ইসলাম কিউ এ

যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু তাকে মক্কায় ঢুকতে দেয়া হয়নি

যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু তাকে মক্কায় ঢুকতে দেয়া হয়নি

প্রশ্ন: আমার এক বন্ধু হজ্জে গিয়েছে। সে মদিনার মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। চেকপোস্টে পৌঁছার পর তাকে মদিনাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে; কারণ তার কাছে হজ্জের তাসরিহ (অনুমতিপত্র) ছিল না। ফিরে এসে সে ইহরামের পোশাক খুলে ফেলেছে। সে কি এ হজ্জের সওয়াব পাবে; সে ইহরাম বেঁধেছে, কিন্তু মক্কায় ঢুকতে পারেনি?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক: হজ্জ আদায় না করে ফিরে আসা ও হালাল হয়ে যাওয়ার কারণে তার কোন গুনাহ হবে না। কারণ তাকে জোরপূর্বক তা করানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং তিনি বান্দাদের প্রতি দয়াবান। সে ইখলাসের সাথে হজ্জের যতটুকু আমল করেছে সে জন্য সওয়াব পাবে।

দুই: যে ব্যক্তি ইহরামকালে শর্ত করে নিয়েছে এভাবে যে, ‘যদি কোন প্রতিবন্ধকতা তাকে বাধাগ্রস্ত করে তাহলে সে বাধাপ্রাপ্তিস্থলে হালাল হয়ে যাবে’ তাহলে তার উপর কোন দায় বর্তাবে না। আর যদি সে এমন কোন শর্ত না করে থাকে তাহলে তাকে একটি হাদি (পশু) যবেহ করতে হবে; যেহেতু সে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যা কিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬] এরপর মাথা মুণ্ডন করবে বা চুল ছোট করবে। এর মাধ্যমে সে ইহরাম থেকে হালাল হবে।

আল্লাহই তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীবর্গের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি

শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গাদইয়ান, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন কুউদ

[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/৩৫০)]

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: এমন ব্যক্তি সম্পর্কে যিনি তাসরিহ (অনুমতিপত্র) ছাড়া হজ্জে গিয়েছেন কিন্তু তাকে মক্কায় ঢুকতে দেয়া হয়নি; তার উপর কি অনিবার্য হবে?

উত্তরে তিনি বলেন:

যদি তিনি ইহরামের সময় বলে থাকেন: ‘যদি কোন প্রতিবন্ধকতা তাকে বাধাপ্রাপ্ত করে তাহলে বাধাপ্রাপ্তিস্থলে হালাল হয়ে যাবেন’ তাহলে তিনি হালাল হয়ে যাবেন; তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। আর যদি এমন কোন শর্ত না করেন তাহলে একটি হাদি (পশু) যবেহ করা তার উপর ফরজ হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন: “যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যা কিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬] সে ব্যক্তি যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেখানে হালাল হবে (মাথা মুণ্ডন করবে অথবা চুল ছোট করবে)।” সমাপ্ত

[শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (২৩/৪৩৩)]

প্রশ্ন: আমি একবার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং মানত করেছিলাম যে, সুস্থ হলে আল্লাহর জন্য ১৫টি রোজা রাখব; আমি কোন সময় নির্ধারণ করিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি সুস্থ হয়েছি এবং রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করেছি। পাঁচদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর শাবান মাসে আরও পাঁচদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর রমজান শুরু হলে রমজানের রোজা রেখেছি। এখন আমরা শাওয়াল মাসে আছি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কি শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উত্তম; নাকি মানতের বাকী পাঁচদিনের রোজা পরিপূর্ণ করা উত্তম? দয়া করে জানাবেন, আল্লাহ আপনাকে মোবারকময় করুন।

প্রশ্ন: আমি একবার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং মানত করেছিলাম যে, সুস্থ হলে আল্লাহর জন্য ১৫টি রোজা রাখব; আমি কোন সময় নির্ধারণ করিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি সুস্থ হয়েছি এবং রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করেছি। পাঁচদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর শাবান মাসে আরও পাঁচদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর রমজান শুরু হলে রমজানের রোজা রেখেছি। এখন আমরা শাওয়াল মাসে আছি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কি শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উত্তম; নাকি মানতের বাকী পাঁচদিনের রোজা পরিপূর্ণ করা উত্তম? দয়া করে জানাবেন, আল্লাহ আপনাকে মোবারকময় করুন।

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

আগে মানতের অবশিষ্ট রোজাগুলো শেষ করা আপনার কর্তব্য। এরপর সম্ভব হলে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবেন। যদি ছয় রোজা নাও রাখতে পারেন কোন অসুবিধা নেই। কারণ শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব; ফরজ নয়। পক্ষান্তরে মানতের রোজা রাখা ফরজ। তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে- নফলের আগে ফরজ রোজা রাখা। আপনি যদি লাগাতরভাবে ১৫টি রোজা রাখার নিয়ত করে থাকেন তাহলে আপনাকে লাগাতরভাবে ১৫টি রোজা রাখতে হবে। আলাদা আলাদাভাবে রাখলে চলবে না; বরং লাগাতরভাবে রাখতে হবে। আর পূর্বের রোজাগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

আর যদি আপনি লাগাতরভাবে রাখার নিয়ত না করে থাকেন তাহলে বাকী ৫টি রোজা রাখলে ইনশাআল্লাহ আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে।

আর পরবর্তীতে কখনও মানত করবেন না; মানত করা সমীচীন নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা মানত করো না; কারণ মানত তাকদীর পরিবর্তন করে না। মানতের মাধ্যমে কৃপণের সম্পদ খরচ করানো হয়।”

এ কারণে মানত করা ঠিক না। অসুস্থ ব্যক্তির জন্যেও না; অসুস্থ নয় এমন ব্যক্তির জন্যেও না। তবে কেউ যদি আল্লাহর কোন একটি আনুগত্য পালন করার মানত করে যেমন- নামায, রোজা তাহলে সে মানত পূর্ণ করা ফরজ। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে তার উচিত সে আনুগত্য পূর্ণ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার মানত করেছে সে আল্লাহর অবাধ্য হবে না।”[সহিহ বুখারি]

অতএব কোন ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট কিছুদিন রোজা রাখার অথবা দুই রাকাত নামায পড়ার অথবা বিশেষ সম্পদ সদকা করার মানত করে থাকে তার উচিত সে আনুগত্যের কাজ পালন করা। কেননা আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন: “তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে যেদিনের অনিষ্ট সম্প্রসারিত।”[সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৭] এবং কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বোক্ত হাদিসে মানত পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং মানত রোগমুক্তির কারণ নয়; প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার কারণ নয়। তাই মানতের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানুষ নিজের উপর সেটা অনিবার্য করে নেয়। এর মাধ্যমে কৃপনের সম্পদ খরচ করানো হয়। পরবর্তীতে মানতকারী আফসোস করে, কষ্টে পড়ে এবং প্রত্যাশা করে সে যদি মানত না করত। আলহামদুলিল্লাহ ইসলামি শরিয়ত এমন বিধান জারী করেছে যা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সহজতর। সেটা হচ্ছে- মানত করা থেকে নিষেধাজ্ঞা।

শাইখ বিন বায / নুরুন আলাদ দারব ফতোয়াসমগ্র (৩/১২৬১)

প্রশ্ন: নফল রোজা রাখতে গিয়ে কষ্ট হলে রোজা পূর্ণ করা উত্তম; নাকি ভেঙ্গে ফেলা?

প্রশ্ন: নফল রোজা রাখতে গিয়ে কষ্ট হলে রোজা পূর্ণ করা উত্তম; নাকি ভেঙ্গে ফেলা?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

নফল রোজাপালনকারীর জন্যে রোজা পূর্ণ করা অথবা ভেঙ্গে ফেলা উভয় সুযোগ রয়েছে। তবে কষ্টকর না হলে রোজা পূর্ণ করাই উত্তম। আর কষ্টকর হলে শরিয়তের সহজতা গ্রহণ করে ভেঙ্গে ফেলা উত্তম। আল্লাহই তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারপরিজন ও সাহাবীবর্গের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুল আযিয আলে শাইখ, শাইখ সালেহ আল-ফাওযান, শাইখ বকর আবু যায়েদ।

প্রশ্ন: আমি ও আমার স্ত্রী ইয়েমেন থাকি। এখন পর্যন্ত দেশে আমাদের মালিকানায় কোন বাসস্থান নেই। তবে আমার হাতে কিছু অর্থ আছে। এখনও আমরা ফরজ হজ্জ আদায় করিনি। এমতাবস্থায় আমাদের উপরে কি অবিলম্বে হজ্জ আদায় করা ফরজ; যেহেতু আমরা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান; যদিও আমাদের কোন বাসা নেই? নাকি আমরা আগে একটা বসত বাড়ী ক্রয় করব; তারপর সামর্থ্য থাকলে হজ্জ আদায় করব; অন্যথায় সামর্থ্যের জন্য অপেক্ষা করব?

প্রশ্ন: আমি ও আমার স্ত্রী ইয়েমেন থাকি। এখন পর্যন্ত দেশে আমাদের মালিকানায় কোন বাসস্থান নেই। তবে আমার হাতে কিছু অর্থ আছে। এখনও আমরা ফরজ হজ্জ আদায় করিনি। এমতাবস্থায় আমাদের উপরে কি অবিলম্বে হজ্জ আদায় করা ফরজ; যেহেতু আমরা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান; যদিও আমাদের কোন বাসা নেই? নাকি আমরা আগে একটা বসত বাড়ী ক্রয় করব; তারপর সামর্থ্য থাকলে হজ্জ আদায় করব; অন্যথায় সামর্থ্যের জন্য অপেক্ষা করব?

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ আদায় করা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭] সামর্থ্য হচ্ছে- সফরের পাথেয় ও বাহন থাকা। এ পাথেয় ও বাহন হজ্জ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত বাসস্থান, নিজস্ব খরচ ও সন্তানসন্ততির খরচ বাদ দিয়ে অতিরিক্ত থাকতে হবে। সুতরাং যে পরিমাণ সম্পদ আপনার হাতে আছে তা যদি আপনার জরুরী খরচাদি না মেটায়; জরুরী খরচের মধ্যে রয়েছে একটি বাসস্থান থাকা; তাহলে আপনার উপর হজ্জ আদায় করা ফরজ নয় যতদিন না আপনাদের জরুরী প্রয়োজন আপনারা মেটাতে না পারেন। জরুরী প্রয়োজন মিটিয়ে যদি আপনাদের হাতে কিছু থাকে তাহলে হজ্জ করবেন। আপনাদের উপর হজ্জ ফরজ নয় এবং ততদিন পর্যন্ত ফরজ হবে না যতদিন না আপনারা আপনাদের বাসস্থানের প্রয়োজন, নিজের খরচ, নিজের ছেলেমেয়েদের খরচ ও যাদের ভরণপোষণ দেয়া আপনাদের উপর ফরজ তাদের খরচাদি দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতে থাকে। সমাপ্ত

[শাইখ সালেহ ফাওযানের ফতোয়াসমগ্র (২/৪৯৩)]

প্রশ্নঃ (09) যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করেনি তার হজ্জ কি শুদ্ধ হবে?

প্রশ্নঃ (09) যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করেনি তার হজ্জ কি শুদ্ধ হবে?

প্রশ্ন: আমি ১৪২২হিঃ সালে হজ্জ আদায় করেছি। তবে আমার নিকট কিছু মানুষের ঋণ আছে। কারণ হচ্ছে- আমি কিছু মানুষকে কর্জে হাসানা (ঋণ) দিয়েছিলাম; তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে, এখন এ অর্থ পরিশোধ করার দায় আমার উপর। আমি একজন শাইখকে জিজ্ঞেস করেছিলাম: আমি তো ঋণ পরিশোধ করিনি; এমতাবস্থায় হজ্জ করা জায়েয হবে কিনা? শাইখ বলেছেন: জায়েয হবে। কারণ আপনি জানেন যে, আপনি অচিরেই ঋণ পরিশোধ করে দিবেন, ইনশাআল্লাহ। একই বিষয়ে আপনাদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিপরীত তথ্য পেলাম। এমতাবস্থায় আমার হজ্জ কি কবুল হয়েছে? কারণ আমি ঋণ পরিশোধ না করে হজ্জে গেছি, পাওনাদারদের কাছ থেকে অনুমতি নেইনি। যদি আমার হজ্জ মাকবুল না হয়; তাহলে আমার করণীয় কি? আমার প্রথম হজ্জ কি ফরজ এবং দ্বিতীয় হজ্জ কি সুন্নত?

আলহামদুলিল্লাহ।

কোন প্রশ্নকারীর ইবাদত কবুল হওয়া সম্পর্ক প্রশ্ন করা এবং উত্তরদাতার এ সম্পর্কে উত্তর দেয়া উচিত নয়। কারণ ইবাদত কবুল হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর নিকট। বরং প্রশ্ন করতে হবে ও উত্তর দিতে হবে ইবাদত শুদ্ধ হওয়া সম্পর্কে, ইবাদতের শর্তাবলি ও রুকনগুলো পরিপূর্ণ হওয়া সম্পর্কে।

যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল কিন্তু তার জিম্মাদারিতে অন্যদের পাওনা ঋণ রয়ে গেছে তার হজ্জ সহিহ হবে; যদি হজ্জের রুকন ও শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয়। সম্পদের সাথে বা ঋণের সাথে হজ্জের শুদ্ধতার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যে ব্যক্তির ঋণ আছে সে ব্যক্তির জন্য হজ্জ না করা উত্তম। যে অর্থ সে হজ্জ আদায়ে খরচ করবে সে অর্থ ঋণ আদায়ে খরচ করা উত্তম এবং শরয়ি বিবেচনায় সে সামর্থ্যবান নয়। এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির আলেমগণের ফতোয়া নিম্নরূপ:

১- হজ্জ আদায় করার জন্য যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করেছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন: ইনশাআল্লাহ হজ্জ সহিহ। হজ্জের শুদ্ধতার উপর ঋণ গ্রহণের কোন প্রভাব নেই। শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গাদইয়ান।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/৪২) থেকে সমাপ্ত]

২- তাঁরা বলেন: “হজ্জ ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে- সামর্থ্যবান হওয়া। সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে- আর্থিক সামর্থ্য। আর যে ব্যক্তির উপর ঋণ রয়েছে, ঋণদাতারা যদি ঋণ আদায় করার আগে হজ্জ আদায়ে বাধা দেয় তাহলে সে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করবে না। কারণ সে সামর্থ্যবান নয়। আর যদি তারা ঋণ আদায়ে চাপ না দেয় এবং সে জানে যে, তারা সহজভাবে নিবে তাহলে তার জন্য হজ্জ আদায় করা জায়েয আছে। হতে পারে হজ্জ তার ঋণ আদায় করার জন্য কোন কল্যাণের পথ খুলে দিবে।”

শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গাদইয়ান [স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/৪২) থেকে সমাপ্ত]

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইট

প্রশ্ন: (8)জনৈক ব্যক্তি শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখতে চান। একদিন তিনি রোজা রাখার নিয়ত করলেন; কিন্তু কোন ওজর ছাড়াই রোজাটি ভেঙ্গে ফেলেন; রোজাটি পূর্ণ করেনি। যে দিনের রোজাটি তিনি ভেঙ্গেছেন সে দিনের রোজাটি কি ছয় রোজা রাখা শেষে কাযা করতে হবে? এতে করে তার সর্বমোট সাতদিন রোজা রাখা হবে? নাকি শাওয়াল মাসের শুধু ছয়দিন রোজা রাখলেই চলবে?

প্রশ্ন: (8)জনৈক ব্যক্তি শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখতে চান। একদিন তিনি রোজা রাখার নিয়ত করলেন; কিন্তু কোন ওজর ছাড়াই রোজাটি ভেঙ্গে ফেলেন; রোজাটি পূর্ণ করেনি। যে দিনের রোজাটি তিনি ভেঙ্গেছেন সে দিনের রোজাটি কি ছয় রোজা রাখা শেষে কাযা করতে হবে? এতে করে তার সর্বমোট সাতদিন রোজা রাখা হবে? নাকি শাওয়াল মাসের শুধু ছয়দিন রোজা রাখলেই চলবে?

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ।

নফল রোজা শুরু করলে সেটা পরিপূর্ণ করা কি ফরজ নাকি ফরজ নয়; এ ব্যাপারে আলেমগণের দুইটি অভিমত রয়েছে:

প্রথম অভিমত:

নফল রোজা সমাপ্ত করা অনিবার্য। এটি শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। তাঁদের দলিল হচ্ছে-

১. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে এসে বললেন: কোন খাবার আছে? আমি বললাম: না। তিনি বললেন: তাহলে আমি রোজাদার। পরবর্তীতে অন্য একদিন তিনি আমার ঘরে আসলেন; তখন আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদেরকে ‘হাইস’ (খেজুর ও পনিরের মিশ্রণে তৈরী খাবার) হাদিয়া দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন: আমাকে দেখাও তো; আমি তো রোজা রেখে ভোর করেছি। অতঃপর তিনি খেয়েছেন।[সহিহ মুসলিম (১১৫৪)]

২. আবু জুহাইফা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “… আবু দারদা এলেন এবং তাঁর জন্য অর্থাৎ সালমানের জন্য খাবার প্রস্তুত করলেন। এরপর বললেন: আমি রোজা রেখেছি; আপনি খান। সালমান বললেন: আপনি না খেলে আমি খাব না। বর্ণনাকারী বলেন: অবশেষে তিনি খেলেন। এরপর সালমান বললেন: আপনার উপর আপনার প্রভুর অধিকার রয়েছে; আপনার আত্মার অধিকার রয়েছে। আপনার পরিবারের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক প্রাপককে তার অধিকার প্রদান করুন। এরপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে ঘটনাটি তাঁকে বললেন; তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: সালমান সঠিক বলেছে।”[সহিহ বুখারি (১৯৬৮)]

৩. আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাবার তৈরী করলাম। খাবার যখন সামনে পেশ করা হলো তখন উপস্থিত একজন বলল: আমি রোজা রেখেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার ভাই তোমাকে নিমন্ত্রণ করেছে, কষ্ট করে খাবার তৈরী করেছে, তাই তুমি রোজাটি ভেঙ্গে ফেল এবং চাইলে এর বদলে অন্য একটি রোজা রেখে নিও।”[দারাকুতনি (২৪); ফাতহুল বারী গ্রন্থে (৪/২১০) ইবনে হাজার হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

দ্বিতীয় অভিমত: নফল রোজা সমাপ্ত করা তার উপর অনিবার্য। যদি সে নফল রোজা নষ্ট করে; তাহলে তাকে সে রোজা কাযা করতে হবে। এটি ইমাম আবু হানিফার অভিমত। কাযা করা ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে তারা নিম্নোক্ত দলিল পেশ করেন:

১. আয়েশা (রাঃ) বলেন: আমাকে ও হাফসাকে কিছু খাবার হাদিয়া পাঠানো হল; সেদিন আমরা দুইজন রোজা রেখেছিলাম। তবে হাদিয়া পেয়ে আমরা রোজা ভেঙ্গে ফেললাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে আসলে আমরা বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের কাছে কিছু হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল; সেটা খাওয়ার জন্য আমাদের তীব্র আগ্রহ হল বিধায় আমরা রোজা ভেঙ্গে ফেললাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: উচিত হয়নি; তোমাদেরকে এ দিনের বদলে অন্য একদিন রোজা রাখতে হবে।[সুনানে আবু দাউদ (২৪৫৭), সুনানে তিরমিযি (৭৩৫), হাদিসটির সনদে যামিল নামে এক রাবী আছে। ‘তাকরিব’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- তিনি অজ্ঞাত পরিচয়। আল-মাজমু গ্রন্থে (৩৯৬) ইমাম নববি, যাদুল মাআদ গ্রন্থে ইবনুল কাইয়্যেম তাকে দুর্বল বলেছেন এবং আলবানি হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন।

২. ইমাম মুসলিম কর্তৃক সংকলিত পূর্বোক্ত আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসের বর্ণনায় কেউ কেউ বাড়তি বর্ণনা করেন যে, “আমি তো রোজাদার হিসেবে ভোর করেছি; এরপর তিনি খেয়েছেন এবং বলেছেন: আমি এদিনের পরিবর্তে অন্যদিন রোজা রাখব”। এর জবাবে বলা হয় যে, ইমাম নাসাঈ এ বাড়তি অংশকে দুর্বল বলেছেন। তিনি আরও বলেন: এটি ভুল। অনুরূপভাবে দারাকুতনি ও বাইহাকী এ বাড়তি অংশকে দুর্বল বলেছেন।

দলিল-প্রমাণের বলিষ্ঠতার কারণে প্রথম অভিমতটি অগ্রগণ্য। উম্মে হানির বর্ণিত রেওয়ায়েতও প্রথম অভিমতটির সমর্থন যোগায়। সে রেওয়ায়েতে এসেছে- “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি রোজা রেখেছিলাম; কিন্তু রোজাটি ভেঙ্গে ফেলেছি। তিনি তাকে বললেন: তুমি কি কাযা রোজা রাখছিলে? উম্মে হানি বললেন: না। তিনি বললেন: যদি নফল রোজা হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই।[সুনানে আবু দাউদ (২৪৫৬), আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: যদি কোন লোক রোজা রাখে, এরপর এমন কিছু হয় যাতে করে তার রোজা ভাঙ্গাটা পরিস্থিতির দাবী হয় তাহলে সে রোজা ভেঙ্গে ফেলবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল থেকে এটি জানা যায়। একবার তিনি মুমিনদের মা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন: তোমাদের কাছে কোন খাবার আছে? আয়েশা (রাঃ) বললেন: আমাদেরকে হাইস (একজাতীয় খাবার) হাদিয়া দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন: “আমাকে দেখাও তো; আমি তো রোজা রেখে ভোর করেছি”। এরপর তিনি খেয়েছেন। এটি নফল রোজার ক্ষেত্রে; ফরজ রোজার ক্ষেত্রে নয়।[ফতোয়াসমগ্র, পৃষ্ঠা-২০]

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, যে দিনের রোজা আপনি ভেঙ্গেছেন সেদিনের রোজা আপনাকে কাযা করতে হবে না। কারণ নফল রোজা পালনকারী নিজের কর্তৃত্বশীল। তাকে শাওয়ালের ছয় রোজা পরিপূর্ণ করতে হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রশ্ন: (7) আমার প্রতিবেশিনী একজন আমেরিকান খ্রিস্টান। খ্রিস্টমাস উপলক্ষে তিনি আমাকে কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছেন। আমি তাকে এ হাদিয়াগুলো ফেরত দিতে পারছি না; যাতে তিনি রেগে না যান!! আমি কি এ হাদিয়াগুলো গ্রহণ করতে পারি যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের পাঠানো হাদিয়া গ্রহণ করেছেন।

প্রশ্ন: (7) আমার প্রতিবেশিনী একজন আমেরিকান খ্রিস্টান। খ্রিস্টমাস উপলক্ষে তিনি আমাকে কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছেন। আমি তাকে এ হাদিয়াগুলো ফেরত দিতে পারছি না; যাতে তিনি রেগে না যান!! আমি কি এ হাদিয়াগুলো গ্রহণ করতে পারি যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের পাঠানো হাদিয়া গ্রহণ করেছেন।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

এক:

মূলতঃ কাফেরের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয; এতে করে তার সাথে সখ্যতা তৈরি হয়, তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা যায়। ঠিক যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুকাওকাস ও অন্যান্য কিছু কিছু কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন। ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: “মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ শীর্ষক পরিচ্ছেদ”। বুখারি (রহঃ) বলেন: আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: ইব্রাহিম (আঃ) সারাকে নিয়ে সফরে বের হলেন। তিনি এমন একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন যেখানে ছিল একজন বাদশাহ বা প্রতাপশালী। তিনি বললেন: সারাকে উপঢৌকন হিসেবে ‘হাজেরা’ কে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে (রোস্টকরা) বিষযুক্ত বকরী হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল। আবু হুমাইদ বলেন: আইলার বাদশাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটি সাদা রঙের খচ্চর ও একটি চাদর উপহার পাঠিয়েছিল এবং তাঁর নিকট তাদের কবিতার ছন্দ ব্যবহার করে চিঠি লিখেছিল। এক ইহুদি নারী কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষমাখা ছাগল হাদিয়া দেওয়ার ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেছেন।

দুই:

হৃদ্যতা তৈরির জন্য ও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে কাফেরকে বা মুশরিককে উপহার দেয়া জায়েয। বিশেষতঃ যদি প্রতিবেশী হয় অথবা আত্মীয় হয়। উমর (রাঃ) মক্কায় বসবাসকারী তাঁর মুশরিক ভাইকে একটি হুল্লাহ (এক ধরনের পোশাক) উপহার দিয়েছিলেন।”[সহিহ বুখারি, ২৬১৯] তবে কাফেরদের কোন উৎসবের দিন তাদেরকে উপহার দেয়া যাবে না। কেননা এটা এই বাতিল দিবসকে স্বীকৃতি দেয়া ও সেটা উদযাপনের পর্যায়ে পড়ে। আর তা যদি এমন হাদিয়া হয় যা দিবস উদযাপনের কাজে লাগে যেমন- খাবার বা মোমবাতি ইত্যাদি তাহলে সেটা আরও বেশি জঘন্য হারাম। কোন কোন আলেমের মতে- সেটা কুফরি।

যাইলায়ী তাঁর ‘তাবইনুল হাকায়েক’ গ্রন্থ (৬/২২৮) এ বলেন: “নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। অর্থাৎ এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর”। আবুল আহওয়াছ আল-কাবির (রহঃ) বলেন: “যদি কোন ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর নওরোজের দিন এসে কতিপয় মুশরিককে কিছু উপহার দেয় এবং এ উপহারের মাধ্যমে এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে”। ‘আল-জামে আল-আসগার’ গ্রন্থকার বলেন: “নওরোজের দিন যদি অপর কোন মুসলিমকে কোন একটা হাদিয়া দেয়; কিন্তু হাদিয়ার উদ্দেশ্য এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না হয় (বর্তমানে অনেক মানুষ যা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে) তাহলে কাফের হবে না। তবে বিশেষভাবে সে দিনে এটা না করাটাই বাঞ্ছনীয়। সে দিনের আগে বা পরে করতে পারে। যাতে করে সে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য না আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” আল-জামে আল-আসগার গ্রন্থে বলেন: “যে ব্যক্তি নওরোজের দিন এমন কিছু খরিদ করল যা সে পূর্বে খরিদ করত না, এর মাধ্যমে সে যদি ঐ দিনকে সম্মান করতে চায় তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি সে পানাহার ও নেয়ামত ভোগ করতে চায় তাহলে কাফের হবে না”। সমাপ্ত

‘আল-তাজ ওয়াল ইকলিল’ গ্রন্থে বলেন: কোন খ্রিস্টানকে তার ঈদ বা উৎসবের দিন উপলক্ষে উপহার দেয়াকে ইবনুল কাসেম মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলেছেন। অনুরূপভাবে কোন ইহুদীকে তার উৎসব উদযাপন উপলক্ষে খেজুর পাতা দেয়াও মাকরূহ। সমাপ্ত। হাম্বলি মাযহাবের ফিকাহর গ্রন্থ ‘আল-ইকনা’ তে বলা হয়েছে- “ইহুদি-খ্রিস্টানদের উৎসবে যোগদান করা, সেই দিন উপলক্ষে বেচাবিক্রি করা ও উপহার বিনিময় করা হারাম”। সমাপ্ত। বরং এ দিন উপলক্ষে কোন মুসলমানকে হাদিয়া দেয়াও জায়েয নয়। পূর্বোল্লেখিত হানাফি মাযহাবের বক্তব্যে এ কথা এসেছে। শাইখুল ইসলাম (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে এ উৎসবগুলোর মৌসুমে এমন কোন উপহার দেয়, এ উৎসব ছাড়া স্বভাবতঃ যে উপহার দেয়া হয় না— সে উপহার গ্রহণ করা যাবে না। বিশেষতঃ সে উপঢৌকনের মাঝে যদি তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে এমন কিছু থাকে। যেমন- যীশুর জন্মদিবস উপলক্ষে মোমবাতি বা এ জাতীয় কিছু উপহার দেয়া অথবা তাদের রোজার শেষ বৃহস্পতিবারে ডিম, দুধ ও ছাগল উপহার দেয়া। একইভাবে এ উৎসবগুলোর মৌসুমে এ উৎসবগুলোকে উপলক্ষ করে কোন মুসলমানকে উপহার দেয়া যাবে না। বিশেষতঃ উপহারটি যদি তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে এমন কিছু হয়; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি।[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২৭৭]

তিন:

আর কাফেরদের উৎসবের দিন তাদের দেয়া উপহার গ্রহণ করতে দোষের কিছু নেই। উপহার গ্রহণ করা— তাদের উৎসবে যোগদান বা এতে স্বীকৃতি প্রদানের পর্যায়ে পড়ে না। বরং ভাল ব্যবহার, সখ্যতা তৈরী, ইসলামের দিকে দাওয়াতের উদ্দেশ্য নিয়ে সে উপহার গ্রহণ করা যাবে। যে কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না আল্লাহ তাআলা সে কাফেরের সাথে ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য আচরণ করা বৈধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।”[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত:০৮] কিন্তু ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য আচরণের অর্থ এ নয় যে, তাদের সাথে অন্তরঙ্গতা ও ভালবাসা তৈরী হবে। কারণ কাফেরের সাথে অন্তরঙ্গতা ও ভালবাসা করা জায়েয নয়। তাকে বন্ধু ও সাথী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য দিয়ে। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”[সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ২২] তিনি আরও বলেন: “মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে।”[সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ১] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বের হয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১১৮] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না।”[সূরা হুদ, আয়াত: ১১৩] তিনি আরও বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” এগুলো ছাড়াও কাফেরের সাথে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আরও অনেক দলিল রয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “কাফেরের উৎসবের দিন তার দেয়া হাদিয়া গ্রহণের ব্যাপারে আমরা ইতিপূর্বে আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছি যে, একবার তাঁর কাছে নওরোজের হাদিয়া এল এবং তিনি সেটা গ্রহণ করলেন।

ইবনে আবু শাইবা বর্ণনা করেন যে, একবার এক মহিলা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, কিছু অগ্নিপূজক মহিলা আমাদের শিশুদেরকে দুধপান করায়। তাদের ঈদ-উৎসবের সময় তারা আমাদেরকে হাদিয়া দেয়। আয়েশা (রাঃ) বললেন: উৎসব উপলক্ষে যা কিছু জবাই করা হয়ে তা খাবে না; কিন্তু তাদের গাছের ফল খেতে পার। আবু বারাযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: কিছু অগ্নিপূজক তাঁর প্রতিবেশী ছিল। তারা নওরোজ ও মেহেরযান উপলক্ষে তাকে হাদিয়া দিত। তখন তিনি তাঁর পরিবারকে বলতেন: ফলজাতীয় জিনিসগুলো খাও; আর অন্যগুলো ফেলে দাও।

এ দলিলগুলো প্রমাণ করে যে, কাফেরদের উৎসবের সাথে তাদের হাদিয়া গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বরং সব সময়ের বিধান এক। যেহেতু হাদিয়া গ্রহণের মধ্যে তাদের ধর্মীয় নিদর্শনকে সহযোগিতা করার কিছু নেই। এরপর তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, আহলে কিতাবের জবাইকৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ হলেও যা উৎসবের জন্য জবাই করা হয়েছে তা খাওয়া জায়েয নয়। তিনি বলেন: আহলে কিতাবদের উৎসবের সেসব খাবার খাওয়া যাবে যেগুলো কিনে আনা হয়েছে, অথবা হাদিয়া হিসেবে এসেছে। তবে উৎসব উপলক্ষে জবাইকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। আর অগ্নিপূজকদের জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়ার বিধান তো সবার জানা আছে— এটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) তাদের ঈদ উপলক্ষ্যে যে প্রাণী জবাই করে অথবা গায়রুল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে তারা যে প্রাণী জবাই করে যেমন- ঈসা (আঃ) বা শুক্রতারার নৈকট্য হাছিলের জন্য (ঠিক মুসলমানেরা যেভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য জবাই করে) সেগুলোর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ থেকে দুইটি অভিমত পাওয়া যায়। তাঁর থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে- এগুলো খাওয়া জায়েয হবে না; যদিও জবাই এর সময় গায়রুল্লাহর নাম না নেয়া হয়। এই গোশত খাওয়া হারাম হওয়ার হুকুমটি আয়েশা (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে…।[ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২৫১]

সারকথা হচ্ছে- আপনার খ্রিস্টান প্রতিবেশিনীর দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে; তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে। শর্তগুলো হচ্ছে-

এক.হাদিয়াটা জবাইকৃত প্রাণীর গোশত হতে পারবে না; যে প্রাণী তাদের ঈদ-উৎসব উপলক্ষে জবাই করা হয়েছে।

দুই. হাদিয়া এমন কিছু হতে পারবে না যা তাদের উৎসব উদযাপনের সাথে সদৃশতা তৈরী করে। যেমন- মোমবাতি, ডিম, খেজুরের ডাল ইত্যাদি।

তিন. নিজের সন্তানদেরকে ওয়ালা ওয়াল বারা (শত্রুতা ও মিত্রতা) এর আকিদা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাতে তারা এই উৎসবের প্রতি দুর্বল না হয় অথবা এই উপহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে।

চার. এই উপঢৌকন গ্রহণের উদ্দেশ্য হবে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরী করা, তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া; তাদের প্রতি ভালবাসা বা হৃদ্যতা থেকে নয়। যদি এমন জিনিস দিয়ে হাদিয়া আসে যা গ্রহণ করা জায়েয নয় তাহলে হাদিয়া গ্রহণ না করার কারণ উল্লেখ করে সেটা প্রত্যাহার করতে হবে। যেমন- আপনি বলতে পারে; আমরা আপনার হাদিয়াটি নিতে পারছি না; কারণ এটি আপনাদের উৎসব উপলক্ষে জবাই করা হয়েছে। আমাদের জন্য এটি খাওয়া জায়েয নয়। অথবা এই হাদিয়াগুলো তারা গ্রহণ করতে পারেন যারা এ উৎসব পালনে অংশ গ্রহণ করেন; আমরা তো আপনাদের এ উৎসব পালন করি না; যেহেতু আমাদের ধর্মে এ উৎসব অনুমোদিত নয়; এ উৎসবের মধ্যে এমন কিছু বিশ্বাস আছে যা আমাদের ধর্মমতে সঠিক নয়— এ ধরনের কোন কথা। এ কথাগুলো তাদেরকে দাওয়াত দেয়ার একটা গ্রাউন্ড তৈরী করবে এবং তারা যে কুফরের মধ্যে রয়েছে এর ভয়াবহতা তুলে ধরবে।

মুসলমানের উচিত তার ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করা। ধর্মীয় বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা। লজ্জাবোধ করে অথবা সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য না দেখানো। বরং আল্লাহকে লজ্জাবোধ করা অধিক যুক্তিযুক্ত। আরও জানতে 13642 ও 947 নং প্রশ্ন দেখুন। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রশ্ন: (৬) বিভিন্ন বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার শরয়ি বিধান কী? যেমন- বিশ্ব পরিবার দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ বছর। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন- মেরাজ দিবস পালন, মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মবার্ষিকী কিংবা হিজরত বার্ষিকী পালন করার হুকুম কি। অর্থাৎ এ উপলক্ষে মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করার উদ্দেশ্যে কিছু প্রচারপত্র প্রস্তুত করা, আলোচনাসভা বা ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা ইত্যাদি।

প্রশ্ন: (৬) বিভিন্ন বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার শরয়ি বিধান কী? যেমন- বিশ্ব পরিবার দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ বছর। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন- মেরাজ দিবস পালন, মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মবার্ষিকী কিংবা হিজরত বার্ষিকী পালন করার হুকুম কি। অর্থাৎ এ উপলক্ষে মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করার উদ্দেশ্যে কিছু প্রচারপত্র প্রস্তুত করা, আলোচনাসভা বা ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা ইত্যাদি।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

আমার কাছে যা অগ্রগণ্য তা হচ্ছে- যে দিবসগুলো বা সমাবেশগুলো প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে সেগুলো বিদআতী ঈদ বা নবপ্রচলিত উৎসব। এগুলো ইসলামি শরিয়তে নব-সংযোজন; যেগুলোর পক্ষে আল্লাহ তাআলা কোন দলিল-প্রমাণ নাযিল করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা নব-প্রচলিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ প্রতিটি অভিনব বিষয়— বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হচ্ছে— ভ্রান্তি।” [মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “প্রতিটি কওমের ঈদ (উৎসব) আছে। এটি আমাদের ঈদ।”[সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম]

ইবনে তাইমিয়া প্রণীত “ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম লি মুখালিফাতি আসহাবিল জাহিম” নামক গ্রন্থে ইসলামী শরিয়তে ভিত্তি নেই এমন নবপ্রচলিত ঈদ-উৎসব পালনের নিন্দাসূচক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এ ধরনের বিদআতের প্রচলনে দ্বীনের কি ক্ষতি হয় তা সকল মানুষ জানে না; বরং অধিকাংশ মানুষ-ই জানে না। বিশেষতঃ এ ধরনের বিদআত যদি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ইবাদত শ্রেণীয় হয়। শুধু প্রজ্ঞাবান আলেমগণ এ ধরণের বিদআতের ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করতে পারেন। যদিও মানুষ ভাল দিক বা ক্ষতিকর দিক বুঝতে না পারে তদুপরি তাদের কর্তব্য হচ্ছে— কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা। যে ব্যক্তি বিশেষ কোনদিবসে বিশেষ রোজা, নামায, ভোজ, সাজ-সজ্জা, বিশেষ খরচ ইত্যাদি আমলের প্রচলন করে তার এ আমলের সাথে অবশ্যই অন্তরের বিশ্বাস জড়িত। অর্থাৎ এ দিন অন্য কোন দিনের চেয়ে উত্তম— এ বিশ্বাস। যদি সে ব্যক্তির অন্তরে অথবা তার অনুসারীর অন্তরে এ বিশ্বাস না থাকত তাহলে এ বিশেষ দিনে বা রাতে বিশেষ ইবাদত করার জন্য অন্তর উদ্যোগী হত না। অথচ যথাযোগ্য দলিল ছাড়া কোন বিধানকে প্রাধান্য দেয়া জায়েয নেই।

স্থান, কাল ও গণজমায়েত এ তিনটিকেই ঈদ বলা হয়। এ তিনটি থেকে আরো অনেক বিদআত উৎসারিত হয়। যেমন- তিন প্রকার সময়ের মধ্যে স্থানকেন্দ্রিক ও কর্মকেন্দ্রিক কিছু বিদআতী উৎসব অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্রকার: যেদিনকে মূলতই ইসলামী শরিয়ত শ্রেষ্ঠত্ব দেয়নি। এ দিনের ব্যাপারে সলফে সালেহীনগণের নিকট কোন আলোচনা নেই। এ দিনকে বিশেষত্ব দেয়ার মত অনিবার্য কিছু নেই।

দ্বিতীয় প্রকার: যে দিনে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেছে; যেরূপ ঘটনা অন্য দিনেও ঘটতে পারে। তবে তা এ দিনকে বিশেষ মৌসুম হিসেবে সাব্যস্ত করে না এবং সলফে সালেহীন এ দিনকে বিশেষত্ব দিতেন না। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশেষত্ব দিবে সে যেন খ্রিস্টানদের অনুকরণ করল; যারা ঈসা (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত যে কোন দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করত অথবা ইহুদীদের অনুকরণ করল। ঈদ পালন- ইসলামি শরিয়তের একটি বিধান। সুতরাং আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন সেটাই পালন করতে হবে; ইসলামের বাইরে কিছু প্রচলন করা যাবে না।

অনুরূপভাবে খ্রিস্টানগণ কর্তৃক ঈসা (আঃ) এর জন্মদিবস পালনের অনুকরণে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান দেখাতে গিয়ে কিছু কিছু লোক যা কিছুর প্রচলন করেছে সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি। অথচ যদি এটা নেক আমল হতো তাহলে তাঁরা সেটা না করার কোন কারণ নেই।

তৃতীয় প্রকার: ইসলামি শরিয়তে যে দিনগুলো সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত যেমন- আশুরার দিন, আরাফার দিন, দুই ঈদের দিন ইত্যাদি আত্মপ্রবৃত্তির অনুসারীগণ কর্তৃক এ দিনগুলোতে অভিনব কিছু আমল চালু করা হয় এবং এ বিশ্বাস করা হয় যে, এ আমলগুলো পালন করা মর্যাদাপূর্ণ; অথচ এগুলো মন্দ ও অননুমোদিত। যেমন- রাফেজি সম্প্রদায়ের আশুরার দিন পানি পান না করা ও শোক প্রকাশ করা ইত্যাদি। এগুলো নব-উদ্ভাবিত— আল্লাহ এসবের বিধান জারী করেননি, আল্লাহর রাসূল জারী করেননি, সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি, এমনকি রাসূলের পরিবারের কেউও করেননি। অপরদিকে শরিয়তের অনুমোদনের বাইরে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে, প্রতি বছরে ধারাবাহিকভাবে সমবেত হওয়া— পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমার নামাজ, ঈদের নামায ও হজ্জের জন্য সমবেত হওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই এটি নবপ্রচলিত বিদআত। এ বিষয়ে মৌলিক কথা হলো— সময় ঘুরলে শরিয়তের যে ইবাদতগুলো পুনঃপুনঃ আদায় করতে হয় আল্লাহ তাআলা নিজেই বান্দার জন্য সেগুলোর বিধান দিয়ে দিয়েছেন; সেগুলোই বান্দার জন্য যথেষ্ট। এরপর যদি নতুন কোন সমাবেশ চালু করা হয় এটা বিধান আরোপের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার তুল্য। এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কিছু অংশ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষ যদি অনিয়মিতভাবে কোন আমল করে সেটা এ পর্যায়ে পড়বে না।[সংক্ষেপে সমাপ্ত]

এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়: কোন মুসলমানের জন্য এ দিবসগুলো উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করা জায়েয নয়, যে দিবসগুলো প্রতিবছর পালন করা হয়, প্রতিবছর ঘুরে আসে। যেহেতু এগুলো মুসলমানদের ঈদ-উৎসবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা তুলে ধরেছি। আর যদি পুনঃপুনঃ পালিত না হয় এবং মুসলমানগণ এ অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দিতে পারে তাহলে ইনশাল্লাহ এতে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

মাসায়েল ওয়া রাসায়েল— মুহাম্মদ আল-হুমুদ আল-নজদি, পৃষ্ঠা-৩১

প্রশ্ন: (5) তাবেয়ী কারা, তাবে-তাবেয়ী কারা?

প্রশ্ন: (5) তাবেয়ী কারা, তাবে-তাবেয়ী কারা?

উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

তাবেয়ী হচ্ছেন- যারা নবুয়তি যুগের পরে এসেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেননি। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গ পেয়েছেন। তাবে-তাবেয়ী হচ্ছেন- যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের সাক্ষাত লাভ করেনি; তাবেয়ীগণের সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং তাঁদের সঙ্গ পেয়েছেন।

উলুমুল হাদিস এর পরিভাষায়- তাবেয়ী হচ্ছেন: যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তিনি তাবেয়ী। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, এর জন্য দীর্ঘদিনের সঙ্গ শর্ত নয়। অতএব, যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনিই তাবেয়ী। তাবেয়ীর মধ্যে উত্তমতার স্তরভেদ রয়েছে।

হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) ‘নুখবাতুল ফিকার’ (৪/৭২৪) গ্রন্থে বলেন: তাবেয়ী হচ্ছেন- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন। সমাপ্ত।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: খতিব আল-বাগদাদী বলেন: তাবেয়ী হচ্ছেন যিনি সাহাবীর শিষ্য ছিলেন। হাকেমের বক্তব্যের দাবী হচ্ছে- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তাকে তাবেয়ী বলা যাবে। তাঁর থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, যদিও সাহাবীর শিষ্যত্ব না পেয়ে থাকুক না কেন? সমাপ্ত। ইরাকী (রহঃ) তাঁর ‘আলফিয়া’ (পৃষ্ঠা-৬৬) তে বলেন: তাবেয়ী হচ্ছেন- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন। তাবে-তাবেয়ীন হচ্ছেন তাঁরা যারা তাবেয়ীগণের সাক্ষাত পেয়েছেন; সাহাবীগণকে পায়নি। তাবেয়ীগণের উদাহরণ হচ্ছে- সাঈদ ইবনে আল-মুসায়্যিব, উরওয়া ইবনে যুবাইর, হাসান বসরী, মুজাহিদ ইবনে জাবর, সাঈদ ইবনে যুবায়ের, ইবনে আব্বাসের ক্রীতদাস ইকরিমা, ইবনে উমরের ক্রীতদাস নাফে।

তাবে-তাবেয়ীগণের উদাহরণ হচ্ছে- ছাওরী, মালেক, রাবিআ, ইবনে হুরমুয, হাসান ইবনে সালেহ, আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান, ইবনে আবু লাইলা, ইবনে শুবরুমা, আল-আওযায়ী।

দুই:

ইমাম বুখারী (৩৬৫১) ও ইমাম মুসলিম (২৫৩৩) ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে- আমার প্রজন্ম। এরপর তাদের পরে যারা। এরপর তাদের পরে যারা। অতঃপর এমন কওম আসবে যাদের সাক্ষ্য হলফের পিছনে, হলফ সাক্ষ্যের পিছনে ছুটাছুটি করবে।”

ইমাম নববী বলেন:

বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে-সাহাবায়ে কেরাম। দ্বিতীয় প্রজন্ম হচ্ছে- তাবেয়ীগণ। তৃতীয় প্রজন্ম হচ্ছে- তাবে-তাবেয়ীগণ। [ইমাম নববী রচিত সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ (১৬/৮৫) থেকে সমাপ্ত]

হাফেয ইবনে হাজার বলেন:

হাদিসের বাণী: “এরপর তাদের পরে যারা” অর্থাৎ তাদের পরের প্রজন্ম। তারা হচ্ছেন- তাবেয়ীগণ। “এরপর তাদের পরে যারা”। তারা হচ্ছেন- তাবে-তাবেয়ীগণ। ফাতহুল বারী (৭/৬) থেকে সমাপ্ত।

ক্বারী (রহঃ) বলেন:

সুয়ুতী বলেন: বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এটি অর্থাৎ প্রজন্ম বিশেষ কোন সময়সীমাতে আবদ্ধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে- সাহাবায়ে কেরাম। নবুয়তের শুরু থেকে সর্বশেষ সাহাবীর মৃত্যু পর্যন্ত ১২০ বছর এ প্রজন্মের সময়কাল। তাবেয়ী-প্রজন্মের সময়কাল ১০০ হিঃ থেকে ৭০ বছর। আর তাবে-তাবেয়ী প্রজন্মের সময়কাল এরপর থেকে ২২০ হিঃ পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যাপকভাবে বিদআতের উদ্ভব ঘটে। মুতাযিলারা তাদের মুখের লাগাম খুলে দেয়। দার্শনিকেরা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। দ্বীনদার আলেমগণকে “কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি” এই মতবাদ মেনে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। এভাবে গোটা পরিস্থিতি ওলট পালট যায়। এভাবে আজ অবধি দ্বীনদারি হ্রাস পেতেই আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর বাস্তব নমুনা যেন ফুটে উঠেছে- “এরপর মিথ্যা ব্যাপক হারে দেখা দিবে”। ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’ (৯/৩৮৭৮) গ্রন্থ থেকে সমাপ্ত।

আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রশ্ন: (4) আমি যেনা করতে চাই! আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। দশ বছর যাবৎ ধৈর্য ধরে আছি। আলহামদু লিল্লাহ আমি নামায পড়ি, রোজা রাখি। কিন্তু যখনই আমি কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আমি যেনা করতে চাই! আমি যেনা করতে চাই! আমি দোয়া করি; কিন্তু দুআ কবুল হয় না। আমি কি করব? আমি আর পারছি না।

প্রশ্ন: (4) আমি যেনা করতে চাই! আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। দশ বছর যাবৎ ধৈর্য ধরে আছি। আলহামদু লিল্লাহ আমি নামায পড়ি, রোজা রাখি। কিন্তু যখনই আমি কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আমি যেনা করতে চাই! আমি যেনা করতে চাই! আমি দোয়া করি; কিন্তু দুআ কবুল হয় না। আমি কি করব? আমি আর পারছি না।

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

আপনি আমাদের সাথে যেমন স্পষ্টবাদী হয়েছেন আমরাও আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব। আপনি কি আমাদের কাছে এজন্য মেইল করেছেন যে, আমরা আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিব?! আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়ার অধিকার তো আমাদের নেই। নাকি আপনি চাচ্ছেন যে, আমরা আপনাকে ব্যভিচার বৈধ বলে ফতোয়া দিব?! কোন মুসলমানের পক্ষে এ ফতোয়া দেয়া সম্ভব নয়। যেনা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই যেনার শাস্তি বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা নির্ধারণ করেছেন এবং এ গুনাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিধান আরোপ করেছেন। যেমন- যেনাকারী তওবা না করা পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে দেয়া হবে না। এ গুনার কারণে আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে শাস্তির কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের একটি চুল্লিতে ব্যভিচারী নর-নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় একত্রিত করবেন। সেখানে জাহান্নামের আগুন তাদেরকে পোড়ানো হবে। তাদের বিকট শব্দ শুনা যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি যেনা করতে চায় আমাদের কাছে তার জন্য অনুমতি নেই। আমাদের কাছে যেনা বৈধ মর্মে কোন ফতোয়া নেই।

দুই:

আগেই বলেছি আমরা আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব, আপনি যেমন আমাদের সাথে স্পষ্টবাদী হয়েছেন। ধরুন, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন –আল্লাহ না করুন- আপনার বোন বা মা যদি সে অবস্থার মধ্যে পড়ে এবং আপনি যা করতে চাচ্ছেন তারাও তা করতে চায় তখন তাদের এই চাওয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কি হবে?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি- আপনি যা করতে চাচ্ছেন সেটা কত বড় জঘন্য। আচ্ছা এ প্রসঙ্গ বাদ দিন; অন্য প্রসঙ্গে আসুন। এ বিশ্বে এমন কত যুবক আছে যারা যেনা করতে চাচ্ছে। হতে পারে তাদের অনেকে – আপনার মত- সম্ভ্রান্ত। হতে পারে সেও এমন কঠিন ও কষ্টকর অবস্থা সইতে পারছে না। সেও যেনা করতে চাচ্ছে এবং সে যে মহিলার সাথে যেনা করতে চাচ্ছে – আল্লাহ না করুন- সে আপনার বোন অথবা আপনার মা। আপনি তখন কি বলবেন?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। জেনে রাখুন, আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা আপনার বোন ও মায়ের জন্যেও যেনা করার অনুমতি দিলাম। আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা মানুষকে আপনার বোন ও মায়ের সাথে যেনা করার অনুমতি দিলাম। ইসলামের মত পবিত্র শরিয়তে যা হওয়া অসম্ভব। আপনার বোন ও মায়ের ইজ্জত ইসলামী শরিয়তের মাধ্যমে সুরক্ষিত। আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের মাধ্যমে সংরক্ষিত। যে ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে এর সাজা পাবে। আপনি দেখলেন তো ইসলামী শরিয়া কিভাবে আপনার পরিবারের ইজ্জত-আব্রুর হেফাযত নিশ্চিত করেছে। সুতরাং আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে, আমরা আপনাকে অন্য নারীদের ইজ্জত কলঙ্কিত করার অনুমতি দিব এবং বলব, ঠিক আছে যেনা করুন; অসুবিধা নেই!!

আমরা আপনার সামনে যে উদাহরণটি তুলে ধরলাম সেটি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বোত্তম ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানেন, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন। যখন এক যুবক এসে তাঁর কাছে যেনা করার অনুমতি চাইল তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি তোমরা মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে? তুমি সেটা তোমার বোনের জন্য পছন্দ করবে? আমরা আশা করব, আপনি সচেতনভাবে অনুধাবন করবেন যে, আমরা যে উদাহরণটি পেশ করেছি এর মাধ্যমে শুধু আপনি যা করতে চাচ্ছেন সে বিষয়টির কদর্যতা তুলে ধরা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ ইচ্ছা হলেই মানুষের ইজ্জত হরণ করা বৈধ নয়। বরং তা পবিত্র শরিয়তের মাধ্যমে সংরক্ষিত। পূর্বোক্ত হাদিসটির পরিপূর্ণ ভাষ্য ও এ হাদিস বিষয়ক আরো কিছু সুন্দর কথা 52467 নং প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিন:

প্রিয় ভাই, আপনি কি ভাবছেন যেনা করার মাধ্যমে যৌন উপভোগ করে আপনি প্রশান্তি পাবেন – আল্লাহ আপনাকে এ গুনাহ দূরে রাখুন ও পবিত্র রাখুন?! যদি আপনি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে মহা ভুলের মধ্যে আছেন। বরং যেনাতে লিপ্ত হওয়া মানে দেহ, মন ও দ্বীনদারির উপর অতি তিক্ত কিছু পরিণামের দুয়ার খোলা। যেনা হচ্ছে- দ্বীনদারির হ্রাস, তাকওয়ার বিলুপ্তি, ব্যক্তিত্বের বিচ্যুতি, আত্মসম্মানের স্খলন, খেয়ানত, লজ্জাশীলতার হ্রাস, আল্লাহর নজরদারির অনুভূতিহীনতা, হারামের ব্যাপারে বেপরোয়া ইত্যাদি মন্দের মূল। যেনা অবধারিত করে দেয়: আল্লাহর অসন্তুষ্টি, চেহারায় কালি পড়া ও নিষ্প্রভ হওয়া, অন্তর মরে যাওয়া ও নূর চলে যাওয়া, হৃদয় সংকীর্ণ হওয়া ইত্যাদি। আমরা 20983 নং প্রশ্নের জবাবে এ পরিণামগুলো পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরেছি। সে উত্তরটি পড়তে পারেন। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এর ‘রওদাতুল মুহিব্বীন’ কিতাব থেকে আমরা এ বিষয়গুলো উদ্ধৃত করেছি।

চার:

প্রিয় ভাই, আসুন আপনাকে জিজ্ঞেস করি- আপনি নামায রোজা কেন করেন? যদি তা এ কারণে করে থাকেন- এটাই আপনার প্রতি ধারণা- যে, আল্লাহ আপনার উপর নামায পড়া ও রোজা রাখা ফরজ করেছেন এবং এ দুটো বর্জন করা হারাম করেছেন। তাহলে আমরা আপনাকে বলব, অনুরূপভাবে আল্লাহ আপনার উপর আপনার যৌনাঙ্গ হেফাযত করাকে ফরজ করেছেন এবং যেনা করা হারাম করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না যে, আপনি বিশ্বাস করেন- আল্লাহ আপনাকে নামায আদায়কালে দেখতে পাচ্ছেন। এ কারণে আপনি প্রশান্তচিত্তে বিনম্রভাবে নামায আদায় করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে নামায পড়েন। ঠিক তেমনি আপনি যখন যেনা করবেন তখনও তো আল্লাহ আপনাকে দেখবেন! যেহেতু আপনার ঈমান আপনাকে দিয়ে সুন্দরভাবে নামায আদায় করায় তাই আমাদের ধারণা আপনার সে ঈমান আপনাকে যেনা থেকেও বিরত রাখবে। কারণ আমরা আপনার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করি। আমরা মনে করি, আপনি জানেন যে, এটি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা নয়; অথচ আল্লাহ আপনাকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছেন। আপনাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দিয়েছেন। এ মহান নেয়ামতগুলোর শুকরিয়া এভাবে করতে হয় না।

পাঁচ:

আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে আছেন যদি এতে সবর করেন তাহলে আপনি সওয়াব পাবেন। মুমিনেরা তো মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করে থাকে এবং আনন্দের সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে থাকে। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এটা করে না। মুসিবতে ধৈর্য রাখে, আনন্দকালে শুকরিয়া আদায় করে। যেদিন আপনি আপনার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সেদিন আপনি আপনার আমলনামায় এর সর্বোত্তম পুরস্কার পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনি 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়তে পারেন। সেখানে বিপদ মুসিবতে মুমিনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

ছয়:

আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনার দুআ বিফলে যায়নি। আপনি যে তাগিদ দিয়ে বলছেন আপনার দুআ কবুল হয়নি এটা আপনার ভুল। দুআ কবুলের তিনটি অবস্থা হতে পারে। এক. আপনি যা চেয়েছেন সাথে সাথে আল্লাহ সেটা দিয়ে দেয়া। দুই. দুআ অনুপাতে আপনার বালা-মুসিবত দূর করে দেয়া। তিন. আপনাকে আখেরাতে সওয়াব দেয়া, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন আপনি তা দেখবেন। কিন্তু আপনি ভেবেছেন দুআ কবুল হওয়া মানে- আপনি যা তলব করেছেন শুধু সেটা দিয়ে দেয়া। তাই আপনি বলেছেন, আল্লাহ আপনার দুআ কবুল করেননি। নিঃসন্দেহে এটি আপনার ভুল ধারণা। বান্দা কর্তৃক আল্লাহর কাছে দুআ করাটা একটি মহান ইবাদত। দুআর মাধ্যমে বান্দা স্রষ্টার কাছে তার দীনতা, হীনতা তুলে ধরে। শয়তান সর্বদা চেষ্টা করে বান্দাকে দুআ থেকে বিমুখ রাখতে। তাই সে বান্দার অন্তরে অবিলম্বে তার মাকছাদ পূর্ণ হওয়ার বাসনা ঢুকিয়ে দেয়। ফলে সে বিরক্ত হয়ে দুআ ছেড়ে দেয়।

ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: জনৈক আলেম বলেন: বান্দা তখনি দুআর প্রতিদান অবিলম্বে পেতে চায় যখন দুআর উদ্দেশ্য হয়: প্রার্থনার মাকছাদ অর্জন। ফলে মাকছাদ অর্জিত না হলে দুআ চালিয়ে যাওয়াটা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে বান্দার দুআ করার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত: আল্লাহকে ডাকা, তার কাছে চাওয়া, সর্বদা নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করা, কখনো দাসত্বের বৈশিষ্ট্য ও আলামত পরিত্যাগ না করা, আদেশ ও নিষেধের অনুগত থাকা।[শারহ সহিহ মুসলিম (১০/১০০)] দুআ কবুলের শর্তগুলো জানতে 13506 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন। দুআ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো জানতে 5113 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন। দুআ করার আদব বা শিষ্টাচারগুলো জানতে 36902 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন। দুআ কবুল হওয়ার সময় ও স্থানগুলো জানতে 22438 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

সাত:

এই বিস্তারিত আলোচনার পর আমরা যেন আপনাকে বলতে শুনছি, “আমি যেনা করতে চাই না”।

আমরা আপনার ব্যাপারে এই ধারণাই পোষণ করি। প্রকৃতপক্ষে যেনা করার অনুমতির জন্য আপনি আমাদের কাছে ইমেইল করেননি। অথবা আমরা আপনাকে যেনা করা জায়েয ফতোয়া দিব সে উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি পাঠাননি। যেহেতু আপনি জানেন যে, সেই অধিকার আমাদের নেই। যদি আপনি যেনা করতেই চাইতেন তাহলে আমাদেরকে ইমেইল না করেই যেনা করে ফেলতেন। কারণ আমরা তো আর আপনাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারছি না বা আপনি আমাদের কর্তৃত্বাধীনও নন যে, আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিবেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, আপনি যে মুসিবতের মধ্যে আছেন আপনি আপনার ভাইদের কাছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করতে চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন আপনার ভাইয়েরা যেন আপনাকে এমন কিছু নসীহত, দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দেয় যাতে আপনি যেনা না করেন। আমরা সে দায়িত্ব নিয়ে আপনার পাশে দাঁড়ালাম। দেরীতে বিয়ের যে পরীক্ষার মধ্যে আপনি আছেন এ অবস্থায় আমরা আপনাকে ধৈর্য রাখার উপদেশ দিচ্ছি। এ দীর্ঘ বছর ধরে দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান হেফাযত করতে পারায় আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি আপনি যদি আপনার রবের সাহায্য চান তাহলে আপনি এর চেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারবেন। আমরা আপনাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং সৎ পাত্রী খুঁজে পেতে আরো জোর প্রচেষ্টা চালাবার পরামর্শ দিচ্ছি। নেক আমলের মাধ্যমে আপনার রবের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করে দেন, সুশোভিত করে দেন। কুফর, পাপ, অবাধ্যতাকে আপনার কাছে নিন্দনীয় করে দেন। আপনাকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমরা আশা করব আপনি 20161 নং ও 11472 নং প্রশ্নোত্তরদ্বয়ও পড়বেন।

আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রশ্ন: (3) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে কী বুঝায়?

প্রশ্ন: (3) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ একটি নতুন মতবাদ। এটি একটি ভ্রান্ত আন্দোলন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করা, দুনিয়া ও দুনিয়ার মজা নিয়ে মেতে থাকা। আখেরাতকে ভুলে গিয়ে, অথবা আখেরাতকে উপেক্ষা করে পার্থিব জীবনকে মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা। পরকালের আমলের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করা ও গুরুত্ব না দেয়া। ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ব্যক্তির ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের এ হাদিসটি হুবহু মিলে যায়- “দিনার ও দিরহামের পূজারি ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক কারুকাজের পোশাক ও মখমলের বিলাসী। যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় সন্তুষ্ট থাকে; আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে মুখ থুবড়ে পড়ুক অথবা মাথা থুবড়ে পড়ুক। সে কাটা বিদ্ধ হলে কেউ তা তুলতে না পারুক।”[সহিহ বুখারি (২৮৮৭]

উল্লেখিত বিশেষণের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও পড়বে যারা ইসলামের কোন একটি কথা বা কাজকে সমালোচনার পাত্র বানায়। যে ব্যক্তি ইসলামী শরিয়াকে বাদ দিয়ে মানবরচিত আইনে শাসন পরিচালনা করে সেই ধর্মনিরপেক্ষ। যে ব্যক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয় যেমন- ব্যভিচার, মদ, গান-বাজনা, সুদী কারবার ইত্যাদিকে বৈধ বিবেচনা করে এবং বিশ্বাস করে যে, এগুলো থেকে বারণ করা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও ব্যক্তিগত স্বার্থে বাধা দেয়ার নামান্তর সে ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ। যে ব্যক্তি শরয়ি দণ্ডবিধি যেমন- হত্যার শাস্তি, পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুর শাস্তি, ব্যভিচারী ও মদ্যপের উপর বেত্রাঘাতের শাস্তি, চোর ও ডাকাতের হাত কাটার শাস্তি কায়েমে বাধা দেয় অথবা অসম্মতি প্রকাশ করে, অথবা দাবী করে এসব দণ্ডবিধি যুগপোযুগী নয়, এগুলো নিষ্ঠুর ও জঘন্য তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ।

তাদের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম হচ্ছে: আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: “তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই।” [সূরা বাকারা, আয়াত: ৮৫]

সুতরাং যে ব্যক্তি যে বিধানগুলো তার মনঃপুত হয় যেমন পারিবারিক আইন, কিছু কিছু ইবাদত সেগুলো মানে আর যেগুলো তার মনঃপুত হয় না সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে সেও এ আয়াতের বিধানের মধ্যে পড়বে। একই প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি দুনিয়াতেই তাদেরকে তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং এতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হবে না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছু নেই।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১৫-১৬]

ধর্মনিরপেক্ষাবাদীদের টার্গেট হলো- দুনিয়া কামাই করা, দুনিয়ার মজা উপভোগ করা। এমনকি ইসলামে সেটা হারাম হলেও, কোন ফরজ ইবাদত পালনে প্রতিবন্ধক হলেও। তাই তারা এ আয়াতের হুমকির অধীনে পড়বে এবং এই আয়াতের অধীনেও পড়বে “যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা অতিসত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১৮] এ অর্থবোধক অন্যান্য আয়াত ও হাদিসগুলো তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রশ্ন: (1) সম্পদের যাকাত কি নিসাব পরিমাণ হওয়া থেকে হিসাব করা হবে? নাকি বছর ফুর্তি থেকে হিসাব করা হবে? যদি নিসাব পরিমাণ হওয়ার সময় সম্পদের পরিমাণ হয় ১০,০০০ এবং বছর ফুর্তির পর হয় ৫০,০০০ তাহলে কোন অংকটির উপর যাকাত হিসাব করতে হবে?

প্রশ্ন: (1) সম্পদের যাকাত কি নিসাব পরিমাণ হওয়া থেকে হিসাব করা হবে? নাকি বছর ফুর্তি থেকে হিসাব করা হবে? যদি নিসাব পরিমাণ হওয়ার সময় সম্পদের পরিমাণ হয় ১০,০০০ এবং বছর ফুর্তির পর হয় ৫০,০০০ তাহলে কোন অংকটির উপর যাকাত হিসাব করতে হবে?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক: নগদ অর্থের যাকাত ফরজ হয় দুইটি কারণে

১. নগদ অর্থ নিসাব পরিমাণ হওয়া।

২. নিসাব পরিমাণ অর্থের বছর ফুর্তি হওয়া।

অতএব, সঞ্চিত অর্থ যদি নিসাবের চেয়ে কম হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না।

যদি সঞ্চিত অর্থ নিসাব পরিমাণ হয় এবং নিসাব পরিমাণ অর্থের এক বছর ফুর্তি হয় অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ এক চন্দ্র বছর (হিজরী সাল) অতিবাহিত হয় তখন যাকাত ফরজ হবে। নিসাবের পরিমাণ হচ্ছে- ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ ও ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। মোট অর্থের ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫%) যাকাত দেয়া ফরজ।

দুই:

যদি কারো কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকে; ধরে নিই সেটা ১০০০; আর বছর শেষে তার অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০০ তে; তাহলে সে কিভাবে যাকাত আদায় করবে? এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন:

১- এই অতিরিক্ত অর্থ যদি মূল অর্থের মাধ্যমে অর্জিত হয় যেমন- মূল এক হাজার যদি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে লাভ হয় চার হাজার তাহলে বছর শেষে সর্বমোট অর্থের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা বিধি হচ্ছে- লাভ পুঁজির বিধানের অনুগত।

২- যদি এই অর্থ মূল অর্থের মাধ্যমে অর্জিত না হয়; অন্য কোন মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে যেমন- উত্তরাধিকার, উপঢৌকন, কোন কিছু বিক্রি ইত্যাদি তাহলে এ সম্পদের আলাদা বছর হিসাব করা হবে। যেদিন এই অতিরিক্ত সম্পদ মালিকানায় এসেছে সেদিন থেকে বছর গণনা শুরু হবে। আর যদি মূল এক হাজারের সাথে যাকাত আদায় করে দিতে চায় সেটাও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি এ অতিরিক্ত অর্থের যাকাত ফরজ হওয়ার আগেই অগ্রিম আদায় করে দিলেন। এতেও কোন অসুবিধা নেই।

৩- কারো ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত অর্থ ক্রমান্বয়ে অর্জিত হয়ে থাকতে পারে। যেমন আপনি মাসিক বেতন থেকে কিছু কিছু সঞ্চয় করলেন। যেমন একমাসে ৫০০ সঞ্চয় করলেন, অন্য মাসে ১০০০ সঞ্চয় করলেন, এভাবে বছর শেষে ৪০০০ হল। তাহলে আপনার এই সুযোগ আছে যে, মূল এক হাজারের যাকাত আদায়ের সময় অতিরিক্ত অর্জিত অর্থের যাকাতও আদায় করে দিবেন। সেক্ষেত্রে আপনি অতিরিক্ত অর্জিত অর্থের যাকাত নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আদায় করে দিলেন। আর ইচ্ছা করলে আপনি প্রত্যেকবার অর্জিত সম্পদের আলাদা বছর হিসাব করতে পারেন। তবে এভাবে হিসাব রাখাটা একটু কঠিন। কারণ এক্ষেত্রে আপনাকে এক বছরে কয়েকবার যাকাত আদায় করতে হবে। আরো বিস্তারিত জানতে 50801 নং ফতোয়া পড়ুন। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রশ্ন: (1) রুবুবিয়্যাহ বা রব হিসেবে আল্লাহর এককত্ব বলতে কী বুঝায়?

প্রশ্ন: (1) রুবুবিয়্যাহ বা রব হিসেবে আল্লাহর এককত্ব বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ: অর্থাৎ আল্লাহর যাবতীয় কর্মে তাঁকে এক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। যেমন- সৃষ্টি করা, মালিকানা (সার্বভৌমত্ব), নিয়ন্ত্রণ করা, রিযিক দেয়া, জীবন দেয়া, মৃত্যু দেয়া, বৃষ্টিপাত করা ইত্যাদি। সুতরাং আল্লাহকে সবকিছুর রব, মালিক, সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে; জীবন ও মৃত্যুদাতা, উপকার ও ক্ষতিকারী, দুআ কবুলকারী, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী, সকল কল্যাণের অধিপতি, স্ব-ইচ্ছা বাস্তবায়নে ক্ষমতাবান হিসেবে বিশ্বাস না করলে একত্ববাদের ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। এর মধ্যে তাকদীর তথা ভাল-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এ ঈমানও অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রকারের তাওহিদের ক্ষেত্রে মক্কার কাফেরগণ আপত্তি করেনি; যাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন। বরং তারা সামষ্টিক বিচারে তাওহিদে রুবুবিয়্যাতে স্বীকৃতি দিত। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ।”[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ০৯] তারা স্বীকার করত যে, আল্লাহই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী। তাঁর হাতে রয়েছে আসমান ও জমিনের রাজত্ব। এর থেকে জানা গেল যে, আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের এতটুকু স্বীকৃতি ইসলাম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং এ ঈমান অন্য যে ঈমানকে আবশ্যক করে সে অংশের উপরও ঈমান আনতে হবে। সেটা হচ্ছে উলুহি্য়্যাত তথা উপাসনাতে আল্লাহর এককত্বের প্রতি ঈমান।

এ তাওহিদ অর্থাৎ তাওহিদে রুবুবিয়্যাকে বনি আদমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেউ অস্বীকার করেছে বলে জানা যায় না। এ কথা কেউ বলেনি যে, এ মহাবিশ্বের সমমর্যাদার অধিকারী একাধিক স্রষ্টা রয়েছে। তাই রুবুবিয়্যাকে কেউ অস্বীকার করেনি। শুধু অহংকার ও হঠকারিতা বশতঃ ফেরাউনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অস্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে। বরং সে দাবী করেছিল সেই রব্ব। আল্লাহ তাআলা তার কথাটি উদ্ধৃত করে বলেন: “এবং বললঃ আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রব্ব।”[সূরা নাযিআত, আয়াত: ২৪] “আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ৩৮] এটি ছিল তার দাম্ভিকতা। কারণ সে জানত সে রব্ব নয়। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তারা অন্যায় ও ঔদ্ধত্যভরে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।”[সূরা নামল, আয়াত: ১৪] আল্লাহ তাআলা মূসার বিতর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: “তুমি জান যে,আসমান ও যমীনের রব্ব ছাড়া অন্য কেউ এসব নিদর্শনাবলী নাযিল করেননি।”[সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১০২] তাই সে মনে মনে স্বীকার করত যে, রব্ব হচ্ছেন- আল্লাহ তাআলা।

রুবুবিয়্যাহকে শিরকের মাধ্যমে অস্বীকার করে- মাজুস বা অগ্নি উপাসকেরা। তারা বলে, এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা দুইজন: অন্ধকার ও আলো। তবে এ বিশ্বাস সত্ত্বেও তারা এ দুই স্রষ্টাকে সমান মর্যাদা দেয়নি। তারা বলেছে: আলো আঁধারের চেয়ে উত্তম। কারণ আলো কল্যাণের স্রষ্টা। আর আঁধার অকল্যাণের স্রষ্টা। যে কল্যাণ সৃষ্টি করে সে অকল্যাণ সৃষ্টিকারীর চেয়ে উত্তম। অন্ধকার হচ্ছে- অনস্তিত্ব, অনুজ্জ্বল। আলো হচ্ছে- অস্তিত্বশীল ও উজ্জ্বল। তাই আলোর সত্তা অধিক পরিপূর্ণ।

মুশরিকদের রুবুবিয়্যতে বিশ্বাস করার অর্থ এই নয় যে, তাদের সে বিশ্বাস পরিপূর্ণ ছিল। বরং তারা মোটের উপর রুবুবিয়্যতে বিশ্বাসী ছিল। যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আমরা দেখেছি। কিন্তু তারা এমন কিছু বিষয়ে লিপ্ত হতো যেগুলো রুবুবিয়্যতের বিশ্বাসকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয়। যেমন- বৃষ্টি বর্ষণকে নক্ষত্রের সাথে সম্পৃক্ত করা; গণক ও যাদুকরেরা গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা; ইত্যাদি। কিন্তু উলুহিয়্যাতের শিরকের তুলনায় তাদের রুবুবিয়্যাতের শিরক ছিল খুবই সীমাবদ্ধ। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন মৃত্যু অবধি আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের উপর অবিচল রাখেন। আল্লাহই ভাল জানেন। দেখুন: তাইসীরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা-৩৩, আল-কাওলুল মুফিদ (১/১৪)।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Back to top button