্য।
১৩) তেমনিভাবে উত্তজনাকর সকল বস্তু থেকেও দূরে থাকুন যেগুলো আপনার লুক্কায়িত কামনা-বাসনাকে দ্রুত জাগ্রত করে। অতএব মহিলা ও শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে মেলামেশা করবেন না। বিশ্রী ছবি ও চিঠি রয়েছে সবগুলো দ্রুত নস্যাৎ করে দিন। উত্তজনাকর খাদ্যদ্রব্য আপাতত বন্ধ রাখুন। তা আর কিছু দিনের জন্য গ্রহন করবেন না।
১৪) জন্নাতের হুরের কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। যাদের চোখ হবে বড় বড় এবং যারা হবে অতুলনীয়া সুন্দরী লুক্কায়িত মুক্তার ন্যায়। নেককার পুরুষদের জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পেতে হলে দুনিয়ার এ ক্ষণিকের অবৈধ স্বাদ পরিত্যাগ করতেই হবে।
১৫) লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকুন। কখনো একা ও অবসর থাকতে চেষ্টা করবেন না। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ইত্যবসরে ঘরের প্রয়োজনসমূহ প্ররণ করতে পারেন। কুর’আন শরীফ মুখস্থ করতে পারেন অথবা অন্ততপক্ষে বেচাকেনা নিয়েও ব্যস্ত হতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
১৬) সর্বদা শয়তানের ওয়াসওয়াসের প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করুন। কোন কুমন্ত্রণাকে একটুর জন্যও অন্তরে স্থান দিবেন না।
১৭) নিজের মনকে দৃঢ় করুন। কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, এ ব্যাধি এমন নয় যে তার কোন চিকিৎসা নেই। সুতরাং আপনি নিরাশ হবেন কেন?
১৮) উচ্চাকাঙ্খী হোন। উচ্চভীলাসের চাহিদা হচ্ছে এই যে, আপনি সর্বদা উন্নত গুণে গুণান্বিত হতে চাইবেন। অরুচিকর অভ্যাসে ছেড়ে দিবেন। লাঞ্ছনার স্থানসমূহে কখনো যাবেন না। সমাজের সম্মনি ব্যাক্তি সেজে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব হাতে নিবেন।
মন্তব্য করুন