শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত
আবু আইয়ুব আনসারি (রাঃ) থেকে বর্ণিত,নবী (ছাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে অতপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা পালন করবে সে যেন যুগভর রোজা রাখল। (মুসলিমঃ ১১৬৪)
এই সওয়াব এই জন্য হবে যে, আল্লাহর অনুগ্রে ১টি কাজের সওয়াব ১০টি করে পাওয়া যায়। অতএব সেই ভিত্তিতে ১ মাসের (৩০ দিনের) রোযা ১০ মাসের (৩০ দিনের) সমান এবং ৬ দিনের রোযা ২ মাসের (৬০ দিনের) সমান; সর্বমোট ১২ মাস (৩৬০ দিন) বা এক বছরের সওয়াব লাভ হয়ে থাকে। আর এই ভাবে সেই রোযাদারের জীবনের প্রত্যেকটি দিন রোযা রাখা হয় ! দয়াময় মহান আল্লাহ বলেন,
مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
অর্থাৎ “ কেউ কোন ভাল কাজ করলে, সে তার ১০ গুন প্রতিদান পাবে”। (সূরাঃ আনআম ১৬০)
এই রোযা বিধিবদ্ধ হওয়ার কারণ আর আল্লাহই ভাল জানেন- তা হল ফরয নামাযের পর সুন্নাতে মুআক্কাদার মত। যা ফরয নামাযের উ পকারিতা ও তার অসম্পূর্নতা ও ত্রুটির কথা রোযাদার জানতে পারুক অথবা না পারুক।
তা ছাড়া রমাযানের ফরয রোযা রাখার পর পুনরায় রোযা রাখা রমাযানের রোযা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ যখন কোন বান্তার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরো নেক আমল করার তওফীক দান করে থাকেন। যেমন উলামাগণ আরো বলে থাকেন,
“ নেক কাজের সওয়াব হল, তার পরে পুনঃ নেক কাজ করা”। (ইতহাফু আহলিল ইসলাম বিআহকামিস সিয়াম ৯২ পৃঃ)
উত্তম হল, উক্ত ছয় রোযাকে লাগাতার রাখা। কেননা, এমনটি করা রমাযানের অভ্যাস অনুযায়ী সহজসাধ্য। আর তাতে হবে বিধিবদ্ধ নেক আমল করার প্রতি সাগ্রহে ধাবমান হওয়ার পরিচয়।
অবশ্যই তা লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা চলে। যেহেতু হাদীসের অর্থ ব্যাপক। কিন্তু শওয়াল মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে তা কাযা করা বিধেয় নয়। যেহেতু তা সুন্নত এবং তার যথাসময় পার হয়ে গেছে। তাতে তা কোন ওযরের ফলে পার হোক অথবা বিনা ওযরে। (ইবনে বায ফাতোয়া ,ইসলামিয়া )
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।
অতপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।
(যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুন। (সূরা আনআম)
হাদিস থেকে যা শিখলামঃ এক. শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল।এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন।
দুই. বান্দার ওপর আল্লাহর কত দয়া যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক বদলা দিবেন।
তিন. কল্যণকাজে প্রতিযোগিতা স্বরুপ এ ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যাতে রোজাড়ুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।
চার. এ রোজা করা যাবে মসের শুরু-শেষ মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিক ও অধারাবহিক যেভাবেই করা হোক না কেন রোজাদার অবশ্যই এর সোয়াবের অধিকারী হবে যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়।
পাঁচ. যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে সে আগে তার কাজা করবে তারপর শাওয়ালের রোজায় ব্রতী হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, “ যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাৎ পুরোপুরি। আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে”। (মুগনিঃ ৪/৪৪০) তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরত্ব রাখে।
ছয়. মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমন- ফরজ সালাতের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা।
সাত. এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ন বাচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়।
সমাপ্ত
মন্তব্য করুন