বড় দিন বা ক্রিসমাস (Christmas) কি?
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
লেখকঃ আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ
আসছে ২৫ ডিসেম্বর, খ্রীষ্টানদের বড় দিন, দিনটি খ্রীষ্টান বিশ্বে জাকজমকপূর্ণভােব উদজাপিত হয় তাদের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে, কিন্তু দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে আজ মুসলিম বিশ্বেও দিনটি বেশ গুরুত্ব পচ্ছে। তাই আলোচনা করতে চাচ্ছি যে এই বড় দিন বা ক্রিসমাস কি ?
খ্রীষ্টানদের এক সম্প্রদায়ের নিকট এই দিনটি স্রষ্টার জন্ম দিন আবার অপর সম্প্রদায়ের নিকট রবের সন্তানের জন্ম দিন হিসেবে পরিচিত।এই দিনটিতে তারা বিভিন্ন রকম উপহার আদান প্রদান, আলোক সজ্জা,বিভিন্ন রকমের খাবার, বিশেষ চা পান,চার্সেগমন ইত্যাদির মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকে। ইংরেজী Christmas শব্দটির দুটি অংশ একটি Christ অপরটি mas, Christ এটি ঈসা (আঃ) এর একটি উপাধি, আর mas অর্থ জন্ম দিন বা জন্মৎসব। তাহলে Christmas এর মাধ্যমে ঈসা (আঃ) এর জন্মৎসব বোঝানো হয়ে থাকে। (কথাটা বিশ্বাস না হলে, google.com এ গিয়ে “birthdate of jesus christ” লিখে সার্চ দিন।)
আরোও পড়ুনঃ ⇒অনর্থক বিষয়ে নাক গলাবেন না
যদিও আজকে খ্রীষ্টানরা এই দিনটিকে ঈসা (আঃ) এর জন্ম দিন হেসেবে পালন করে থাকে বাস্তবে ইতিহাসে তাঁর জন্ম তারিখ সঠিক ভাবে নির্ণিত নেই। এনিয়ে স্বয়ং খ্রীষ্টানদের মাঝেও মতবিরোধ আছে। তাই দেখা যায় কেথলিক খ্রীষ্টানরা ২৫ ডিসেম্বারকে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করে থাকে আর অপর দিকে অর্তডোকরা ৭ জানুয়ারীকে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করে থাকে।
নিঃসন্দেহে ক্রিসমাস খ্রীষ্টানদের একটি ধর্মীয় উৎসব,কিন্তু আজকে খ্রীষ্টানদের এই আনুষ্ঠানিকতা এবং সেসময় ঈসা (আঃ) এর জন্ম লগ্নে তাদের পূর্বসুরীদের প্রতিক্রীয়ার কথা আমাদের কে কি বার্তা দিচ্ছে? আজকের ক্রিসমাস পালনকারীরা কি তাদেরই পরবর্তী জেনারেশন নয় যারা ঈসা (আঃ) এর ভূমিষ্ট কালে তাঁর মাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল? যারা তাঁকে আল্লাহ্ র পুত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল? এবং যারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল? আফসোস! যারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা আজ তাঁর জন্মোৎসব পালন করছে। এ যেন চোরের মার বড় গলা।
আরোও পড়ুনঃ ⇒তীব্র নিন্দা ও অপ্রীতিকর সমালােচনা যেভাবে নিবেন
মূলতঃ ঈসা (আঃ) এর জন্ম তারিখ কোনটি? ক্যাথ লিকদের ধারণামতে ২৫ ডিসেম্বার না অর্তডোকদের ধারণামতে ৭ জানুয়ারী। মূলত খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রন্থসমূহে এর সঠিক তারিখ নিধারিত করে বর্ণনা করা হয়নি। তবে কোরআন কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে মারইয়াম (আঃ) কে লক্ষ্য করে তার গর্ভাবস্থায় আল্লাহ্ বলছেনঃ “আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে” [সূরা মারইয়াম-২৫]
এখান থেকে বুঝা যায় যে ঈসা (আঃ) এর জন্ম ডিসেম্বার বা জানুয়ারীতে নয় বরং জুন বা জুলাই মাসে কারণ খেজুর একটি গ্রীষ্মকালীন ফল শীতকালীন ফল নয়। তাহলে যদি তাঁর জন্ম তারিখটিই সঠিক ভাবে নির্ণিত না হয় তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই আনুষ্ঠানিকতা?
আরোও পড়ুনঃ ⇒কারাে ধন্যবাদ পাবার আশা করবেন না
সুবহানাল্লাহ্! দেখুন আমাদের নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্ম তারিখও সঠিকভাবে নির্ধারিত নেই এমনিভাবে ঈসা(আঃ) এর জন্ম তারিখও সঠিকভাবে নির্ধারিত নেই। আমার মনে হয় এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর নবীদ্বয়কে মানুষের অতিরঞ্জন থেকে রক্ষা করেছেন।
ক্রীসমাস সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টি ভঙ্গিঃ
অর্থগত দিক থেকে ক্রীসমাস শব্দটিই একটি শিরকী শব্দ কারণ শব্দটির অর্থ “রবের জন্মদিন বা রবের পুত্রের জন্ম দিন” নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক, মহান আল্লাহ এথেকে পুত পবিত্র। আল্লাহ্র বাণীঃ “তিন কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি” [সূরা এখলাস-৩]
অতএব একজন মুসলমানের জন্য এই কথাটি মুখে উচ্চারণ করাই হারাম। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ “আবু উমামা আল বাহেলী (রায়িাল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, আর যে যেই জাতিকে ভালবাসবে তাদের সাথে তার হাশর হবে।” [আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৩১, মোসনাদ আহমদ হাদীস নং-৫০৯৩]
আরোও পড়ুনঃ ⇒নারীদের প্রতি খোলা চিঠি
আলেমগণের মতামতঃ
শেইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ক্রিসমাস উপ লক্ষে অনুষ্ঠান করে,উপহার ও মিষ্টি বিতরণ করে, বিভিন্ন ধরণের খাবারের আয়োজন করে এবং ছুটি পালন করে কাফেরদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ইক্তেযাউ সিরাতিল মুস্তাকীম গ্রন্থে বলেনঃ তাদের (কাফেরদের) কিছু উৎসবে (মুসলমানদের জন্য)তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা তারা বাতিল পন্থী হওয়া সত্বে তাদের আত্ম তৃপ্তির কারণ হবে। আবার কখনো হয়ত তা দুর্বল হৃদয়ের অধিকারী এবং সুযোগ সন্ধানীদের জন্য বৈধতার প্রমাণ গ্রহণের সুযোগ করে দিবে।
আরোও পড়ুনঃ ⇒কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো নামাজ পড়া অবস্থায় অবহেলা করা হয়
যে ব্যক্তি তা করবে সে গোনাহগার বলে গণ্য হবে তা যে উদ্দেশ্যেই করে থাকুক না কেন চাই তা সামাজিকতা রক্ষা, ভালবাসা, লজ্জা, বা অন্য কোন কারণে হোকনা কেন। কেননা তা আল্লাহ্ র দ্বীনে তোষামোদ এবং কাফেরদের মনবলকে দৃঢ় করবে এবং তাদের ধর্ম নিয়ে তাদেরকে গৌরব করার সুযোগ করে দিবে। [ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ৩/৪৪]
মন্তব্য করুন