অনর্থক বিষয়ে নাক গলাবেন না
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
লেখক: শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-আরিফী | অনুবাদক: কাজী মুহাম্মদ হানিফ
‘অনর্থক বিষয় পরিহার করা ইসলামের সৌন্দর্য। রাসূল (সাঃ) এর মুখ থেকে নিসৃত কত চমৎকার বাণী! অনেক অপদার্থ ব্যক্তি আছে যারা অনর্থক বিষয়ে নাক গলিয়ে আপনাকে বিব্রত করবে। মনে করুন আপনার হাতে একটি নতুন ঘড়ি। এটা দেখামাত্রই বিভিন্ন প্রশ্ন করে আপনাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে।
আরোও পড়ুন⇒তীব্র নিন্দা ও অপ্রীতিকর সমালােচনা যেভাবে নিবেন
: ভাই! ঘড়িটি কত দিয়ে কিনলেন?’
: এটা আমি উপহারস্বরূপ পেয়েছি। আপনি হয়তাে উত্তরে এমন কিছু বললেন।
: আচ্ছা! কে উপহার দিল?
: ‘আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে।
: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, না এলাকার বন্ধু, নাকি অন্য কোথাকার?
: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের।
: কী উপলক্ষে উপহার দিল? ‘এমনিই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে….’।
উপলক্ষটা কী? কোনাে সাফল্যের কারণে, নাকি ভ্রমণের সময়…, নাকি…? এভাবে তুচ্ছ কোনাে বিষয়ে আপনাকে আদালতের সাক্ষীর মতাে জেরা করতে থাকবে। আপনার হয়তাে অবশ্যই তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করবে, দয়া করে অনর্থক বিষয়ে নাক গলাবেন না। বিশেষ করে জনাকীর্ণ কোনাে আসরে এ ধরনের অবিরাম ও অর্থহীন জেরা নিশ্চয় আপনাকে ব্ৰিত করে।
আরোও পড়ুন⇒কারাে ধন্যবাদ পাবার আশা করবেন না
আমি একবার মাগরিব নামাযের পর সহকর্মীদের সঙ্গে এক জায়গায় বসে ছিলাম। হঠাৎ একজনের মােবাইল বেজে উঠল। সে আমার পাশেই বসে ছিল। রিসিভ করে কে?’ বলতেই অপর পাশ থেকে তার স্ত্রীর ঝাঁঝালাে কণ্ঠস্বর ভেসে এলাে, ‘গাধা! তুই কই? মহিলা বেশ জোরে কথা বলছিল। এ কারণে আমি তাদের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিলাম। কথাবার্তায় মনে হলাে, তার স্ত্রীকে মাগরিবের পর শ্বশুরালয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনাে সে আমাদের সঙ্গে বসে আছে। স্বামী বেচারা গালি হজম করে শান্তস্বরে বললাে, “আচ্ছা, আল্লাহ তােমাকে ভাল রাখুন স্ত্রীর রাগ যেন আরাে বেড়ে গেল। সে গলার স্বর আরাে উঁচিয়ে জবাব দিল, ‘আল্লাহ তােকে ধ্বংস করুক! আমি অপেক্ষায় বসে আছি আর তুই তাের বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত! তুই একটা বলদ!
আরোও পড়ুন⇒স্বপ্নভঙ্গ
স্বামী বললাে, “আল্লাহ তােমার প্রতি সম্ভষ্ট হােন! আমি এশার পরই আসছি। আমি দেখলাম, স্ত্রীর কথার সঙ্গে তার কথার কোনাে মিল নেই। আমি বুঝলাম, সে অনেক বুদ্ধিমান। গোয়ারের সাথে গোয়ার্তুমি করে নিজের শান্তি নষ্ট করে নি। আমি উপস্থিত লােকদের দিকে তাকাতে লাগলাম। আমার মনে হয়েছিল তাদের কেউ হয়তাে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনার সঙ্গে কে কথা বললাে? সে কী বললাে? কথােপকথনের পর আপনার চেহারা এমন বিবর্ণ হয়ে গেল কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি, কেউ এ ব্যাপারে নাক গলায়নি।
কোনাে রােগী দেখতে গিয়ে আপনি যখন তাকে তার রােগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তখন রােগী হয়তাে এভাবে একটা উত্তর দেয় যে, সামান্য রােগ। তেমন কিছু না। সে হয়তাে এ জাতীয় অস্পষ্ট উত্তর দিয়ে মুক্ত হতে চায়। আপনি তখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করে তাকে বিরক্ত করবেন না। বেয়াদবী মাফ করবেন, আসলে আপনার রােগটি কী? একটু নির্দিষ্ট করে বলুন। এভাবে প্রশ্ন করে রােগিকে কষ্ট দেয়ার কী অধিকার আছে আপনার? অনর্থক বিষয় পরিহার করা কত সুন্দর! । আপনি কি চান রােগি বলুক, ‘আমি অর্শ রােগে আক্রান্ত। কিংবা আমার গুহ্যদ্বারে ক্ষত হয়েছে। যখন রােগি কোনাে বিষয়ে অস্পষ্ট জবাব দেবে তখন তার সঙ্গে সে বিষয়ে কথা দীর্ঘ করবেন না।
আমার কথার অর্থ এটা নয় যে, রােগিকে তার রােগ সম্পর্কে জিজ্ঞেসই করা যাবে না; বরং আমার উদ্দেশ্য হলাে, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে যেন বাড়াবাড়ি না করা হয়। তেমনই শত শত মানুষের সামনে কোনাে ছাত্রকে ডেকে উচ্চৈঃস্বরে এরূপ জিজ্ঞেস করাও ঠিক নয়-
: ‘আহমদ! তুমি কি পাশ করেছ?
: ‘হ্যা, পাশ করেছি।’ আহমদ জবাব দিল।
: ‘তােমার গড় নম্বর কত? ক্লাসে তােমার রােল নম্বর কত?
আপনি যদি আন্তরিকভাবেই তার খোঁজ খবর নিতে চান, তাহলে তাকে একান্তে ডেকে প্রশ্ন করুন। তাছাড়া তােমার গড় নম্বর কত?’ ‘কেন আরাে ভাল ফলাফল করতে পারলে না?’ ‘কেন তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওনি? ইত্যাদি’ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এধরনের প্রশ্ন করার কোনাে দরকার নেই। আপনি যদি তার সম্পর্কে জানতেই চান তাহলে তাকে নিয়ে একপাশে দাঁড়ান। তার সঙ্গে একান্তে কথা বলে জানতে চেষ্টা করুন। তার দোষ-ত্রুটি মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেয়া তাে সমীচীন নয়।
সাবধান! তিলকে তাল করবেন না। কোনাে বিষয়কে তার প্রকৃত আকার থেকে বড় করে দেখাবেন না। কিছুদিন আগে আমি মদিনায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বেশ কয়েকটি বক্তৃতার প্রােগ্রাম ছিল। আমার সাথে আমার দুই ছেলে আবদুর রহমান এবং ইবরাহীম ছিল। সেখানে জনৈক যুবক আমার ছেলেদেরকে তাদের হেফজখানায় অথবা কোনাে গ্রীষ্মকালীন বিনােদন কেন্দ্রে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে চাইল। আসরের পর যাবে আবার এশার পরে চলে আসবে। আমি তাকে অনুমতি দিলাম । আব্দুর রহমানের বয়স তখন দশ বছর। আমি আশঙ্কা করছিলাম যুবকটি হয়তাে তাকে অনর্থক ও অপ্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করবে। যেমন: তােমার আম্মুর নাম কী? “তােমাদের বাড়ি কোথায়? তােমরা কয় ভাই?’ ‘তােমার আব্লু তােমাকে প্রতিদিন কত টাকা দেন?’ ইত্যাদি, তাই আমি আবদুর রহমানকে বললাম, বাবা! তােমাকে সে কোনাে অপ্রয়ােজনীয় প্রশ্ন করলে তুমি তাকে বলে দিবে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, অনর্থক কাজ পরিহার করা মুসলমানের মহৎ গুণ।’ আমি বারবার তাকে হাদিসটি বললাম যাতে তার মুখস্থ হয়ে যায়।
আবদুর রহমান ও তার ভাই যুবকটির সাথে গাড়িতে উঠল। আব্দুর রহমান দৃঢ়ভাবে গম্ভীর হয়ে বসে রইল। যুবকটি কোমলস্বরে বললাে, আব্দুর রহমান! আল্লাহ তােমাকে দীর্ঘজীবী করুন!’ আব্দুর রহমান দৃঢ়তার সঙ্গে উত্তর দিল, ‘আল্লাহ আপনাকেও দীর্ঘজীবী করুন! যুবক বেচারা পরিবেশটাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে চাচ্ছিলাে। তাই সে বললাে, “আজ কি তােমার আব্দুর বক্তৃতার প্রােগ্রাম আছে? আবদুর রহমান হাদিসটি স্মরণ করার চেষ্টা করলাে। কিন্তু সে পারল না। তবে সে চিৎকার করে বলে উঠল, “আপনি অপ্রয়ােজনীয় বিষয়ে নাক গলাবেন না! যুবকটি বললাে, না, না, আমি তাে কেবল শায়খের প্রােগ্রামে উপস্থিত হওয়ার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেছি।’ আবদুর রহমান ভাবল, যুবকটি হয়তাে তার সাথে চালাকি করছে।
তাই সে পুনরায় বললাে, আপনি অপ্রয়ােজনীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। যুবকটি বললাে, আবদুর রহমান! আমি দুঃখিত! আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম… । আবদুর রহমান যুবককে শেষ করতে না দিয়েই চিৎকার করে বলে উঠল, না! আপনি অনর্থক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। ফিরে আসা পর্যন্ত তারা এরূপ আচরণ করছিল! ফেরার পর আবদুর রহমান আমাকে পুরাে ঘটনাটি গর্বভরে শােনাল। তার কথা শুনে আমি হাসলাম। তাকে বিষয়টি পুনরায় বুঝিয়ে দিলাম। আসলে সে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেছিল।
কর্মশালা… অনধিকার চর্চা থেকে বিরত থাকার অনুশীলন শুরুতে খুবই কষ্টকর মনে হলেও এর পরিণাম অনেক আনন্দদায়ক।
উৎসঃ Enjoy Your Life (Bangla Version) , অধ্যায়ঃ ২৯, পৃষ্ঠা: ১৯৩ – ১৯৬
মন্তব্য করুন