অর্থ ও উচ্চারণসহ নামাজের সানা
প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
অর্থ ও উচ্চারণসহ নামাজের সানা
নামাজ হলো সর্বোত্তম দোয়া। সেজদা অবনত হয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম এটি। নামাজের প্রতিটি রোকনেই মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়ার আবেদনে ভরপুর। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলে সানা। এটিকে দোয়ায়ে ইসতিফতাহও বলা হয়। কেননা এটি তাকবিরে তাহরিমার পর পড়তে হয়। এটি মহান আল্লাহ তাআলার জন্য বান্দার পক্ষ থেকে মানপত্রও বটে।
নামাজ হলো সর্বোত্তম দোয়া। সেজদা অবনত হয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম এটি। নামাজের প্রতিটি রোকনেই মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়ার আবেদনে ভরপুর। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলে সানা। এটিকে দোয়ায়ে ইসতিফতাহও বলা হয়। কেননা এটি তাকবিরে তাহরিমার পর পড়তে হয়। এটি মহান আল্লাহ তাআলার জন্য বান্দার পক্ষ থেকে মানপত্রও বটে।
হাদিসের বর্ণনায় একাধিক সানা পড়ার দিকনির্দেশনা রয়েছে। নামাজে সানা বা দোয়ায়ে ইসতিফতাহ পড়া সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবিরে তাহরিমার পর এসব সানা পড়তেন। হাদিসে এসেছে– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবিরে তাহরিমা ও সুরা ফাতিহার মধ্যবর্তী সময়ে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি তাকবিরে তাহরিমার পর নিরব থেকে কি বলেন? তিনি বললেন, যে আমি তখনি বলি-اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বায়িদ বাইনি ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া, কামা বাআদ্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি; আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিন খাতাইয়াইয়া কামা ইউনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগসিলনি মিন খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি, ওয়াছ্ছালজি, ওয়াল বারাদি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপগুলো থেকে এত দূরে রাখ যেমন পূর্ব ও পশ্চিম পরস্পরকে পরস্পর থেকে দূরে রেখেছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে এমন ভাবে পরিষ্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে (পবিত্র করার জন্য) পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)
– হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন বলতেন-سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। (তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।- হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবিরে তাহরিমার পর এ দোয়া পড়তেন-وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأرْضَ حَنِيْفاً، وَمَا أنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنُ، إنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لله رَبِّ الْعَالَمِيْن، لَا شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أمِرْتُ وَأنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْن، اَلَّلهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إلَهَ إلَّا أنْتَ، أنْتَ رَبِّي وَأنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِيْ، اِعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْلِيْ ذُنُوْبِيْ جَمِيْعاً، إنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلَّا أنْتَ، وَاهْدِنِيْ لِأحْسَنِ الْأخْلَاقِ، لَا يَهْدِيْ لِأحْسَنِهَا إلَّا أنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إلَّا أنْتَ، لَبَّيِكَ وَسَعْدَيِكَ وَالْخَيْرَ بَيْنَ يَدَيْكَ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إلَيْكَ، أنَا بِكَ وَإلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أسْتَغْفِرُكَ وَأتُوْبُ إلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়্যা লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন, লা শারিকালাহু ওয়া বিজালিকা ওমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আলাহুম্মা আংতাল মালিকু লা ইলাহা ইল্লা আংতা; আংতা রব্বি ওয়া আনা আবদুকা জালামতু নাফসি। ওয়া তারাফতু বিজাম্বি, ফাগফিরলি জুনুবি জামিআ; ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা; ওয়াহদিনি লিইহসানিল আখলাক্বি; লা ইয়াহদি লিইহসানিহা ইল্লা আংতা; ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়্যিআহা লা ইয়াসরিফু আন্নি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা; লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল খাইরা বাইনা ইয়াদাইকা ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইকা; আনা বিকা ওয়া ইলাইকা; তাবারাকতা ওয়াতাআলাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা। (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : ‘আমি আমার মুখমণ্ডল ফিরাচ্ছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও যমীনসমূহ সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অর্ন্তভূক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই।আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি আমার উপর যুলম করেছি। তাই আমি আমার অপরাধ স্বীকারকরছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অন্য কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আর আমাকে চালিত কর উত্তম চরিত্রের পথে, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ উত্তম চরিত্রের পথে চালিত করতে পারে না। তুমি দূরে রাখ আমা হ’তে মন্দ আচরণকে, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত আছি তোমার নিকটে এবং প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে। কল্যাণ সমই— তোমার হাতে এবং অকল্যাণ তোমার উপর বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করব। তুমি মঙ্গলময়, তুমি উচ্চ। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছি এবং তোমার দিকে ফিরে যাচ্ছি।’
নামাজের মধ্যে মহান আল্লাহর জন্য বান্দার পক্ষ থেকে এ মানপত্র তথা দোয়ায়ে ইসতেফতাহগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবেদন। যাতে আল্লাহর গুণ ও প্রশংসার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে বান্দার সাহায্য প্রার্থনার বিষয়টি উঠে এসেছে।
মুমিন মুসলমান যখন নামাজে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা করে তারপর নামাজের রোকনগুলো যথাযথভাবে আদায় করে মহান আল্লাহ বান্দার এসব আবেদন কবুল করে নন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সানা বা দোয়ায়ে ইসতিফতাহ পড়ে তাঁর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের তাকবিরে তাহরিমার পর সানাগুলোর মধ্য থেকে যার যার জন্য সহজ যে কোনো পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন