প্রবন্ধ

একটি সফল রামাদান পরিকল্পনা

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

লেখকঃ উস্তাদ আলী হাম্মুদা, মোহাম্মাদ ফারিস | সম্পাদনা ও সংযোজনঃ মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ

একটি সফল রামাদান পরিকল্পনা

রামাদানের জন্য পরিকল্পনা করা, ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং এতে সফল হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। রামাদানে আপনার লক্ষ্যগুলো হতে হবে সুবিন্যস্ত ও স্পষ্ট। আর তাহলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সুবিন্যস্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে আপনাকে নিচের মূল নীতিগুলো অনুসরণ করে নিজের লক্ষ্যগুলো পুনর্বিবেচনা করে নিতে হবে। ইতিবাচক লক্ষ্য।

অনেক লোকের ইচ্ছা থাকে যে রামাদানে নিজের কোন নেতিবাচক অভ্যাস বা জীবন থেকে নেতিবাচক কিছু ঝেড়ে ফেলার। এটি হতে পারে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্য কিংবা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের লক্ষ্য। কিন্তু আমি আপনাকে ভিন্ন কথা বলব। রামাদানে কোন অভ্যাস ত্যাগ করার বা পরিবর্তন করার লক্ষ্যের চেয়ে আমাদের বেশি জোর দেয়া উচিত নতুন অভ্যাস গঠন করার লক্ষ্যের প্রতি। আপনার মন সেই দিকে আকৃষ্ট হবে যা নিয়ে আপনি চিন্তা করছেন। তাই যখন আপনার লক্ষ্যের কথা আপনি নেতিবাচক ভঙ্গিতে লিখবেন তখন আপনার মন তা করার প্রতিই বেশি আগ্রহী হয়ে যাবে।

সুতরাং, লিখবেন না, “রামাদানে আমার ওজন ২০ কেজি কমাতে হবে”; বরং লিখুন, “রামাদানের শেষে আমার ওজন ৭০ কেজিতে নিয়ে আসতে হবে। একইভাবে আপনি যদি লিখেন, “এই রামাদানে কুরআন খতম দিতে ব্যর্থ হলে চলবে তাহলে তা আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বরং, লিখুন, “এই রামাদানে কুরআন খতম করতে হবে।” প্রাসঙ্গিক লক্ষ্য রামাদান নিয়ে আপনার লক্ষ্য হতে হবে প্রাসঙ্গিক। রামাদান আসলে আমরা তাদের ফিকহ-হাদিসের কিতাবাদি ঘুচিয়ে কুরআন পড়তে মনোনিবেশ করেন। আপনার রামাদানের লক্ষ্য এমন কিছু হতে হবে যা রামাদান মাসের সাথে প্রাসঙ্গিক হয়। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, স্ব-প্রণােদিত হয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। কারাে কথায় আকৃষ্ট না হয়ে নিজের তাড়না থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।

 নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার টার্গেট রাখুন

 আমরা সাধারণত এমন সব লক্ষ্য নির্ধারণ করি যা আমাদের পক্ষে পূরণ করা সহজেই সম্ভব। তবে রামাদানে এমন করবেন না। একটু কঠিন লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যা দেখে আপনি একটু হলেও নার্ভাস হবেন। জীবনে আগে কখনাে রামাদানের প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়েন নি? প্রতিদিন এশার নামাজের পর সম্পূর্ণ তারাবিহর নামাজ পড়েন নি? আগে কখনও ইতিকাফ করেন নি? – তাহলে এখনই সময়। রামাদানে আপনার জন্য এ কাজগুলো করা সহজ, কারণ শয়তান শিকলবদ্ধ থাকে, চারিদিকে প্রবাহমান থাকে রামাদানের সুশীতল বাতাস। তাছাড়া আমলের ফজিলত ও তাে অনেক বেশি। নবীজি রামাদানের শেষ দশকের নিজের কোমরবন্ধ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রামাদানের আগের বিশ দিন যে পরিমাণ ইবাদাত করতেন, শেষ দশ দিন তার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতেন। আমাদের এভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার টার্গেট রাখতে হবে।

সংখ্যাবাচক লক্ষ্য 

মনে করুন, রামাদানে আপনি একবার সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করার লক্ষ্যস্থির করলেন।তাহলে, প্রতিদিন এক জুয অর্থাৎ প্রায় ২০ পাতা তিলাওয়াত করতে হবে। তাহলে, আপনি দিনে ১০ পাতা আর রাতে ১০ পাতা তিলাওয়াত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। অথবা, প্রত্যেক ফরয নামাজের পর ৪ পাতা করে পড়তে পারেন। এভাবে সংখ্যাবাচক লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তা পূরণ করা সহজতর হবে।

পর্যালোচনা 

রামাদানে আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কতটুকু পূরণ করতে পারছেন তা প্রতিদিন হিসাব নিতে হবে, আত্মপর্যালােচনা করতে হবে। তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় সমস্যা হচ্ছে এবং কোথায় আরাে বেশি চেষ্টা চালাতে হবে। ইসলামি পরিভাষায় আত্মপর্যালােচনাকে মুহাসাবা বলে।

হাসান রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “মুমিন তার নিজের অভিভাবক। সে নিজেই নিজের হিসাব গ্রহণ করে। যারা দুনিয়াতে মুহাসাবা করেছে, আপন কৃতকর্মের হিসাব নিয়েছে, কিয়ামতের দিন তাদের হিসাব সহজ হবে। আর যারা মুহাসাবা ছাড়া জীবনযাপন করেছে, তাদের হিসাব কঠিন হবে।” [ হিলয়াতুল আউলিয়া, ২/১৫৭ ]

নির্দিষ্ট লক্ষ্য

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়া। যেমন, আপনি রামাদানে আপনার চরিত্র সুন্দর করতে চান। তা কীভাবে করবেন? কার সাথে করবেন? চরিত্রের কোন কোন দিকগুলো সুন্দর করবেন? কোন কোন দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবেন এধরনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে।

এজেন্ডা

আপনি চাইলে রামাদানে ১০০টি লক্ষ্য রাখতে পারেন। কিন্তু, আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকলে তাে আপনি তা পূরণ করতে পারবেন না। তাই এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আপনি প্রতিদিন ২০ পাতা কুরআন পড়বেন, ভালো কথা। এখন আপনি হিসাব করুন ১ পাতা তিলাওয়াত করতে আপনার কত সময় লাগে। এভাবে পরিকল্পনা করে নিতে হবে যে প্রতিদিন আপনার তিলাওয়াতে কত সময় দিতে হবে।

লক্ষ্যগুলো সব লিখে রাখুন 

উপরে আমরা সংক্ষিপ্ত দিক নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এখন আপনি ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করে এই রামাদানে আপনার নিজের জন্য ১৫টি লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা লিখে রাখুন। তারপর কিভাবে আপনি এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করবেন তা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করুন।

ব্যক্তিসত্তা 

লক্ষ্য সম্পর্কে লেখার সময় নিজের ব্যক্তিসত্তাকে উদ্দেশ্য করে লিখবেন। সম্পূর্ণ বাক্যে নিজের লক্ষ্য লিখবেন এবং সরাসরি নিজেকে উদ্দেশ্য করে লিখবেন।

যেমন, “প্রতিদিন ৪৫ মিনিট কুরআন পড়া” না লিখে লিখবেন- “আমি প্রতিদিন ৪৫ মিনিট কুরআন পড়ব”।

বর্তমান কাল 

এটি হচ্ছে আরেকটি দারুণ কৌশল। লক্ষ্যগুলো ভবিষ্যৎ কালে না লিখে বর্তমান কালে লিখুন। লক্ষ্য সম্পর্কে লেখার সময় ভাবুন যদি সেই লক্ষ্য পূর্ণ হয়ে যেত, তাহলে আপনি কী লিখতেন এবং সেই কথাই লক্ষ্যের জায়গায় লিখে ফেলুন। যেমন, “এই রামাদানে ১০টি সূরা মুখস্থ করব” না লিখে আপনি লিখুনঃ “আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে এই রামাদান শেষে আমি ১০টি সূরা মুখস্থ করে ফেলেছি।” এভাবে লিখলে যতবারই আপনি আপনার লক্ষ্যগুলাে পড়বেন ততবার আপনি অনুভব করবেন যে এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে আপনার কত ভাল লাগবে। নিঃসন্দেহে এই কৌশল আপনাকে লক্ষ্য পূরণে অনুপ্রাণিত করবে।

মনছবি 

আমাদের মন লেখার শব্দ দেখে না, বরং ছবি দেখে। তাই মনের চোখ দিয়ে আপনার লক্ষ্যপূরণের মুহূর্তটি কল্পনা করুন। এটিও আপনাকে লক্ষ্যপূরণে প্রেরণা জোগাবে ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button