শারঈ ওযর ব্যতীত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর শয্যা গ্রহণ অস্বীকার করা
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
মূল : মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ । অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ-
‘যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বীয় শয্যা গ্রহণ বা দৈহিক মিলনের জন্য আহবান জানায়, কিন্তু স্ত্রী তা অস্বীকার করায় স্বামী তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে রাত কাটায়, তখন ফেরেশতাগণ সকাল পর্যন্ত ঐ স্ত্রীর উপর অভিশাপ দিতে থাকে’।[1]
অনেক মহিলাকেই দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীতে একটু খুনসুটি হলেই স্বামীকে শাস্তি দেয়ার মানসে তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা বন্ধ করে বসে। এতে অনেক রকম ক্ষতি দেখা দেয়। পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। স্বামী দৈহিক তৃপ্তির জন্য অবৈধ পথও বেছে নেয়। অন্য স্ত্রী গ্রহণের চিন্তাও তাকে পেয়ে বসে। এভাবে বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং স্ত্রীর কর্তব্য হবে স্বামী ডাকামাত্রই তার ডাকে সাড়া দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلىَ فِرَاشِهِ فَلْتُجِبْ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى ظَهْرِ قَتَبٍ ‘যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে দৈহিক মিলনের জন্য ডাকবে, তখনই যেন সে তার ডাকে সাড়া দেয়। এমনকি সে জ্বলন্ত উনুনের পাশে থাকলেও’।[2]
স্বামীরও কর্তব্য হবে, স্ত্রী রোগাক্রান্ত, গর্ভবতী কিংবা অন্য কোন অসুবিধায় পতিত হলে তার অবস্থা বিবেচনা করা। এতে করে তাদের মধ্যে সৌহার্দ বজায় থাকবে এবং মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে না।
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩২৪৬।
[2]. যাওয়াইদুল বায্যার ২/১৮১ পৃঃ; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৭।
পুংমৈথুন বা সমকামিতা
অতীতে হযরত লূত (আঃ)-এর জাতি পুংমৈথুনে অভ্যস্ত ছিল। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ- أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِيْ نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ
‘লূতের কথা স্মরণ করুন! যখন তিনি তাঁর কওমকে বললেন, তোমরা নিশ্চয়ই এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউ করেনি, তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছ, তোমরাই তো রাহাজানি করছ, তোমরাই তো ভরা মজলিসে অন্যায় কাজ করছ’ (আনকাবূত ২৮-২৯)।
যেহেতু এই অপরাধ ছিল জঘন্য, অত্যন্ত মারাত্মক ও কদর্যপূর্ণ তাই আল্লাহ তা‘আলা লূত (আঃ)-এর জাতিকে একবারেই চার প্রকার শাস্তি দিয়েছিলেন। এ জাতীয় এতগুলি শাস্তি একবারে অন্য কোন জাতিকে ভোগ করতে হয়নি। ঐ শাস্তিগুলি ছিল- তাদের চক্ষু উৎপাটন, উঁচু জনপদকে নীচু করে দেয়া, অবিরাম কঙ্কর পাত ও হঠাৎ নিনাদের ধ্বনি আগমন।
পুংমৈথুনের শাস্তি হিসাবে ইসলামী শরী‘আতের পন্ডিতগণের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত হ’ল, স্বেচ্ছায় মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে শিরচ্ছেদ করতে হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) মারফূ সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ
‘তোমরা লূতের সম্প্রদায়ের ন্যায় পুংমৈথুনের কাজ কাউকে করতে দেখলে মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত উভয়কেই হত্যা করবে’।[1]
মৈথুন বা সমকামিতার প্রাকৃতিক কুফলও কম নয়। এসব নির্লজ্জ বেহায়াপনার কারণেই আমাদের কালে এমন কিছু রোগ-ব্যাধি মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে যা পূর্বকালে ছিল না। বর্তমান পৃথিবীর মহাত্রাস ঘাতক ব্যাধি এইডস যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এইডসই প্রমাণ করে যে, সমকামিতা রোধে ইসলামের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ যথার্থ হয়েছে।
[1]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৩৫৭৫।
দালালী করা
এমন অনেক লোক আছে যাদের পণ্য কেনার মোটেও ইচ্ছা নেই। কিন্তু অন্য লোকে যাতে ঐ পণ্য বেশী দামে কিনতে উদ্বুদ্ধ হয় সেজন্য পণ্যের পাশে ঘুরাঘুরি করে ও বাড়িয়ে বাড়িয়ে দাম বলতে থাকে। এটাই প্রতারণামূলক দালালী।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَلاَ تَنَاجَشُوا ‘ক্রেতার ভান করে তোমরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিও না’।[1] এটা নিঃসন্দেহে এক শ্রেণীর প্রতারণা। রাসূলুলাহ (ছাঃ) আরও বলেন, اَلْمَكْرُ وَالْخَدِيعَةُ فِي النَّارِ ‘চালবাজী ও ধোঁকাবাজী জাহান্নামে নিয়ে যায়’।[2]
পশু বিক্রয়, নিলামে বিক্রয় ও গাড়ী প্রদর্শনীতে অনেক দালালকে দেখতে পাওয়া যায়, যাদের আয়-রোযগার সবই হারাম। কেননা এই উপার্জনের সাথে নানা রকম অবৈধ উপায় জড়িয়ে আছে। যেমন: প্রতারণামূলক দাম বৃদ্ধি বা মিথ্যা দালালী, ক্রেতার সাথে প্রতারণা, বিক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে পথিমধ্যেই তার পণ্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খরীদ করা ইত্যাদি।
অনেক সময় বিক্রেতারা একে অপরের জন্য দালাল সাজে কিংবা দালাল নিয়োগ করে। তারা ক্রেতার বেশে খরিদ্দারদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে ধোঁকা দেয় ও তাদেরকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করে। যেসব দেশে নিলাম বিক্রয়ের প্রচলন রয়েছে, সেখানেই এরূপ দালালীর প্রবণতা বেশী দেখতে পাওয়া যায়।[3]
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৫০২৮।
[2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২৫।
মন্তব্য করুন