প্রবন্ধ

সমকামের অপকার ও তার ভয়াবহতা

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুনাময় অসীম দয়ালু।

সমকামের অপকার ও তার ভয়াবহতা

সমকামের মধ্যে এতো বেশি ক্ষতি ও অপকার নিহিত রয়েছে যার সঠীক গণনা সত্যিই দুস্কর । যা ব্যক্তি ও সমষ্টি পর্যায়ের এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কীয় । যার কিয়দংশ নিম্নরুপঃ

ধর্মীয় অপকারসমূহ

প্রথমতঃ তা কবীরা গুনাহসমূহের একটি। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক অনেক নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমনকি তা যে কারোর তাওহীদ বিনষ্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর তা এভাবে যে, এ নেশায় পড়ে শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর তা একদা তাকে শির্কপর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়। কখনো ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাড়ায় যে, সে ধীরে ধীরে অশ্লীলতাকে ভালোবেসে ফেলে এবং সাধুতাকে ঘৃণা করে। তখন সে হালাল মনে করেই সহজাভাবে উক্ত কর্মতৎপরতা চালিয়ে যায়। তখন সে কাফির ও মুরতাদ হতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বাস্তবে দেখা যায় যে, যে যত বেশি শির্কের দিকে ধাবিত সে তত বেশি এ কাজে লিপ্ত। তাই লুত্ব সম্পপ্রদায়ের মুশরিকরাই এ কাজে সর্ব প্রথম লিপ্ত হয়। এ কথা সবারই জনা থাকা উচিৎ যে, শির্ক ও ইশক্ব পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর ব্যভিচার ও সমকামের পূ্‌র্ন মজা তখনই অনুভুত হয় যখন এর সাথে ইশক্ব জড়িত হয়। তবে এ চরিত্রের লোকদের ভালোবাসা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা এক স্থান থকে অন্য স্থানে পরিবর্তনশীল। আর তা একমাত্র শিকারের পরিবর্তনের কারণেই হয়ে থাকে।

চারিত্রক অপকারসমূহ

প্রথমতঃ সমকামই হচ্ছে চারিত্রক এক অধঃপতন। স্বভাবিকতা বিরুদ্ধ। এরই কারনে লজ্জা কমে যায়, মুখ হয় অশ্লীল এবং অন্তর হয় কঠিন, অন্যদের প্রতি দয়া মায়া সম্পূ্‌র্নরুপে নিঃশেষ হয়ে একেবারেই তা এক কেন্দ্রিক হয়ে যায়, পুরুষত্ব ও মানবতা বিলুপ্ত হয়, সাহসিকতা, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়। নির্যাতন ও অঘটন ঘটাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে সাহসী করে তোলে। উচ্চ মানষিকতা বিনষ্ট করে দেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে বেকুব বানিয়ে তোলে। তার উপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যায়। তার দিকে মানুষ খিয়ানতের সন্দিহান দৃষ্টতে তাকায়। উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থকে বঞ্চিত হয় এবং উত্তরোত্তর সার্বিক উন্নতি থেকে ক্রমান্বয়ে পিছে পড়ে যায়।

মানসিক অপকারসমূহ

উক্ত কর্মের অনেকগুলো মানসিক অপকার রয়েছে যা নিম্নরুপঃ

১) অস্থিরতা ও ভয়-ভীতি অধিক হারে বেড়ে যায়। কারণ, আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা‌। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকেই ভয় করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে অন্য সকল ভয় থেকে মুক্ত রাখবেন। আর যে ব্যক্তি একমাএ আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করবে না তাকে সকল ভয় এমনিতেই ঘিরে রাখবে । কারণ শাস্তি কাজের অনুরুপ হওয়াই শ্রেয়।

২)মানসিক বিশৃঙ্খলতা ও মনের অশান্তি তার নিকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেক সে ব্যাক্তির জন্য নগদ শাস্তি। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসবে। আর এ সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হবে মনে অশান্তি ততই বেড়ে যাবে। আল্লামাহ ইবনু তাইমিয়্যাহ (রঃ) বলেনঃ এ কথা সবারই জানা উচিৎ যে, কেউ কাউকে ভালোবাসলে (যে ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য নয়) সে প্রিয় ব্যাক্তি অব্যশই তার প্রেমিকের ক্ষতি সাধন করবে এবং এ ভালোবাসা অবশ্যই প্রেমিকের যে কোন ধরনের শাস্তির কারণ হবে।

৩) এ ছাড়াও উক্ত অবৈধ সম্পর্ক অনেক ধরনের মানসিক রোগের জন্ম দেয় যা বর্নাতীত। যার দরুন তাদের জীবনের স্বাদ একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়।

৪) এ জাতীয় লোকেরা একাকী থাকাকেই বেশি ভালোবাসে এবং তাদের একান্ত শিকার অথবা উক্ত কজের সহযোগী ছাড়া অন্য কারোর সাথে এরা একেবারেই মিশতে চায় না।

৫) স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বহীনতা জন্ম নেয়। মেযাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কোন কাজে এরা স্থির সিন্ধান্ত নিতে পারে না।

৬) নিজের মধ্যে এক জাতীয় পাপ বোধ জন্ম নেয় । যার দরুন সে মনে করে সবাই আমার ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে। সুতরাং মানুষের ব্যাপারে তার একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়।

৭)) এ জাতীয় লোকদের মাঝে হরেক রকমের ওয়াসওয়াসা ও অমূলক চিন্তা জন্ম নেয়। এমনকি ধীরে ধীরে সে পাগলের রুপ ধারণ করে।

৮)) এ জাতীয় লোক ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রনহীন যৌন তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সদা সর্বদা সে যৌন চেতনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

৯)) মানসিক টানাপড়েন ও বেপরোয়াভাব এদের মধ্যে জন্ম নেয়।

১০) এদের দেহের কোষসমূহের উপরও এর বিরাট একটাপ্রভাব রয়েছে। যার দরুন এ ধরনের লোকেরা নিজকে পুরুষ বলে মনে করে না। এ কারণেই এদের কাউ কাউকে মহিলাদের সাজ-সজ্জা গ্রহন করতেও দেখা যায়।

শারীরিক অপকারসমূহঃ

শারীরিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছু দিন পর পরই এ সংক্রান্ত নতুন নতুন রোগ আবিস্কার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কোন একটি রোগের উপযুক্ত ওষুধ খুজতে খুজতেই দেখা যায় নতুন আরেকটা রোগ আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এই হচ্ছে রাসূল (ছাঃ) এর ভবিষ্যদ্বণীর সত্যিকার ফলাফল।

আব্দল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত তিন বলেনঃ ; রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ

لَمتَظهَرِ الفَاحِشَةُ فِي قَومٍ قَطُّ، حَتَّى يُعلِنُوا بِهَاإِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوجَاعُوالَّتِي لَم تَكُن مَضَت فِيأسالاَفِهِم الَّذِينَمَضَوا

কোন সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে অবশ্যই মহামারি ও বহু প্রকারের রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্বর্তীদের মধ্যে ছিলো না। (ইবনু মাজাহঃ ৪০৯১)

সুতরাং ব্যাধিগুলো নিম্নরুপঃ

১) নিজ স্ত্রীর প্রতি ধীরে ধীরে অনীহা জন্ম নেয়।

২) লিঙ্গের কোষগুলো একেবারেই ঢিলে হয়ে যায়। যদ্দরুন পেশাব ও বীর্যপাতের উপর কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না।

৩) এ জতীয়লোকেরা টাইফয়েড এবং ডিসেন্ট্রিয়া রোগেও আক্রান্তা হয়।

৪) এরই ফলে সিফিলিস রোগেরও বিশেষ প্রাদুর্ভাব ঘটে। লিঙ্গ অথবা রোগীর হৃদপিন্ড,আঁত, পাকস্থলী, ফুসফুস ও অন্ডকোষের ঘা এর মাধ্যমেই এ রোগের শুরু। এমনকি পরিশেষে তা অঙ্গ বিকৃতি, অন্ধত্ব, জিহ্বা’র ক্যান্সার এবং অঙ্গহানীর বিশেষ কারণও হয়ে দাড়ায়। এটি ডাক্তারদের ধারণায় একটি দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি।

৫) কখনো কখনো এরা গনোরিয়াও আক্রান্ত হয় এবং এ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণত একটু বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে উক্ত রোগে প্রায় পচিশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। বর্তমানে ধারনা করা হয়, এ জাতীয় রোগীর হার বছরে বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি। যার অধিকাংশই যুবক। এ জাতীয় রোগে প্রথমত লিঙ্গে এক ধরনের জ্বলন সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি তাতে বিশ্রী পুঁজও জন্ম নেয় এটি বন্ধ্যত্বের একটি বিশেষ কারণও বটে। এরই কারণে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। উক্ত জ্বলনের কারণে ধীরে ধীরে লিঙ্গাগ্রের ছিদ্রের আশপাশ লাল হয়ে যায়। পরিশেষে সে জ্বলন মুত্রাথলী পর্যন্ত পোছায়। তখন মাথা ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া শরীরের রক্তে পৌছলে তখন হৃদপিন্ডে জ্বলন সৃষ্টি হয়। আরো কত্তো কী?

৬) হেরপেস রোগও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম ব্যাধি। আমিরিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়, হেরপেসের এখনো কোন চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয়নি এবং এটি ক্যান্সার চাইতেও মারাত্মক। শুধু আমিরিকাতেই এ রোগীর হার বছরে দু কোটি এবং ব্রিটেনে এক লক্ষ।

এ রোগ হলে প্রথমে লিঙ্গাগ্রে চুলকানি অনুভূত হয়। অতঃপর চুলকানির জায়গায় লাল ধরনের ফোসকা জাতীয় কিছু দেখা দেয় যা দ্রুত বড় হয়ে পুরো লিঙ্গে এবং যার সাথে সমকাম করা হয় তার গুহ্যদ্বারে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর ব্যথা খুবই চরম এবং এগুলো ফেটে গিয়ে পরিশেষে সে স্থানে জ্বলন ও পুজ সৃষ্টি হয়। কিছু দিন পর রান ও নাভির নীচের অংশও ভীষণভাবে জ্বলতে থাকে। এমনকি তা পুরো শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং তার মগজ পর্যন্তও পৌছায়। এ রোগের শারীরিক ক্ষতির চাইতেও মানসিক ক্ষতি অনেক বেশি।

৭) এইডস ও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম রোগ । এ রোগের ভয়ংঙ্করতা নিম্নের ব্যাপারগুলো থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

ক. এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।

খ. এ রোগ খুবই অস্পষ্ট। যার দরুন এ সংক্রান্ত প্রশ্ন অনেক বেশি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সেগুলোর তেমন আশানুরুপ উত্তর দিতে পারছেনা।

গ. এ রোগের চিকিৎসা একেবারেই নেই অথবা থাকলেও তা অতি স্বল্প মাত্রায়।

ঘ. এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এইডস এর কারণে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুন যে কোন ছোট রোগও তাকে সহজেই দুর্বল করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ধারনা এ রোগের আক্রন্ত শতকরা ৯৫ জনই সমকামী এবং এ রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৯০ জনই তিন বছরের মধ্যে মৃত্য বরণ করে।

৮. এ জাতীয় লোকের “ভালোবাসার ভাইরাস” অথবা “ ভালোবাসার রোগ” নাকম নতুন ব্যাধিতেও কখনো কখনো আক্রান্ত হয় । তবে এটি এইডস চাইতেও অনেক ভয়ানক। এ রোগের তুলনায় এইডস একটি খেলনা মাত্র। এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে ছয় মাস যেতে না যেতেই তার পুরো শরীর ফোসকা ও পুঁজে ভরে যায় এবং ক্ষরণ হতে হতে সে পরিশেষে মারা যায়। সমস্যার ব্যাপারে হলো এই যে, এ রোগটি একেবারেই লুকায়িত থাকে যতক্ষন না যৌন উত্তেজনা প্রশমনের সময় এ সংক্রন্ত হরমোনগুলো উত্তজিত হয়। আর তখনই উক্ত ভাইরাসগুলো নব জীবন পায়। তবে এ রোগ যে কোন পন্থায় সংক্রমন করতে সক্ষম। এমনকি বাতাসের সাথেও।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button