ব্যভিচারের শাস্তি
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুনাময় অসীম দয়ালু
ব্যভিচারের শাস্তি
কেউ শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে সে যদি অবিবাহিত হয় তা হলে তাকে একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। আর যদি সে বিবাহিত হয় তা হলে তাকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করা হবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
“ ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী ; তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত করতে না পারে যদি তোমরা আল্লাহ তা’আলা ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে”। (নুরঃ ২)
আবূ হুরাইরাহ ও যায়েদ বিন খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তার বলেনঃ
“ জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ) এর নিকট এসে বললো: হে আল্লাহ’র রাসূল! আপনি আমাদের মাঝে কুরআনের ফায়সালা করুন। তার প্রতিপক্ষও দাড়িয়ে বললো: সে সত্য বলছে। আপনি আমাদের মাঝে কুরআনের ফায়সালা করুন। তখন বেদুঈন ব্যক্তিটি বললো: আমার ছেলে এ ব্যক্তির নিকট কামলা খাটতো। ইতিমধ্যে সে এর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে বসে। সবাই আমাকে বললো: তোমার ছেলেটিকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। তখন আমি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নেই একে একটি বান্দি ও একশটি ছাগল দিয়ে। অতঃপর আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো: তোমার ছেলেকে একশটি বেত্রঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। এরপর নবী (ছাঃ) বললেন: আমি তোমাদের মাঝে কুরআনের বিচার করছি, বান্দি ও ছাগলগুলো তোমাকে ফেরত দেয়া হবে এবং তোমর ছেলেকেই একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর হে উনাইস! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও। অতঃপরু তাকে রজম করো। অতএব উনাইস তার নিকট গেলো। অতঃপর তাকে রজম করলো”। (বুখারীঃ ২৬৯৫,২৬৯৬, মুসলিমঃ ১৬৯৭)
উবাদা বিন স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশঅদ করেনঃ
“ তোমরা আমার নিকট থেকে বিধঅনটি সংগ্রহ করে নাও। তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য একটি ব্যবস্থা দিয়েছেন তথা বধান অবর্তীন করেছেন। অবিবাহিত যুবক যুবতির শাস্তি হচ্ছে, একশটি বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে হত্যা”। ( মুসলিমঃ ১৬৯০, আবূ দাঊদঃ ৪৪১৫)
উক্ত হাদীসে বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাকে একশটি বেত্রাঘাত করার কথা থাকলেও তা করতে হবে না। কারণ, রাসূল (ছাঃ) হযরত মা’য়িয ও গা’মিদী মহিলাকে একশটি করে বেত্রাঘাত করেননি। বরং অন্য হাদীসে তাদেরকে শুধু রজম করারই প্রমাণ পাওয়া যায়। আরেকটি কথা হচ্ছে, শরীয়তের সাধারণ নিয়ম এই যে, কারোর উপর কয়েকটি দন্ডবিধি একত্রিত হলে এবং তার মধ্যে হত্যার বিধানও থাকলে তাকে শুধু হত্যাই করা হয়। অন্যগুলো করা হয় না। হযরত উমর ও উসমান (রাঃ) একটির উপরই আমল করেছেন এবং হযরত আলি (রাঃ) তার যুগে কোন এক ব্যক্তিকে রজমো করেছেন এবং বেত্রাঘাতও। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস উবাই বিন কা’ব এবং আবূ যরও এ মত পোষন করেন।
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) মেরেছেন (বেত্রাঘাত করেছেন) ও দেশান্তর করেছেন, আবূ বকর (রাঃ) মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন এবং উমর (রাঃ) দেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন”। (তিরমিযীঃ১৪৩৮)
ইমরান বিন হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
একদা জনৈকা জুহানী মহিলারাসূল (ছাঃ) এর নিকট আসলো। তখন সে ব্যভিচার করে গর্ভবতী। সে বললো: হে আল্লাহর নবী। আমি ব্যভিচারের শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। অতএব আপনি তা আমার উপর প্রয়োগ করুন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তার অভিভাবককে ডেকে বললেন: এর উপর একটু দয়া করো। এ যখন সন্তান প্রসব করবে থখন তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। লোকটি তাই করলো। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) আদেশ করলে তার কাপড় শলীরের সাথে শক্ত করে বেধে দে“য়া হলো। এরপর তাকে রজম করা হলে রাসূল (ছাঃ) কে আশ্চর্যাম্বিতের স্বরে বললেন: আপনি এর জানাযার নামায পড়াচ্ছেন, অথচ সে ব্যভিবচারিণী? রাসূল (ছাঃ) বললেন: সে এমন তাওবা করেছে যা মদীনাবাসীরি সত্তরজনকে বন্টন করে দেয়া হলেও তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তুমি এর চাইতেও কি উৎকৃষ্ট কিছু পেয়েছো যে তার জীবন আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দিয়েছে”। (মুসলিমঃ ১৬৯৬,আবূ দাঊদঃ৪৪৪০)
উমর (রাঃ) তার এক দীর্ঘ খুতবায় বলেনঃ
“ নিশ্চই আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ) কে সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন এং তার উপর কুরআন অবর্তীণ করেছেন। আল্লাহ আ’আলা তার উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তার মধ্য রজমের আয়াতো ছিলো। আমরা তা পড়েছি, মুখস্থ করেছি ও বুঝেছি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) রজম করেছেন ।এবং আমরাও তার ইন্তাকালের পর রজম করেছি। আশঙ্কা হয় বহু কাল পর কেউ বলবে: আমরা কুরআন মাজীদে রজম পাইনি। অতঃপর তারা আল্লাহ তা’আলার পক্ষে থেকে নাযিলকৃত একটি ফরয কাজ ছেড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে”। (বুখারীঃ ৬৮২৯,মুসলিম,১৬৯১)
উমর (রাঃ) যে আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা হচ্ছে:
“ বয়স্ক (বিবাহিত) পুরুষ ও মহিলা যখন ব্যভিচার করে তখন তোমরা তাদেরকে সন্দেহতীতভাবে পাথর মেরে হত্যা করবে। এটি হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শাস্তিস্বরুপ এবং আল্লাহ তা’আলা পরাক্রমশালী ও সুকৌশলী। উক্ত আয়াতটির তিলাওয়াত রহিত হয়েছে। তবে উহার বিধান একনও চালু। কোন অবিবাহিত ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচাররিণী যদি এমন অসুস্থ অথবা দুর্বল হয় যে, তাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একশটি বেত্রাঘাত করা হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে তা হলে তাকে একশটি বেত একত্র করে একবার প্রহার করা হবে।।
সা’ঈদ বিন সা’দ বিন উবাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“আমাদের এলাকায় জনৈক দুর্বল ব্যক্তি বসবাস করতো। হঠাৎ সে জনৈকা বান্দির সাথে ব্যিচার করে বসে। ব্যাপারটি সা’ঈদ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) কে জানালে তিনি বললেন: তাকে তার প্রাপ্র শাস্তি দিয়ে দাও তথা একশটি বেত্রাঘাত করো। উপস্থিত সকলে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! সে তো তা সহ্য করতে পারবে না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন: একটি খেজুর বিহীন একশটি শাখাগুচ্ছ বিশিষ্ট থোকা নিয়ে তাকে তা দিয়ে এক বার মারবে।। অতএব তারা তই করলো”। (আহমাদ ৫/২২২; ইবনু মাজাহ ২৬৬২)
অমুসলিমকেও ইসলামী বিচারধীন রজম করা যেতে পারে। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত তারা বলেন: রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“ যে ব্যক্তি কোন বান্দি অথবা স্বাধীন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করলো তার সন্তান হবে ব্যভিচারের সন্তান। এ মিরাস পাবে না এবং তার মিরাস ও কেউ পাবে না”। (ইবনু মাজাহ ২৭৯৪)
যে কোন ঈমানদার পবিত্র পুরুষের জন্য কোন ব্যভিচারিণী মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। তেমনিভাবে যে কোন ঈমানদার সতী মেয়ের জন্যও কোন ব্যভিচারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
“একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিকা মেয়েকেই বিবাহ করে এবং একজন ব্যভিরিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিকই বিবাহ করে। মু’মিনদের জন্য তা করা হারাম”।(নুরঃ ৩)
দন্ডবিধি সংক্রন্ত কিছু কথাঃ
কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোন হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও পরকালে আল্লাহ তা’আলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“কোন মুসলিমের দোষ লুকিয়ে রাখলে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষও লুকিয়ে রাখবেন”। (তিরমিযী ১৪২৫,ইবনে মাজাহ ২৫৯২)
দন্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখবেঃ
কারোর উপর শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন দন্ডবিধি প্রয়োগ করার সময় তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“কেউ কাউকে (দন্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে) মারলে তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়”। (বুখারী ৫৫৯, মুসলিম ২৬১২)
যে কোন দন্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ করা যাবে নাঃ
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“ মসজিদে কোন দন্ডবিধি কায়েম করা যাবে না”। (ইবনু মাজাহ ২৬৪৮)
দুনিয়াতে করোর উপর শরীয়তের কোন দন্ডবিধিব কায়েম করা হলে তা তার জন্য কাফফারা হয়ে যায় থথা তার অপরাধটি ক্ষমা করে দেয়া হয়। পরকালে এ জন্য তাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।
উবাদা বিন স্ব’মিত (রাঃ) থেকে বর্নিত নবী (ছাঃ) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি (শয়তানের ধোকায় পড়ে) এমন কোন হারাম কাজ করে ফেলেছে যাতে শরীয়তের নির্দিষ্ট কোন দন্ডবিধি রয়েছে। অতঃপর তাকে দুনিয়াতেই সে দন্ড এয়া হয়েছে। তখন তা তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যদি তা তার উপর প্রয়োগ না করা হয় তা হলে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। চায়তো আল্লাহ তা’আলা তাকে পরকালে শাস্তি দিবেন নয়তো বা ক্ষমা করে দিবেন”। (তিরমিযী ১৪৩৯, ইবনু মাজাহ ২৬৫২ |
মন্তব্য করুন