প্রবন্ধ

ইবাদতের স্বাদ বৃদ্ধির উপায় সমূহ

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

ইবাদতের স্বাদ বৃদ্ধির উপায় সমূহ

(১) নেকীর কাজে প্রতিযোগিতা করা :

আল্লাহ বলেন,سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِيْنَ آمَنُوا بِاللهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ- ‘তোমরা প্রতিযোগিতা কর তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে। যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার ন্যায়। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে ঐসব লোকের জন্য, যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্ল­াহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর। এটা আল্ল­াহর অনুগ্রহ। তিনি এটা দান করেন, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। বস্ত্ততঃ আল্ল­াহ মহান কৃপার অধিকারী’ (হাদীদ ৫৭/২১)। এর অর্থ নেকীর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা। যা আল্লাহর ক্ষমাকে ওয়াজিব করে (কুরতুবী)

(২) নেকীর কাজ দ্রুত করা :

কোন সৎকর্মের সুযোগ এলেই সাথে সাথে তাতে অংশগ্রহণ করা সত্যিকার মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন,وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য’ (আলে ইমরান ৩/১৩৩)। এ কারণেই আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়কে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে।[1] জুম‘আর আযানের সাথে সাথে দ্রুত মসজিদে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে (জুম‘আ ৬২/৯)

ছাহাবায়ে কেরাম দান-ছাদাক্বা ও জিহাদে অংশগ্রহণে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করেছেন। এ বিষয়ে ওহোদ যুদ্ধ থেকে বছরের নীচে বয়স হওয়ার কারণে বাদ পড়া যতজন তরুণের আকুতি এবং ১৫ বছর বয়স না হওয়া সত্ত্বেও রাফে‘ বিন খাদীজ ও সমুরা বিন জুনদুবকে নেওয়ার কাহিনী আজও মুমিনের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। সেই সাথে তাবুকের যুদ্ধে বাহনের অভাবে যেতে না পারা ছাহাবীগণ, যারা ইতিহাসে ‘ক্রন্দনকারীগণ’ নামে খ্যাত, তাদের আকুলিভরা কাহিনী সকল যুগের আল্লাহভীরু মুমিনদের পাথেয় হয়ে থাকবে।

(৩) নেকীর কাজে কষ্ট স্বীকার করা :

আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন,فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا، إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا، فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ، وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ- ‘অতঃপর নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অতএব যখন অবসর পাও, ইবাদতের কষ্টে রত হও এবং তোমার প্রভুর দিকে রুজূ হও’ (শরহ  ৯৪/৫-৮)। কষ্টের সাথে পুর্ণভাবে ওযূ করা, এশা ও ফজরের জামা‘আতে যোগদান করা, শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া, কষ্টের সময় ও সচ্ছলতার সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে হাদীছে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে। এভাবে যারা আল্লাহর পথে কষ্ট করে, আল্লাহ তাদেরকে দ্রুত সরল পথ প্রদর্শন করেন। যেমন তিনি বলেন,وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ- ‘পক্ষান্তরে যারা আমাদের পথে প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে অবশ্যই আমরা আমাদের পথ সমূহের দিকে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’ (আনকাবূত ২৯/৬৯)

(৪) নফল ইবাদত বেশী বেশী করা :

আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন,وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا ‘আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন’ (ইসরা ১৭/৭৯)। শুধু তাই নয়, তাঁর সাথীরাও একইভাবে নফল ইবাদত করতেন (মুযযাম্মিল ৭৩/২০)

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরয করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর অন্য কিছু আমার কাছে নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই…।[2] সেকারণ কোন সংকটে পড়লেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নফল ছালাতে লিপ্ত হতেন।[3]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ: كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يَبْصُرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ… ‘বান্দা নফল ইবাদত সমূহের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে  সে শোনে, চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে, পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে। তখন সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, অবশ্যই আমি তাকে তা দান করি। যদি সে আমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করি’…।[4]

(৫) কুরআন অনুধাবন করা :

যেকোন অবস্থায় কুরআন হ’ল মুমিনের জন্য শিফা বা আরোগ্য (ইসরা ১৭/৮২)। তিনি বলেন,أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا ‘তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলি তালাবদ্ধ?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)। কুরআনের আযাব বা রহমতের আয়াত আসলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ভয়ে কাঁদতেন ও খুশীতে দো‘আ পড়তেন’।[5] যিনি যাকে ভালবাসেন, তিনি তার কথা শুনতে ভালবাসেন। যিনি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসেন, তিনি অবশ্যই কুরআন ও হাদীছ শুনতে ও বুঝতে ভালবাসবেন। যিনি এগুলি বুঝেন, স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূল যেন তার সাথে কথা বলেন। এই অনুধাবন নিয়ে যিনি কুরআন-হাদীছ পাঠ করেন, তিনি যে স্বাদ পান, তা তুলনাহীন।

(৬) পাপের নিকটবর্তী না হওয়া :

আল্লাহ বলেন,قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ‘তুমি বল, এস আমি তোমাদেরকে ঐ বিষয়গুলো পাঠ করে শুনাই যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর হারাম করেছেন। আর তা হ’ল এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না। আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে  জীবিকা প্রদান করে থাকি। প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হবে না। ন্যায্য কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। এসব বিষয় তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা অনুধাবন কর’ (আন‘আম ৬/১৫১)। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আল্লাহ وَلَا تَقْرَبُوا ‘তোমরা নিকটবর্তী হয়ো না’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। কেননা পাপের নিকটবর্তী না হ’লে কেউ পাপ করতে পারে না। আর যেসব কাজ পাপের নিকটবর্তী করে, তা থেকে দূরে থাকলে কেউ পাপ করার সুযোগই পাবে না। যেমন হাদীছে চোখের, কানের, হাতের, হৃদয়ের যেনার কথা এসেছে। এগুলো থেকে বিরত থাকলে আসল যেনা থেকে অবশ্যই দূরে থাকা সম্ভব। পাপের প্রতি প্রলুব্ধ করার জন্য বহু ধরনের প্রযুক্তি এ যুগে বের হয়েছে। সেসব থেকে সাধ্যমত দূরে থাকার মাধ্যমেই পাপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।

(৭) অনর্থক কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা :

সফল মুমিনদের গুণাবলী ব্যাখ্যায় আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ থেকে নির্লিপ্ত’ (মুমিনূন ২৩/৩)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا ‘যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন ভদ্রভাবে সে স্থান অতিক্রম করে’ (ফুরক্বান ২৫/৭২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيْهِ ‘ব্যক্তির ইসলামী সৌন্দর্য হ’ল, অনর্থক কর্মকান্ড পরিহার করা’।[6]

(৮) আল্লাহর পথে ব্যয়ে অগ্রণী হওয়া :

আল্লাহ বলেন,وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيْلِ اللهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ ‘আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সদাচরণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচরণ কারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তিনি বান্দাদের ডেকে বলেন,مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ- ‘কোন্ সে ব্যক্তি যে আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ দিবে, অতঃপর তিনি তার বিনিময়ে তাকে বহুগুণ বেশী দান করবেন? বস্ত্ততঃ আল্লাহ্ই রূযী সংকুচিত করেন ও প্রশস্ত করেন। আর তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)। স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা এটা করেন, তাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন,وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَاللهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ ‘লোকদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল’ (বাক্বারাহ ২/২০৭)। এক্ষেত্রে ছুহায়েব রূমী, আবু তালহা, হযরত ওছমান, কা‘ব বিন মালেক, আবুদ্দাহদাহ প্রমুখ ছাহাবীর অনন্য দানশীলতার ইতিহাস স্মর্তব্য। সেই সাথে তাবুক যুদ্ধের জন্য আবুবকর ও ওমরের দানের প্রতিযোগিতা মনে রাখা কর্তব্য।

(৯) ইবাদতে অহংকার না করা :

আগে-পিছে সমস্ত গোনাহ মাফ থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)

তাহাজ্জুদে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন। তাতে তার দু’পা ফুলে যেত। এ প্রসঙ্গে স্ত্রী আয়েশার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, أَفَلَا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?[7] ফেরেশতারা দিন-রাত আল্লাহর ইবাদত করে। কিন্তু তারা এজন্য অহংকার করে না। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ ‘নিশ্চয়ই (নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ) যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে থাকে, তারা তাঁর ইবাদতে অহংকার করে না। তারা তাঁর গুণগান করে ও তাঁর জন্য সিজদা করে’ (আ‘রাফ ৭/২০৬)

অহংকার দু’ভাবে হয়। অন্তরে ও বাহিরে। অন্তরের অহংকার আল্লাহ দেখেন। যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন,وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তাতে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে। তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (মুমিন/গাফের ৪০/৬০)। এখানে ইবাদত অর্থ দো‘আ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا الْأَعْمَال بِالنِّيَّاتِ ‘সকল কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[8] বাহিরের অহংকার প্রকাশ পায় কথায় ও কর্মে। যেমন অহংকারীদের বাহ্যিক আচরণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ يَسْتَكْبِرُوْنَ- ‘যখন তাদেরকে বলা হ’ত, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য দেখাতো’ (ছাফফাত ৩৭/৩৫)। এরা আল্লাহর কাছে কিছু চায় না ও দো‘আ করে না।

আর কর্মে অহংকারী হ’ল লোক দেখানো ইবাদতকারীরা। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُونَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَى يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللهَ إِلَّا قَلِيلًا، مُذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لَا إِلَى هَؤُلَاءِ وَلَا إِلَى هَؤُلَاءِ وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا- ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে। আর তিনিও তাদেরকে ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন। যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। না এদিকে, না ওদিকে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোন পথই পাবে না’ (নিসা ৪/১৪২-১৪৩)। তিনি বলেন,وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنْفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ- ‘আর তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী। আর তারা ছালাতে আসে অলস অবস্থায় এবং তারা অর্থ ব্যয় করে অনিচ্ছুক ভাবে’ (তওবা ৯/৫৪)। তারা কাফিরদের সঙ্গে জাহান্নামে একত্রে থাকবে (নিসা ৪/১৪০)। এমনকি এরা জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে থাকবে (নিসা ৪/১৪৫)। এতে বুঝা যায়, আল্লাহর নিকটে এদের স্থান কাফিরদেরও নীচে। এসব লোকদের ছালাত-ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত সবকিছুই বৃথা হবে। আল্লাহ বলেন,وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا ‘আর আমরা সেদিন তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে মনোনিবেশ করব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২৩)। এরা যুক্তি দিয়ে আল্লাহর আয়াত সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِيْنَ- ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে ও তা থেকে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা সমূহ উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সূঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করে থাকি’ (আ‘রাফ ৭/৪০)

(১০) সৎকর্মে উৎসাহী ও অগ্রণী থাকা :

আল্লাহ বলেন,أُولَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ ‘এরাই দ্রুত কল্যাণ কাজে ধাবিত হয় এবং তারা তার প্রতি অগ্রগামী হয়’ (মুমিনূন ২৩/৬১)। হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কবরে নেককার ব্যক্তিকে তার নেক আমল বলবে, আমি তোমার নেক আমল। আল্লাহর কসম! আমি জানতাম, তুমি সৎকর্মে ছিলে অগ্রণী ও অসৎকর্মে পশ্চাৎপদ। অতএব আল্লাহ তোমাকে উত্তম বদলা দিন।[9] হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি মানুষ জানত ও আযানেও প্রথম কাতারে কি নেকী রয়েছে। তাহ’লে তারা তার জন্য লটারী করত।[10] একই রাবী থেকে বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুনাফিকদের উপর সবচেয়ে ভারী ছালাত হ’ল ফজর ও আছরের ছালাত। অথচ যদি তারা জানত এতে কি নেকী রয়েছে, তাহ’লে তারা এর জামা‘আতে আসত হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও।[11]

(১১) সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা :

এজন্য বিভিন্ন সময়ে শরী‘আত নির্দেশিত দো‘আগুলি নিয়মিত পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তোলা। যেমন খানা-পিনা, উঠা-বসা, নিদ্রাকালে ও জাগরণে দৈনন্দিন পঠিতব্য দো‘আ সমূহ বুঝে-সুঝে পাঠ করা।

ইবাদত ও আদত :

আল্লাহর ইবাদত যেন বান্দার নিকটে আদত সর্বস্ব না হয়ে পড়ে, সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা বর্তমান সময়ে অধিকাংশের ইবাদত রূহ শূন্য আদতে পরিণত হয়েছে। যিকরের মজলিসগুলো হু হু শব্দে মুখরিত। ওরস ও আখেরী মুনাজাতে লাখো মুছল্লীর ক্রন্দন ধ্বনি উচ্চকিত। কিন্তু তাদের এই ক্ষমা প্রার্থনা তাদের জিহবা ব্যতীত হৃদয়কে উদ্বেলিত করে না। হাফেযদের খতম তারাবীহ্তে মসজিদগুলি গুঞ্জরিত। কিন্তু মদ, জুয়া, সূদ, যেনা, চুরি প্রভৃতি বিষয়ের আয়াতগুলি অতিক্রম করলেও ইমাম ও মুছল্লী কারু হৃদয় কম্পিত হয় না। মসজিদ সমূহের মিনারে সুউচ্চ শব্দে প্রতিদিন ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিত হচ্ছে। অথচ মুসলমান আল্লাহর বিধান ছেড়ে নিজেদের মনগড়া বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে তারই অনুসরণ করছে প্রতিনিয়ত। রামাযান ছিল তাক্বওয়া ও ছবরের মাস। সেটি এখন হয়েছে ইফতার ও সাহারীতে ভূরি-ভোজের মাস। হয়েছে ব্যবসায়ে অধিক লাভ করার মাস। ‘যাকাত’ ফরয হয়েছিল হৃদয়কে মালের লোভ শূন্য করার জন্য ও মালকে পবিত্র করার জন্য। কিন্তু তা এখন মানুষকে হালাল উপার্জনের প্রতি দৃঢ়চিত্ত করার বদলে হারামের প্রতি আরও প্রলুব্ধ করছে। হজ্জ ছিল আল্লাহর আনুগত্যের অধীনে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য চেতনা জাগ্রত করার জন্য। কিন্তু পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষে সে চেতনা এখন বেদনার বিষে পরিণত হয়েছে। ইহরাম ছিল আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্ত্ত হ’তে বিরত থাকার জন্য। অথচ নিষিদ্ধ বস্ত্তই আমাদের খাওয়া-পরার সাথী হয়েছে। ইহরাম অবস্থায় মশা মারা যাবে কি-না ফৎওয়া জিজ্ঞেস করা হয়। অথচ সারা বছর আমরা খুন-খারাবীতে লিপ্ত রয়েছি। মেয়েরা ছালাতের সময় ঢিলা বোরকা পরে। অথচ বাইরে বেপর্দা ঘুরে বেড়ায়। মসজিদ করার সময় হালাল পয়সা ব্যয় করে। অথচ নিজে খাওয়ার সময় হারাম ভক্ষণ করে। দাড়ি ছিল তাক্বওয়ার নিদর্শন, অথচ দাড়ি-টুপী নিয়েই সিগারেট পান করছে ও সূদ-ঘুষের টাকা পকেটে ভরছে। কি বিস্ময়কর স্ববিরোধিতা। এ সবের কারণ একটাই; মুসলমান ইবাদতেঅর্থ ও স্বাদ দু’টিই ভুলে গেছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া ও অভ্যাস-আচরণ অন্য প্রাণীর ন্যায় হয়ে গেছে। যাদের পেটপূজা ছাড়া অন্য কোন লক্ষ্য নেই। যারা সর্বদা কেবল ঘাসে ও ময়লায় মুখ লাগিয়ে চরে বেড়ায়। বিগত উম্মতগুলি একারণেই আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়েছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ‘তাদের পরে এলো তাদের অপদার্থ উত্তরসূরীরা। তারা ছালাত বিনষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। ফলে তারা অচিরেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (মারিয়াম ১৯/৫৯)

উত্তরণের পথ :

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের দু’টি পথই মাত্র খোলা রয়েছে। ১. জীবনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া ২. ইবাদত সমূহকে লক্ষ্য নয় বরং লক্ষ্য হাছিলের মাধ্যমে মনে করা। এ বিষয়ে আল্লাহর রীতি হ’ল বান্দাকে তার অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى  ‘মানুষ তার চেষ্টার বাইরে কিছুই পায় না’ (নাজম ৫৩/৩৯)। আর এ ইচ্ছাশক্তি ও যোগ্যতা কেবল মানুষকেই দেওয়া হয়েছে। অন্য কোন সৃষ্টিকে নয়। আল্লাহ বলেন,إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا ‘আমরা তাকে সুপথ প্রদর্শন করেছি। এক্ষণে সে কৃতজ্ঞ হবে কিংবা অকৃতজ্ঞ হবে’ (দাহর ৭৬/৩)। তিনি বলেছেন,إِنَّ اللهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে’ (রা‘দ ১৩/১১)। তিনি আরও বলেন,ذَلِكَ بِأَنَّ اللهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَى قَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَأَنَّ اللهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ‘এটা এজন্য যে, আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের উপর কোন নে‘মত দান করলে তার পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা সেটা পরিবর্তন করে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (আনফাল ৮/৫৩)

উপসংহার :

মানুষ যখন জানে যে, তাকে মরতেই হবে এবং তার জীবন ক্ষণস্থায়ী, তখন সে কিভাবে তার মৃত্যু পরবর্তী চিরস্থায়ী জীবনের কল্যাণ ভুলে অস্থায়ী ঠিকানার জন্য জীবনপাত করতে পারে? জনৈক বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, أَىُّ الْمُؤْمِنِينَ أَفْضَلُ সর্বোত্তম মুমিন কে? উত্তরে তিনি বললেন, أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। অতঃপর বলল, أَىُّ الْمُؤْمِنِينَ أَكْيَسُ সর্বাধিক বিচক্ষণ মুমিন কে? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُ ‘যে মুমিন মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং পরকালীন জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে’।[12] তিনি বলেন,مَا رَأَيْتُ مِثْلَ النَّارِ نَامَ هَارِبُهَا، وَلَا مِثْلَ الجَنَّةِ نَامَ طَالِبُهَا ‘আমি জাহান্নামের তুলনীয় কিছু দেখিনা, যা থেকে পলাতক ব্যক্তি ঘুমাতে পারে।  আর  জান্নাতের  তুলনীয়  কিছু  দেখিনা  যার

সন্ধানকারী ব্যক্তি ঘুমিয়ে থাকে’।[13]

অতএব জাহান্নামে বিশ্বাসী ব্যক্তি যেমন তা থেকে বাঁচার জন্য দ্রুত চেষ্টা করবে। জান্নাতে বিশ্বাসী ব্যক্তি তেমনি তা পাওয়ার জন্য দ্রুত চেষ্টিত হবে।

প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি তার প্রতি পদক্ষেপে আল্লাহর সন্তুষ্টির তালাশে থাকবে। তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে। পাপ থেকে তওবা করবে ও নেকীর প্রতিযোগিতা করবে। তার উঠা-বসা সবকিছু হবে তার পালনকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- ‘বল, আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবই বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য’ (আন‘আম ৬/১৬২)। উক্ত আয়াতের আলোকেই ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) ইবাদতের সংজ্ঞা দিয়ে বলেন,الْعِبَادَة هِيَ اسْم جَامع لكل مَا يُحِبهُ الله ويرضاه من الْأَقْوَال والأعمال الْبَاطِنَة وَالظَّاهِرَة. فَالصَّلَاة وَالزَّكَاة وَالصِّيَام وَالْحج وَصدق الحَدِيث وَأَدَاء الْأَمَانَة وبرّ الْوَالِديْن وصلَة الْأَرْحَام وَالْوَفَاء بالعهود وَالْأَمر بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْي عَن الْمُنكر وَالْجهَاد للْكفَّار وَالْمُنَافِقِينَ وَالْإِحْسَان للْجَار واليتيم والمسكين وَابْن السَّبِيْل والمملوك من الْآدَمِيّين والبهائم وَالدُّعَاء وَالذكر وَالْقِرَاءَة وأمثال ذَلِك من الْعِبَادَة. ‘ইবাদত একটি সামষ্টিক নাম যা প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার কথা ও কর্মকে শামিল করে, যা আল্লাহ ভালবাসেন ও খুশী হন। যেমন ছালাত, যাকাত, ছিয়াম, হজ্জ, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, পিতা-মাতার সেবা, আত্মীয়তা রক্ষা অঙ্গীকার পালন, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ, প্রতিবেশী এবং ইয়াতীম-মিসকীন, পথিক, অধীনস্ত মানুষ ও পশু, দো‘আ, যিকর, ক্বিরা‘আত ও অনুরূপ সকল প্রকার ইবাদত’।[14] অতএব আমাদের কর্তব্য, আমাদের প্রতিটি কথায় ও কাজে যেন আমরা আল্লাহর ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করি। যিনি আমাদের সবকিছু দেখছেন ও শুনছেন। যাঁর সিসিটিভি ক্যামেরায় আমাদের সবকিছু রেকর্ড হচ্ছে। হাদীছে জিব্রীলে যে কথা বলা হয়েছে যে,أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত কর যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি দেখতে না পাও, তাহ’লে বিশ্বাস কর যে, তিনি তোমাকে দেখছেন’।[15] আল্লাহ আমাদেরকে তার ইবাদতের স্বাদ আস্বাদনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

 

[1]. বুখারী হা/৭৫৩৪; মুসলিম হা/৮৫

[2]. বুখারী হা/৬৫০২, ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-৮১, ‘নম্রতা‘ অনুচ্ছেদ-৩৮; মিশকাত হা/২২৬৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর নৈকট্য লাভ’ অনুচ্ছেদ-১।

[3]. আবুদাঊদ হা/১৩১৯; মিশকাত হা/১৩২৫; ছহীহুল জামে হা/৪৭০৩

[4]. বুখারী হা/৬৫০২; মিশকাত হা/২২৬৬

[5]. তিরমিযী হা/২৬২; মিশকাত হা/৮৮১

[6]. ইবনু মাজাহ হা/৩৯৬৭, মিশকাত হা/৪৮৩৯, সনদ ছহীহ।

[7]. বুখারী হা/৪৮৯৭; মুসলিম হা/২৮২০; মিশকাত হা/১২২০

[8]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৭; মিশকাত হা/১

[9]. আলবানী, আহকামুল জানায়েয হা/১০৮

[10]. বুখারী হা/৬১৫; মুসলিম হা/৪৩৭; মিশকাত হা/৬২৮

[11]. বুখারী হা/৬৫৭; মুসলিম হা/৬৫১; মিশকাত হা/৬২৯

[12]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯, ছহীহাহ হা/১৩৮৪

[13]. তিরমিযী হা/২৬০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬২২

[14]. আল-উবূদিয়াহ পৃ. ৩৮-৩৯

[15]. মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button