প্রবন্ধ

ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মুহাম্মাদ আবু তাহের

ভূমিকা :

পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম। ইসলামে পেশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর দ্বারা লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি এটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃতি অনুভব করা যায়। আলোচ্য নিবন্ধে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হ’ল।-

পোশাকের গুরুত্ব :

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসব নে‘মত দান করেছেন, পোশাক তার মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِيْ آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِيْ سَوْآتِكُمْ وَرِيْشًا، وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ-

‘হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (আ‘রাফ ৭/২৬)

পোশাক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلاَ تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ-

‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক ছালাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করো না। অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। সুন্দর পোশাক পরিধান সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ .قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ انَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ .

‘যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো পসন্দ করে যে তার পোশাক সুন্দর হোক এবং তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অহংকার হ’ল হককে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’।[1]

পোশাকের প্রকার : ইসলামী শরী‘আতে পোশাক তিন প্রকার। যথা- ওয়াজিব, মুস্তাহাব ও হারাম।

ওয়াজিব পোশাক : যে পোশাক সতর আবৃত করে, গরম ও শীত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ক্ষতি থেকে দেহকে হেফাযত করে সে পোশাক ওয়াজিব।

عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ عَوْرَاتُنَا مَا نَأْتِى مِنْهَا وَمَا نَذَرُ قَالَ احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَا كَانَ الْقَوْمُ بَعْضُهُمْ فِى بَعْضٍ قَالَ إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ لاَ يَرَيَنَّهَا أَحَدٌ فَلاَ يَرَيَنَّهَا قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَا كَانَ أَحَدُنَا خَالِيًا قَالَ اللهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ مِنَ النَّاسِ .

বাহয বিন হাকিম তার পিতা হ’তে তিনি তার দাদা হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের আবরণীয় অঙ্গসমূহ কার সামনে আবৃত রাখব এবং কার সামনে অনাবৃত করতে পারি? তিনি বললেন, তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত সকলের সামনে তা আবৃত রাখ। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনেক লোক যখন পরস্পর একসাথে থাকে? তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব কেউ যেন অন্যের গোপন অঙ্গের দিকে না তাকায়। রাবী বলেন, আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যখন নির্জনে থাকে? তিনি বলেন, লজ্জার ব্যাপারে আল্লাহ মানুষের চাইতে বেশী হকদার’।[2]

মুস্তাহাব পোশাক : যে পোশাকে সৌন্দর্য আছে, তা মুস্তাহাব পোশাক।

عَنْ أَبِى الأَحْوَصِ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِىْ ثَوْبٍ دُوْنٍ فَقَالَ أَلَكَ مَالٌ. قَالَ نَعَمْ. قَالَ مِنْ أَىِّ الْمَالِ. قَالَ قَدْ أَتَانِىَ اللهُ مِنَ الإِبِلِ وَالْغَنَمِ وَالْخَيْلِ وَالرَّقِيْقِ قَالَ فَإِذَا أَتَاكَ اللهُ مَالاً فَلْيُرَ أَثَرُ نِعْمَةِ اللهِ عَلَيْكَ وَكَرَامَتِهِ.

আবুল আহওয়াছ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি নিম্নমানের পোশাক পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হ’লাম। তা দেখে তিনি বললেন, তোমার কি ধন-সম্পদ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কী ধরনের সম্পদ? আমি বললাম, আল্লাহ আমাকে উট, ভেড়া, ঘোড়া ও দাস-দাসী দিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহ’লে আল্লাহ যখন তোমাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তখন তোমার বেশ-ভূষায় আল্লাহর নে‘মতের নির্দশন ও করুণা প্রকাশ পাওয়া উচিত’।[3]

বিভিন্ন ইবাদতের সময়, জুম‘আ, দু’ঈদ ও জনসমাবেশে সুন্দর পোশাক পরার গুরুত্ব অত্যধিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدَ أَوْ مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدْتُمْ أَنْ يَتَّخِذَ ثَوْبَيْنِ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ سِوَى ثَوْبَىْ مَهْنَتِهِ.

‘তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে সে যেন তার পেশাগত কাজে ব্যবহৃত পোশাক ব্যতীত জুম‘আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক তৈরী করে’।[4]

হারাম পোশাক : বিভিন্ন কারণে ইসলামে কতিপয় পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হ’ল-

১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক। ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক ৩. মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক ৪. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশক পোশাক ৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক ৬. আঁটসাঁট পোশাক প্রভৃতি।

১. পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরিধান করা : পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরা ও তার উপর বসা নিষিদ্ধ। এ মর্মে কয়েকটি হাদীছ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-

ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تَلْبَسُوا الْحَرِيْرَ فَإِنَّهُ مَنْ لَبِسَهُ فِى الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِى الآخِرَةِ ‘তোমরা রেশম পরিধান করো না। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশম পরিধান করবে, সে আখিরাতে তা পরিধান করতে পারবে না’।[5]

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ওমর (রাঃ) এক সেট পুরু রেশমের পোশাক বিক্রয় হ’তে দেখলেন। অতঃপর তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এটা কিনুন, এ দ্বারা ঈদের জন্য ও প্রতিনিধি দলগুলোর জন্য সুসজ্জিত হোন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ পোশাক শুধু তার জন্য, যার পরকালে এটা প্রাপ্য নেই। এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেল। তারপর একদিন রসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-এর নিকট রেশমের একটি জুববা পাঠালেন। তখন ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি বলেছেন, এটা সে ব্যক্তির পোশাক, যার পরকালে এটা প্রাপ্য নেই। তারপর আবার এটা পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওটা আমি তোমার পরিধানের জন্য পাঠাইনি, পাঠিয়েছি যাতে তুমি ওটা বিক্রয় করে নিজের প্রয়োজন মিটাতে পার’।[6]

عَنْ حُذَيْفَةَ رضى الله عنه قَالَ نَهَانَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَشْرَبَ فِىْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَأَنْ نَأْكُلَ فِيْهَا، وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيْرِ وَالدِّيبَاجِ، وَأَنْ نَجْلِسَ عَلَيْهِ.

হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে স্বর্ণ ও রেŠপ্যের পাত্রে পানাহার করতে এবং রেশমের কাপড় পরিধান করতে ও তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন।[7] তিনি বলেন, ওটা দুনিয়ায় তাদের জন্য (অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্যদের জন্য) আর আখিরাতে তোমাদের জন্য’।[8] এসব হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পুরুষের জন্য রেশম পরা হারাম।

রেশম পরা মহিলাদের জন্য বৈধ : রেশমের বস্ত্র পরিধান করা মহিলাদের জন্য হালাল। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَلِىٍّ قَالَ أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حُلَّةُ سِيَرَاءَ فَبَعَثَ بِهَا إِلَىَّ فَلَبِسْتُهَا فَعَرَفْتُ الْغَضَبَ فِى وَجْهِهِ فَقَالَ إِنِّى لَمْ أَبْعَثْ بِهَا إِلَيْكَ لِتَلْبَسَهَا إِنَّمَا بَعَثْتُ بِهَا إِلَيْكَ لِتُشَقِّقَهَا خُمُرًا بَيْنَ النِّسَاءِ.

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে একটা রেশমের পোশাক উপহার দেওয়া হ’ল। পরে তিনি সেটি আমার নিকট পাঠিয়েন দিলেন। আমি সেটি পরলাম। এতে তাঁর চেহারায় অসন্তোষের চিহ্ন দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, ওটা তোমার নিকট এজন্য পাঠাইনি যে, তুমি পরবে। বরং এটা তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি ওটা টুকরো করে ওড়না বানিয়ে মহিলাদের মধ্যে বিতরণ করবে’।[9]

২-৩. মহিলাদের পোশাক পুরুষরা ও পুরুষদের পোশাক মহিলারা পরিধান করা :

মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পুরুষদের পরিধান করা নিষিদ্ধ। তেমনি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক ও মহিলাদের জন্য পরিধান করা হারাম। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীর প্রতি অভিসম্পাৎ করেছেন’।[10] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ- ‘রাসূল (ছাঃ) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন’।[11] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে আরও বর্ণিত আছে,لَعَنَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ، وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاءِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[12]

৪. খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি পোশাক :

যে পোশাক অন্যান্য মানুষের চেয়ে খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পরা হয় তা হারাম।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ.

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় খ্যাতির পোশাক পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন’।[13]

৫. ভিন্ন ধর্মীয় কোন পোশাক পরিধান করা :

ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না। অর্থাৎ যে শোষাক অন্য কোন ধর্মের নিদর্শন প্রকাশ করে বা পরিচয় দান করে।

عن عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَأَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا

আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার পরিধানে দু’টি রঙ্গিন কাপড় দেখে বললেন, ‘এটা কাফিরদের কাপড়। অতএব তা পরিধান করো না’।[14]

৬. আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা :

যদি পরিধেয় পোশাক এরূপ হয় যে, আবৃত অংশের চামড়া বা হুবহু আকৃতি তার বাইরে থেকে ফুটে ওঠে তাহ’লে তাতে পোশাকের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। এরূপ পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

عَنْ ضَمْرَةَ بْنِ ثَعْلَبَةَ أَنَّهُ أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهِ حُلَّتَانِ مِنْ حُلَلِ الْيَمَنِ فَقَالَ يَا ضَمْرَةُ أَتَرَى ثَوْبَيْكَ هَذَيْنِ مُدْخِلِيكَ الْجَنَّةَ. فَقَالَ لَئِنِ اسْتَغْفَرْتَ لِىْ يَا رَسُولَ اللهِ لاَ أَقْعُدُ حَتَّى أَنْزِعَهُمَا عَنِّى. فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِضَمْرَةَ بْنِ ثَعْلَبَةَ. فَانْطَلَقَ سَرِيْعاً حَتَّى نَزَعَهُمَا عَنْهُ.

যামরাহ ইবনু ছা‘লাবাহ (রাঃ) বলেন, তিনি এক জোড়া ইয়ামানী কাপড় পরিধান করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে যামরাহ! তুমি কি মনে কর যে তোমার এই কাপড় দু’টি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? যামরাহ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবে আমি বসার আগেই (এখনি) কাপড় দু’টি খুলে ফেলব। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি যামরাকে ক্ষমা করে দিন। তখন যামরাহ দ্রুত গিয়ে তার কাপড় দু’টি খুলে ফেলেন।[15]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَا

‘দু’শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখিনি। প্রথম শ্রেণী-যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী- ঐ সকল রমণী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর থেকেও পাওয়া যাবে’।[16]

ছাহাবী-তাবেঈগণ পুরুষের কামীছ (কামীছ বা পিরহান) চাদর ও পাগড়ির ক্ষেত্রে পাতলা কাপড়ের ব্যবহারে আপত্তি করেননি।

ইকরিমাহ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর একটি পাতলা চাদর ছিল। আবীদাহ বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেঈ ফকীহ কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর ছিদ্দীককে একটি পাতলা স্বচ্ছ কামীছ বা জামা পরিহিত দেখেছি। আফলাহ বলেন, কাসেম ইবনু মুহাম্মাদকে একটি পাতলা চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আনীস আবুল উরইয়ান বলেন, হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু আবী তালিব একটি পাতলা ও স্বচ্ছ পাগড়ি ও অনুরূপ একটি কামীছ পরিধান করতেন। জামাটি এত স্বচ্ছ ছিল যে, তার নিচের ইযার বা লুঙ্গি দেখা যেত।[17]

অতএব পুরুষের ফরয সতর আবৃত হ’লে বাকী দেহের জন্য পাতলা কাপড়ের পোশাক পরিধান আপত্তিকর নয়। তবে আঁটসাঁট ও সতর প্রকাশকারী পোশাক সর্বাবস্থায় বর্জনীয়।

 [চলবে]

 


* পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।

[1]. মুসলিম হা/৯১; আবু দাউদ হা/৪০৯২; তিরমিযী হা/১৯৯৯; মিশকাত হা/৫১০৮।

[2]. আবু দাউদ হা/৪০১৭; ইবনু মাজাহ হা/১৯২০; তিরমিযী হা/২৭৬৯; মিশকাত হা/৩১১৭, সনদ হাসান।

[3]. আবূদাঊদ হা/৪০৬৩; মিশকাত হা/৪৩৫২, সনদ ছহীহ।

[4]. আবূদাঊদ হা/১০৭৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৯৬; মিশকাত হা/১৩৮৯, সনদ ছহীহ।

[5]. মুসলিম হা/২০৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৪৪।

[6]. বুখারী হা/৯৪৮, ৩০৫৪; মুসলিম হা/২০৬৮; নাসাঈ হা/১৫৬০।

[7]. বুখারী হা/৫৮৩৭; মিশকাত হা/৪৩২১।

[8]. বুখারী হা/৫৬৩৩, ৫৮৩১; আবু দাউদ হা/৩৭২৩; তিরমিযী হা/১৮৭৩।

[9]. মুসলিম হা/২০৬৮; মিশকাত হা/৪৩২২।

[10]. আবূদাঊদ হা/৪০৯৮; মিশকাত হা/৪৪৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯৫।

[11]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৯।

[12]. বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৮।

[13]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; মিশকাত হা/৪৩৪৬, সনদ হাসান।

[14]. মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৭৩।

[15]. মুসনাদ আহমাদ হা/১৯৪৯৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০১৮।

[16]. মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫২৪।

[17]. ইবনু সা‘দ, আত-তাবাকাত ৫/১৯১, ৩২৮; ইবনু আবী শায়বা, আল-মুছন্নাফ ৫/১৫৭।

সূত্রঃ মাসীক আত-তাহরীক

[box type=”info” align=”” class=”” width=”600″]আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক! মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের শ্বাশত বাণী ছড়িয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন এবং সকলকে জানার সুযোগ করে দিন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে -এ লাইক করুন[/box]

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button