কিয়ামতের আলামত সমূহ (পর্ব-৪)
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
২৪. অধিক বাজার সৃষ্টি হওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল যেখানে-সেখানে বাজার সৃষ্টি হওয়া। ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন অবস্থা হবে যে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দোকান থাকবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَظْهَرَ الْفِتَنُ وَيَكْثُرَ الْكَذِبُ وَيَتَقَارَبَ الأَسْوَاقُ وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ. قِيلَ وَمَا الْهَرْجُ قَالَ : الْقَتْلُ، ‘ক্বিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না ফিৎনা প্রকাশ পাবে, মিথ্যাচার বৃদ্ধি পাবে, ঘনঘন বাজার সৃষ্টি হবে, সময় সংকুচিত হবে এবং হারজ বা হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পাবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল হারজ কি? তিনি বললেন, খুনখারাবী’।[1] এক্ষণে বাজার ঘনঘন হওয়ার ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যেখানে সেখানে বাজার সৃষ্টি হবে। এর আরেকটি অর্থ হ’তে পারে যে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন-লাইন মার্কেটের ব্যাপক উন্নতি। অর্থাৎ পূর্বে বাজারে যেতে যেখানে এক বেলা সময় লাগত, সেখানে এক ঘণ্টায় চলে যাওয়া যায়। আবার বাড়িতে বসে থেকে অন-লাইন বা অফ-লাইনে অর্ডার দিলে অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িতে পণ্য চলে আসে। তাছাড়া বাড়িতে বসে থেকে বাজারের সকল পণ্যের পরিচয় ও মূল্য জানা যায়। অতএব বলা যায়, যেমন ঘনঘন বাজার সৃষ্টি হয়েছে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে’।[2]
২৫. সময়-কাল সংক্ষিপ্ত হওয়া : ক্বিয়ামতের আলামত সময় দ্রুত চলে যাওয়া। সকাল হ’তে না হ’তেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা। অথবা সারাদিন কাজকর্ম করে কাজে বরকত না হওয়া। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ، وَيَنْقُصُ الْعَمَلُ، وَيُلْقَى الشُّحُّ، وَتَظْهَرُ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّمَ هُو؟َ قَالَ : الْقَتْلُ الْقَتْلُ- ‘সময় নিকটতর হ’তে থাকবে, আর আমল কমে যেতে থাকবে, কৃপণতার বিস্তার ঘটবে, ফিৎনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ‘হারজ’ কি? তিনি বললেন, হত্যা, হত্যা’।[3] সময় সংকীর্ণ হওয়া সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَقَارَبَ الزَّمَانُ فَتَكُونُ السَّنَةُ كَالشَّهْرِ وَالشَّهْرُ كَالْجُمُعَةِ وَتَكُونُ الْجُمُعَةُ كَالْيَوْمِ وَيَكُونُ الْيَوْمُ كَالسَّاعَةِ وَتَكُونُ السَّاعَةُ كَالضَّرْمَةِ بِالنَّارِ-
‘যামানা পরস্পর নিকটবর্তী (সংকীর্ণ) না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না। তখন এক বছর হবে এক মাসের মত, এক মাস হবে এক সপ্তাহের মত, এক সপ্তাহ হবে এক দিনের মত, এক দিন হবে এক ঘণ্টার মত এবং এক ঘণ্টা হবে আগুনের একটি স্ফুলিংগের মত’।[4]
এখানে সময় সংকীর্ণ হওয়ার বিষয়টি দু’ভাবে হ’তে পারে। এক. অর্থগত দৃষ্টিতে সময় নিকটবর্তী হওয়া, দুই. অনুভবগতভাবে নিকটবর্তী হওয়া। এক্ষণে অর্থগত দৃষ্টিতে সময় নিকটবর্তী হওয়ার ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম নববী কাযী ইয়ায ও অন্যান্যদের সূত্র ধরে বলেন, সময় সংকীর্ণ হওয়ার অর্থ সময়ে বরকত কমে যাওয়া। পূর্ববর্তী লোকেরা (দ্বীনী বিষয়ে) যে কাজ এক ঘণ্টায় সেরে ফেলত পরবর্তীগণ কয়েক ঘণ্টায়ও তা পারবে না।[5] হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, সত্য হ’ল এর দ্বারা উদ্দেশ্য সবকিছু থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া, এমনকি সময় থেকেও। আর এটি ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত’।[6] তিনি আরো বলেন, আমরা দ্রুত সময় পার হওয়ার বিষয়টি অনুভব করছি। অথচ পূর্বের যুগে এমনটি ছিল না’।[7]
এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং দ্রুতগামী বিমান ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ একে অন্যের কাছাকাছি হয়ে যাবে। কেউ কাউকে দূরে ভাববে না। এর অর্থ বাহ্যিক সংকোচন হ’তে পারে। হ’তে পারে শেষ যামানায় আল্লাহ পাক সময়কে দ্রুত করে দেবেন। আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলে দিবস দীর্ঘ করতে পারেন, ইচ্ছা করলে সংকীর্ণ করতে পারেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে মহা ক্ষমতাবান। কারণ দাজ্জালের আবির্ভাবকালে প্রথম তিনদিন এরকমই হবে। প্রথম দিনটি এক বৎসরের ন্যায়, দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের ন্যায় এবং তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের ন্যায় দীর্ঘ হবে। তদ্রূপ আল্লাহ চাইলে দিবসকে সংকীর্ণও করতে পারেন। কেউ কেউ এখানে মানুষের আয়ু হ্রাস পাওয়াও উদ্দেশ্য করেছেন।
শায়খ বিন বায (রহঃ) ফাৎহুল বারীর পাদটীকায় উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি আধুনিক সড়ক, পরিবহণ ও বিমান আবিষ্কারের ফলে দূর দূরান্তের শহরগুলি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। যাতায়াত ও ভ্রমণের জন্য এখন আর পূর্বের মত অপেক্ষা করতে হয় না। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া যায়। হাদীছে কাছাকাছি হওয়ার অর্থ এভাবেই করা যেতে পারে’।[8] অনুভূতিগতভাবে সংকীর্ণ হওয়ার অর্থ হ’ল, সত্যিকারে দিন-রাত ছোট হয়ে যাওয়া। সুয়ূতী বলেন, ক্বিয়ামত ঘনিয়ে আসলে দিন-রাতের সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে।[9] বর্তমানে বরকত কমে যাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম উন্নতি ও বাস্তবে সময় সংকীর্ণ হওয়া সবগুলোই ঘটেছে।
২৬. মানুষকে প্রহারকারী লোকদের আবির্ভাব হওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে- যালেম শাসকদের আবির্ভাব। যাদের সৈন্যরা সাধারণ মানুষকে চাবুক দ্বারা নির্যাতন করবে। এই আলামতটি বহুকাল পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يُوشِكُ إِنْ طَالَتْ بِكَ مُدَّةٌ أَنْ تَرَى قَوْمًا فِى أَيْدِيهِمْ مِثْلُ أَذْنَابِ الْبَقَرِ يَغْدُونَ فِى غَضَبِ اللهِ وَيَرُوحُونَ فِى سَخَطِ اللهِ ‘অচিরেই দীর্ঘ হায়াত পেলে তুমি দেখতে পাবে এমন এক কওম, যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক। তাদের সকাল হবে আল্লাহর গযবের মধ্যে এবং তাদের সন্ধ্যা হবে আল্লাহর অসন্তুষ্টির মধ্যে’।[10] রাসূল (ছাঃ) বলেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا-
‘জাহান্নামীদের মধ্যে দু’টি এমন দল হবে যাদেরকে আমি দেখিনি। তাদের একদল লোকের হাতে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। যা দিয়ে তারা লোকেদেরকে মারধর করবে। আর দ্বিতীয় দলটি হবে ঐ সমস্ত মহিলারা, যারা কাপড় পরবে অথচ উলঙ্গের ন্যায় দেখা যাবে এবং তারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে, নিজেরাও পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের খোঁপা বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হ’তে পাওয়া যাবে’।[11] ইমাম কুরতুবী বলেন, এই নিন্দিত আচরণগুলো উম্মতের মাঝে ব্যাপকহারে প্রসার লাভ করেছে। বিশেষ করে বাহরিয়ারা ক্ষমতা লাভের পর মিসরের ঘরে ঘরে তারা চাবুক ও লাঠি দ্বারা অন্যায়ভাবে লোকদের পিটায়। যে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) সতর্ক করেছেন।[12]
২৭. বাদ্যযন্ত্র ও গান বাজনার বিস্তৃতি লাভ : বাদ্যযন্ত্র ও গান-বাজনার প্রসার লাভ ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। বর্তমানে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রথমে কুরআন তেলাওয়াত করার পর গান-বাজনা ও নৃত্য শুরু হয়। মুসলমানদের মাঝে এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে, যা ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার বড় প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِى أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ، وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ، يَأْتِيهِمْ يَعْنِى الْفَقِيرَ لِحَاجَةٍ فَيَقُولُوا ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا. فَيُبَيِّتُهُمُ اللهُ وَيَضَعُ الْعَلَمَ، وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ-
‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দিবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন।[13] অন্যত্র তিনি বলেন,
يُمْسَخُ قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي فِي آخِرِ الزَّمَانِ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَمُسْلِمِينَ هُمْ ؟ قَالَ : نَعَمْ، وَيَشْهَدُونَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، وَيَصُومُونَ وَيُصَلُّونَ قِيلَ : فَمَا بَالُهُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: اتَّخَذُوا الْمَعَازِفَ وَالْقَيْنَاتِ، وَالدُّفُوفَ، وَشَرِبُوا هَذِهِ الأَشْرِبَةَ، فَيَأْتُوْا عَلَى شَرَابِهِمْ وَلَهْوِهِمْ، فَأَصْبَحُوا وَقَدْ مُسِخُوا-
‘শেষ যামানায় আমার উম্মতের কিছু লোককে বানর ও শূকরে পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তারা কি মুসলমান হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল, তারা ছিয়াম পালন করবে এবং ছালাত আদায় করবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল তাদের কি অপরাধ হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, তারা বাদ্যযন্ত্র, নর্তকী ও ঢোল-তবলাকে ধারণ করবে ও তারা এই মদ্য পান করবে। অতঃপর তারা মদ্যপান ও খেল-তামাশা অবস্থায় আসবে। আর সকাল করবে আকৃতি বিকৃত অবস্থায়’।[14] তিনি আরো বলেন,
وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَيَبِيتَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِى عَلَى أَشَرٍ وَبَطَرٍ وَلَعِبٍ وَلَهْوٍ فَيُصْبِحُوا قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ بِاسْتِحْلاَلِهِمُ الْمَحَارِمَ وَاتِّخَاذِهِمُ الْقَيْنَاتِ وَشُرْبِهِمُ الْخَمْرَ وَأَكْلِهِمُ الرِّبَا وَلُبْسِهِمُ الْحَرِيرَ-
‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর শপথ! আমার উম্মতের একদল মানুষ রাত্রী যাপন করবে অনিষ্টতা, অহংকার ও খেল-তামাসার উপর। অথচ তারা হারামকে হালাল, গান-বাজনায় মত্ত, মদ্যপান, সূদ ভক্ষণ ও রেশমের কাপড় পরিধান করা হালাল মনে করার অপরাধে সকাল করবে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত হয়ে’।[15] তিনি আরো বলেন,لَيَبِيتَنَّ قَوْمٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى طَعَامٍ وَشَرَابٍ وَلَهْوٍ، وَيُصْبِحُوا قَدْ مُسِخُوا قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ، ‘অবশ্যই এই উম্মতের একটি দল রাত অতিবাহিত করবে খাদ্য, পানীয় ও খেল-তামাসায় মত্ত হয়ে। তারা বানর ও শূকরে রূপান্তরিত অবস্থায় সকাল করবে’।[16]
২৮. গানের সূরে কুরআন তিলাওয়াত করা : গানের সূরে কুরআন তিলাওয়াত করা ক্বিয়ামতের আলামত। সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। তবে গানের সুরে তিলাওয়াত করা পাপ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,حَسِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ، فَإِنَّ الصَّوْتَ الْحَسَنَ يَزِيدُ الْقُرْآنَ حُسْناً، ‘তোমরা কুরআনকে তোমাদের মধুর সুরে সুন্দর করে পড়বে। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়’।[17] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا أَذِنَ اللهُ لِشَىْءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِىٍّ حَسَنِ الصَّوْتِ يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ يَجْهَرُ بِهِ، ‘মহান আল্লাহ এতটা খুশি হন না যতটা খুশি হন সুকণ্ঠের অধিকারী কোন নবীর প্রতি, যিনি সুললিত কণ্ঠে ও সশব্দে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন’।[18] তিনি আরো বলেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ ‘যে ব্যক্তি (তারতীল সহকারে) সুর করে কুরআন পড়ে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[19] কিন্তু কুরআন গানের সুরে তিলাওয়াত করা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,بَادِرُوْا بِالْمَوْتِ سِتًّا، إمْرَةَ السُّفَهَاءِ، وَكَثْرَةَ الشَّرْطِ، وَبَيْعَ الْحُكْمِ، وَاسْتِخْفَافٌ بِالدَّمِ، وَقَطِيعَة الرَّحِم وَنَشْوًا يَتَّخِذُونَ الْقُرْآنَ مَزَامِيرَ، يُقَدِّمُونَهُ لِيُغَنِّيَهُمْ، وَإِنْ كَانَ أَقَلَّهُمْ فِقْهًا. ‘ছয়টি বিষয় আসার পূর্বে মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর। ১. মূর্খদের নেতৃত্ব, ২. অধিকহারে পুলিশ নিয়োগ, ৩. বিচারের ফায়ছালা ক্রয়-বিক্রয়, ৪. রক্তপাতকে হালকা মনে করা, ৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ও ৬. বাদ্যযন্ত্রের সুরে কুরআন তিলাওয়াত করা, গানের সুরে তিলাওয়াতের জন্য তাদের প্রাধান্য দেওয়া যদিও তারা জ্ঞানে স্বল্প’।[20] উল্লেখ্য যে, কুরআন মাজীদকে সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করা শারী‘আতের নির্দেশ। কুরআনকে সুর দিয়ে পড়লে আরো সুন্দর হয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সুমধুর কণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আর তা নিষিদ্ধ নয়, কেননা সৌন্দর্য বর্ধক জিনিস সেই বস্ত্তরই অন্তর্ভুক্ত। ব্যাখ্যাকার আল-মানাবী (রহঃ) বলেন, আসলে উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা তারতীল সহ কুরআন তিলাওয়াতের উপর উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে।[21] যেমন আল্লাহ বলেন,وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا ‘আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কুরআন তিলাওয়াত কর’ (মুযযাম্মিল ৭৩/৪)। অর্থাৎ কুরআন তাজবীদসহ সুমধুর কণ্ঠে তিলাওয়াত কর। কালামুল্লাহকে সুর করে পড়লে মানুষ বিমোহিত হয়। একদা নবী (ছাঃ) আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর তিলাওয়াত শুনে বললেন,لَقَدْ أُوتِيْتَ مِزْمَارًا مِنْ مَزَامِيْرِ آلِ دَاوُدَ، ‘তোমাকে দাঊদ (আঃ)-এর কণ্ঠস্বর দেওয়া হয়েছে’।[22]
২৯. মসজিদকে রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা : ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন অবস্থা হবে যে বড় বড় মসজিদ নির্মাণ করা হবে এবং লোকেরা এর ভিতর দিয়ে অন্যত্র যাতায়াত করবে। অথচ মসজিদকে রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা ইসলামী শরী‘আতে নিষেধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَا تَتَّخِذُوا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا، إِلَّا لِذِكْرٍ أَوْ صَلَاةٍ، ‘তোমরা মসজিদকে ছালাত আদায় ও যিকির-আযকার ব্যতীত রাস্তা হিসাবে গ্রহণ করবে না’।[23] মসজিদকে রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা ক্বিয়ামতের আলামত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مِنِ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يُرَى الْهِلَالُ قُبُلًا، فَيُقَالُ: لِلَيْلَتَيْنِ، وَأَنْ تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا، وَأَنْ يَظْهَرَ مَوْتُ الْفُجَاءَةِ- ‘ক্বিয়ামতের আলামত হ’ল- নতুন চাঁদ বড় আকারে দেখা যাবে। তখন বলা হবে এটি দু’দিনের চাঁদ। আর মসজিদসমূহকে রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা হবে এবং আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে’।[24] তিনি আরো বলেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَمُرَّ الرَّجُلُ فِي طُولِ الْمَسْجِدِ، وَعِرْضِهِ لَا يُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ- ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল- লোকেরা দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় মসজিদের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করবে অথচ তাতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে না’।[25] তবে একান্ত প্রয়োজনে মসজিদের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করা যাবে।[26]
৩০. আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল, আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ক্বিয়ামতের পূর্বে কোন রোগ-ব্যাধি বা কোন কারণ ছাড়াই মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مِنِ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يُرَى الْهِلَالُ قُبُلًا، فَيُقَالُ : لِلَيْلَتَيْنِ، وَأَنْ تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا، وَأَنْ يَظْهَرَ مَوْتُ الْفُجَاءَةِ- ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল নতুন চাঁদ বড় আকারে দেখাবে, তখন বলা হবে এটি দু’দিনের চাঁদ। আর মসজিদ সমূহকে রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা হবে এবং আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে’।[27] অন্যত্র তিনি বলেন, أَمَارَاتِ السَّاعَةِ أَنْ يَظْهَرَ مَوْتُ الْفُجْأَةِ. إن من ‘ক্বিয়ামতের আলামত হ’ল আকস্মিক মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়া’।[28] তিনি আরো বলেন, مِنَ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يَفْشُوَ الْفَالِجُ، وَمَوْتُ الْفَجْأَةِ ‘পক্ষাঘাত রোগের প্রসার ও আকস্মিক মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত’।[29]
উল্লেখ্য, হঠাৎ মৃত্যু ক্বিয়ামতের আলামত হ’লেও তা মুমিনদের জন্য অভিশাপ নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ مَوْتِ الْفَجْأَةِ فَقَالَ : رَاحَةٌ لِلْمُؤْمِنِ وَأَخْذَةُ أَسَفٍ لِلْفَاجِرِ- ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে হঠাৎ মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি মুমিনদের জন্য আরামদায়ক আর পাপীদের জন্য গযবে গ্রেপ্তার স্বরূপ’।[30] আবু কাতাদা ইবনু রিবঈ (রাঃ) বলেন, مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ مُسْتَرِيحٌ، وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْمُسْتَرِيحُ وَالْمُسْتَرَاحُ مِنْهُ قَالَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللهِ، وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وَالْبِلاَدُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ ‘রালূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বললেন, সে শান্তি লাভ করেছে এবং লোকেরাও তার নিকট থেকে শান্তি পেয়েছে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এর অর্থ কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, মুমিন বান্দা দুনিয়ার দুঃখ ও কষ্ট থেকে স্বস্তি লাভ করে এবং পাপী বান্দার মন্দ হ’তে আল্লাহর বান্দা, গাছপালা ও জীবজন্তু স্বস্তি পায়’।[31]
৩১. উম্মতের মধ্যে শিরকের প্রকাশ ও তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া : শিরক একটি মহাপাপ, যা আল্লাহ তা‘আলা তওবাহ ছাড়া ক্ষমা করেন না’ (নিসা ৪/৪৮)। শিরক মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়া ক্বিয়ামতের আলামত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ- ‘ক্বিয়ামত আসবে না, যে পর্যন্ত না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে এবং আমার উম্মতের কিছু গোত্র মূর্তিপূজা করবে’।[32] অন্যত্র তিনি বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ حَوْلَ ذِى الْخَلَصَةِ. وَكَانَتْ صَنَمًا تَعْبُدُهَا دَوْسٌ فِى الْجَاهِلِيَّةِ بِتَبَالَةَ- ‘ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না দাউস গোত্রীয় রমণীদের নিতম্ব যুল-খালাছা মূর্তির চারপাশে আন্দোলিত হবে। যুল-খালাছা একটি মূর্তি ছিল, দাউস গোত্রীয় লোকেরা প্রাক-ইসলামী যুগে তাবালা নামক স্থানে এর পূজা করত’।[33] তিনি আরো বলেন,
لاَ يَذْهَبُ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ حَتَّى تُعْبَدَ اللاَّتُ وَالْعُزَّى. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنْ كُنْتُ لأَظُنُّ حِينَ أَنْزَلَ اللهُ (هُوَ الَّذِى أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ) أَنَّ ذَلِكَ تَامًّا قَالَ : إِنَّهُ سَيَكُوْنُ مِنْ ذَلِكَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ رِيْحًا طَيِّبَةً فَتَوَفَّى كُلَّ مَنْ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيْمَانٍ فَيَبْقَى مَنْ لاَ خَيْرَ فِيهِ فَيَرْجِعُوْنَ إِلَى دِينِ آبَائِهِمْ-
‘রাত দিন খতম হবে না, (ক্বিয়ামত হবে না) যতক্ষণ না লাত ও উযযা দেবতার পূজা (পুনরায় আরম্ভ) করা হয়। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তিনিই সেই সত্তা, যিনি তাঁর রাসূল (মুহাম্মাদ)-কে প্রেরণ করেছেন পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে। যাতে তিনি একে সকল দ্বীনের উপরে বিজয়ী করে দেন। যদিও অংশীবাদীরা এটা পসন্দ করে না’ (ছফ ৬১/০৯)। এ আয়াত নাযিলের পর আমি তো মনে করছিলাম যে, এ ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তা অবশ্যই হবে। তবে যতদিন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন ততদিন পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। অতঃপর তিনি স্বচ্ছ বায়ু প্রবাহিত করবেন। ফলে যাদের হৃদয়ে দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে তাদের প্রত্যেককেই তুলে নেওয়া হবে। অবশেষে যাদের মাঝে কোন কল্যাণ নেই তারাই কেবল বেঁচে থাকবে। তখন তারা পূর্ব পুরুষদের ধর্মে ফিরে যাবে’।[34]
এই শিরক এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে, লোকেরা বুঝতেও পারবে না। নিজের অজান্তেই মানুষ এই মহাপাপে জড়িয়ে পড়বে। সেজন্য রাসূল (ছাঃ) জাতিকে সতর্ক করেছেন। মা‘কেল বিন ইয়াসার (রাঃ) বলেন,
انْطَلَقْتُ مَعَ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ : يَا أَبَا بَكْرٍ، لَلشِّرْكُ فِيكُمْ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَهَلِ الشِّرْكُ إِلاَّ مَنْ جَعَلَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ؟ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَلشِّرْكُ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ، أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى شَيْءٍ إِذَا قُلْتَهُ ذَهَبَ عَنْكَ قَلِيلُهُ وَكَثِيرُهُ؟ قَالَ قُلِ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ.
‘আমি আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে গেলাম। তিনি বলেন, হে আবুবকর! নিশ্চয়ই শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবুবকর (রাঃ) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিব না, যা তুমি বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেন, তুমি বল,اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ، ‘হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই’।[35]
৩২. মসজিদ চাকচিক্যময় করা ও তা নিয়ে গর্ব করা : মসজিদের সৌন্দর্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করা ও এর কারুকার্য নিয়ে অহংকার করা ক্বিয়ামতের আলামত। এ কাজ এখন ব্যাপকহারে চলছে। রাসূল (ছাঃ) এসব করতে নিষেধ করেছেন এবং সে বিষয়ে জাতিকে সতর্ক করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন,نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَتَبَاهَى النَّاسُ في المساجد ‘রাসূল (ছাঃ) মসজিদ নিয়ে গর্ব-অহংকার করতে নিষেধ করেছেন।[36] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا أُمِرْتُ بِتَشْيِيدِ الْمَسَاجِدِ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَتُزَخْرِفُنَّهَا كَمَا زَخْرَفَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى- ‘মসজিদ সমূহকে উচ্চ ও চাকচিক্যময় করে নির্মাণ করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, অবশ্যই তোমরা মসজিদগুলোকে চাকচিক্যময় করবে যেভাবে ইহুদী-খ্রীস্টানরা (গীর্জাকে) চাকচিক্যময় করেছে’।[37] আনাস (রাঃ) বলেন,لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَبْنُونَ الْمَسَاجِدَ يَتَبَاهَوْنَ بِهَا، ثُمَّ لاَ يَعْمُرُونَهَا إِلاَّ قَلِيلاً، ‘লোকদের নিকট এমন সময় আসবে যখন তারা মসজিদ নির্মাণ করবে। তারা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে অথচ তারা একে কমই (ইবাদতের মাধ্যমে) আবাদ রাখবে’। ওমর বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়ে বলেন,أَكِنَّ النَّاسَ مِنَ الْمَطَرِ، وَإِيَّاكَ أَنْ تُحَمِّرَ أَوْ تُصَفِّرَ، فَتَفْتِنَ النَّاسَ، ‘আমি লোকদেরকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে চাই। মসজিদে লাল বা হলুদ রঙ লাগানো থেকে সাবধান থাক, এতে মানুষকে তুমি ফিৎনায় ফেলবে’।[38] তাছাড়া মসজিদ অধিকহারে সৌন্দর্যমন্ডিত করা অপচয়ের শামিল, যা নিষিদ্ধ। মসজিদ চাকচিক্য করা মুসলমানদের ধ্বংসের অন্যতম কারণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إذا زَخْرَفْتُمْ مَساجِدَكُمْ وَحَلَّيْتُمْ مَصاحِفَكُمْ فالدَّمارُ عَلَيْكُم، ‘যখন তোমরা মসজিদসমূহ চাকচিক্যময় করবে এবং তোমাদের কিতাবগুলোকে অলংকিত করবে তখন তোমাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে’।[39] মসজিদকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা ক্বিয়ামতের আলামত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِى الْمَسَاجِدِ، ‘ততদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতদিন না লোকেরা মসজিদ নিয়ে পরস্পরে গর্ব করে।[40] অন্যত্র তিনি বলেন,مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَتَبَاهَى النَّاسُ فِى الْمَسَاجِدِ، ‘মসজিদগুলো নিয়ে পরস্পরে গর্ব করা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত’।[41]
উল্লেখ্য, রাসূল (ছাঃ) ছালাতের স্থানকে যাবতীয় ত্রুটিমুক্ত রাখতে কা‘বা চত্বর থেকে সমস্ত মূর্তি ও ছবি অপসারণ করেছিলেন। মুসলিম উম্মাহর দুর্ভাগ্য হ’ল, তারা আজ সেই ছালাতের স্থানকে বিভিন্নরূপে ছালাতের অনুপযোগী করে তুলছে। পূর্বের মসজিদগুলো ছিল কাঁচা কিন্তু মানুষের ঈমান ছিল পাকা, হৃদয় ছিল তাক্বওয়ায় পরিপূর্ণ। বর্তমানে মসজিদগুলো অত্যাধুনিক টাইলস, গ্লাস, এসি, দামী পাথর ও কার্পেট দ্বারা সজ্জিত করা হচ্ছে, মুছল্লীর পোশাক ও মুছাল্লা হচ্ছে ঝকঝকে। কিন্তু দেহের শ্রেষ্ঠ অংশ অন্তরটা হচ্ছে কলুষিত ও ক্লেদপূর্ণ। তাক্বওয়া ও ঈমানের পরিচর্যা না হয়ে চলছে কেবল বস্ত্তর পরিচর্যা এবং লৌকিকতার প্রতিযোগিতা। অতএব সর্বাগ্রে নিজের হৃদয়কে ঈমান ও তাক্বওয়ার আলো দ্বারা সজ্জিত করতে হবে, একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতার মাধ্যমে স্বচ্ছ ও সুন্দর করতে হবে।
৩৩. মূর্খ ও অজ্ঞদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং তাদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করা : ক্বিয়ামতের পূর্বে সুশিক্ষার হার কমে যাবে। মূর্খদের দ্বারা সমাজ ভরে যাবে। আর এই ধরনের অজ্ঞ ব্যক্তিরাই সমাজের নেতৃত্ব দিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ أَيَّامُ الْهَرْجِ، يَزُولُ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرُ فِيهَاالْجَهْلُ- ‘ক্বিয়ামতের পূর্বে হারজ অর্থাৎ হত্যাকান্ড শুরু হবে। তখন ইল্ম বিলুপ্ত হবে এবং মূর্খতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে’।[42] নিকৃষ্ট মানুষেরা সমাজের নেতা হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدَ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعٍ- ‘যতক্ষণ না নিকৃষ্ট লোকের পুত্র নিকৃষ্টরা পৃথিবীতে ভাগ্যবান হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না’।[43] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِيْنَ وَمِنْ إِمَارَةِ الصِّبْيَانِ. وَقَال لاَ تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى تَصِيرَ لِلُكَعِ بْنِ لُكَعٍ ‘তোমরা আল্লাহর নিকট সত্তরের অধিক আয়ু প্রাপ্তি থেকে আশ্রয় চাও। আরো আশ্রয় চাও বালকদের নেতৃত্ব থেকে। তিনি আরো বলেন, দুনিয়া ধ্বংস হবে না যতক্ষণ না নিকৃষ্ট লোকের সন্তান নিকৃষ্টরা এর নেতৃত্ব দিবে।[44] তিনি আরো বলেন,لَا تَذْهَبُ الْأَيَّامُ وَاللَّيَالِي حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدُ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعَ بْنَ لُكَعٍ ‘দিন ও রাতের পরিসমাপ্তি হবে না যতক্ষণ না নিকৃষ্ট লোকের পুত্র নিকৃষ্টরা পৃথিবীতে ভাগ্যবান হবে। অর্থাৎ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না’।[45] তিনি আরো বলেন, يُوشِكُ أَنْ يَغْلِبَ عَلَى الدُّنْيَا لُكَعُ بْنُ لُكَعٍ وَأَفْضَلُ النَّاسِ مُؤْمِنٌ بَيْنَ كَرِيمَتَيْنِ، ‘অতিসত্তর নিকৃষ্ট লোকের পুত্র নিকৃষ্টরা পৃথিবীতে বিজয়ী হবে। আর সে সময় দু’জন সম্মানী ব্যক্তির মধ্যে মুমিন ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ হবে’।[46] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
سَيَأْتِى عَلَى النَّاسِ سَنَوَاتٌ خَدَّاعَاتٌ يُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ وَيُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ وَيُؤْتَمَنُ فِيهَا الْخَائِنُ وَيُخَوَّنُ فِيهَا الأَمِينُ وَيَنْطِقُ فِيهَا الرُّوَيْبِضَةُ قِيلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ قَالَ الرَّجُلُ التَّافِهُ فِى أَمْرِ الْعَامَّةِ-
‘মানুষের নিকট এমন প্রতারণাপূর্ণ যুগ আসবে, যাতে মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদীরূপে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদীরূপে গণ্য করা হবে। যখন খেয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে এবং আমানতদার আমানতে খেয়ানত করবে। যখন জনসাধারণের ব্যাপারে তুচছ লোক মুখ চালাবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, রুওয়াইবেযাহ কি? তিনি বললেন, তুচ্ছ লোক কর্তৃক জনসাধারণের নেতৃত্ব দেওয়া’।[47]
৩৪. মূর্খ লোকদের নেতৃত্ব দান : সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব মূর্খ লোকদের হাতে চলে যাওয়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। নবী করীম (ছাঃ) কা‘ব বিন ঊজরাকে বলেন,
أَعَاذَكَ اللهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ قَالَ : مَا إِمَارَةُ السُّفَهَاءِ قَالَ :أُمَرَاءُ يَكُونُونَ بَعْدِى لاَ يَقْتَدُونَ بِهَدْيِى وَلاَ يَسْتَنُّونَ بِسُنَّتِى فَمَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَأُولَئِكَ لَيْسُوا مِنِّى وَلَسْتُ مِنْهُمْ-
‘আমি তোমার জন্য আল্লাহর নিকট মূর্খদের নেতৃত্ব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি বললেন, মূর্খদের নেতৃত্ব কি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমার পরে এমন কিছু লোক নেতৃত্বে আসবে, যারা আমার নির্দেশনা দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে না। আমার সুন্নাতকে বাস্তবায়ন করবে না। যারা তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে এবং তাদের অত্যাচারে সহায়তা করবে, এরা আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের দলভুক্ত নই’।[48] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَا عَمَّرَ الْمُسْلِمُ كَانَ خَيْراً لَهُ، قَالَ بَلَى وَلَكِنِّى أَخَافُ سِتًّا إِمَارَةَ السُّفَهَاءِ وَبَيْعَ الْحُكْمِ وَكَثْرَةَ الشُّرَطِ وَقَطِيعَةَ الرَّحِمِ وَنَشَأً يَنْشَئُونَ يَتَّخِذُونَ الْقُرْآنَ مَزَامِيرَ وَسَفْكَ الدَّمِ-
‘মুসলিম যতদিন বেঁচে থাকবে সেটিই তার জন্য কল্যাণকর। তিনি বললেন, হ্যাঁ। কিন্তু ছয়টি বিষয়ের আশঙ্কা করছি। মূর্খদের নেতৃত্ব, বিচার-ফায়ছালা ক্রয়-বিক্রয় করা, পুলিশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, নতুন কিছু সৃষ্টি হওয়া, কুরআনকে বাজনা হিসাবে গ্রহণ করা ও রক্ত প্রবাহিত করা’।[49] তিনি আরো বলেন,مِنَ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ تُرْفَعَ الْأَشْرَارُ وَتُوضَعَ الْأَخْيَارُ، وَيُفْتَحَ الْقَوْلُ وَيُخْزَنَ الْعَمَلُ، وَيُقْرَأَ بِالْقَوْمِ الْمُثَنَّاةُ لَيْسَ فِيهِمْ أَحَدٌ يُنْكِرُهَا قِيلَ: وَمَا الْمُثَنَّاةُ؟ قَالَ: مَا اكْتُتِبَتْ سِوَى كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হ’লে খারাপ লোকদের মর্যাদা দেওয়া হবে, সৎলোকদের অপমান করা হবে, কথার ঝুরি হবে ও আমল কমে যাবে। লোকদের নিকট মুছান্নাত পাঠ করা হবে কিন্তু কেউ বাধা দিবে না। জিজ্ঞেস করা হ’ল মুছান্নাত কি? তিনি বললেন, আল্লাহর কিতাব ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা যে বই লিখা হয়’।[50] তিনি আরো বলেন,فَعَلَيْكُمْ بِالْقُرْآنِ فَبِهِ هُدِيتُمْ، وَبِهِ تُجْزَوْنَ، وَعَنْهُ تُسْأَلُونَ ‘এমন সময় তোমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধরবে, এর দ্বারাই তোমাদের হেদায়াত দেওয়া হয়েছে, এর দ্বারাই তোমরা রিযিক প্রাপ্ত হবে এবং এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে’।[51] [চলবে]
[1]. আহমাদ হা/১০৭৩৫; ইবনু হিববান হা/৬৭১৮; ছহীহাহ হা/২৭৭২।
[2]. হামূদ বিন আব্দুল্লাহ তুওয়াইজেরী, ইত্তিহাফুল জামা‘আত ২/১৯৫-১৯৬।
[3]. বুখারী হা/৭০৬১; মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৩৮৯।
[4]. তিরমিযী হা/২৩৩২; মিশকাত হা/৫৪৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪২২।
[5]. ফাৎহুল বারী ১৩/১৬।
[6]. ঐ।
[7]. ঐ।
[8]. তা‘লীক ফাৎহিল বারী ২৫/৫২২ পৃঃ।
[9]. আল-হাভী লিল ফাতাওয়া ১/৪৪ পৃঃ।
[10]. মুসলিম হা/২৮৫৭; আহমাদ হা/৮০৫৯; মিশকাত হা/৩৫২৩।
[11]. মুসলিম হা/২১১৮; মিশকাত হা/৩৫২৪; ছহীহাহ হা/১৩২৬।
[12]. তাফসীরে কুরতুবী ১৩/১২৪ পৃঃ।
[13]. বুখারী হা/৫৫৯০; মিশকাত হা/৫৩৪৩; ছহীহাহ হা/৯১।
[14]. ইত্তিহাফ হা/৭৫৪৮; হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/১১৯।
[15]. আহমাদ হা/২২৮৪২; ছহীহুত তারগীব হা/১৮৬৪,২৩৭৭।
[16]. তাবারাণী ছাগীর হা/১৬৮; ছহীহাহ হা/১৬০৪।
[17]. আবূদাঊদ হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/২১৯৯, ২২০৮; ছহীহাহ হা/৭৭১।
[18]. মুসলিম হা/৭৯২; আবূদাঊদ হা/১৪৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫২৫।
[19]. বুখারী হা/৭৫২৭; মিশকাত হা/২১৯৪।
[20]. আহমাদ হা/১৬০৮৩; ছহীহাহ হা/৯৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮১২।
[21]. ফায়যুল কাদীর ৪/৬৮, ৪৫৭৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[22]. বুখারী হা/৫০৪৮; মুসলিম হা/৭৯৩; মিশকাত হা/৬১৯৪।
[23]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৩১; ছহীহাহ হা/১০০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭২১৫।
[24]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৯৩৭৬; মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪৯৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৯৯; ছহীহাহ হা/২২৯২।
[25]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৩২৬; ছহীহাহ হা/৬৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৯৬।
[26]. ফাৎহুল বারী ১/৫৪৭।
[27]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৯৩৭৬; মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪৯৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৯৯; ছহীহাহ হা/২২৯২।
[28]. তাবারাণী আওসাত্ব ও ছগীর, ছহীহাহ হা/২২৯২।
[29]. ছহীহাহ হা/২২৯২।
[30]. আহমাদ হা/১৭৯৫৪; আবূদাঊদ হা/৩১১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৩১। হাদীছের প্রথমাংশকে আলবানী যঈফ বলেছেন। তবে মাওকূফ হিসাবে ছহীহ। তাছাড়া উক্ত অংশের সমর্থনে ছহীহ হাদীছ রয়েছে।
[31]. বুখারী হা/৬৫১২; মুসলিম হা/৯৫০; মিশকাত হা/১৬০৩।
[32]. হাকেম হা/৮৩৯০; আবূদাঊদ ৪২৫২; তিরমিযী হা/২২১৯; মিশকাত হা/৫৪০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪১৮।
[33]. বুখারী হা/৭১১৬; মুসলিম হা/২৯০৬; মিশকাত হা/৫৫১৮।
[34]. মুসলিম হা/২৯০৭; ছহীহাহ হা/১।
[35]. বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬; আহমাদ হা/১৯৬২২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৩১।
[36]. ইবনু হিববান হা/১৬১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৮১৬।
[37]. আবূদাঊদ হা/৪৪৮; মিশকাত হা/৭১৮; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/২৫৭।
[38]. বুখারী হা/২/২৭০; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩১৬৩।
[39]. ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৫; ছহীহাহ হা/১৩৫১।
[40]. আবূদাউদ হা/৪৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৭৩৯; মিশকাত হা/৭১৯[ ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪২১।
[41]. নাসাঈ হা/৬৮৯; মিশকাত হা/৭১৯; ছহীহু জামে‘ হা/৫৮৯৫।
[42]. বুখারী হা/৭০৬৬; আহমাদ হা/৪১৮৩।
[43]. তিরমিযী হা/২২০৯; আহমাদ হা/২৩৩৫১; মিশকাত হা/৫৩৬৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৩১।
[44]. আহমাদ হা/১৫৮৬৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১১৯৬০।
[45]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৬২৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১২৪৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৩১।
[46]. আহমাদ হা/২৩৭০১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১২৪২৫; ছহীহাহ হা/১৫০৫।
[47]. আহমাদ হা/৭৯১২; ইবনে মাজাহ হা/৪০৩৬; হাকেম হা/৮৪৩৯; ছহীহুল জামে হা/৩৬৫০।
[48]. হাকেম হা/২৬৪; আহমাদ হা/১৪১৮১; ইবনু হিববান হা/৪৫১৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/২২৪২।
[49]. আহমাদ হা/২৪০১৬; মু‘জামুল কাবীর হা/৬০; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৮৯০১; ছহীহাহ হা/৯৬৯।
[50]. ৮৬৬০; ছহীহাহ হা/২৮২১।
[51]. শু‘আবুল ঈমান হা/৩৮৩৪; দারেমী হা/৪৭৬, সনদ জাইয়েদ।
মন্তব্য করুন