তওবার পদ্ধতি
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
লেখক: মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
তওবার পদ্ধতি
কোন গুনাহগার ব্যক্তি তওবা করতে চাইলে, প্রথমে যে পাপে লিপ্ত ছিল সেটা ছাড়তে হবে এবং আল্লাহর আযাবের ভয়ে ও পরকালে জান্নাত পাওয়ার আশায় তওবার নিয়ত করতে হবে। আর মনে মনে ঐ পাপের জন্য লজ্জিত হয়ে তাতে আর ফিরে না আসার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। সেই সাথে যে যন্ত্রের মাধ্যমে পাপ সংঘটিত হয়েছিল সেটাও ধ্বংস বা সরিয়ে ফেলতে হবে। তারপর সুন্দরভাবে ওযূ করবে। ওছমান বিন আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ-
‘যে ব্যক্তি ভালভাবে ও সুন্দর করে ওযূ করে তার শরীর থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়’।[1]
আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘যখন কোন মুসলমান বা মুমিন বান্দা ওযূ করে এবং তার মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার চেহারা থেকে ঐ সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলোর দিকে তার চোখ দু’টির সাহায্যে দৃষ্টিপাত করেছিল। অতঃপর যখন সে তার হাত দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার হাত দু’টি থেকে ঐ সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা তার হাত দু’টির মাধ্যমে হয়েছিল। এরপর যখন সে তার পা দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন সে পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে ঐ সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার পা দু’টি এগিয়ে গিয়েছিল, এমনকি সে গুনাহ থেকে সস্পূর্ণ পূত-পবিত্র হয়ে যায়’।[2]
ওযূর শেষে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে,
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ. اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ الَتَّوَّابِيْنَ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ-
উচ্চারণ: আশহাদু আন্-লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত তাউয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীন’।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অর্ন্তভুক্ত করুন এবং পবিত্রদের অন্তর্ভুক্ত করুন’।[3]
ওমর ফারূক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে রাসূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে’।[4]
তারপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। রাসূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْباً فَيُحْسِنُ الطُّهُوْرَ، ثُمَّ يَقُوْمُ فَيُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللهَ إِلاَّ غُفِرَ لَهُ- ‘যদি কোন বান্দা গুনাহ করে অতঃপর সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন’।[5]
এরপর ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তওবার জন্য নিম্নের দো‘আটি বিশেষভাবে সিজদায় ও শেষ বৈঠকে পড়া যায়।
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ-
উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম ওয়া আতূবু ইলাইহে’। অর্থঃ আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকটে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক এবং তাঁর দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’।[6]
এছাড়া সাইয়িদুল ইসতেগফার পড়বে। সাইয়িদুল ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো’আটি হ’ল,
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَي عَهْدِكَ وَ وَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَّى وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-
উচ্চারণ: আল্লা-হুমা আনতা রাববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবূউ বিযাম্বী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা’।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার দাস। আমি আমার নিকটে কৃত অঙ্গীকার ও ওয়াদার উপরে সাধ্যমত কায়েম আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। আমার উপরে তোমার অনুগ্রহ স্বীকার করছি এবং আমি আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই’।[7]
রাসূল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিবসে পাঠ করে রাতে মারা গেল কিংবা রাতে পাঠ করে দিবসে মারা গেল, সে জান্নাতী হবে’।[8]
ক্ষমা প্রার্থনার পর বেশী বেশী যিকির এবং সাধ্যানুযায়ী বেশী নেক আমল করবে। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَاتِ-
‘নিশ্চয় ভাল কাজগুলি খারাপ কাজগুলিকে মিটিয়ে দেয়’ (হূদ ১১/১১৪)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি একটি মেয়েকে চুমো খেয়েছিল। তারপর সে নবী করীম (ছাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে তাকে একথা জানিয়েছিল। ফলে আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করলেন, وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفاً مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَاتِ- ‘ছালাত কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তভাগে আর রাতের কিছু সময়ে। নিশ্চয়ই ভাল কাজগুলি খারাপ কাজগুলিকে মিটিয়ে দেয়’ (হূদ ১১/১১৪)। লোকটি জিজ্ঞেস করল, এ বিধান কি আমার জন্যও? রাসূল (ছাঃ) জবাবে বললেন, আমার সমস্ত উম্মতের জন্য’।[9]
অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اِتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَاتَّبِعِ السَّيَّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ- ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং অসৎ কাজ করলে তারপর সৎকাজ কর। তাহ’লে ভাল কাজ মন্দকাজকে শেষ করে দিবে। আর মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর’।[10]
কুরআন মাজীদে বর্ণিত তওবা ও ইস্তিগফারের কতিপয় দো‘আ
(১) আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী যখন শয়তানের চক্রান্তে পড়ে আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিলেন তখন বলেছিলেন,
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ-
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব’ (আ‘রাফ ৭/২৩)।
(২) ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে আল্লাহকে ডেকে বলেন,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ-
‘তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি’ (আম্বিয়া ২১/৮৭)।
(৩) আল্লাহ নূহ (আঃ)-এর জাতিকে প্লাবন দ্বারা ধ্বংস করার পর তাঁর ও তাঁর সাথীদের যখন মুক্তি নিশ্চিত করলেন তখন তিনি বলেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِناً وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِيْنَ إِلَّا تَبَاراً-
‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মু‘মিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মু‘মিন পুরুষ ও মু‘মিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন’ (নূহ ৭১/২৮)।
ربَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْكَافِرِيْنَ-
‘হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করে দাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদেরকে দৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের উপর আমাদেরকে সাহায্য কর’ (আলে ইমরান ৩/১৪৭)।
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ-
‘হে আমার পালনকর্তা! ক্ষমা করুন ও রহম করুন। আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী’ (মু‘মিনূন ২৩/১১৮)।
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি কাজেই আমাদের ক্ষমা করে দিন আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন’ (আলে ইমরান ৩/১৬)।
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأبْرَارِ-
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের সকল গুনাহ মাফ করুন এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দূর করে দিন, আর আমাদের মৃত্যু দান করুন নেক লোকদের সাথে’ (আলে ইমরান ৩/১৯৩)।
তওবা পূর্বের সমস্ত গুনাহ দূর করে দেয় :
কোন বান্দা যখন খালেছ অন্তরে তওবা করে তখন আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহ বলেন,
وَمَن يَّعْمَلْ سُوْءاً أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُوْراً رَّحِيْماً-
‘যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়’ (নিসা ৪/১১০)। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,
يَا عِبَادِيْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعاً فَاَسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ-
‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা দিবা-নিশি পাপ করে যাচ্ছ আর আমি তোমাদের সকল পাপ মোচন করছি। অতএব তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব’ (মুসলিম)। রাসূল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلتَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لاَذَنْبَ لَهُ
‘তওবাকারী এমন যে, তার কোন গুনাহ নেই’।[11]
তওবা খারাপ কাজগুলিকে ভাল কাজে রূপান্তরিত করে :
বান্দা যখন তওবা করে তখন আল্লাহ পূর্বের পাপগুলি ক্ষমা করে ভাল কাজে রূপান্তরিত করেন। আল্লাহ বলেন,
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحاً فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُوْراً رَّحِيْماً.
‘কিন্তু যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)।
তওবার দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়, মনের কালিমা দূর হয়:
পাপ করলে অন্তরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। যার ফলে হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। আর ইস্তেগফার পাপ ও তার প্রভাবকে দূর করে দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন বান্দা কোন পাপ করে তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়। যখন সে তওবা করে ও ক্ষমা চায় তখন তার অন্তরকে পরিস্কার করা হয়। আর যদি পাপ বাড়তেই থাকে তাহ’লে দাগও বাড়তে থাকে। অবশেষে তা তার অন্তরের উপর ছেয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘না এটা সত্য নয় বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে’ (মুতাফফিফীন-১৪)।[12]
তওবা ইস্তেগফার দ্বারা বালা-মুছীবত দূর হয় :
ইউনুস (আঃ) কে যখন মাছে খেয়ে ফেলল, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তেগফার করতে লাগলেন। ফলে আল্লাহ তাকে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করলেন এবং বললেন,
فَلَوْلاَ أَنَّهُ كَانَ مِنْ الْمُسَبِّحِيْنَ- لَلَبِثَ فِيْ بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ-
‘যদি তিনি তাসবীহ পাঠ না করতেন, তবে ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই তিনি অবস্থান করতেন’ (ছাফফাত ৩৭/১৪৩-১৪৪)।
তওবার দ্বারা আল্লাহর ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জিত হয়: আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ.
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাকারাহ ২/২২)।
তওবা দুনিয়ায় প্রশান্তিময় জীবন দান করে: আল্লাহ বলেন,
وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُواْ إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَّتَاعاً حَسَناً إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِيْ فَضْلٍ فَضْلَهُ.
‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী দিবেন’ (হূদ ১১/৩)।
তওবার মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায়, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত হয়:
আল্লাহ বলেন,
اِسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً- يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِيْنَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَاراً-
‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন’ (নূহ ৭১/১০-১২)।
তওবা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের চাবিকাঠি: আল্লাহ বলেন, فَأَمَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحاً فَعَسَى أَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ. ‘তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ কর্ম করে, আশা করা যায় সে সফলকাম হবে’ (ক্বাছাছ ২৮/৬৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحاً فَأُوْلَئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئاً. ‘কিন্তুু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না’ (মারইয়াম ১৯/৬০)।
তওবার দ্বারা শারীরিক শক্তি অর্জিত হয়: আল্লাহ হূদ (আঃ) এর বাচনিক বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِيْنَ.
‘আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, আর তোমরা অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না’ (হূদ ১১/৫২)।
তওবাকারীদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ: আল্লাহ বলেন,
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيّاً، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحاً فَأُوْلَئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يُظْلَمُوْنَ شَيْئاً.
‘অতঃপর তাদের পরে এল পরবর্তীরা। তারা ছালাত বিনষ্ট করল ও কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হ’ল। অচিরেই তারা ভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তুু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোরূপ যুলুম করা হবে না’ (মারইয়াম ১৯/৫৯-৬০)।
[1]. মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০২৬; মিশকাত হা/২৮৪।
[2]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৫; রিযাযুছ ছালেহীন হা/১০২৮।
[3]. তিরমিযী হা/৫৫, হাদীছ ছহীহ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়।
[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৯।
[5]. আবু দাঊদ হা/১৫২১, হাদীছ ছহীহ।
[6]. মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘ইসতিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ; আলবানী ছহীহ তিরমিযী হা/২৮৩১; ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৩৪৩।
[7]. বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ’ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ।
[8]. বুখারী; মিশকাত হা/২৩৩৫।
[9]. বুখারী ও মুসলিম; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০৪৪।
[10]. তিরমিযী; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৬১, সনদ হাসান।
[11]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০, ছহীহ আল-জামে হা/৩০০৮, হাদীছ হাসান।
[12]. তিরমিযী, হা/৩৩৩৪, হাদীছ হাসান আহমাদ; মিশকাত হা/২৩৪২।
মন্তব্য করুন