কুরবানির সংজ্ঞা, গুরুত্ব, উদ্দেশ্য, হুকুম, তাৎপর্য ও ফাযায়েল
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
ওয়েব সম্পাদনাঃ ইসলামিকসেবা
কুরবানীর সংজ্ঞাঃ
আরবী ‘কুরবান’ (قربان) শব্দটি ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবান’ রুপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। পারিভাষিক অর্থে تَعَالَي القربانُ ماَ يُتقَرَبُ بِهِ إِلَ الَّلهِ ‘কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়।[১]প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ তরীকায় যে পশু যবহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানী’ বলা হয়। সকালে রক্তিম সূর্য উপরে ওঠার সময়ে ‘কুরবানী’ করা হয় বলে এই দিনটিকে ‘উয়াওমুল আযহা’ বলা হয়ে থাকে।[২ ]যদিও কুরবানী সারাদিন ও পরের দুদিন করা য়ায়।
গুরুত্বঃ
আল্লাহ বলেন,
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ
“ আর কুরবানীর পশু সমূহকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে”। (হজ্জ ৩৬)
আল্লাহ আরো বলেন,
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍوَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
“ আর আমি তার (অর্থাৎ ইসলামঈলের) যবহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী”। এবং আমি এটিকে (অর্থাৎ কুরবানীর এ প্রথাটিকে) পরবর্তীদের মধ্য রেখে দিলাম”। ( ছাফফাত ১০৭-১০৮)
আল্লাহ বলেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“ তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দশ্যে ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর”। (সূরা কাওছার ২)
কাফির মুশরিকর তাদের দেব-দেবী ও বিভিন্ন কবর ও বেদীতে পূজা দেয় ও মূর্তির উদ্দশ্যে কুরবানী করে থাকে। তার প্রতিবাদ স্বরুপ মুসলমানকে আল্লাহর জন্য ‘ছালাত আদায়ের ও তার উদ্দেশ্যে কুরবানী করার’ হুকুম দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আযহার দিন প্রথমে আল্লাহর জন্য ঈদের ছালাত আদায় করতে হয়, অতঃপর তার নামে কুরবানী করতে হয়। অনেক মুফাসসির এভাবেই আয়াতটির তাফসীর করেছেন।[৩]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
“ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়”।[৪]
এটি ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ (شعار عظيم) যা ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং ছাহাবীহগণও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন। অতঃপর অবিরত ধারায় মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের মধ্যে এটি চালু আছে। এটি কিতাব ও সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মত দ্বরা সুপ্রমাণিত।[৫]
উদ্দেশ্যঃ
কুরবানীর মূল উদ্দশ্য আল্লাহভীতি অর্জন করা। যাতে মানুষ এটা উপলব্ধি করে যে, আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কারণেই শক্তিশালী পশুগুলি তাদের মত দুর্বলদের অনুগত হয়েছে এবং তাদের গোশত, হাড়-হাড্ডি-মজ্জা ইত্যাদির মধ্যে তাতের জন্য রুযী নির্ধারিত হয়েছে। জাহেলী যুগের আরবরা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের অসীলা হিসাবে তাদের মূর্তির নামে কুরবানী করত। অতঃপর তার গোশতের কিছু অংশ মূর্তিগুলির মাথায় রাখত ও তার উপরেই কিছু রক্ত ছিটিয়ে দিত। কেউবা উক্ত রক্ত কাবা গৃহের দেওয়ালে লেপন করত। মুসমানদের কেউ কেউ অনুরুপ করার চিন্তা করলে নিম্নের আয়াতটি নাযিল হয়।[৬]
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ
“ অর্থঃ কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর নিকটে পৌছে না। বরং তার নিকটে পৌছে কেবল মাত্র তোমাদের ‘তাক্বওয়া’ বা আল্লাহ ভীতি”। (হজ্জ ৩৭)
হুকুমঃ
কুরবানী সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে প্রত্যেককে কুরবানী করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) ও ওমর ফারুক (রাঃ) অনেক সময় কুরবানী করতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, বেলাল, আবু মাসঊদ আনছারী প্রমুখ ছাহাবী থেকেও অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।[৭]
তাৎপর্যঃ
(১) আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ করার জাযবা সৃষ্টি করা।(২) ইবরাহীমের পুত্র কুরবানী ন্যায় ত্যাগ পূত আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করা। (৩) উত্তম খানা পিনার মাধ্যমে ঈমানদারগণের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেওয়া। (৪) আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করা ও তার বড়ত্ব প্রকাশ করা।
ফাযায়েলঃ
মা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
“ কুরবানীর দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর নিকটে আর কিছু নেই। ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুর শিং, লোম ও ক্ষুর সমূহ নিয়ে হাযির হবে। আর কুরবানীর রক্ত যমীনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর নিকটে বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌছে যায়। অতত্রব তোমরা কুরবানী দ্বারা নিজেদের নফসকে পবিত্র কর”। [৮]
(ক) কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম (আঃ) ও মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।
(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন ; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে”।[৯]
(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কোরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না।
কোরবানির শর্তাবলি
(১) এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট,গরু,মহিষ,ছাগল,ভেড়া,দুম্বা।এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় বাহীমাতুল আনআম।
যেমন এরশাদ হয়েছে :
“আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি;তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন,সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে”।[১০]
হাদিসে এসেছে :
“তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার”।[১১]
আর আল্লাহর রাসূল সা.উট,গরু,মহিষ,ছাগল,ভেড়া,দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।
ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম সা. এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়।
যেমন হাদিসে এসেছে,আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি। [১২]
গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট,অধিক গোশত সম্পন্ন,নিখুঁত দেখতে সুন্দর হওয়া।
(২) শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল,ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।
(৩) কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রটি মুক্ত হতে হবে।
যেমন হাদিসে এসেছে :
“সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :রাসূলুল্লাহ স.আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন :চার ধরনের পশু,যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না অন্ধ ;যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট,পঙ্গু ;যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত;যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় আহত শব্দের স্থলে পাগল উল্লেখ আছে”।[১৩]২৫
আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কোরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্র টিযুক্ত পশু কোরবানি না করা ভাল। সে ত্রটিগুলো হল শিং ভাংগা, কান কাটা,লেজ কাটা,ওলান কাটা,লিংগ কাটা ইত্যাদি।
(৪) যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।
কোরবানির ওয়াক্ত বা সময়
কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি এবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কোরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসেবে আদায় করলে অন্য কথা।
যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কোরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কোরবানির পশু জবেহ করা হয় তাহলে কোরবানি আদায় হবে না।
যেমন হাদিসে এসেছে
“আল-বারা ইবনে আযেব রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ স.খুতবাতে বলেছেন :এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কোরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে জবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কোরবানির কিছু আদায় হল না”।[১৪]
সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোরবানি পশু জবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর জবেহ করা ভাল। কেননা রাসূলুল্লাহ স.এ রকম করেছেন।
হাদিসে এসেছে:
“সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী রা.বলেছেন :নবী কারীম স.কোরবানির দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু জবেহ করলেন”।[১৫]
“জুনদাব ইবনে সুফিয়ান বলেন, আমি কোরবানির দিন নবী কারীম সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন,যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে জবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে জবেহ করে। আর যে জবেহ করেনি সে যেন জবেহ করে”।[১৬]
আর কোরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএব কোরবানির পশু জবেহ করার সময় হল চার দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার ও তেরো তারিখ।এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।
কারণ :এক.
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
“যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে”।[১৭]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ.বলেন :
“ ইবনে আব্বাস রা.বলেছেন:এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কোরবানির দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন”।[১৮]
অতএব এ দিনগুলো আল্লাহ তাআলা কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। দুই. রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :
“আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন জবেহ করা যায়”।[১৯]
আইয়ামে তাশরীক বলতে কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়।
তিন.কোরবানির পরবর্তী তিন দিনে সওম পালন জায়েজ নয়।এ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে এ তিন দিনে কোরবানি করা যাবে।
চার.রাসূলুল্লাহ স.বলেছেন :আইয়ামে তাশরীক হল খাওয়া,পান করা ও আল্লাহর জিকির করার দিন।
এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে,যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কোরবানির পশু জবেহ করা যেতে পারে।
পাঁচ.সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়,কোরবানির পরবর্তী তিনদিন কোরবানির পশু জবেহ করা যায়।
“ইবনুল কায়্যিম রহ.বলেন :আলী ইবনে আবি তালেব রা.বলেছেন :কোরবানির দিন হল ঈদুল আজহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন। অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন,কোরবানির দিন হল মোট তিন দিন;যিলহজ মাসের দশ,এগারো ও বার তারিখ। এবং বার তারিখের পর জবেহ করলে কোরবানি হবে না,তাদের কথার সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত হয়নি”।[২০]
– কোরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন
হাদিসে এসেছেঃ
উম্মে সালামাহ রা.থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স.বলেছেন :তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে,
“সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে।অন্য বর্ণনায় আছে কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে”।[২১]
কোরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন।অনেকে বলেছেন :কোরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন,তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন।
ইবনুল কায়্যিম রহ.বলেছেন :
“কোরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কোরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি (ত্যাগ)করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে”।[২২]
যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কোরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কোরবানির পশু জবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।
[১] মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৬/১৯৮৬) পৃঃ১৫৮।
[২] শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো ছাপাঃ ১৩৯৮/১৯৭৮) ৬/২২৮ পৃঃ।
[৩] মির’আতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল মাছাবীহ (লাক্ষ্মৗ ছাপাঃ ১৯৫৮) ২/৩৪৯; ঐ, ( বেনারস ছাপাঃ ১৯৯৫) ৫/৭১ পৃঃ।
[৪] ইবনু মাজাহ, আলবানী- ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৩২; আহমাদ, বায়হাক্বী, হাকেম. দারাকুৎনী, মিরআত (বেনারস) ৫/৭২;নায়লুল আওত্বার ৬/২৭২ পৃঃ।
[৫] মিরআত ৫/৭১, ৭৩ পৃঃ।
[৬] তাফসীরে ইবনে কাছীর (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৮/১৯৮৮) ৩/২৩৪; তাফসীরে কুরতুবী (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৫/১৯৮৫) ১২/৬৫ পৃঃ।
[৭] বায়হাক্বী ( হায়দারাবাদ, ভারতঃ ১৩৫৬ হিঃ ঐ, বৈরুতঃ দারুল মা’রিফাহ, তারিখ বিহীন) ৯/২৬৪-২৬৬; মিরআত ৫/৭২-৭৩; তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/২৩৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২০৮-১০৯ পৃঃ।
[৮] তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত-আলবানী (বৈরুত ছাপাঃ ১৪০৫/১৯৮৫), হা/১৩০৭০; ঐ, মিরআত সহ হা/১৪৮৭, সনদ ‘হাসান’।
[৯] সূরা হজ্বঃ ৩৭
[১০] সূরা হজ্বঃ ৩৪
[১১] মুসলিম-১৯৬৩
[১২] ইবনে মাজা- ৩১৩২, হাদিসটি সহিহ
[১৩] তিরমিজি-১৫৪৬, নাসায়ি- ৪৩৭১, হাদিসটি সহিহ
[১৪] বোখারি- ৯৬৫
[১৫] বোখারি- ৯৮৫
[১৬] বোখারি- ৫৫৬২
[১৭] সূরা হজ্ব : ২৮
[১৮] ফাতহুল বারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫৬১
[১৯] আহমদ- ৪/৮২, হাদিসটি সহিহ
[২০] যাদুল মাআদ, ২য় খন্ড, পৃ-৩১৯
[২১] মুসলিম-১৯৭৭
[২২] আহকামুল উযহিয়্যাহ : ইবনে উসাইমীন। পৃ-৭৭
মন্তব্য করুন