সালাত ত্যাগকারীর বিধান
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
প্রশ্ন ১: আমারবড় ভাই তিনি সালাত পড়েন না, এ কারণে আমি কি তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব, নাসম্পর্ক ছিন্ন করবো? প্রকাশ থাকে যে, তিনি আমার সৎ ভাই (বিমাতার ছেলে)।
উত্তর ১:
যেব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করে, যদি সে সালাত ওয়াজিব হওয়ার (অপরিহার্যতার) বিষয়টি স্বীকার করে, তবে ওলামাদের -দু‘টি মতের সবচেয়ে সহীহ-মত অনুযায়ী সে বড় কুফরী করবে। আর যদি সালাত ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টিঅস্বীকারকারী-অবিশ্বাসী হয়, তা হলে ওলামাদের সর্বসম্মত মতে সে কাফের হয়েযাবে।
এ সম্পর্কে নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এরশাদ হলো:
رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلاَمُ؛ وَعَمُوْدُهُ الصَّلاَةُ؛ وَذُرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ ِفيْ سَبِيْلِ اللَّهِ
“কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বা সংগ্রাম করা।” [হাদীসটি ইমাম আহমাদ, তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন]
নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আরো এরশাদ হলো,
(( بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ ))
“ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ছেড়ে দেয়া।” [মুসলিম]
নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন :
(( اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ ))
“আমাদের এবং তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল।” [হাদীসটি ইমাম আহমাদ এবং আহলে সুনান সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন]
- সালাতত্যাগ করা কুফরী, এর কারণ হলো যে, যে ব্যক্তি সালাত ওয়াজিব হওয়া অস্বীকারকরে সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল, আহলে ইলম ও ঈমান এর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তেরমিথ্যা প্রতিপন্নকারী। যে ব্যক্তি অলসতা করে সালাত ছেড়ে দিল তার থেকে উক্তব্যক্তির কুফরী খুবই মারাত্বক। উভয় অবস্থাতেই মুসলিম শাসকগণের প্রতিঅপরিহার্য হলো যে, তারা সালাত ত্যাগকারীদেরকে তাওবাকরার নির্দেশ দিবে, যদিতওবাহ না করে,তা হলে এ‘বিষয়ে বর্ণিত দলীলের ভিত্তিতে তাদেরকে হত্যা করারনির্দেশ প্রদান করবে।
অতএবসালাত ত্যাগকারীকে বর্জন করা এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ওয়াজিব এবংসালাত ত্যাগ করা থেকে আল্লাহর কাছে তওবাহ না করা পর্যন্ত তার দা‘ওয়াত গ্রহণকরা যাবে না। সাথে সাথে তাকে ন্যায়ের পথে আহ্বান ও নসিহত প্রদান করাওয়াজিব এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সালাত ত্যাগ করার কারণে যে শাস্তি তার প্রতিনির্ধারিত আছে তা থেকে সাবধান করতে হবে। এর ফলে হয়তো বা সে তাওবা করতে পারেএবং আল্লাহ পাক তার তওবাহ কবুলও করতে পারেন।
ফাতওয়া প্রদানে :মাননীয় শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, (রাহেমাহুল্লাহ) “ফাতাওয়া ওলামাইল বালাদিল হারাম” নামক কিতাব থেকে সংগৃহীত। পৃ – ১৪৫
প্রশ্ন ২: কোনব্যক্তি যদি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত পড়ার জন্য নির্দেশ দেয়, কিন্তু তারাতার নির্দেশের প্রতি যদি কোন গুরুত্ব না দেয়, তা হলে সে তার পরিজনের সাথেকি ধরনের ব্যবহার করবে? সে কি তাদের সাথে [এক সাথে] বসবাস এবং মিলে মিশেথাকবে, না কি সে বাড়ী থেকে অন্যত্র চলে যাবে ?
উত্তর ২:
এসমস্ত পরিবার যদি একেবারেই সালাত না পড়ে, তা হলে তারা অবশ্যই কাফের, মুরতাদ (স্বধর্মত্যাগী) ও ইসলাম থেকে খারিজ-বহির্র্ভূত হয়ে যাবে এবং উক্তব্যক্তির জন্য তাদের সাথে একই সংগে অবস্থান এবং বসবাস করা জায়েয নয়। তবেতাদেরকে [সংশোধনের জন্য] দাওয়াত বা আহ্বান করা তার প্রতি ওয়াজিব। বিনয় এবংপ্রয়োজনে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদেরকে বারবার সালাত পড়ার জন্য আহ্বানজানাতে হবে। এর ফলে হয়তো আল্লাহ পাক তাদেরকে হিদায়েত দান করতে পারেন, কারণসালাত ত্যাগকারী কাফের। আল্লাহ পাক [এ’থেকে] রক্ষা করুন।
এ বিষয়ে আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত বা হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের উক্তি এবং সঠিক বিবেচনা-পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হলো।
প্রথমে পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ :
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের সম্পর্কে এরশাদ করেন :
] فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَفَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَنُفَصِّلُ الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ[
“অতএবযদি তারা তাওবা করে নেয় এবং সালাত পড়তে থাকে ও যাকাত দিতে থাকে, তবে তারাতোমাদের ধর্মের দিক দিয়ে ভাই হয়ে যাবে; আর আমি জ্ঞানী লোকদের জন্যেবিধানাবলী বিস্তারিত বর্র্ণনা করে থাকি।” [সূরা আত তাওবাহ : ১১]
আয়াতেরঅর্থ থেকে বোঝা যায় যে, যদি তারা উক্ত কাজগুলো না করে, তাহলে তারা আমাদের [মুসলমানদের] ভাই নয়। তবে গোনাহ যত বড়ই হোক না কেন, গোনাহর কারণে ঈমানীভ্রাতৃত্ব নষ্ট হবে না। কিন্তু ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার কারণে ঈমানী বন্ধনশেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে হাদীস থেকে প্রমাণ :
নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :
(( بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ ))
“ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ছেড়ে দেয়া।” [মুসলিম]
এ সম্পর্কে হাদীসের সুনান গ্রন্থগুলিতে আবু বোরায়দাহ রা. নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন :
(( اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ ))
“আমাদের এবং তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি তা হলো সালাত, অতএব যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল।” [হাদীসটি ইমাম আহমাদ এবং আহলে সুনান সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।]
সাহাবায়ে কিরামের উক্তি :
[ক] আমীরুল মুমিনিন উমার রা. বলেন :
(( لاَحَظَّ فِي الْإِسْلاَمِ لِمَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ ))
যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল তার ইসলামে কোন অংশ নেই।”
اَلْحَظُّ) ) ‘আল্ হায্যু‘ শব্দটি এ স্থানে নাকেরাহ বা অনির্দিষ্ট, যা না বাচকবর্ণনা প্রসংগে ব্যবহার হওয়ার ফলে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎসালাত ত্যাগকারীর ইসলামে তার কম এবং বেশি কোনই অংশ নেই।
[খ] আব্দুল্লাহ বিন শাকীক [রাহেমাহুল্লাহ] বলেন :
নাবী কারীম সা. এর সাহাবাগণ সালাত ত্যাগ করা ছাড়া অন্য কোন আমলকে কুফরী মনে করতেন না।
সঠিক বিবেচনার দিক থেকে :
প্রশ্নহলো এটা কি কোন জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার কথা হতে পারে যে, কোন এক ব্যক্তিরঅন্তরে যদি সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান থাকে এবং সে নামাযের মহত্ত্ব ওমর্যাদা বোঝে এবং আল্লাহ পাক নামাযের যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তাও সেজানে, এর পরেও কি সে সালাতকে লাগাতর ছেড়ে দিতে পারে? … এটি কখনই সম্ভবহতে পারে না। যারা বলেন যে [ সালাত ত্যাগ করার কারণে] সে কুফরী করবে না, তারা যে সমস্ত দলীলের ভিত্তিতে বলে থাকেন, আমি তাদের দলীলগুলো গভীর ভাবেচিন্তা ও গবেষণা করে দেখেছি যে, তাদের ঐ সমস্ত দলীল ও প্রমাণ পাঁচ অবস্থারবাইরে নয়।
[১] হয়তো বা উক্ত দলীলগুলো দলীল হিসেবে মূলত: গ্রহণীয় নয়।
[২]অথবা তাদের ঐ সমস্ত দলীল কোন অবস্থা অথবা বিশেষ বৈশিষ্টের সাথে শর্তযুক্ত ওসীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তাকে সালাত ত্যাগ করতে বাধা প্রদানকরে থাকে।
[৩] অথবা কোন অবস্থার সাথে শর্তযুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যারা সালাত ত্যাগ করে তাদের পক্ষে ওজর ও কৈফিয়ত হিসেবে পেশ করা হয়।
[৪] অথবা দলীলগুলো আম বা ব্যাপক, সালাত ত্যাগকারীর কুফরীর হাদীস দ্বারা তা খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
[৫] কিংবা ঐ সমস্ত দলীল দূুর্বল যা প্রমাণ হিসেবে অগ্রহণীয়।
একথা যখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সালাত ত্যাগকারী কাফের, তাই অবশ্যই তার প্রতিমুরতাদের হুকুম বর্তাবে। এবং নুসূস বা কুরআন ও হাদীসে এমন কোন প্রমাণ নেইযে, সালাত ত্যাগকারী মুমিন অথবা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা সে জাহান্নামথেকে নাজাত পাবে, ইত্যাদি। যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে সালাতত্যাগকারীর কুফরীকে তাবীল বা অপব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, সে নিম্নতর কুফরীতেলিপ্ত হবে।
সালাত ত্যাগকারীর প্রতি শরীয়তের বিধান
প্রথম :তাকে (কোন মুসলিম মহিলার সাথে) বিবাহ দেয়া শুদ্ধ হবে না। সালাত না পড়াঅবস্থায় যদি তার আক্দ বা বিবাহ সম্পাদন করা হয়, তা হলেও তার নিকাহ বাবিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং এই বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে উক্ত স্ত্রীস্বামীর জন্য হালাল হবে না। আল্লাহ পাক [মক্কা থেকে মদীনায়] মুহাজিরমহিলাদের সম্পর্কে এরশাদ করেন :
] فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَىالْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ [
“যদিতোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন নারী, তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরতপাঠিয়ে দিও না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্যে বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিননারীদের জন্যে বৈধ নয়।” [সূরা মুমতাহিনাহ্ : ১০]
দ্বিতীয় :বিবাহ বন্ধন সম্পাদন হওয়ার পর যদি সে সালাত ত্যাগ করে, তা হলেও তার বিবাহবাতিল হয়ে যাবে এবং পূর্র্বে যে আয়াত আমরা উল্লেখ করেছি সে আয়াতের নির্দেশমোতাবেক স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না। এ বিষয়ে আহলে ইলমদের নিকট ব্যাখ্যা ওবিশ্লেষণ প্রসিদ্ধ রয়েছে। বিবাহ বাতিল হওয়ার ব্যাপারে স্ত্রী মিলনের আগেহোক বা পরে হোক এতে কোন পার্থক্য নেই।
তৃতীয় :যে ব্যক্তি সালাত পড়ে না, তার জবাইকৃত পশু খাওয়া যাবে না। কেন তার জবেহকৃতপশু খাওয়া যাবে না? .. এর কারণ হলো যে, উক্ত জবেহকৃত পশু হারাম। [অথচ] যদিকোন [আহলে কিতাব] ইহূদী অথবা খৃষ্টান জবাই করে তা আমাদের জন্য খাওয়াহালাল। আল্লাহ রক্ষা করুন। উক্ত সালাত ত্যাগকারীর কুরবানী ইহূদী এবংনাসারার কুরবানী থেকেও নিকৃষ্ট।
চতুর্থ :অবশ্যই তার জন্য মক্কা এবং হারামের সীমানায় প্রবেশ করা হালাল নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বাণী :
] يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلاَيَقْرَبُواْ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا [
“হেমুমিনগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পরমসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে।” [সূরা তাওবাহ ২৮ আয়াত]
পঞ্চম :উক্ত সালাত ত্যাগকারী ব্যক্তির যদি কোন নিকটাত্মীয় বা জ্ঞাতি মারা যায়, তাহলে সে সম্পত্তির কোন মীরাছ পাবে না। যেমন: কোন ব্যক্তি যদি এমন সন্তানরেখে মারা গেল, যে সালাত পড়ে না (উক্ত মুসলিম ব্যক্তি সালাত পড়ে এবং ছেলেটিসালাত পড়ে না) এবং তার অন্য এক দূরবর্তী চাচাতো ভাই (স্বগোত্রব্যক্তি-জ্ঞাতি) এই দু‘জনের মধ্যে কে মীরাছ পাবে? উক্ত মৃত ব্যক্তিরদূরবর্তী চাচাতো ভাই ওয়ারিছ হবে, তার ছেলে কোন কিছুর ওয়ারিস হবে না। এসম্পর্র্কে ওসামা বর্র্ণিত হাদীসে নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী উল্লেখ্য :
(( لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ )) متفق عليه
“মুসলিম কাফেরের ওয়ারিছ হবে না এবং কাফের মুসলিমের ওয়ারিস হবে না।” [বুখারী ও মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
((أَلْحِقُوْا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا فَمَا بَقِيَ فَلِأَوْلَى رَجُلٍ ذَكَرٍ )) متفق عليه
“ফারায়েজতাদের মৌল মালিকদের সাথে সংযোজন করো। অর্থাৎ সর্ব প্রথম তাদের অংশ দিয়েদাও যাদের অংশ নির্ধারিত। অতঃপর যা অবশিষ্ট থাকবে তন্মধ্যে (মৃতের) নিকটতমপুরুষ আত্মীয়দেরই হবে অগ্রাধিকার।” [বুখারী ও মুসলিম]
এটি একটি উদাহরণ মাত্র এবং একই ভাবে অন্যান্য ওয়ারিসদের প্রতিও এই হুকুম প্রয়োগ করা হবে।
ষষ্ট :সে মারা গেলে তাকে গোসল দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই, দাফনের জন্য কাফন পরানোহবে না এবং তার উপর জানাযার সালাতও পড়া হবে না এবং মুসলমানদের কবরস্থানেদাফনও করা যাবে না। এখন প্রশ্ন হলো যে উক্ত মৃত ব্যক্তিকে আমরা কি করবো? এরউত্তর হলো যে, আমরা তার মৃতদেহকে মরুভূমিতে (খালি ভূমিতে) নিয়ে যাবো এবংতার জন্য গর্ত খনন করে তার পূর্বের পরিধেয় কাপড়েই দাফন-কবরস্থ করবো। কারণইসলামে তার কোন পবিত্রতা ও মর্যাদা নেই। তাই কারো জন্যে বৈধ নয় যে, যারসম্পর্কে সে জানে যে সে সালাত পড়তো না, এমন কেউ মারা গেলে মুসলমানদের কাছেজানাযার নামাযের জন্য তাকে উপস্থাপন করা।
সপ্তম :কিয়ামতের দিন ফিরআউন, হামান, কারূন এবং উবাই ইবনে খালাফ কাফেরদের নেতা ওপ্রধানদের সাথে তার হাশর-নাশর হবে। আল্লাহ রক্ষা করুন। সে জান্নাতে প্রবেশকরবে না এবং তার পরিবার ও পরিজনের তার জন্য কোন রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ বৈধনয়। কারণ সে কাফের, মুসলমানদের প্রতি তার কোন হক বা অধিকার নেই। এসম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বাণী :
] مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْلِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُواْ أُوْلِي قُرْبَى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَلَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ [ (১১৩)سورة التوبة
“নবীএবং অন্যান্য মুমিনদের জন্য জায়েয নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্র্থনা করে। যদিও তারা আত্মীয়ই হোক না কেন, একথা প্রকাশ হওয়ার পর যেতারা জাহান্নামের অধিবাসী।” [ সূরা তাওবাহ : ১১৩ আয়াত]
প্রিয় ভাই সকল ! বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং ভয়াবহ :
দুঃখও পরিতাপের বিষয় যে, কোন কোন মানুষ বিষয়টিকে অবহেলা করে খুবই খাট করেদেখছে। এবং যারা সালাত পড়ে না তাদেরকে একই বাড়ীতে থাকার স্থান করে দিচ্ছে।অথচ এটা জায়েয নয়। আল্লাহই ভাল জানেন।
আমাদের প্রিয় নাবী, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর সাহাবাগণের প্রতি দরূদ ও ছালাম বর্ষিত হোক।
ফাতওয়া প্রদানে :
মাননীয়শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল ওসাইমীন (রাহেমাহুল্লাহ) “ফাতাওয়া ওলামাইলবালাদিল হারাম” নামক কিতাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পৃষ্ঠা ১৪৬-১৪৯
নারীও পুরুষ উভয়ের জন্য সালাত ত্যাগের এটিই হলো বিধান। আমি সেই সমস্ত ভাইদেরকেআহ্বান জানাচ্ছি, যারা সালাত ছেড়ে দিয়েছে এবং সালাত ছাড়াকে সহজ মনে করছে।তুমি তোমার বাকি জীবনটা ভাল আমল করে পূর্বের আমলের ক্ষতিপূরণ ও সংশোধন করেনিবে। তুমি অবগত নও যে, তোমার বয়সের আর কত বাকী আছে। তা কি কয়েক মাস, কয়েকদিন অথবা কয়েক ঘন্টা? এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর কাছে। সব সময় নিম্নলিখিতআল্লাহর বাণীর কথা স্মরণ করবে।
]إِنَّهُ مَن يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيى [ (৭৪)طـه
“যেতার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্যে তো আছে জাহান্নাম, সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।” [সূরা ত্বাহা :৭৪ আয়াত]
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :
] فَأَمَّا مَن طَغَى (৩৭)وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا (৩৮)فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى[ (৩৯)
“অনন্তর যে সীমালংঘন করে, এবং পার্র্থিব জীবনকে বেছে নেয়, জাহান্নামই হবে তার অবস্থিতি স্থান।” [সূরা আন নাযি’আত ৩৮-৩৯ আয়াত]
আল্লাহযেন তোমাকে প্রতিটি ভাল ও নাজাতের কাজের তাওফীক দান করুন এবং তিনি যেনতোমাকে বাকি দিনগুলো শরীয়তের ছায়া এবং আশ্রয়ে থেকে দাওয়াত, ইলম, আমল, সুখ, সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখেন।
সমাপ্ত
লেখক:আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল ওসাইমীন রহ.
تأليف :عبد العزيز بن عبد الله بن باز رحمه الله
محمد صالح العثيميين رحمه الله
অনুবাদক: আব্দুন্ নূর বিন আব্দুল জব্বার
মন্তব্য করুন