দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

কারাে ধন্যবাদ পাবার আশা করবেন না

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

লেখকঃ ড. আয়িদ আল করনী | অনুবাদঃ ডা. হাফেজ মাওলানা মােহাম্মদ নূর হােছাইন

সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর জিকির (স্মরণ) করার জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাদেরকে এজন্য রিযিক দিয়েছেন যে, তারা তাঁর শুকরিয়া আদায় করবে। এতদসত্ত্বেও অনেকে তাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদাত করছে। অধিকাংশ লােকই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞশীল নয়, কেননা, মানবজাতির মধ্যে অকৃতজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য খুবই জোরালাে। অতএব, আপনি যখন দেখবেন যে, অন্যেরা আপনার করুণাসমূহকে ভুলে যাচ্ছে ও আপনার সদয় আচরণসমূহকে অবজ্ঞা করছে তখন হতাশ হবেন না। কিছু লোেকতাে আপনাকে এমনকি ঘৃণার সাথেও দেখতে পারে এবং আপনি যে তাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন শুধুমাত্র একারণেই আপনাকে শত্রু ভাবতে পারে।

“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে নিজ গুণে সম্পদশালী করেছিলেন, শুধুমাত্র এ কারণ ছাড়া তারা আক্রোশ-পােষণ করার অন্য কোনাে কারণ খুঁজে পায়নি।” [৯-সূরা তাওবা : আয়াত-৭৪]

ইতিহাসের পাতায় এরূপ যে ঘটনা সর্বাপেক্ষা বেশি ঘটে তা হল পিতা-পুত্রের ঘটনা। পিতা-পুত্রকে বড় করে তােলে, প্রতিষ্ঠিত করে, পুত্রের মুখে খাবার তুলে দেয়, তার পােশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করে এবং তাকে উত্তম শিক্ষা দেয়, পিতা রাতকে রাত বিদ্রি অবস্থায় কাটায় যাতে করে তার পুত্র আরামে ঘুমােতে পারে, পুত্রের খাবারের জন্য নিজে না খেয়ে থাকে এবং পুত্রের আরামের জন্য নিজে কঠোর পরিশ্রম করে। আর যখন ছেলে বড় হয়। ও শক্তিশালী হয় তখন পিতাকে অবাধ্যতা, অসম্মান ও অবজ্ঞার মাধ্যমে পুরস্কৃত করে!

সুতরাং আপনি যে ভালাে কাজ করেছেন তার বিনিময় যদি আপনাকে অকৃতজ্ঞতার মাধ্যমে দেয়া হয় তবে আপনি শান্ত থাকুন। একথা জেনে আনন্দিত হবেন যে, যার অধিকারে সীমাহীন সম্পদ আছে তিনিই আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।

একথা বলবেন না যে, অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা থেকে আপনার বিরত থাকা উচিত। বরং আসল কথা হল অকৃতজ্ঞতা পাবার জন্যই দান করুন। কেননা, এ মনােভাব থাকলেই আপনি নিশ্চিতভাবে সফল হবেন। অকৃতজ্ঞ লােকেরা আসলে আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এজন্য আপনি আল্লাহর প্রশংসা করুন যে, সে লােক সীমালংঘনকারী আর আপনি অনুগত বান্দা। একথাও মনে রাখুন যে, দান গ্রহণকারীর চেয়ে দানকারী উত্তম।

“আমরাতাে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তােমাদেরকে খাদ্য খাওয়াই। আমরা তােমাদের নিকট না কোনাে পুরস্কার আশা করি, আর না কোনাে ধন্যবাদ।” [৭৬-সূরা আদ দাহর বা ইনসান : আয়াত-৯]

অনেকেই অন্যের অকৃতজ্ঞতায় মর্মাহত হন, যেন তারা কখনও (নিম্নোক্ত) এই আয়াত বা এমন অন্যান্য আয়াত দেখেনি, আর তা হল –

“আর যখন মানুষকে কোনাে মুসিবত (বিপদ) পেয়ে বসে তখন সে শুয়ে, বসে ও দাঁড়ানাে অবস্থায় আমার নিকট আকুল আবেদন করে, কিন্তু আমি যখন তার থেকে মুসিবত দূর করে দিই তখন সে এমনভাবে চলে যেন সে কখনও তার উপর আপতিত মুসিবতের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করেনি!” [১০-সূরা ইউনুস : আয়াত-১২]

এ কারণেই, যদি আপনি কাউকে উপহারস্বরূপ একটি কলম দেন আর সে এটাকে আপনার জন্য বিদ্রুপের বিষয় বানায় অথবা আপনি যদি কাউকে ভর দিয়ে হাঁটার জন্য একটি লাঠি দেন আর সে এ লাঠি দিয়ে আপনাকে প্রহার করে তবে আপনি রাগান্বিত হবেন না। অধিকাংশ মানুষই তাদের করে এটাই প্রতিপালকের প্রতিই অকৃতজ্ঞ। যেমনটি আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছিলাম। সুতরাং আপনি ও আমি কী ধরনের আচরণ আশা করতে পারি?

উৎসঃ লা তাহযান [হতাশ হবেন না], ক্রমিক নংঃ ৭, পৃষ্ঠা: ৪১ – ৪২

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button