শির্কে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিকে আল্লাহ কি ক্ষমা করবেন?
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
প্রশ্ন:
আমি জানতে চাই, যে ব্যক্তি জেনেশুনে শির্ক করেছে আল্লাহ্ কি তাকে ক্ষমা করবেন? কিন্তু, সে এখন তওবা করে সম্পূর্ণভাবে নিজের জীবন পরিবর্তন করতে চায়? এ ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনা কিভাবে সম্পন্ন হতে পারে? সে ব্যক্তি কিভাবে বুঝতে পারবেন যে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে? সে কিভাবে তার ঈমানকে মজবুত করতে পারে; যাতে করে হালালটা পালন করতে পারে এবং হারাম থেকে বিরত থাকতে পারে? আমার অনেক মানসিক সমস্যা আছে, যেগুলো আমাকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায় এবং আমার উপর প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। আমি উপদেশ ও আল্লাহ্র হেদায়েতের মুখাপেক্ষী।
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ্ তাআলা জানিয়েছেন যে, তিনি তওবাকারীর ও তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারীর সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি বলেন: “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহ্র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩]
বিশেষভাবে শির্ক থেকে তওবা করা ও সে তওবা কবুল হওয়ার প্রসঙ্গে এসেছে, আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এবং তারা আল্লাহ্র সাথে কোন উপাস্যকে ডাকে না। আর আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যভিচার করে না; যে ব্যক্তি এগুলো করবে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বর্ধিতভাবে প্রদান করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়। তবে যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্ তার গুনাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা ফ্বুরকান, আয়াত: ৬৮-৭০]
আল্লাহ্ তাআলা খ্রিস্টানদের শির্ক ও কুফরের কথা উল্লেখ করার পর তাদেরকে তওবা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন: “তারা অবশ্যই কুফরী করেছে যারা বলে, ‘আল্লাহ্ তো তিনের মধ্যে তৃতীয়। অথচ এক ইলাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। আর তারা যা বলে তা থেকে বিরত না হলে তাদের মধ্যে যারা কুফরীর উপর অটল থাকবে তাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। তবে কি তারা আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসবে না ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা মায়িদা, আয়াত: ৭৩-৭৪]
আরও পড়ুন: ইখলাছ মুক্তির পাথেয়
গুনাহ্ যত বড় হোক না কেন আল্লাহ্র ক্ষমা, মহানুভবতা ও অনুগ্রহ তার চেয়ে বড়। অতএব, আপনার কর্তব্য হচ্ছে– আল্লাহ্ অভিমুখী হওয়া। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। পুনরায় সেসব কর্মে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া। তবে, আপনি আল্লাহ্র অনুগ্রহ, রহমত ও তাওফিকপ্রাপ্তির সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কারণ ইসলাম পূর্বের সকল গুনাহ্ ধ্বংস করে দেয়। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর বিন আস (রাঃ) কে বলেছিলেন: “হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম পূর্বের সকল গুনাহ্ মাফ করে দেয়।” [সহিহ মুসলিম (১২১) ও মুসনাদে আহমাদ (১৭৮৬১)]
- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “গুনাহ্ থেকে তওবাকারী ঐ ব্যক্তির মত যার গুনাহ্ই নাই।” [সুনানে তিরমিযি, আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
- বান্দা যদি তওবা করে আল্লাহ্ তার তওবা কবুল করেন, তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপসমূহ মোচন করেন।” [সূরা শুরা, আয়াত: ২৫]
- তিনি আরও বলেন: “আর আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে তারপর সৎপথে অবিচল থাকে।” [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৮২]
- তাই বান্দার কর্তব্য হচ্ছে: “আল্লাহ্র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করা, তওবা কবুল হওয়ার আশা রাখা। কারণ আল্লাহ্ তাআলা বলেন: আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।” [সহিহ বুখারী (৭০৫৫) ও সহিহ মুসলিম (২৬৭৫)]
- এ সহিহ সনদে এসেছে: “আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।” [মুসনাদে আহমাদ (১৬০৫৯)]
অতএব, বান্দা আমার প্রতি যেমন ইচ্ছা তেমন ধারণা পোষণ করুক।” আর ঈমান মজবুত করা: সেটা বেশ কিছু বিষয়ের মাধ্যমে হতে পারে; যেমন:–
১) বেশি বেশি আল্লাহ্র যিকির করা ও তাঁর কিতাব তেলাওয়াত করা এবং তাঁর নবীর প্রতি বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা।
২) ফরয ইবাদতসমূহ যথাযথভাবে আদায় করা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করা; যাতে করে বান্দা আল্লাহ্ মহব্বত লাভে সফল হতে পারে। যার ফলে বান্দা তাওফিকপ্রাপ্ত হবে। যেমনটি হাদিসে এসেছে: “আল্লাহ তাআলা বলেন- যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য হাছিল করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবাসি। যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে যা কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় চায়, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই।” [সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৬১৩৭]
৩) সৎকর্মশীলদের সংশ্রবে থাকা। যারা তাকে নেকীর কাজে সহযোগিতা করবে এবং বদ কাজ থেকে দূরে রাখবে।
৪) পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল নেককার আলেম, যাহেদ (দুনিয়াবিরাগী), ইবাদতগুজার ও তওবাকারীদের জীবনী পড়া।
৫) পাপের কথা মনে করিয়ে দেয় কিংবা পাপের দিকে ডাকে এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকা।
সর্বপরি, ঈমান মজবুত হয় নেক আমলের মাধ্যমে এবং বদ আমল পরিহার করার মাধ্যমে। আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনাকে তাওফিক দেন, আপনার তওবা কবুল করে নেন এবং আপনার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ।
মন্তব্য করুন