ব্যভিচারের অপকার ও তার ভয়াবহতা
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে,যিনি পরম করুনাময় অসীম দয়ালু।
ব্যভিচারের অপকার ও তার ভয়াবহতা
১. কোন বিবাহিতা মহিলা ব্যভিচার করলে তার স্বামী, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত হয়। জনসমক্ষে তারা মাথা উচু করে কথা বলতে সাহস পায় না।
২. কোন বিবাহিতা মহিলার ব্যভিচারের কারণে যদি তার পেটে সন্তান জন্ম নেয় তা হলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা জীববিত রাখা হবে। যদি তাকে হত্যাই করা হয় তা হলে দুটি গুনাহ একত্রেই করা হলো। আর যদি তাকে জীবিতই রাখা হয় এবং তার স্বমীর সন্তান হিসেবেই তাকে ধরে নেয়া হয় তখন এমন ব্যক্তিকেই পরিবারভুক্ত করা হলো যে মূলতঃ সে পরিবারের সদস্য নয় এবং এম ব্যক্তিকেই ওয়ারিশ বানানো হলো যে মূলতঃ ওয়ারিশ নয়। তেমনিভাবে সে এমন ব্যক্তির সন্তা হিসেবেই পরিচয় বহন করবে যে মূলতঃ তার পিতা নয়। আরো কত্তো কি?
৩. কোন পুরুষ ব্যভিচার করলে তার বংশ পরিচয়ে গরমিল সৃষ্টি হয় এবং একজন পবিত্র মহিলাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।
৪. ব্যভিচারে কারণে ব্যভিচারীর উপর দরিদ্রতা নেমে আসে এবং তার বয়স কমে যায়। তাকে লাঞ্ছিত হতে হয় এবং তারই কারণে সমাজে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়ায়।
৫. ব্যভিচার ব্যভিচারীর অন্তরকে বিক্ষপ্ত করে দেয় এবং ধীরে ধীরে তাকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। তেমনিভাবে তার মধ্যে চিন্তা, ভয়, ও আশক্মার জন্ম দেয়। তাকে ফিরিশতা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং শয়তানের নিকটবর্তী করে দেয়। সুতরাং অঘটনের দিক দিয়ে হত্যার পরেই ব্যভিচারের অবস্থান। যার দরুন বিবাহিতের জন্য এর শাস্তিও জঘন্য হত্যা।
৬. কোন ঈমানদারের জন্য এ সংবাদ শ্রবণ করা সহজ যেম তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ সংবাদ শ্রবণ করা তার জন্য অবশ্যই কঠিন যে, তার স্ত্রী কারোর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে।
সাদ বিন উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“ আমি কাউকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে দেখলে তৎক্ষনাৎই আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেবো। উল্লেখিত উক্তিটি রাসূল (ছাঃ) এর কানে পৌছুতেই তিনি বললেনঃ
“তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো সাদের ত্মসম্মানবোধ তার চেয়েও বেশি এবং আল্লাহ তা’আলার আরো বেশি। যার দরুন তিনি হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতাকে”। (বুখারীঃ ৬৮৪৬, মুসলিমঃ ১৪৯৯)
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেনঃ
“ হে মুহাম্মাদ এর উম্মাতরা! আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি: আল্লাহ তা’আলার চাইতেও আর কারোর আত্মসম্মানবোধ বেশি হতে পারে না। এ কারনেই তার অসহ্য যে, তার কোন বান্দাহ অথবা বান্দি ব্যভিচার করবে”। (বুখারী ১০৪৪: মুসলিমঃ ৯০১)
৭. ব্যভিচারের সময় ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমান সঙ্গে থাকে না। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন: রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“ যখন কোন পরুষ ব্যভিচার করে তখন তার ঈমান তার অন্তর থেকে বের হয়ে মেঘের ন্যায় তার উপরে চলে যায়। অতঃপর যখন সে ব্যভিচাকর্ম সম্পাদন করে ফেলে তখন আবারো তার ঈমান তার নিকট ফিরে আসে”। (আবূ দাঊদঃ ৪৬৯০)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“যে ব্যক্তি ব্যভিচার অথবা মদ পান করলো আল্লাহ তা’আলা তার ঈমান ছিনিয়ে নিবেন যেমনিভাবে কোন মানুষ তার জামা নিজ মাথার উপর থেকে খুলে নেয়”। (হাকিম১/২২ কানুযুল উম্মাল হাদীসঃ ১২৯৯৩)
৮. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমানে ঘাটতি আসে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণীত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“ ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরো তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়”। (আবূ দাঊদঃ ৪৬৮৯, ইবনু মাজাহঃ ৪০০৭)
৯. ব্যভিচারের প্রচার- প্রসার কিয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে: ‘ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে’ মূর্খতা ছেয়ে যাবে, (প্রকাশ্যে) ,দ্য পান করা হবে এবং প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘঠিত হবে”।(বুখারীঃ ৮০: মুসলিমঃ ২৬৭১)
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“ কোন এলাকায় শাস্তির মধ্যে এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোন দন্ডবিধিতে নেই। যা নিম্নরুপঃ
ক.বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি তথা হত্যা খুব ভয়ানকভাবেই প্রয়োগ করা হয়। এমনকি অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি কমানো হলোও তাতে দুটি শাস্তি একত্রেই থেকে যায়। বেত্রাঘাতের মাধ্যমে শারীরিক শাস্তি এবং দেশান্তরের মাধ্যমে মানসিক শাস্তি।
খ. আল্লাহ তা’আলা এর শাস্তি জনসমক্ষে দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। লুক্কায়িতভাবে নয়।
১১১. ব্যভিচার থেকে দ্রুত তাওবা করে খাটি নেক আমল বেশি বেশি করতে না থাকলে ব্যভিচার অথবা ব্যভিচারিণীর খারাপ পরিণামের বিপুল আশঙ্কা থাকে। মৃত্যুর সময় তাদের ঈমান নসীব নাও হতে পারে। কারণ, বার বার গুনাহ করতে থাকা ভালো পরিণামের বিরাট অন্তরায়। বিশেষ করে কঠিন প্রেম ও ভালোবাসার ব্যাপরগুলো এমনই।
১২. কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচারে ব্যাপক প্রচার ও প্রসার তাদের উপর আল্লাহ তা’আলার ব্যাপক আযাব নিপতিত হওয়ার এক বিশেষ কারণ। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“ কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটলে তারা নিজেরাই যেন হাতে ধরে তাদের উপর আল্লাহ তা’আলার আযাব নিপতিত করলো”। (সাহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি, হাদীস ২৪০২)
মাইমূনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“আমার উম্মত সর্বদা কল্যাণের উপর থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে জারজ সন্তানের আধিক্য দেখা না দিবে। যখন তাদের ,মধ্যে জারজ সন্তান বেড়ে যাবে তখনই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ব্যাপক আযাব দিবেন”। (সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি হাদীস ২৪০০)
ব্যভিচারের স্তর বিন্যাসঃ
১. অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার। এতে মেয়েটির সম্মানহানি ও চরিত্র বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো ব্যাপারটি সন্তান হত্যা পর্যন্ত পৌছায়।
২. বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু স্বামীর সম্মানও বিনষ্ট হয়। তার পরিবার ধ্ব সের দ্বারপ্রান্তে পৌছায়। তার বংশ পরিচয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, সন্তানটি তারই বলে বিবেচিত হয়: অথচ সন্তানটি মূলতঃ তার নয়।
যেন এমন ঘটনা ঘটতেই না পারে সে জন্য রাসূল (ছাঃ) স্বামী অনুপস্থিত এমন মহিলার বিছানায় বসা ব্যক্তির এক ভয়ানক রুপ চিত্রায়ন করেছেন।
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“ যে ব্যক্তি স্বামী অনুপস্থিত এমন কোন মহিলার বিছানায় বসে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে কিয়ামতের দিন কোন বিষাক্ত সাপ দংশন করে”। (সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি হাদীস ২৪০৫)
৩. যে কোন প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে বব্যভিচার । এতে উপরন্তু প্রতিবেশির অধিকারো বিনষ্ট হয় এব তাকে চরম কষ্ট দেয়া হয়। মিক্বদাদ বিনআসোয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“সাধারণ দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করা এতো ভয়ঙ্কর নয় যতো ভয়ঙ্কর নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা”। (আহমাদ৬/৮, সাহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি, হাদীস ২৪০২)
রাসূল (ছাঃ) আরো ইরশাদ করেনঃ
“যার অনিষ্ট থকে তার প্রিতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। (মুসলিমঃ ৪৬)
৪. যে প্রতিবেশী নামাযের জন্য অথবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা জাহাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার। বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“মুজাহিদদের স্ত্রীদের সম্মান যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা লোকদের নিকট তাদের মায়েদের সম্মাআনেরমতো। কোন ঘরে বসে থাকা ব্যক্তি যদি কোন মুজাহিদ পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের ত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আমানতের খিয়ানত করে তখন তাকে মুজাহিদ ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ের জন্য কিয়ামতের দিন দাড় করিয়ে রাখা হবে। অতঃপর মুজাহিদ ব্যক্তি ঘরে বসা ব্যক্তির আমল থেকে যা মনে চায় নিয়ে নিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন: তোমাদের কি এমন ধারণা হয় যে, তাকে এতটুকু সুযোগ দেয়ার পরও সে এ প্রয়োজনের দিনে ওর সব আমল না নিয়ে ওর জন্য এতটুকুও রেখে দিবে? (মুসলিম ১৮৯৭)
৫. আত্মীয় মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু আত্মীয়তার বন্ধনো বিনষ্ট করা হয়।
৬. মাহরাম বা বেগানা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে চিরতরের জন্য হারাম) মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু মাহরামের অধিকারো বিনষ্ট করা হয়।
৭. বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তার উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তো তার স্ত্রীই রয়েছে। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।
৮. বুড়ো ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তার উত্তেজনা তো তেমন আর উগ্র নয়।। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেনঃ
“ তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি; বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি এবং অহঙ্কারী গরিব”। (মুসলিমঃ ১০৭)
৯. মর্যাদাপূর্ণ মাস, স্থান ও সময়ের ব্যভিচার। এতে উপরন্তু উক্ত মাস, স্থান ও সময়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয়। কোন ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফললে এবং তা কেউ না জনলে অথবা বিচারকের নিকট তা না পৌছলে তার উচিত হবে যে, সে তা লুকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট কায়মনোবাক্যে খাটি তাওবা করেই নিবে।। অতঃপর বেশি বেশি নেক আমল করবে এবং খারাপ জায়গা ও সাথি থেকে দূরে থঅকবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ
“ তিনিই (আল্লাহ তা’আলা) তার বান্দাহদের তাওবা কবুল করেন এবং সমূহ পাপ মোচন করেন। আর তোমর যা করো তাও তিনি জানেন”। (শূরাঃ ২৫)
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থকে বর্ণীত তিনি বলেন: রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো যা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছেন। এর পরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তা’আলা তা গোপনিই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিবে তার উপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার বিধান প্রয়োগ করবো”। (হাকিম ৪/২৭২)
উক্ত কারণেই হযরত মা’য়িয বিন মা’লিক (রাঃ) যখন রাসূল (ছাঃ) এর নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল (ছাঃ) তার প্রতি এতটুকুও ভ্রুক্ষেপ করেননি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বলেন; হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করছো। কারণ, এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তা’আলার নিকট খাটি তাওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেনঃ
“ রাসূল (ছাঃ) এর নিকট জনৈক মুসলিম আসলো। তখনো তিনি মসজিদে। অতঃপর সে রাসূল (ছাঃ) কে ডেকে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল (ছাঃ) তার প্রতি কোন রুপ ভ্রুক্ষেপ না করে অন্য দিকে তার চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। সে রাসূল (ছাঃ) এর চেহারা বরাবর এসে আবারো বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল (ছাঃ) আবারো তার প্রতি কোন রুপ ভ্রক্ষেপ না করে অন্য দিকে তার চেহারা মুববারক মুড়িয়ে নিলেন। এমন কি সে উক্ত স্বীকারোক্তি চার চার বার করলো। যখন সে নিজের উপর ব্যভিচারে সাক্ষ্য চার চার বার দিয়েছে তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি পাগল? সে বললো: জী হ্যা। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) সাহাবাদেরকে বললেন: তোমরা একে নিয়ে যাও এবং রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করো। (বুখারীঃ ৫২৭১; মুসলিমঃ ১৬৯)
বুরাইদাহ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) হযরত মা’য়িয বিন মালিক (রাঃ) কে বলেছিলেঃ
“ আহা! তুমি ফিরে যাও। অতঃপর আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা চাও এবং তার নিকট তাওবা করে নাও”। (মুসলিমঃ ১৬৯৫)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“ যখন মা’য়িয বিন মালিক (রাঃ) নবী (ছাঃ) এর নিকট আসলো তখন তিনি তাকে বললেন: হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করছো। সে বললো না, হে আল্লাহর রাসূল!(বুখারীঃ ৬৮২৪)
তবে বিচারকের নিকট ব্যাপারটি (সাক্ষ্য সবুতের মাধ্যমে) পৌছুলে অবশ্যই তাকে বিচার করতে হবে।। তখন আর কারোর ক্ষমার ও সুপারিশের সুযোগ থাকে না। এ কারণেই রাসূল (ছাঃ) সাফওয়ান বিন উমাইয়াহকে চোরের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে তাকে বললেনঃ
“ আমার নিকট আসার পূর্ববেই কেন তা করলে না”। (আবূ দাঊদঃ ৪৩৯৪; ইবনু মাজাহঃ ২৬৪৪)
তেমনিভাবে উসামাহ (রাঃ) তাকে অত্যন্ত রাগতস্বরে বললেনঃ
“ তুমি কি আল্লাহ তা’আলার দন্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করতে আসলে?। (বুখারীঃ ৬৭৮৮, মুসলিমঃ ১৬৮৮)
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেনঃ
“ তোমরা দন্ডবিধি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো একে অপরকে ক্ষমা করো। কারণ, আমার নিকট এর কোন একটি পৌছুলে তা প্রয়োগ করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে যাবে”। (আবূ দাঊদঃ ৪৩৭৬)
শুধুমাত্র তিনটি পদ্ধতিতেই কারোর উপর ব্যভিচারে দোষ প্রমাণিত হয়। যা নিম্নরুপঃ
১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারাক্তি করলে। কারণ, জুহাইনী মহিলাও উনাইস (রাঃ) এর রজমকৃত মহিলা ব্যভিচারে স্বীকারোক্তি একবারই করেছিলো। অন্য দিকে হযরত মা’য়িয বিন মালিক (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) এর নিকট চার চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিলো। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদীসটির বর্ণনাসমূহ মুযতারিব তথা এক কথার নয়। কোন কোন বর্ণনায় চার চারবারের কথা। কোন কোন বর্ণনায় তিন তিন ববারের কথা। আরার কোন কোন বর্ণনায় দু’ দু বারের কথাও উল্লেখ রয়েছে। তবুও চার চারবার স্বীকারোক্তি নেয়াই সবর্বোত্তম। কারণ. হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। যা বার বার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। আর এ কথা সবারই জনা যে, ইসলামী দন্ডবিধি যে কোন যুক্তি সঙ্গত সন্দেহ কিংবা অজুহাতে কারণের রহিত হয়। যা হযরত উমর আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এবং অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) থেকেও বর্ণীত। আল্লামা ইবনুল মুনযির (রঃ) এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের ঐক্যমত্যেরও দাবি করেছেন। তেমনিভাবে চার চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তা’আলার নিকট খাটি তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হয়। যা একান্তভাবেই কাম্য।
তবে স্বীকারক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুষ্পষ্ট উল্লেখ এবং দন্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির উপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তার স্বীকারোক্তি পরিহার করে নেয় তা হলে তার কথাই তখন গ্রহনযোগ্য হবে। তেমনিভাবে স্বীকারকারী জ্ঞানসম্পন্নও হতে হবে।
২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার চার জন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে, তারা সত্যিকারার্থে ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গমকর্ম স্বচক্ষে দেখেছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِن نِّسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنكُمْ
“ তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার চার জন সাক্ষী সংগ্রহ করো”। (নিসাঃ ১৫)
৩. কোন মহিলা গর্ভবতী হলে, অথচ তার স্বমী নেই। উমার (রাঃ) তার যুগে এমন একটি বিচারে এজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যে কোন মহিলার উপর দন্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে, গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষনের কারণেও হতে পারে। এমনকি মেয়েটি গভির নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তার সঙ্গে উক্ত ব্যভিচার কর্মটি সংঘটিত হতে। তাই হযরত উমর (রাঃ) তার যুগেই শেষোক্ত দুটি অজুহাতে দু জন মহিলাকে শান্তি দেননি। তবে কোন মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, অথচ তার স্বমী নেই এবং সে এমন কোন যুক্তিসঙ্গত অজুহাতও দেখাচ্ছে না যার দরুন দন্ডবিধি রহিত হয় তখন তার উপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে। উমার (রাঃ) তার এক দীর্ঘ খুতবায় বলেনঃ
“ নিশ্চয়ই রজম আল্লাহ তা’আলার বিধানে এমন পুরুষ ও মহিলার জন্যই নির্ধারিত যারা ব্যভিচর করেছে, অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সাথে সম্মখ পথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী স্ত্রী উভয় জনই তখন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধিন যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী প্রমান মিলে যায় অথবা মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়”। (বুখারীঃ ৬৮২৯ মুসলিমঃ ১৬৯১)
মন্তব্য করুন